ভ্যাকসিন: পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার আলাপ কতটা সত্য?

শোয়েব সাঈদ
Published : 21 Jan 2021, 12:22 PM
Updated : 21 Jan 2021, 12:22 PM

করোনাভাইরাস নিয়ে তোলপাড়ের শুরু হচ্ছিল এশিয়ার দেশগুলোতে ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে। দেশগুলোর স্বাস্থ্য বিভাগের সাধারণ সতর্কতার পাশাপাশি  চীন থেকে আগতদের নিয়ে বাড়তি দুশ্চিন্তা ক্রমশ গ্রাস  করছিল সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে। চীন থেকে বিশেষ করে উহান থেকে আগত যাত্রীদের নিয়ে কৌতূহল, স্বাস্থ্য পরীক্ষা, স্বাস্থ্যের অবনতি বিষয়ক রিপোর্ট নিয়ে ব্যস্ত হয়ে গেল সংবাদপত্র, আর টিভি  চ্যানেলগুলো।

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, ফার ইস্টের জাপান, কোরিয়া তখন আক্রান্ত হতে শুরু করেছে। উহানের এ ভাইরাসটিকে দেখা গেল ভারত বাংলাদেশ হয়ে পশ্চিমে যাওয়ার চাইতে সরাসরি ইরান, মধ্যপ্রাচ্য আর ইউরোপে চলে গেল দ্রুততার সাথে ব্যবসা-বাণিজ্য, অনুকূল আবহাওয়া  আর গ্লোবালাইজেশনের সুযোগে। ইতালির ঘন বসতি, শারিরীক দূরত্ব না মানার প্রবণতা আর সর্বোপরি চীনের সাথে ব্যাপক বাণিজ্যের সুযোগে সহজেই কোভিড-১৯ এর ইউরোপিয়ান হাবে পরিণত হয়। জানুয়ারির ৩১ তারিখ রোমে দুইজন চীনা পর্যটকের করোনাভাইরাস পজিটিভ হওয়ার মধ্য দিয়ে ইতালির যাত্রা শুরু এবং ২২ ফেব্রুয়ারির প্রথম মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। মার্চের দিকে সংক্রমণ ব্যাপক আকার ধারণ করে।

ইরানে বিস্তার ঘটে ফেব্রুয়ারিতে। ইরানি কর্তৃপক্ষের তথ্য গোপন কৌশল মূলত পরিস্থিতিকে জটিল করে তুলে। কোম নগরীসহ পর্যটনের কেন্দ্রগুলো মূলত কোভিড উৎসের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। সরকারের উচ্চ পর্যায়ে সংক্রমণ ছড়িয়ে যায়। ইরান থেকে  নিউজিল্যান্ডসহ অন্যান্য দেশে কোভিড ছড়িয়ে পরে মার্চের দিকে।

কানাডার সংক্রমণের মূল উৎস ধরা হয় ইরানকে। আটলান্টিক থেকে প্রশান্ত পর্যন্ত বিশাল কানাডায় প্রথম সংক্রমণের ঘটনা পাওয়া যায় ২৭ জানুয়ারি উহান ফেরত যাত্রীর মাধ্যমে। এরপর ফেব্রুরারির  শেষ দিক পর্যন্ত দুয়েক জন করে কোভিড রোগী পাওয়া যাচ্ছিল যাদের উৎস ছিল মূলত চীন থেকে। ফেব্রুয়ারির ২৭ তারিখ কুবেক প্রদেশের প্রথম রোগীর উৎস ছিল ইরান। ফেব্রুয়ারির শেষ দিক থেকে সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছিল যার উৎস ইরান। কুবেক, অন্টারিও আর ব্রিটিশ কলাম্বিয়ায়  ফেব্রুয়ারির শেষ দিক থেকে মার্চের মাঝামাঝি কমিউনিটি সংক্রমণের আগ পর্যন্ত মত কোভিডের মূল উৎস ছিল ইরান। মার্চের ৫ তারিখ ব্রিটিশ কলাম্বিয়ায়  কানাডার  কমিউনিটি সংক্রমণ অর্থাৎ দেশের ভেতর থেকে সংক্রমণের প্রথম  খবরটি  পাওয়া যায়। 

বাংলাদেশের ক্ষেত্রে সংক্রমণ কিন্তু চীন থেকে ছিলনা, ছিল ইতালি থেকে। মার্চের ৮ তারিখ বাংলাদেশে প্রথম সংক্রমণের খবর মেলে। যুক্তরাষ্ট্রের সংক্রমণও এসেছে ইউরোপ থেকে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ১১০টি দেশের ১ লাখ ১৮ হাজার সংক্রমণের কঠিন পরিস্থিতিতে ২০২০ সালের মার্চ মাসের ১১ তারিখে  নতুন করোনাভাইরাস উদ্ভূত রোগ কোভিড-১৯ এর বিস্তারকে গ্লোবাল প্যানডেমিক ঘোষণা করলেন। সংস্থাটির মহাপরিচালক মহাপরিচালক তেদ্রোস আধানম গেব্রিয়েসুস জানান ফেব্রুয়ারি শেষ থেকে দুই সপ্তাহে চীনের বাইরে সংক্রমণ বেড়েছে ১৩ গুণ এবং সংক্রমিত দেশের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছ ৩ গুণ। তিনি সংক্রমণের ভয়াবহতা বিষয়ে সদস্য দেশগুলিকে সতর্ক করে দেন এবং অনতিবিলম্বে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলেন।

২০২০ সালের মার্চে এ তাণ্ডবের সূচনার পর নানা ঘটনা পেরিয়ে বছর শেষে আমরা ২০২১ সালের এই জানুরায়িতে প্রায় ২০ লাখ মৃত্যু আর ১০ কোটি ছুঁইছুঁই করা সংক্রমণ নিয়ে দ্বিতীয় ওয়েভ পার করছি। কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউ প্রথম ঢেউের চাইতে সংক্রমণের অধিকতর তীব্রতায় সন্ত্রস্ত করে তুলছে বিশ্বকে, উত্তর আমেরিকা থেকে ইউরোপ, জাপান সর্বত্র চাপে আছে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা। দ্বিতীয় ওয়েভের ভয়াবহতা উত্তর গোলার্ধে যে মাত্রায় দক্ষিণ গোলার্ধে ততটা নয়, পাক ভারত উপমহাদেশ এর অন্যতম উদাহরণ। 

২০২০ সালে প্যানডেমিক নিয়ন্ত্রণে আর  বিশ্ব অর্থনীতিকে বাঁচানো জন্যে  ড্রাগ, ভ্যাকসিন নিয়ে দাপাদাপির মধ্যে ২০২১ সালের শুরু নাগাদ বিজ্ঞান আর প্রযুক্তির কল্যাণে মাঠে এসেছে পশ্চিমাদের ডাবল ডোজের তিন তিনটি ভ্যাকসিন, ফাইজার, মডার্না আর এসট্রাজেনেকা থেকে।   জনসন এন্ড জনসনের সিঙ্গেল ডোজের  ভ্যাকসিনটি মাঠে আসার কথা মার্চে।  চীন আর রাশিয়াও ভ্যাকসিন নিয়ে মাঠে রয়েছে। 

যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা সহ ইউরোপে টিকা দেওয়া শুরু হয়েছে মাস খানেক হল। এই মুহূর্তে ভ্যাকসিনের  নিয়ে সমস্যা হচ্ছে ভ্যাকসিনেশনের ধীর গতি। ভ্যাকসিনেশনের গতি কয়েকগুণ বাড়াতে না পারলে ভ্যাকসিন দিতে কয়েক বছর লেগে যেতে পারে। ফাইজারের ইউরোপিয়ান ফ্যাসিলিটির উৎপাদন সক্ষমতা বাড়ানোর জন্যে ভ্যাকসিন উৎপাদনে সাময়িক ধীর গতি ২০২১ সালের জানুয়ারির শেষে এসে বিশ্বব্যাপী ভ্যাকসিনেশনের গতি সাময়িকভাবে কমিয়ে দিয়েছে। তারপরেও কানাডা আশা করছে সেপ্টেম্বরের মধ্যে সবাইকে ভ্যাকসিনেশনের আওতায় নিয়ে আসতে পারবে।      

২০২১ সালের শুরুতে তথাকথিত ভ্যাকসিন জাতীয়তাবাদ অর্থাৎ ভ্যাকসিন উৎপাদক দেশগুলোর স্বার্থপরতা ইতিমধ্যে বৈশ্বিক সরবরাহে সমস্যা তৈরি করতে শুরু করেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা  এ বিষয়ে উদ্বিগ্ন বিশেষ করে গাভি বা গ্লোবাল অ্যালায়েন্সের মাধ্যমে গরীব দেশগুলোকে ভ্যাকসিন দেওয়ার ক্ষেত্রে ধীর গতি আর অনিশ্চয়তা নিয়ে।

সাপ্লাই চেইন আর সংরক্ষণ তাপমাত্রা বান্ধব অ্যাস্ট্রাজেনেকা-অক্সফোর্ড ভ্যাকসিনটি উৎপাদনের জন্যে চুক্তিবদ্ধ ভারতের বিশ্বখ্যাত ভ্যাকসিন উৎপাদক সেরাম ইন্সটিটিউটের সাথে। সেরামের  সাথে তিনকোটি ডোজের চুক্তি এবং এ নিয়ে  ভারত সরকারের বারবার আশ্বাস সত্ত্বেও বাংলাদেশের ভ্যাকসিন প্রাপ্তিতে অনিশ্চয়তা দেখা যাচ্ছিল। ভ্যাকসিন নিয়ে বাংলাদেশের একটি ঝুড়িতে সব ডিম রাখার মত পরিস্থিতি অর্থাৎ সেরামের মাধ্যমে অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিনের উপর নির্ভর করার জন্যে বিপদে পড়ার ঝুঁকিও ছিল। ফাইজারের ভ্যাকসিনের অতি নিম্ন তাপমাত্রায় সংরক্ষণ আর পরিবহনে প্রয়োজনীয়  লজিস্টিকের অভাবে আর মডার্নার সাথে কোন চুক্তি করতে না পারার কারণে অ্যাস্ট্রাজেনেকা ছাড়া উপায়ও ছিলনা।    

ভ্যাকসিন মাঠে আসার একমাস পরেও এরকম একটি অনিশ্চিত অবস্থায় ভারত সরকারের  বাংলাদেশেকে ২০ লাখ ভ্যাকসিন উপহার দেবার সাম্প্রতিক ঘোষণা সবাইকে আশাবাদী করে তোলে। ভুটান, নেপালকেও ভারত এ উপহার দিচ্ছে।

একুশে জানুয়ারি ভারতের কোভিডের ভ্যাকসিনের ডোজ বাংলাদেশে প্রবেশের মাধ্যমে বাংলাদেশ কাঙ্ক্ষিত নতুন যুগে প্রবেশ করল। সেরামের সাথে চুক্তি অনুসারে বাংলাদেশের প্রতিমাসের ৫০ লাখ করে আগামী ৬ মাসে ৩ কোটি ডোজ পাবার কথা। কোভ্যাক্সের মাধ্যমে আরও প্রায় ৬ কোটি ডোজ ভবিষ্যতে পাবার  বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।     

বিশ্বব্যাপী কোভিডের টিকা দেওয়ার পাশাপাশি টিকার সেইফটি নিয়ে আলোচনা সমালোচনা হচ্ছে। সুপারফিসিয়াল আলোচনার মাধ্যমে ভ্যাকসিন নিয়ে ভীতি সৃষ্টি কোভিড প্যান্ডেমিকের ব্যবস্থাপনার জন্যে খুবই নেতিবাচক হবে বিধায় এই বিষয়ে সতর্কতার সাথে বক্তব্য বাঞ্ছনীয়।  

নজিরবিহীন দ্রুততার সাথে কোভিড  ভ্যাকসিন  উদ্ভাবন হয়েছে বটে, তবে উন্নত দেশগুলোর স্বাধীন আর দক্ষ রেগুলেটরি কর্তৃপক্ষের সেইফটি বিষয়ে বিস্তারিত বিচার বিশ্লেষণ আর রিভিউ করার পরেই অনুমোদিত হয়েছে। বিজ্ঞান আর প্রযুক্তির বর্তমান অবস্থা দ্রুত ভ্যাকসিন বের করার অনুকূলে। ভ্যাকসিনের সেইফটি নিয়ে কোনও 'স্টেপ' ছাড় দেওয়া হয়নি, দ্রুত হবার মূল কারণ প্রাযুক্তিক উৎকর্ষ আর আমলাতান্ত্রিক সিদ্ধান্তের সময়টুকু উল্ল্যেখযোগ্যভাবে কমিয়ে আনার জন্যে।

কোভিড ভ্যাকসিন কোনও অমরত্বের টিকা নয়। ভ্যাকসিন নেবার পর অন্যান্য অসুখ-বিসুখে অর্থাৎ স্বাভাবিক মৃত্যুর সম্ভাবনা কমারও কারণ নেই। জনগণ যাতে ভুল বার্তা না পায় তার জন্যে  ভ্যাকসিনেশন পরবর্তী  অসুস্থতার সাথে ভ্যাকসিনকে লিঙ্ক করার বিষয়ে সতর্ক থাকা উচিত। এ বিষয়ে কিছু পয়েন্ট  উল্লেখ করতে চাই-

১. নরওয়ে এবং জার্মানিতে টিকা নেবার পর  বেশ কয়েকজন সিনিয়র সিটিজেনের মৃত্যুর সাথে কোভিড টিকার কোনও সম্পর্ক এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। নরওয়ে মেডিসিনস এজেন্সির কাছে কোন নিশ্চিত সম্পর্কের তথ্য নেই। এই অবস্থায় নরওয়ে সরকার বয়স্কদের এই টিকা দান অব্যাহত রেখেছে। নরওয়ের সিনিয়র সিটিজেন কেয়ার হোমগুলোতে সপ্তাহে ৪০০ জনের স্বাভাবিক মৃত্যু ঘটে। কোভিড ভ্যাকসিন নেবার পর স্পর্শকাতরতার কারণে হয়তো স্বাভাবিক মৃত্যুগুলোও প্রশ্নের মুখে পড়ছে।  

২. বর্তমান যুগে উন্নত দেশগুলোর রাজনৈতিক সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকবার জন্যেই নিজ দেশে জনস্বাস্থ্য নিয়ে কোন প্রকার ঝুঁকি নেবেনা। ভ্যাকসিনের সেইফটি নিয়ে বৈজ্ঞানিক তথ্য উপাত্তে কোন প্রকার ত্রুটি পেলে সঙ্গে সঙ্গেই ভ্যাকসিনেশন বন্ধ করে দিবে। মানুষের জীবন নিয়ে ঝুঁকি নিলে ভ্যাকসিন  উৎপাদক কোম্পানিগুলো বড় ধরনের ঝামেলায় পড়বে।

৩. জানুয়ারির ২০ তারিখ পর্যন্ত বিশ্বে প্রায় চার কোটি ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ইউকে, কানাডা আর যুক্তরাষ্ট্রে সেইফটি নিয়ে প্রমাণিত কোন জটিলতা দেখা যায়নি। হেলথ কানাডা এখন পর্যন্ত  ভ্যাকসিনের সেফটি নিয়ে উদ্বিগ্ন হবার মত কিছু পায়নি।

৪. ভারতে ৪-৫ লাখ মানুষকে ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে যাতে ৬০০ এর মত পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কথা বলা হয়েছে। উত্তর প্রদেশের মুরাদাবাদ আর কর্নাটকে দুই জনের মৃত্যুর কথা বলা হয়েছে, তদন্তে অন্য কারণ শনাক্ত হয়েছে, ভ্যাকসিনের  কোন লিঙ্ক পাওয়া যায়নি।

৫. টিকা নিলে শরীরে কিছু সাময়িক প্রতিক্রিয়া হয় যা যুগ যুগ ধরে ডাক্তার, নার্স আর টিকা উৎপাদনকারী, টিকা গ্রহণকারীদের অর্জিত জ্ঞান আর অভিজ্ঞতায় প্রতিষ্ঠিত। পাক-ভারত উপমহাদেশের মানুষজন এ পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ায় অভ্যস্ত। ভ্যাকসিন টেম্পারিং করে বা নিয়মনীতি না মেনে ভ্যাকসিনেশনে সৃষ্ট সমস্যার দায় বৈধ ভ্যাকসিনের হতে পারেনা। 

৬. পাক-ভারত উপমহাদেশে নতুন প্রযুক্তি গ্রহণে সবসময়ই নানাধরনের মিথ, গুজব আর  ষড়যন্ত্র তত্ত্বের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। প্রযুক্তি হস্তান্তরে যারা মাঠে কাজ করেন তারা ভাল করেই জানেন প্রযুক্তির সুবিধেবোঝাতে কতোটা কষ্ট করতে হয়। জোর করে ভ্যাকসিন দেবার কিছু নেই। তবে  জনগণকে উদ্বুদ্ধ করতে, প্রেরণা দিতে এবং ভ্যাকসিন  যারা নেবে না তাদের জীবনযাত্রায় কিছু অসুবিধে হবার পরিবেশ তৈরি করে যতটুকু সম্ভব জনগণকে ভ্যাকসিনের আওতায় নিয়ে আসা খুবই জরুরি। কোভিড সংকট থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে সবাইকে নিয়ে এগুতে হবে। সংক্রমিত হয়ে বা ভ্যাকসিন দিয়ে জনসংখ্যার প্রায় ৭০ শতাংশ এর ইমিউনিটি হচ্ছে হার্ড ইমিউনিটি বা স্থায়ী সুরক্ষা অর্জনে মাইলস্টোন।

৭. অনুমোদিত কোন ভ্যাকসিনের সেইফটি নিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, ইউএসএফডিএ, সিডিসি, হেলথ কানাডা, ইউরোপিয়ান রেগুলেটরি এজেন্সি আর বিভিন্ন দেশের সরকারি কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে কোন প্রকার সতর্কবার্তা না পাওয়া পর্যন্ত নিশ্চিন্ত মনে ভ্যাকসিন নেবার মাধ্যমেই আপনি আপনার দায়িত্ব পালন করে নিজের, পরিবারের, সমাজের  আর রাষ্ট্রের প্রতি আপনার দায়টুকু শোধ করতে পারেন। সেইফটি সমস্যা হলে সরকারই ভ্যাকসিন দেওয়া বন্ধ করে দেবে।     

ভ্যাকসিনের ক্রমাগত আত্মপ্রকাশ আর টিকা দেওয়ার মাধ্যমে কোভিড লড়াইয়ে শক্তিশালী অবস্থা তৈরি হলে কোভিড-১৯ এবছরে এসে ক্ষয়ে যাবার পথেই এগোবে আর আমরা ধীরে ধীরে ফিরে যাব স্বাভাবিক অবস্থায়- এ প্রত্যাশা তো করা যেতেই পারে।

বর্তমানে প্রাপ্ত ভ্যাকসিনের দুইটি ডোজ, একটি নিয়ে দ্বিতীয়টি ভুলে যাওয়া চলবে না, দ্বিতীয়টি নিতে হবে সময়মত।

ভ্যাকসিন নিয়ে ফুরফুরে মেজাজে আবার মাস্ক পরা, সাবান দিয়ে হাত ধোয়া, জনসমাগম এড়িয়ে  চলা, দূরত্ব মানার মত জরুরি বিষয়গুলো ফাঁকি দেওয়া চলবে না। প্রথম ডোজের কার্যকারিতা ৭০ শতাংশ হলে ৩০ শতাংশ ঝুঁকি ফ্যাক্টর থেকেই যাচ্ছে। ভ্যাকসিন আপনাকে কোভিডাক্রান্ত হওয়া থেকে রক্ষা করলেও আপনি সংক্রমণ ছড়ানোর কারণ হবেন না এখন পর্যন্ত এই বিষয়টি নিশ্চিত নয়। অতএব, কোভিডমুক্ত এক সকালের প্রত্যাশায় ভ্যাকসিন গ্রহণের সাথে সাথে সরকারের পরবর্তী নির্দেশনা পর্যন্ত  মাস্ক, সাবান আর দূরত্ব বজায় রাখার অভ্যাস চালিয়ে  যাবার বিকল্প নেই।