করোনাভাইরাস: বাংলাদেশের ‘উদ্ভাবিত’ নাকের স্প্রে এবং প্রাসঙ্গিক কিছু কথা

নাদিম মাহমুদনাদিম মাহমুদ
Published : 17 Jan 2021, 01:58 PM
Updated : 17 Jan 2021, 01:58 PM

সারা বিশ্বের গবেষকরা করোনাভাইরাসকে ঠেকানোর জন্য গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন। কোভিড-১৯ ঠেকানোর গবেষণায় বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে বিশেষ বরাদ্দ হচ্ছে। বলতে গেলে, গবেষকদের একটি বড় অংশ এখন কোভিড-১৯ সম্পর্কিত গবেষণায় যুক্ত হচ্ছেন। আর এ ধারা থেকে বাদ পড়েনি আমাদের দেশও। কয়েক মাস পর পর বিভিন্ন গবেষক সংবাদ সম্মেলনে এসে, কোভিড-১৯ মোকাবেলায় কৌশল তুলে ধরছেন। কেউ ভ্যাকসিন, কেউ কাপড় আবার কেউ কেউ বিভিন্ন রাসায়নিক ব্যবহারের দিক নির্দেশনা দিচ্ছেন।

২০২০ সালের এপ্রিলে করোনাভাইরাস সংক্রমণের শুরুতেই বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অধ্যাপক 'ইথানল-মিশ্রিত কুসুম গরম পানির কুলকুচি করে বা বাষ্প টেনে করোনাভাইরাসকে মেরে ফেলা সম্ভব' বলে জাতীয় দৈনিক ও টেলিভিশনগুলোতে বক্তব্য দিয়ে আলোচনার খোরাক জমান (সূত্র-১)। গবেষণাগারে গবেষণা না করেই অন্য গবেষকের দেওয়া তাত্ত্বিক মতবাদ থেকে ধার করে 'ইথানল'-দিয়ে সার্স-কভ-২ ভাইরাসকে ধ্বংস করার এমন কৌশল নিয়ে গণমাধ্যমের অতি উৎসাহী খবরে জাতির কেউ কেউ পুলক অনুভব করেছিল। 

তবে দেশের ভেতর এবং বাইরের সায়েন্টিফিক কমিউনিটিতে তা 'টিকে' ওঠেনি। বিজ্ঞানভিত্তিক যুক্তি ও গবেষণার ডেটা না থাকার ফলে, ইথানল তত্ত্বে করোনাভাইরাস ধ্বংসের 'মূল্যবান' ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি'  এখনো আলোর মুখ দেখেনি। বিষয়টি নিয়ে আমি হতাশ।

এরপর মে মাসে যুক্ত হলো- করোনাপ্রতিরোধী কাপড় উদ্ভাবনের খবর। একটি কোম্পানি দাবি জানিয়েছিল- "ফিনিশিংয়ের শেষ পর্যায়ে ওই কাপড়ে এমন একটি রাসায়নিক ব্যবহার করা হয়েছে, যার সংস্পর্শে এলে করোনাভাইরাস ১২০ সেকেন্ডের মধ্যে ধ্বংস হয়!" তবে কী এমন সেই মূল্যবান রাসায়নিক পদার্থ, তা আজও জানা যায়নি। এমনকি এ কাপড় ঠিক কোন কৌশলে করোনাভাইরাসকে মেরে সাফ করে ফেলবে, তার কোন বিজ্ঞানভিত্তিক উত্তরও আমরা জানতে পারেনি (সূত্র-২)। 

যাই হোক 'করোনাভাইরাস নির্মূলকারী' কাপড়টি বাজারে এলে কিন্তু মারণাস্ত্র হিসেবে সারা বিশ্বে পরিচিত হতো। আমি কখনোই এসব আইডিয়াকে তিরস্কার বা উপহাস করছি না। 'করোনাভাইরাস প্রতিরোধী কাপড়' যদি বিজ্ঞানভিত্তিক যুক্তি তর্ক দিয়ে তুলে ধরা হতো, তাহলে নেহাত বাংলাদেশের সম্মান এবং শ্রদ্ধার জায়গা গবেষণা পরিমণ্ডলে কয়েকগুণ বেড়ে যেত।

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের উদ্ভাবিত কোভিড 'র‌্যাপিড টেস্ট কিটে'র কথা তো সবারই জানার কথা। এ নিয়ে আমরাও লেখালেখি করেছি। গবেষণার নৈতিক বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা-সমালোচনাও হয়েছে। দিন শেষে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের এ অ্যান্টিজেন কিটটি আলোর মুখ দেখতে পায়নি। 

এসব আলোচনার মধ্যে সম্প্রতি যোগ হয়েছে নাকের স্প্রে, যা দিয়ে নাসারন্ধ্র, মুখ গহ্বর এবং শ্বাস ও খাদ্যনালীর মিলনস্থলের আটকে থাকা সার্স-কভ-২ ভাইরাসকে ধ্বংস করা যাবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ রেফারেন্স ইনস্টিটিউট ফর কেমিক্যাল মেজারমেন্টস (বিআরআইসিএম)। (সূত্র-৩)

প্রতিষ্ঠানটির ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক মালা খানের নেতৃত্বে এই 'মূল্যবান' রাসায়নিক দ্রবণটি নাকের স্প্রে হিসেবে উদ্ভাবিত হয়েছে বলে গণমাধ্যমের খবরে উঠে এসেছে। বিষয়টি জানার পর খুবই খুশি হয়েছি। গবেষণায় তলানিতে যাওয়া এই দেশের এমন উদ্ভাবন সত্যি আশা জাগায়। আমি মনে প্রাণে চাই, বাংলাদেশ কিছু একটা করুক। এটি যেন অতীতের আইডিয়াগুলোর মত অকালে যেন ঝরে না পড়ে!

যেকোনও গবেষণা অত্যন্ত শ্রমের, মেধার আর ধৈর্যের ফসল। আমরা যারা গবেষণা করে যাচ্ছি, তাদের পরিবারের জন্য যতটুকু সময় দিতে হয়, তারচেয়ে বেশি সময় আর নিখাঁদ ভালোবাসা বুঝি গবেষণার পিছনে চলে যায়। 

বিআরআইসিএম এর এ গবেষণার কোনও তথ্যই আমরা পাইনি। কেবল জানতে পেরেছি, তাদের দ্রবণ ব্যবহার করে প্রায় দুইশ করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগী নাকে ও মুখে প্রয়োগ করে বড় ধরনের সফলতা পেয়েছে। 

নাকের এ স্প্রে-টির নাম রাখা হয়েছে 'বঙ্গোসেইফ ওরো নেইজল স্প্রে'। 

বিআরআইসিএমের এই উদ্ভাবনের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে করোনাভাইরাস মোকাবেলায় সরকারের গঠিত জাতীয় টেকনিক্যাল পরামর্শক কমিটির সদস্য ভাইরোলজিস্ট অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "এরকম স্প্রে নিয়ে কাজ হচ্ছে বলে শুনেছিলাম। তবে সেটা যে উদ্ভাবন হয়েছে এটা আপনার কাছ থেকে শুনলাম। যারা করেছে তাদের উচিত এর বিস্তারিত নিয়ে একটা রিপোর্ট করা। তাহলে বিশেষজ্ঞরা আরও বিস্তারিত মতামত দিতে পারবেন।"

বিষয়টিকে মোটেও হাল্কা করে দেখার অবকাশ নেই। আমরা যখন গবেষণাগারে ভাল কিছু পাই, তখন সেটি মাইক্রো স্কেলে কোষের ভেতর পরীক্ষা করে, তার ফল পর্যবেক্ষণ করি। কোন মাত্রায়, কত সময় ধরে প্রয়োগ করে সফল হওয়া গেল- তা নোট করতে হয়। সেটিতে সাফল্যে আসলে পরবর্তীতে ছোট বা মাঝারি আকারের প্রাণীর দেহে প্রয়োগের মাধ্যমে তার ফল নিশ্চিত করি। এরপর বড় আকারের ট্রায়ালের জন্য সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রের প্রচলিত আইনের অধীনে থাকা দপ্তরের অনুমতি নিতে হয়। কিন্তু বাংলাদেশ মেডিকেল রিসার্চ কাউন্সিল (বিএমআরসি) এর অনুমতি ব্যতিত ২০০ মানুষের শরীরে সরাসরি ট্রায়াল শুধু ভয়ানক ব্যাপারই নয়, গবেষণার নীতি বিরোধী ও আইনত অপরাধ হওয়ার কথা।

বাংলাদেশ মেডিকেল রিসার্চ কাউন্সিল (বিএমআরসি) ঔষধ গবেষণায় নীতিমালার ১০ (১) ধারায় বলা হচ্ছে, For new drugs, adequate evidence derived from animal studies must be available to ensure and toxicity prior to conducting a study on human. 

এর অর্থ দাঁড়ায়, নতুন ওষুধ মানবদেহে গবেষণা করার আগেই প্রাণীদেহে পরিচালনা করার মাধ্যমে গবেষণার প্রাপ্ত তথ্যে নিশ্চিত হতে হবে যে তার ক্ষতিকর দিক নেই (সূত্র-৪)।

আর এ ধরনের গবেষণার ট্রায়াল তখনই করা যাবে, যখন বাংলাদেশ ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের (ডিজিডিএ) মহাপরিচালক অনুমতি দেবেন। এই নীতিমালার ১০ (১) এর ১ এর উপধারায় বলা হচ্ছে, Trial of drugs without the approval of the DGDA and appropriate agencies should be dealt with according to the law of the land. অর্থাৎ কেউ যদি ওষুধের ট্রায়ালের জন্য ঔষধ প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরের অনুমতি গ্রহণ না করে, তাদের দেশের প্রচলিত আইনে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে।

গুড ক্লিনিক্যাল প্র্যাকটিস (জিসিপি)-কে মূল ধরে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং ইন্টারন্যাশনাল কমিটি অন হারমোনাইজেশন (আইসিএইচ) দেওয়া নীতিমালা সু-স্পষ্ট অনুসরণ করে বিজ্ঞানভিত্তিক ট্রায়ালের জন্য প্রটোকল তৈরি করতে হবে এবং তা বাস্তবায়ন করতে হবে।

চার ধাপে ক্লিনিক্যাল ফেইজ হওয়ার কথা থাকলেও, সেটি আদৌ কোন ধাপে রয়েছে তা আমার জানার বাইরে। তবে গণমাধ্যমের খবরে জানা গেল, কেবল নাকে স্প্রেই তারা করেনি, বিভিন্ন মাত্রায় মানুষের শরীরে এ রাসায়নিক দ্রবণটি প্রয়োগ করে তারা একটি মাত্রাও ঠিক করে দিয়েছেন। যে মাত্রায় করোনাভাইরাস দূর হয়ে, পজিটিভ রোগী নেগেটিভ হয়ে গেছেন! 

ওয়েট ল্যাবের গবেষণা সরাসরি ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল থেকে ডেটা সংগ্রহ সত্যি বিরল বটে।  

আর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ঠিক কোন ডেটার উপর ভিত্তি করে ২০০ জন রোগীকে নাকের স্প্রে দেয়ার সাহস পেল তাও বোধগম্য নয়। কোলাবরেটিভ গবেষণা হলেও আমাদের গবেষণার নীতিমালা অনুসরণ করা উচিত। আর সেটার ব্যত্যয় হলে, মানবদেহে ট্রায়াল কখনোই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।

মালা খানদের দাবি অনুযায়ী, এটি বিশ্বে তারাই প্রথম উদ্ভাবন করেছেন। যে রাসায়নিক দ্রবণটি ব্যবহার করা হয়েছে, সেটি নাকি দীর্ঘ সময় ধরে অ্যান্টিসেপটিক হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। আমি এখনো নিশ্চিত নই, তারা কোন ধরনের রাসায়নিক উপাদানের কথা বলছেন।

তবে তাদের এ গবেষণারও আগে থেকে পোভিডন-আয়োডিন (পিভিপি-১) নামক এক প্রচলিত রাসায়নিকের মিশ্রণের দ্রবণ নাকের স্প্রে হিসেবে করোনাভাইরাস ধ্বংস করার তথ্য সায়েন্টিফিক জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে গত বছরের সেপ্টেম্বরে (সূত্র-৫)। একই ধরনের দ্রবণ নিয়ে আরো একটি গবেষণাপত্র গত বছরের অক্টোবরে প্রকাশ হয়েছে (সূত্র-৬)। পোভিডন-আয়োডিন সার্স ও মার্স ভাইরাসে কার্যকরী ফল দেয়। তবে এ মিশ্রণটি সার্স-কভ-২ ভাইরাসকে মাত্র ১৫ সেকেন্ডে মেরে ফেললেও মানবদেহে এর দগদগে খারাপ প্রভাব রয়েছে। যার ফলে গবেষকরা পোভিডন-আয়োডিনকে করোনাভাইরাসকে ধ্বংস করার জন্য ব্যবহারের কার্যকর দিক হিসেবে এখনো বিবেচনার বাইরে রেখেছেন।

শুধু এটিই নয়, কানাডাভিত্তিক SaNOtize কোম্পানি নাইট্রিক অক্সাইডকে ব্যবহার করে এক ধরনের দ্রবণ তৈরি করেছে, যা কোভিড-১৯ মোকাবেলায় ৯৯ শতাংশ কার্যকর বলে দাবি করেছে।  কোম্পানিটি কানাডায় ফেইজ-২ ট্রায়ালের জন্য গত বছরের ২২ এপ্রিল আবেদন করেছিল। সম্প্রতি যুক্তরাজ্যে ট্রায়ালের জন্য অনুমতি পেয়েছে বলে ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল হচ্ছে (সূত্র-৭)।  

গত বছরের নভেম্বরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের Xlear, Inc কোম্পানি, কোভিড-১৯ ঠেকাতে জিলার 'Xlear nasal spray' উদ্ভাবন করেছে। আর এই সংক্রান্ত একটি গবেষণা, একটি পিয়ার রিভিউ জার্নালে Potential Role of Xylitol Plus Grapefruit Seed Extract Nasal Spray Solution in COVID-19: Case Series শিরোনামে প্রকাশিত এক গবেষণাপত্রে জানিয়েছে। জালিটল ও আঙ্গুরের বীজের গুড়ার মিশ্রণে তৈরি করা এ দ্রবণ ব্যবহারের ফলে কোভিড আক্রান্ত রোগীর উপসর্গ উপশম হয়েছে (সূত্র-৮)। যদিও তারা মাত্র তিনটি রোগীর ক্ষেত্রে ডেটা দেখিয়েছে, তবে সেটির গবেষণা এখনো চলছে।

আমাদের দেশের গবেষকদের দাবি করা নাকের স্প্রে নিয়ে যে কৌতুহল তৈরি হয়েছে, বিভ্রান্তি ছড়িয়েছে- তার জন্য গবেষকরাই প্রত্যক্ষভাবে দায়ী। পরিসংখ্যানগতভাবে এ গবেষণায় বিশ্লেষণ কেমন ছিল, তা যেমন জানা দরকার- তেমনি দেশের প্রচলিত গবেষণার গাইডলাইন অনুসরণ করা উচিত।

সবচেয়ে ভয়ানক ব্যাপার হলো, এ গবেষণায় জড়িত  বাংলাদেশ রেফারেন্স ইনস্টিটিউট ফর কেমিক্যাল মেজারমেন্টস (বিআরআইসিএম) ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক মালা খানের এধরনের গবেষণার অভিজ্ঞতা নিয়ে রয়েছে প্রশ্ন। 

কম্পিউটার সায়েন্সে স্নাতক করা মালা খানের রসায়নে মাত্র দেড় বছরে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন নিয়েই রয়েছে সমালোচনা। গণমাধ্যমের খবর বলছে, তার 'জালিয়াতির মাধ্যমে পিএইচডি সনদ বাগিয়ে নেওয়া', পদ-পদবীতে আসেনি কোনও বাঁধা। 

জালিয়াতির অভিযোগে অভিযুক্ত একজন ব্যক্তির 'নন-স্পেশালিস্ট' হিসেবে বায়োলজিক্যাল সায়েন্সে গবেষণার ফল নিয়ে সন্দেহ করা কখনোই অমূলক হবে না। নৈতিকভাবে ভঙ্গুর মালা খানের গবেষণায় নৈতিকতা আপাতত আমরা দেখতে পাইনি। 

পেটেন্ট করতে হলেও যে প্রাথমিক গবেষণার ডেটা জমা দিতে হয়, সেটি মূল্যায়নে যে কমিটি থাকে- তা মালা খান জানেন কিনা আমার জানা নেই, তবে কোভিড উপসর্গ কমাতে নাকের স্প্রে উদ্ভাবনে আপাতত 'নৈতিকতার' প্রশ্ন আমরা দাঁড় করাচ্ছি। আমরা চাই, এ ধরনের রাষ্ট্রীয় মৌলিক গবেষণা ইনস্টিটিউটগুলোতে গবেষণায় অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের আনা হোক।

আর আমাদের গণমাধ্যমের একটা সংকট আছে বিজ্ঞান সাংবাদিকতায়। কেউ কোনও সংবাদ সম্মেলন করে, যদি দাবি করে 'ক' উদ্ভাবন হয়েছে, সেটি কোন রকম যাচাই-বাছাই না করে সংবাদ পরিবেশন করে ফেলে। এটা আমাদের বড় সীমাবদ্ধতা।

আমাদের কোনও আইডিয়া এলে, সেটি জাইগোট অবস্থায় আমরা দাবি করে ফেলি বাচ্চা বের হয়েছে। 'আইডিয়া ইনকিউবেশন' এ থাকা অবস্থায় সংবাদ সম্মেলন করে পুরো দেশে হইচই ফেলে দিই। কিন্তু সেটার কী আদৌ প্রয়োজন ছিল?

আমি বরাবরই বলে আসছি, কোনও কিছু উদ্ভাবন হলে, আপনারা প্রথমে পেটেন্ট করেন, তারপর পিয়ার রিভিউ জার্নালে দেন, সারা বিশ্বকে জানান আপনাদের যুগান্তকারি উদ্ভাবনের কথা। আর সেটা না করে, সংবাদ সম্মেলন করে, হুমড়িতুমড়ি করে বড় গবেষণা বলে চালিয়ে দেওয়া, কেবল পত্রিকার পাতার মধ্যে সীমাবদ্ধ। সেটাতে আপনাদের ব্যক্তিগত লাভ হলেও ক্ষতি হচ্ছে এ দেশের। 

একই পথ অনুসরণ করে গত এক দশকে যতগুলো সংবাদ সম্মেলনে এ ধরনের উদ্ভাবনের খবর বের হয়েছে, তার কোনটি যে আলোর মুখ দেখেছে ঠিক মনে পড়েনা। আমি চাই না, একটি ভাল আইডিয়ার অপমৃত্যু হোক। হাস্যকর উদ্ভাবন যেন না হয়। আপনাদের গবেষণার ফল জার্নালে আনেন, অনেক বিশেষজ্ঞ আছেন, যারা আপনাদের কর্মকে মূল্যায়ন করবেন। পরিচিতি বাড়বে বাংলাদেশের।

এখন তরুণদের অনেকেই দেশের ভেতর ও বাইরে আন্তজার্তিক মানের গবেষণা করছে। তাদের সূক্ষ্ণ বিশ্লেষণে, হয়তো আপনার ভাল একটা গবেষণার আইডিয়া অকালে ঝড়ে পড়তে পারে। আলোচনা-সমালোচনায় ভেস্তে যেতে পারে আপনার উদ্ভাবন। তাই সংবাদ মাধ্যমে কোনও কিছু উপস্থাপন করার আগে, সায়েন্টিফিক ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে উপস্থাপনের চেষ্টা করা উচিত। ডেটা উপস্থাপন করা উচিত। সেটা না করলে, দেশের মানুষের স্বাস্থ্য নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে, অনেক গবেষকদের কাছে 'আপনাদের গবেষণার বিভ্রান্তি' আলোচনার খোরাক হবে।

তথ্যকণিকা

১. https://www.kalerkantho.com/online/country-news/2020/04/08/896313

২. https://bangla.bdnews24.com/business/article1758925.bdnews

৩. https://bangla.bdnews24.com/health/article1847404.bdnews

৪.   https://www.bmrcbd.org/application_form/EthicalGideline/mobile/index.html#p=26

৫. https://jamanetwork.com/journals/jamaotolaryngology/fullarticle/2770785?fbclid=IwAR0w2v3yxcefuFCehD_-qbAmjjc9W-

৬.  https://journalotohns.biomedcentral.com/articles/10.1186/s40463-020-00474-x

৭. https://www.clinicaltrialsarena.com/…/sanotize-trials…/ 

৮.https://www.cureus.com/articles/43909-potential-role-of-xylitol-plus-grapefruit-seed-extract-nasal-spray-solution-in-covid-19-case-series