রোকেয়ার নারীশিক্ষার দৃষ্টিভঙ্গি ও সেকাল-একাল

গোলাম কিবরিয়া পিনুগোলাম কিবরিয়া পিনু
Published : 8 Dec 2020, 06:00 PM
Updated : 8 Dec 2020, 06:00 PM

রোকেয়া সাখাওয়াৎ হোসেন জন্মেছিলেন ১৮৮০ সালে রংপুর জেলার পায়রাবন্দ গ্রামে, এক জমিদার পরিবারে। আনুমানিক ১৬ বছর বয়সে বিহারের অধিবাসী বিপত্নীক ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট সৈয়দ সাখাওয়াৎ হোসেনের সঙ্গে রোকেয়ার বিয়ে হয়। বিয়ের পর তার নাম হয় রোকেয়া সাখাওয়াৎ হোসেন। তবে তিনি বেগম রোকেয়া নামেই সমধিক পরিচিত । ১৯০৯ সালের ৩রা মে সৈয়দ সাখাওয়াৎ হোসেন মারা যান। আর রোকেয়া মারা যান ১৯৩২ সালের ৯ ডিসেম্বর, মাত্র ৫৩ বছর বয়সে।

লেখক হিসেবে গল্প-কবিতা-উপন্যাসের মধ্যে দিয়ে তিনি আত্মপ্রকাশ করেছেন, সংগঠক হিসাবে রোকেয়া স্কুল প্রতিষ্ঠা, নারীর কল্যাণে সংগঠন প্রতিষ্ঠায় এগিয়ে এসেছিলেন। বাঙালি, বাঙালি-মুসলমান, নারীশিক্ষা, নারীজাগরণ তাঁর কর্মকাণ্ডের মূলভূমি হিসেবে বিবেচিত হয়েছে।

মৃত্যুর সময় সাখাওয়াতের সঞ্চিত অর্থের পরিমাণ ছিল সত্তর হাজার টাকা। স্বামীর মৃত্যুর পাঁচ মাস পরে মাত্র পাঁচটি ছাত্রী নিয়ে রোকেয়া ভাগলপুরে একটি বালিকা বিদ্যালয়ের সূচনা করেন। কিন্তু সাখাওয়াতের পূর্বপক্ষীয় কন্যা এবং সেই কন্যার স্বামীর পীড়নে অল্পকালের মধ্যে তিনি ভাগলপুর ছাড়তে বাধ্য হন। ফলে বালিকা বিদ্যালয় স্থাপনের প্রথম উদ্যোগ অঙ্কুরেই বিনষ্ট হয়। তবে বাধা পেলেও নিরুৎসাহ হননি তিনি। কলকাতায় গিয়ে এক বছর পাঁচ মাস পরে, ১৯১১ সালের ১৬ মার্চ তিনি আর একটি বিদ্যালয়ের গোড়াপত্তন করেন। স্কুলটির নাম ছিল- 'সাখাওয়াৎ মেমোরিয়াল গার্লস স্কুল'। রোকেয়ার অক্লান্ত প্রচেষ্টায় ১৯১৭ সালে এই স্কুল মধ্য গার্লস স্কুলে রূপান্তরিত হয়, পরবর্তীতে ১৯৩১ সালে উচ্চ ইংরেজি গার্লস স্কুলে পরিণত হয়। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন কারণে এবং ছাত্রী সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার ফলে স্কুলটি কলকাতার বিভিন্ন স্থানে স্থানান্তরিত করতে হয়।

সাখাওয়াৎ মোমোরিয়াল স্কুলে তফসিরসহ কুরআন পাঠ থেকে আরম্ভ করে বাংলা, ইংরেজি, উর্দু, ফারসি, হোম নার্সিং, ফাস্ট এইড, রান্না, সেলাই, শরীরচর্চা, সঙ্গীত প্রভৃতি বিষয় শিক্ষা দেওয়া হতো। স্কুল পরিচালনা এবং পাঠদান অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য রোকেয়া বিভিন্ন বালিকা স্কুল পরিদর্শন করতেন। পর্যবেক্ষণ করতেন সেসব স্কুলের পাঠদান পদ্ধতিও। কলকাতায় উপযুক্ত শিক্ষয়িত্রী নিয়ে আসেন তার স্কুলে। শিক্ষার ক্ষেত্রে রোকেয়ার নিবেদিত হওয়ার আরও ভূমিকা লক্ষ করা যায়, তার মধ্যে এমনি সচেতনতা ছিল- শিক্ষা ব্যতিত নারী বিশেষ করে মুসলিম নারীর বিভিন্ন পর্যায়ে মুক্তি সম্ভব নয়। শিক্ষা বিস্তারে রোকেয়ার ভূমিকা সেইকালের নিরিখে শুধু তাৎপর্যই ছিল না, ছিল এক কঠিন চ্যালেঞ্জ, সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সাহসী আর উদ্যমী এক নারীর জীবন সংগ্রামের গৌরবময় ভূমিকা আমরা লক্ষ করি তাঁর জীবনের পরতে পরতে।

উনিশ শতক বাঙালি নারী জাগরণের যুগ। সামাজিক অত্যাচার, বিধিনিষেধ, প্রথা, পশ্চাৎপদতা যা নারীকে সীমায়িত করে রাখার শৃঙ্খল হিসেবে বিবেচিত হতো, সেইসব শৃঙ্খল থেকে নারীকে মুক্ত করার জন্য এই সময়ে সমাজে ব্যাপক আলোচনা, উদ্যোগ ও আন্দোলন শুরু হয়। এর ফলে নারীর সামাজিক মর্যাদা ও জীবনের বিকাশ ত্বরান্বিত হয়, অন্যদিকে নারী তার নতুন জীবনবোধ নিয়ে অনেকক্ষেত্রে এগিয়ে যাওয়ার সাহস ও শক্তি অর্জন করে।

আধুনিক চেতনা ও নানা সংস্কার নিয়ে হিন্দু সমাজে মহিলাদের জন্য সচেতন প্রয়াস উনিশ শতকে জোরালো হয়, তাতে হিন্দু সমাজের নারীদের কল্যাণ সাধিত হওয়ার পথ যেভাবে উন্মুক্ত হতে থাকে, সেই একইভাবে মুসলিম নারীদের পথ বিকশিত হতে দেখা যায়নি। এর কারণ মুসলমানদের ধর্মীয়-দৃষ্টিভঙ্গি এবং নেতৃস্থানীয় মুসলমানদের মধ্যে ব্রিটিশ শাসন ও পাশ্চাৎ-শিক্ষা সম্পর্কে মনোভাব অনেকাংশে দায়ী। দেরি হলেও, পরবর্তী সময়ে রোকেয়া সাখাওয়াৎ হোসেনের আর্বিভাব ও মুসলিম নারীদের শিক্ষার পথ অনেকটা সুগম হওয়ায় মুসলিম নারীদের মধ্যে জাগরণ সৃষ্টি হয়।

'পদ্মরাগ' নামের উপন্যাসে রোকেয়ার শিক্ষা বিষয়ে বক্তব্য ও দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয় বিশেষভাবে পাওয়া যায়, যদিও এ-উপন্যাসে তার অন্যান্য বিবেচনা ও মতামত বিভিন্ন চরিত্রের মধ্যে দিয়ে ফুটে উঠেছে। ১৯০২ সালে রোকেয়া রচনা করেছিলেন 'পদ্মরাগ' নামের এই উপন্যাস। যদিও গ্রন্থাকারে সেটি প্রকাশ পেয়েছিল অনেক বছর পরে, ১৯২৪ সালে। আঠাশ পরিচ্ছেদ নিয়ে 'পদ্মরাগ' উপন্যাসটি রচিত হয়েছে। সাধু ভাষায় লেখা এই উপন্যাসে রোকেয়ার অন্যান্য রচনার মতো মাঝে মাঝে ছন্দোবদ্ধ কবিতাও ব্যবহৃত হয়েছে। এই উপন্যাসের কেন্দ্র 'তারিণী-ভবন'। এই ভবনকে কেন্দ্র করে উপন্যাসের ঘটনা ও নায়ক-নায়িকার চরিত্র ফুটে উঠেছে।

'তারিণী-ভবন' লেখিকার নিছক কল্পনার সৃষ্টি নয়। তার ব্যক্তিগত জীবনের আর্দশও এই 'তারিণী-ভবন' এবং সেই জন্যই আদর্শ, শিক্ষা ও কর্মপদ্ধতি সম্বন্ধে তিনি যে আলোচনা করেছেন, তা নিখুঁত ও সুন্দর। 'পদ্মরাগ' উপন্যাসটি আত্মজৈবনিক হিসেবে বিবেচিত হতে পারে, দীনতারিণী ও পদ্মরাগ প্রধান চরিত্র দু'টির মাধ্যমে বেগম রোকেয়া তার জীবন প্রতিভাসই উন্মুক্ত করেছেন।

নারীশিক্ষা সম্পর্কে রোকেয়া ভেবেছেন সারাজীবন। শিক্ষার মধ্যে দিয়ে নারীর সীমাবদ্ধ জীবনের শৃঙ্খল ভাঙা সম্ভব বলেও তিনি ভেবেছেন, শিক্ষা নারীর সচেতনতা বাড়িয়ে দিতে পারে, সেইসঙ্গে আত্মবিশ্বাস ও আত্মমর্যাদা বৃদ্ধি করে নারীর সামাজিক অবস্থান দৃঢ় করা সম্ভব- সেইসাথে নারীর ব্যক্তিত্ব বিকাশে শিক্ষার গুরুত্ব অত্যধিক, সেই তাৎপর্য ও মনোভাবের প্রতিফলন লক্ষ করা যায় উপন্যাসের চতুর্থ পরিচ্ছেদ 'তারিণী-ভবন' অধ্যায়ে-''ছাত্রীদিগকে দুই পাতা পড়িতে শিখাইয়া বিশ্ব-বিদ্যালয়ের ছাঁচে ঢালিয়া বিলাসিতার পুত্তলিকা গঠিত করা হয় না। বিজ্ঞান, সাহিত্য, ভূগোল, খগোল, ইতিহাস, অঙ্কশাস্ত্র- সবই শিক্ষা দেওয়া হয় কিন্তু শিক্ষার প্রণালী ভিন্ন। মিথ্যা ইতিহাসে কণ্ঠস্থ করাইয়া তাহাদিগকে নিজের দেশ এবং দেশবাসীকে ঘৃণা করিতে শিক্ষা দেওয়া হয় না। নীতিশিক্ষা, ধর্ম্মশিক্ষা, চরিত্র-গঠন প্রভৃতি বিষয়ে অধিক মনোযোগ দান করা হয়। বালিকাদিগকে অতি উচ্চ আর্দশের সুকন্যা, সুগৃহিণী ও সুমাতা হইতে এবং দেশ ও ধর্ম্মকে প্রাণের অধিক ভালবাসিতে শিক্ষা দেওয়া হয়। বিশেষতঃ তাহারা আত্ম-নির্ভরশীলা হয় এবং ভবিষ্যৎ-জীবনে যেন কাষ্ঠপুত্তলিকাবৎ পিতা, ভ্রাতা বা স্বামী-পুত্রের গলগ্রহ না হয়, এ বিষয়ে বিশেষ দৃষ্টি রাখা হয়।''

রোকেয়ার সময়কালে নারীর শিক্ষার ধরন ও শিক্ষার সামাজিক প্রেক্ষাপটে ভূমিকা কীরূপ ছিল তা উপন্যাসে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। শিক্ষা তখনো নারীর স্বাবলম্বী হয়ে ওঠার ক্ষেত্রে সমাজের বিভিন্ন পরিধিতে বি¯তৃত ও বিকাশ লাভ করেনি, ঘরের চার দেওয়ালের মধ্যে সাংসারিক কর্মকাণ্ডের বিষয়গুলোকে ঘিরে শিক্ষা আবর্তিত হচ্ছিল- এ রকম চিত্র উপন্যাসের ষষ্ঠ পরিচ্ছদে 'নিতান্ত একাকিনী' অধ্যায়ে দেখা যায়- ''সিদ্দিকা কারচুরি ইত্যাদি উচ্চদরের সেলাই জানিতেন বটে কিন্তু নিত্যপ্রয়োজনীয় কাপড় সেলাই করিতে শিখেন নাই! খেলা-পড়া যাহা শিখিয়াছেন, তাহাও এক্ষেত্রে অর্থকরী নহে। ফল কথা, জমিদার-পরিবারের কন্যাগণ যেমন লেখাপড়া- শুধু ভাষাশিক্ষা এবং নানারূপ সূক্ষ্ম সুচিকার্য্য, উন বুনান ইত্যাদি শিক্ষা করিয়া থাকেন, সিদ্দিকাও তাহাই জানিতেন। সুতরাং সিদ্দিকা দেখিলেন, তাঁহার কোন বিদ্যাই পয়সা উপার্জ্জন করিবার উপযোগী যোগ্যতা লাভ করে নাই। অঙ্ক না জানার জন্য লেখাপড়া কাজে আসিল না। শেষে সেলাই করিতে চাহিলেন, তাহাতেও কাটা ছাঁটার হেঙ্গাম। অবশেষে স্থির হইল, তিনি দরিদ্র রোগীদের জামা, পর্দ্দা, চাদরের মুড়ি, বালিশের ওয়াড় প্রভৃতি সেলাই করিবেন।''

উনিশ শতকে এসে খ্রিস্টান মিশনারিদের উদ্যোগে যে নারীশিক্ষার সূচনা হয়েছিল, তারই অংশ হিসেবে অন্তঃপুরে নারীশিক্ষার গোড়াপত্তন হতে আমরা দেখি। বিভিন্ন পর্যায়ে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার অনুকূল পরিস্থিতিতে শুধু মিশনারিরা নয়, ব্রাহ্মসমাজ, শিক্ষিত হিন্দু-মুসলমান, বিভিন্ন সমিতি-সংস্থা ও সরকার এই ধারার শিক্ষা-কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করে। বামাবোধিনী পত্রিকার ১৮৭৩ খ্রিস্টাব্দের অগাস্ট মাসের সংখ্যায় শিক্ষা বিভাগের ১৮৭১-৭২ সালের রিপোর্ট আলোচিত হয়। সেই রিপোর্ট অনুযায়ী কলিকাতায় সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত বালিকা বিদ্যালয়ের সংখ্যা ছিল ১১০টি এবং ১৪টি বালিকা বিদ্যালয় ছিল, যেগুলি সরকারি সাহায্য পায় না, এবং উভয় স্কুলে ছাত্রীসংখ্যা ছিল ৭৩২জন, এরমধ্যে মাত্র ৫৮জন ছিল মুসলিম ছাত্রী। এর চেয়েও অধিকতর করুণ চিত্র পাই ১৮৮০ খ্রিস্টাব্দে ইডেন বালিকা বিদ্যালয়ে- সেখানে মোট ছাত্রী সংখ্যা ১৫৩ জনের মধ্যে মুসলিম ছাত্রী সংখ্যা মাত্র ১ জন।

আর বর্তমানে সরকারি হিসাব থেকে দেখা যায়, বাংলাদেশের প্রাথমিক পর্যায়ে বর্তমানে ভর্তির হার শতকরা ৯১ ভাগ যার মধ্যে মেয়ে শিশুরা ছেলেদের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে (যথাক্রমে ৯৪.৭ শতাংশ ও ৮৭.৮ শতাংশ) । গত কয়েক বছরের এসএসসি ও এইচএসসির ফলাফল থেকেও দেখা যায়, সব শিক্ষাবোর্ডেই মেয়ে শিক্ষার্থীরা ছেলেদের তুলনায় ভালো কিংবা সমান ফলাফল করছে। দারিদ্র, পারিবারিক অনীহা, ধর্মীয় কুসংস্কার, ইভটিজিং, মেয়েদের নিরাপত্তাহীনতার মতো বাধাসমূহ অতিক্রম করেই মেয়েরা এই সাফল্য অর্জন করেছে। শিক্ষার ক্ষেত্রে নারীর এই অগ্রগতির ধারা কোনোভাবেই সীমাবদ্ধ করার প্রবণতাকে মেনে নেওয়া যায় না।

নারীরা উনিশ শতক থেকে একবিংশ শতাব্দীর এইসময় পর্যন্ত অনেকদূর এগিয়েছে। কিন্তু এই পথচলাকে রুদ্ধ করে দেওয়ার জন্য বহু রকমের টালবাহানা, উপদ্রব ও বিভ্রান্তি ছড়িয়ে দিয়ে নারীকে আবারও অবরোধবাসিনী হিসেবে সীমায়িত করার প্রবণতা লক্ষ করা যাচ্ছে। নিকট অতীত থেকে ভবিষ্যতের পথ ধরে এগিয়ে যেতে চায় নারীরা কিন্তু কোনো কোনো মহল বহু যুগ আগের অতীতে নিয়ে যেতে চাইছে তাদের, আবার কোনো কোনো গোষ্ঠী শত শত বছর আগে প্রতিস্থাপন করতে চাইছে নারীদের! তা হয়তো সম্ভব নয়। কিন্তু কালজ্ঞ-শক্তির লোকেরা নারীদের এগিয়ে থাকা অবস্থানকে ধর্মের নামে, পোশাকের নামে, একরৈখিক ভেদবুদ্ধি দিয়ে ও যুক্তিহীন অমানবিকতার পটভূমি তৈরি করে আবারও শৃঙ্খলার নামে শৃঙ্খল পরাতে চাইছে নারীদের!

উনিশ ও বিশ শতকের প্রথমে যে-সব নারী লেখক হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছেন তাদের মধ্যে রোকেয়া ছিলেন গভীরভাবে সমাজসচেতন ও যুক্তিবাদী, অন্যদিকে সমাজ পরিবর্তনে একনিষ্ট সংগঠক হিসেবে ছিলেন উজ্জ্বল পথিকৃত। সমাজ-সাহিত্য-নারী বিষয়ে এগিয়ে থাকা একজন মানুষ হিসেবে তার উত্তর প্রজন্মের নারীরা তার কাছ থেকে পেয়ে আসছেন অনুপ্রেরণা ও সংগ্রাম-অধিকার-জাগরণের প্রেষণা, যা এখনও এক প্রধান উৎসমূল।