মূর্তি বনাম ভাস্কর্য এবং আওয়ামী লীগের গন্তব্য

কামরুল হাসান বাদলকামরুল হাসান বাদল
Published : 20 Nov 2020, 11:59 PM
Updated : 20 Nov 2020, 11:59 PM

রাজধানীর ধোলাইপাড়ে বঙ্গবন্ধুর নামে স্থাপিত ভাস্কর্যকে মূর্তি হিসেবে উল্লেখ করে তা অপসারণের দাবি জানিয়েছে ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন নামে একটি ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল। 

১৩ নভেম্বর শুক্রবার জুমার নামাজ শেষে রাজধানীর ধূপখোলা মাঠে এক সমাবেশ থেকে বক্তারা এই দাবি জানান। বক্তারা বলেন, বাংলাদেশ মসজিদের দেশ, আউলিয়ার দেশ, মাদ্রাসার দেশ। এ দেশে কোনো মূর্তি থাকতে দেওয়া হবে না বলেও জানান তারা। সমাবেশে বলা হয়, সারাদেশের সড়কের মোড়ে মোড়ে মূর্তি বসানো হয়েছে সে সব মূর্তি সরানোর জন্য আন্দোলন করা হবে। (বিভিন্ন সংবাদপত্রের বরাতে)

এখন তো দেশে সবাই 'আওয়ামী লীগ'। আমার ধারণা ছিল এর পরদিন সারাদেশে এই বক্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ হবে। প্রতিক্রিয়া হবে। রাজপথে লক্ষ মানুষের সমাবেশ না হোক অন্তত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিষয়টির ব্যাপক প্রতিক্রিয় হবে। কিন্তু আমাকে হতাশ করে তেমন কিছুই ঘটল না। 

বরং তার দুইদিন পর আওয়ামী লীগের যুব সংগঠন যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি নিয়েই কয়েকদিন ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বিশেষ করে ফেইসবুক সরব থাকল। ছোট ও সহমতভাইয়েরা তাদের নিজ নিজ নেতাদের অভিনন্দনে ভাসিয়ে দিলেন আর বঞ্চিতদের অনুসারীরা মিউ মিউ গলায় এক প্রকার নিন্দা ও সমালোচনা করে গেলেন। এদের কেউ মাত্র দুইদিন আগে জাতির পিতার ভাস্কর্য নিয়ে কটূক্তিকারীদের বিরুদ্ধে একটি স্ট্যাটাসও দেয়নি।

তবে কেউ কেউ তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ করেছেন তাদের অধিকাংশই সরাসরি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নন কিন্তু সত্য, সুন্দর ও মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশের পক্ষে। অনেক লিবারেল মুসলিম তাদের 'বদরাগী' মুসলিম ভাইদের বোঝানোর চেষ্টা করেছেন যে, মূর্তি ও ভাস্কর্য এক নয়। মূর্তি বানানো হয় পূজার জন্য, আর ভাস্কর্য হলো শিল্প। অনেকে বিশ্বের বিভিন্ন মুসলিম দেশে স্থাপিত ভাস্কর্যের ছবিসম্বলিত পোস্ট প্রকাশ করেছেন ফেইসবুকে।

জাতির পিতার ভাস্কর্য নিয়ে আপত্তিকর বক্তব্য দেওয়ার পর মন্ত্রিসভা থেকে আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ বা প্রতিক্রিয়া প্রকাশিত না হলেও চট্টগ্রামের প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরীর সন্তান শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল খুব কড়া ভাষায় প্রতিবাদ করেছেন। তিনি বাড়াবাড়ি করলে ঘাড় মটকে দেবার হুঁশিয়ারিও উচ্চারণ করেছেন। এছাড়া চট্টগ্রামের কয়েকটি কলেজের ছাত্রলীগকর্মীরা প্রতিবাদ সমাবেশ ও মানববন্ধন করেছে।

সরকারের এক দায়িত্বশীল ব্যক্তি বলেছেন, 'এমন দাবি উত্থাপনকারীরা খুব ক্ষুদ্র একটি দল। তাদের পাত্তা দেওয়ার কিছু নেই।'

বিষয়টি আপাতদৃষ্টে তেমন মনে হলেও আমাদের মতো অনেকেই মনে করছেন এমন দাবি মৌলবাদীদের 'অ্যাসিড টেস্ট' হতে পারে। এমন বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ার ওপর নির্ভর করবে তাদের পরবর্তী পদক্ষেপ। এদের বিশ্বাস করার কোনো কারণ নেই। এদের মধ্যে অনেকের সঙ্গে সরকারের বোঝাপড়া থাকলেও পাশা উল্টে যেতে দেরি হবে না কারণ তেল ও পানি কখনো মেশার কথা নয়।

এই যে তেল ও পানি না মেশার কথা বললাম তা কতখানি সত্য? অর্থাৎ এই উদাহরণ দিয়ে যদি আমি দুইটিকে (অর্থাৎ আওয়ামী লীগ ও মৌলবাদী সংগঠন) দুই মেরুর বলে চিহ্নিত করি তাহলে তা কতটুকু সঠিক করলাম তা একটি প্রশ্ন বটে। ইসলামী মৌলবাদী দল বা ধর্মভিত্তিক দলগুলোর লক্ষ্য, আদর্শ ও নীতি তো আমরা স্পষ্ট বুঝি কিন্তু ধর্মনিরপেক্ষ রাজনৈতিক দল হিসেবে বর্তমান আওয়ামী লীগকে কতখানি বুঝি? দল হিসেবে অসাম্প্রদায়িক রাজনীতির প্রবক্তা এবং সরকার হিসেবে ধর্মনিরপেক্ষ নীতির পক্ষে থাকা বাংলাদেশের সবচেয়ে প্রাচীন দল, যে দলের নেতৃত্বে দেশে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এখন কতটুকু উদার ও অসাম্প্রদায়িক? যে নীতি ও আদর্শের ভিত্তিতে এবং যে লক্ষ্যে জাতির পিতা দেশটি স্বাধীন করেছিলেন বর্তমান আওয়ামী লীগ এবং তার নেতাকর্মীরা তার কতটুকু লালন করেন, বিশ্বাস করেন?

আসলে আওয়ামী লীগ তো বিএনপি ও জাতীয় পার্টির মতো ক্যান্টনমেন্টে জন্ম নেওয়া কোনো দল নয়। একটি নীতি, লক্ষ্য, আদর্শকে সামনে রেখে দলটির জন্ম হয়েছিল। প্রথমে 'মুসলিম' শব্দটি থাকলেও অসাম্প্রদায়িক নীতির কারণে মুসলিম শব্দটি বাদ দিয়ে শুধু আওয়ামী লীগ নামধারণ করেছিল এবং ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনের মধ্যদিয়ে জেগে ওঠা বাঙালি জাতীয়তাবাদের চেতনায় দেশকে স্বাধীন করেছিল।

প্রবল সাম্প্রদায়িক চেতনায় বিভক্ত হওয়া দেশেই মাত্র ২৩ বছরে একটি অসাম্প্রদায়িক ও ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা সম্ভব হয়েছিল বঙ্গবন্ধুর মতো একজন দূরদর্শী রাজনীতিকের কারণে। মাত্র কয়েক বছর আগে যারা মুসলিমদের জন্য আলাদা রাষ্ট্রের দাবি জানিয়েছিল তারাই বঙ্গবন্ধুর ডাকে একটি অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম ও যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছিল। এটি বিশ্ব রাজনীতির ইতিহাসে একটি অসাধারণ ঘটনা। শুধু তাই নয়, সদ্য স্বাধীন দেশের প্রথম সংবিধানের মৌলিক নীতি হিসেবে গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও জাতীয়তাবাদকে নির্ধারণ করাও বিরল ঘটনা। এইসব কিছুই সংঘটিত হয়েছিল আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে। কোনও দল বা জনগণের দাবির মুখে নয়, আওয়ামী লীগ আদর্শগত কারণেই স্বপ্রণোদিতভাবেই এই মহান ও প্রয়োজনীয় কাজগুলো করেছিল। এই দলের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা, জাতির  পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটি সভ্য ও মানবিক রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন। সাধারণ মানুষের একটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন।

জাতির পিতার সেই বাংলাদেশের এখন কতটুকু অবশিষ্ট আছে? তার দল এখন তার নীতি ও আদর্শের কতটুকুই বা ধারণ করে? এটি এখন বিশদ আলোচনার দাবি রাখে। কারণ গত কয়েক দশক ধরে মানুষের মনোজগতে বিশাল একটি পরিবর্তন হয়ে গেছে। বিশেষ করে এই পরিবর্তনটি ধর্মভিত্তিক রাজনীতির প্রচলন আছে এমন দেশে এবং অধিকাংশ মুসলিমপ্রধান দেশে বেশি ঘটেছে। 

এই পরিবর্তন থেকে বাংলাদেশও বাইরে নয়। ১৯৭৫ সালে জাতির পিতাকে হত্যার পর রাষ্ট্রক্ষমতায় যারা এসেছিলেন তারা ক্ষমতার স্বার্থে দেশের ধর্মভিত্তিক রাজনীতির পৃষ্ঠপোষকতা করেছে। মুক্তিযুদ্ধের সময়ে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করার অপরাধে যে দলগুলোকে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার পর নিষিদ্ধ করেছিলেন তাদের পুনরায় রাজনীতি করার সুযোগ দিয়েছে। 

আওয়ামী লীগের অসাম্প্রদায়িক রাজনীতিকে প্রতিহত করতে দেশে সাম্প্রদায়িক ও মৌলবাদী দলগুলোকে বিভিন্নভাবে সহায়তা করা হয়েছে। রাষ্ট্রীয় পর্যায় থেকেই সাম্প্রদায়িকতাকে আশ্রয়-প্রশ্রয় ও লালন করা হয়েছে। অন্যদিকে গত শতকের সাত দশকের শেষদিক থেকে মধ্যপ্রাচ্যে যাওয়ার সুযোগ বৃদ্ধি পাওয়ায় বাংলাদেশ থেকে লাখ লাখ মানুষ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে গেছেন। সেসব দেশ থেকে বয়ে আনা আরবের সংস্কৃতি চালু করেছে বাংলাদেশে। তাদের অনেকে আখেরাতের ফজিলতের উসিলায় মসজিদ-মাদরাসার পেছনে অঢেল অর্থ ব্যয় করেছেন। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ইসলামী জঙ্গি ও উগ্রবাদের প্রসার ঘটায় তার প্রভাবও পড়েছে বাংলাদেশে। আর এরমধ্যে রাজনৈতিক দলগুলো ধর্মকে পুঁজি করে জনসমর্থন আদায় ও ভোটে জেতার রাজনীতি করেছে। 

উদার ও বামপন্থি রাজনৈতিক দলগুলোর নিষ্ক্রিয়তা, দোদুল্যমনতা ও ভুল সিদ্ধান্তের কারণে সমাজের ইতিবাচক পরিবর্তনের পথটি এক সময় রুদ্ধ হয়ে যায়। এবং এক সময় ধর্মই হয়ে ওঠে প্রায় সবকিছুর নিয়ামক।

স্বাধীনতার পরপরই ধর্মনিরপেক্ষতা নিয়ে অপপ্রচার চালিয়েছে স্বাধীনতাবিরোধী মৌলবাদী গোষ্ঠী। ধর্মনিরপেক্ষতাকে ধর্মহীনতা বলে প্রচার চালাতো তারা। গায়ে ধর্মনিরপেক্ষতার গন্ধ থাকায় পঁচাত্তরের পর থেকে আওয়ামী লীগের নেতারা এ গন্ধ দূর করতে বেশি বেশি নামাজ রোজা পালন করেছে। হজ করেছে। মাথায় টুপি, কাঁধে হাজি রুমাল ও হাতে তসবিহ রেখে সমাজে প্রমাণ করার চেষ্টা করেছে তাদের চেয়ে বড় ঈমানদার আর কেউ নাই। বিএনপি, জাতীয় পার্টি সাম্প্রদায়িক দল হলেও তাদের নেতাদের সম্মুখে আওয়ামী লীগের নেতাদের অনেক বেশি ধর্মীয় লেবাসের বলে মনে হয়। 

আমার ভীষণ আশঙ্কা হয়, এ মুহূর্তে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল ও ভাস্কর্য নিয়ে দলের নেতাকর্মীদের মতামত চাইলে অধিকাংশের মত মোল্লাদের মতই হবে। এদের অনেকেই কাজটি গুনাহ-র কাজ বলে মনে করছেন। এদের বিশাল অংশ এত বেশি মূর্তি ও ম্যুরাল না করার পক্ষেই মত দেবেন, অনেকের সঙ্গে কথা বলে তেমনই মনে হল। শুধু আওয়ামী লীগ নয়, দলটির ছাত্র-যুবকদের সংগঠন, যাদের অধিকাংশের দৃষ্টিভঙ্গি উদার ও আধুনিক হওয়া উচিত ছাত্রলীগ ও যুবলীগের অধিকাংশই এখন মনেপ্রাণে রক্ষণশীল। রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগকে সমর্থন করলেও ধ্যান-ধারণায় এরা জামায়াত-হেফাজতি।

কিন্তু এমন হওয়ার কথা নয়। আওয়ামী লীগ করতে হলে, এই দলের সহযোগী ও অঙ্গসংগঠন করতে হলে আওয়ামী লীগের নীতি আদর্শ বুঝতে হবে। তাকে মেনে দল করতে হবে। ছাত্রলীগ করতে হলে তার মূলনীতি জানতে হবে। তা মানতে হবে। আমার সন্দেহ হয় এখন ছাত্রলীগ যারা করে তাদের বিশাল একটি অংশ ছাত্রলীগের মূলনীতি 'শিক্ষা-শান্তি- প্রগতি' বিষয়ে কিছু জানে না। এরা জানেই না ছাত্রলীগ করতে হলে শিক্ষা-শান্তির সঙ্গে সঙ্গে প্রগতির শিক্ষা ও দীক্ষাও নিতে হবে। এ নীতি সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের। এ থেকে বিচ্যুত হওয়া যাবে না। 'ওয়ান ফাইন মর্নিং' জেগে উঠে আমি ছাত্রলীগ করি বললে হবে না। ছাত্রলীগ-যুবলীগ করতে হলে, আওয়ামী  লীগ করতে হলে অসাম্প্রদায়িক রাজনীতিকে ধারণ করতে হবে। ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রব্যবস্থায় বিশ্বাস রাখতে হবে। বাঙালি জাতীয়তাবাদকে ধারণ করতে হবে। আওয়ামী লীগের রাজনীতি করে সাঈদীকে ধর্মীয় নেতা ও ইসলামি স্কলার হিসেবে গণ্য করলে হবে না। আওয়ামী লীগের রাজনীতি করে আজহারীর ওয়াজের ব্যবস্থা করলে হবে না। বঙ্গবন্ধু এসব না করেই, ধর্মনিরপেক্ষতা ও বাঙালি জাতীয়তাবাদকে বিশ্বাস করেই একজন খাঁটি মুসলমান ছিলেন। কাজেই আওয়ামী লীগ করলে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের আওয়ামী লীগ করতে হবে। আওয়ামী লীগ (হেফাজতি) , আওয়ামী লীগ (জামাতি), আওয়ামী লীগ (মাজারপন্থি), আওয়ামী লীগ (আহলে সুন্নাত) ইত্যাদি করলে হবে না। তাতে বঙ্গবন্ধুর রক্তের সঙ্গেই বেঈমানি করা হবে।

আজ এরা বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নিয়ে প্রতিবাদ করছে। এরাই জাতীয় সঙ্গীত নিয়ে বিতর্ক  করেছে। একসময় সবকিছুই নিয়ে করবে। এরা রাষ্ট্রের মূল চারনীতির সঙ্গে একমত নয়। এদের দাবি অনুযায়ী দেশ চালাতে গেলে তা আর বাংলাদেশ থাকবে না। তা পাকিস্তানেরই নামান্তর হবে। কাজেই মৌলিক নীতির প্রশ্নে আপোষ করা উচিত নয়। একটু একটু ছাড় দিতে দিতে নিজের আসনটিও একদিন ছেড়ে দিতে হবে।

মনে রাখতে হবে পাকিস্তান নামক একটি সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র ভেঙে বাংলাদেশ সৃষ্টি হয়েছে আরেকটি সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র হওয়ার জন্য নয়। তাতে ত্রিশ লাখ শহীদের রক্তের সঙ্গে বেঈমানি করা হবে। বেঈমানি করা হবে জাতির পিতার স্বপ্ন ও আদর্শের সঙ্গে। স্বীকার করতে হবে বর্তমানে রাষ্ট্রক্ষমতায় আওয়ামী লীগ থাকলেও সমাজ নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে জামায়াত-হেফাজতি ভাবধারায়। এর থেকে পরিত্রাণের পথও আওয়ামী লীগকেই বের করে নিতে হবে। কারণ মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী শক্তিকে মোকাবেল করার মতো রাজনৈতিক শক্তি এ মুহূর্তে আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য কোনো দলের নেই। আওয়ামী লীগকে কাজটি করতে হবে জাতির স্বার্থে যেমন অতীতে করেছে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের নিজের স্বার্থেও কাজটি করতে হবে একারণে যে, আওয়ামী লীগ তার চরিত্র ও আদর্শ বদল করে জামায়াত-বিএনপিতে পরিণত হলে আম-ছালা দুটোই হারাবে কারণ, ধর্মভিত্তিক রাজনীতি যাদের পছন্দ তারা পরীক্ষিত মিত্র বিএনপি-জামায়াতকে বেছে নেবে আওয়ামী লীগকে নয়। অন্যদিকে যারা অসাম্প্রদায়িক রাজনীতি পছন্দ করে তারাও আস্থা হারাবেন আওয়ামী লীগের ওপর।

ধর্মভিত্তিক রাজনীতির বীভৎস রূপ আমরা প্রত্যক্ষ করেছি। বর্তমানে ধর্মভিত্তিক রাজনীতির জনপ্রিয়তা যেভাবে বাড়ছে তা থামাতে না পারলে কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হবে জাতিকে। 

অনেকে প্রশ্ন তুলতে পারেন অধিকাংশ মানুষ যদি ধর্মভিত্তিক রাজনীতি পছন্দ করে তাতে কী করার আছে। আমি মনে করি এটি একটি ফ্যাসিজম এবং একই সঙ্গে রেসিজম। এটাকে থামাতে হবে মানুষের কল্যাণের স্বার্থে। যেমন থামাতে হয়েছিল জাতীয়তাবোধে উম্মাদ হিটলার ও জার্মানিদের। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের মনে রাখতে হবে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়েছে তার দুটি নীতির কারণে। একটি সমাজতন্ত্র ও অন্যটি ধর্মনিরপেক্ষতা। সমাজতন্ত্রবিরোধী শক্তি সাম্রাজ্যবাদ ও ধর্মনিরপেক্ষতাবিরোধী শক্তি মৌলবাদ একই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। এরা একে অন্যের পরিপূরক ও স্বার্থরক্ষক। কাজেই বঙ্গবন্ধুর রাজনীতি করলে, তাকে ধারণ করলে এই দুই অপশক্তির সঙ্গে আপস করা যাবে না।

তবে প্রশ্ন হলো, এ পথে যাবে  কিনা আওয়ামী লীগ?