আদি টোটেম সমাজ ও সাম্প্রদায়িকতার অভেদ সন্ধান

জাহেদ সরওয়ার
Published : 13 Oct 2012, 04:53 PM
Updated : 13 Oct 2012, 04:53 PM

ফরাসি চলচ্চিত্র পরিচালক জাঁ জাক আনুই একটা সিনেমা বানিয়েছিলেন যার নাম 'কোয়েস্ট ফর ফায়ার'। নিয়ানডারথাল মানুষকেই প্রথম আগুনের আবিষ্কারক ও ব্যবহারকারী হিসাবে ধরা হয়। সেই সময়টা নিয়াই তিনি সিনেমাটা বানিয়েছিলেন। যেহেতু সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষে আগুনের প্রভূত ব্যবহার আমাদের নজর কাড়ে তাই আগুনের সূত্রপাতের মনস্তত্বের দিকে তাকালে মনে হয় তার খানিকটা নিশানা পাওয়া যেতে পারে। তখন সম্প্রদায় হিসাবে মানুষ একই সম্প্রদায়ভুক্ত ছিল। বাকী জীবজন্তু ছিল 'অপর' সম্প্রদায়। তো মহাত্মা আনুই দেখাচ্ছেন সেই যুগ আন্ধারের যুগ। সেই যুগ শিকার মনোবৃত্তির যুগ। মানুষ ঘুরছে বনে বাদাড়ে অপেক্ষাকৃত দুর্বল প্রাণির খোঁজে। কারণ সেসব খেয়েই মানুষ বাঁচে। আর মানুষের চেয়েও হিংস্র প্রাণিরা ঘুরছে মানুষের খোঁজে। দুই ধরণের পশুই মানুষের কাছে 'অপর' এ পরিণত হয়। দুর্বল পশু তাদের খাদ্য হিসাবে বধ্য, সবল পশু তাদের শত্রু হিসাবে। মানুষ এখনো যে কোনো পশু পাখিকে 'অপর' হিসাবে চিহ্নিত করে থাকে। যে কোনো পশুকে সে বধযোগ্য মনে করে। সেই দেখার দৃষ্টিকোণ মানুষ এখনো ত্যাগ করতে পারে নাই, ভবিষ্যতেও পারবে কিনা সন্দেহ।

আরেক বিজ্ঞানী কার্ল সাগান মানুষের এই মনোবৃত্তির নাম রেখেছিলেন 'আর কমপ্লেক্স'। তিনি মানুষের মস্তিকে একধরনের কর্টেক্সকে চিহ্নিত করেছিলেন যেগুলা কিনা এই শিকার মনোবৃত্তির জন্য দায়ী। আবার শিকারের বা বেঁচে থাকার প্রয়োজনেই মস্তিস্তে এই কর্টেক্সের বিকাশ ঘটেছে। যাই হোক সিনেমায় ফেরা যাক। কিন্তু যে কোনো ভাবেই এক খণ্ড আগুন যখন মানুষের হাতে চলে আসল তখন সেটা পরিণত হলো শক্তিতে। সবল প্রাণিরাও সেটারে ভয় পেতে থাকলো। তারাও নির্বিচারে মানুষের উপর আক্রমণ করতে বিবেচনার পরিচয় দিতে থাকলো। আর যারা এখনো আগুন আয়ত্ব করতে পারে নাই, তারা সেই আগুন দখল করতে সচেষ্ট হলো। আগুনকে নিয়া বা তাকে বাঁচানোর সাধনাই হয়ে দাঁড়াল নিয়ানডারথাল মানবের পহেলা ইসু। এখনো মানবজাতির পহেলা ইসু সেই জ্বালানি। জ্বালানি দখলই দুনিয়া দখলের পরাকাষ্ঠা। এই সেই আগুন যা মানবজাতিকে এই অগ্নিসভ্যতা উপহার দিয়েছে।

সিনেমাটা ঘোরের মত, সেখানে দেখা যাচ্ছে। অন্ধকার যুগে অন্য হিংস্র প্রাণিরা দুর্বল প্রাণিদের আড়ালে সুযোগের জন্য অপেক্ষা করছে। সুযোগ পেলেই ঘাড় মটকে দিচ্ছে। আবার মানুষ দলবদ্ধভাবে বেরিয়ে যাচ্ছে দুর্বল প্রাণিদের খোঁজে যাদের খেয়ে তারা বাঁচবে। পথে এমনও মানুষজাতির সাথে তাদের দেখা হয়েছে যারা নরভক্ষক। তো এমন কিছু হিংস্র মানুষেরই আক্রমণে আগুনটা হারিয়ে ফেলে এক টোটেম সদস্যরা। তারা আগুন জ্বালাতে ব্যর্থ হয়ে ফের বেরিয়ে পড়ে আগুনের খোঁজে। একেকটা টোটেম সমাজের পুরা যাত্রাই হয়ে দাঁড়ায় আগুনের জন্য যাত্রা। শেষে অনেক বিপদ আপদ বেরিয়ে তারা অপেক্ষাকৃত এক দুর্বল টোটেম সদস্যদের হাতে বন্দি হয়। কিন্তু বুদ্ধিতে সেই টোটেম সদস্যরা অনেক এগিয়ে। যেমন আগুনের খুব সহজ ব্যবহার তারা শিখে নিয়েছে। যেই টোটেম সদস্যরা আনুইজির সিনেমার নায়কের ভূমিকায় তারা অবাক হয়ে যায়। এত সহজে আগুন জ্বালানো যায়? যাইহোক তারা আগুনের ব্যবহার শিখে নিজ এলাকায় ফিরে আসে ও সেই এলাকা পরিণত হয় তাদের অভায়ারণ্যে। আর পশুদের জন্য আতংকের জনপদ।

সাম্প্রদায়িকতা সম্পর্কে কথা বলতে সামান্য ভনিতা করতে হলো কারণ মানুষের পেরিয়ে আসার সেই আদ্ধিকাল থেকে মানে তাদের অরিজিনগত স্বভাব থেকে তারা সামান্যও এদিক সেদিক যেতে পারে নাই। সেই টোটেম যুদ্ধকেই আমরা নাম দিয়েছি সাম্প্রদায়িক সংঘাত বা দাঙ্গা। আমাদের ধর্মবিশ্বাস সেই টোটেমদের নানান পুজা, অর্চনা, প্রার্থনা ও ভীতির সমন্বয়মাত্র। যা পরে হয়ে উঠেছে পুঁজিবাদি আর সাম্রাজ্যবাদিদের সবচেয়ে বড় শোষণের হাতিয়ার।

রামুতে ঘটে যাওয়া সাম্প্রদায়িক আগ্রাসন প্রসঙ্গেই এই লেখা। ধ্বংসযজ্ঞ পুরাটাই আমি পায়ে হেঁটে দেখেছি। লোকজনের সাথে কথা বলেছি। সেই সূত্রে রামুতে ধ্বংসযজ্ঞের ভেতর দাঁড়িয়ে আমি যেভাবে গ্রন্থিত হয়েছি ইতিহাস, ধর্ম ও বিশ্বরাজনীতির সাথে তার আলোকেই ব্যাপারটা দেখতে চাই। ধর্মই আসলে প্রথম আন্তর্জাতিক ভাবনা। রাজনৈতিকও। ধর্মকে যতই অরাজনৈতিক আখ্যা দিয়ে আড়ালে রাখার চেষ্টা হোক সেইটা সম্পূর্ণ রাজনৈতিক এজেন্ডা।

স্বভাবত দুর্বল মানুষেরা যারা আত্মরক্ষার কলাকৌশলগুলাও শিখতে পারে নাই, বিশেষ করে তৃতীয়বিশ্বে সেখানে ধর্ম খানিকটা বেঁচে থাকার আশ্রয়ও। মার্কস যাকে আফিম হিসাবে আখ্যা দিয়েছিলেন। কেননা ইশ্বরের নামে সমস্ত শোষকের অত্যাচারই মানুষ সহ্য করে যায়। ধর্মবোধের নিয়তিকেই যদি মানুষ তার অপরিবর্তনীয় জীবন হিসাবে মেনে নেয় তাহলে পুঁজিবাদের জন্য এরচেয়ে সুখবর আর কি হতে পারে।

গোটা ইউরোপ বিরাট অংশ, আমেরিকার প্রায় সমগ্র অঞ্চল যিশুখ্রিষ্টের অনুসারী। আফ্রিকার অর্ধেকেরও বেশি, এশিয়ার অর্ধেক প্রায় মুহাম্মদের অনুসারী, এশিয়ার বাকী অর্ধেক হিন্দু ও বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী। ইজরায়েল ও অন্যান্য উন্নত বিশ্বে ছড়িয়ে আছে ইহুদিরা। অর্থনৈতিক তাড়নায় বিভিন্ন ধর্মাবলম্বীরা আবার নিজ দেশে থিতু নাই তারা ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। কিন্তু নেটিভ হিসাবে যেই ধর্মালম্বীদের বাস সেখানে সংখ্যাগরিষ্টের ধর্মের ভিত্তিতেই আমরা অঞ্চলটাকে দেখতে অভ্যস্ত। উদারহরণ হিসাবে দেখা যেতে পারে। ভারত হিন্দু রাষ্ট্র, পাকিস্তান মুসলিম রাষ্ট্র, বার্মা বৌদ্ধ রাষ্ট্র, ইজরাইল ইহুদি রাষ্ট্র, ইউরোপ খ্রীস্টান মহাদেশ ইত্যাদি। কিন্তু এইসব দেশ স্ব স্ব ধর্মীয় জাতীয়তাবাদে বা সম্প্রদায়ে বিভক্ত হলেও সেসবে দেশের সংখ্যালঘু হিসাবে অন্যান্য সম্প্রদায়ের বসবাস রয়েছে। যেমন ভারতে মুসলমান, পাকিস্তান বা বাংলাদেশে হিন্দু, বৌদ্ধ, বার্মায় মুসলমান ইত্যাদি।

অখণ্ড ভ্রাতৃত্যবোধের কথা প্রায় সব ধর্মেই বলা হয়। যেমন মুসলমান মুসলমান ভাই, খ্রিস্টান খ্রিস্টান ভাই, হিন্দু হিন্দু ভাই জাতীয় এক অলিখিত স্ব স্ব ইশ্বরকেন্দ্রিক, আন্তর্জাতিক ধর্মীয় আচার সর্বস্বতা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত গোটা দুনিয়ার ধর্মীয় সম্প্রদায়। একেক লাইন একেক দিকে টানা। যেমন গুজরাতে যখন সংখ্যালঘু মুসলমান নিধন করা হয় সেটাকে আমরা শক্তিশালী টোটেম সমাজ কর্তৃক দুর্বল টোটেমকে আক্রমণ বা বড় মাছ কর্তৃক ছোট মাছকে খেয়ে ফেলা হিসাবে দেখতে পারি। যেহেতু রাষ্ট্রও বড় মাছের বা বড় টোটেমের সে ক্ষেত্রে তাদের আইন শৃঙ্খলা বাহিনীও যে আগ্রাসনেরই অংশীদার হবে তাতে কোনো সন্দেহ নাই। গুজরাতে তা দেখা গেছে। নরেন্দ্র মোদির মত ক্ষমতাবানদের সমর্থনের মধ্য দিয়েই তা সম্ভব হয়েছে। স্বভাবতই খুন ধর্ষণ লুঠ ইত্যাদি খেয়ে ফেলার সঙ্গে তুলনীয়। বাবরি মসজিদ ধ্বংসও সেইরকম। আবার আমেরিকা যখন একটার পর একটা মুসলিম বিশ্বে ধর্মযুদ্ধের নামে বোমা ঢেলে, চালকহীন বোমারু বিমানের মাধ্যমে এশিয়ার মুসলিম দেশগুলাকে মধ্যযুগে পাঠিয়ে দেয় তখনো আসলে সেই টোটেম সংস্কৃতিরই চর্চা হয়। আবার বার্মায় যখন আরাকানের মুসলমানদের গণহারে নিধন করা হয় সেখানেও সেই একই ব্যাপার। কিন্তু গুজরাতে যারা সংখ্যালঘূ নিধন করে, বার্মায় যারা সংখ্যালঘু নিধন করে তারা ভুলে যায় যে এই নিধন এখানেই শেষ নয়। এইখানে এসে এই ঘটনা আর বার্মা বা ভারতের লোকাল থাকে না সেটা রূপ নেয় আন্তর্জাতিকতায়। ধর্মের অশেষ পৃষ্টপোষকতা পুঁজিবাদের অন্যতম বিনিয়োগ।

বেশ কিছুদিন হলো আরাকানে মুসলমানদের উপর ব্যাপকহারে একতরফা আগ্রাসন চালিয়েছে বার্মিজরা। বার্মিজরা যেহেতু বৌদ্ধাবলম্বী সেহেতু বাংলাদেশের   মুসলমানদের চোখে ব্যাপারটা এরকম দাঁড়ায় যে বার্মায় বৌদ্ধরা মুসলমানদের হত্যা করছে।

এইখানে, যদি তর্ক তুলি বার্মা একটা আলাদা রাষ্ট্র তাদের দেশে কি হচ্ছে তাতে আমাদের কিছু যায় আসে না। এই সংবিধান এখানে অকার্যকর কারণ ধর্মের আন্তর্জাতিক ভ্রাতৃরূপ। যেহেতু আমরা সবরকমের ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতারই বিরুদ্ধে তাই প্রশ্নটা জরুরি।

সাম্প্রদায়িক আগ্রাসন কিভাবে হয়েছের চাইতে জরুরি কেন হয়েছে তা সনাক্ত করা। কারণ আমরা ইতিমধ্যে জেনেছি সাম্প্রদায়িক আগ্রাসন কিভাবে সবকিছু তছনছ করে দেয়। দুনিয়ার সব সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা রামুরটার চাইতে ভয়ানক ছিল। রামুতে শুধু ঘর ও মন্দির পোড়ানো হয়েছে। গুজরাতে আরাকানে মসজিদতো পোড়ানো হয়েছেই নারীদের গণহারে ধর্ষণ করা হয়েছে, পোয়াতিদের হত্যা করে নবজাতককে তলোয়ারে বিদ্ধ করা হয়েছে। হাত পা কেটে মানুষকে আগুনে দাহ করা হয়েছে। জীবন্ত মানুষের চোখে মুখে আগুন লাগিয়ে উল্লাস করা হয়েছে। ধর্মের কোথাও কি এইটা লেখা আছে? কিন্তু ধর্মকে আদি টোটেম সমাজে স্থাপন করলে আমরা ব্যাপারটা আন্দাজ করতে পারবো।

মানুষ দুর্বল প্রাণি হওয়া সত্বেও প্রাণিজগতের  সমুদ্রের বা জঙ্গলের অন্যান্য সব জীবজন্তুকেই তার অধীনস্থ করতে সক্ষম হয়েছে। কিন্তু প্রথমে আত্মরক্ষা পরে দখলদারিত্ব তার মজ্জাগত। তার সেই আগ্রাসী স্বভাবও সে ছাড়তে পারে নাই। এখন তার সেই আগ্রাসন বা হাতিয়ার সে অন্য সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধেই ব্যবহার করছে।

বাংলাদেশের রাজনৈতিক ক্ষেত্রে দেখা যায় আওয়ামী লীগার, জাতীয়তাবাদী দল বা জামাতিদের মধ্যে ধর্মীয় ভিত্তিতে কোনো ফারাক নাই। প্রত্যেক আওয়ামী লীগারের ভেতরও একেক জন ধর্মপ্রবণ ক্ষুদ্র কর্মী বাস করে। জাতীয়তাবাদীদল তো ঘোষিত জামাত সমর্থক। কারণ তারা সবাই বস্তুত মুসলমান। ইসলাম অনুযায়ী সমস্ত আচারই তারা একসাথে পালন করে থাকেন।

তবে হঠাৎ করে দক্ষিণ এশিয়ার এই অঞ্চল অস্থির হয়ে উঠার পেছনে আন্তর্জাতিক চক্রান্ত কাজ করছে সন্দেহ নাই। বিভিন্ন ক্যাটাগরির মার্কিন সামরিক কর্মকর্তাদের আসাযাওয়া ও মার্কিন বিভিন্ন কমান্ড কোরের সদস্যদের সাথে বাংলাদেশি নৌ, সেনা ও বিমান বাহিনীর সাথে যৌথ মহড়া বা ট্রেইনিং ইত্যাদির মাধ্যমে বঙ্গোপসাগরে মার্কিন প্রভাব বাড়ানোর যে পদক্ষেপ তার পূর্বপ্রস্তুতি হিসাবেও বার্মা ও রামুর এই ঘটনাকে দেখা যায় বলে অনেকেই মনে করেন। বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলো যেহেতু সাম্রাজ্যবাদের মেজাজ মর্জির অনুসারী তাই তারা মার্কিন যেকোনো এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য প্রতিযোগিতামূলকভাবে এগিয়ে আসে।

পুঁজিবাদ নিজের স্বার্থেই ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতাকে ব্যবহার করে। অন্ধ ধর্মজীবীরা নিজের লাভ ও ধর্মের লাভ হিসাবে সাম্রাজ্যবাদীদের বুদ্ধি পরামর্শ সহযোগিতা ইত্যাদি নিয়া থাকে। আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের দিকে তাকালে এই অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যাবে। শুধু আফগানিস্তান নয় প্রাক্তন সোভিয়েত ইউনিয়নের ধর্ম ও অঞ্চলভিত্তিক যে জাতীয়তাবাদের উত্থান সেই খেলার পুরা মাঠই নিয়ন্ত্রণে ছিল সিআইএর। ধর্মের ধারণা যতদিন থাকবে ততদিন ধর্মীয় দাঙ্গাও বহাল থাকবে মহাতবিয়তে। নিজের গরজেই ধর্মের সহায়তা করে যাবে পুঁজিবাদ। সংখ্যালঘুত্বের যে শুধু ধর্মীয় চরিত্রই কেবল আছে তা না। সমাজের দুর্বল মানুষও সংখ্যাগরিষ্ট হয়েও সংখ্যালঘিষ্ট। নিরন্তর স্থানীয় পুঁজিবাদীরা, লুম্পেনরা সমাজের দুর্বল মানুষের জমাজমি ব্যবসা নিয়ত দখল করে চলেছে। তাতে রাষ্ট্রের সায়তো বটেই সহযোগিতাও আছে। সমাজে ঘটে যাওয়া নিরন্তর যে উচ্ছেদেরে ঘটনা তাতে জনমনে, জনমনের অজান্তেই এক নৈরাজ্যিক রাষ্ট্রবাসনার জন্ম দেয়। জনমন জানে সে বাস করে মূলত ক্ষমতার কেন্দ্রের ভেতর নৈরাজ্যে। রাষ্ট্র বা তার পেশাদার পরামর্শক বা লিখিয়েরা যা বলে তার সিংহভাগই মিছাকথা, বাগড়ম্বর, প্রতারণা। আর আশাবাদী সরকারি কর্মকর্তারা যারা নিয়ত মিডিয়ার সামনে উন্নয়ন আর দেশপ্রেমের পদ্য বলে সে সব আসলে কোনো কাজেই আসে না। ফলে যে কোন নাশকতার বিশেষ করে গণনাশকাতার গন্ধ পেলেই তার শোষক রাষ্ট্রটাকে অকেজো করে দিতে চায় জনমন। ফলে স্ফুলিঙ্গের মত এই জনস্রোত ব্যবহৃত হবার জন্য উন্মুখ সারাবিশ্বে।

এই শোষিত বঞ্চিত জনস্রোত ধর্মান্ধতার ভেতর, অশিক্ষার ভেতর, অনন্ত নৈরাজ্যের ভেতর ধরে রাখার যেই রাজনীতি সেখানে দৃষ্টি দেয়া ছাড়া উপায় নাই। যে প্রশ্নের হাত ধরে আসবে সমাজ পরিবর্তনের প্রসঙ্গও।

জাহেদ সরওয়ার: কথাসাহিত্যিক ও প্রাবন্ধিক।