গবেষণায় উদ্ধৃতি, চৌর্যবৃত্তি ও জোচ্চুরিসমূহ 

শুভংকর বিশ্বাস
Published : 3 Oct 2020, 04:42 PM
Updated : 3 Oct 2020, 04:42 PM

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ এবং ক্রিমিনোলজি বিভাগের দুইজন শিক্ষক অন্যের প্রকাশিত লেখা 'চুরি করে' ২০১৬ সালের ডিসেম্বর মাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের "সোস্যাল সায়েন্স রিভিউ" জার্নালে প্রকাশ করেছেন বলে অভিযুক্ত হয়েছিলেন। ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে ইউনিভার্সিটি অব শিকাগো প্রেস ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে লিখিত অভিযোগ জানালে তারা একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। দীর্ঘ তদন্ত শেষে গত বছর কমিটি তাদের রিপোর্ট জমা দেয়। প্রতিবেদনে উক্ত শিক্ষকদ্বয়ের বিরুদ্ধে আনীত চৌর্যবৃত্তির (plagiarism) অভিযোগটি সত্যতা পায় বলে বলা হয়। অতি সম্প্রতি সেই রিপোর্টটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় উত্থাপিত হয়। 

অবশ্য এটাই যে জার্নাল বা অভিসন্দর্ভে (thesis) চৌর্যবৃত্তির অভিযোগ প্রথম তা নয়। ২০১৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওষুধ-প্রযুক্তি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আবুল কালাম লুৎফুল কবীরের পিএইচডি অভিসন্দর্ভের চৌর্যবৃত্তি নিয়ে দেশে-বিদেশের (প্রবাসী বাঙালি) অ্যাকাডেমিক দুনিয়ায় বেশ শোরগোল পড়ে গিয়েছিল। কবীর সাহেব ২০১৫ সালে 'টিউবারকুলোসিস অ্যান্ড এইচআইভি কো-রিলেশন অ্যান্ড কো-ইনফেকশন ইন বাংলাদেশ: অ্যান এক্সপ্লোরেশন অব দেয়ার ইমপ্যাক্টস অনপাবলিক হেলথ' শীর্ষক নিবন্ধের কাজ ৯৮ শতাংশ নকল করে পিএইচডি ডিগ্রি নিয়েছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। তার গবেষণাকর্মের তত্ত্বাবধায়ক ও সহতত্ত্বাবধায়ক ছিলেন যথাক্রমে উক্ত বিভাগের অধ্যাপক আবু সারা শামসুর রউফ ও অধ্যাপক আ ব ম ফারুক। 

এ ঘটনার জেরে গত ২৮ জানুয়ারি ২০২০, বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক লুৎফুল কবীরকে প্রশাসনিক ও শিক্ষা কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। উল্লেখ্য যে, এই ঘটনায় অভিসন্দর্ভটির তত্ত্বাবধায়কদ্বয়, রেজিস্ট্রার এবংবিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলে সংশ্লিষ্ট কারও বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি! আপাতদৃষ্টিতে মনে করা হচ্ছে আবুল কালাম লুৎফুল কবীর ৯৮ শতাংশ থিসিস চৌর্যবৃত্তির জন্য এককভাবে ১০০ ভাগ দায়ী! 

অ্যাকাডেমিক ক্ষেত্রে 'চৌর্যবৃত্তি' কী? চৌর্যবৃত্তি (plagiarism) বলতে সাধারণত অন্য কারও লেখাকে সঠিকভাবে উদ্ধৃতি (citation) না করে নিজের লেখা বলে চালিয়ে দেওয়াকে বোঝানো হয়। 

চৌর্যবৃত্তি কত প্রকারের হতে পারে? প্রযুক্তি উন্নয়নের সাথে সাথে চুরির কলাকৌশল দিন দিন আধুনিক থেকে অত্যাধুনিক হওয়ায় চৌর্যবৃত্তির প্রকারভেদ করা অত্যন্ত কষ্টসাধ্য ব্যাপার। তবে মোটা দাগে প্রধানত চার ধরনের চৌর্যবৃত্তি আমরা দেখতে পাই। 

এক. সরাসরি চৌর্যবৃত্তি: (Direct Plagiarism) 

অন্য কারও লেখাকে কোন রকম উদ্বৃতি ছাড়া অবিকল নকল করে নিজের বলে চালিয়ে দেওয়াকে সরাসরি চৌর্যবৃত্তি বলা হয়। 

দুই. স্ব-চৌর্যবৃত্তি (Self Plagiarism)

যখন নিজের প্রকাশিত কোনও প্রাক্তন লেখাকে যথাযথ উদ্বৃতি ছাড়া হুবহু বা অংশবিশেষ প্রকাশ করা হয়, তখন তাকে স্ব-চৌর্যবৃত্তি বলা হয়। 

তিন. কারুকার্যমূলক চৌর্যবৃত্তি (Mosaic Plagiarism)

যখন অন্য কারও বাক্য বা বক্তব্যকে যথাযথ উদ্বৃতি-চিহ্ন ছাড়াই নিজের বলে চালিয়ে দেওয়া হয়, অথবা শুধু ভাষার রূপান্তর করা হয়, অথবা অন্য কারও লেখার মূল গঠন-প্রকৃতি ও অর্থ ঠিক রেখে তার সমার্থক শব্দ ব্যবহার করা হয়, তখন তাকে বলা হয় কারুকার্যমূলক চৌর্যবৃত্তি। 

চার. দুর্ঘটনামূলক চৌর্যবৃত্তি (Accidental Plagiarism) 

যখন অন্যের কোন লেখাকে নিজের লেখায় উদ্ধৃত করা হয়, কিন্তু তার উৎস বলা হয় না, বা ভুল উৎস দেওয়া হয়, অথবা উৎসের সমার্থক শব্দ ব্যবহার করা হয়, তখন তাকে দুর্ঘটনামূলক চৌর্যবৃত্তি বলা হয়। 

চৌর্যবৃত্তির (Plagiarism) কথাটা শুনলে মনে হয় এটা একটা নিষিদ্ধ জিনিস, যার কোনও স্থান অ্যাকাডেমিক দুনিয়ায় নেই। এটা একটা ভ্রান্ত ধারণা। সত্য কথা বলতে কি, শুন্য শতাংশ plagiarism প্রায় অসম্ভব একটা ব্যাপার। জার্নাল ও বিষয়ভেদে কিছু শতাংশ plagiarism গ্রহণযোগ্য (15-20% as a ballpark)। যদি রিভিউ জার্নাল হয়, যাথাযথভাবে উদ্বৃতিপূর্বক (proper citation) কিছুটা বেশি plagiarism গ্রহণযোগ্য হতে পারে, তবে তা নির্ভর করে আর্টিকেলের কোন অংশে এই প্রকাশিত লেখা পুনরায় ব্যবহার হচ্ছে তার উপর। গবেষণার চুড়ান্ত ফলাফলে plagiarism এর কোন স্থান নেই। 

তবে কোন গবেষণা বিষয়ের চূড়ান্ত ফলাফলে পৌঁছাতে ওই বিষয়ে আগে কী কী কাজ হয়েছে (literature review) তা জানাটা জরুরী। সেখান থেকে কী কী কাজ হয়নি সেটা খুঁজে বের করে (research gap) কিছু পদ্ধতিগত (methodology) উপায়ে বিভিন্ন প্রাসঙ্গিক তত্ত্ব-উপাত্ত বিশ্লেষণপূর্বক (data analysis, Result & discussion) নতুন একটা উপসংহারে পৌঁছাতে হয় (conclusion) অথবা কোনও তত্ত্বের নতুন ব্যাখ্যা দাঁড় করাতে হয়। এভাবেই গবেষকরা পদ্ধতিগতভাবে ধাপে ধাপে গবেষণা করে যুক্তির সাহায্যে মৌলিক জ্ঞান সৃষ্টি করেন এবং গবেষণালব্ধ ফলাফল পরবর্তীতে জার্নালে প্রকাশ করেন। 

উপরোক্ত ধাপগুলির মধ্যে অতীতে সম্পাদিত কাজসমুহ (literature review) এবং কাজের পদ্ধতি (methodology) এবং নিজের প্রাপ্ত ফলাফল অতীতে প্রকাশিত ফলাফলের সাথে তুলনা করার সময় এই চৌর্যবৃত্তি (plagiarism) উপেক্ষা করা বেশ কষ্টকর। বিশেষত বিভিন্ন সংজ্ঞা, পরিভাষা, চিত্র, সমীকরণ ও সংখ্যাগত ফলাফল- এগুলোর কোনও পরিবর্তন না হওয়ায় অবিকলভাবে তা প্রকাশ করতে হয়। এইজন্য যথাযথভাবে উদ্বৃতি প্রদান করলেও চৌর্যবৃত্তির একটা আশংকা থেকে যায়। 

এই সমস্যা সমাধানকল্পে অ্যাকাডেমিক সমাজের গবেষক, জার্নালের এডিটর, রিভিউয়ার সবাইকে সততার প্রশ্নে সজাগ থাকতে হয়। তাদেরকে জানতে হয় কোথায় কতটুকু plagiarism গ্রহণযোগ্য হতে পারে। বিভিন্ন শিক্ষা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানসমূহ এই অ্যাকাডেমিক সততার (academic integrity) ব্যাপারে নিয়মিত প্রশিক্ষণ দেয়। তাছাড়া গবেষণা ও প্রকাশনার সততার বিষয়ে বিভিন্ন জার্নাল কর্তৃপক্ষও পাণ্ডুলিপির  (manuscript) সততার ব্যাপারে দিক-নির্দেশনা দিয়ে থাকে। আর উন্নতমানের জার্নালসমুহ (i.e. high impact factor) পাণ্ডুলিপি জমা নেওয়ার সময় লেখকের কাছ থেকে এর মৌলিকত্ব ও চৌর্যবৃত্তির ব্যাপারে আলাদা একটা লিখিত ঘোষণা আদায় করে থাকে। তবে তারা কোন পাণ্ডুলিপি রিভিউয়ারের কাছে পাঠানোর আগে বিভিন্ন plagiarism চেকিং সফটওয়্যার, যেমন Turnitin এর মাধ্যমে এর মৌলিকত্ব সম্বন্ধে নিশ্চিত হয়ে তারপর পাঠায়। 

শুধু তাই নয়, ম্যানুস্ক্রিপ্টে সহলেখকের (co-author) সত্যিকার ভুমিকা আছে কিনা, সেটাও উন্নতমানের জার্নালসমুহ নিশ্চিত হওয়ার জন্য মূল গবেষক-লেখকের কাছ থেকে লিখিত ঘোষণা আদায় করে থাকে। আমাদের দেশে প্রায় দেখা যায় মোটেও অবদান নেই এমন গবেষক বা অধ্যাপকের নামও মুল গবেষক তার ম্যানুস্ক্রিপ্টে ঢুকিয়ে দেয়, যেটা সম্পূর্ণ অনৈতিক। শুধু কি আমাদের দেশ? এই অনৈতিক চর্চা উন্নত দেশসমুহেও আছে। আর এই চর্চা বেশি হয় একই রিসার্চ গ্রুপের গবেষকদের মধ্যে। ধরুন একটা রিসার্চ গ্রুপে একজন অধ্যাপকের অধীনে তিনজন গবেষক আছেন। প্রত্যেক গবেষক তার নিজ নিজ প্রজেক্টে কাজ করে বছরে একটি ম্যানুস্ক্রিপ্ট জার্নালে প্রকাশনার জন্য জমা দিল। এক্ষেত্রে অনেক গবেষককে দেখা যায় নিজের সাথে সহলেখক হিসেবে গ্রুপের অন্য দুই গবেষকের নামও জুড়ে দেয় তাদের কোন অবদান না থাকা সত্ত্বেও! তবে মনে করার কারণ নেই বিনা স্বার্থে মূল গবেষক-লেখক এটা করে থাকেন। গ্রুপের অন্য গবেষকরাও প্রতিদানে সেই গবেষকের নাম সহলেখক হিসেবে তাদের নিজ নিজ ম্যানুস্ক্রিপ্টে ঢুকিয়ে দেয়। যদি উক্ত গ্রুপের প্রত্যেক গবেষক বছরে একটা করে জার্নাল প্রকাশ করে, তবে তাদের প্রত্যেকের জার্নালের সংখ্যা হবে তিন। এটা ওই গ্রুপের গবেষকদের একটা win-win strategy। রিসার্চ গ্রুপের আকার বড় হলে তাদের প্রকাশিত জার্নালসমূহে এই সহলেখকদের লাইনও দীর্ঘায়িত হয়, যা কোনভাবেই কাম্য নয়। জার্নাল কর্তৃপক্ষও এ ভাওতাবাজি বন্ধে পদক্ষেপ নিতে অসহায়, কারণ ল্যাবে ল্যাবে গিয়ে তাদের পক্ষে গবেষকদের কাজ মনিটর করা সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে রিসার্চ গ্রুপের অধ্যাপক ও মুল গবেষকের ঘোষণার উপর তাদের আস্থা রাখতে হয়। 

ডেটা কারসাজি আরেকটি সমস্যা। তবে কেবল মেধাবী ও অভিজ্ঞরা ডেটার কারসাজি করতে পারে। কারণ, এক্ষেত্রে আগে থেকে জানতে হয় কোন জাতীয় ফলাফল (data) পেলে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জিত হবে। যদিও রিভিউয়ারদের সুযোগ আছে সন্দেহমুলক কোন রেজাল্টের প্রমাণসহ ব্যাখ্যা চাওয়া, তবে সেটাও ততটা সোজা নয়। বিশ্বখ্যাত বিভিন্ন জার্নালের প্রকাশকদেরও রীতিমত ঘাম ঝরে যাচ্ছে এ ডেটা কারসাজি ঠেকাতে! সম্প্রতি দ্যা ল্যানসেট (The Lancet, IF: 44.4, one of the best journals in Medicine subject category) কর্তৃপক্ষ এতে প্রকাশিত একটা জার্নাল প্রত্যাহার করে নিতে বাধ্য হয় প্রদেয় ডেটার উৎসের নিরপেক্ষ তদন্তে বাঁধা দেওয়ার কারণে। জার্নালটিতে বলা হয় যে, ম্যালেরিয়া চিকিৎসায় ব্যবহৃত হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন ওষুধ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর জন্য বিপদজনক। উক্ত জার্নালের গবেষকরা সার্জিস্ফেয়ার নামের একটি আমেরিকান কোম্পানির কাছ থেকে ডেটা নিয়ে তা ল্যানসেট-এ প্রকাশ করে। প্রকাশিত হওয়ার পর ডেটার সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠলে জার্নাল কর্তৃপক্ষ একটি নিরপেক্ষ তদন্ত করতে চাইলে কোম্পানি তাতে বাঁধা দেয়। এই ঘটনার জেরে প্রকাশিত জার্নালটি প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। এই একই ঘটনায় New England Journal of Medicine (IF: 74.9) জার্নাল কর্তৃপক্ষও তাদের একটি পেপার প্রত্যাহার করে নেয়। 

জোচ্চুড়ির সর্বশেষ যে বিষয়ে দৃষ্টি দিব তা হলো- 'পেপার মিল (paper mill)'। এসব মিলে (এরকম অনেক কোম্পানি আছে) টাকার বিনিময়ে গবেষকের পক্ষ হয়ে বিভিন্ন ধরনের জার্নাল, থিসিস, অ্যাসাইনমেন্ট ইত্যাদি লিখে দেয়, পারলে ইন্টারনেট থেকে ডেটা নিয়ে গবেষণাও করে দেয়, ক্ষেত্রবিশেষে জমাও দিয়ে দেয়। এই সমস্ত কোম্পানি প্রকাশিত জার্নাল বা থিসিস থেকে ডেটা নিয়ে তা খোলনলচে এমনভাবে পাল্টে ফেলে যে, কোন plagiarism checking software এ তা ধরা পড়ে না। অর্থাৎ, প্রকাশিত বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত দিয়ে নতুন একটা ম্যানুস্ক্রিপ্ট তৈরি করে ফেলে, যা পরবর্তিতে নতুন একটি জার্নাল হিসেবে প্রকাশিত হয়। 

সকল দেশে এই জাতীয় সমস্যা বিচ্ছিন্নভাবে কিছু কিছু থাকলেও চীনে এই সমস্যাটি মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। সমগ্র বিশ্বের উন্নত মানের জার্নালসমুহের এডিটর-রিভিউয়াররা মিলেও চায়নিজ ওইসব গবেষকদের জোচ্চুরি ঠেকাতে পারছে না। এক ২০১৭ সালেই চায়নিজ গবেষকদের ১০৭ টি জার্নাল পেপার প্রত্যাহারের ঘটনা ঘটেছে টিউমার বায়োলজি নামক জার্নাল থেকে। যেগুলোর সব তথ্য-উপাত্তসমূহ নেওয়া হয়েছিল বিশ্বখ্যাত নেচার জার্নাল থেকে। অতি সম্প্রতি চীনের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় গবেষণায় অসদাচারণ বা জোচ্চুরি বন্ধে কিছু শক্ত আইন চালু করে যা এই মাস থেকে কার্যকর হয়েছে। এতে সংশ্লিষ্ট গবেষক, রিভিউয়ার এবং প্রতিষ্ঠানের প্রধান যে-ই জোচ্চুড়িতে জড়িত থাকুক না কেন, আর্থিক জরিমানা থেকে শুরু করে তাদের প্রতিষ্ঠান থেকে আজীবন বহিষ্কার করা হতে পারে। 

যাহোক, লেখা শুরু করেছিলাম বাংলাদেশের গবেষকদের চৌর্যবৃত্তি নিয়ে। তারা হয়তো অ্যাকাডেমিক প্রোমোশন বা নিজেদের প্রোফাইল বাড়ানোর জন্য জেনে বা না জেনে অন্যায়টি করেছেন। কিন্তু যেভাবেই করুন না কেন, তার জন্য এককভাবে কি গবেষকরা দায়ী? জার্নাল বা থিসিস জমা দেওয়ার পর থেকে চূড়ান্ত অনুমোদন পর্যন্ত বিভিন্ন ধাপে জড়িত ব্যক্তিরা কি ধোয়া তুলসির পাতা? তাদের ব্যাপারে তদন্ত কমিটি কী সিদ্ধান্ত নিয়েছে? আর যদি চৌর্যবৃত্তির বিষয়টি গবেষকরা না জেনে থাকেন, তাহলে সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে কাঠগড়ায় দাঁড় করানো কি অমূলক?

আমার মনে হয় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হাতে এখনও সময় আছে, অ্যাকাডেমিক সততার বিষয়টি নিয়ে সামগ্রিকভাবে নতুন করে ভাবা। ভেবে দেখা দরকার একজন গবেষককে মূল্যায়নের জন্য তার জার্নালের সংখ্যা গুরুত্বপূর্ণ নাকি গুণগত মান, অর্থাৎ উদ্ধৃতি সংখ্যা (total citation number), h-index ইত্যাদি। দরকার অ্যাকাডেমিক সততার ব্যাপারে বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে গবেষকদের পর্যাপ্ত ও নিয়মিত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা।