নতুন নতুন টিভি চ্যানেল: অদক্ষতা ও অপরিকল্পনার অভিন্ন কোরাস

খ ম হারূন
Published : 11 Oct 2012, 02:53 PM
Updated : 11 Oct 2012, 02:53 PM

আপনি যদি সন্ধ্যার একটি নির্দিষ্ট সময়ে আমাদের একটি বাংলা চ্যানেল হতে আরেকটি চ্যানেলে যেতে থাকেন, দেখতে পাবেন প্রায় সব চ্যানেলগুলিতেই চলছে সংবাদ, মোটামুটি একই শিরোনাম। একই বিষয়বস্তু। আরেকটু পরে আবারও যদি চ্যানেলগুলি দেখেন, দেখবেন প্রায় সব চ্যানেলেই চলছে ধারাবাহিক নাটক। চেনামুখ অভিনেতা-অভিনেত্রী'রা একই ধরণের সংলাপ বলছেন, একই ধরণের কৌতুক করছেন। রাত একটু বাড়লে দেখতে পাবেন প্রায় সবগুলো চ্যানেল টকশো নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে, আবার কোন কোন সময় প্রায় সব ক'টি চ্যানেলে শুরু হয়ে যায় লাইভ গানের অনুষ্ঠান – একদম মধ্যরাত পর্যন্ত চলতে থাকে। দিনের শুরুতে, দুপুরে, বিকেলে – প্রায় সব ক্ষেত্রেই অনুরূপ অনুকরণ চোখে পড়ে।
কেন এমন হচ্ছে? অনেকেই আমাকে বলেন, আপনিতো বলেছিলেন বাংলাদেশে একশ'টি চ্যানেল চলতে পারে, কিন্তু দেখেন মাত্র ২০ – ২৫ টি চ্যানেল, তাতেই কি অবস্থা! দর্শকরা বাংলাদেশের চ্যানেলগুলি থেকে চোখ ফিরিয়ে নিচ্ছে, ভারতের চ্যানেলগুলির দর্শক বাড়ছে এদেশে।

আমার মনে হয় – বাংলাদেশে এখনো একশ'টি চ্যানেল চলতে পারে, কিন্তু তার জন্য থাকতে হবে সুষ্ঠ পরিকল্পনা। প্রতিটি চ্যানেলের স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য থাকতে হবে, একই সাথে দর্শক তৈরিতে ভূমিকা রাখতে হবে। প্রতিটি চ্যানেলের দায়িত্ব রুচিবান দর্শক তৈরি করা, অনুষ্ঠান নির্মাণে নতুনত্ব আনা, সৃজনশীলতার পরিচয় দেয়া। এগুলি না করতে পারলে দর্শকবৃন্দতো বিকল্প রাস্তা ধরবেনই। আমরা যেমন দুর্বল পরিকল্পনার কারণে দর্শক হারাচ্ছি, অন্যদিকে ভারতীয় চ্যানেলগুলি তাদের সফল পরিকল্পনার কারণে বাংলাদেশের দর্শকদের আকৃষ্ট করছে। বাংলাদেশ শুধু দর্শকই হারাচ্ছে না, হারাচ্ছে প্রতি বছর হাজার কোটি টাকা, এ টাকা অনেকটা তাদের হাতে তুলে দেয়া হচ্ছে টেলিভিশন অনুষ্ঠান দেখার নামে, পে-চ্যানেলের ফি বাবদ।

আমরা টাকা দিয়ে ভারতীয় চ্যানেল দেখছি, অথচ বাংলাদেশের কেনো টিভি চ্যানেল যখন ভারতে দেখানোর উদ্যোগ নেয়া হয়, তখন বলা হয় ভারতীয় ক্যাবেল অপারেটরদের মোটা অঙ্কের টাকা দিতে হবে। যে টাকা দেবার সাধ্য আমাদের চ্যানেল মালিকদের নেই বললেই চলে। একদিকে ভারতীয় চ্যানেল দেখার জন্য আমরা টাকা দিচ্ছি আমাদের ক্যাবেল অপারেটরদের মাধ্যমে ভারতীয় চ্যানেল মালিকদের, অন্যদিকে আমরা ভারতে আমাদের দর্শক সৃষ্টি করতে পারছিনা সেখানকার ক্যাবেল অপারেটরদের আমরা টাকা দিতে পারছিনা বলে। একেই কি বলে মিডিয়া বিজনেস?

ভারতে বাংলা ভাষাভাষী রাজ্যগুলোতে বাংলাদেশ টেলিভিশনের দর্শক কিন্তু একসময় অনেক ছিলো। টেরিস্টিরিয়াল টিভি হওয়া সত্ত্বেও ঐসব অঞ্চলে ১৯৭২ হতে ১৯৯২ পর্যন্ত দূরদর্শনের চেয়ে বিটিভি'র জনপ্রিয়তা ছিলো অনেক বেশী। আমাদের নাটক ও অনুষ্ঠান দেখার জন্য ভারতের বাঙালী দর্শকরা অপেক্ষা করে থাকতেন।

আমি মনে করি, বাংলাদেশে এখনো অনেক ভালো ভালো নাট্যকার, নির্মাতা এবং অভিনেতা-অভিনেত্রী আছেন। আমাদের চ্যানেলগুলো যদি ভারতে দেখানো হয় তবে পশ্চিমবাংলার বাংলা চ্যানেলগুলো দারুনভাবে দর্শক হারাবে। জনপ্রিয়তায় অনেক এগিয়ে যাবে আমাদের চ্যানেলগুলি।

ব্যবসায়ী পরিকল্পনায় ভারতীয়রা অনেক এগিয়ে আছেন, কিন্তু টেলিভিশন ও নাট্য মাধ্যমে, সৃজনশীলতায় অনেক এগিয়ে বাংলাদেশ। এটা আমার কথা নয়, আমার ভারতীয় বন্ধুদের কথা। বাঙালীদের সৃজনশীলতার প্রতি তাদের রয়েছে আলাদা সম্মান। আমি নিজে ভারতে পড়াশুনা করার সময় (এন এস ডি, দিল্লী ও এফটি আই আই, পুনে) এটা ভালোভাবে বুঝেছি। পরবর্তীতে বিটিভি'তে কাজ করার সময় যখন বিদেশে কোন সেমিনার – ওয়ার্কশপ বা প্রশিক্ষণ কর্মসূচীতে অংশগ্রহন করেছি, দেখেছি বিটিভি বা বাংলাদেশের অবস্থান কতো সামনে। তাহলে আজ এ অবস্থা কেন হচ্ছে? তার কারণ খুঁজতে গিয়ে আমি দেখেছি এর জন্য চ্যানেল কর্তৃপক্ষের অনভিজ্ঞতা যেমন দায়ী, একইভাবে সরকারও তার অবস্থান থেকে দায় এড়াতে পারে না।

আমাদের চ্যানেলগুলোর ব্যর্থতার কারণগুলো হচ্ছে
ক. চ্যানেল মালিক কর্তৃপক্ষ যথাযথভাবে আমাদের টিভি চ্যানেলগুলি পরিচালিত করতে পারছেনা। ভারতীয় ব্যবসায়ীদের পরিকল্পনার কাছে তারা মার খেয়ে যাচ্ছেন।
খ. অপেশাদার ও চাটুকার পরিবেষ্টিত হয়ে চ্যানেলের মালিকগণ অনেক ক্ষেত্রেই ভুল সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন এবং প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশী অর্থ খরচ করে ফেলছেন। সৃজনশীলতার অভাবে একটি চ্যানেল আরেকটি চ্যানেলকে অন্ধ অনুকরণ করছে, নতুন কিছু সৃষ্টি করতে পারছে না।
গ. টিভি চ্যানেলের অস্থিরতার কারণে সত্যিকারের সৃজনশীল টিভি ব্যক্তিত্ব যারা, তারা অনেকেই টিভি চ্যানেল থেকে নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান করছেন। প্রতিভাবানদের খুঁজে সামনে নিয়ে আসা হচ্ছে না।
ঘ. সরকার এক্ষেত্রে এখন পর্যন্ত কোন উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারেনি, যার মাধ্যমে আমাদের চ্যানেলগুলি একটি সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রায় এগিয়ে যেতে পারে।

২.
অনেকেই জানেন না এখন দেশে ক'টি চ্যানেল। এ মুহূর্তে যে কটি চ্যানেল সম্প্রচাররত আছে এবং সম্প্রচারের অপেক্ষায় আছে তার সংখ্যা ৩০।


এছাড়াও সম্প্রচারের অপেক্ষায় আছে – (২৭) এসএ টিভি (২৮) এশিয়ান টিভি (২৯) দীপ্ত বাংলা ও (৩০) গান বাংলা।

এর মাঝে কয়েকটি চ্যানেল সম্প্রচার আসার পর বন্ধ হয়ে গেছে। যেমন-এ টিভি, টিইএন, রুপসী বাংলা, সোনার বাংলা, ফাল্গুনী। পরীক্ষামূলক সম্প্রচারে থাকা অবস্থায় বন্ধ হয়ে গেছে – যমুনা টিভি। আর বন্ধ হয়ে যাওয়া জনপ্রিয় দু'টি টিভি চ্যানেল হলো- সিএসবি ও চ্যানেল ওয়ান।

যদি এই চ্যানেলগুলি পর্যালোচনা করি তাহলে দেখি রাষ্ট্রপরিচালিত টিভি চ্যানেলের সংখ্যা ৪টি। বিটিভি, বিটিভি ওয়ার্ল্ড, বিটিভি চট্টগ্রাম এবং সংসদ বাংলাদেশ, আলাদা আলাদা চ্যানেল হলেও ৪টি চ্যানেলই নিয়ন্ত্রন করেন বিটিভি'র মহাপরিচালক। প্রাইভেট সেক্টরে যে চ্যানেলগুলি আছে তারমধ্যে শুধুমাত্র এটিএন'র চেয়ারম্যান নিয়ন্ত্রনাধীন আছে ৩টি চ্যানেল – এটিএন, এটিএন নিউজ এবং বিজয় টিভি। এটিএন বাংলাদেশের সব থেকে পুরোনো ব্যক্তিমালিকানাধীন স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেল। বর্তমান সরকারের সময় আরো দু'টি চ্যানেল এটিএন চেয়ারম্যানের নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। টিভি ব্যবসায় তাকে সব থেকে সফল হিসেবে বিবেচনা করা হয়, যদিও এখন তিনি বেশ চাপের মধ্যে আছেন। তবে সবদিক থেকে সফল টেলিভিশন চ্যানেল হিসেবে মনে করা হয় চ্যানেল আই এবং এনটিভি'কে। আরটিভি শুরুতেই দর্শকদের কাছে গুনগতমানে এবং জনপ্রিয়তায় এগিয়ে থাকলেও 'ওয়ান ইলেভেন'র পর চ্যানেলটির মালিকানা বদল হয়ে যাবার প্রেক্ষিতে এটি এখন একটা বাণিজ্যিক চ্যানেল হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। একই কথা বর্তমানে একুশে টিভি'র ক্ষেত্রেও বলা যায়। সংবাদভিত্তিক চ্যানেল – সময়, এটিএন নিউজ, ইনডিপেনডেন্ট এবং একাত্তর। বিশেষায়িত চ্যানেল হিসেবে এই চ্যানেলগুলি নিজেদের মধ্যে একটি সুস্থ প্রতিযোগিতা করছে। চ্যানেলগুলি যদি টিকে থাকতে পারে তবে তা এদেশের দর্শকদের জন্য ভালো মানের অনেক কিছুই করতে পারবে। ইসলামিক টিভি প্রথম থেকেই তার একটি টার্গেট অডিয়েন্স নির্দিষ্ট করে ফেলেছে। খুবই লো-প্রোফাইলে চলছে এই চ্যানেলটি।

এরপর যদি অন্য চ্যানেলগুলির দিকে তাকাই তাহলে দেখবো যে নতুন চ্যানেলগুলি অন্ধ অনুকরণ করে যাচ্ছে পুরোনো চ্যানেলগুলিকে। কোন নুতনত্ব খুঁজে পাওয়া যাবে না।

অথচ টেলিভিশন অনুষ্ঠান নির্মাণের পূর্বধাপ অনুষ্ঠান পরিকল্পনা। এই পরিকল্পনার ক্ষেত্রে বড় অসহায় হয়ে পরেছে আমাদের চ্যানেলগুলি। কেন এমন হচ্ছে? কার জন্য এমন হচ্ছে? এখনো কিন্তু টিভি চ্যানেলগুলির মাঝে তরতর করে এগিয়ে যাবার সুযোগ রয়েছে। খুব ভালোভাবেই রয়েছে। সৃজনশীল পরিকল্পনাই এই সব চ্যানেলগুলোকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে।
আমরা কেন এদেশের টিভি চ্যানেলগুলি নিয়ে এতো অসহায় এবং আতঙ্কগ্রস্থ হয়ে পরেছি তা এখন দর্শকরাই বিবেচনা করতে পারবেন।

এ মুহূর্তে আমাদের চ্যানেলগুলিকে লক্ষ্যমাত্রা সুনির্দিষ্ট করে টিকে থাকতে হবে, পরিচ্ছন্ন অনুষ্ঠান নির্মানের লক্ষ্যে জনবল তৈরি করতে হবে, প্রত্যেকটি চ্যানেলের নিজস্ব চেহারা (ব্রান্ডিং) থাকতে হবে। মনে রাখতে হবে টিভিতে যাই সম্প্রচার করা হয়, তাই অনুষ্ঠান। সেটি নাটক, ডকুমেন্টারী, নিউজ, র্স্পোটস, মিউজিক – যাই হোক না কেন। প্রতিটি অনুষ্ঠানের নির্মাণ কৌশল আলাদা, এজন্য বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রের জন্য বিশেষ ও দক্ষ জনবল তৈরি করা ছাড়া আমাদের টিভি চ্যানেলগুলির কোন বিকল্প নেই।

৩.
'টিআরপি' (টেলিভিশন রেটিং পয়েন্ট) এক ধরণের দর্শক মতামত জরিপ। দর্শক মতামত জরিপ বিটিভিতে শুরু হয়েছিলো আমারই তত্ত্ববধানে ১৯৮০ সালে। টিভি কিউ (বর্তমানে টিভি গাইড) এর মাধ্যমে জরিপের চার পৃষ্ঠার প্রশ্নপত্র দর্শকদের হাতে পৌঁছাতো – দর্শকবৃন্দ খুব আগ্রহ সহকারে ঐ প্রশ্নপত্র পূরণ করে তাদের মতামত ফেরত পাঠাতেন ডাকযোগে। কোন ডাকমাশুল লাগতো না। মোট ১০ হাজার টিভি কিউ ছাপা হতো। এবং প্রায় ৫০% উত্তরপত্র আমাদের কাছে ফেরত আসতো। হাজার হাজার উত্তরপত্র হাতে আসতো। সেগুলো বাছাই করতো একটা টিম। ফলাফল 'মতামত' অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দর্শকদের কাছে পৌঁছে যেতো এবং টিভি কিউর পরবর্তী সংখ্যাতে ছাপা হতো। এটি হতো ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে।
সেসময় ছিলো একটি মাত্র টিভি চ্যানেল। কিন্তু ঐ জরিপের মাধ্যমে দর্শকদের যে মতামত পাওয়া যেতো তার ভিত্তিতে পরবর্তী প্রান্তিকের অনুষ্ঠান পরিকল্পনা তৈরি করা হতো। প্রতিযোগিতা ছিলো একজন প্রযোজকের সাথে আরেকজনের। জরিপটা ছিলো সম্পূর্ণই অনুষ্ঠানের গুণগত মান বৃদ্ধির জন্য।

এখন যে 'টিআরপি' করা হয় তা মূলতঃ ব্যবসায়িক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে। বাংলাদেশে এর প্রচলন হয়েছিলো ২০০৫ এর দিকে। বেশ ক'টি টিভি চ্যানেল আত্মপ্রকাশ করার পূর্বমুহূর্তে একটি ভারতীয় বহুজাতিক কোম্পানি বাংলাদেশে এই 'টিআরপি'র প্রচলন করেন – বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে তাদের বিজ্ঞাপন দেবার সুবিধার্থে।

সে সময় যে পদ্ধতিতে 'টিআরপি' জরিপ করা হতো এবং যার ভিত্তিতে কোটি কোটি টাকার বিজ্ঞাপন দেয়া হতো তা ছিলো লোক দেখানো একটি সনাতনি ব্যবস্থা। ঢাকার বিভিন্ন অঞ্চলে ১০০ বাসায় ঐ প্রতিষ্ঠান থেকে ডায়রি দেয়া হতো। বাসায় পরিবারের কোন সদস্য প্রতিদিন যে যে অনুষ্ঠান দেখতেন তা লিখে রাখতেন। প্রতি সপ্তাহে ঐ ডায়রির নোটের ভিত্তিতে একটি পরিসংখ্যান করা হতো এবং সেটি সদস্যদের মাঝে ইমেইলের মাধ্যমে বিতরণ করা হতো। সেসময় চ্যানেলের সংখ্যা ছিলো কম। প্রতিযোগিতাও কম ছিলো। তারপরও ঐ 'টিআরপি' বিজ্ঞাপন প্রদানের ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতো।

এখন অবশ্য 'টিআরপি'র পরিসংখ্যান অনেক আধুনিক হয়েছে। ডিজিটাল প্রযুক্তির ছোঁয়া লেগেছে সেখানে। তবে এই 'টিআরপি' শুধুমাত্র ঢাকা মহানগরীতেই সীমাবদ্ধ এবং জরীপ করা হয় মাত্র ২০০ টি পরিবারে। সবগুলো টিভি চ্যানেল এই 'টিআরপি'র পরিসংখ্যানের জন্য বেশ ভালো অঙ্কের টাকা প্রদান করে প্রতিষ্ঠানটিকে। 'টিআরপি'তে কোন চ্যানেল কোন সপ্তাহে কোন অবস্থানে আছে তা পত্রিকাতেও প্রকাশ করা হচ্ছে।

সম্প্রতি ভারতে এই 'টিআরপি' যে প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করে, তার বিরুদ্ধে আদালতে মামলা হয়েছে। অভিযোগ এই 'টিআরপি' করা হয় সম্পূর্ণ উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে বাণিজ্যিক স্বার্থে। এই ধরণের 'টিআরপি' দেশের সাংস্কৃতিক অগ্রগতির ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা হিসেবে কাজ করে। বিষয়টি নিয়ে বেশ তোলপাড় হচ্ছে।

২০১০ সালে বিবিসি ওয়াল্ড সার্ভিস ট্রাস্ট পরিচালিত এক জরিপে দেখা যায় ২০০৯ সালে এদেশে সর্বমোট টিভি দর্শকের সংখ্যা ছিলো ৭ কোটি ৭৭ লক্ষ। এরমধ্যে শুধুমাত্র বিটিভি দেখেন ৪ কোটি দর্শক, বিটিভি এবং সি এ্যান্ড এস (ক্যাবেল ও স্যাটেলাইট) দর্শক ২ কোটি ৪৪ লক্ষ। সব মিলিয়ে বিটিভি দেখেন ৬ কোটি ৭৭ লক্ষ দর্শক। ঐ জরিপের এই ফলাফল কমবেশী এখনো অপরিবর্তীত আছে।

বিটিভি এবং সি এ্যান্ড এস এর সকল দর্শকরা যে চ্যানেলগুলো সে সময় দেখতেন তার একটি পরিসংখ্যান দেয়া হলোঃ


বিবিসি ওয়াল্ড সার্ভিস পরিচালিত জরিপে যে চিত্র দেখা যায় তার পরে যে পরিবর্তনগুলি হয়েছে তা হলো এর মাঝে বাংলাদেশে আরো অনেক চ্যানেল এসেছে – সে সকল চ্যানেলের মধ্যে বেশ ক'টি ইতিমধ্যে দর্শকপ্রিয়তা অর্জন করতে পেরেছে – বাংলাদেশে টিভি অনুষ্ঠানের শিল্প ও কারিগরি দিকের উন্নতি হয়েছে চোখে পরার মতো।

কিন্তু তথাকথিত 'টিআরপি' জরিপে যে কাজটি করা হচ্ছে তাতে বাংলাদেশের টিভি চ্যানেলগুলি নিজ পায়ে যাতে দাড়াতে না পারে সেজন্য ভারত নির্ভরশীলতার পথ বের করা হচ্ছে। পে-চ্যানেলগুলি যাতে টিকে থাকতে পারে সেজন্য বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। অন্যদিকে আমাদের চ্যানেলগুলি অনুষ্ঠান নির্মাণের খরচ ওঠাতে পারছে না, যে প্রতিষ্ঠানগুলি লাভজনক হবার কথা তা দিনে দিনে রুগ্ন হয়ে পরছে। যেখানে ভারতে বাংলাভাষী দর্শকদের মাঝে আমাদের বাংলা চ্যানেলের চাহিদা থাকা সত্ত্বেও আমরা আমাদের চ্যানেল সম্প্রচার করতে পারছি না, সেখানে আমাদের ক্যাবেল অপারেটররা দর্শকদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে তার একটি বিরাট অংশ তুলে দিচ্ছি ভারতের পে-চ্যানেলের মালিকদের হাতে। কেন এটা হচ্ছে? কোন যুক্তিতে হচ্ছে?

আমাদের টিভি চ্যানেলের ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ কি ভাবছেন এসব নিয়ে, নাকি আদৌ কিছু ভাবছেন না! আমাদের সরকার এ বিষয়টি নিয়ে আদৌ কি উদ্বিগ্ন, জানতে ইচ্ছে করে।

খ ম হারূন: সাবেক টেলিভিশন-কর্মকর্তা। শিক্ষক, টেলিভিশন ও ফিল্ম ষ্টাডিজ বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।