বঙ্গবন্ধুর যবনিকা অধ্যায় এবং কিছু ভাবনা

তৌহীদ রেজা নূর
Published : 15 August 2020, 09:21 PM
Updated : 15 August 2020, 09:21 PM

এক.

হাতে ট্রেনের টিকেট পেয়েই ঘড়ির দিকে তাকালাম। সময় আছে এক ঘণ্টা। এর মধ্যে পৌঁছুতে হবে মিলিংটন স্ট্রিটে। যার সাথে কথা বলতে যাবো তিনি থাকেন টরন্টো শহরের ওই প্রান্তে। ট্রেন লাইনের ধারে এসে বন্ধু রবিনকে (যে বিগত কয়েক বছর ধরে এই শহরের স্থায়ী বাসিন্দা) সেল ফোনে ধরে জানালাম যে টিকেট হাতে দাঁড়িয়ে আছি – একটু পরেই ট্রেন। ও শুনেই হন্তদন্ত হয়ে বললো- "তুমি ট্রেনে উঠো না – এখুনি টিকেট দিয়ে টাকা ফেরত নাও কারণ তোমার গন্তব্য আর ট্রেনের গন্তব্যের নাম এক হলেও দুটি এক জায়গা নয়। তুমি সময়মত পৌঁছুতে চাইলে ক্যাব কল করো।"

শুনে তো আমার মাথা ঝা ঝা করে উঠল। দৌড়ে ট্রেনের টিকেট ফেরত দিয়ে ক্যাব কল করার ৪ মিনিটের মধ্যে সুশ্রী এক তরুণ তার লাল রঙ্গা সুন্দর গাড়ি নিয়ে এসে দাঁড়ালো সামনে। গাড়িতে উঠে ঠিকানা বুঝিয়ে দিয়েই আমার কাগজপত্র দেখতে ব্যস্ত হয়ে গেছি। এর মধ্যে গাড়ি চালকের ফোন আসাতে কানে এসে বাজতে লাগলো উর্দু বাক্যাবলী, এবং আলাপের মধ্যে লাহোর, রাওয়ালপিন্ডি স্থানগুলোর নাম উল্লেখ করায় বুঝতে অসুবিধে হলো না যে সে পাকিস্তান বংশোদ্ভূত, এবং নাম আদিল। ফোন শেষ হবার পরে আমি বাংলাদেশ থেকে আগত বলে আগ্রহ নিয়ে তার কাছে জানতে চাইলাম যে, সে জানে কিনা এক সময় পাকিস্তান ও বাংলাদেশ একই রাষ্ট্রের দুটি অংশ ছিল, এবং আরও জানে কিনা শেষ পর্যন্ত কেন তা আর থাকতে পারলো না। আদিল গাড়ি চালাতে চালাতে বললো যে তার বাবা ঢাকাতে ছিল। পরে ১৯৭১ সালের আগেই পাকিস্তানে ফিরে আসে। বাবা এবং অন্যদের কাছ থেকে সে জানে যে পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মানুষেরা ভালোভাবেই বসবাস করছিল কিন্তু 'মুজিবুর রহমান শামি' নামের পূর্ব পাকিস্তানের এক নেতা ছিল যত গণ্ডগোলের মূল। তার কারণে বাঙ্গালিরা পশ্চিম পাকিস্তানিদেরকে হত্যা করে, আর বাকিদের পূর্ব পাকিস্তান থেকে জোর করে বের করে দেয়। এরপর থেকে দুটি দেশ তৈরি হয়েছে। স্কুল ও কলেজ লেভেলের ইতিহাস বই থেকে সে কি জেনেছে জানতে চাইলে সে জানাল যে এই একই কথা জেনেছে। আদিলকে আমাদের রাজনৈতিক ইতিহাসের সার সংক্ষেপ বলা শুরু করার কিছুক্ষণের মধ্যেই চলে এলাম গন্তব্যে। গাড়ি থেকে নেমে যেতে হলো কথা শেষ না করেই। কষ্ট পাচ্ছিলাম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্য যিনি আদিলের কাছে 'মুজিবুর রহমান শামি'-ই শুধু নন – একজন 'চক্রান্তকারী', 'খারাপ রাজনীতিক'ও – যার কারণে 'স্বর্গসম' পাকিস্তান ভেঙ্গে গেছে। এই 'চক্রান্তকারী' মুজিবের প্রতি তার অনেক ক্ষোভ প্রকাশিত হয়েছিল আমাদের কথোপকথনের সময়। শুধু আদিল তো নয়, আর পাকিস্তানের নাগরিকই তো শুধু নয়– দেশে- ভিনদেশে অগণিত তরুণ মুজিব বিরোধী এমন নানা অপব্যাখ্যা-অপবিশ্লেষণ শুনে শুনে তাদের মনে এহেন কুৎসিত, কদাকার চিত্র একে রেখেছে মুজিবের। বিষয়টি পুরো জাতির জন্য শুভ নয়, বরং আশঙ্কার। 'পোয়েট অব পলিটিক্স' বঙ্গবন্ধুর প্রকৃত চিত্র বিশ্ববাসীর কাছে মেলে ধরা জরুরী।               

দুই.

আজীবন সাম্প্রদায়িকতা-শোষণ-বঞ্চনার বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে চলা 'পোয়েট অব পলিটিক্স' বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পঁচাত্তর সালের মার্চে টাঙ্গাইলে তার ভাষণ শেষ করেছিলেন এই বলে- "আপনারা আমাকে মাফ করবেন। আমি খুব ক্লান্ত।" এ যেন চারিদিকে জীবনের সফেন সমুদ্রের মাঝে থাকা, হিসেব না মেলা কবি জীবনানন্দ দাশের স্বগোতোক্তির মতন "আমি ক্লান্ত প্রাণ এক"। কিন্তু আরাধ্য স্বাধীন দেশে মুজিব কেন ক্লান্ত? কারা তাকে ক্লান্ত করে তুলেছিল? এরপরমাত্র পাঁচ মাস পরেই ১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট ঘটেছিল স্বাধীন বাংলাদেশের নিকৃষ্টতম, নৃশংসতম ট্র্যাজেডি। সাধারণ কোন চরিত্র ট্র্যাজেডির চরিত্র হয় না, এবং সে কারণেই কোনো সাধারণ মৃত্যুও ট্রাজেডি বলে গণ্য হয় না। আসলে পৌরাণিক বা ঐতিহাসিক বড় মাপের চরিত্রই ট্র্যাজেডির উপযোগী চরিত্র, যার উত্থানে একটি জাতির উত্থান ঘটে, যার পতনে একটি জাতির পতন ঘটে। বঙ্গবন্ধু ছিলেন ১৯৭৫ সালের অগাস্ট ট্র্যাজেডির সেই ট্র্যাজিক চরিত্র যার বিয়োগান্তক পরিণতিতে শুধু তার পরিবার নয়, পুরো জাতি রাহুগ্রস্ত হয়, পুরো দেশ হয় লন্ডভন্ড। তাই বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এই দিনটির গুরুত্ব অত্যন্ত বেশি। 

মুজিব আমলে মুজিবের ভাবমুর্তিতে কালি ছিটানো, মুজিবকে ও তার শাসনামলকে প্রশ্নবিদ্ধ করার অপচেষ্টা যে সর্বস্তর থেকে হয়েছে তা যত দিন যাচ্ছে – ততো স্পষ্ট হয়ে উঠছে। সদ্য স্বাধীন দেশের যাবতীয় চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বঙ্গবন্ধু যখন বিরামহীনভাবে দেশের এ প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ধাবমান ছিলেন – তখন তাকে ক্ষত-বিক্ষত করে তুলতে নানা এজেন্ডা নিয়ে নানা প্ল্যাটফর্ম ও ব্যক্তিবর্গ সক্রিয় ছিল। এর সাথে ভিন দেশের নানা শক্তি যুক্ত হয়ে পরিস্থিতিকে আরো জটিল করে তুলেছিল।   

আমলা, পাকিস্তানপন্থি পুলিশ, পাকিস্তানপন্থি সামরিক কর্মকর্তা ও সৈনিক, নানা লাইনের রাজনীতিকের পাশাপাশি মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যেও নানা ধরনের সমীকরন কাজ করেছে। দেশে বিরাজিত অস্থির পরিবেশকে পূঁজি করে নানা মঞ্চের আঁচলতলে বহাল তবিয়তে লুকিয়ে থেকেছে স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির যে অংশ গ্রেপ্তার হয়নি অথবা দেশ থেকে পালিয়ে যেতে পারেনি। মিডিয়াও বঙ্গবন্ধু শাসনামলকে নানাভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করতে ভূমিকা রেখেছে।  

তিন 

মুজিব আমলে সুকৌশলে একটি অপপ্রচার চালানো হয় যে বঙ্গবন্ধু জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন। তাই যদি হতো তাহলে কতিপয়  সামরিক অফিসারের হত্যাকারী হিসেবে উত্থান নয়, মুজিবের বিরুদ্ধে গণঅভ্যুত্থান হবার কথা। এই হন্তারক বাহিনী আকস্মিকভাবে এই হত্যাকাণ্ড ঘটায়নি। এর জন্য দেশি-বিদেশি নানা কুশীলব সক্রিয় থেকেছে এবং দীর্ঘদিন ধরে হত্যা পরিকল্পনা করেছে। মার্কিন আর্কাইভের গোপন দলিল থেকে দেখা যায় যে, অগাস্টের নয়, ১৯৭৫ সালে মে মাসের ২১ তারিখেও মুজিবকে হত্যার প্রচেষ্টা হয়েছিল। রাষ্ট্রপতির নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশের একজন ডেপুটি সুপারিন্টেন্ডেন্টের বরাত দিয়ে মার্কিন দূতাবাসের একজন বাঙালি পলিটিক্যাল সহকারীর মাধ্যমে জানতে পারেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত বোস্টার, যা তিনি ২৩ মে সকালে কেবলের মাধ্যমে স্টেট ডিপার্টমেন্টকে অবহিত করেন। সেই টেলিগ্রামে আরো একজন সাংবাদিক এই ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন বলে জানানো হয়। বঙ্গবন্ধু ঢাকার আশেপাশে একটি নূতন টেলিভিশন স্টেশন পরিদর্শন করে বাড়ি ফেরার পথে গ্রেনেড নিক্ষেপ করে এই হত্যা প্রচেষ্টা হয়, কিন্তু তা ব্যর্থ হয়। মুজিব অক্ষত থাকলেও অজ্ঞাত পরিচয়ের দুজন গুরুতর আহত হয়েছেন বলে তারা জানতে পারেন। সরকারের তথ্য বিভাগ এই সংবাদ প্রচারে নিষেধাজ্ঞা জারি করায় এই ঘটনাটি গোপন থেকে যায়।     

অগাস্টের ১৬ তারিখ সকাল ৯টার দিকে মার্কিন রাষ্ট্রদূত বোস্টার স্টেট ডিপার্টমেন্টকে যে তারবার্তা পাঠায়, সেখানে সে লেখে যে মুজিব হত্যার প্রথম ২৪ ঘণ্টা অতিক্রান্ত হবার পরে এই ধারণা করেন যে এই ক্যু টিকে যাবে। বোস্টার এই টেলিগ্রামে যা জানান তাঁর সারমর্ম করলে দাঁড়ায় এরকম- মোশতাক সরকার মধ্যপ্রাচ্য এবং একই সাথে পাকিস্তানের সাথে সম্পর্কোন্নয়নের উপর জোর দিয়েছে। যদিও মোশতাকের চরম ভারত-বিদ্বেষের কথা সর্বজনবিদিত, তবু প্রতিবেশী দেশ ভারতের সাথে সম্পর্কের চরম অবনতি যেন না ঘটে তাই মন্ত্রী পরিষদে পরিচিত মুখ রাখার দিকে ঝোঁক রয়েছে এই সরকারের। মোশতাক তার ভাষণে পরিষ্কার করেছে যে তার সরকার বৃহৎ শক্তি মূলত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং চীন-এর সাথে সুসম্পর্ক রক্ষা করতে আগ্রহী। এর মাধ্যমে বাংলাদেশের ওপর সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রভাব হ্রাস করা সম্ভব হবে। 

মোশতাকের মার্কিন-পন্থী মনোভাবের কথা আমেরিকার জানা আছে। এর পাশাপাশি মুজিব সরকারের মধ্যে যারা বামপন্থি এবং মার্কিন-বিরোধী বলে সুপরিচিত – তাদের শেষ করে দেওয়া হয়েছে। তাই বোস্টার মনে করেন যে, এই নয়া সরকারের সাথে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মুজিব সরকারের তুলনায়  আরো বেশি সুসম্পর্ক গড়ে ওঠার দ্বারোন্মোচিত হবে।      

তিনি মনে করেন যে, মোশতাক সরকারের আমেরিকার কাছে বৃহৎ আকারের উন্নয়ন সাহায্য প্রত্যাশা করবে। অনেক আগেই মোশতাক এ কথা বলেছিল যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রই একমাত্র বন্ধু রাষ্ট্র যারা সত্যিকার অর্থে বাংলাদেশের জন্য [ইতিবাচক] সহযোগিতা করতে পারে।   

বোস্টার জানান যে, সামরিক বাহিনী এবং বেসামরিক নেতাদের মধ্যে সম্পর্ক কী হতে চলেছে তা এখনো বোঝা যাচ্ছে না। তবে সকল আনুষ্ঠানিক ঘোষণায় ক্ষমতা বদলের এই অভিযানে সামরিক বাহিনীর ভূমিকার ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে। এতে নিকট ভবিষ্যতে ক্ষমতালিপ্সু সামরিক এবং বেসামরিক নেতাদের মধ্যে উত্তেজনা বাড়তে পারে। মোশতাকের ঘোষণায় এ বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে যে, তার সরকার বিগত জানুয়ারিতে মুজিব ঘোষিত সরকারি ব্যবস্থাপনার চেয়ে উদার শাসনতন্ত্র অনুসরণ করতে বদ্ধপরিকর।    

অল্প সংখ্যক তরুণ আর্মি অফিসার এই হত্যাকাণ্ড অভিযানে সফল হওয়াতে তারা রক্তের স্বাদ পেয়ে গেছে। ফলে মার্কিন রাষ্ট্রদূত আশংকা করেছেন যে সামনে আরো কিছু ঘটতে যাচ্ছে। মুজিব নিধনযজ্ঞে যারা ছিল তাদের মধ্যে 'বাঙালি গাদ্দাফি' তৈরি হোক তা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দেখতে চায় না বলে অভিমত প্রকাশ করেন বোস্টার। মধ্যবিত্ত শ্রেণির  চাকুরিরত এই সামরিক কর্মকর্তারা উদার মনোভাবাপন্ন হবে – এমনটাই আশা করেছেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত। তিনি আরো মন্তব্য করেন যে, মুজিব হত্যার পরে বাঙালির রাজনৈতিক মঞ্চে মুজিবের মত ব্যক্তিত্বসম্পন্ন/শক্তিমান নেতা আর কেউ নেই।

কিন্তু বাস্তবে যা ঘটেছিল – তা অনেকটা এরকমের

১. উদার পন্থা নয়, সাম্প্রদায়িক চিন্তা-চেতনার চর্চা প্রাধান্য পায়;

২. মুক্তিযুদ্ধের মৌল চেতনা থেকে জাতিকে বিচ্যুত করার যাবতীয় উদ্যোগ নেওয়া হয়;

৩. স্বাধীনতা বিরোধী শক্তিকে পুনর্বাসিত করা আর মুক্তিযুদ্ধ পক্ষ শক্তিকে কোণঠাসা করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। 

চার.

বঙ্গবন্ধু হত্যার শিকার হবার আগে তার প্রাণপ্রিয় দেশবাসীর কাছে কিছু জরুরি বার্তা পৌঁছে দিয়েছেন বিভিন্ন স্থানে প্রদত্ত তার ভাষণের মাধ্যমে। এই সকল ভাষণ পাঠ করলে কত চ্যালেঞ্জিং ছিল সেই সময় তা উপলব্ধি করা যায়। নিচে তিনটি ভাষণের নমুনা খেয়াল করলে বোঝা যাবে কেন বঙ্গবন্ধু দিনান্তে ক্লান্ত হয়ে উঠছিলেন।   

ক. দায়িত্বহীন নানা কর্মকাণ্ডে অতিষ্ঠ হয়ে তিনি ২৫ জানুয়ারি ১৯৭৫-এ জাতীয় সংসদে দেওয়া তার  ভাষণে জাতিকে মনে করিয়ে দিলেন, "প্রত্যেকটি দেশের নিয়ম আছে, যদি আপনাকে অধিকার ভোগ করতে হয়– অন্যের অধিকারকেও রক্ষা করতে হয়। Liberty is a responsibility এ কথা ভুললে চলবে না।" 

খ. খুব গুরুত্বপূর্ণ যে, ১৯৭৪ সালের ৪ ডিসেম্বর তিনি ঢাকায় বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির দ্বিতীয় কংগ্রেসে প্রধান অতিথি আমন্ত্রিত হ'ন। বিপ্লবের নামে তখন দেশব্যাপী যে হটকারিতা চলছিল সে সম্পর্কে সজাগ করতে প্রধান অতিথির ভাষণে  তিনি বলেন, "…বিপ্লব এভাবে হয় না। দেশের জনগণকে বাদ দিয়ে বিপ্লব হয় না। কোটি টাকা খরচ করে ঘরে বসে আলোচনা করলে বিপ্লব হয় না। বিপ্লব করতে হলে তার রাস্তা আছে। যে রাস্তা অনেক কঠিন রাস্তা এবং অনেক দিনের প্রয়োজন হয়। একদিনে হয় না।… যারা জানেন ইতিহাস, যারা দেখেছেন ইতিহাস, যারা পড়েছেন ইতিহাস তারা জানেন যে বিপ্লব করতে হলে কী করণীয় [কী] প্রয়োজন হয়। রাতের অন্ধকারে কাঁধে অস্ত্র জোগাড় করে চোরের মত ঘরে প্রবেশ করিয়া গলা কাটিলেই বিপ্লব করা যায় না।" 

গ. দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনায় রেখে বঙ্গবন্ধু ১৯৭৫ সালের ৮ মার্চ বললেন, "আমার চারটা কথা মনে রাখেন 

এক– দুর্নীতির বিরুদ্ধে জেহাদ

দুই– ক্ষেতে, খামারে কারখানায় উৎপাদন বাড়াতে হবে

তিন– ফ্যামিলি প্ল্যানিং করতে হবে

চার– জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি করতে হবে

এ প্রসঙ্গে আরও জোরের সাথে বললেন, "কিন্তু-টিন্তু নাই। ফ্রি স্টাইল আর চলবে না। বহুদিন ফ্রি স্টাইল চলছে। বহুদিন যার যা ভাল লাগছে তা করছে। চলবে না বেশি দিন। ওটা বন্ধ করে দেবার জন্য চেষ্টা হচ্ছে এবং চেষ্টা হবে। কারণ জনগণ আমাকে ভালোবাসে আমি জানি।"

যারা স্বাধীনতাকে স্বেচ্ছাচারিতা ভেবে অবিরতভাবে নানা অপকর্মে লিপ্ত ছিল – তারা অনুধাবন করেছে যে বঙ্গবন্ধুর নজরদারির বাইরে কিছুই নেই। ফ্রি স্টাইলে যা ইচ্ছে তাই করে বেড়ানোরা তখন আরো সক্রিয় হয়েছে যেন মুজিবকে সম্পূর্ণ নাশ করে দেওয়া যায়। হত্যাযজ্ঞের খুনিদের যুক্ততার বাইরে আরো অনেকেই ছিল যারা মঞ্চের নেপথ্যে থেকে কলকাঠি নাড়িয়েছে। ২০২১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সুবর্ণ জয়ন্তীতে এই সকল নরাধমদের চেহারা প্রকাশিত হোক, মানুষ জানুক কাদের পরিকল্পনার বলি হতে হয়েছিল বঙ্গবন্ধুকে এবং তার পরিবারের অন্যান্য স্বজনকে।