বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক এখন অনন্য উচ্চতায়

অনয় মুখার্জী
Published : 12 August 2020, 06:31 AM
Updated : 12 August 2020, 06:31 AM

গত ২৬ জুলাই বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে রেল কন্টেইনার দ্বারা বাণিজ্যিক পরিসেবার একটি চমৎকার উদ্যোগ চালু হয়েছে। দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি নতুন মাইলফলক। যা দুটি দেশের বাণিজ্যিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে গতি সঞ্চার ও ভিত দৃঢ় করবে।

৫০টি 'ইলেট্রনিক্যালি সিলড' কন্টেইনার যুক্ত ট্রেনটি বেনাপোল দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। যা অন্য পরিবহনগুলোর চেয়ে নিরাপদ, দ্রূত গতিসম্পন্ন এবং সাশ্রয়ী। এমজিএইচ গ্রুপের মাধ্যমে সাবান, শ্যাম্পু এবং টেক্সটাইল ফ্যাব্রিক ইত্যাদি পণ্যসামগ্রী নিয়ে ট্রেনটি বাংলাদেশে আসে।

ঢাকা এবং নয়াদিল্লিতে অবস্থিত কূটনীতিকদের মতে, কন্টেইনার ট্রেনগুলির মাধ্যমে পণ্য রফতানির ফলে দুর্নীতি, অনিয়ম ও শ্রমিক চাঁদাবাজি যেমন কমবে তেমনি কমে আসবে সময়। আমদানী ব্যয়ও অনেক কমে আসবে, যাতে দুদেশের ব্যবসায়ীদের ব্যবসাবাণিজ্য অনেক সহজ হবে। সর্বোপরি জনগণই সুবিধাটা ভোগ করবে।

ভারতীয় কর্মকর্তাদের ব্যাখ্যা, রবিবার শুরু হওয়া দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য সূচনা ও গত মাসে চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার করে ত্রিপুরায় পণ্য পরিবহন প্রমাণ করে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যকার অংশীদারিত্বের সম্পর্ক অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে অনেক বেশি মজবুত ও সুদৃঢ়। যা দক্ষিণ এশিয়ার অন্য যেকোনো দেশের থেকে আলাদা।

২০০৯ সালে বাংলাদেশে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পরে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে সম্পর্কে নতুন গতি সঞ্চার হয়েছে। ২০১৪ সালে ভারতে নরেন্দ্র মোদী ক্ষমতায় আসার পরে তা আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১৫ সালে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী দীর্ঘদিনের অমীমাংসিত সীমান্তবর্তী ছিটমহল সমস্যা সমাধানের মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যে নতুন ইতিহাস তৈরি করেন। যা দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে বড় ধরনের অর্জন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপের ফলে ভারতের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলগুলোতে শান্তি নেমে এসেছে। যার ফলে নরেন্দ্র মোদীর সরকার তার উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বিচ্ছিন্নতাবাদীদেরকে নিয়ন্ত্রণ করার সুযোগ পায়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সন্ত্রাস ও জঙ্গিদের কঠোর ভাবে দমন করার ফলে এ অঞ্চলে সন্ত্রাসবাদ কমে এসেছে, যার সুফল পাচ্ছে ভারত। যার ফলে বাংলাদেশেও ভারতবিরোধী শক্তি আস্তে আস্তে দুর্বল হয়ে পড়ছে।

গত ২৭ জুলাই ভারত বাংলাদেশকে ১০টি ব্রডগেজ লোকোমোটিভ হস্তান্তর করে। যা ২০১৯ সালের অক্টোবরে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরকালে মোদী সরকারের করা একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন। ভারতের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ রেলওয়ের প্রয়োজনীয়তা অনুসারে লোকোমোটিভগুলিকে যথাযথভাবে পরিবর্তন করা হয়েছে। এই লোকোমোটিভগুলি বাংলাদেশে যাত্রীবাহী ও মালবাহী ট্রেনের ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণে সহায়তা করবে বলে আশা করা যায়।

হস্তান্তর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. জয়শংকর পারস্পরিক বিশ্বাস ও শ্রদ্ধার ভিত্তিতে রচিত ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যকার কালোত্তীর্ণ সম্পর্কের গভীরতার কথা তুলে ধরেন। কোভিড-১৯ মহামারীতেও দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার গতি হ্রাস না পাওয়ায় তিনি সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, "চলমান ঐতিহাসিক মুজিববর্ষে এ জাতীয় আরও মাইলফলক অতিক্রম করার প্রত্যাশা করছেন"।

রেলপথ, শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রী শ্রী পীযূষ গোয়েল বলেন, "দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ও যোগাযোগ বৃদ্ধিতে এবং দু'দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক অংশীদারিত্বকে আরও জোরদার করতে রেল সহযোগিতার তাৎপর্যের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে।"

শেখ হাসিনা টানা তিন মেয়াদে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকার ফলে বাংলাদেশের অর্থনীতি অনেক সমৃদ্ধ। গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ৮.২% ছিল, যা এশিয়ার মধ্যে সর্বোচ্চ। চরম দারিদ্র্যের মধ্যে বসবাসকারী মানুষের সংখ্যা ৯% কমেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের ভারসাম্য নীতির ফলে বাংলাদেশের মানুষের জীবনযাত্রা উন্নত হয়েছে এবং মাথাপিছু আয় দিনদিনই বেড়েই চলছে। যা আজ পাকিস্তানের মাথাপিছু আয়ের চেয়ে অনেক বেশি।

ঢাকাস্থ ভারতীয় হাইকমিশনার মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাৎ করতে পারছে না এমন একটি সংবাদ প্রকাশ, মিথ্যা বৈকি কিছু নয়। কেননা বিগত পাঁচ মাসে কোভিডের কারণে এ ধরনের সাক্ষাতের কোনো সুযোগ ছিল না। যেখানে এই দু'দেশের প্রধানমন্ত্রীর একাধিকবার কথা হয়েছে সেখানে হাইকমিশনারের সাক্ষাৎ ঘিরে সম্পর্কের অবনতি হওয়ার গল্প হাস্যকর। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ ধরনের সংবাদকে সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেছেন। ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ভারতীয় হাইকমিশনারের সাথে সাক্ষাৎ করেছেন।

বেশ কিছুদিন যাবৎ দেশি-বিদেশি কিছু চক্র ভারত-বাংলাদেশের সম্পর্ককে বাধাগ্রস্থ করার চেষ্টা করছে। একটা একটা ইস্যু সামনে নিয়ে এসে বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টা করে। সিলেট ওসমানী বিমানবন্দরের একটি দরপত্র ভারতীয় কোম্পানীকে না দিয়ে চীনা কোম্পানীকে দিয়েছে বলে খবর রটেছে। এ বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল মোমেন ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন "দরপত্র প্রক্রিয়া অনুযায়ী চীনা কোম্পানীই সর্বনিম্ন দরদাতা হিসাবে কাজটি পেয়েছে। তবে কিছু সংবাদপত্র বলেছে যে আমরা চীনকে আরও বেশি সুবিধা দিয়েছি, যা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক, অগ্রহণযোগ্য। এখন ভারত বাংলাদেশে ৪০টি মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে।

বাংলাদেশ-ভারত বন্ধুত্বের বন্ধনে আবদ্ধ। দীর্ঘদিনের অনেক অমীমাংসিত সমস্যা সমাধান হয়েছে, পারস্পরিক সমঝোতার মাধ্যমে বাকিগুলোরও সমাধান হবে। এই বন্ধুত্বের বন্ধন সময়ের সাথে সাথে আরো দৃঢ় থেকে দৃঢ়তর হবে। এটাই দু'দেশেরই জনগণ বিশ্বাস করে।