শততম জন্মদিনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে ফিরে দেখা

মুহাম্মদ সামাদমুহাম্মদ সামাদ
Published : 23 Jan 2012, 08:00 AM
Updated : 30 June 2020, 06:18 PM

পয়লা জুলাই ২০২০ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শততম জন্মদিন। এই শততম জন্মদিনে প্রাণপ্রিয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের সবাইকে প্রীতি ও শুভেচ্ছা জানাই। এই বিশ্ববিদ্যালয় একশ বছর ধরে জীবনের সকল ক্ষেত্রে নিরলস জ্ঞানচর্চা ও গবেষণার মাধ্যমে নতুন জ্ঞান তৈরি এবং বিতরণ করে আমাদের ওপর নিরন্তর আলো ছড়িয়ে চলেছে। দেশের খ্যাতিমান রাজনীতিক, কবি, লেখক, শিল্পী, সাংবাদিক, ব্যবসায়ী, শিল্পোদ্যোক্তাসহ প্রায় সকল পেশার সফল মানুষের আতুঁড়ঘর এই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। আমরা আরও আনন্দিত যে, আইনের ছাত্র হিসেবে ১৯৫২ সালের ঐতিহাসিক ভাষা আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়ে তৎকালীন পূর্ববঙ্গে যার রাজনৈতিক সংগ্রাম শুরু হয়েছিল, বাংলাদেশ রাষ্ট্রের স্রষ্টা ও সেই মহান নেতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবাষির্কী- মুজিববর্ষ একই সঙ্গে উদযাপিত হচ্ছে। মুজিববর্ষ উদযাপনের অন্যতম কর্মসূচি হিসেবে বিশেষ সমাবর্তন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে মরণোত্তর সম্মানসূচক 'ডক্টর অব লজ' ডিগ্রি প্রদান করে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় গৌরবান্বিত হবে।

১৯১২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের ভাইসরয় লর্ড হার্ডিঞ্জ দেশের সর্বপ্রাচীন ও সর্ববৃহৎ এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি দেন। অতপর সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে ১৯২০ সালের ১৩ মার্চ ভারতীয় আইন সভায় 'দি ঢাকা ইউনিভার্সিটি অ্যাক্ট (অ্যাক্ট নং-১৩) ১৯২০' পাস হয়। সে সময় যারা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার আবেদন জানিয়েছিলেন তাদের মধ্যে ঢাকার নবাব স্যার সলিমুল্লাহ, ধনবাড়ির নবাব সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরী, শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক প্রমুখ অগ্রগণ্য। আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাকালীন অগ্রদূতদের আজ গভীর কৃতজ্ঞতায় স্মরণ করি।

শিক্ষার্থীদের জন্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বার উন্মুক্ত হয় ১৯২১ সালের পয়লা জুলাই। শুরুতে কলা, বিজ্ঞান ও আইন অনুষদের অন্তর্ভূক্ত বিভাগগুলো ছিল সংস্কৃত ও বাংলা, ইংরেজি, ইতিহাস, আরবি ও ইসলামিক স্টাডিজ, ফারসি ও উর্দু, দর্শন, অর্থনীতি ও রাজনীতি, পদার্থবিদ্যা, রসায়ন, গণিত এবং আইন। প্রথম শিক্ষাবর্ষে বিভিন্ন বিভাগে মোট ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ছিল ৮৭৭ জন এবং শিক্ষক সংখ্যা ছিল মাত্র ৬০ জন। বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৩টি অনুষদ, ১২টি ইনস্টিটিউট, ৮৩টি বিভাগ, ৫৬টি গবেষণা কেন্দ্র, ১২৩টি অ্যাফিলিয়েটেড কলেজ ও ইনস্টিটিউট রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ক্যাম্পাসে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীর সংখ্যা এখন প্রায় ৪০,০০০। আর, পাঠদান ও গবেষণায় নিয়োজিত রয়েছেন প্রায় দুই হাজার শিক্ষক।

বায়ান্নের ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে তৎকালীন পাকিস্তান সরকারের বিরুদ্ধে সকল গণতান্ত্রিক সংগ্রামে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বদান ও অংশ নেওয়া ছিল তাৎপর্যপূর্ণ। ফলে তাদেরকে কঠোর নিয়ন্ত্রণে রাখার লক্ষ্যে আইয়ুব সরকার ১৯৬১ সালে কুখ্যাত অর্ডিন্যান্স জারি করে। এই অর্ডিন্যান্স বাতিলের জন্যে ষাটের দশক থেকে শিক্ষকরা আন্দোলন করেন। তাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের সরকার নিবর্তনমূলক সেই অর্ডিন্যান্স বাতিল করে 'ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আদেশ-১৯৭৩' জারি করে। ফলে এই বিশ্ববিদ্যালয় একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের মর্যাদা লাভ করে এবং পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে গণতান্ত্রিক রীতি প্রতিষ্ঠিত হয়। এভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মুক্তবুদ্ধিচর্চার নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ধারণা নিয়ে রবীন্দ্রনাথ বলেছেন: '…য়ুরোপীয় ভাষায় যাকে য়ুনিভর্সিটি বলে প্রধানত তার উদ্ভব য়ুরোপে। … অথচ এই য়ুনিভর্সিটির প্রথম প্রতিরূপ একদিন ভারতবর্ষেই দেখা দিয়েছিল। নালন্দা, বিক্রমশীলা, তক্ষশীলার বিদ্যায়তন কবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল তার নিশ্চিত কাল নির্ণয় এখনো হয়নি, কিন্তু ধরে নেওয়া যেতে পারে যে, য়ুরোপীয় য়ুনিভর্সিটির পূর্ব্বেই তাদের আর্বিভাব। তাদের উদ্ভব ভারতীয় চিত্তের আন্তরিক প্রেরণায়, স্বভাবের অনিবার্য্য আবেগে।'

এ কথা অত্যুক্তি হবে না যে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গেও আমাদের চিত্তের ও আবেগের প্রেরণা অনেকটা একই ধারায় প্রবাহিত। এ দেশের মুক্তবুদ্ধিচর্চার প্রাণকেন্দ্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে নিবিড়ভাবে যুক্ত রয়েছে বাঙালি জাতিসত্বার বিকাশ ও বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্মের ইতিহাস। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরাই মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষার সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছেন; বুকের তাজা রক্ত রাজপথে ঢেলে দিয়েছেন; অসীম সাহসিকতায় ঝাঁপিয়ে পড়েছেন স্বাধীনতার সংগ্রামে ও সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে; প্রিয় মাতৃভূমির রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক-সাংস্কৃতিক মুক্তির লক্ষ্যে সকল বুদ্ধিবৃত্তিক ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনে তাঁরা সদা-সর্বদা সক্রিয় রয়েছেন। তাই, দেশের সকল সাংস্কৃতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক ঐতিহ্যের লালনকারী প্রধান প্রতিষ্ঠানরূপে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আপন মহিমায় সমুজ্জ্বল। এখানেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বকীয়তা ও স্বাতন্ত্র্য।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিগত একশ বছরে নিঃসন্দেহে বহু ভালো ভালো গবেষণা, উদ্ভাবন এবং সৃজনশীল ও মননশীল কাজ হয়েছে। এ ক্ষেত্রে সত্যেন্দ্রনাথ বসু, হরপ্রসাদ শাস্ত্রী, মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, গোবিন্দ চন্দ্র দেব, এফ সি টার্নার, ডব্লিই জেনকিন্স, এ এফ রহমান, রমেশ চন্দ্র মজুমদার, আহমদ হাসান দানী, এ বি এম হবিবুল্লাহ, সালাহ্উদ্দীন আহমদ, জসীম উদ্দীন, কাজী মোতাহার হোসেন, আবদুর রাজ্জাক, খন্দকার মোকাররম হোসেন, মোহাম্মদ আবদুল হাই, মুনীর চৌধুরী, এ কে নজমুল করিম, মোজাফফর আহমদ চৌধুরী, আহমদ শরীফ, নীলিমা ইব্রাহিম, খান সারওয়ার মুরশিদ, আনিসুজ্জামান, আবদুল্লাহ ফারুক, কামাল উদ্দীন আহমদ, সরদার ফজলুল করিম, আবু হেনা মোস্তফা কামাল, কাইয়ূম চৌধুরী, বুদ্ধদেব বসু, শামসুর রাহমান, সৈয়দ শামসুল হক, মোহাম্মদ মনিরুজ্জামানসহ অনেক অসামান্য বিজ্ঞানী, গবেষক, পণ্ডিত ও কবি-লেখকের কথা আমরা গর্বিতচিত্তে স্মরণ করতে পারি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্মশতবর্ষে জ্ঞানচর্চা, গবেষণা, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের পরম্পরা আমাদের বহন করে নিয়ে যেতে হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েও বিজ্ঞান-প্রযুক্তির অগ্রগতির ধারায় ও যুগের চাহিদার নিরিখে আমাদের পড়ার বিষয়, পাঠ্যসূচি, পাঠদান, গবেষণা ও নব নব উদ্ভাবন নিয়ে আমাদের নতুন করে চিন্তা-ভাবনা শুরু হয়েছে। আনন্দের খবর হচ্ছে- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের জন্যে 'বঙ্গবন্ধু ওভারসিজ স্কলারশিপ' চালু হয়েছে। এই স্কলারশিপের আওতায় আমাদের তরুণ শিক্ষকরা বিশ্বের খ্যাতনামা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার সুযোগ পাচ্ছেন। এতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণার মান বাড়বে এবং দেশের উন্নয়নে তা কাজে লাগবে। বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন ও গবেষণায় আকৃষ্ট করার লক্ষ্যে মুজিববর্ষ থেকে 'বঙ্গবন্ধু স্কলারশিপ ফর ফরেন স্টুডেন্টস'-এর আওতায় দশজন বিদেশি শিক্ষার্থীকে বৃত্তি প্রদানের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আশার কথা, এই বিষয়ে আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নিরন্তর তাগিদ জারি রয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার, নাগরিক সমাজ ও নীতি নির্ধারকদের বিবেচনার জন্যে কিছু একাডেমিক সমস্যার কথা উল্লেখ করা আবশ্যক। এ সবের মধ্যে প্রধান হচ্ছে: কিছু বিভাগ-ইনস্টিটিউটে অপরিকল্পিত অনার্স ও মাস্টার্স কোর্স চালু করা; একাডেমিক ভবনে স্থান সংকট সত্বেও অপরিকল্পিত বিভাগ-ইনস্টিটিউট খোলা; এবং আরবি, ফারসি, উর্দূ, সংস্কৃত, পালি ও বুদ্ধিস্ট স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থীদের নিজ নিজ মূল ভাষার বদলে বাংলা ভাষায় পড়াশোনা করানো। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায় যে, আরবি, ফারসি, উর্দু, সংস্কৃত, পালি ও বুদ্ধিস্ট স্টাডিজ, প্রেস অ্যান্ড পাবলিকেশন, যোগাযোগ বৈকল্য বিভাগসহ কয়েকটি বিভাগের শিক্ষার্থী সংখ্যা ২০০০-এর অধিক। এদের পাঠক্রমের সঙ্গে বর্তমান সমাজের চাহিদা, প্রাসঙ্গিকতা এবং কর্মক্ষেত্রে প্রবেশের সুযোগ ও সম্ভাবনার বিষয়টি পর্যালোচনার দাবি রাখে।

এছাড়া কিছু কিছু বিভাগ-ইনস্টিটিউটে শুধু মাস্টার্স প্রোগ্রাম ও উচ্চতর গবেষণা পরিচালনার কথা থাকলেও তারা অনার্স প্রোগ্রামসহ নানা ধরনের সান্ধ্যকোর্স চালু করেছে। বেশিরভাগ ইনস্টিটিউট মাস্টার্স প্রোগ্রাম ও উচ্চতর গবেষণা পরিচালনা লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠা করা হলেও তা রক্ষিত হয় নাই। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটটি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল আমাদের শিক্ষার্থীদের বিদেশি ভাষা এবং অন্য ভাষার শিক্ষার্থীদের বাংলাভাষা শেখানোর উদ্দেশ্যে। কিন্তু, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাকাল থেকে ইংরেজি বিভাগ থাকা সত্বেও আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটেও ইংরেজি বিষয়ে অনার্স ও মাস্টার্স প্রোগ্রাম চালু করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে একদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতরের সমন্বয়হীনতা এবং সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার নিয়ে প্রশ্ন করা যায়, অন্যদিকে আবাসিক সংকটে জর্জরিত এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার গুণগত মান বৃদ্ধির নিমিত্তে নতুন সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে উপযোগিতা অনুযায়ী বিভাগ খোলা ও ছাত্রসংখ্যার পুনর্বন্টনের বিষয়টি ভাবা যেতে পারে। এ ছাড়া উন্নত দেশ থেকে পিএইচডি বা উচ্চতর ডিগ্রি অর্জনের সীমিত সুযোগ ও বুদ্ধিবৃত্তিচর্চায় অতীতের তুলনায় পিছিয়ে পড়া এবং সান্ধ্যকালীন কোর্সের সহজ আয়ের কারণে গবেষণা ও উদ্ভাবনে অনাগ্রহ সমস্যা হিসেবে গণ্য করা অন্যায় হবে না। এসব থেকে উত্তরণের একমাত্র উপায় হলো বিশ্ববিদ্যালয় নেতৃত্বের সমবায়িক উদার দৃষ্টিভঙ্গি, স্বপময় ও সাহসী উদ্যোগ।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এখন বিভাগ, ছাত্র ও শিক্ষক সংখ্যায় সবার উপরে। সে ক্ষেত্রে পড়াশোনায় আগ্রহের গতিশীলতা বৃদ্ধি করা একান্ত প্রয়োজন। আমরা আশা করবো, যোগাযোগ ব্যবস্থার এই চরম উৎকর্ষের যুগে নতুন নতুন জ্ঞান ও উদ্ভাবন নিয়ে, সৃজনশীল বিষয়াদি নিয়ে শ্রেণীকক্ষের বাইরেও বুদ্ধিদৃপ্ত আলোচনায় যোগ দিয়ে ছাত্র-শিক্ষকরা নিজেদের শাণিত করবেন। এ ক্ষেত্রে শিক্ষকের ভূমিকা সবিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। শিক্ষকের জ্ঞানভাণ্ডার, পেশাগত নৈপুণ্য, গবেষণায় আগ্রহ, মানবিক গুণাবলী ও নৈতিক শক্তিই ছাত্র-শিক্ষকের স্নেহ-শ্রদ্ধার সম্পর্ক জ্ঞান অর্জনের গতিশীলতাকে তরান্বিত করবে।

বিশ্বব্যাপী নভেল করোনা মহামারীর এই ঘোরতর সংকটকালে অনলাইন শিক্ষাদানের বিষয়টি গুরুত্ব পাচ্ছে। তাত্ত্বিক ও বর্ণনামূলক বিষয়সমূহের জন্যে এই পদ্ধতি সহায়ক হবে। তবে বিজ্ঞান ও যন্ত্রপাতিভিত্তিক বিষয়সমূহের জন্যে এই পদ্ধতি ফলপ্রসূ করতে হলে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের দুই প্রান্তেই প্রয়োজনীয় প্রযুক্তি-সুবিধা নিশ্চিত করা বাঞ্ছনীয়। শিক্ষকপ্রান্তে ল্যাপটপ ও ইন্টারনেট কানেকটিভিটি নিরবিচ্ছিন্ন করা এবং শিক্ষার্থীপ্রান্তে ল্যাপটপ বা স্মার্টফোন, সুলভ মূল্যে ডাটা-প্যাকেজ ক্রয় নিশ্চিত করতে হবে। সর্বোপরি সবাইকে ইন্টারনেট অ্যাক্সেসযোগ্য নেটওয়ার্কের আওতায় আনতে হবে।

বিশ্বায়ন ও চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের এই যুগে বিজ্ঞান-প্রযুক্তির শুভ ও অশুভ প্রভাব বিবেচনায় নিয়ে একুশ শতকের চ্যালেঞ্জকে মোকাবিলার প্রত্যাশায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে চলেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সমাজের মেধাবী শিক্ষার্থীদের উদার, মানবিক ও বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গিসম্পন্ন দক্ষ মানবসম্পদ হিসেবে গড়ে তুলতে অঙ্গীকারাবদ্ধ। এ ক্ষেত্রে বিশেষত বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিনির্ভর উচ্চশিক্ষাকে বিশ্বমানে উন্নীত করার লক্ষ্যে বিশেষায়িত ল্যাব তৈরিসহ শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়নের জন্যে পৃথিবীর স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠদান ও গবেষণারত খ্যাতিমান শিক্ষাবিদ প্রধানত বাংলাদেশি নাগরিকদের একটি প্যাকেজের আওতায় দীর্ঘমেয়াদে জন্যে আমন্ত্রণ জানানো যেতে পারে। সর্বোপরি সৎ, স্বপ্নবান, বিদ্যাধর ও প্রজ্ঞাময় শিক্ষকদের নীতিনির্ধারণসহ বিভিন্ন পর্যায়ে ভূমিকা পালনের সুযোগ প্রদান করে যথাযোগ্য সম্মান দিতে পারলে উন্নত বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষার আয়োজন ফলপ্রসূ হবে।

২৯শে জুন ২০২০