তুমি পারো না বলে, আমি না পারবো কেন?

সুধাংশু শেখর ভদ্র
Published : 1 June 2020, 01:47 PM
Updated : 1 June 2020, 01:47 PM

আজ থেকে ১৫৪ বছর আগের কথা। বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় তার কপালকুন্ডলা উপন্যাসে কালজয়ী একটি লাইন লিখেছিলেন- তুমি অধম তাই বলিয়া আমি উত্তম না হইবো কেন?

এ কালের শেখ হাসিনার ডিজিটাল বাংলাদেশেও এ লাইনটি অমোঘবাণী হিসেবে ফিরে আসছে। তুমি পারো না, তাই বলে কেন আমিও পারবো না?

নগদ-এর হাতে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি আছে, উদ্ভাবণী চিন্তা আছে, আর আছে দেশের মানুষকে সবচেয়ে কম সময়ে ডিজিটাল সেবার আওতায় নিয়ে আসার ঐকান্তিক প্রচেষ্টা, ভালোবাসা-তাহলে কেনো নগদ-কেও না পারার কাতারে পড়ে থাকতে হবে ভাই? নগদ-কে কেন ম্যানুয়াল সময়ের সেই টরটক্কা পদ্ধতিতেই এগুতে হবে?

কথাটা আসছে, সম্প্রতি ডিজিটাল ফাইন্যান্সিয়াল সেবার বিস্তারে নগদ-এর উদ্ভাবণী কার্যক্রমকে যারা গ্রহণ করতে পারছেন না এবং রীতিমতো সমালোচনার যুদ্ধে নেমে পড়েছেন তাদের কারণে।

এটাতো ঠিক, বাজারে যতোগুলো ব্যাংক বা আর্থিক সেবা প্রতিষ্ঠান মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সেবা (এমএফএস) বা ডিজিটাল ফাইন্যান্সিয়াল সেবা (ডিএফএস) নিয়ে এসেছেন, তাদের সবার চেয়ে আমরা বয়সে নবীন। বয়সে নবীন বলেই দক্ষতা আর যোগ্যতায় সর্বাধুনিক এবং শাণিত।

বলার অপেক্ষা রাখে না যে, গ্রাহক সংখ্যা আর সেবার পরিধিতে আমরাই সবচেয়ে দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছি সামনের দিকে। আমাদের এগিয়ে চলার গতিতে অনেকের চক্ষু চড়কগাছ। মাত্র ১৪ মাসে গ্রাহক বিবেচনায় দ্বিতীয় সেরার আসনটি নিশ্চিত করা সেতো চাট্টিখানি কথা নয়গো! এই পর্যন্ত হয়তো আপনারা মেনেই নিচ্ছিলেন। কিন্তু যখন দেখলেন, নগদ-এর হাত সেরার মুকুট ছুঁতে চলেছে তখনই মাথাটা গেল ঘুরে -তাই না?

একবার চিন্তা করেন তো, বাংলাদেশ ব্যাংকের এক সময়ের ২৯টি এমএফএস লাইসেন্স এখন নেমে এসেছে ১৫টিতে। সামলাতে পারছেন বলেই একদিকে এমএফএস উইং বন্ধ করে দিচ্ছেন শক্তিশালী ব্যাংকগুলো, আর আমরা সেখানে উল্টো বাড়ছি সবচেয়ে দ্রুত গতিতে। আমরা ভালো করেই বুঝতে পেরেছি সামনের দিনে এমএফএস বলি আর ডিএফএস বলি লেনদেনের এই খাতই নেতৃত্ব দেবে। আর আর্থিক খাতের ডিজিটালাইজেশন মানেই হল-দেশকে সঠিক ডিজিটাল সড়কের ওপরে টেনে তোলা। দেশ চলবে ডিজিটাল পদ্ধতিতে আর লেনদেন হবে অ্যানালগ বা সেমিডিজিটাল পদ্ধতিতে- তা তো হতে পারে না। তাছাড়া মাত্র গুটিকয়েক লোকের হাতেই কোনো থাকবে ডিজিটাল এই সুবিধা?

শুরু থেকেই বাঁধ ভাঙ্গার এই চিন্তা আমাদের মধ্যে আছে। সেখান থেকেই আমাদের সেবার পরিসরকে বিস্তৃত করার পরিকল্পনা। ভাবুনতো, দেশের অর্ধেকেরও বেশি লোক এখনো আর্থিক অন্তর্ভূক্তির বাইরে রয়ে গেছে। কতোজনতো কত দিন ধরে মেরে-কেটে চেষ্টা করছেন। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসেব তো বলছে, ফেব্রুয়ারির শেষে দেশে কার্যকর এমএফএসি অ্যাকাউন্ট সংখ্যা মাত্র দুই কোট ৭০ লাখ। অবশ্য এই তালিকায় আমাদের অংক তখনো যুক্ত হয়নি। সেটি হলে অংকটির চেহারা এতোটা দুস্থ হতো না।

নিজেরা পারছেন না, অথচ অন্যের পারাটা নিয়ে সমালোচনা করছেন, কেন রে ভাই? একটা সময়তো মোবাইল ফোন অপারেটরদের সঙ্গে রীতিমতো যুদ্ধ করেছেন। অথচ বিষয়টি হওয়া উচিৎ ছিল পুরো উল্টো। পারষ্পারিক সহযোগিতার বিকল্প কিছুই নাই। আমরা এখন পথ চলছি সহযোগিতার হাত ধরেই। মোবাইল অপারেটরদের সঙ্গে হাত ধরাধরি করেই আমরা দেশের সবচেয়ে প্রান্তিক মানুষটিকেও আর্থিক অন্তর্ভূক্তির আওতায় নিয়ে আসতে চাই। আমাদের প্রচেষ্টার পুরোভাবে শীততাপ-নিয়ন্ত্রিত শপিং মলের লাখ টাকার গ্রাহক যেমন আছেন, আছেন গঞ্জের ব্যবসায়ী একইভাবে আছেন নিভৃত কুটিরের দরিদ্র কৃষকও। প্রত্যেকেরই তাৎক্ষণিকতার প্রয়োজন আছে আর আমরা নির্ঝাঞ্জাট সেই প্রয়োজন মেটাতে পেরেই খুশি।

এর পরেও যদি কেউ নতুন গ্রাহককে জিজিটাল সেবার পথে নিয়ে আসতে বাঁধা খুঁজে বেড়ান, সেটা যার যার অভিরুচি- সে নিয়ে আমরা প্রশ্ন তুলবো না। কিন্তু তখন কেউ যদি বলে বসেন বাঁধা হয়ে দাঁড়ানো এই লোকগুলোই সরকার ঘোষিত ডিজিটাল দেশ গঠনে প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাঁড়িয়েছে – তাহলে কি উত্তর দেবেন তখন আপনারা?

আমরা নিশ্চিত করে বলছি, রবি বা টেলিটকের আগ্রহী গ্রাহকদেরকে নগদ- এর নেটওয়ার্কে যুক্ত করার প্রক্রিয়ায় কোনো অবস্থাতেই আমরা মোবাইল অপারেটরদের কাছ থেকে গ্রাহকের ব্যক্তিগত কোনো তথ্য গ্রহণ করছি না– শুধু তার নম্বরটা ছাড়া। সেটিও অপারেটররা গ্রাহকের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে তারপরেই আমাদেরকে দিচ্ছেন। সুতরাং যারা বিষয়টি নিয়ে গুজব ছড়ানোর চেষ্টা করছেন, পরিস্থিতি ঘোলা করার চেষ্টা করছেন– তারা তো আমাদের বিবেচনায় অপরাধ করছেন।

পুরো বিষয়টির কোথাও কোনো গোপনীয়তা নেই- সে কারণে আমরা নিজেরাই ডিজিটাল মিডিয়াতে ঘোষণা দিয়েছি। সরকারের নীতিনির্ধারণী ব্যক্তিদের নিয়ে অনুষ্ঠান করেছি, সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়েও এর প্রচার করেছি। তাছাড়া রবি-টেলিটকের সঙ্গে আমাদের পুরো যে আয়োজন তার সবটাতেই কিন্তু নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি'র অনুমোদন রয়েছে।

তাছাড়া একটি সরকারি প্রতিষ্ঠান হিসেবেও তো নগদ-এর বাড়তি কিছু দায়িত্ব আছে। সেবা নিশ্চিত করার পাশাপাশি জনগণের তথ্যের নিরাপত্তা দেওয়ার চিন্তা থেকে আমরা কখনো মুক্ত নই।

কাজটা কিভাবে করছি সেটা বুঝিয়ে বলতে ঈদের আগে দুস্থ মানুষকে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের আড়াই হাজার টাকা প্রদানের ঘটনাটা বলি। দুস্থদের তালিকায় আমরা কেবল নাম, মোবাইল নম্বর আর জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বরটা পাই। তারপরেও এই তিনটি তথ্য দিয়ে অনেক ভুয়াকে শনাক্ত করা হয়েছে; আবার যাদের অ্যাকাউন্ট ছিল না তাদের নামে অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে। বিষয়টা এখান থেকে ভাবুন দেখবেন সব সহজ হয়ে যাচ্ছে।

আর যারা তথ্যের নিরাপত্তার এমন বুলি আওড়াচ্ছেন তাদের জন্যে আরেকটু বলি- আপনারা তো ফেইসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, ভাইবার, ইমো ব্যবহার করছেন? নাকি করছেন না? কোন কারণে কি আপনি গুগল সেবার বাইরে আছেন?

ওদের কাছে আপনার কোন তথ্যটি নেই চিন্তা করেন একবার। ওটা নিয়েও কিছু বলেন। ওই তথ্যও তো কেনা-বেচা হচ্ছে হরদম। নগদ এমন কোনও ভুয়া গ্রাহক তৈরি করেনি যে চাপে পড়ে, পরে সেটা বন্ধ করতে হলো। কিন্তু যারা বড় বড় বুলি আওড়াচ্ছেন তাদের কিন্তু কোটি উর্ধ্ব অ্যাকাউন্ট এর মধ্যেই বন্ধ করে দিতে হয়েছে। খোঁজ নেন বাংলাদেশ ব্যাংকের বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিলিজেন্স ইউনিটি-তে (বিএফআইইউ); দেখবেন ভুয়া গ্রাহক শনাক্তের কারণে কার কতো অ্যাকাউন্ট বন্ধ হয়েছে।

আমরা অন্যদের ভয়টা বুঝি। গত বছর ২৬ মার্চ শুরু করে এরই মধ্যে আমাদের গ্রাহক দুই কোটি। রবি এবং টেলিটক যুক্ত হয়ে গেছে আরো কতো কোটি আসবে নেটওয়ার্কে, সেই ভয়ে এরই মধ্যে অক্কা পেতে শুরু করেছেন অনেকে। তখন বিশ্বের সেরা এমএফএস অপারেটরের খেতাবটা আবার 'নগদ' না পেয়ে যায় সেই ভয়ও কি অনেকের নেই!

আমরা ভাই এসব সেরা খেতাবের পেছনে ছুটি না। আমাদের একটাই লক্ষ্য যতো বেশি মানুষকে সেবার নেটওয়ার্কের মধ্যে আনা যায় আর মানুষের জীবনটাকে কীভাবে সহজ করা যায় সেটাই বড় এক চাওয়া। ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশেকে সত্যিকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ হিসেবে যতোটা সম্ভব সহযোগিতা করাই নগদ-এর প্রধান অগ্রাধিকার। নগদ হাঁটছে সেই অগ্রাধিকারভিত্তিক পথেই।

মানুষ বাঁচলে দেশ বাঁচবে ।