গণতন্ত্রের চর্চা: হামবুর্গ থেকে শাহবাগ

Published : 30 August 2014, 06:04 PM
Updated : 31 August 2012, 10:04 AM

১৫ মে দুপুরে এলিফ্যান্ট রোডে অস্বাভাবিক জ্যাম। ওদিকে নিউজ রুম থেকে ফোন আসছে, নিউজের অনেক চাপ। ১০ মিনিটের পথ ঘন্টা খানেক সময় নিলো। অফিসে পৌঁছে নিউজ এডিট করতে করতে যা দেখলাম তার মূল বক্তব্য, রাজধানীর শাহবাগ মোড়ে চাকরি জাতীয়করণ দাবিতে বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষকদের আন্দোলন। পুলিশের ভাষ্যমতে ' আন্দোলনকারিরা রাস্তা অবরোধ করায় তাদের উপর জলকামান ব্যবহার করা হয়'। প্রচন্ড দাবদাহে সারাদিন ধরে আন্দোলনরত দরিদ্র এই মানুষগুলোর উপর ছোড়া হয় গরম পানি। ১৬ মে পত্রিকা ভর্তি হলো রাজপথে অসহায়, ক্ষুধার্ত আর ক্ষোভ বঞ্চনায় অপমানিত সেই শিক্ষকদের ছবি দিয়ে। লাঠি দিয়ে পেটাচ্ছে পুলিশ, বুটের লাথি পড়ছে পিঠে। সঠিক পদ্ধতিতে শিক্ষা গ্রহণ না করলে উচিত শিক্ষা দানের উপযুক্ত ব্যবস্থা আরকি! সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো ভরে উঠলো নানা রকম ছবি ও মন্তব্যে। এর মধ্যে নাকে গরম পানি ঢুকে গুরুতর অসুস্থ হলেন জামালপুরের আজিজুর রহমান। ১৭ মে পত্রিকার শিরোণাম, ' শিক্ষক আজিজুর রহমান মারা গেছেন'। আমার জানা নেই, যেসব শিক্ষকরা আন্দোলন অব্যাহত রেখে সড়কে অবস্থান নিয়েছিলেন তারা পুলিশের দিকে ইট পাটকেল নিক্ষেপ করেছিলেন কিনা বা কোন সহিংসতার প্রস্তুতি তাদের ছিল কিনা। তবে এমন কোন অভিযোগ পুলিশও করতে পারেনি। এর ৩ সপ্তাহ পর ৯ জুনের অভিজ্ঞতাটা বলি। হামবুর্গের রাস্তায় লিয়া যখন জুস আর গরম কফির ফ্লাস্ক নিয়ে এলো আন্দোলনকারিরা তখন ক্লান্ত–পুলিশও। প্রায় ৩ কিলোমিটার পথ হেটেছে সবাই। আমাদের অবাক করে লিয়া ট্রে নিয়ে এগিয়ে গেল নিরাপত্তায় নিয়োজিত পুলিশ ভ্যানের দিকে। অরেঞ্জ জুস আর কফির পেয়ালা এগিয়ে দিচ্ছে সে। আমার আর মিয়ানমারের সাংবাদিক আহিরের চোখ ততক্ষণে কপালে। আন্দোলনকারিরা পুলিশকে খাওয়াচ্ছে? অবশ্য কিছুক্ষণ আগেও একবার অবাক হয়েছি। হামবুর্গ ক্যানেল পার হবার সময় 'নো আকটা' লেখা প্লাকার্ড ধরে থাকা এক কিশোর ভিড়ের ভেতর পা পিছলে গেল। ছো মেড়ে তুলে তাকে গাড়িতে বসিয়ে দিল কালো পোশাক পড়া ৬ ফুট উচু এক পুলিশ। বললো, না হেটে এভাবেই অংশ নাও। তখনো আমি আর আহির গোপনে দৃষ্টি বিনিময় করেছি! আমাদের দলনেতা বার্লিন 'ডেইলি তাজের' এশিয়া প্যাসিফিক ডেস্ক চীফ জেভেন হানসেন তখন ছবি তোলায় ব্যস্ত। দ্বিতীয় দফা বিস্ময়ের সময় জেভেন বুঝলো হামবুর্গে আন্দোলনকারি ও পুলিশের সম্পর্কে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সাংবাদিকরা একটু অবাক হয়ে গেছে। বিস্ময়েরই কথা।

কদিন আগে নিজের দেশের রাজপথে পুলিশ ও বিক্ষোভকারী শিক্ষকদের সম্পর্কের কথা তখনো পুরনো হয়নি। আর মিয়ানমারে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার বোধহয় তখন তৃতীয় দিন। অনলাইনে মিয়ানমারের প্রতিমুহূর্তের আপডেট পৌঁছে যাচ্ছে বিশ্ববাসীর কাছে। সীমান্তে রোহিঙ্গা শরনার্থীদের বাংলাদেশ আশ্রয় দিবে কি না এই নিয়ে বার্লিনে বসেই উত্তপ্ত আলোচনা হয়েছে। দলের প্রধান সমন্বয়কারি আন্তে বোহানজে বারবার জানতে চেয়েছে এমন পরিস্থিতিতে সরকার কী ভাবছে আর তাতে জনগনের সমর্থন কতটুকু? মিডিয়ার ভূমিকা কী? নিজেদের দুর্বলতা ঢাকতে আমি আর আহির এক সুরে বলেছি মিয়ানমার-বাংলাদেশ সম্পর্কে যা ভাবছো অমন নয়। জার্মান ফরেন ফেডারেল গর্ভনমেন্ট আমন্ত্রন জানিয়েছিল এশিয়ার ৭ সাংবাদিককে। ইন্টারন্যাশনাল মিডিয়া এ্যালায়েন্সের তত্ত্বাবধানে আয়োজিত প্রোগ্রামটা ছিল 'ফিড্রম অফ এ্যাসেম্বলি এন্ড সিটিজেন পার্টিশিপেসন' শিরোণামে। অংশ নিয়েছে ফিলিপাইন, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, পাকিস্তান, মিয়ানমার, বাংলাদেশ ও জার্মানীসহ ৭ দেশের ১২ জন সাংবাদিক। মুল বিষয় -জনগনের সমবেত হওয়ার অধিকার বিষয়টি ইউরোপে কিভাবে সংগঠিত ও সংরক্ষিত হয় এবং এশিয়াতে এর চিত্র কেমন তা নিয়ে মতবিনিমিয়।

বলতে দ্বিধা নেই এখানে এশিয়ার কাছ থেকে তাদের বিশেষ কিছু শেখার রয়েছে বলে আমার মনে হয়নি। প্রোগামে আমরা কথা বলেছি জার্মান ফরেন ফেডারেল সেক্রেটারি, বার্লিন পুলিশ প্রধান, ডেপুটি মেয়র, পলিটিক্যাল লিডার, আকটা ডেমোনেস্টেটর ও মিডিয়া প্রিন্ট (অবাধ ইন্টারনেট ব্যবহার ও ভূমি অধিগ্রহন নিয়ে যথাক্রমে গোটা ইউরোপ ও বার্লিনের দুটি আন্দোলন) একটিভিস্টদের সাথে। সাধারণ জনগনের সভা-সমাবেশ করার অধিকারের মত একটি বিষয় নিয়ে যে কোন দেশের সরকার সংবাদকর্মীদের আমন্ত্রন জানাতে পারে এটাই অবাক করেছে।

প্রথম দিনেই আলোচনা হয়েছে এই অধিকার নিয়ে সংবিধান কী বলে? জার্মান সংবিধান এর ৮ নম্বর অনুচ্ছেদে সমবেত হওয়ার বিষয়ে বলা হয়েছে 'স্থানীয় প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে স্বাধীনভাবে সমবেত হবার অধিকার রয়েছে প্রত্যেক নাগরিকের। তবে জনগনের নিরাপত্তা ক্ষুন্ন হওয়ার আশংকা দেখা দিলে প্রশাসন সেখানে বাধা দিতে পারে।' বার্লিন ক্রিমিনাল ডিভিশন পুলিশ প্রধান জানালেন এই আর্টিকেলের সাথে কিছু ক্লজে উল্লেখ রয়েছে, আন্দোলনের আগে ওই এলাকার প্রশাসনের অনুমতি নিতে হবে, কতখানি জায়গায় আন্দোলন হবে তা নির্ধারিত করা হবে, যে কোন একজনকে দলের মুখপাত্র হিসেবে সমস্ত দায়িত্ব গ্রহণ এবং প্রশাসন যে কোন বিষয়ে তাদের সাথে যোগাযোগ করবে, আন্দোলনের সময় মাস্ক পড়ে মুখ ঢাকা যাবেনা। নিয়মগুলো লংঘন না করলে পুলিশ কোন সমাবেশে হস্তক্ষেপ করতে পারেনা। তবে বিভিন্ন বিষয়ের একটিভিস্টদের সাথে কথা বলে জানা গেল, অনেক সময় পুলিশ গোপন ভিডিও ক্যামেরা ব্যবহার করে যেটা আইন সমর্থন করে না। এ বিষয়ে পুলিশেরও জবাবদিহিতা রয়েছে। অপরদিকে পুলিশ অভিযোগ করলো, অনেক সময় আন্দোলনকারিরা যে সংখ্যা তাদের দিয়ে থাকে তার চেয়ে বেশি হলে নিরাপত্তা সংকট তৈরি হয়। অনুমতি না নিয়ে যখন মাস্ক পড়ে সেসব ক্ষেত্রে হস্তক্ষেপ না করে উপায় থাকেনা। তবে এসবই হলো নিরাপত্তা বিষয়ক কথা। কিন্তু সশরীরে অংশ নেয়া হামবুর্গের সেই শান্তিপূর্ণ আন্দোলন যেখানে আন্দোলনকারি ও পুলিশ একসাথে চা খায়, সরকার মাথা হিসেব করে নিরাপত্তাকর্মী নিয়োগ করে সেই আন্দোলনও যে এত কার্যকর হতে পারে ধারণা ছিলনা। জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহে অব্যাহত আন্দোলনের মুখে ইউরোপ পার্লামেন্টে বাতিল হয়ে যায় আকটা চুক্তির বিল। অথচ এই চুক্তির জন্য ২০০৮ সালে ৪০ টি দেশ সমঝোতায় আসে। ২০১১ সালে ২২ টি দেশ এতে সমর্থনের স্বাক্ষর করে যার মধ্যে ইউরোপের দেশসহ রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়ার মতো ক্ষমতাধর রাষ্ট্র।

প্রোগ্রামে দাবি-দাওয়া নিয়ে জনগনের সমবেত হওয়ার অধিকার বিষয়ে আমাদের অবস্থা জিজ্ঞেস করলে দেখা গেল বাংলাদেশ, মিয়ানমার ও পাকিস্তানের পরিস্থিতি প্রায় একইরকম। সভা-সমাবেশ বা আন্দোলনে পুলিশের সাথে হাতাহাতি হবে না তা হয় না! সংঘর্ষ আমাদের সভা সমাবেশের যেন একটি অংশ। ২৮ আগষ্ট একটি বহুল প্রচলিত দৈনিকের শেষ পৃষ্ঠার রঙিন ছবি মেডিকেলে ভর্তিচ্ছু এক শিক্ষার্থীর কলার ধরে টেনে নিচ্ছে পুলিশ। একই দিনে রাতে শাহবাগ মোড়ে ছাত্র নিহত হওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে শাহবাগ থেকে বাংলামটর এলাকা পর্যন্ত গাড়ি-ভাংচুর হয়। টিভি চ্যানেলের লাইভ অনএয়ারে দেখলাম ছাত্ররা পুলিশের বুটে আগুন দেয়ার চেষ্টা করছে। ২৯ আগষ্ট একটি ইংরেজি ডেইলির কাভার স্টোরি শিরোনাম কপস অর ক্রিমিনাল? চট্টগ্রামের নন্দন কাননে এক ছাত্রের উপর হামলা চালিয়েছে ৫ পুলিশ। একজন পেছন থেকে ধরে রেখেছে অন্যরা পেটাচ্ছে। এর মধ্যে এক পুলিশ ছাত্রের বুকে লাথি বসিয়েছে। কিন্তু সবসময় কেন পুলিশ ও আন্দোলনকারি একে অপরের শত্রুর ভূমিকায় অবতীর্ন হবে? নিরাপত্তা রক্ষীরা সরকারের কর্মী বলে? সরকার কার?

সমবেত হওয়ার আর্টিকেলটি বাংলাদেশের সংবিধানেও প্রায় একই রকম। ৩৭ নম্বর অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে 'জনশৃংখলা ও জনস্বাস্থের স্বার্থে আইনের দ্বারা আরোপিত যুক্তিসঙ্গত বাধা-নিষেধ সাপেক্ষে শান্তিপূর্ণভাবে ও নিরস্ত্র অবস্থায় সমবেত হইবার এবং জনসভা ও শোভাযাত্রায় যোগ দান করিবার অধিকার প্রত্যেক নাগরিকের থাকিবে।' কিন্তু এখানে আইনের দ্বারা আরোপিত যুক্তিসঙ্গত বাধা নিষেধের প্রকার কী সে বিষয়ে স্পষ্ট উল্লেখ নেই। জনস্বাস্থের স্বার্থে বলতে যে টার্ম ব্যবহার করা হয়েছে সেটা শুধু সরকার ও প্রশাসনই জানেন। সমবেতকারি বা কোন বিষয়ে আন্দোলনরত জনগনের এ বিষয়ে ধারণা কতটা স্পষ্ট? একই স্থানে দুই বা ততোধিক দল সভা আহ্বান করতে পারবেনা এবং মাইক ব্যবহারে সতর্কতা রয়েছে এছারা কোন নিয়মটা লংঘন করলে পুলিশ তাদের পেটাতে পারবে সে বিষয়ে কোন সম্যক জ্ঞান কারো আছে বলে মনে হয়না। এই যে আইনের ফাঁক বা সিস্টেম বাগ বলে প্রচলিত একটি টার্ম প্রশাষন ব্যবহার করে আসছে তা কিন্তু গণতান্ত্রিক সংবিধান বহাল রেখে চালিয়ে যাওয়া বিস্ময়ের। আমার স্বল্প বুদ্ধি ও যুক্তিপূর্ণ মন জানে জার্মানীর মতো বড় ও উন্নত দেশের প্রশাসনিক ব্যবস্থা, আর্থ-সামজিক অবকাঠামোর সাথে কোনভাবেই বাংলাদেশের তুলনা চলেনা। তবে শিক্ষিত জনদের বদৌলতে যুক্তরাষ্ট্র-জার্মানীর মতো উন্নত দেশগুলো সম্পর্কে জানার পরিধি কম থাকার কথা নয়। আজকের বিশ্বরাজনীতি, মুক্তবাজার অর্থনীতির ফলে বহুজাতিক কোম্পানীগুলোর সর্বগ্রাসী আচরনে তাদের প্রতি আমাদের বিরাগ থাকতেই পারে। আবার যে সব ইস্যু নিয়ে সুশাসনের অভাব থাকায় আমাদের সাথে পশ্চিমা ও ইউরোপের দেশগুলো দুরত্ব তৈরি হয়েছে তা নিয়েও মনোমালিন্য স্বাভাবিক। কিন্তু ভালোটুকুত নিতে আপত্তি থাকার কথা নয়। অনুদান না পেলে যে দেশের চলেনা, যাদের উন্নত শিক্ষা মানেই উন্নত দেশের সার্টিফিকেট সেদেশের গণতন্ত্র চর্চার জন্য তাদের কাছ থেকে এখনো অনেক কিছু শেখার বাকি রয়েছে এটা মানতে হবে। আর গণতন্ত্রের চর্চার শিক্ষা গ্রহণে বোধহয় তেমন লজ্জা নেই। মানুষের সমাবেশের অধিকার গণতান্ত্রিক অধিকার। একজন নাগরিকের স্বাধীনতার উপর নির্ভর করে তার নাগরিক হিসেবে ভূমিকার মান। উন্নত দেশগুলোতে অর্থনৈতিক বৈষম্য থাকলেও আইন সবার জন্য সমান। আমাদের আইনের বৈষম্যহীন প্রয়োগ মুখের কথাতেই সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে। নানা রকম দুর্নীতি ও ক্ষমতায়নে এখানে আইন প্রয়োগ হয় স্থান-কাল ও পাত্র ভেদে। এর ফলে বৈষম্যের কবলে পরা মানুষটি সহজেই আইনের প্রতি শ্রদ্ধা হারাচ্ছে। এতে করে সহজেই তৈরি হচ্ছে আইন লংঘনের নতুন নতুন ঘটনা। আবার যে ক্ষমতার ফলে আইনের সুযোগ নিচ্ছে সেও পুলসিরাত পার হয়ে যাবার সুযোগ নিয়ে আইন ভাঙছে। এভাবে প্রথমেই যা ক্ষতিগ্রস্থ হয় তা গণতন্ত্র। পৃথিবীর কোন দেশেই গণতন্ত্রের চর্চা সঠিকভাবে হচ্ছে বলে দাবি করা যাবে না। পৃথিবীর সব দেশের আন্দোলনের ইতিহাসের সাথেই সহিংসতা-সংঘর্ষের লেবেল জুড়ে দেয়া রয়েছে। তাই বলে তারও তো একটি মানদণ্ড থাকা চাই। গণতান্ত্রিক সংবিধান বহাল থাকার পরও আন্দোলন মানেই সহিংসতা আর বিশৃংখলা, হাসপাতালে এডমিশন, সড়ক অবরোধ, ঘন্টার পর ঘণ্টা রাস্তা আটকে রাখা। অর্থনৈতিক ক্ষতির এমন নজির মেনে নেয়ার ফল উৎপাদন সংকট ও অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি ছাড়া কিছুই করতে পারেনা। মৃত্যু সংবাদ না এলে সরকার দাবি পূরণ করবে না বা নিজের অধিকার আর দাবির কথা বলার নিরাপত্তা মানুষের থাকবে না– এটা কোন গণগন্ত্রের চর্চা নয়। অপরদিকে কথায় কথায় কর্মসংস্থানে ভাংচুর-অগ্নিসংযোগ বা সড়ক অবরোধ করে ভোগান্তি তৈরি করা হুজুগে মাতাল বলে যে শব্দটি রয়েছে তারই উপযুক্ত চর্চা প্রমান করে। নিজেদের ব্যর্থতার সাতকাহন আর কত পড়া যায়? ৪ টি দশকের স্বাধীনতা একেবারে কম সময় নয়। এখনো যদি সেই স্বাধীনতা পেয়েছি আর গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হয়েছে–এই সুখ স্বপ্নে বিভোর থেকে এর প্রয়োগ ও উৎকর্ষের প্রচেষ্টা না থাকে তবে গণতন্ত্র শব্দটি হবে বকের বাঘের কাছ থেকে উপহার নেবার মত। পুরনো সেই গল্পতো সবারই জানা তবুও সংক্ষেপে বলি। বাঘ গলায় কাটা বিধিয়ে প্রায় যায় যায় অবস্থা। বককে দেখে বাঘ বললো, তুমিই আমার পরমাত্মীয়, বিপদ থেকে রক্ষা করো, ভালো পুরস্কার দেব। ওমন একটা শক্তিশালী প্রাণীর করুন দশা দেখে মায়া হলো বকের। পুরস্কারের লোভতো ছিলই। সানন্দে রাজী হয়ে বাঘের বিশাল হা করা মুখের ভেতর মাথা ঢুকিয়ে বের করে আনলো কাটা। চিকিৎসা শেষে পুরস্কার চাইলে বাঘ হুংকার দিয়ে বললো, এই যে তুমি আমার হা এর মধ্যে মাথা ঢুকিয়ে আবার জীবন নিয়ে বেঁচে আছো এই কি তোমার পুরস্কার না?" এতদিন পরও গণতন্ত্র, স্বাধীনতা শব্দের শুধু আফিম খেয়ে বুদ হয়ে যদি থাকি তিাহলে বকের মতো শুধু জীবন বাচানোটাই হবে আমাদের একমাত্র তৃপ্তি আর এই তৃপ্তিটাই আমাদের ভবিষ্যতকে হুমকির সম্মুখীন করে তুলবে।

সাদিয়া মাহ্জাবীন ইমাম: সাংবাদিক ও লেখক।