চিকিৎসা ও সেবাদানের জন্য আমরা সদা প্রস্তুত

আশরাফ জুয়েল
Published : 4 April 2020, 11:10 AM
Updated : 4 April 2020, 11:10 AM

প্রায় আঠারো কোটি মানুষের ছোট্ট আয়তনের এই দেশে চিকিৎসা সেবা পেতে হিমশিম খায় সাধারণ মানুষ। একদিকে সরকারি হাসপাতালগুলোতে অসুস্থ মানুষের উপচে পড়া ভিড় এবং অন্যদিকে বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে খরচের যোগান দিতে ব্যর্থ হয়ে চিকিৎসাবঞ্চিত হচ্ছেন তারা। জাতীয় বাজেটে স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ এখনও প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। কিন্তু এতকিছুর পরেও নিশ্চিতভাবেই এ কথা বলা যায়, বাংলাদেশে স্বাস্থ্যসেবার মান দিন দিন উন্নততর হচ্ছে। যথেষ্ট দ্রুততার সাথে সরকার চিকিৎসক এবং নার্স নিয়োগে সক্ষম হয়েছে এবং স্বাস্থ্যখাতে অন্যান্য পদে জনবল নিয়োগে যথেষ্ট আন্তরিকতার পরিচয় দিচ্ছেন। নতুন নতুন হাসপাতাল এবং মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে এই খাত এগিয়ে চলছে নতুন দিনের দিকে।

এমনই এক সময়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার সরাসরি তত্ত্বাবধানে সুখবর হয়ে এসেছে আরেকটি সরকারি উদ্যোগ। প্রাইভেট পাবলিক পার্টনারশিপের (পিপিপি) মাধ্যমে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাস্টের অধীনে এবং সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে জাতির মাতার নামে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে আরেকটি অনন্য স্বাস্থ্যসেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান, 'শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব মেমোরিয়াল কেপিজে বিশেষায়িত হাসপাতাল ও নার্সিং কলেজ'। এই হাসপাতালের অপারেশনাল পার্টনার হিসেবে কাজ করছে মালয়েশিয়ার বিখ্যাত স্বাস্থ্যসেবা গ্রুপ কেপিজে হেলথকেয়ার বেরহাদ গ্রুপ। কেপিজে হেলথকেয়ার গ্রুপ মালয়েশিয়ার অন্যতম প্রধান স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান যারা একাধারে মালয়েশিয়া ছাড়াও ইন্দোনেশিয়া এবং থাইল্যান্ডে তাদের কার্যক্রম যথেষ্ট দক্ষতার সাথে পরিচালনা করছে। ইতোমধ্যে কেপিজে বেরহাদের তত্ত্বাবধানে ত্রিশটি প্রতিষ্ঠান কাজ করে যাচ্ছে, শুধু চিকিৎসা নয় মেডিকেল শিক্ষার কার্যক্রমও অত্যন্ত দক্ষতার সাথে পরিচালনা করছে কেপিজে বেরহাদ।

শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব মেমোরিয়াল স্পেশালাইজড হাসপাতাল ও নার্সিং কলেজটির নির্মাণকাজ আরম্ভ ২০১১ সালে এবং নির্মাণ শেষ হয় ২০১৩ সালে। এটি তার কার্যক্রম আরম্ভ করে ২০১৫ সাল থেকে। প্রায় সাড়ে ছয় একর জায়গার উপর নির্মিত এই হাসপাতালটি গাজীপুরের কাসিমপুর থানাধীন তেঁতুইবারি অঞ্চলে অবস্থিত। সহজভাবে চেনার উপায়, শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব মেমোরিয়াল স্পেশালাইজড হাসপাতাল ও নার্সিং কলেজটি ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের পাশেই অবস্থিত। ঢাকা ইপিজেড এবং জিরানি নামক স্থানের মাঝামাঝি এর অবস্থান। আট তলা বিশিষ্ট এই হাসপাতালটি প্রায় তিন লাখ স্কয়ার ফিট জায়গা নিয়ে অসাধারণ নির্মাণশৈলীর উদাহরণ হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে। এর পাশাপাশি নার্সিং কলেজ বিল্ডিং, ছাত্রদের জন্য আবাসন ব্যবস্থা, চিকিৎসক, নার্স এবং অন্যান্য স্টাফদের জন্য আবাসনের ব্যবস্থাও রয়েছে। সম্ভবত এই নার্সিং কলেজটি একমাত্র প্রতিষ্ঠান যেটি সম্পূর্ণ আবাসিক।

এখানে রয়েছে ত্রিশেরও অধিক আবাসিক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। আধুনিক যন্ত্রপাতিতে স্বয়ংসম্পূর্ণ এই অনন্য হাসপাতালটি। এখানে সব ধরণের চিকিৎসা দেয়া হয়।

আমরা জানি পৃথিবী এখন দুঃসময় পার করছে। আমাদের জীবদ্দশায় এমন দূর্যোগের মুখোমুখি হতে দেখিনি পৃথিবীকে। চীনের উহান শহর থেকে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসজনিত কোভিড-১৯ রোগে প্রতিমুহূর্তে আক্রান্ত হচ্ছে হাজার হাজার মানুষ, মৃত্যুমুখে পতিত হচ্ছে শত শত মানুষ। উন্নত বিশ্বের দেশসমূহ এই মহামারী সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে। ইতালির মতো দেশে শত শত রোগী প্রকৃত চিকিৎসা না পেয়ে মারা যাচ্ছে। ইউরোপের স্পেন, ফ্রান্স, বৃটেন, নেদারল্যান্ডসহ প্রায় সকল দেশেই এই মহামারী প্রবল আকার ধারণ করেছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপ এমন ভয়ংকর সময় পার করেনি। ইংল্যান্ডে অবসর থেকে ফিরে এসেছেন অসংখ্য চিকিৎসক, নার্স এবং স্বাস্থ্যকর্মী। সকলেই দিশেহারা। কী হবে? শুধু কী ইউরোপ? প্রবল শক্তিধর আমেরিকাও পর্যুদস্ত এই ভাইরাসের আক্রমণে। নিউইয়র্কের মতো শহরে মানুষ ঠিকমতো চিকিৎসা পাচ্ছেন না। প্রায় প্রতি মিনিটে একজন করে মানুষ মারা যাচ্ছেন। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট অনেকটা অসহায়ের মতো চিকিৎসা সাহায্য প্রার্থনা করছেন। এশিয়ার ইরানের অবস্থাও একই রকম। মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে, মারা যাচ্ছে। এর আগে চীনের উহানেও এই ভাইরাসের আক্রমণে মারা যায় প্রায় সাড়ে তিন হাজার মানুষ। কিন্তু এখনো পর্যন্ত চিকিৎসাবিজ্ঞান এই ভয়ংকর ভাইরাসের কোনো প্রতিষেধক আবিষ্কার করতে সক্ষম হয়নি। তাই চিকিৎসা নয় বরং প্রতিরোধই হচ্ছে এই ভয়ংকর ভাইরাসকে আটকে রাখার একমাত্র উপায়। একজন থেকে যেন আরেকজন সংক্রমিত হতে না পারে সেজন্য সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা অত্যন্ত জরুরি। এই লক্ষ্যে পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতো লকডাউন বা সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে বাংলাদেশেও। মানুষ আতঙ্কিত। বাংলাদেশে এখনো অতটা ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করেনি এই কোভিড-১৯ রোগটি। সৃষ্টিকর্তার কাছে আমাদের চাওয়া, এই ভাইরাসের মরণকামড় যেন আমাদের উপর না আসে।

সরকারের পক্ষ থেকে যতটা সম্ভব সকল উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। সুবিধাবঞ্চিত মানুষের অন্নসংস্থানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। অনেকগুলো হাসপাতালকে শুধু করোনা আক্রান্ত রোগীদের জন্য নির্ধারিত করে দেয়া হয়েছে। বাড়ানো হয়েছে করোনাভাইরাসের টেস্টের সুবিধা। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উৎসাহ এবং নির্দেশে চিকিৎসকেরা প্রাণপণ লড়ে যাচ্ছেন। কিন্তু আমরা জানি, শুধু সরকারের একার পক্ষে এই মহামারী সামাল দেয়া সম্ভব নয়। সব পক্ষকে সামনে এসে, একে অন্যের জন্য কাজ করতে হবে। তাহলেই হয়ত এই মহামারীর ক্ষতি কমানো সম্ভব।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সকল জেলা প্রশাসককে করণীয় জানিয়ে ভিডিও কনফারেন্স করেছেন। চিকিৎসকদের জন্য প্রয়োজনীয় পিপিই পৌঁছে গেছে। এই যুদ্ধে চিকিৎসক, নার্স এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীরাই একমাত্র যোদ্ধা। এই যুদ্ধে সকলকেই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়তে হবে। সেই লড়াইয়ে সাহায্য করবে সরকারি বেসরকারি হাসপাতালগুলো।

কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের সাথে লক্ষ্য করছি, অনেক রোগী করোনাভাইরাস আক্রান্ত নয়, হয়ত সাধারণ বা ক্রনিক অসুস্থতাজনিত কারণে অসুস্থ হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে যাচ্ছেন কিন্তু ভর্তি হতে না পেরে নিরাশ হয়ে ফিরে আসছেন। অনেক হাসপাতাল জরুরি চিকিৎসা পর্যন্ত বন্ধ রেখেছে। এটা গুরুতর অন্যায়, এটা অপরাধ। দেখা যাচ্ছে, একজন স্ট্রোকের রোগী, হার্ট ফেইলিওরের রোগী বা কিডনীর অসুখজনিত রোগি জরুরি চিকিৎসা পাচ্ছেন না। দুই একজন রোগীর মৃত্যুর খবরও আমরা শুনেছি। হাসপাতালগুলোর এই রোগী ভর্তি না নেয়ার ব্যাপারটা খুবই দুঃখজনক এবং এর দায়ভার এসে পড়ছে চিকিৎসকদের উপর।

এই ক্ষেত্রে অত্যন্ত গর্বের সাথে বলতে চাই, শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব মেমোরিয়াল কেপিজে স্পেশালাইজড হাসপাতাল এবং নার্সিং কলেজ সকল ধরণের চিকিৎসা চালু রেখেছে। আউটডোর, ইনডোর, ইমার্জেন্সি, আইসিইউ, ডায়লাইসিসি এবং সকল ধরণের রুটিন এবং ইমার্জেন্সি অপারেশনসমূহ চালু আছে। সকল চিকিৎসক স্বাভাবিক সময়ের মতো ওপিডি-তে চেম্বার করছেন, ইনডোরে রাউন্ড দিচ্ছেন। সকল ধরণের প্যাথলজিক্যাল, রেডিওলজিক্যাল পরীক্ষাসমূহ নিয়মিত হচ্ছে। মোট কথা এখান থেকে একজন রোগীও ফিরে যাচ্ছেন না। চিকিৎসা ও সেবাদানের জন্য আমরা সদা প্রস্তুত রয়েছি।

আমরা এই লড়াই জিততে চাই, তাই আড়ালে থেকে নয়, সামনে থেকে অসুস্থ মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের সুস্থ করে তোলার ব্যাপারে কাজ করে যেতে চাই। আমাদের এই লড়াইয়ে আমাদের সাথে আছেন হাসপাতালের সুদক্ষ ম্যানেজমেন্ট এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাস্ট।

এই দুঃসময়ে যেকোনো ধরণের চিকিৎসার জন্য আপনারা নির্দ্বিধায় যোগাযোগ করতে পারেন ঢাকা ইপিজেডের নিকট অবস্থিত এই বিশেষায়িত হাসপাতালে। যোগাযোগের জন্য ব্যবহার করতে পারেন, +৮৮০২৪৪০৭৭০২৫ এই নম্বরটি।

সুস্থ থাকুন। শঙ্কামুক্ত থাকুন। ঘরে থাকুন। গুজবে কান দেবেন না বা গুজব ছড়াবেন না।