‘কার নিন্দা করো তুমি, মাথা করো নত’

বিভুরঞ্জন সরকারবিভুরঞ্জন সরকার
Published : 1 April 2020, 10:49 AM
Updated : 1 April 2020, 10:49 AM

লিখতে বসে বিষয় নির্বাচন করতে হিমশিম খাচ্ছি। করোনাকবলিত এই বিপন্ন সময়ে রাজনীতি নিয়ে মাথা ঘামানোর সময় কারো নেই। এখন সবার কাছে একটিই আলোচনার বিষয় – করোনাভাইরাস। কোভিড-১৯। করোনাভাইরাস কীভাবে ছড়ালো তা নিয়েও অবশ্য রাজনীতি শুরু হয়েছে। 'ষড়যন্ত্র-তত্ত্ব' সামনে আনার চেষ্টা হচ্ছে। কেউ বলছেন এই ভাইরাসের বিস্তার ঘটেছে চীনের গবেষণাগার থেকে। আবার কেউ বলছেন, এটা আমেরিকার কাজ। পৃথিবীতে আধিপত্য বা প্রাধান্য প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে এখন আমেরিকার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এগিয়ে চলছে চীন। তাই ঘটনা-দুর্ঘটনা যাই ঘটুক তার সঙ্গে আমেরিকার নাম জুড়ে দিতে পারলেই খেলা জমে যায়। তবে এবার করোনা নিয়ে চীন-আমেরিকা বিতণ্ডা খুব হালে পানি পাচ্ছে বলে মনে হয় না। গবেষকরা বলছেন, গবেষণাগারে নয়, প্রাকৃতিকভাবেই করোনাভাইরাসের সৃষ্টি হয়েছে। এটা প্রাকৃতিক বিবর্তনের ফল। তবে পরস্পর দোষোরোপ অব্যাহত থাকবে। যেমন আছে আমাদের দেশের রাজনীতিতেও। বিএনপি অভিযোগ করছে, সরকার করোনার তথ্য গোপন করছে। এই তথ্য গোপন করে সরকারের কী লাভ সেটা অবশ্য বলা হচ্ছে না। বিএনপির কাছে কী আলাদা কোনো তথ্য আছে? থাকলে তা গোপন রাখা হচ্ছে কেন? তথ্য গোপনে কী বিএনপি সরকারের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় নেমেছে? এক্ষেত্রে বলার কথা বরং এটাই যে, 'ওরে ভাই, কার নিন্দা করো তুমি। মাথা করো নত। এ আমার এ তোমার পাপ'।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গুজব ছড়াতে এবং গুজব বিশ্বাস না করতে সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। এই আহ্বান খুব কাজে আসবে বলে মনে হয় না। মানুষ সহজাতভাবেই বুঝি গুজবপ্রিয়। চোখে দেখা কাছের সত্যটা বিশ্বাস না করে চোখে না দেখা দূরের 'গুজব' বা রটনা বিশ্বাস করতে অনেকের ভেতরে আকুপাকু করে। এই প্রসঙ্গে প্রয়াত বিশিষ্ট সম্পাদক বজলুর রহমানের কাছ থেকে শোনা একটি গল্প মনে পড়ল। ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পরের ঘটনা। বজলু ভাই সংবাদ অফিস থেকে রিকশায় মগবাজারের বাসায় ফিরছেন। হঠাৎ রিকশাচালক বজলু ভাইয়ের কাছে জানতে চান, স্যার দেশে মসজিদে নাকি নামাজ বন্ধ করে দিচ্ছে সরকার? বজলু ভাই পাল্টা জানতে চান, কোথায় এমন ঘটনা ঘটেছে? রিকশাচালক বলেন, শেরপুরে মসজিদে আজান বন্ধ।

কার কাছে শুনেছেন এটা? বজলু ভাই আবার জানতে চান।

রিকশাচালক জবাব দেন, একজন যাত্রী তাকে বলেছে।

এবার বজলু ভাই আবার প্রশ্ন করেন রিকশাচালককে, আপনি ঢাকায় থাকেন কোথায়?

খিলগাও। রিকশাচালক জবাব দেন।

খিলগাঁয়ে বা ঢাকার কোনো মসজিদে কি আজান বন্ধ হয়েছে?

এবার রিকশাচালক বলেন, না ঢাকায় তো আমি আজান শুনি।

বজলু ভাই শান্তভাবেই বলেন, আপনি নিজের কানে আজান শুনছেন। তারপরও কেন বলছেন যে, সরকার আজান বন্ধ করেছে? এটা কি ঠিক হলো?

রিকশাচালক এবার আমতা আমতা করে বলেন, না, মানে ভদ্রলোক কইলেন!

আসলে এভাবেই গুজব ছড়ায়। এক মুখ থেকে বহু মুখে। চিলে কান নিয়েছে। দে ছুট চিলের পেছনে। কানে হাত দেওয়ার কথাটাও মনে আসে না

করোনাভাইরাস নিয়েও সত্যটার চেয়ে মিথ্যাটা শোনার জন্য অনেকের কান প্রস্তুত হয়ে আছে। এতে সরকার বা কর্তৃপক্ষের দায় নেই সেটা বলা যাবে না। সরকারি তরফ থেকে সত্যটাকে এমন ভাবে বলা হয় যা মানুষের কাছে মিথ্যা বলে মনে হয়। মিথ্যাটাই কারো কারো কাছে সত্য বলে মনে হয়।

দুই.

করোনার বিস্তার ও ভয়াবহতা নিয়ে বাংলাদেশে স্বস্তি এবং অস্বস্তি দুটোই আছে। সরকার মনে করছে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে। আর মানুষ মনে করছে, কোথাও একটা সমস্যা আছে! দুনিয়া জুড়ে যেখানে লাফিয়ে লাফিয়ে করোনাভাইরাস আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা এবং মৃত্যুহারও বাড়ছে, সেখানে বাংলাদেশে সংখ্যা কেন এত কম। এই সংখ্যাটি বেশি হলে কি আমরা খুশি হতাম? আমরা তাহলে কোনটা চাইছি? নিয়ন্ত্রণ, না বিস্তার? কারো কারো ধারণা গরমের দেশ বলে বাংলাদেশে করোনা ঝুঁকি কম। কিন্তু তথ্য ভিন্ন কথা বলছে। বাংলাদেশের চেয়ে বেশি গরম মিয়ামিতে। কিন্তু সেখানে করোনার বিস্তার ঘটছে আশঙ্কাজনক ভাবে।

গত ডিসেম্বরে উহানে ছড়িয়ে পড়া ভাইরাসটি যে সব মহাদেশ মাড়িয়ে দ্রুতই আমাদের ভয়ঙ্কর এক বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দেবে তা বুঝতে আমাদের বেশ কিছুটা সময় লেগেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (হু) মহাপরিচালক তেদ্রোস আধানম বৈশ্বিক মহামারী হিসেবে কোভিড-১৯কে ঘোষণা দেওয়ার পর নড়েচড়ে বসলেন সবাই। সরকারও বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া শুরু করল।

প্রতিষেধক আবিষ্কার না হওয়ায় প্রতিরোধই একমাত্র পন্থা যখন, তখন সারাদেশে জনসমাগম বন্ধের কোনো বিকল্প সরকারের হাতে ছিল না। ফলে সরকার স্বাধীনতা দিবসের সকল অনুষ্ঠান বাতিল করে গত ২৬ মার্চ থেকে দশ দিনের সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে। এই সাধারণ ছুটি দেওয়া হলো মানুষকে ঘরে রাখার জন্য। কিন্তু মানুষ উৎসবের মেজাজ নিয়ে বেরিয়ে পড়ল জেলা-উপজেলা-গ্রামে। কেউ কেউ মনে করেন সারা পৃথিবী যখন লকডাউনে তখন আমাদের দেশে গণপরিহবন বন্ধ না করে এবং চলাচলে বাধা না দিয়ে সাধারণ ছুটি দেওয়া মানে কার্যত সারাদেশে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে দেওয়ার পথ সুগম করে দেওয়া হয়েছে।

করোনাভাইরাস যেহেতু এক মানুষ থেকে আরেক মানুষে সংক্রমিত হয়, সেহেতু করোনা প্রতিরোধে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে কার্যকর উপায় হচ্ছে, পারস্পরিক দূরত্ব বজায় রাখা। তিন ফুট দূরত্ব বজায় রাখলে এই ভাইরাসের বিস্তার রোধ সম্ভব বলে একজন মানুষকে অন্য একজন মানুষ থেকে তিন ফুট দূরত্বে থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পক্ষ থেকে। যেসব দেশ কঠোরভাবে এই পরামর্শ মেনে চলেছে সেসব দেশ করোনা মোকাবিলায় সাফল্য পেয়েছে। আর যারা গাফিলতি দেখিয়েছে, উৎসব করেছে, পারস্পরিক ঘনিষ্ঠ মেলামেশা করেছে, তারা এখন চোখের জল, নাকের জল এক করেও রেহাই পাচ্ছে না। বাংলাদেশের মানুষও পারস্পরিক দূরত্ব বজায় রাখার অনুশাসন মেনে চলছে না। প্রশাসনের পক্ষ থেকে কঠোরতা অবলম্বন করা হলে আমরা তার সমালোচনা করছি। কিন্তু উদারতার কারণে যদি করোনার বিস্তার ভয়াবহ হয়, তখন আবার আমরা সরকারকেই দুষবো। সরকারের জন্য পরিস্থিতি একটু জটিলই। সরকার যা করছে, যেভাবে করছে তার সবই ঠিক আছে তা নয়। সরকারের সীমাবদ্ধতা আছে নানা বিষয়ে সবচেয়ে বড় সমস্যা প্রধানমন্ত্রীর ওপর নির্ভরশীলতা। ছোট-বড় সব সিদ্ধান্তই নিতে হয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে। কেউ নিজে থেকে কিছু করলে দেখা দেয় এলোমেলো অবস্থা।

সরকার এবং সংশ্লিষ্ট সবারই সক্ষমতা বাড়াতে হবে। করোনা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভীতি বা বিভ্রান্তি ছড়ানো থেকে সবারই সংযত থাকা দরকার। এটি একটি নতুন ধরনের ভাইরাস। এখনো পর্যন্ত এর ওষুধ নেই। চিকিৎসা নেই। প্রতিনিয়ত জিনের গঠন বদলে ফেলছে ভাইরাসটি। বিশেষজ্ঞরাই যখন এখনো আলো দেখছেন না, তখন ফেসবুক পণ্ডিতদের নিদান প্রকৃতপক্ষে মানুষের উপকারের পরিবর্তে অপকার করছে। সবারই উচিত, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন অনুযায়ী চলা। অতি সন্ন্যাসীতে গাজন নষ্ট বলে একটা কথা আছে। হঠাৎ গজিয়ে ওঠা বিশেষজ্ঞ বা সন্ন্যাসীদের থেকে সাবধান থাকতে হবে।

কোভিড-১৯ থেকে রেহাই পেতে বিভিন্ন পন্থার কথা বলা হলেও সাধারণ মানুষের সচেতনতা তেমন চোখে পড়ছে না। আমাদের দেশের বাস্তবতার সাথে উন্নত দেশকে মিলালে চলবে না। সামাজিক দূরত্বের কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু দূরত্বটা আসলে কেমন হবে তা বইয়ের ভাষায় বোঝালে মানুষ বুঝবে না। সামাজিক দূরত্ব যে শারীরিক দূরত্ব তা সরকারের স্থানীয় পর্যায়ের সংস্থা, এনজিও, সামাজিক রাজনৈতিক সংগঠনের মাধ্যমে সমন্বিতভাবে সচেতনতা তৈরি করতে হবে। এ ব্যাপারে সময় নষ্ট করার সুযোগ নেই। মনে রাখতে হবে হঠাৎ করে আসা এই বিপর্যয় আমাদের সীমাহীন বিপদে ফেলতে পারে।

ঐতিহ্যগতভাবে আমরা সচেতনতার চেয়ে কুসংস্কার কিংবা গুজবে অনেক বেশি বিশ্বাসী। অনেকে স্বপ্নে দেখা ওষুধ খেয়ে, অনেকে আবার থানকুনি পাতা খেয়ে, কেউবা কালিজিরা খেয়েও রোগ সারানোর চেষ্টা করেছেন। আবার কেউ কেউ এই সুযোগে ঝাড়-ফুক, তাবিজ কবজের ব্যবসা বেশ চুটিয়ে করছে। আর মানবতার কথা বলে মুখে ফেনা তোলা এই আমরা বস্তায় বস্তায় ডাল, তেল, আটা, দুধ, চিনি, ডিমসহ নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস অতিরিক্ত কিনে নিজের বাসাটিকেই রীতিমতো গুদাম বানিয়ে ফেলেছি। অপ্রয়োজনীয় ওষুধ ক্রয়েও ঝাঁপিয়ে পড়েছেন বিভিন্ন ওষুধের দোকানে। ইতোমধ্যে অনেক জায়গাতেই নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির দাম বাড়তে শুরু করেছে। প্রশাসনও ইতোমধ্যে বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি সর্বাত্মক পদক্ষেপ গ্রহণের চেষ্টা করেছেন। তবে প্রশাসনকে এ ব্যাপারে আরো বেশি নজরদারি করতে হবে যাতে এই করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের নামে ব্যবসায়ীরা তাদের পণ্যমূল্য আর বৃদ্ধি করতে না পারে একই সঙ্গে জনগণ যাতে খাদ্যাভাব গুজবের নামে ব্যবসায়ীদের ন্যায় বাসায় বেশি বেশি পণ্য মজুতের চেষ্টা না করে। তাতে করে করোনার চেয়ে খাদ্যাভাবেই মানুষের হয়তো বেশি মৃত্যু হবে।

করোনা মোকাবিলায় চিকিৎসা খাতের প্রাথমিক অগোছালো অবস্থা সরকার কিছুটা গুছিয়ে নিতে শুরু করেছে। বিভিন্ন হাসপাতালগুলোতে করোনা ইউনিট স্থাপনের পাশাপাশি করোনা পরীক্ষারও ব্যবস্থা করছে। ইতোমধ্যে চীন থেকে বিভিন্ন চিকিৎসা সরঞ্জাম এসেছে। আরও আমদানি করা হচ্ছে বলে জানা গিয়েছে। একথা ভুলে গেলে চলবে না সীমিত সম্পদের অধিক জনসংখ্যার এ দেশের জন্য হঠাৎ পাওয়া এ মহামারী বিষফোঁড়া হয়ে দাঁড়িয়েছে; উন্নত দেশগুলোই যখন কুলিয়ে উঠতে পারছে না। নিত্যদিনের সংসার চালানোই যখন সাধারণ মানুষের জন্য কঠিন, তখন এই অচলাবস্থার অবসান কী করে হবে কেউই জানে না। দীর্ঘ সময় এ অবস্থা চলতে থাকলে করোনায় না মরলেও হয়তো না খেয়েই অনেকে মারা পড়বে।

সরকারকে জনমনস্তত্ত্ব বোঝার চেষ্টা করতে হবে। আমাদের দেশের মানুষ আবেগপ্রবণ। এখন যে যুক্তিতে হর্ষধ্বনি করবে, পরক্ষণে তার পাল্টা যুক্তিতেও নাচতে শুরু করবে। একটি ঘটনার কথা বলি। ১৯৭৯ সালে আমাদের এলাকায় কমিউনিস্ট পার্টির তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ফরহাদ সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেছিলেন। তার বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বলা হয় যে, তিনি ঢাকায় থাকেন। তার বাড়ি-গাড়ি আছে, তিনি বিলাসী জীবন যাপন করেন। তিনি কীভাবে গরিবের বন্ধু হতে পারেন? আমরা পাল্টা বললাম, মোহাম্মদ ফরহাদের বাড়ি-গাড়ি কিছুই নেই। পার্টি থেকে তাকে যে সামান্য টাকা দেওয়া হয়, তা দিয়ে এবং স্ত্রীর চাকরির টাকায় তার সংসার চলে। তখন আওয়ামী লীগ প্রচার করতে থাকে যে, সারা জীবন রাজনীতি করে যিনি নিজের জন্য কিছু করতে পারেননি, তিনি ভোট পেলে আপনাদের জন্য কী করবেন? আওয়ামী লীগের এই দুই প্রচারণাই জনগণের সমর্থন পেয়েছিল। তাই জনমন বুঝে চলা একটি কঠিন কাজ। এই কঠিন কাজটিই এখন সরকারকে খুব ঠাণ্ডা মাথায় করতে হবে। 'বঞ্চিতের নিত্য চিত্তবিক্ষোভ' দেখেও অবিচল থাকতে হবে। 'প্রবলের উদ্ধত অন্যায়' – এটা ভুললে চলবে না।

তিন.

ইতোমধ্যে করোনায় আক্রান্ত দেশগুলোর অর্থনীতিতে এর সুদুরপ্রসারী প্রভাব পড়তে শুরু করেছে এ প্রভাব যে বিশ্ব অর্থনীতিকেও ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করবে, তা এখন থেকেই অনুধাবন করা যাচ্ছে। করোনা মোকাবিলায় অযোগ্যতা ও মন্থর সাড়া প্রদানের মাধ্যমে বিশ্বনেতৃত্বের ক্ষেত্রে পশ্চিমা বিশ্ব নিজেদের সুনাম অক্ষুণ্ন রাখতে মোটামুটি ব্যর্থই হয়েছে বলা যায়। যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, ইতালি, স্পেন, ইরানের মতো দেশগুলো সঠিক সময়ে যথাযথ পদক্ষেপ না নেওয়ায় অনেকটাই জনগণের আস্থা হারিয়েছে। অপরদিকে রাশিয়া, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়ার মতো দেশগুলো করোনাভাইরাস প্রতিরোধে ত্বরিত পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে সরকারব্যবস্থার সক্ষমতা প্রমাণে সমর্থ হয়েছে। ফলে এসব দেশের রাজনীতিতে পরিবর্তন আসতে যাচ্ছে বলে ধারণা করা যায়। চীন প্রথম দিকে করোনা নিয়ন্ত্রণে অদক্ষতার পরিচয় দিলেও সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হতে থাকলে শেষ পর্যন্ত নিজেদের ভুলগুলো শুধরে নিতে পেরেছেন প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং।

এক করোনাভাইরাস সারা পৃথিবীকে কাঁপিয়ে দিচ্ছে, যার সবচেয়ে বড় প্রভাব পড়বে অর্থনীতিতে। তার পরপরই থাকবে রাজনীতি। দেশে দেশে মানুষে মানুষে সম্পর্কের ক্ষেত্রেও হতে পারে নতুন মেরুকরণ। পাল্টে যেতে পারে ভূ-রাজনৈতিক চিত্র। সামাজিক সাংস্কৃতিক ছবিটাও ভিন্ন হতে বাধ্য। এখনো বলার সময় আসেনি করোনা পরবর্তী নতুন পৃথিবীর চিত্রটি আরো মানবিক হবে নাকি আরো হিংসার উন্মত্ততায় মেতে উঠবে। তবে সবার আগে মানুষের জীবন। মানুষের জীবনই এ গ্রহের প্রাণ। মানুষ বাঁচলেই হবে জীবনের জয়গান।