"Tell your heart that the fear of suffering is worse than the suffering itself. And no heart has ever suffered when it goes in search of its dream."
Paulo Coelho
২০১৯ এর ডিসেম্বরে যখন চীনের উহান শহরে কভিড-১৯ বা করোনাভাইরাস দেখা দেয়, সত্যি বলতে কি তখন চিন্তাও করিনি এত দ্রুত পৃথিবীর অগণিত দেশে তা এভাবে ছড়িয়ে যাবে। আমরা মহামারী ও মড়কের সাথে শ্বাস ফেলব একই বাতাসে।
চীনের পরে খবর পাচ্ছিলাম ইতালির, সেখানে ভাইরাস সংক্রমণের ভয়াবহতা ও মানুষের করুণ মৃত্যুর। সেখানকার মৃতের সংখ্যা দিনে দিনে দ্বিগুণ, তিনগুণ করে করে বাড়ছিল। পরিচিত বন্ধু-বান্ধব এবং আত্মীয়-স্বজনদের আহাজারী শুনতে পাচ্ছিলাম। টিভি খুললেই ইতালির নানান শহরের অগণিত মৃত দেহাবশেষ নিয়ে নিঃশব্দ নীরবে চলতে দেখেছি মিলিটারি কনভয়। না কোন যুদ্ধের সরঞ্জাম নিয়ে নয় কভিড-১৯ বা করোনাভাইরাসের ভিকটিম হয়ে প্রাণ হারানো অগণিত দেহাবশেষ। যেন সেই স্লোগানের মত 'এ লাশ আমরা রাখব কোথায়।'
দেখতে দেখতে এত দ্রুত ইতালির পরে আমেরিকাতে এই রোগ ঝাঁপিয়ে পড়বে তা বোধ করি এদেশের বিশেষজ্ঞরাও ভাবেনি। এখন আমেরিকায় শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ১ লাখের কাছাকাছি। মৃতের সংখ্যাও দু'হাজারের আশেপাশে।
হাচি ,কাশি,গলা ব্যথা ও উচ্চমাত্রায় জ্বর নিয়ে শুরু হলেও শ্বাসকষ্ট এই রোগের মারাত্মক উপসর্গ। সেই সাথে কারও কারও ডায়রিয়া বা পেটে ব্যথাও হতে পারে। একবার হলে এ থেকে পরিত্রাণের জন্যে কোনও ওষুধ নেই, তবে গরম আদা লেবু চা বা প্রচুর ভিটামিন সি কিছুটা হলেও এই কষ্ট নিবারণে সহায়ক হয়। কিন্তু যাদের বয়স বেশি, অন্যান্য অসুখ আছে এবং ইমিউন সিস্টেম নাজুক তাদের জন্যে ভেন্টিলেটর, টিউবিং বা অন্যান্য কৃত্রিম উপায়ে শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যবস্থা করার জন্যে হাসপাতালে যাওয়া ও ডাক্তারের সাহায্য নেয়া প্রয়োজন।
আজ দু'ই সপ্তাহ হল নিউ ইয়র্ক শহরে আমরা স্বেচ্ছা সংগনিরোধের ইচ্ছেয় গৃহান্তরীণ হয়েছি। সচেতনভাবেই এড়িয়ে যাচ্ছি মানুষজন। মেনে চলছি সকল নিয়মকানুন ও সোশ্যাল ডিসট্যান্সিং। মাঝে মাঝে চেষ্টা করছি করোনাভাইরাসে মৃত্যুর বিষয়গুলোকে চোখ বুজে ভুলে থাকতে। গত ২৬ মার্চ একদিনে নিউ ইয়র্কের কুইন্স এলাকায় কেবল এলমহার্স্ট হাসপাতালেই করোনাভাইরাস আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ১৩ জন। এরকম আরো অসংখ্য হাসপাতালে মানুষের মৃত্যু হচ্ছে।
২৫ মার্চ কমিউনিটির প্রিয় মুখ অধ্যাপক জসিমের স্ত্রী, সেই সুন্দরী মেয়েটি আর পারেননি। স্বামী আর দু'টি সন্তানকে একই হাসপাতালে রেখে চলে গেলেন। হেরে গেলেন ভাইরাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে। ২৩ মার্চ, মারা গেছেন ঢাকার মুন্সীগঞ্জের মেয়ে তৃষা। পেছনে ফেলে গেলেন স্বামী ও দেবশিশুর মত তিনটি বাচ্চা। তার কোলের শিশুটির বয়স মাত্র নয়মাস। কয়দিন আগেই উডসাইডের বাসিন্দা একসময়ে নিউ ইয়র্কের বাঙালি কমিউনিটির সৌখিন নাট্যশিল্পী মোতাহার হোসেন মারা গেছেন করোনাভাইরাসে শ্বাসকষ্ট নিয়ে। আরো একটি ফ্যামিলির চারজন এলমহার্স্ট হাসপাতালে ছিলেন, দুটি বাচ্চা স্বামীকে রেখে এই মেয়েটিও মারা গেছেন। মারা গেছেন সূর্য বণিক নামের ছেলেটি। তার স্ত্রী বাচ্চারা নি:স্ব। লাইফ সাপোর্টে আছেন হুদা মির্জা।
মৃত্যু সংবাদ্গুলো বুলেটের মত এসে আমার ক্ষতকে গভীর করে তোলে কেবল। জ্যাকসন হাইটসের বাঙালি পাড়ার মসজিদের ইমাম সাহেব করোনাভাইরাসে ভুগে শনিবার মারা গেছেন। শনিবার নিউ ইয়র্ক, কুইন্সের জ্যামাইকা এলাকায় আরো দু'জন বাঙালির করোনাভাইরাস পজেটিভ সনাক্ত হয়েছে। তার মধ্যে একজন ডাক্তার। হিলসাইড অ্যাভিনিউতে 'জারা' বিল্ডিং এ আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে। খুলনার এক দম্পতি যিনি দীর্ঘকাল আগে এদেশে আসেন এবং বাঙালি কমিউনিটিতে ছিলেন বিশেষ শ্রদ্ধাভাজন- তিনি স্ত্রী, কন্যা সহ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
দু'জন সাংবাদিক অসুস্থ। একজন আইসিইউ-তে।
আমার নিকটতম প্রতিবেশী ৮০ বছর বয়সী হোজে আর মারিনা আমার কাছে মা-বাবার মত। ভালো মন্দে ওরা ছায়া বৃক্ষের মত আছেন মাথার পরে। সিনিওর হোজে-র বড় ছেলে শনিবার হাসপাতালে মারা গেছেন। জানালায় দাঁড়িয়ে সিনিওরা মেরিনাকে আমি কাঁদতে দেখেছি ।
গভীর হচ্ছে রাত। রাতের পরে রাত। ঘন অন্ধকারে ঢেকে যাচ্ছে সব।
সারা পৃথিবী এখন এক মহা ভয়ানক অসুখে বিদীর্ণ। মারী ও মড়কের ভিতরে বসে আছি আমরা। নিস্তব্ধতার দেহ ছিঁড়ে দূরে দূরে বাজছে অ্যাম্বুলেন্সের সাইরেন। বলতে পারছিনা কেউ কাউকে। খুব চেনা জানা দু'জন লোক মারা গেছেন এই শনবিারেই। আজ আমার ঘুম নেই। শুধু আজ কেন! ইদানিং রোজই প্রায় আমি নিদ্রাবিহীন। আর আজ আমার মনের অবস্থা যেন হাহাকার করা ঠুমরী, 'মীরা বাঈ কি মালহার' এর মত।
বাদারিয়া ঘিরে আয়ি…
কারিঘাটা ঘিরে আয়ি মেরে মানমে…
পৃথিবীর এই করোনাক্লান্ত দেশের এই প্রান্তের এপিসেন্টার নিউ ইয়র্ক। সেখানে প্রতিদিন সূর্য ওঠে বটে, সে আলোয় জেগে ওঠে স্থবির চরাচর। পাখিরা জাগে। ওরা জেগে ওঠে নিথর থম ধরা এক মৃত্যুপুরীতে। ওরা কি বোঝে জানিনা, আমার শোবার ঘরের পূবের জানালার ওপাশে ওরা ফিসফাস করে। পেয়ার্স আর পিচ গাছের ফুলেল ডালে বসে লেজ দুলিয়ে দুলিয়ে এসময় ওদের গান গাইবার কথা। ফুল ফোটানোর গান। ওরা গান গায় না আর।
সূর্য কখন প্রদক্ষিণ করে যায় বাড়িটিকে ঘিরে বুঝতে পারিনা। সকাল থেকে যে যার মত হোম অফিস, ইউনিভার্সিটি ক্লাস আর নিউ ইয়র্ক পাবলিক স্কুলের বাচ্চাদের জন্যে গুগলক্লাসে ব্যস্ত হয়ে যাই। যার যার সুবিধা মত ব্রেকে উঠে চা বা কফি নিয়ে আবার বসে যাই।
বেলা বাড়ে। হাতে গ্লাভস পরে শুরু হয় মোছামুছির কাজ। ভয়ে ভয়ে মুছি চাবির রিং, সেলফোন, হাতের ঘড়ি, ডোর নব, বেসিন কিচেন, সিংক। হ্যান্ড স্যানিটাইজার নিয়ে ঘরের বাইরে গিয়ে খুলি মেইল বক্স। ক্লোরক্স ওয়াইপস দিয়ে বার বার মুছি, একটা একটা করে মুছি চিঠিপত্র। অপ্রয়োজনীয় চিঠি বাড়ির পিছনের নির্দিষ্ট জায়গায় গার্বেজ করে আসি।
মন বসাতে পারিনা কোন কাজে। খেতে, ঘুমাতে ইচ্ছে করেনা। খাই, যখন আর পারিনা, ঘুমাই কেবল যখন মাথা ভার হয়ে আসে, মাথা যখন আর মাথায় থাকেনা।
মন ভাল করতে গান শুনতে চেষ্টা করি পারিনা। ছবি দেখতে বা বইপত্র পড়তে ইচ্ছে হয়, কিন্তু মন বসেনা। লিখতে বসলে গুছিয়ে উঠতে পারিনা কিছুই। আমার কেবলই মনে হয় এ কোন ভয়ানক ব্যধি আমাদেরকে শ্বাসরুদ্ধ করে মারছে। আমাদের হাত পা বেঁধে ফেলে দিচ্ছে কালোজলে। আমি কিছুতেই আর আমার স্বাধীন জীবনের কাছে এগুতে পারছিনা।
আমার খুব মনে পড়ে সেই গানের কথা। ওই যে গল্পে আছে না, অনেক অনেক কাল আগে কোন এক গ্রামের এক হতভাগা নারী ভালোবেসে সমাজের নির্মম নিষ্পেষণে পড়ে গান বেঁধেছিলেন। গানে গানেই তার প্রতিবাদ করে গিয়েছিলেন, "আমার হাত বান্ধিবি, পা বান্ধিবি, মন বান্ধিবি কেমনে… আমার চোখ বান্ধিবি, মুখবান্ধিবি পরান বান্ধিবি কেমনে…"
সে গান আমি গাইতে চাই কিন্তু গাইতে পারিনা। কেমন যুৎসই মনে হয়না আর! আমার করোনাক্লিষ্ট দিন আমাকে স্তব্ধ পাথর করে দিয়ে যায়, কাঁদতে দেয় না। "পাত্থার বানা দিয়া মুঝে…রোনে নেহি দিয়া…"।
এই যে এক একটি মৃত্যু, এ যে শত শত স্বপ্নের মৃত্যু! কত সংসার ভেঙে চুরমার। কত শিশু হারাবে তাদের মা, বাবা। কত নারী হারাবে তার স্বামী। কত মা হারাবে সন্তান। এ মেনে নেয়া যায়না। এ সওয়া যায়না। মাঝে মাঝে মনে হচ্ছে করোনাভাইরাস যদিও বা ঠেকাতে পারি মানসিক এত স্ট্রেস তো আমরা আর নিতে পারছি না। মরার আগেই আমাদের মৃত্যু হয়ে যাচ্ছে।
কিন্তু আমাদের তো বাঁচতে হবে। বাঁচতে হবে আশা নিয়ে। মিথ্যে আশা তো দিতে পারব না কাউকে। সত্যি, তা সে হোক তিক্ত, তবু সেই যে 'সত্যেরে লহ সহজে।' হ্যাঁ সেই সত্যেরে লব আজ সহজে।
এই করোনাভাইরাস কম্পিত নিউ ইয়র্ক শহরের লকডাউন ও আমাদের সেলফ কোয়ারেন্টিনের এই দুঃসময়ে পরশু সন্ধ্যায় যখন মিনিটে মিনিটে মৃত্যু সংবাদ আসছে, তখন আমাদেরই এক বন্ধু স্ট্রোক করে প্রায় আমাদের ছেড়ে যেতে বসেছিলেন। ৯১১ এ খবর পেয়ে তাকে হাসপাতালের ইমার্জেন্সি অ্যাম্বুলেন্স এসে নিয়ে যায়। অসহায় আমরা কেউ তার সাথে যেতে পারিনি। তিনি একা। মাঝরাতে নিউ ইয়র্ক মাউন্ট সায়নাই হাসতাপালে তার ব্রেন সার্জারির করে মাথার ভিতর থেকে জমাট বাঁধা রক্ত বের করেছে ডাক্তাররা। তার জ্ঞান ফিরেছে। কথা বলেছেন। তিনি সুস্থ হয়ে উঠবেন সেই আশা করছি।
আমার এক বন্ধুর পরিবার করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিল। তাদের সিম্পটমগুলো ছিল মাইল্ড। তারা বাড়িতেই ছিলেন। অসাধারণ এই মানুষগুলো অকারণে হাসপাতালে গিয়ে ভিড় করতে চাননি। অকারণে একটি বেড দখল করে ডাক্তারদেরকে ব্যস্ত রাখতেও চাননি। নিজেরা এনিয়ে পড়াশোনা করে নিজেদের ব্যবস্থা নিজেরাই করেছেন। রেস্পিরেটরি প্রবলেম না হওয়ায় তারা বাড়িতে থেকেই সুস্থ হয়ে উঠছেন। তাদের বাড়িতে বাচ্চারা আছেন, আছেন বয়োজ্যেষ্ঠ আত্মীয়, কিন্তু কঠোর সংগনিরোধের ফলে তারাও ভাল আছেন।
আরো এক বন্ধু এবং ছোট বোন অসুস্থ। তিনি বাংলাদেশে, ঢাকায়। দুর্ভাগা দেশের মানুষ বলে তিনি ডাক্তার, হাসপাতাল, নার্স, টেস্ট কোন হেল্পই এই পর্যন্ত পাননি। তিনি ভয়ানক শ্বাস কষ্ট নিয়ে এখনো আছেন। যদিও শুক্রবার তার টেস্ট সোয়াব নেয়া হয়েছে কিন্তু রিপোর্ট কবে হবে- তা কেবল ভবিতব্যই জানে। তবে এতে এখন আর তার কিছু যায় আসে না। আজ বা ১৫-২০ দিনের পরে রিপোর্ট দিয়ে কি হবে। জেনেই বা কি লাভ, কার লাভ! সে ভাল হয়ে উঠবে তবু জানি।
নিউ ইয়র্কের পরিচিত আরো কিছু পরিবার করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। কেউ কেউ পুরো পরিবারসহ অসুস্থ। তারা কঠিন নিরাপত্তায় আছেন যাতে তাদের থেকে অন্যকারো না হয়। জানি তারা পারবেন, অবশ্যই পারবেন এই যুদ্ধে জয়ী হতে।
এই শহরে আমার ডাক্তার, নার্স এবং ফার্মাসিস্ট বন্ধুরা, একদিনের জন্যেও কাজ বন্ধ করেন নাই। তাঁরা জীবনপণ চেষ্টা করে যাচ্ছেন করোনা ভাইরাসের রোগীদেরকে সুস্থ করে তুলতে। যাদের রেস্পিরেটরি প্রবলেম আছে তাদের ভেন্টিলেশান, টিউবিংসহ অন্যান্য সকল সহযোগিতা করে বাঁচিয়ে তুলতে সাহায্য করছেন।
বন্ধু মেরি হালদার। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেমিস্ট্রির মেধাবী ছাত্রী ছিলেন। বর্তমানে নিউ ইয়র্কের ফ্লাশিং হাসপাতালের ল্যাবে কর্তব্যরত মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট। মানুষের সেবাকেই কর্তব্য মনে করে এই ভয়াবহ পরিস্থিতিতেও একটি দিনের জন্যে ঘরে বসে থাকেননি। ল্যাবের কাজ করে চলেছেন অক্লান্ত ভাবে।
আমার অন্য বন্ধুরা, অসুস্থ বন্ধুদের জন্যে খাবার রান্না করে প্রয়োজনে বাজার করে, ফার্মেসি থেকে ওষুধ তুলে পৌঁছে দিয়ে আসছেন তাদের ডোরস্টেপে।
আমেরিকার সাধারণ জনগণ অকল্পনীয় উদারতায় এগিয়ে এসেছেন একশ মিলিয়ন ফেসমাস্ক বানাবার খরচ জোগাতে। শুধু তাই নয় এগিয়ে এসেছেন ডাক্তারদের পিপিই সহ রোগীদের জন্যে ভেন্টিলেটর, টিউব এবং আরো অন্যান্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম নিয়েও। অসংখ্য রিটায়ার্ড ডাক্তার ফিরে এসেছেন মানব সেবায়।
নিউ ইয়র্ক সিটির সকল শিক্ষক একদিনের জন্যে বন্ধ করেননি ছাত্রছাত্রীদের সংগনিরোধ দূরশিক্ষা। শিক্ষা বিভাগ, নিউ ইয়র্ক সিটি পুলিশ ডিপার্টমেন্টের সহযোগিতায় তিন লাখ শিক্ষার্থীর হাতে পৌঁছে দিচ্ছে ফ্রি ইন্টারনেটসহ আইপ্যাড।
আর আমরা সবাই জানি, সারা বিশ্বে অক্লান্ত গবেষণা চলছে করোনা ভাইরাসের উপযুক্ত ওষুধ আবিষ্কারের। ওষুধ আবিষ্কার হবেই।
এই এত কিছুর পরেও কি কভিড-১৯ বা করোনা ভাইরাসের সাথে সাথে শেষ হয়ে যাবে পৃথিবী? বিলীন হয়ে যাবে মানব প্রজাতি? না তা হবে না। এ পৃথিবীতে এমন ঝড়, এমন ভাঙন, এমন যুদ্ধ- এসেছে যুগে যুগে। আবার তা পদানত হয়েছে এই আশরাফুল মাখলুকাত বা সৃষ্টির সেরা জীব মানুষেরই কাছে। দিনের শেষে তাই মানুষের কাছেই আনত হই। মানুষেরে আমি নমি।
তাই আশায় বেঁধে রাখি। এই যে বিপুল এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ড, তার এই রবি-শশী-তারা অগণন, এদের দিকে চোখ মেললে কেমন করে হতাস হই! এই যে প্রকৃতি বুক ছাপিয়ে সবুজ পাতা-পত্রালীতে ভরে উঠছে, বৃক্ষ লতায় পাতায় ফুলের ঘাগরা দুলিয়ে দুলিয়ে বাতাসের ওড়না উড়িয়ে নেচে চলেছে- ষোলো মাত্রার কত্থক, ওম ওঙ্কারে ধীরে ধীরে জেগে উঠছে আরাধ্য পৃথিবী। সূর্যদেব তার আলো আর উত্তাপ ছড়িয়ে জন্ম দিচ্ছে নবীন জীবন, দূর করে দিচ্ছে সকল আঁধার ভয়- তবে আমরা কেমন করে আশাহত হব!
মন তো খারাপ হবেই। অজানা অন্ধকার এসে ঘিরে ধরবে। ভয় হবে। আতঙ্ক হবে। একা একা গভীর রাতে করোনাভাইরাস আক্রান্ত হয়ে দম আটকানো মৃত্যুপথযাত্রীর অসহায় আর্তনাদ মনে মনে কানে এসে বাজবে। ওদের কথা ভেবে তোলপাড় করবে বুকের তলা। এই সব নিরপরাধ হতভাগ্য মানুষের মৃত্যুতে ভেঙে পড়তে পড়তেও আমি জানব এই পুরনো পৃথিবীর প্রান্তে আছে নতুন প্রাণ। নতুন পৃথিবী। আমার যেখানে শেষ সেখানেই তার শুরু।
মনিষী লেখক পাওলো কোহেলোর মত ভাবনা এসে ভর করে এই মনে। মানুষ যখন কোনকিছু কায়মনোবাক্যে প্রার্থনা করে, এই সমস্ত ইউনিভার্স জুড়ে সেই অসম্ভবকে সম্ভব করে তোলার যোগসূত্র স্থাপিত হয়। হোক তবে তাই হোক। মানুষের মঙ্গল হোক।
"When you want something, all the universe conspires in helping you to achieve it."
Paulo Coelho