অর্থমন্ত্রী, আসলে সংকট কোনটি

হাসান শফি
Published : 24 August 2012, 02:22 PM
Updated : 24 August 2012, 02:22 PM

টিআইবির এক গোলটেবিল আলোচনায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে কদিন আগে আমাদের মাননীয় অর্থমন্ত্রী বলেছেন, দুটি সমস্যা নিয়ে তিনি এখন 'ভয়ংকরভাবে আক্রান্ত'। সমস্যা দুটির উল্লেখও তিনি করেছেন : একটি পদ্মাসেতু ও অন্যটি গ্রামীণ ব্যাংক। তিনি যে 'ভয়ংকরভাবে আক্রান্ত' সেটা বক্তব্য রাখাকালীন তাঁর উত্তেজনা থেকেই বেশ বোঝা যাচ্ছিল। টিভি সংবাদে তাঁর ওই বক্তব্য রাখার দৃশ্যটি যাঁরা স্বচক্ষে দেখেছেন তাঁরাই বিষয়টি বুঝতে পেরেছেন। এমনিতে 'সদা হাস্যমুখ' আমাদের অর্থমন্ত্রী যেন সেদিন তাঁর অদৃশ্য প্রতিপক্ষের প্রতি রাগে-ক্ষোভে একেবারে ফেটে পড়ছিলেন। শুধু যদি অর্থনীতি খাতের কথাই বলি, দেশ এই মুহূর্তে বেশ কটি বড় সমস্যা বা সংকটের সম্মুখীন। শেয়ার বাজার তো আছেই, অতি সম্প্রতি হলমার্ক কেলেঙ্কারির কথাই ধরা যাক। যেখানে জালিয়াতির মাধ্যমে কয়েক হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের ঘটনার সঙ্গে একাধিক রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের কর্মকর্তা এমনকি পরিচালকদেরও যোগসাজশের অভিযোগ উঠেছে। তবে এসব কোনো ব্যাপারই বোধহয় আমাদের মাননীয় অর্থমন্ত্রীকে অতখানি বিচলিত করতে পারেনি যতটা বিপন্ন তিনি বোধ করছেন পদ্মাসেতু ও গ্রামীণ ব্যাংক সমস্যা নিয়ে। তবু ভালো যে তিনি 'দুটি সমস্যা'র কথা বলেছেন। আর অন্তত সেদিন পর্যন্ত দুটি সমস্যাকে পরস্পর সম্পর্কিত করে দেখাননি। খোদ প্রধানমন্ত্রী থেকে সরকারি দলের নেতা-পাতিনেতা, সরকার সমর্থক বুদ্ধিজীবী অনেকেই যা করছেন। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে 'মিথ্যাচার' ও ক্ষমতালিপ্সার মতো গুরুতর অভিযোগ আনলেও, মুহিত সাহেব অন্তত একথা বলেননি যে বিশ্বব্যাংক যে পদ্মাসেতুর জন্য টাকা দিচ্ছে না, তার জন্যও আসলে ড. ইউনূসই দায়ী। না, এখনও তিনি তা বলেননি। কিন্তু আজ বলেননি বলে কালও যে বলবেন না এমন নয়। কারণ এর আগেও আমরা দেখেছি, ড. ইউনূস বা গ্রামীণ ব্যাংক নিয়ে বিতর্কের সূচনায় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি তাঁর অভ্যস্ত ভঙ্গিতে হাত ঝেড়ে 'অল আর বোগাস' বা এ জাতীয় একটা মন্তব্য করে অভিযোগটাকে এককথায় উড়িয়ে দিয়েছিলেন। সে-সময় ড. ইউনূস যে নোবেল পুরস্কার পেয়ে বিশ্বে আমাদের সম্মান ও মর্যাদা বাড়িয়েছেন, তিনি যে আমাদের গৌরব ও গর্বের প্রতীক, তাঁর বিরুদ্ধে কিছু বলার আগে যে আমাদের আরও সতর্ক হওয়া উচিত, এমন সব কথাও আমরা মাননীয় অর্থমন্ত্রীর মুখ থেকে শুনেছিলাম। প্রায় একই রকম কথা বলেছিলেন তখন মাননীয় স্থানীয় সরকার মন্ত্রী ও সরকারি দলের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফও। কিন্তু দু-দিন পর মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ইউনূস বিরোধী বক্তব্যের সঙ্গে সঙ্গেই তাঁদেরও, কবির ভাষায়, 'উল্টে গেল মতটা, বদলে গেল পথটা'। আমাদের অর্থমন্ত্রীও যেন প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে শোনার পরই প্রথম জানতে বা বুঝতে পারলেন, ড. ইউনূস ও তাঁর গ্রামীণ ব্যাংক 'সুদখোর', 'রক্তচোষা', তাঁর গ্রামীণ ব্যাংকের সুদের হার সবচেয়ে বেশি (?) ইত্যাদি। তারপরও নেহায়েত তিনি একজন ভদ্রলোক (সংস্কৃতিবান ও সজ্জন বলেও মহল বিশেষে যাঁর পরিচিতি আছে), উপরন্তু ড. ইউনূস তাঁর বন্ধু মানুষ এবং গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠা প্রক্রিয়ার সঙ্গে তিনি নিজেও জড়িত ছিলেন বলেই হয়তো ওই কঠিন 'সত্য' বা বিশেষণগুলো এখনও তাঁর মুখে স্থান পায়নি।

নিরুদ্বেগ ঈদের ছুটি ভোগের সুযোগ হয়তো এবার সত্যিসত্যি মাননীয় অর্থমন্ত্রীর ভাগ্যে ঘটে নি। তবে লক্ষণদৃষ্টে আশা করা যায় শিগগিরই তিনি তাঁর মাথার ওপর চেপে থাকা উল্লেখিত দুটি বড় সমস্যার অন্তত একটি ঝেড়ে ফেলতে পারবেন। গ্রামীণ ব্যাংক অধ্যাদেশের সংশ্লিষ্ট ধারা সংশোধন করে ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগের ক্ষমতাটি অতঃপর সরকারের কব্জাগত হতে যাচ্ছে। একদিন এরশাদের সামরিক সরকারের অর্থমন্ত্রী হিসেবে যে ড. মুহিত সরকারি প্রশাসনযন্ত্র বা আমলাতন্ত্রের প্রবল বিরোধিতা মোকাবেলা করে গ্রামীণ ব্যাংকের স্বাতন্ত্র্য বা স্বশাসন অর্জনের প্রচেষ্টায় ড. ইউনূসকে সহযোগিতা করেছিলেন (খোদ ড. ইউনূস তাঁর গ্রামীণ ব্যাংক ও আমার জীবন বইয়ে বিষয়টির উল্লেখ করেছেন), আজ হাসিনার গণতান্ত্রিক সরকারের অর্থমন্ত্রী হিসেবে তিনিই আবার সে অধিকার কেড়ে নেওয়ার প্রক্রিয়ায় নেতৃত্ব দিচ্ছেন। কারণ নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হলেও তিনি একজন সাবেক আমলা। ফলে তিনি জানেন কিভাবে কী করতে হয়। সর্বশেষ সংবাদে জানা যাচ্ছে, গ্রামীণ ব্যাংকের এমডি নিয়োগের জন্য শিগগিরই আন্তর্জাতিক আগ্রহপত্র আহ্বান করা হবে। এই প্রক্রিয়ায় দেশি বা বিদেশী যিনিই গ্রামীণ ব্যাংকের এমডি পদে নিয়োগ পান, তিনি আর যাই হোক ড. ইউনূসের মনোনীত লোক হবেন না এটা যেমন বা যতটা নিশ্চিত, তেমন বা তার চেয়েও বড় নিশ্চয়তা দিয়ে বলা যায়, তিনি মিঃ মজিনা বা তাঁর দেশের অপছন্দের লোক হবেন না।

রাষ্ট্রদূত ড্যাম মজিনা সম্প্রতি অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে সচিবালয়ে তাঁর প্রায় দেড় ঘণ্টাব্যাপী আলোচনার পর বেরিয়ে এসে সাংবাদিকদের যা বলেছেন, তাতে মনে হয় গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যাপারে 'সাপও মরে, লাঠিও না ভাঙে' ধরনের একটা সমঝোতায় তাঁরা ইতিমধ্যে পৌঁছে গেছেন। বরাবরের মতোই গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যাপারে মার্কিন সরকারের উদ্বেগ, ঋণগ্রহীতারাই যাতে ব্যাংকটির এমডি নিযোগের ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারেন সে ব্যাপারে তাঁর ও তাঁর সরকারের আগ্রহ জানাবার পাশাপাশি মজিনা সেদিন আরও কয়েকটি তাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্য করেছেন। যেগুলোকে পাশাপাশি সাজিয়ে নিলে কথার অন্তরালের অনেক কথাই নিতান্ত স্বল্পবুদ্ধির মানুষের কাছেও স্পষ্ট হয়ে উঠবে বলে আমাদের ধারণা। অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর যে একটি 'চমৎকার' বৈঠক হয়েছে এবং গ্রামীণ ব্যাংক বিষয়ে তাঁর মতামতের সঙ্গে অর্থমন্ত্রী যে একমত পোষণ করেছেন, সে কথা জানিয়েই রাষ্ট্রদূত ক্ষান্ত হননি। 'আগামী দিনের এশীয় ব্যাঘ্র' বাংলাদেশের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ মনোযোগের বিষয়টিও প্রকাশ পেয়েছে তাঁর কথায়। গভীর ও পরিব্যাপ্ত হতাশার মধ্যে রাষ্ট্রদূত মজিনা আমাদের একটি আশার বাণীও শুনিয়েছেন। তিনি বলেছেন, 'বাংলাদেশ একদিন ঠিকই সোনালী দেশ হয়ে উঠবে'। থ্যাঙ্কস, মিঃ এম্বাসাডার ! রাষ্ট্রদূতের সেদিনের কথার সবই যে স্রেফ ভাবের কথা ছিল তা কিন্তু নয়। তিনি স্পষ্ট করে বলেছেন, পদ্মাসেতুতে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের তরফ থেকে বাংলাদেশকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে। কথাটা কে বলছেন? না, বিশ্বব্যাংকের প্রধান শেয়ারহোল্ডার যুক্তরাষ্ট্রের একজন রাষ্ট্রদূত। ভালো বা মন্দ যাই বলুন, আমাদের রাজনৈতিক নেতাদের মতো দায়িত্বহীন বা না বুঝে কথা তিনি কখনোই বলবেন না। তার মানে যুক্তরাষ্ট্র চাইলে পদ্মাসেতুর জন্য বিশ্বব্যাংকের অর্থ প্রাপ্তির বাধা অপসারণ বা জটিলতা মোচন যাই বলি না কেন, সত্যি কথা বলতে, সময়ের ব্যাপার মাত্র। আর দুর্নীতির অভিযোগ? সে-সম্পর্কেও একটি সাফাই সনদ বা ভাষ্য রাষ্ট্রদূত মজিনা ইতিমধ্যে আমাদের জন্য মোটামুটি তৈরি করে ফেলেছেন। সেদিন সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে অন্যান্য কথার মধ্যে তিনি বলেছেন, "বাংলাদেশ দুর্র্নীতির বিরুদ্ধে লড়ছে। এজন্য দুর্র্নীতি দমন কমিশন (দুদক) কাজ করে যাচ্ছে। বিশ্বের কোনো দেশই দুর্র্নীতিমুক্ত নয়। এমন কি আমার দেশ আমেরিকাও নয়।" সুতরাং মা-ভৈ বল ! পদ্মাসেতু প্রকল্প নিয়ে দুর্র্নীতির অভিযোগে আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবং তাঁর সরকার ও দলের কেউ কেউ তো শুধু বিশ্বব্যাংকের অভ্যন্তরীণ বা প্রাতিষ্ঠানিক দুর্র্নীতির কথাটাই বলেছেন।

রাষ্ট্রদূত মজিনা কিন্তু আরও এগিয়ে বললেন, কোনো দেশই দুর্র্নীতিমুক্ত নয়, এমন কি সব-সেরা দেশ তাঁর যে আমেরিকা সেখানেও দুর্নীতি হয়। এসব দেখেশুনে কেন যেন মনে হয় মাননীয় অর্থমন্ত্রীর মাথার দ্বিতীয় বোঝাটিও হালকা হওয়ার পথে ! ঈদের ছুটির আগে সর্বশেষ কর্মদিবসে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি যেসব কথা বলেছেন তাতে যেন আমাদের এই অনুমানেরই সমর্থন মেলে।

প্রথম প্রথম সরকার পক্ষের কারো কারো মনোভাব ছিল এ রকম : বিশ্বব্যাংক না দিল তো কী হয়েছে? অন্যান্য উন্নয়ন সহযোগীরা আছে না? না, শুধু কথা বলেই তাঁরা ক্ষান্ত হননি। সে লক্ষ্যে চেষ্টা-চরিত্র, দৌড়ঝাঁপও শুরু হয়ে গিয়েছিল (কারণ তাতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নগদলাভ বৈ ক্ষতি নেই)। আশ্চর্য, তাঁদের কেউ ভেবে দেখলেন না, বাংলাদেশকে অর্থমঞ্জুরির বিষয়ে বিশ্বব্যাংক যদি সত্যি সত্যিই একটি অনড় অবস্থান নিয়ে বসে, সেক্ষেত্রে অন্তত বিশ্বব্যাংকের সদস্য এমন কোনো দাতা দেশ কিংবা সহযোগী অন্য আন্তর্জাতিক বা আঞ্চলিক সংস্থা, যৌথ বা একক কোনোভাবেই, আমাদের সাহায্যে এগিয়ে আসতে চাইবে না। জাপান, চীন, ভারত, জার্মানি, রাশিয়া এরাও এখন বিশ্বব্যাংকের সদস্য, ওই সংস্থাটিতে অধিকতর ভূমিকা গ্রহণের জন্য চেষ্টা চালাচ্ছে। উপরন্তু বিশ্বব্যাংকের বিরুদ্ধে আমাদের এই যুদ্ধ ঘোষণার প্রতিক্রিয়া কেবল পদ্মাসেতুর জন্য ঋণচুক্তি বাতিলের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না। পদ্মাসেতুই আমাদের একমাত্র প্রকল্প নয় যার জন্য আমরা বিশ্বব্যাংকের ঋণপ্রত্যাশী। এমন কি ওই প্রতিষ্ঠানটির সহায়তায় পরিচালিত আমাদের চালু অন্য উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর পরবর্তী পর্যায়ের অর্থছাড়ের বিষয়টিও এর ফলে ঝুঁকির মধ্যে পড়বে।

এবার নিজস্ব অর্থসংস্থানের প্রসঙ্গটিতে আসি। এ ব্যাপারে আমাদের অত্যুৎসাহী কোনো কোনো অর্থনীতিবিদ এর মধ্যে কোন কোন খাত থেকে কী পরিমাণ অর্থের সংস্থান করা যেতে পারে তা নির্দেশ করে রীতিমতো পেপার ওয়ার্কও করে ফেলেছেন। পক্ষান্তরে এভাবে দেশীয় অর্থায়নে পদ্মাসেতুর মতো একটি বড় প্রকল্প বাস্তবায়নের ঝুঁকির দিকটির কথাও বলেছেন অতি সম্প্রতি ইউরোপে জাতিসংঘ অর্থনৈতিক কমিশনের সাবেক কর্মকর্তা এক বাংলাদেশী অর্থনীতিবিদ। এর ফলে শুধু যে আমাদের প্রবৃদ্ধির গতি শ্লথ হয়ে যেতে পারে তাই নয়, শিক্ষা-স্বাস্থ্যের মতো গুরুত্বপূর্ণ খাতের বরাদ্দও কমাতে হতে পারে। যার ফলে আমাদের সামাজিক উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ব্যাহত হবে। এখন প্রশ্ন হল আমরা কি তার জন্য তৈরি? এক পদ্মাসেতুর জন্য সমগ্র জাতি কতটা ত্যাগ স্বীকার করতে রাজি? অর্থনীতিবিদদের তর্ক-বিতর্কের কথা বাদ দিলেও, সাধারণ সাংসারিক বুদ্ধি থেকেও তো আমরা জানি, পদ্মাসেতুর জন্য অভ্যন্তরীণ পর্যায়ে অর্থ সংস্থানের যতগুলো উপায়ের কথা ভাবা বা বলা হচ্ছে তার শেষ চাপটা গিয়ে পড়বে বাজারে সাধারণ মানুষেরই ওপর। যে-দেশে চরম বিদ্যুৎ সঙ্কটের মুখেও মন্ত্রী-আমলাদের বাড়িতে ও গাড়িতে এসির ব্যবহার বন্ধ বা কমানো যায় না, যে-কোনো নতুন প্রকল্পের কাজ শুরুই হয় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা ও প্রকল্প পরিচালকের জন্য সর্বাধুনিক মডেলের দামি গাড়ি ক্রয়ের মধ্য দিয়ে, সে-দেশে কৃচ্ছ্রতা সাধনের কথা বলার মতো ভণ্ডামি বা হাস্যকর বিষয় আর কী হতে পারে? আর যারা বিদেশী সহায়তার প্রকল্প নিয়ে দুর্নীতি করতে পারেন, দেশীয় অর্থসংস্থানের কথা শুনেই তাঁরা হঠাৎ দেশপ্রেমিক বনে যাবেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে নতুন করে দেশ গড়ার সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়বেন, এমন কথা বোধহয় কোনো পাগলেও বিশ্বাস করবে না।

কাজের কাজ কতটা কী হবে জানি না, তবে নির্বাচনকে সামনে রেখে পদ্মাসেতু নিয়ে অন্তত তোড়জোড় চালিয়ে যাওয়া ছাড়া সরকারের সামনে এখন কোনো বিকল্প নেই। ক্ষমতায় গেলে বিরোধী দল একটির স্থলে দুটি পদ্মাসেতু বানাবে কথাটা হয়তো স্রেফ ঠাট্টাচ্ছলেই বলা, কিন্তু বিশ্বব্যাংকের সাহায্য নিয়েই তারা সেতু বানাবে, এ ধরনের কথা তারা এর মধ্যেই বলতে শুরু করেছে। মোটকথা আগামী নির্বাচনে পদ্মাসেতু যে একটি প্রধান ইস্যু হয়ে দাঁড়াবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই।

বিশেষ করে দক্ষিণাঞ্চলীয় ভোটারদের কাছে বিষয়টির আবেদন হবে বিরাট। সেদিক থেকে আমাদের অর্থমন্ত্রীর এখন প্রকৃতই শিরে সংক্রান্তি। এ অবস্থায় মজিনা মনে হয় এবার তাঁর ও তাঁর সরকারের জন্য সংকট-ত্রাতার ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে যাচ্ছেন। আমাদের রাষ্ট্রদূতরা অন্য দেশে গিয়ে নিজ দেশের স্বার্থ রক্ষায় কতটা যত্নবান থাকেন জানি না। তবে মজিনা যে তাঁর নিজ দেশের স্বার্থেই সবকিছু করবেন তাতে কোনো সন্দেহ নেই। অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর সেদিনের বৈঠকে তিনি তাই 'টিকফা'র বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন। আলোচনা শেষে বেরিয়ে এসে সাংবাদিকদের কাছে বাংলাদেশ সম্পর্কে অনেক ভালো কথা, আশার বার্তা শোনাবার ফাঁকেও তিনি তাঁর আসল বক্তব্য 'মিস' করেননি। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্ভাব্য টিকফা চুক্তি বাস্তবায়নের ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।

হাসান শফি : লেখক ও গবেষক।