নক্ষত্র যাত্রায় বাংলা ভাষা

মুনীম হোসেন রানা
Published : 26 Feb 2020, 03:28 PM
Updated : 26 Feb 2020, 03:28 PM

মহাকাশের উদ্দেশ্যে ভয়েজার টু স্পেস ক্রাফট যাত্রা শুরু করে ১৯৭৭ সালের ২০ অগাস্ট। দু সপ্তাহ পরেই মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা থেকে ভয়েজার ওয়ান যাত্রা শুরু করে। উদ্দেশ্য মহাকাশ অনুসন্ধান। ভয়েজার ওয়ান বৃহস্পতি, শনি ইত্যাদি গ্রহের অভিকর্ষের শক্তি কাজে লাগিয়ে নেপচুন পার করে ২০১২ সালে আমাদের সৌরজগতের সীমানা ছাড়ায়।

স্পেসের এই জায়াটিকে 'হেলিপজ রিজিওন' বলা হয়। এখানটায় একটা মজার ঘটনা ঘটে। আমাদের সূর্যের সোলার উইন্ড এর গতি কমে যায় এবং ইন্টারস্টেলার মাধ্যম শুরু হয়। একটু পিছিয়ে পড়া ভয়েজার টু এ সীমানা পাড়ি দেওয়া শুরু করে ২০১৮ এর শেষের দিকে।

সূর্য থেকে পৃথিবীর গড় দূরত্ব ৯ কোটি ৩০ লাখ মাইল, যাকে এক অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল  ইউনিট বা ওয়ানএইউ বলে। ২০২০ অর্থাৎ এ বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের ২১ তারিখে ভয়েজার ওয়ান পৃথিবী থেকে ১৪৮ দশমিক ৬৬ এইউ (এক হাজার ৪০০ বিলিয়ন মাইল) দূরে ছিল এবং এর গতি ছিল প্রতি সেকেন্ডে ১৭ কিলোমিটার।

এর গতি আরো বাড়তে থাকবে। চল্লিশ হাজার বছর পরে AC+793888 নামে একটি নক্ষত্রের কাছে পৌঁছাবে। AC+793888 বা
GLIESE 445 (পৃথিবী থেকে ১৭ দশমিক ৬ আলোকবর্ষ দূরে)। আর ভয়েজার টু থাকবে   ROSS 248 (পৃথিবী থেকে ১০ দশমিক ৩ আলোকবর্ষ  দূরে)।

স্পেস প্রোব দুটি প্লুটোনিয়াম-২৩৮ এর থার্মোইলেক্ট্রিক জ্বালানি দিয়ে এখনো চলছে। নাসা আশা করছে, ২০২৫ থেকে ২০৩০ পর্যন্ত এই জ্বালানি থাকবে। যতদিন জ্বালানি থাকবে ততদিন পর্যন্ত ওগুলোর সাথে পৃথিবীর যোগাযোগ থাকবে। কসমিক সাবস্টেন্স সেন্সর (সিআরএস), লো এনার্জি চার্জড পার্টিক্যালস (এলইপিসি), আল্ট্রা ভায়োলেট স্পেকট্রোমিটার (ইউভিএস), ইমেজ সেন্সিং সাব সিস্টেম (আইএসএস) ইত্যাদি মোট দশটা ইন্সট্রুমেন্ট দিয়ে প্রচুর তথ্য সংগ্রহ করে যার মধ্যে ছয়টি ইতিমধ্যে বন্ধ করা হয়েছে, জ্বালানি খরচ কমানোর জন্য।

টুইন স্পেস ক্রাফট দুটোতেই তিন দশমিক ৭ মিটার প্যারাবোলিক অ্যান্টেনা আছে যা দিয়ে নাসা ডিপ স্পেস নেটওয়ার্ক স্টেশনের সাথে ৪২ বছর ধরে যোগাযোগ রক্ষা করে চলছে। রেডিও ট্রান্সমিটার এর পাওয়ার হচ্ছে টুয়েন্টি থ্রি ওয়াট আর ব্যান্ড হচ্ছে আট গিগাহার্টজ রেঞ্জ. আলোর গতিতে বা এক লাখ ছিয়াশি হাজার মাইল বেগে পৃথিবীতে সংকেত আসতে এখন সময় লাগছে ২০ ঘণ্টা ৩৬ মিনিট।

এইতো গেল মাত্র ৪২ বছরের কথা। বলা যায়, জমজ দুটি মহাকাশযানের অনন্ত যাত্রা মাত্র শুরু হল। কী উদ্দেশ্যে এ যাত্রা? সেটা ব্যাখ্যা করেছেন ভয়েজার ইন্টারস্টেলার মিশনের (ভিআইএম) প্রজেক্ট ডিরেক্টর কার্ল সাগান ও তার বন্ধু ফ্যাঙ্ক ড্রেক।

কার্ল এর ভাষায়-

Is there anyone out there to talk to? With 400 billion stars in the Milky Way Galaxy alone could ours be the only one within inhabitant planet. How much more likely it is that the Galaxy is throbbing and humming with advanced societies. Perhaps near one of those pin point off lights in our night sky someone quite different from us is glancing eyedly at the star we called sun…

অ্যাস্ট্রোফিজিসিস্ট এবং সার্চ ফর এক্সট্রা টেরেস্ট্রিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এসইটিই) এর প্রজেক্ট এর সদস্য ফ্যাঙ্ক ড্রেক
একটা ইকুয়েশন প্রকাশ করেন (১৯৬১), যা দিয়ে মহা বিশ্বে কতগুলি ইন্টেলিজেন্ট সভ্যতা থাকতে পারে তার একটা ধারণা করা যায়। ইকুয়েশনটি হলো- N= R* fs*ne*fl*fi*fc*L

সম্প্রতি এটার উপর ভিত্তি করে অ্যাস্ট্রোবায়োলজি ম্যাগাজিন একটি আর্টিকেল প্রকাশ করে। সেখানে দেখানো হয়েছে আমাদের মিল্কিওয়েতে গ্যালাক্সিতে মানুষ ছাড়াও ১৫ হাজার ৭৮৫টি উন্নত সভ্যতা থাকার সম্ভাবনা।

ভয়েজার ওয়ান এবং টু সেইসব সভ্যতার বুদ্ধিমান প্রাণীর জন্য বার্তা নিয়ে গেছে, যা কিনা গোল্ডেন রেকর্ড নামে পরিচিত। নাসা কী তথ্য পাঠিয়েছে সেই রেকর্ডে?

ওখানে দেখানো আছে আমাদের পৃথিবীর অবস্থান। ১৪টি পালসার (rapidly spinning neutron star) এর ম্যাপ দিয়ে বোঝানো হয়েছে আমাদের সূর্যের অবস্থান। কিভাবে হাইড্রোজেন অ্যাটম এর এনার্জি স্টেট এর সাথে তুলনা করে সংখ্যা ও সময়ের ইউনিট পরিমাপ করা যাবে সেটা বোঝানো হয়েছে।

কিভাবে গোল্ডেন রেকর্ডটি প্লে করে সাউন্ড আর ছবি ডিকোড করা যাবে- সেটা বোঝানো হয়েছে। একটি বৃত্ত, মৌলিক সংখ্যা, মানব-মানবীর ছবি দেওয়া আছে। দেখানো হয়েছে মা থেকে শিশুর জন্ম নেওয়া ও বেড়ে ওঠা। ডিএনএ স্ট্রাকচার।

আদিম পদ্ধতিতে মানুষের শিকার করা, মর্ডান কমিউনিকেশনের শুরু হিসেবে দেওয়া আছে- মোর্স কোড। আছে পাহাড়-পর্বত, নদী, ফুল আগ্নেয়গিরি, চীনের প্রাচীর, সিডনি অপেরা হাউস ইত্যাদির ছবি। বাখ- এর মিউজিক, বেটোফেন এর সিম্ফোনি ৫, ভারতের 'জাত কাহান হো' রাগ সংগীত পাঠানো হয়েছে। মূলত ইমেইজ-মিউজিক-সাউন্ড-প্রিটিং চারটি পর্বে ভাগ করা আমাদের পৃথিবী সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য।

২০০ বিলিয়ন নক্ষত্রের বাসিন্দার উদ্দেশ্যে আছে ইউনাইটেড নেশনস সেক্রেটারি জেনারেল ও প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার এর বাণী। আরো আছে পৃথিবীর ৫৫টি ভাষার শুভেচ্ছা বার্তা। যাতে স্থান পেয়েছে আমাদের বাংলা ভাষা। বাংলায় বলা হয়েছে- "… বিশ্বে শান্তি হোক।"

ভয়েজার ইন্টারস্টেলার রেকর্ড কমিটির ক্রিয়েটিভ ডিরেক্টর অ্যান দ্রুয়ান ২০০৪ সালে এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন- রেকর্ডটি ১০০ কোটি বছর মহাশূন্যে টিকে থাকার কথা।

আমরা হয়তো কখনোই জানব না কোন নক্ষত্রের কোন সভ্যতা এটা পাবে কিনা, কিংবা পেলে কী করবে। ভয়েজার যখন যাত্রা শুরু করে তখনো আমরা পার্সোনাল কম্পিউটারের যুগে প্রবেশ করিনি, ইতিমধ্যে ১৯৭৭ এর টেকনোলজি থেকে পৃথিবী অনেক এগিয়ে গেছে। আমরা ফোর্থ ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিভলিউশন পাড়ি দিচ্ছি।

কিন্তু ভয়েজার এর গোল্ডেন রেকর্ড দুটি মহাশূন্যে মানব সভ্যতার টাইম ক্যাপসুল হয়ে রইল। আমরা এখনো সঠিক জানিনা ১০০ কোটি বছর পরে মানুষ কিংবা পৃথিবী কিংবা আমাদের সূর্যের কী হবে।

কিন্তু এই রেকর্ডটার সাথে আমাদের বাংলা ভাষার কিছু কথা চিরস্থায়ী হয়ে গেল যেটা কিনা নক্ষত্রের পর নক্ষত্র ঘুরে বেড়াবে। এটা তো আমাদের পৃথিবীর পক্ষ থেকে মহাজগতের জন্য একটা উপহার।

উৎসর্গ: কার্ল সাগান-কে, যিনি পৃথিবীর অধিবাসীদের মাতৃভাষা মহাবিশ্বে পাঠালেন।

INFO STUDY:

https://www.space.com/

https://newatlas.com/space/new-horizons-reach-solar-system-termination-shock-sooner/

https://www.forbes.com/sites/quora/2016/09/14/after-50-years-in-space-voyager-will-go-dark-sometime-before-2030/#62c2b2106818

https://science.howstuffworks.com/question431.htm

https://voyager.jpl.nasa.gov/

https://physics.stackexchange.com/questions/118647/what-is-the-unit-of-time-on-the-voyager-golden-record?noredirect=1

https://en.wikipedia.org/

https://space.stackexchange.com/questions/6592/how-will-the-voyager-golden-record-last-for-1-billion-years

The Voyager Golden Record Published by OZMN records