ক্ষণ গণনার দিন ও উপমহাদেশকে বঙ্গবন্ধুর উপহার

স্বদেশ রায়
Published : 10 Jan 2020, 06:53 AM
Updated : 10 Jan 2020, 06:53 AM

আজ ( ১০ জানুয়ারি) বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিন থেকে শুরু হচ্ছে বঙ্গবন্ধুর জম্ম শতবার্ষিকীর ক্ষণগণনা। ১৯৭২ সালে এইদিন বাংলাদেশের আকাশ ছিল মেঘলা, শীতের জড়তা একটু বেশি করেই এদিন ঢাকাসহ সারা দেশের মানুষকে আটকে ধরতে পারতো। কিন্তু ১৯৭২ সালে ঘটনা হয়েছিল তার ঠিক উল্টো। বিদেশি প্রতিটি পত্রিকার রিপোর্ট, বাংলাদেশের পত্রিকার রিপোর্ট, বিদেশি সিনিয়র সাংবাদিকদের স্মৃতি- সব খুঁজলে দেখা যায়, শীতের দিনের মেঘলা আকাশের আড়ষ্টার বদলে এক উত্তাপে ভরা সকাল সেদিন সকলে দেখেছিল ঢাকার রাজপথে রাজপথে। প্রতিটি রাজপথ থেকে আসছিল ভোর থেকেই খণ্ড খণ্ড মিছিল। আর পুরানো বিমান বন্দর থেকে অর্থাৎ কুর্মিটোলা বিমান বন্দর থেকে ঢাকার রেসকোর্স ( বর্তমানের সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) অবধি ছিল মিছিলে ঠাসা। একবার একটি মিছিল কুর্মিটোলার দিকে যায় তো তাদের পাশ ঘেঁষে আরেকটি মিছিল রেসকোর্সের দিকে ফিরে আসে। আর মাঝে মাঝে আকাশের দিকে ফাঁকা গুলি। সবার মুখে একটি শব্দ বার বার ঘুরে ফিরে আসছে নানান স্লোগানের সঙ্গে মিশে, সে শব্দটি যেন সেদিন হাজার বছরের ইতিহাস পাড়ি দিয়ে বাঙালির কণ্ঠে এসেছে। শব্দটি শুধু একটি বাংলা শব্দের ভেতর সীমাবদ্ধ নেই, একটি নামের ভেতর সীমাবদ্ধ নেই, এক পবিত্র উচ্চারণে রূপান্তারিত হয়েছে সেদিন বাঙালির কাছে। বাঙালি এক গাঢ় পবিত্রতা নিয়ে উচ্চারণ করছে 'মুজিব'- এই শব্দটি। 'মুজিব' শব্দের অর্থ 'জবাবদাতা"। সত্যি মুজিব সেদিন বিশ্বকে তাক লাগিয়ে জবাব দিয়ে বিজয়ী বেশে ফিরে আসছেন বাংলাদেশে। এর আগে বাংলাদেশে রূপকথায় ছিল রাজপুত্র যুদ্ধ জয় শেষে এক রাজার দেশ থেকে নিজ দেশে ঘোড়ার পিঠে চড়ে ফিরে আসতো। আর সেই বাঙালির চিরকালের রাজকুমার ফিরে আসছে গোটা পৃথিবীকে আপন বীরত্ব দিয়ে জয় করে। গোটা পৃথিবীর শ্রদ্ধার নেতা হিসেবে, পৃথিবীর ইতিহাসে অন্যতম বিজয়ী বীর হিসেবে।

১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ ও ভারতের সৈন্যের হাতে অর্থাৎ মিত্র বাহিনীর হাতে পাকিস্তান পরাজিত হলেও বিজয়ের পরিপূর্ণতা আসে ৭ জানুয়ারি যখন মালয়েশিয়া নিউজ এজেন্সি প্রথম ব্রেকিং নিউজ করে, 'পাকিস্তানের নতুন প্রেসিডেন্ট ভুট্টো বাংলাদেশের নেতা ও দেশটির প্রেসিডেন্ট শেখ মুজিবুর রহমানকে জেল থেকে মুক্তি দিয়েছে'। এই সংবাদ প্রচারের সঙ্গে সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর মুক্তির খবর ছড়িয়ে পড়ার পরেই বাঙালি প্রাণভরে উপলব্ধি করে তাদের বিজয়ের আনন্দ। যেন সেদিনই তারা তাদের বিজয়ের পরিপূর্ণতা পেয়েছে। বাস্তবে বঙ্গবন্ধুর মুক্তির পরেই বাঙালি তাদের বিজয়ের পরিপূর্ণতা পায়। ১৯৬৯ সালের গণ'-অভ্যূত্থানের ভেতর দিয়ে মুক্তি পেয়ে বাঙালির প্রিয় নেতা শেখ মুজিবুর রহমান রূপান্তরিত হয়েছিলেন বঙ্গবন্ধুতে। দেশ ও জাতি তাকে বঙ্গবন্ধু হিসেবে বরণ করে নেয়। তারপরে ১৯৭০ এর নির্বাচন, ১৯৭১ এর অসহযোগ আন্দোলন ও নয়মাসের মুক্তিযুদ্ধ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বাংলাদেশকে সমার্থ'ক শব্দে পরিণত'করে। সেদিন বাংলাদেশ ও বঙ্গবন্ধু এই দুইকে বিচ্ছিন্ন করার কথা বাঙালি চিন্তাই করতে পারতো না। বরং বঙ্গবন্ধু ছাড়া বাংলাদেশ পরিপূর্ণ নয় এই ছিল তাদের চেতনার মূল সুর। তাই বঙ্গবন্ধু যেদিন পাকিস্তান কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে লন্ডন ও দিল্লি হয়ে ফেরত এলেন এইদিন পরিপূর্ণ হলো বাংলাদেশ নামক শব্দটি ও দেশটি।

নিউ ইয়র্ক টাইমস পত্রিকার ভাষ্য অনুযায়ী সেদিন ঢাকার রাজপথে ১০ লাখ লোক হয়েছিল। তবে তাদের মতে এই লোকের সংখ্যা আরো বেশি হতো যদি ঢাকায় আসার যোগাযোগ ব্যবস্থা পুনরুদ্ধার সম্ভব হতো। শহরতলী বা কাছাকাছি জেলা শহর গুলোতে বহু লোক বঙ্গবন্ধুর মুক্তির খবর পেয়ে ঢাকায় আসার জন্য নানানভাবে রওনা দিয়েছিল। তবে তাদের অনেকেই পথে পথে আটকা ছিল। কারণ অধিকাংশ ব্রিজ ভাঙ্গা। নদী পার হবার কোন ফেরি নেই। তারপরেও পায়ে হেঁটে অনেক লোক ঢাকায় পৌঁছানোর চেষ্টা করেছিল। সেদিনের পথে পথের এই মানুষ, আর যারা ঢাকার রাস্তাকে শীতের সকাল থেকেই মেঘলা আকাশের নিচে নানান স্লোগানে উত্তপ্ত করে তুলেছিল তাদের আবেগ একাকার হয়েছিল বঙ্গবন্ধুর আবেগের সঙ্গে। ব্রিটিশ রয়েল কমেট থেকে দেশের মাটি দেখতে পেয়ে নেতার দুচোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়েছিল, যে পানিতে মেশানো ছিল বাংলাদেশের সব মানুষের আবেগ। এমন আবেগের মিলন কোন জাতির হাজার বছরের ইতিহাসে একবারই ঘটে। সব জাতির ইতিহাসে ঘটে না। ভাগ্যবান বাঙালির জীবনে সেটাই ঘটেছিল।

এই আবেগের বাইরে পৃথিবীর চিরকালের সেরা নেতাদের একজন হিসেবে বঙ্গবন্ধু মুক্তি পাবার পর থেকেই চিন্তা করেছিলেন তার দেশের গণতন্ত্রের বিশেষ করে সিভিল শাসনের স্থায়ী বিনির্মাণের পথটি। বঙ্গবন্ধু শুধু বাংলাদেশের সন্তান না, তিনি উপমহাদেশের সন্তান ছিলেন । তার রাজনীতির শুরু উপমহাদেশেই। তিনি জানতেন, তার নিজদেশে গণতন্ত্র রক্ষা করতে হলে তাঁকে উপমহাদেশের গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করতে হবে। উপমহাদেশের গণতন্ত্র শক্তিশালী করার জন্য যা যা করার দরকার সেটা তাকে করতে হবে। তিনি খুব ভালোভাবে জানতেন, উপমহাদেশের শরীর খণ্ড-বিখণ্ড হয়ে তিনটি দেশ হয়েছে। তাই এই তিন দেশের অর্থাৎ ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশে যদি নিরুপদ্রব গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা না করা যায় তাহলে বিচ্ছিন্নভাবে কোন একটি দেশের পক্ষে গণতন্ত্র বা সিভিল শাসন রক্ষা করা কষ্ট হবে। তাছাড়া ইতিহাসের নির্মম সত্য হলো, কায়েদে আযম মোহম্মদ আলী জিন্নাহ পাকিস্তানে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন। পারেননি। অসহায়ভাবে অসুস্থ মানুষটিকে মারা যেতে হয়। তারপরে ক্ষীণভাবে চেষ্টা করেন লিয়াকত আলী খান। তিনিও আততায়ীর গুলিতে নিহত হন। অন্যদিকে ভারতের জাতির জনক মহাত্মা গান্ধী আততায়ীর গুলিতে নিহত হন। আর এই সব হত্যাকাণ্ডের ভেতর দিয়ে এই দুইটি দেশের গণতন্ত্রে বিষফোঁড়া জম্ম নেয়। পণ্ডিত জওহরলাল নেহেরু তার উদারনৈতিক আদর্শ দিয়ে গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেবার চেষ্টা করলেও শুরু থেকেই তিনি এক ধরনের কমিউনিস্ট ও ধর্মাশ্রয়ীদের প্রতিরোধের মুখে পড়েন। কঠোরতা ও বুদ্ধিমত্তা দুই দিয়ে জওহরলাল তা মোকাবিলা করছিলেন। কিন্তু তাঁর শরীর বাধ সাধল। তাকে বিদায় নিতে হয় পৃথিবী থেকে। এর ভেতর চীন- ভারত যুদ্ধ, অন্যদিকে কাশ্মীর যুদ্ধ ও ১৯৬৫ এর যুদ্ধ মিলে দুই বার পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধ, সব ঘটনা মিলিয়ে ভারতের গণতন্ত্রকে অনেকখানি আত্মসমর্পন করতে হয় অস্ত্র প্রতিযোগিতার কাছে।

মানুষকে নিরন্ন রেখে একটি গণতান্ত্রিক দেশের জন্যে অস্ত্র প্রতিযোগিতায় যাওয়া শুধু ক্ষতিকর নয় একটি চরম ভুল পদক্ষেপ। এই ভুল পদক্ষেপ বাধ্যতামূলক সেদিন ভারতকে নিতে হয়। আর তা প্রতি মুহূর্তে উপলব্ধি করতে থাকে ভারতের গণতান্ত্রিক শক্তি ও উদার সিভিল সোসাইটি। তবে তাদের করার কিছু ছিল না। কারণ, চীন ও পাকিস্তান এক হয়ে তাদের বিরুদ্ধে তখন অস্ত্র প্রতিযোগিতায় নেমেছে।
অস্ত্র প্রতিযোগিতার এই দৌড় থেকে উপমহাদেশকে বের করে এনে ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশে সিভিল শাসন প্রতিষ্ঠার সুযোগ হয় বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাংলাদেশ স্বাধীন হবার ফলে। কারণ, বঙ্গবন্ধু শুধু বাংলাদেশকে স্বাধীন করে এখানে সিভিল শাসন প্রতিষ্ঠা করেননি, পাকিস্তানের ইতিহাসে তাদের জাতির জনক নিহত হবার পরে বাঙালির এই জাতির জনক পাকিস্তানকে সিভিল শাসন প্রতিষ্ঠা করার সব সুযোগ করে দেন। কারণ, বাংলাদেশের সঙ্গে যুদ্ধে পরাজিত হয়ে ইয়াহিয়া যেমন পদত্যাগ করতে বাধ্য হয় তেমনি পাকিস্তানের ৯৩ হাজার সেনা বন্দি বাংলাদেশ- ভারত যৌথ বাহিনীর কাছে। আর এই পরাজয়ের কারণে ইয়াহিয়া ক্ষমতা দিতে বাধ্য হয় পশ্চিম পাকিস্তানের নির্বাচিত নেতা জুলফিককার আলী ভুট্টোর হাতে। ভুট্টোর এই ক্ষমতা পাওয়া যেমন ছিল বঙ্গবন্ধুর দান তেমনি পাকিস্তানের সিভিল শাসন প্রতিষ্ঠাও ছিল তার দান। আর এ বিজয়ের আরেক নায়ক মহিয়সী নারী ইন্দিরা গান্ধী। তাই বঙ্গবন্ধু দেশে ফেরার আগে দিল্লিতে নামলেই সেখানে এই দুই দূরদর্শী নেতা এক বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেন, পাকিস্তানের গণতন্ত্র ও সিভিল রাইট টিকিয়ে রাখতে হবে উপমহাদেশের সার্বিক গণতন্ত্রের স্বার্থে।

বঙ্গবন্ধু এবং ইন্দিরা গান্ধী পাকিস্তানকে সে সুযোগ দেন। বাংলাদেশ অনেকটা নীরব থেকে পাকিস্তান ও ভারতকে সিমলা চুক্তি করার সুযোগ দেয়। যাতে ভূট্টো তার জনপ্রিয়তা ও বিজয় ধরে রাখার জন্যে পাকিস্তানি পরাজিত সেনাদের দেশে নিয়ে যেতে পারে। কিন্তু সেদিন বঙ্গবন্ধু নির্দিষ্টভাবে ১৯৩ জন পাকিস্তানি সেনা কর্মকর্তাকে যুদ্ধাপরাধী হিসেবে চিহ্নিত করে দেন। যাদের বিচার করবে বলে ভুট্টো কথা দেন। ভুট্টো সেকথা রাখেননি। ভুট্টো যদি সেদিন ১৯৩ জন যুদ্ধপরাধীর বিচার করতেন এবং পরাজিতদের আর সেনাবাহিনীতে যোগ দেবার সুযোগ না দিতেন, তাহলে ভুট্টো সমর্থ হতেন পাকিস্তানে সিভিল শাসন বা সিভিল রাইট প্রতিষ্ঠা করতে।

অন্যদিকে ১০ জানুয়ারি দেশে ফেরার পথে দিল্লি থেকে বিমানে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গী ছিলেন তৎকালীন পররাষ্ট্র মন্ত্রী আব্দুস সামাদ আজাদ। আর সাংবাদিক হিসেবে ছিলেন আতাউস সামাদ। দুজনেই মাওলানা ভাসানীর খুব ঘণিষ্ঠ। বঙ্গবন্ধু তাদের দুজনকেই জিজ্ঞেস করেছিলেন- "হুজুর ( মৌলানা ভাসানী) আমাকে সমর্থন করবেন তো?" কারণ বঙ্গবন্ধু জানতেন রাজনীতির নামে দেশকে, গণতন্ত্রকে অস্থিতিশীল করার অনেক বড় ক্ষমতা ছিল মাওলানা ভাসানীর। বঙ্গবন্ধু চেয়েছিলেন স্থিতিশীলতা, দেশ পুনর্গঠনের জন্যে যা ছিল একান্ত প্রয়োজনীয়।

কিন্তু বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে উপমহাদেশ এই প্রকৃত গণতান্ত্রিক ও সিভিল শাসনে যাবার সব সুযোগ পেলেও সেদিন দেশের ভেতর পাকিস্তান ও চীনের উস্কানিতে ঘটে ভিন্ন ঘটনা। ভাসানীর নেতৃত্বে এক শ্রেণির বামরা সেদিন দেশকে অস্থিতিশীল করতে চরমপন্থাসহ নানান পথ নেয়। ছাত্রলীগ থেকে বেরিয়ে যাওয়া নেতারা স্বাধীনতাবিরোধীদের এক বিরাট অংশের সমর্থনে জাসদ গড়ে তুলে একই কাজ করে । যার ফলে সদ্য স্বাধীন দেশের রাজনীতি সামাজিক পরিবেশ অস্থিতিশীল হয়ে ওঠে। অন্যদিকে ভুট্টো সিমলা চুক্তির আগের যাবতীয় জেন্টেলম্যান এগ্রিমেন্ট ভুলে গিয়ে যুদ্ধাপরাধী টিক্কা খান, নিয়াজীসহ সবাইকে বড় বড় পদে বসান। আর পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থাকে নিয়োগ করে ভারতের পাঞ্জাব এবং এদিকে বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করার কাজে। এর পাশাপাশি সিআইএ ও মিডল ইস্টের টাকায় শিখ বিদ্রোহীদের মাধ্যমে ইন্দিরা গান্ধীকে হত্যার চেষ্টায় নামে। এর সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশের পাকিস্তানি কোলাবরেটর ও পাকিস্তানের বিশ্বস্ত বাংলাদেশি কিছু সামরিক অফিসারকে নিয়ে তারা বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধুকেও হত্যার চেষ্টায় নামে। বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানকে যে সিভিল রাইট প্রতিষ্ঠা করার সুযোগ অর্জন করিয়ে দিয়েছিলেন তার মূল্য দেন না ভুট্টো। দীর্ঘদিনের সামরিক আমলাতন্ত্রের সুবিধাভোগী এই রাজনীতিক ভুট্টো নিজেকে সিভিল রাইটের নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে পারেননি। তিনি বরাবরের মত সামরিক গোয়েন্দা বাহিনীর ক্রীড়নকই থেকে যান। যার ফলে বঙ্গবন্ধুর আন্দোলন ও সংগ্রামের ভেতর দিয়ে উপমহাদেশে সিভিল শাসন প্রতিষ্ঠার যে সুযোগ সৃষ্টি হয়েছিল তা ব্যর্থ হয়ে যায় ঠিকই – তবে তারপরেও ইতিহাসে এ সত্য লেখা থাকবে এই উপমহাদেশকে সিভিল রাইট প্রতিষ্ঠার সুযোগ বাংলাদেশের জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমানই তার বাইশ বছরের নিরস্ত্র ও সশস্ত্র রাজনৈতিক আন্দোলনের মধ্য দিয়ে করে দিয়েছিলেন। সেদিনের বিশ্বের বিষ্ময়, বাংলাদেশের জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমানের এ দান উপমহাদেশ গ্রহণ করতে কেন পারেনি সে গবেষণাও আগামী দিনে করতে হবে। তা নাহলে কোনদিনই উপমহাদেশ শান্তিপূর্ণ একটি এলাকা হবে না। এটা চিরকালই থেকে যাবে ধর্মের নামে এক শ্রেণির উগ্রবাদীদের নানান পোশাকে খেলার একটি স্থান। যার ফলে কোন দিনই স্থিতিশীল হবে না এই উপমহাদেশ। বরং মাঝে মাঝেই ধর্মের নামে বিপদে পড়বে কোন না কোন মানব গোষ্টি। বঙ্গবন্ধু এটাই চিরকালের জন্যে বন্ধ করতে চেয়েছিলেন। তার এই পথেই কেবল মুক্তি এ উপমহাদেশের।