বায়ুদূষণ মোকাবেলা : চ্যালেঞ্জ ও সক্ষমতা

মো. মাসুদ রানা
Published : 21 Nov 2019, 11:24 AM
Updated : 21 Nov 2019, 11:24 AM

নভেম্বর মাস চলছে। উত্তরের শুকনো হাওয়া টের পাওয়া যাচ্ছে। ঢাকায় এখনি শেষ রাতের দিকে ঠান্ডা অনুভুত হয়, অনেকেই সর্দি-কাশিতে আক্রান্ত হতে শুরু করেছে। উত্তরের জেলাগুলোতে সন্ধ্যা থেকেই শীত অনুভূত হচ্ছে। দিন যত গড়াবে দেশব্যাপী শীতের তীব্রতা ততই বাড়তে থাকবে আর সেই সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকবে বায়ুদূষণ। বাতাসে ভেসে বেড়াবে ফুলের রেণু, ব্যাক্টেরিয়া, ভাইরাসসহ বিভিন্ন জীবাণু, বস্তুকণা ও বিভিন্ন গ্যাসীয় পদার্থ যেগুলো মানবদেহে সাধারণ সর্দি, কাশি, মাথাধরা থেকে শুরু করে মারাত্মক রকমের অ্যাজমা, শ্বাসনালীতে প্রদাহ, ব্রঙ্কাইটিসসহ বিভিন্ন রোগের সৃষ্টি করবে। বিভিন্ন গবেষণা থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায়, বাংলাদেশে বায়ুদূষণজনিত কারণে প্রতি বছর প্রায় ৯৩ হাজার মানুষের অকাল মৃত্যু ঘটে যেখানে শুধুমাত্র ঢাকা শহরেই এর পরিমাণ প্রায় ১৩ হাজার; উপরন্তু, বায়ুদূষণজনিত রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে মানুষের কর্মঘণ্টা যথেষ্ট হ্রাস পায়। ফলে, প্রতি বছর এই শুকনো মৌসুমে সৃষ্ট বায়ুদূষণ মানুষের জীবনমান ব্যাহতকরণের পাশাপাশি দেশের অর্থনীতিতে বড় রকমের ক্ষতিকর প্রভাব সৃষ্টি করছে। উল্লেখ্য, বায়ুদূষণ বিদেশী বিনিয়োগ ও পর্যটন শিল্পকে সরাসরি প্রভাবিত করে। এহেন অবস্থায়, এই মৌসুমে দেশের বায়ুমান উন্নতকরণে সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তরসমূহের পাশাপাশি এনজিও, মিডিয়া, সুশীল সমাজ, সাধারণ মানুষ সকলকে নিজ নিজ অবস্থানে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। সদ্য বিদায়ী বর্ষা মৌসুমে ডেঙ্গু জ্বরের প্রাদুর্ভাবে সৃষ্ট ক্ষতির চেয়েও হাজার গুণ বেশি ক্ষতি সৃষ্টিকারী বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে আমাদের একাত্মতা, আগ্রহ, মনোযোগ, প্রচেষ্টা ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে আমাদের মনোযোগ ও প্রচেষ্টার হাজার গুণ হওয়া উচিত।

শুষ্ক মৌসুমে বায়ুদূষণের কারণ অনুসন্ধানে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন গবেষণা হয়েছে, যদিও বিষয়ের গুরুত্বের তুলনায় গবেষণার পরিমাণ যথেষ্ট কম। এসব গবেষণার বেশিরভাগই আবার ঢাকা কেন্দ্রিক। তবে, শুষ্ক মৌসুমে নিম্ন বায়ুমণ্ডলে দূষকের ঘনত্ব বেড়ে যাওয়ার পেছনে আবহাওয়ার সহায়ক চরিত্র গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে। শীতকালে বায়ুর নিম্ন গতি ও দুর্বল সূর্যালোক, অনাবৃষ্টি, মিশ্রণ উচ্চতা কমে যাওয়া ইত্যাদি কারণে বায়ুমণ্ডলের নিম্ন স্তরে দূষকের ঘনত্ব বেড়ে যায়। এ সময় আবহাওয়ার যে চরিত্র থাকে তাতে সারা বছরব্যাপী একই হারে দূষক পদার্থ বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করলেও জুন-জুলাই মাসের তুলনায় ডিসেম্বর-জানুযারি মাসে দূষকের ঘনত্ব কয়েক গুণ বেশি থাকতে পারে। সেই হিসাবে প্রাথমিকভাবে বলা যেতে পারে যে, শুষ্ক মৌসুমে বায়ুর মান মোটামুটি ভাল রাখতে হলে আমাদেরকে বর্ষা মৌসুমের তুলনায় শুষ্ক মৌসুমে নিঃসরণ অর্ধেকে নামিয়ে আনতে হবে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে শুষ্ক মৌসুমে অতিরিক্ত উৎস যেমন ইটভাটা, জমিতে ফসলের উচ্ছিষ্ট পোড়ানো, যেখানে সেখানে আগুন লাগিয়ে তাপ পোহানো, ধুলাবালি, ইত্যাদির কারণে দূষক পদার্থের নিঃসরণ আরো বাড়ে এবং ফলশ্রুতিতে বায়ুদূষণ ভয়ানক পর্যায়ে চলে যায়। আবহাওয়াকে নিয়ন্ত্রণ করা দুরূহ ও অযৌক্তিক; অন্যদিকে, দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতিকে ব্যাহত না করে কলকারখানা, যানবাহনসহ বায়ুদূষণের বড় উৎসসমূহকে নিয়ন্ত্রণ করাও কঠিন। বরং, আবহাওয়ার উপযোগিতা অনুযায়ী উৎসসমূহ (কলকারখানা, যানবাহন) পরিচালনা, অবাঞ্ছিত উৎস (খোলা জায়গা, রাস্তার ধুলা, যেখানে সেখানে পোড়ানো) বন্ধকরণ ও শিল্প-কারখানায় নিঃসরণ নিয়ন্ত্রণে সাশ্রয়ী ও টেকসই পদ্ধতি স্থাপনের মাধ্যমে বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণের উদ্যেগ গ্রহণ করা যেতে পারে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে তাদের স্ব স্ব অবকাঠামো ও পরিবেশ অনুযায়ী এধরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে দেখা যায়। উন্নত দেশে যানবাহন ও শিল্প কারখানায় উন্নত টেকনোলজি ও দূষক প্রতিরোধক যন্ত্র স্থাপনের মাধ্যমে এসব উৎস থেকে স্বল্প মাত্রার নিঃসরণ নিশ্চিত করা হলেও দূষণ মৌসুমে রাস্তায় গাড়ির সংখ্যা কমানোর উদ্দেশ্যে একদিন জোড় ও পরেরদিন বিজোড় সংখ্যা'র রেজিস্ট্রেশন নাম্বার বিশিষ্ট গাড়ি চালানোর অনুমতি দেয়া হয়। আবার, অধিক দূষণকালে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের মাধ্যমে স্বাস্থ্য ঝুকি কমানো ও একইসাথে রাস্তায় যানবাহন কমানো হয়। কখনো কখনো বাসায় থেকে অনলাইনে অফিস করার ব্যবস্থা করে গাড়ির নিঃসরণ কমানো ও স্বাস্থ্য ঝুকি কমানোর ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট ভিন্ন, এখানে এখনো ইউরো-২ নিঃসরণ মানের যানবাহনও নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি যদিও ইউরোপে এমনকি ইন্ডিয়ার কোনো কোনো শহরে বর্তমানে ইউরো-৬ মানের স্ট্যান্ডার্ড কার্যকর হয়েছে, ছোট ও মধ্যম আকারের শিল্প প্রতিষ্ঠান যেখানে সেখানে গড়ে উঠেছে, জনসংখ্যার ঘনত্ব অত্যন্ত বেশি, সামাজিক সচেতনতার অভাব রয়েছে, বায়ুদূষণের উৎসসমূহের সঠিক ইনভেন্টরি নেই, অবকাঠামো এখনো ততটা উন্নত নয়, প্রশিক্ষিত জনবলের অভাব রয়েছে, আইন এবং এর প্রয়োগের দুর্বলতা রয়েছে, এবং অর্থনৈতিক সক্ষমতা এখনো ততটা মজবুত নয় যাতে করে স্বল্প সময়ে দূষণ সৃষ্টিকারী সবকিছু পরিবর্তন করে দেয়া যেতে পারে। এমতাবস্থায়, বাংলাদেশে শুষ্ক মৌসুমে বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণ বেশ চ্যালেঞ্জিং এবং সময়সাপেক্ষ।

তবে আশার কথা, বাংলাদেশ সরকার বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে যথেষ্ট মনোযোগ দিয়েছে এবং ইতোমধ্যে গুরুত্বপূর্ণ বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। সারা দেশে ইটভাটা ও স্টিল মিলের জিআইএস ভিত্তিক ম্যাপিং ও তথ্যাবলী হালনাগাদ করে এনফোর্স করা হচ্ছে। ইটভাটা থেকে সৃষ্ট বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে পুরনো পদ্ধতির ভাটা অপসারণের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আশা করা যায়, শুষ্ক মৌসুম ভিত্তিক উম্মুক্ত ইটভাটার পরিবর্তে সারা বছর উৎপাদন-সক্ষম আধুনিক ভাটা প্রবর্তিত হলে ঢাকা শহরে শুষ্ক মৌসুমে বায়ুতে বস্তুকণার দূষণ ২৫-৩৫% কমে যেতে পারে। এছাড়াও সরকার শুধু বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে "ক্লিন এয়ার অ্যাক্ট" নামক একটি আইন প্রণয়ন করতে যাচ্ছে; আইনটি চূড়ান্ত হলে বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে জোর তৎপরতা শুরু হবে বলে আশা করা যায়। তবে, এই দুটো প্রক্রিয়া থেকে সুফল পেতে আরো ৪-৫ বছর সময় লাগতে পারে। যানবাহন সেক্টর থেকে নিঃসরণ কমানোর লক্ষ্যে ইতোপুর্বে যথেষ্ট কাজ হয়েছে– ঢাকা থেকে ২ স্ট্রোকবিশিষ্ট বেবিট্যাক্সি অপসারণ করা হয়েছে ও যানবাহনে পরিচ্ছন্ন জ্বালানী সিএনজি সরবরাহ করা হয়েছে। কিন্তু, যানবাহনের সংখ্যা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি, ট্রাফিক জ্যাম ও স্বল্প গতি, ত্রুটিযুক্ত ডিজেল ইঞ্জিন, ইত্যাদির কারণে এই সেক্টর থেকে সৃষ্ট বায়ুদূষণ এখনো অনেক বেশি। বাংলাদেশ সরকার ১ নভেম্বর থেকে "সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮" কার্যকর করেছে। আশা করা যায়, এই আইনটি শক্তভাবে কার্যকর করে যানবাহনের ফিটনেস ও রাস্তার শৃঙ্খলা নিশ্চিত করা গেলে পরিবহন সেক্টর থেকে নিঃসরণ কিছুটা কমে আসবে। তবে, এই সেক্টর থেকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ নিঃসরণ কমাতে হলে নিঃসরণ মানমাত্রা আধুনিকায়ন (নুন্যতম ইউরো-৪ সমপরিমাণ) করে শক্তভাবে কার্যকর করতে হবে এবং জ্বালানী তেল ও লুব্রিকেটিং অয়েলের ভেজাল রোধ করতে হবে। যানবাহনের মেইন্ট্যানেন্স ও ইমিশন মনিটরিং প্ল্যান প্রণয়ন করে এবং পর্যাপ্ত অবকাঠামো তৈরি করে কার্যকর করতে হবে। তবে, শুধু আইন প্রণয়নই সমাধান নয়; রাতারাতি সমগ্র দেশ থেকে ইটভাটা কিংবা পুরনো ইঞ্জিনবিশিষ্ট যানবাহন অপসারণ/পরিবর্তন দেশের প্রগতিকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। এমতাবস্থায়, স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা প্রস্তুত করে বাস্তবায়ন করলে আর্থসামাজিক অবস্থাকে প্রভাবিত না করেই বায়ুমান উন্নতি করা যেতে পারে।

এছাড়াও বায়ুদূষণের অন্যতম উৎস হচ্ছে ধুলাবালি যা নির্মাণকাজ ও মাটি/বালি পরিবহন থেকে আসে। দেশের ক্রমাগত অর্থনৈতিক উন্নতির কারণে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন রাস্তা এবং দাপ্তরিক ও আবাসিক ভবন নির্মিত হচ্ছে। পুরাতন ভবন ভেঙ্গে নতুন করে নির্মাণ করা হচ্ছে। এই ভাঙ্গা গড়ার প্রতিটি পর্যায়েই প্রচুর পরিমাণ ধুলা বায়ুতে মিশে, যার একটা অংশ ক্ষুদ্র বস্তুকণা আকারে বায়ুদূষণ ঘটিয়ে থাকে। সঠিক ব্যবস্থাপনার আওতায় নির্মাণ সেক্টরের এই কাজগুলো করা হলে বায়ুদূষণে এই সেক্টরের অবদান কমানো যেতে পারে। শুষ্ক মৌসুমে এমনিতেই দেশব্যাপী পানির ঘাটতি থাকায় ধুলিদূষণ নিয়ন্ত্রণে পানি ছিটানো কোন স্থায়ী সমাধান নয়।

প্রশ্ন হচ্ছে, বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক ও সামাজিক সমীক্ষা পরিচালনা, অর্থ সাশ্রয়ী প্ল্যান প্রস্তুতি ও তা কার্যকরের জন্য এই মুহূর্তে সংশ্লিষ্ট সরকারি/বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা কতখানি? দেশে বায়ুমান নিয়ন্ত্রনের প্রধান দায়িত্বটি পরিবেশ অধিদপ্তরই পরিপালন করে। কিন্তু, প্রায় ২০ বছর আগে থেকে বায়ুদূষণ নিয়ে কার্যকলাপ শুরু করলেও এখনো পর্যন্ত পরিবেশ অধিদপ্তরের সেরকম পর্যায়ের সক্ষমতা পরিলক্ষিত হচ্ছে না। বিগত সময়ে বিশ্ব ব্যাংকের আর্থিক সহায়তায় "এয়ার কোয়ালিটি ম্যানেজমেন্ট প্রজেক্ট" এবং "নির্মল বায়ু ও টেকসই পরিবেশ (কেস)" নামক দুটো প্রকল্পের মাধ্যমে অবকাঠামো উন্নয়ন, প্রশিক্ষণ ও বিভিন্ন সমীক্ষা পরিচালনা করা হয়েছে। জুন ২০১৯-এ কেস প্রকল্পটি সমাপ্ত হওয়ার পূর্বে দেশব্যাপী গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলোর ৩১টি স্পটে সার্বক্ষণিক বায়ুমান মনিটরিং কেন্দ্র (ক্যামস) স্থাপন করে বায়ুর গুণাগুণ পরিবীক্ষণ করা হচ্ছে। এসব কেন্দ্রে বসানো সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম যন্ত্রপাতি চালানো, রক্ষণাবেক্ষণ ও ডাটা কোয়ালিটি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রশিক্ষিত জনবলের সার্বক্ষণিক সংশ্লিষ্টতা প্রয়োজন। কিন্তু, পরিবেশ অধিদপ্তরের বায়ুমান ব্যবস্থাপনা শাখায় বর্তমানে বিদ্যমান অতি স্বল্প সংখ্যক কারিগরি জনবল দিয়ে এই দায়িত্ব পালন করা কতটা সম্ভব তা প্রশ্নসাপেক্ষ বিষয়। এসব কেন্দ্র থেকে ভুল ডেটা উৎপাদিত হলে কিংবা ডেটার ভুল বাখ্যা করা হলে পরবর্তীতে বায়ুমান ব্যবস্থাপনায় ভুল সিদ্ধান্ত গৃহীত হতে পারে যা অর্থ ও সময় ব্যায়ের কারণ হতে পারে। অধিদপ্তরের কেস প্রকল্পের ওয়েবসাইটে (http://case.doe.gov.bd/) দেশের শহরগুলোর বিগত দিনের এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স (একিউআই) প্রকাশিত হয়, যা প্রকৃতপক্ষে কোনো কাজেই লাগে না। একিউআই প্রকাশের মাধ্যমে কোনো নির্দিষ্ট সময়ে কোনো জায়গার মানুষকে সে জায়গার বায়ুর মান সম্পর্কে অবহিত করা হয় যাতে করে তারা সাবধানতা ও নির্দেশনা অনুযায়ী চলে। চব্বিশ ঘণ্টা পুর্বের এবং চব্বিশ ঘণ্টা গড়ের একিউআই প্রকৃতপক্ষে মানুষকে সেরকম কোনো বার্তা দিতে পারে না। দেশে বিদ্যমান আমেরিকার দূতাবাস তাদের চত্বরে বসানো ষ্টেশনের মাধ্যমে ঢাকা শহরের প্রতি ঘণ্টার একিউআই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে প্রকাশ করছে (https://www.airnow.gov/index.cfm?action=airnow.global_summary#Bangladesh$Dhaka)। সরকারের পক্ষ থেকে দেশের শহরগুলোতে বায়ুমান ফোরকাস্টিং করে প্রকাশ করা উচিৎ। উন্নত দেশে এমনকি ইন্ডিয়ায়ও বায়ুমান ফোরকাস্টিং করা হয় যাতে করে দূষিত বাতাস এড়ানোর জন্য আগে থেকেই মানুষ প্রস্তুতি গ্রহণ করতে পারে। এছাড়াও ইটভাটা, স্টিল মিলসহ বায়ুদূষণের অন্যান্য উৎসসমূহের সম্ভাব্য বায়ুদূষণ প্রভাব সমীক্ষা ও মূল্যায়ণের কাজটিও জরুরি এবং এ বিষয়েও অধিদপ্তরের সুনির্দিষ্ট প্রশিক্ষিত জনবল প্রয়োজন।

বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি রাস্তায় চলমান সকল গাড়ির নিঃসরণ সঠিক যন্ত্র ও পদ্ধতিতে পরিমাপ করে ফিটনেস সার্টিফিকেট প্রদান করতে সক্ষম কিনা সে বিষয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বায়ুদূষণ বিষয়ে এখনো তেমন গবেষণা হচ্ছে না। দেশের এনজিওগুলোকে বায়ুদূষণ মোকাবেলায় খুব একটা তৎপর হতে দেখা যায় না। অন্যদিকে, গবেষণানির্ভর পদ্ধতি ছাড়া বায়ুদূষণ মোকাবেলা অর্থসাশ্রয়ী ও টেকসই হবে না। এহেন পরিস্থিতিতে, দেশে শুষ্ক মৌসুমে তীব্র বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট সরকারি/বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহের অংশগ্রহণের মাধ্যমে আর্থ-সামাজিক অবস্থার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা প্রণয়ন করে বাস্তবায়ন করা অতীব জরুরি। নতুবা, বায়ুদূষণের তীব্র থাবা আমাদের জাতির স্বাস্থ্যগত, বুদ্ধিগত ও দেশের পরিবেশগত অবস্থাকে পঙ্গু করে দেবে।