স্থপতি মাজহারুল ইসলাম এবং একটি বই

আদনান মোর্শেদ
Published : 8 May 2014, 12:27 PM
Updated : 11 August 2012, 09:33 AM

১৯৮৬ সালের কথা। এখনো মনে আছে, আশির দশকে স্থাপত্যের যেসব ছাত্রছাত্রীরা বা নবীন স্থপতিরা নিজেদের দিকভ্রান্ত মনে করত তারা সদ্য প্রয়াত স্থপতি মাজহারুল ইসলামের পরিবাগ অফিসে যেতো কিছু জ্ঞানগর্ভ উপদেশের আশায়। আমি তখন দ্বিতীয় বর্ষ স্থাপত্যের ছাত্র। একদিন সাহস করে তার অফিস বাস্তুকলাবিদে হাজির হলাম। কাচুমাচু হয়ে জিগ্যেস করলাম, "স্যার, কয়েকটি বইয়ের নাম বলবেন যেগুলো পড়লে স্থাপত্য নিয়ে অনুপ্রানিত হতে পারি?" স্বভাবসুলভ স্নেহমিশ্রিত ভর্ত্সনার সুরে হাক দিলেন, "আগে বাঙালি হোন, তারপরে স্থাপত্য।" কিছুক্ষণ জানালার দিকে তাকিয়ে থেকে একে একে নয়টি ইংরেজি বইয়ের নাম বললেন। পরে বুঝেছিলাম প্রতিটিই আধুনিক স্থাপত্যের ক্লাসিক। বেশ কয়েকটি তার নিজের সংগ্রহেই ছিল। আলমারি থেকে বের করে দেখালেন। কয়েক মিনিটের জন্য ওগুলো ছুঁতে পেরেই আমি মহা কৃতজ্ঞ।

নয়টি বইয়ের মধ্যে যে বইটি মাজহারুল ইসলাম প্রথমে বলেছিলেন সেটা কেন এক নাম্বারে ছিলো তার মর্মার্থ বুঝতে আমার প্রায় এক দশকের বেশি সময় লেগেছিল। দ্বিতীয় বর্ষ স্থাপত্যের একজন ছাত্রের জন্য বইটি ছিল অসম্ভব কঠিন। অতি কষ্টে বইটি যোগার করে পড়ার চেষ্টা করেছিলাম কিন্তু বইটির তীব্র, তীর্যক জটিলতা বোঝার জ্ঞান আমার ছিল না। ১৯৯৭ সালের দিকে বস্টনে স্নাতকোত্তর ছাত্র থাকা অবস্থায় যখন বইটি আবার পড়ি, তখন স্থপতি ইসলামকে নতুনভাবে চেনার সুযোগ হয়েছিল। ১৯৬৫ সালে প্রকাশিত এই বইটিকে তিনি কেন এক নাম্বারে স্থান দিয়েছিলেন তার রহস্য হয়ত কখনোই উত্ঘাটন করতে পারবো না কিন্তু এর একটা আপাত ব্যাখ্যা অবশ্যই দিতে পারবো। বইটি তার কাছে কেন এতো গুরুত্ব পেয়েছিল তার কারণ খুঁজতে গিয়ে আমি এই স্থপতির শিল্পচেতনা আর সমাজচিন্তার ইশারা পেয়েছিলাম।

১৯৬০এর দশকে আধুনিক স্থাপত্যের বিরুদ্ধে একটি একাডেমিক অভিযোগ ছিল যে এই নান্দনিক ধারা খুব বেশি মাত্রায় আন্তর্জাতিক হয়ে যাওয়াতে এতে স্থানিক বৈশিষ্ট—যেমন জলবায়ু, মাটি, মানুষ, সংস্কৃতি, আর নির্মানশৈলী—ফুটিয়ে তোলার সুযোগ খুব সীমিত হয়ে আসে। এই প্রেক্ষাপটে আলোচ্য বইটির মূল তর্ক হচ্ছে একেক অঞ্চলের স্থাপত্য কথা বলবে তার নিজস্ব নান্দনিক ভাষায়, বিশেষ অভিপ্রায়ে। চিত্রশিল্প, সংগীত, কবিতা, চলচ্চিত্র, সাহিত্যের মতো স্থাপত্যও সমাজের আশা আকাঙ্খা রূপায়িত করবে ইট, সুরকি, কনক্রিট, আর স্পেইসের বিন্যাসের মাধ্যমে। মাজহারুল ইসলাম যখন ১৯৬০ সালে এমেরিকার ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থাপত্যে পড়ছেন তখনো নরওয়েজিয়ান স্থপতি আর দার্শনিক ক্রিশ্চিয়ান নর্বার্গ-শুলজ-এর আলোচিত বই ইনটেনসানস ইন আর্কিটেকচার (স্থাপত্যে অভিপ্রায়) প্রকাশিত হয়নি। বিখ্যাত জার্মান দার্শনিক আর্ন্ট ক্যাসিয়েরের প্রতিকায়নের তত্ত্ব দিয়ে অনুপ্রানিত নর্বার্গ-শুলজ-এর বইটি প্রকাশিত হয়েছে ১৯৬৫ সালে এবং মাজহারুল ইসলাম এটি পড়েছিলেন দেশে ফিরে, স্থাপত্য নিয়ে তার চিন্তা ভাবনার ধারাবাহিকতায়। আমার মনে হয়েছে যে ১৯৫৫ সালে নির্মিত আর্ট কলেজের ডিজাইন প্রক্রিয়ায় তিনি ইতিমধ্যেই স্থাপত্যে সামাজিক-সাংস্কৃতিক দায়বদ্ধতা নিয়ে নর্বার্গ-শুলজ-এর প্রশ্নগুলোর উত্তর দেবার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু কিভাবে?

আর্ট কলেজের আধুনিকতা পূর্ব পাকিস্তানের সমকালীন স্থাপত্য ধারা থেকে পুরোপুরি ভিন্ন ছিল। এখান থেকে অল্প দূরে অবস্থিত কার্জন হলকে তখনকার সিভিক স্থাপত্যের উদাহরণ বলা যেতে পারে। বঙ্গভঙ্গের সময়, লর্ড কার্জনের আমলে, ১৯০৫ সালে নির্মিত এই ইমারত ছিল ইউরোপীয় শরীরে মুঘল অলংকার–ঔপনিবেশিক আমলের শংকর স্থাপত্য যাকে ইন্দো-সারাসেনিক স্টাইল বলা হয়। ঔপনিবেশিক শাসনের স্মৃতিবাহী স্থাপত্য ধারাকে যে মাজহারুল ইসলাম উপেক্ষা করবেন সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। তিনি আর্ট কলেজের কাজ শুরু করেন ১৯৫৩ সালে, এমেরিকার অরেগন বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থাপত্যে স্নাতক ডিগ্রী শেষ করার পর দেশে ফিরে। তিনি তখন ৩০ বছরের টগবগে তরুণ, পূর্ব পাকিস্তানের প্রথম পেশাদার স্থপতি। এমেরিকাতে থাকার সময় আধুনিক স্থাপত্যের নায়ক–ফ্রান্ক লয়েড রাইট, ল্য কর্ব্যুজিয়ে, ওয়াল্টার গ্রপিয়াস, আলভার আলতো, মিস ভেন্ডারহোদের কাজ দিয়ে অনুপ্রানিত হয়েছেন। আর্ট কলেজের স্থাপত্যে এই অনুপ্রেরণার ছাপ দেখতে পাওয়া যায়। কিন্তু এই অনুপ্রেরণা প্রকাশিত হয়েছে তার নিজস্ব ভঙ্গিতে। শাহবাগের গাছ-গাছালি ঘেরা পরিবেশে গ্রীষ্ম মন্ডলীয় অঞ্চলের জন্য উপযোগী, সবুজ উঠোনকে ঘিরে এবং প্রকৃতিকে আলিঙ্গন করা একটি শিল্প কর্ম তৈরী করেছেন মাজহারুল ইসলাম। সদর আর অন্দর একাকার হয়ে এক ধরনের উন্মুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। ঢুকতেই বৃত্তাকার জয়নুল গ্যালারির ওপরে প্যাভেলিয়ান এবং নিচে খোলামেলা স্পেইস—ল্য ক্যর্বুজিয়ের ভিলা সাভওয়ার (১৯২৯) পিলোটিসের ওপরে ভাসমান ফর্ম আর্ট কলেজে এসে যেন রাজবাড়ির বৈঠকখানাতে পরিনত হয়েছে। ইউরোপ থেকে সদ্য-ফেরত জয়নুল আবেদিন পূর্ব আর পশ্চিমের এই আলোকিত মিলনকে নিশ্চই স্বাগত জানিয়েছিলেন।

কিন্তু আর্ট কলেজের ডিজাইন আমাদের একটি ইন্টেলেকচুয়াল গ্যারাকল সম্পর্কে সতর্ক করে দেয়। আধুনিকতা মানেই পশ্চিমা আমদানি নয়। যে অর্থে রাজা রামমোহন রায় অথবা রবীন্দ্রনাথ ইউরোপীয় এনলাইটেনমেন্টের সাথে বাঙালির মুক্তবুদ্ধির সংঘাত দেখেননি, সার্বজনীন মূল্যবোধের সাথে স্বদেশী চেতনার বৈরিতা মেনে নেননি, সে অর্থেই মাজহারুল ইসলাম আধুনিকতাকে খুঁজেছেন। কিন্তু তার আধুনিকতাকে শুধু অভিজাত নান্দনিক আলোচনায় সীমাবদ্ধ রাখলে আর্ট কলেজের রূপক ব্যাপ্তিকে বোঝা যাবে না। একে ১৯৫০ দশকের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটেও দেখতে হবে। পাকিস্তান আমলের নব্য-ঔপনিবেশিক, অসমতল রাজনৈতিক আবহাওয়ায় মাজহারুল ইসলাম কোনো ধরনের প্রচলিত ইসলামিক নির্মানশৈলী, কোনো উদ্ধত গম্বুজ বা জনপ্রিয় অর্ধগোলাকার জানালা ব্যবহার করেননি। আপোষহীনভাবে সেক্যুলার এবং দুই বাংলার সচ্ছন্দ সন্তান, স্থপতি ইসলাম আর্ট কলেজের বিমূর্ত আধুনিকতা দিয়ে যেনো দ্বিজাতি তত্বের মূল হাতিয়ার রাজনৈতিক ইসলামের তীব্র সমালোচনা করেছিলেন। আর্ট কলেজ নির্মিত হবার মাত্র পাঁচ বছর আগে , ২৪শে মার্চ, ১৯৪৮ সালে, কার্জন হলের দরবারে জিন্নাহ উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রীয় ভাষা বলে পুরো বাঙালি জাতিকে ক্ষেপিয়ে দিয়েছিলেন। বপন হয় বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলনের বীজ। ১৯৫২ সালে ভাষার জন্য রক্ত দেয় বাঙালিরা। এই প্রেক্ষাপটে আর্ট কলেজের অর্গানিক আধুনিকতা যেন প্রগতিশীল বাঙালি জাতীয়তাবাদের রাজনৈতিক যাত্রার মঞ্চ।

১৯৫০ এবং ১৯৬০এর দশকে মাজহারুল ইসলামের স্থাপত্যকর্মে বিল্ডিং ফর্ম আর জলবায়ু সচেতনতার মধ্যে গভীর সম্পর্ক দেখা যায়। পঞ্চাশের দশকে নির্মিত ঢাকা ইউনিভার্সিটি লাইব্রেরির (১৯৫৩) মূল ভবনটি জালি জানালার চাদরে ঢাকা হওয়াতে ভেতরের তাপমাত্রা বাইরের চাইতে অনেক বেশি সহনীয়। ষাটের দশকে তৈরি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে নিপা বিল্ডিং-এর প্রসারিত ছাদ মূল ভবনকে ছাতার মত ঢেকে রাখে আর বর্ষা কালের কোনাকুনি বৃষ্টি বর্ষণ থেকে একে শুস্ক রাখে. সুর্যরশ্মি সরাসরি মূল ভবনে না যাওয়াতে আভ্যন্তরীণ তাপ গ্রহণ কম হয়।

এক ধরনের স্বকীয় আধুনিকতার খোঁজে মাজহারুল ইসলামের জলবায়ু সচেতনতা আরো তীক্ষ্ণ হয় যখন তিনি ১৯৫৭ সালে লন্ডনের আর্কিটেকচারাল এসসিয়াশানে ট্রপিকাল স্থাপত্য নিয়ে পড়তে যান। তখন এই প্রোগ্রামের প্রধান ছিলেন জার্মান স্থপতি ও পরিকল্পনাবিদ অটো কোএনিক্সবার্গার। হিটলারের সন্ত্রাস থেকে মুক্তি পেতে তিনি দেশ ছেড়ে যান এবং ১৯৩৯ সালে ভারতের মাইসউর অঙ্গরাজ্যের প্রধান স্থপতি এবং পরিকল্পনাবিদ হিসেবে নিয়োগ পান। ভারতে গতানুগতিক ঔপনিবেশিক স্থাপত্যধারাকে টিকিয়ে রাখার চেয়ে জলবায়ু সচেতন নির্মানশৈলীর প্রচারে কোএনিক্সবার্গার বেশি তত্পর ছিলেন।

আর্কিটেকচারাল এসসিয়াশানে তার নেতৃত্বে স্থাপত্যে ট্রপিকাল আধুনিকতার একটা ধারা তৈরি হয়. আর্ট কলেজে মাজহারুল ইসলামের অভিজ্ঞতা কোএনিক্সবার্গার-এর সংস্পর্শে এসে আরো সংবেদনশীল হয়। ১৯৬০-৬১ সালে এমেরিকার আইভি লিগ বিশ্ববিদ্যালয় ইয়েলে পড়ার সময় বিশ্ববিখ্যাত অনেক স্থপতিকে শিক্ষক হিসেবে পান। এদের মধ্যে লুই কান আর ইয়েলের ডীন পল রুডল্ফ মাজহারুল ইসলামের ষাটের দশকের কাজ যেমন জাহাঙ্গীরনগর এবং চিটাগাং বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে যথেষ্ট অনুপ্রানিত করেছে। ইয়েলে স্থাপত্য ইতিহাসের কিংবদন্তি শিক্ষক ভিনসেন্ট স্কালির (মাজহারুল ইসলাম থেকে মাত্র তিন বছরের বড়) কাছ থেকে পেয়েছেন গভীর ইতিহাসবোধ।

মাজহারুল ইসলাম যখন ইয়েলে স্নাতকোত্তর পড়াশুনা করছিলেন তখন এমেরিকা-সোভিয়েত ইউনিয়নের স্নায়ু যুদ্ধের কারণে সারা বিশ্বে ছিল রাজনৈতিক অস্থিরতা। ১৯৬১ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট কেনেডির প্রশাসন বৈদেশিক সহায়তার প্রতিষ্ঠান ইউএসএআইডি প্রতিষ্ঠা করে। সোভিয়েতপন্থী ভারতের বিরুদ্ধে বেসামরিক প্রতিরক্ষা ব্যূহ হিসেবে পাকিস্তানের কারিগরী উন্নয়নকে মার্কিন প্রশাসন গুরুত্ব দেয়। ইউএসএআইডি যখন টেক্সাস এএন্ডএম-এর কারিগরী সহায়তায় পূর্ব পাকিস্তান প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতায় স্থাপত্য বিভাগ চালু করে তখন মাজহারুল ইসলাম এর বিরুদ্ধে একটি আদর্শগত অবস্থান নেন। তিনি চেয়েছিলেন স্থাপত্য শিক্ষা কার্যক্রমকে প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে কারিগরী বিষয় হিসেবে নয়, বরং স্বতন্ত্র একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে যেখানে বিজ্ঞান আর শিল্পকলা, আঙ্কিক মানসিকতা আর সমাজ-সংক্স্কৃতি-সচেতনতা সমান্তরাল গুরুত্বে এগুবে। টেক্সাস এএন্ডএম-এর দুই শিক্ষক রিচার্ড ভ্রূম্যান আর জেইমস ওয়ালডেন এবং ঢাকার বার্জার্স ইঞ্জিনিয়ার্স-এ তখন কর্মরত মার্কিন স্থপতি ড্যান ডানহামের নেতৃত্বে পূর্ব পাকিস্তানে স্থাপত্যের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা শুরু হয় ১৯৬১-৬২ সালে। মাজহারুল ইসলামের সাথে এর একটি নীতিগত দূরত্ব সৃষ্টি হয় এবং এই দূরত্ববোধ থেকে তার মধ্যে স্থাপত্য নিয়ে এক ধরনের ট্রাজিক দৃষ্টিভঙ্গি তৈরী হয়। এর সাথে যোগ হয়েছি—তার দৃষ্টিতে—সমাজ পরিবর্তনে স্থাপত্যের প্রত্যাশিত ভূমিকার অনুপস্থিতি।

আশির দশকে আমার ছাত্রাবস্থায় মনে পরে না মাজহারুল ইসলামকে একদিনও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে দেখেছি। স্থাপত্যের ইতিহাসে আমরা মিশরের পিরামিড পড়েছি, গ্রীক পার্থেনন পড়েছি, রোমান পান্থিওন পড়েছি, পড়েছি সাচির স্তুপা, পড়েছি গথিক গির্জার নির্মান তত্ত্ব। ল্য কর্বুজিয়ে, লুই কান, মাইকেল গ্রেইভ্স, মারিও বোটা, আর তাদাও আন্দোর বিল্ডিং নিয়ে গবেষণা করতাম। কিন্তু, হায়, আমাদের সিলেবাসে মাজহারুল ইসলামের স্থাপত্য কর্ম এবং তার আলোচনা স্থান পায়নি। এটা যে কোনো ষড়যন্ত্র ছিল তাও নয়। এটা ছিল আমাদের পাশ্চাত্যমুখী শিক্ষা কার্যক্রমের মৌলিক ব্যর্থতা। প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরা ব্যানিস্তার ফ্লেচারের ইউরোপীয় জাত্যাভিমানে ভরপুর প্যানরামিক ইতিহাস পড়েছি, কিন্তু নিজের দেশের ইতিহাস পড়ার গুরুত্ব আমরা বুঝিনি।

নর্বার্গ-শুলজ-এর সেই বইয়ের প্রসঙ্গে ফিরে আসি। ইনটেনসানস ইন আর্কিটেকচারে নর্বার্গ-শুলজ মাটি ও মানুষের সংস্কৃতিকে ফুটিয়ে তুলতে স্থাপত্যশিল্পের অসাধারণ ক্ষমতা আছে বলে তর্ক করেছিলেন। মাজহারুল ইসলাম কি এই তর্কে বিশ্বাস করেই সর্বপ্রথমে এই বইয়ের কথা বলেছিলেন? এটা আমার কাছে এখনো এক রহস্য। সম্প্রতি আর্ট কলেজের সবুজ উঠোনে খ্যাতিমান স্থপতি শামসুল ওয়ারেসের সাথে কথা বলছিলাম এ দেশের স্থাপত্য চর্চায় মাজহারুল ইসলামের অবদান নিয়ে। চারদিকে তাকিয়ে ভাবছিলাম, নর্বার্গ-শুলজ ১৯৬৫ সালে যে তাত্ত্বিক প্রশ্ন রেখেছিলেন সেটা মাজহারুল ইসলাম তার দশ বছর আগেই, আরো অসাধারণভাবে, আরো তীক্ষ্ণভাবে উত্থাপন করেছিলেন নির্মান আর নিসর্গের ভাষায়।

আদনান মোর্শেদ: বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থাপত্য অনুষদের প্রাক্তন প্রভাষক এবং বর্তমানে সহযোগী অধ্যাপক, ক্যাথলিক ইউনিভার্সিটি অফ এমেরিকা, ওয়াশিংটন ডি সি।