হুমায়ূনের মৃত্যু, শাওনের বিলাপ ও আমাদের মিডিয়া

চিন্ময় মুৎসুদ্দী
Published : 7 August 2012, 03:48 PM
Updated : 7 August 2012, 03:48 PM

দ্বিতীয় দফায় অপারেশনের শেষে বেশ কয়েকদিন হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে মিডিয়া নীরব থাকার পর ১৫/১৬ জুলাই ২০১২ থেকে কয়েকটি সংবাদপত্র পুনরায় হুমায়ূনের অসুস্থতার খবর দিতে গিয়ে লিখল, তার অবস্থা "স্থিতিশীল", "অপরিবর্তিত", "ভাইরাস সংক্রমনের কারণে ঘুম পারিয়ে রাখা হয়েছে", ইত্যাদি। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অন্যদিন'র মালিক মাজহারুল ইসলামের বরাত দিয়েই সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। এবং মাজহারের উদ্ধৃতিতে বলা হয়েছে "অবস্থা অপরিবর্তিত"।

প্রকৃতপক্ষে তখনই হুমায়ূনের অবস্থা সংকটাপন্ন ছিল। এই অবস্থায় মাজহারের উদ্ধৃতি দিয়ে "অবস্থার উন্নতি" হচ্ছে বলেও সংবাদ প্রচারিত হয়েছে। মিডিয়া বিষয়টি অনুসন্ধানের পদক্ষেপ নেয়নি। হুমায়ূনের সংকটাপন্ন অবস্থার তথ্যটি আমরা জানলাম ১৯ জুলাই, আর সে রাতেই এল তার মৃত্যুর খবর। ১৯ তারিখ দুপুরে অনলাইনে জানা গেল হুমায়ূনের অবস্থা খারাপের দিকে। সন্ধ্যায় অনলাইন সংবাদপত্রে এবং টিভিতে নিয়মিত ফলোআপ দেয়া হচ্ছিল। এক পর্যায়ে বলা হল তিনি "জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে"।

ঘনিষ্ঠজনদের অনেকেই তখন জেনে গেছেন কিছুক্ষণের মধ্যে 'ভেন্টিলেটর' খুলে ফেলা হবে। ইমদাদুল হক মিলনকে ফোন করে ফরিদুর রেজা সাগর বলেছেনও "খারাপ খবরের জন্য তৈরি থেকো"। আসলে হুমায়ূনকে বাঁচিয়ে রাখার প্রচেষ্টাগুলো একে একে বিফল হচ্ছিল মৃত্যুর প্রায় সপ্তাহ দুয়েক আগে থেকে। মিডিয়া আমাদের এই খবরটি যথাসময়ে সঠিকভাবে দিতে পারেনি। অবশ্য এই সময়ে তার পরিবার ও বন্ধু-বান্ধবদের মতো পুরো দেশবাসী আশা করছিলেন হুমায়ূন সুস্থ হয়ে উঠবেন। তার প্রিয় পাঠকরা কামনা করছিলেন এবারের ঈদেও তার নতুন উপন্যাস পড়বেন, টিভিতে তার নতুন নাটক দেখবেন।

গত বছর সেপ্টেম্বর মাসে হুমায়ূন চিকিৎসার জন্য নিউইয়র্ক গেলে প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মাধ্যম নিয়মিত তার চিকিৎসা ও জীবনযাপনের নানান খুঁটিনাটির খবর দিয়ে যাচ্ছিল। হুমায়ূনের লেখাও প্রকাশ করছিলেন কেউ কেউ। ১২ টি কেমো দেয়ার পর কুড়ি দিনের জন্য তিনি ঢাকা এলে মিডিয়া তাকে নিয়মিত অনুসরন করেছে। আমরা তার দিনলিপির খবর জেনেছি।

খ্যাতিমান বা মিডিয়ার আগ্রহ আছে এমন কেউ মারা গেলে তার সম্পর্কে তাৎক্ষণিক স্মৃতিচারণমূলক লেখা প্রকাশের একটা রেওয়াজ আমাদের মিডিয়ায় আছে। টেলিভিশন চ্যনেলও সঙ্গে সঙ্গে পুরো, আধা, সোয়া পরিচিত যাকে পাওয়া যায় তাকে নিয়ে আসে স্মৃতিচারণের জন্য। এর একটা পাঠক-দর্শক আগ্রহ থাকে, সেই কারণে পাঠক-দর্শককে হতাশ করতে চান না মিডিয়া বাণিজ্যিক দৃষ্টিকোণ থেকে। হুমায়ূনের জনপ্রিয়তার কথা ভেবে মিডিয়াগুলো তাৎক্ষণিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ফেলেন। ঐ রাতের টক শোতে দিনের সকল খবর বাদ দিয়ে আলোচনার বিষয় দাঁড়ায় হুমায়ূন। রাতেই কেউ কেউ হুমায়ূনের লেখা নাটক, এবং সিনেমার অংশবিশেষ দেখাতে থাকেন। পরবর্তি কয়েকদিন নিউজ ও টক শোতে হুমায়ূনই ছিলেন একমাত্র বিষয়। পরিচিত এবং অপরিচিত প্রায় সকলকে দেখা গেলো হুমায়ূনকে নিয়ে বলতে গিয়ে বলছেন তিনি জনপ্রিয়, জননন্দিত, বেস্ট সেলার লেখায় সিদ্ধহস্ত, ইত্যাদি।

তার মৃতদেহ ঢাকায় আসার পর মিডিয়ার নতুন ব্যস্ততা শুরু হয়। শহীদ মিনারে মানুষের শ্রদ্ধা জ্ঞাপনের দৃশ্যগুলো সব টিভি চ্যানেল সরাসরি সম্প্রচার করে। জানাজার দৃশ্যও সরাসরি সম্প্রচার করা হয়। নিউইয়র্কে অনুষ্ঠিত প্রথম জানাজা সরাসরি দেখিয়েছে একটি চ্যানেল, যখন বাংলাদেশে গভীর রাত। তার ভক্তদের অনেকে এজন্য খুশি হয়েছেন। দুবাইতেই শাওন প্রথম বলেন যে নুহাশ পল্লীতে দাফনের জন্য হুমায়ূন তার ইচ্ছার কথা শাওনকে মৃত্যুর আগে বলে গেছেন।

অন্যদিকে, আগে থেকেই আহসান হাবিব কয়েকবার বলেছেন নুহাশ পল্লীতে নয়, তার ভাইয়ের দাফন হবে মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে বা বনানীতে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কথাও শোনা গিয়েছিল মিডিয়াতে। ঢাকা বিমানবন্দরে নেমেও শাওন সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপে নুহাশ পল্লীতে হুমায়ূনকে দাফন করার দাবি জানান। মানুষের সমবেদনা লাভে সফল হওয়ার মতো করে তিনি বলেন "তারে আর কষ্ট দিয়েন না।"

অশ্রুবিহীন দীর্ঘ বিলাপ দৃশ্যে শাওনকে মনে হল কুটনৈতিক কৌশলে তিনি পারিবারিক রাজনীতি সেরে নিচ্ছেন। তিনি বার বার দুটি কথার ওপর জোর দিচ্ছিলেন। প্রথমত হুমায়ূনই মৃত্যুর আগে নাকি তাকে বলেছেন নুহাশ পল্লীতে দাফনের জন্য। এর কোনো ডকিউমেন্টারি এভিডেন্স অবশ্য নেই। আর একটি কথা তিনি বার বার বলছিলেন, "ওর [হুমায়ূন] বুকে অনেক কষ্ট, অনেক কষ্ট, মেয়েরা তাকে দেখতে আসেনি।" এটিএন নিউজ শাওন'র দীর্ঘ এই বিলাপ দৃশ্যটি কিছুক্ষণ পর পর প্রচার করছিল। মুন্নী সাহার সঙ্গে কথা বলতে গিয়েই সম্ভবত শাওন কথাগুলো বলেন। এটিএন নিউজ বার বার এ দৃশ্য প্রচার করে শাওন'র পক্ষে জনমত গড়ে তোলার চেষ্টা করছিল বলে মনে হওয়া স্বাভাবিক। কারণ নোভা, শীলা, নুহাশ বা মুহম্মদ জাফর ইকবাল, আহসান হাবিরের বক্তব্য বার বার দেখা যায়নি এই চ্যানেলে।

মিডিয়ার খবরে জানা যায় হুমায়ূনের ছোট মেয়ে বিপাশা তার বাবাকে একবার দেখতে গিয়েছিলেন নিউইয়র্কে। বিপাশা যুক্তরাস্ট্রের অন্য একটি শহরে থাকেন। এই সংবাদটি নতুন করে কেউ আর প্রকাশ করেনি। এতে ঘটনাটি ঠিক কি না সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না।

হুমায়ূনের লাশ দাফনের কয়েকদিন পর ২৭ জুলাই মিডিয়া খবর দেয় যে "ক্যান্সারের অস্ত্রোপচারের আগে পূর্বের আচরণের জন্য গুলতেকিনের কাছে ক্ষমা চান হুমায়ূন আহমেদ। তিনি টেলিফোনে গুলতেকিনের সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ আলাপ করেন বলেও জানা গেছে। কন্যা বিপাশার মাধ্যমে গুলতেকিনের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। সে সময় গুলতেকিন যুক্তরাষ্ট্রে ছিলেন। সূত্রের দেওয়া তথ্য মতে, অসুস্থ হুমায়ূন আহমেদের কাছাকাছি থেকে তার ক্যান্সার চিকিৎসায় মানসিক শক্তি যোগাতেই যুক্তরাষ্ট্র ছুটে গিয়েছিলেন গুলতেকিন। তবে তাদের দু'জনের এ যোগাযোগ কোনো কোনো পক্ষ ভালো চোখে দেখেনি বলেই জানিযয়েছে সূত্র।"

মিডিয়া এই খবরটি সেই সময়ে পাঠকদের জানাতে পারেনি। তাছাড়া সূত্র কে বা কতটা নির্ভরযোগ্য সেটাও স্পষ্ট নয়। এ ক্ষেত্রে বলতে হয় মিডিয়া অনুসন্ধানী সাংবাদিকতায় পিছিয়ে রয়েছেন। গুলতেকিন ও বিপাশার বক্তব্য, এবং কিছু ডকিউমেন্টারি এভিডেন্স এ ক্ষেত্রে প্রয়োজন হবে মিডিয়ার এই তথ্য কতটা সঠিক তা পাঠকের বুঝার জন্য।

দাফন নিয়ে টানাটানি প্রসঙ্গে মিডিয়া পরে খবর দিল যে শাওন নাকি নিউইয়র্কে অন্য কথা বলেছিলেন। তখন তিনি প্রকাশ্যে বলেছেন 'দাফনের বিষয়ে হুমায়ূন কিছু বলে যাননি'। দাফন বিতর্ক নিয়ে পুরো সোমবারই মিডিয়া ছিল মুখর। এ নিয়ে পর্দার অন্তরালের খবর জানা গেল আবু তাহের খোকনের রিপোর্টে। হুমায়ূনকে নুহাশ পল্লীতে দাফনের ব্যাপারে শাওনের মা বাবা শাসক দলের প্রভাবশালী ব্যক্তিদের ফোন করে সাহায্য চেয়েছেন বলে দাবি করেন খোকন।

সমকাল ও প্রথম আলো ৪ পৃষ্ঠার বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ করে হুমায়ূন ভক্তদের প্রত্যাশা মিটিয়েছেন ঠিকই। তবে বিশেষ সংখ্যাকে মূল কাগজের অংশ না বলায় অনেকেই অসন্তুষ্ট হন। দুটি পত্রিকাতেই হুমায়ূন সংখ্যার পাতার ওপর লেখা হয়েছে মোড়ক উল্টালেই/মলাট ওল্টালেই মূল কাগজ। এটা না লিখে 'ভেতরে নিয়মিত সংখ্যা' লিখলে এই অসন্তোষ হতো না হুমায়ূন ভক্তদের। সাংবাদিকতার ভাষায় এটি 'জ্যাকেট'। জ্যাকেট কি তবে মূল পত্রিকার অংশ নয়?

আমাদের মিডিয়া ভাবাবেগ আক্রান্ত মিডিয়া। ক্রিকেট খেলার রিপোর্টেই সেটা ঘন ঘন বুঝা যায়। উনসত্তুরের গনআন্দোলন বা ১৯৭০ এর জলোচ্ছাসের ঘটনার সঙ্গে হুমায়ূনের মৃত্যুকে একই কাতারে ফেলা ঠিক হবে না। একটি হল সকল মানুষের বাঁচা মরার প্রশ্ন, আর অন্যটি অনেক মানুষের প্রিয় এক ব্যক্তির ইহলোক ত্যাগ। এই পার্থক্যটাতো মিডিয়াতে প্রতিফলিত হতে হবে। কোনো কোনো মিডিয়া কর্তৃপক্ষ বিষয় দুটিকে একই কাতারে দেখার চেষ্টা করেছেন।

সৈয়দ শামসুল হক একটি নাগরিক শোকসভায় হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে এখন গণমাধ্যমে যেসব সংবাদ প্রচারিত হচ্ছে, তাতে শালীনতা, রুচি ও সৌজন্যবোধ মেনে চলার আহ্বান জানান। এই বক্তব্যের নির্যাস হল মিডিয়া এমন কিছু সংবাদ প্রকাশ করেছে যা সৈয়দ শামসুল হকের কাছে শালীন, রুচিসম্পন্ন মনে হয়নি, এবং সৌজন্যবোধ বর্জিত মনে হয়েছে। যেহেতু তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেননি তাই নির্দিষ্ট সংবাদ কোনটি তা আমরা কেবল ধারণা করতে পারি। এক্ষেত্রে ধারণার ওপর নির্ভর করে চুড়ান্ত মন্তব্য করা যৌক্তিক নয়। সংবাদ প্রকাশের ব্যাপারে সৈয়দ শামসুল হকের প্রত্যাশা নিয়ে সংবাদপত্রের নীতিমালার আলোকে সাধারণ আলোচনা হতে পারে। যেমন মৃতদেহের মুখের ছবি দেখানো অনেক মিডিয়া কর্তৃপক্ষ অনুচিত মনে করেন। মৃত ব্যক্তির ঘনিষ্ঠতম আত্মীয়ের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জিজ্ঞেস করাও কোড অব ইথিক্স-এর বাইরে বলে মনে করেন অনেকে। কিন্তু কোনো কোনো মিডিয়া এই দুটো ক্ষেত্রেই বাড়াবাড়ি করেছে। পাঠকের তথ্য জানার অধিকার রক্ষা বা মৃত ব্যক্তির প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর চাইতে অসুস্থ প্রতিযোগিতার মাধ্যমে বাণিজ্য করাই ছিল তাদের মূল লক্ষ। আমাদের প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মাধ্যমের নিজস্ব 'কোড অব ইথিক্স' কী রয়েছে তা আমাদের জানা নেই; কারো ওয়েব সংস্করণে বা সাইট'এ কেউ তা প্রকাশ করেন নি। অনেক দেশের মিডিয়া প্রতিষ্ঠানের 'কোড অব ইথিক্স' ওয়েব সাইটে প্রকাশ করা আছে। এটা জবাবদিহিতার একটি উদাহরণ। পাঠক জানতে পারছেন মিডিয়ার মানসিকতা, এবং প্রকাশিত নীতিমালার বিচ্যুতি ঘটছে কিনা তাও মূল্যায়ন করা সম্ভব হচ্ছে পাঠক-দর্শকের পক্ষে।

নিউইয়র্কে ঘটে যাওয়া বেশ কিছু তথ্য বাংলা নিউজ২৪ডটকম পাঠকদের জানিয়েছে অনেক পরে। তাৎক্ষণিকভাবে জানাতে পারলে এই প্রতিষ্ঠানের কৃতিত্ব আরো বড় করে দেখা যেত। তবে দাফন নিয়ে আবু তাহের খোকনের রিপোর্টটি হুমায়ূন পরিবারের মধ্যে দাফন বিতর্কের ব্যাপারে সেরা রিপোর্ট বলতে হবে। জনাব খোকনের এটি নিজের অভিজ্ঞতার রিপোর্ট বলেই তিনি আমাকে জানিয়েছেন, কোনো সুত্রের ওপর তাকে নির্ভর করতে হয়নি। এই রিপোর্টটি খোকনের কর্মরত প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ প্রতিদিন'এ না এসে অন্যত্র কেন এলো?

১৯ জুলাইয়ের পর এই ক'দিনে হুমায়ূনকে নিয়ে অসংখ্য লেখা প্রকাশিত হয়েছে। পাঠকের পরিচিত লেখক সাংবাদিকরা লিখেছেন, কেউ স্মৃতিচারণ করেছেন, কেউ দুই-এক বাক্যে তার লেখনির মূল্যায়ন করে স্মৃতি সভায় বক্তব্য বলেছেন, টিভি সাক্ষাৎকারে মন্তব্য করেছেন। এদের কেউ কেউ খ্যাতিমান ব্যক্তিদের মৃত্যুতে স্মৃতিচারণমূলক লেখা লেখেন প্রায় নিয়মিত।

এধরনের লেখা সচরাচর লেখেন না এমন কয়েকজনও (আসিফ নজরুল, আবরার চৌধুরী প্রমুখ) এবার স্মৃতিচারণ করেছেন । তরুন লেখক সাংবাদিকদের একটি বড় অংশ স্মৃতিচারণসহ হুমায়ূনের লেখার মূল্যায়ন করেছেন। তারা ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য বলেছেন। কারো মতে হুমায়ূন জনপ্রিয় কিন্তু সিরিয়াস নন। আবার কারো মতে তিনি লেখায় সমসাময়িক ঘটনা স্থান দিয়ে যথেষ্ট সিরিয়াস বলে পরিচয় দিয়েছেন। এটা ঠিক জনপ্রিয়তাই সাহিত্য বিচারের একমাত্র মাপকাঠি নয়। হলে দশ্যু মোহন (লেখকের নাম মনে নেই), রোমেনা আফাজ (দশ্যু বনহুর) , স্বপনকুমার, কাজী আনোয়ার হোসেন, বা ডা. নিহাররঞ্জন গুপ্ত, হ্যারল্ড রবিন্স, ফ্র্যাঙ্ক হ্যারিস, আগাথা কৃস্টি, এনিড ব্লাইটন প্রমুখ হতেন সাহিত্যের ইতিহাসে সেরা লেখক।

সৈয়দ শামসুল হক একবার ঢাকার নিউমার্কেটে দেখা হলে হুমায়ূনকে বলেছিলেন,("হুমায়ূন, কী করছেন, সাহিত্য কিছু কি লিখছেন?") হুমায়ূন নিজেই এ ঘটনাটির কথা লিখেছিলেন। সেই লেখায় তিনি নিজেই প্রশ্ন করেছিলেন ("তবে কি আমি যা লিখছি তা সাহিত্য নয়?") বন্ধনীর বাক্যদুটি স্মৃতি থেকে লিখলাম, হুমায়ূনের সেই লেখাটি হাতের কাছে নেই তাই ঠিকভাবে উদ্ধৃত করতে পারলাম কি না সংশয় রয়েছে, সে কারণেই বন্ধনী।

তবে সকলে এক বাক্যে বলেছেন জনপ্রিয়তার প্রেক্ষাপটে তিনি বাংলাদেশের বইয়ের পাঠক তৈরি করেছেন। ভারতের বাংলা বইয়ের জগৎ থেকে অনেককেই তিনি স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করিয়েছেন। এটা অবশ্যই প্রশংসার দিক। অনেকের মনে আছে ১৯৬০'র দশকে উর্দু ছবির প্রচন্ড জোয়ারে বাংলা চলচ্চিত্র ভেসে যাচ্ছিল। তখন রূপবান বানিয়ে সালাউদ্দিন বাংলা ছবির দর্শকদের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন ঘটান। রূপবান এই একটিমাত্র কারণে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের ইতিহাসে স্থান করে নিয়েছে। বাংলাদেশের পাঠকদের ঘরে ফিরিয়ে আনার জন্যেও যদি হুমায়ূন স্মরণীয় হয়ে থাকেন তবে সেটাই বা কম কিসে?
হুমায়ূন পাঠক তৈরি করেছেন, এবার পাঠকের দায়িত্ব তারা কোথায় যাবেন।

আর আমাদের মিডিয়ার কাছে প্রত্যাশা হল বাণিজ্যের জন্য অসুস্থ প্রতিযোগিতা করে নয়, সঠিক সংবাদটি যথাসময়ে বা প্রাপ্তি সাপেক্ষে পাঠক দর্শকের জানার অধিকার সুনিশ্চিত করার লক্ষে প্রকাশ করেই তারা মুনাফা করবেন।