ঢাকা বইমেলা আর সাহিত্যের আন্তর্জাতিক যোগাযোগ

আনিসুর রহমান
Published : 21 Sept 2019, 11:30 AM
Updated : 21 Sept 2019, 11:30 AM

আসছে ২১ নভেম্বর থেকে ২৭ নভেম্বর শিল্পকলা একাডেমিতে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ঢাকা আন্তর্জাতিক বইমেলা। ১৯৯৫ সাল থেকে শুরু হওয়া ঢাকা বইমেলার নামের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে 'আন্তর্জাতিক' শব্দ। এই শব্দটি হাল আমলে অনেকটা ফ্যাশনে পরিণত হয়েছে। এর গূঢ় তাৎপর্য আমরা কার্যকর অর্থে বুঝেও বুঝি না কিংবা মেনেও মানি না।

সে যাইহোক ঢাকা বইমেলা নিয়ে দুই একটি পর্যবেক্ষণ তুলে ধরতে চাই। এই মেলা আদতে জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের তত্ত্বাবধানেই শুরু হয়েছিল। গ্রন্থকেন্দ্র এরকম মেলার দায়িত্বে থাকবে সেটাই সংগত আর বাস্তবসম্মত। কিন্তু এবারের মেলার আয়োজনের সঙ্গে গ্রন্থকেন্দ্রের কোন সংশ্লিষ্টতা না থাকার কারণ খুঁজে পেলাম না। তবে ইতিবাচক দিক হল এবারের বইমেলার আয়োজনের সঙ্গে প্রকাশক সমিতিকে রাখা হয়েছে।

আদতে এই মেলাটি প্রায় আড়াই দশক ধরে চলে আসা একটা ব্যর্থ আয়োজন। এর না আছে সময়সূচির ধারাবাহিকতা, না আছে নির্দিষ্ট স্থান, না আছে সুনির্দিষ্ট কর্মসূচি। এটা কোনো বছর শুরু হয় জানুয়ারি মাসে পরের বছর হয়তো ডিসেম্বর আর এবছর তো নভেম্বরে। এক বছর হয় শেরে বাংলা নগরে পরের বছর হয় তো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলার মাঠে আর ২০১৯ সালে শিল্পকলা একাডেমিতে। এরকম আউলাঝাউলা আয়োজনে একটি বইমেলা যে আড়াই দশকেও জাতে উঠতে পারেনি– তা ভবিতব্যই ছিল বলা যায়।

এখন আমার প্রশ্ন হল আমাদের উল্লেখ করার মত এবং সাংস্কৃতিক তাৎপর্যের দিক থেকে একুশে গ্রন্থমেলাই পৃথিবীর অনন্য গ্রন্থমেলা। তাই একুশে গ্রন্থমেলাকেই আন্তর্জাতিক রূপ দেওয়া সঙ্গত আর সহজ সম্ভব ছিল। কিন্তু সেদিকটায় আমরা না গিয়ে আড়াই দশকে আমরা বিশ্রী বেগমের নাম সুন্দরী খান দেবার মত করে 'ঢাকা আন্তর্জাতিক বইমেলা' আয়োজন করে চলছি। এর কারণ কি?

একটা জিনিস লক্ষ করেছি, প্রশাসন ক্যাডারের বাইরে বয়স্ক অধ্যাপক বা বুদ্ধিজীবী দুই-একজন ব্যাতিক্রম ছাড়া স্বায়ত্ত্বশাসিত সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রধান নির্বাহীর পদে নিয়োগ পেয়ে পূর্বের কাজের ধারাবাহিকতা যেমন ক্ষেত্র বিশেষে রাখেন না তেমনি প্রতিষ্ঠানগুলোর স্বায়ত্ত্বশাসনের মর্যাদাও রক্ষা করেন না। কারণ এরকম একটা সুযোগ পেয়ে নির্বাহী পদে বসে তারা যেন বুড়ো বয়সে মধুচন্দ্রিমার সুযোগ পেয়ে বসেন।

এই অপেশাদারি বাস্তবতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। প্রসঙ্গক্রমে বলে রাখতে চাইপ্রশাসনের অন্যান্য স্তরে আলাদা কাজের জন্যে যেমন রাজস্ব, তথ্য, পুলিশ, শিক্ষা, পররাষ্ট্রএরকম ক্যাডার ব্যবস্থা থাকে যদি তাহলে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ প্রতিষ্ঠানগুলোরজন্যে আলাদা ক্যাডার কেন নয়? তাতে কাজের ধারাবাহিকতা আর অর্জিত ঐতিহ্য এবং সাফল্যেররক্ষাকবচও তৈরি হতে পারে। এক্ষেত্রে একটা উদাহরণ দিয়ে বিষয়টা স্পষ্ট করতে চাই।

বাংলা একাডেমির সদ্য বিদায়ী মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খানের আগ্রহে ১৯৭৪ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উদ্বোধন করে যাওয়া বাংলা একাডেমি আয়োজিত আন্তর্জাতিক সাহিত্য সম্মেলনের পুনর্যাত্রা শুরু হয়েছিল। সেই সম্মেলন একুশে বইমেলার সঙ্গে আর জাতীয় কবিতা উৎসবের সঙ্গে সমন্বয় করে বেশ কয়েক বছর ভালোই চলছিল। ২০১৮ সালে ডিসেম্বরে দায়িত্ব নিয়ে বর্তমান মহাপরিচালক হাবীবুল্লাহ সিরাজী বঙ্গবন্ধুর কাঙ্খিত সেই আন্তর্জাতিক সাহিত্য সম্মেলনটি বন্ধ করে দিয়েছেন কার স্বার্থে? কোন অজুহাতে? মুখে মুখে বঙ্গবন্ধুর কথা বলা আর কাজেকর্মে তাঁর দেখানো কীর্তির ধারাবাহিকতা রক্ষা করব না তা কাম্য হতে পারে না।

এবার কয়েকটি প্রশ্নের অবতারণা করতে চাই–

  • সাহিত্যের আন্তর্জাতিকীকরণ কেন দরকার?
  • সাহিত্যের আন্তর্জাতিকীকরণের উপায়গুলো কি কি?
  • আমাদের সাহিত্যের কী আন্তর্জাতিকীকরণ সম্ভব?
  • আমাদের সাহিত্যের আন্তর্জাতিকীকরণের পথে বাধাগুলো কি কি?

সাহিত্যের আন্তর্জাতিকীকরণ নতুন কিছু না। লেখালেখির ইতিহাসের শুরু আর আন্তর্জাতিকীরণও একই সঙ্গে সমানে বা সমান্তরালে চলে। কেননা মানুষের মনের প্রকাশ আর ভাবের আদান প্রদান সীমানার গণ্ডির মধ্যে আবদ্ধ থাকে না, আবদ্ধ রাখাও যায় না। তাই আমরা যেমন ফার্সি লেখক রুমি, হাফিজ, শেখ সাদীকে পড়ি তেমনি শেক্সপিয়ার, ইবসেন, মির্জা গালিব বা পাবলো নেরুদাকেও পড়ি। তেমিনভাবে পৃথিবীর অন্য প্রান্তের মানুষেরা আমাদের লালন শাহ আর রবীন্দ্রনাথকেও পড়েন। একইভাবে আমরা যেমন মহাত্মা গান্ধী বা দগ হ্যামারশল্ডের লেখা পড়ি তেমনি অন্যদেশের মানুষেরা আমাদের বঙ্গবন্ধুর লেখাও পড়বেন। তেমনটাই কাম্য। সেই সঙ্গে যুগে যুগে যোগ হবে নতুন নতুন লেখক ও লেখা, ভাব ও প্রকাশ দেশে দেশে ভাষায় ভাষায়। আর সে সবের বিনিময় চলতে থাকবে অনুবাদে, সম্মেলনে, সেমিনারে আর মেলায়; পঠনে আর পাঠনে শিক্ষায় আর দীক্ষায়। আর এখানেই দরকার সাহিত্যের আন্তর্জাতিকীকরণ।

আন্তর্জাতিকীকরণের দৃশ্যমান উপায়গুলো হচ্ছে–

  • অনুবাদের কার্যকর উদ্যোগ আর প্রণোদনার ব্যবস্থা, আন্তর্জাতিক পুরস্কার আর বৃত্তি বিশেষ করে আবাসিক লেখক বৃত্তি চালু করা, সেমিনার, সম্মেলন, কর্মশালা বইমেলা তো আছেই। আর এই সব কর্মযজ্ঞের জন্যে একক কোন প্রতিষ্ঠান উদ্যোগ নেবে সে ভরসায় থাকার দরকার নাই।
  • সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় যেমন বাজেট বা প্রণোদনার ব্যবস্থা করবে, একই সঙ্গে নগর কর্তৃপক্ষও নগরের ভাবমূর্তি, ঐতিহ্য বিনির্মাণের স্বার্থে আবাসিক লেখক বৃত্তি, অন্য দেশের নগরের সঙ্গে বন্ধুনগর বা টুইন সিটি বা ফ্রেন্ড সিটি চুক্তি করবে; একইভাবে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ও আন্তর্জাতিক অতিথি লেখক কর্মসূচি চালু করতে পারে।
  • আর জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র প্রকাশক সমিতিকে সঙ্গে নিয়ে অন্যান্য দেশের গ্রন্থকেন্দ্র বা সংস্কৃতি কর্তৃপক্ষ বা আর্টস কাউন্সিলের সংশ্লিষ্ট বিভাগের সঙ্গে অনুবাদ বা প্রকাশনা বিনিময়ে দ্বিপাক্ষিক চুক্তির ভিত্তিতে অগ্রসর হতে পারে। একই সঙ্গে মুক্তবাজার ধারণায় বই প্রকাশের সুযোগ তো অবারিত থাকছেই। আর অন্যান্য দেশের আন্তর্জাতিক বইমেলায় নিজেদের সাহিত্য, প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান আর লেখকদের তুলে ধরার জন্যে মেলার উপজীব্য দেশ হিসেবে স্থান করার জন্যে উপযুক্ত সময় নিয়ে কার্যকর যোগাযোগ স্থাপন আর আলোচনা চালিয়ে নেয়া জরুরি।
  • এক্ষেত্রে আমাদের দরকার সাহিত্যের মানসম্মত অনুবাদ, আর অনুবাদের জন্যে প্রয়োজনীয় বাজেট। অভিজ্ঞতা বিনিময়ের জন্যে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে স্বাধীনতা লাভ করা ছোট দেশ জর্জিয়া, নিকটের দক্ষিণ কোরিয়ার অভিজ্ঞতা আমরা কাজে লাগাতে পারি। জর্জিয়া মাত্র ৪৩ লক্ষ লোকের দেশ হয়ে ২০১৮ সালে ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলার মূল উপজীব্য দেশ হয়েছিল। দক্ষিণ কোরিয়া এ বছর গোথেনবার্গ বইমেলার মূল উপজীব্য দেশ।

হ্যা, আমাদের সাহিত্যের আন্তর্জাতিকীকরণ অবশ্যই সম্ভব, সেই ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে আলোচনার হালে পানি পাবার জন্যে শুরুটা করতে হবে রবীন্দ্রনাথকে দিয়ে এবং অগ্রসর হতে হবে তাঁর দেখানো পথেই। সেই সঙ্গে তুলে ধরতে হবে বিশ্বমানের নেতা হিসেবে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বঙ্গবন্ধুর পথ পরিক্রমা।

তবে আমাদের সাহিত্যের আন্তর্জাতিকীকরণে বাধাগুলো হচ্ছে অপেশাদার প্রকাশনা, অদক্ষ আমলা, লোভ, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি সেই সঙ্গে রবীন্দ্র উত্তর সাহিত্যপরিমণ্ডলে আবির্ভূত অনেক ব্যক্তিবিশেষ। এই কাতারে ড. মুহাম্মদ ইউনূস থেকে শুরু করে একেপেশে তসলিমা নাসরিন আর হাল আমলে যোগ হয়েছে আল্পবিদ্যা ভয়ঙ্করী ভূতের আছর করা একদল ব্লগার যারা নিজের গর্তে নিজেরাই এক একজন কুমির। তারা রবীন্দ্রনাথও মানেন না, বঙ্গবন্ধুকে জানেন না, শামসুর রাহমানকেও স্বীকার করেন না– তারা আবার যত বড় মুখ নয় তত বড় হাঁক দিয়ে বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্বকারী লেখক।

একটু স্পষ্ট করে বলি, ড. মুহাম্মদ ইউনূস যখন একজন ব্যাংকার হিসেবে অধ্যাপক হিসেবে ব্যবসায়ী হিসেবে, একজন নোবেলজয়ী হিসেবে বিদেশের কোনো সম্মেলন বা প্রাসঙ্গিক মেলায় অংশ নেবেন, ঠিক আছে। কিন্তু তিনি যখন আন্তর্জাতিক সাহিত্য উৎসবে বাংলাদেশের একজন সাহিত্যিক হিসেবে প্রতিনিধিত্ব করেন– তা অবশ্যই আমাদের সাহিত্যের আন্তর্জাতিকীকরণে বাধা হিসেবে ভূমিকা রাখবে, আমাদের মূলধারার সাহিত্যকে আড়ালে ঠেলে দেবে। তেমনিভাবে আমাদের যারা বাংলার খেয়ে বেড়ে উঠে দুই কলম ইংরেজিতে লিখে শুধু ইংরেজির জোরে দুর্বল সাহিত্যকে যখন আমরা আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশের সাহিত্য হিসেবে বা বাংলা সাহিত্যের প্রতিনিধি হিসেবে দেখব তখন আশাবাদী হবার কোনো কারণ নেই। বিদেশের মাটিতে আমাদের বাংলা সাহিত্যকে অনুবাদের মাধ্যমে তুলে ধরতে হবে এবং অবশ্যই তা কেবল ইংরেজিতে নয়। ঔষধশিল্পের এক নির্বাহী কবির চরম দুর্বল কবিতা ভারতের এক ইংরেজ কবির অনুবাদে নিজস্ব যোগাযোগ বলয় আর অর্থের জোরে বিদেশের উৎসবে দেদারছে প্রচার পাচ্ছে। এতে করে রবীন্দ্র উত্তর বাংলা সাহিত্যের দুর্বল চিত্র উঠে আসছে।

আন্তর্জাতিক দুনিয়ায় সাহিত্যপরিমণ্ডলে আমাদের কার্যকর বলয় বৃদ্ধি করারজন্যে শুরুতেই বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ আর মুক্তিযুদ্ধের সূবর্ণ জয়ন্তীকে সামনে রেখেএবারকার ঢাকা আন্তর্জাতিক বইমেলা ঘিরে এই প্রশ্নগুলো খোলাখুলি আলোচনা করা প্রয়োজন।তবে বিড়ালের গলায় ঘন্টা বাঁধতে হবে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় কমিটিকে। এজন্যেঅর্থমন্ত্রীর কানে পর্যাপ্ত বাজেটের প্রয়োজনীয়তার কথাটাও বলতে হবে কার্যকর উপায়ে।

এবার পৃথিবীর অন্যান্য দেশে আমাদের জাতির জনকের জন্মশতবর্ষ আর স্বাধীনতারসুবর্ণ জয়ন্তীকে সামনে রেখে ঢাকা শহরকে আমরা ইউনেস্কো সৃজনশীল সাহিত্যনগর ঘোষণা করারজন্যে আলোচনাও শুরু করতে পারি। এক্ষেত্রে ঢাকা মহানগর উত্তর আর দক্ষিণ কর্তৃপক্ষসহসংস্কৃতি মন্ত্রণালয়কে উদ্যোগ নিতে হবে। প্রসঙ্গক্রমে উল্লেখ করতে চাই পাশের কলকাতাশহর ইতোমধ্যে এই স্বীকৃতি অর্জন করেছে। আমরা তাদের সঙ্গে অভিজ্ঞতা বিনিময় করতে পারি।এই কর্মসূচির আওতায় আমেরিকার আইওয়াসহ পৃথিবীর প্রায় ৩০টি শহর এই স্বীকৃতি লাভ করেছে।আমরা পিছিয়ে থাকব কেন? এই যোগাযোগ বলয়ের আওতায় আমরা অন্যান্য শহর আর দেশের সঙ্গে চলমানলাগসই সাহিত্য বিনিময়ের সুযোগ লাভ করতে পারি।

আইওয়া হচ্ছে পৃথিবীর প্রথম ইউনেস্কো সৃজনশীল সাহিত্য নগর। হুমায়ুন আহমেদ,মোহাম্মদ রফিক, মঞ্জু সরকার, শিহাব সরকার, হাসনা জসীমউদ্দিন মওদুদ, রুবী রহমান এবংআনিসুল হক আইওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখক ফেলোশিপ লাভ করেছিলেন। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ছবিরদেশে কবিতার দেশে গ্রন্থে এই ফেলোশিপ নিয়ে বিশদ গল্প আছে।

আমাদের লেখক অনুবাদকরা যে সমস্ত আমন্ত্রণ বা আবাসিক বৃত্তি ও অন্যান্যনিমন্ত্রণের সুযোগ কাজে লাগাতে পারে। সে বিষয়ে একটু ধারণা দিয়ে এই লেখাটি শেষ করতেচাই। ইউরোপিয়ান সেন্টার ফর প্রেস এন্ড মিডিয়া ফ্রিডম সাংবাদিকদের জন্যে ছয় মাস থেকেএক বছর মেয়াদী ফেলোশিপ প্রদান করে।

লেদিগ ভবন- আন্তর্জাতিক আবসিক লেখক কর্মসূচি (Ledig House- International Writer's Residency Program)– নিউইয়র্কে অবস্থিত এই ভবনে দুই সপ্তাহের জন্যে পেশাদার একজন লেখক আবাসিক লেখক বৃত্তির জন্যে আবেদন করতে পারেন।

টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ের হ্যারি র‌্যানসম কেন্দ্র প্রতিবছর লেখক, শিল্পীসহসৃজনশীল পেশার ৫০ জনকে ফেলোশিপ দিয়ে থাকে। আমেরিকার আইওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিকলেখক কর্মসূচি পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে বেশ কয়েকজন লেখককে তিন মাসের জন্যে আবাসিকফেলোশিপ দিয়ে থাকে। কানাডার মানিটোকা বিশ্ববিদ্যালয়ও গল্প লেখালেখির আওতায় দীর্ঘ মেয়াদীঅতিথি লেখক ফেলোশিপ প্রদান করে।

ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলা তরুণ প্রকাশকদের ফেলোশিপ দেয়। অন্যান্যদের মাঝে বাংলাদেশেরপ্রকাশক রবিন আহসান এই ফেলোশিপ লাভ করেছিলেন। গোথেনবার্গ বইমেলা ও সুইডিশ আর্ট কাউন্সিলেরসহযোগিতায় বিদেশি প্রকাশক আর অনুবাদকদের ফেলোশিপ দিয়ে থাকে। বাংলাদেশ থেকে অনন্যা প্রকাশনারমনিরুল হক আর জার্নিম্যানের তারিক সুজাত এই ফেলোশিপ পেয়েছেন। তাছাড়া আরব আমিরাত আরকাতারের বইমেলাও বিদেশি অনুবাদকদের ফেলোশিপ দিয়ে থাকে।

ব্রাজিলের সাকাতার ফাউন্ডেশনও (Sacatar Foundation) বিদেশি লেখকদের আবাসিক ফেলোশিপ দিয়ে থাকে।

দিল্লীর সঙ্গম ভবন (Sangam House) আর সংস্কৃতি কেন্দ্রও (Sanskriti Kendra) লেখকদের আবাসিক ফেলোশিপ দেয়।

বেলজিয়ামের সেনেকি শহরের ইউরোপীয় বিশ্ববিদ্যালয় পৃথিবীর অন্যান্য দেশেরলেখক-অনুবাদকদের দুই সপ্তাহ থেকে ছয় সপ্তাহের জন্যে আবাসিক ফেলোশিপ প্রদান করে।

ফরাসি দেশের সাহিত্য অনুবাদের আন্তর্জাতিক কলেজও (www.attas.citi.org) এক সপ্তাহ থেকে তিন মাসের জন্যে পেশাদার অনুবাদকদের আবাসিক ফেলোশিপ প্রদান করে।

অতিথি ভবন নাজারে (www.meetingsaintnazare.com) অন্যান্য দেশের লেখক অনুবাদকদের আবাসিক ফেলোশিপ দিয়ে থাকে।

সুইডেনের গোথেনবার্গের নিকটবর্তীর স্ট্রমস্তাদ নগর কর্তৃপক্ষ অন্যান্য দেশের লেখকদের এক মাসের জন্যে আবাসিক বৃত্তি দিয়ে থাকে বাংলাদেশের শিল্পসমালোচক তকির হোসেন এই বৃত্তি পেয়েছিলেন। সুইডেনের ট্রনস শহরও আবাসিক ফেলোশিপ কর্মসূচিতে অন্যান্য দেশের লেখকদের আমন্ত্রণ করে থাকে। বাংলাদেশের কবি মুহাম্মদ সামাদ আর কাজল বন্দোপাধ্যায় এই ট্রনসের কর্মসূচিতে আমন্ত্রিত হয়েছিলেন। ফিনল্যান্ডের ভিলা সারকিয়া (Villa Sarkia) অন্যান্য দেশের লেখক অনুবাদকদের আবাসিক ফেলোশিপ প্রদান করে।

তাছাড়া আন্তর্জাতিক পেন যোগাযোগের আওতায় বিভিন্ন দেশে বেশকিছু আবাসিক লেখকবৃত্তির কর্মসূচি রয়েছে।

শেষ কথা হল আমাদের শুধু অন্যদেশের প্রদত্ত সুযোগগুলোর দিকে তাকালেই হবেনা, আমাদের নিজেদেরও সময় হয়েছে অন্যদেশের লেখক, প্রকাশক আর অনুবাদকদের জন্যে আবাসিকফেলোশিপ চালু করা। এজন্যে আমরা অন্যান্য দেশের সংস্কৃতি কেন্দ্র আর ঢাকাস্থ বিভিন্নদেশের দূতাবাসগুলোর সাহায্যে দ্বিপাক্ষিক যোগাযোগ ও আলোচনা শুরু করতে পারি। আমাদেরবিশ্ববিদ্যালয়সহ নানা একাডেমি আর প্রতিষ্ঠানে পর্যাপ্ত অবকাঠামো রয়েছে। প্রয়োজন শুধুসদ্ব্যবহার করা।

লেখাটি শেষ করার আগে আর একটি কথা বলতে চাই। আমাদের সাহিত্যের আন্তর্জাতিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে আমরা যেন কেবল ইংরেজির কাঠপণ্ডিতদের খপ্পরে আটকে না থাকি। পৃথিবীতে আরো অনেক ভাষা রয়েছে। আমাদের নজর যেন শুধু পশ্চিমেই না যায়, আমাদের দৃষ্টিটা পূর্বদিকেও ফেরাতে হবে। ওদিকেও ভাষা সাহিত্য আর অনুবাদ বিনিময়ের প্রয়োজন রয়েছে।