বেসরকারি বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বদলি প্রসঙ্গে

শাহআলম সরকার
Published : 16 Sept 2019, 12:29 PM
Updated : 16 Sept 2019, 12:29 PM

উন্নত রাষ্ট্র ও বঙ্গবন্ধুর জন্ম শতবার্ষিকীর দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে দেশ। বিশাল অর্জন কিন্তু কোথায় যেন হতাশার সুর। দুর্নীতি আর শিক্ষায় অস্থিরতা এই দুয়েই যেন আমরা পেরে উঠছি না। তার একটা কারণ হতে পারে নৈতিকতা চর্চার অভাব ও শিক্ষায় যুগোপযোগী সিদ্ধান্তহীনতা।

শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড এবং শিক্ষক এর কেন্দ্রবিন্দু। রাষ্ট্রের মহাকর্তারা এ মহাসত্যকে তাচ্ছিল্যের সাথে অস্বীকার করছে কিনা এই প্রশ্ন উঠছে। কেননা আজ যখন সেই শিক্ষকরা প্রেসক্লাবে মিছিল মিটিং তথা তাদের দাবি নিয়ে রাজপথে দাঁড়িয়ে থাকলেও কর্মকর্তারা বিন্দুমাত্র কর্ণপাত করতেও রাজি নন। অথচ এখানে দৃষ্টি না দিলে সব অর্জন হারিয়ে যাবে। নৈতিকতা ও সততা চর্চা ছাড়া কোনো অর্জন টেকসই হয় না। আজ কিনা সে ক্ষেত্রটিই অবহেলিত! রাষ্ট্রনায়ক হতে রাষ্ট্রের সর্বনিম্ন পেশায় যুক্ত সকলকেই শিক্ষকের সান্নিধ্যে আসতে হয়। তবুও শিক্ষকদের সাথে চলছে ছলনা। সেটা প্রাথমিক, মাধ্যমিক- উভয় ক্ষেত্রেই।

বিশেষ করে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের জীবনমান,  সামাজিক মর্যাদা ও অর্থনৈতিক দৈন্যতা শিক্ষার অপূর্ণতার অন্যতম কারণ কিনা ভাবনার বিষয়। শিক্ষকদের মনে অসন্তোষ রেখে শিক্ষার উদ্দেশ্য কি পুরোপুরি সফল হবে? দেশ আজ মধ্যম আয়ে। তবু ১০০০ টাকা বাড়ি ভাড়া, ৫০০ টাকা চিকিৎসা ভাতা এই নিয়ে মাধ্যমিক শিক্ষকের বাস্তবতা। এই টাকায় বাবা মায়ের ভরণপোষণ , সন্তানের লেখাপড়া ও সামাজিক নিরাপত্তা সবই প্রায়। এছাড়া শিক্ষা ভাতা, উৎসব ভাতা, পেনশন সবই দাবির পাতায়।

যদিও দেশ ৪৮ বছর পার করেছে। এখনও গ্রামের সুবিধাবঞ্চিত ও অবহেলিত জনগোষ্ঠীর দ্বারপ্রান্তে  পৌঁছায়নি জাতীয়করণ। উপজেলা সদরকে ছুঁয়ে গেছে বিছিন্ন জাতীয়করণ। অথচ বিপুলসংখ্যক মেহনতি স্বল্প আয়ের মানুষের বসবাস গ্রামে।

অপরদিকে দুর্গম হাওড়ের জন্য হাওর ভাতা চালু হল । কিন্তু বেসরকারি শিক্ষকদের এ থেকে বঞ্চিত করার বাহানাও চলছে সমানতালে।  কী অপরাধে অপরাধী বেসরকারি শিক্ষকরা? কখন হবে বৈরিতার অবসান?

বর্তমান নিয়োগ পদ্ধতিতে দেশের এক প্রান্ত হতে অন্য প্রান্তে এমপিওভুক্ত  শিক্ষকরা পরিবার পরিজন থেকে শত শত মাইল দূরে থেকে পেশাগত দায়িত্বশীলতার কারণে শিক্ষায় অবদান রাখছেন। শিক্ষকদের বদলির আকুতি সংশ্লিষ্টদের মন কাঁপাতে পারেনি। এত অবজ্ঞা যেখানে, সেখানে অস্থিরতা সৃষ্টি কি শিক্ষায় প্রভাব পড়ে না?

সরকারি,আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত এমনকি এনজিওতে বদলি কার্যকর। কিন্তু ১৯৯৫ সাল থেকে সকল শিক্ষানীতিতে বদলির বিষয়টি জোরালোভাবে  উল্লেখ থাকলেও অভাগা   শিক্ষকরা এখনও পায়নি সে সুবিধা।

শিক্ষকদের প্রাণের দাবি বদলি প্রথা চালু করলে শিক্ষায় বৈচিত্র্যপূর্ণ পরিবর্তন ও গতি আসতে বাধ্য। কেননা একই স্থানে দীর্ঘদিন চাকরি করলে স্থানীয় রাজনীতিতে জড়ানো,ম্যানেজিং কমিটির আস্থাভাজন বা বিরাগভাজন হওয়া, প্রধান শিক্ষক তথা অন্যান্য শিক্ষকদের সাথে নৈতিকতার দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়া, দলাদলি এমনকি একঘেঁয়ে মনোভাব পেয়ে বসে। স্থায়ীভাবে বসবাসের কারণে পরিবার থেকে বহুদূর  ও বহুকালের দূরত্ব তৈরি হয়।  তাই এসব বিবেচনায় এনে বদলি প্রথা করে শিক্ষাব্যবস্থাকে আস্থায় নিয়ে সোনার বাংলা বিনির্মাণে কার্যকরী পদক্ষেপ সময়ের দাবি। জানি না কোথায় আলোর দেখা মিলবে। তবুও আশাবাদী স্বাধীনতা অর্জনকারী রাষ্ট্র কখনও ভুল পথে চলতে পারে না।