রিটা রহমান: বিএনপি-র ঋণ শোধের গল্প

মারুফ আহমেদ
Published : 10 Sept 2019, 03:37 PM
Updated : 10 Sept 2019, 03:37 PM

১.

স্বৈরশাসক এরশাদের মৃত্যুর পর তার নির্বাচনী আসন (রংপুর-৩) শূন্য ঘোষিত হয়। শূন্য আসনে  উপনির্বাচনের ঘোষণা এলে শুরু হয় একের পর এক নাটক ৷ কখনোবা এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এরশাদপুত্র এরিকের রাজনীতিতে অভিষেক, পালকপুত্র সা'দ এরশাদের নির্বাচনের ঘোষণা, আবার কখনো এরশাদের ভাতিজা আসিফ শাহরিয়ারের বিতর্কিত সব কার্যকালাপ৷ 

একের পর এক খবরে যখন নির্বাচনের মাঠ সরগরম ঠিক তখনই গণমাধ্যমে খবর এলো এই উপনির্বাচনে বিএনপিও প্রার্থী দিচ্ছে। সংবাদ সম্মেলনে শীর্ষস্থানীয় নেতাদের উপস্থিতিতে মোট পাঁচজন মনোনয়নপ্রত্যাশীর মধ্যে চূড়ান্ত প্রার্থীর নাম ঘোষণা দিয়েছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতার বাইরে থাকা রাজনৈতিক দলটি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও জাতীয় চার নেতা হত্যার পালাতক আসামি মেজর (অব.) খায়রুজ্জামানের স্ত্রী রিটা রহমানকে চূড়ান্ত প্রার্থী করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। 

খবরটি অস্বাভাবিক কিছু না। চমকে যাওয়ার মতও কিছু হয়নি। জন্মের সময় থেকেই দলটি স্বাধীনতাবিরোধীদের প্রধান আশ্রয়স্থল৷ জামায়াতের সাথে রাজনীতির হিসেব বাদ দিলেও দলটি যুগ যুগ ধরে মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত শক্তি, সকল মৌলবাদী নেতা আর তাদের সন্তানদের আশ্রয়স্থল হিসেবে বিশেষ খ্যাতি অর্জন করে আসছে৷

কিন্তু রিটা রহমানের মনোনয়নের পেছনে আছে অন্য গল্প৷ নিজের দল পিপিরি-র জন্মের দশ মাসের মধ্যে বিলুপ্তি ঘোষণা করে বিএনপিতে বিলীন হয়ে মনোনয়ন পাওয়া রিটা-র বঙ্গবন্ধুর ও চারনেতার খুনির স্ত্রী হওয়া ছাড়াও আরো একটি পরিচয় আছে৷ নামের শেষে 'রহমান' শব্দটিতেই মিশে আছে ইতিহাসে আরেকটি অংশ। 

রিটা-র বাবা আর অন্য কেউ নন, রংপুর সরকারী উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে আশ্রয়গ্রহণকারী, ৭২সালে দালাল আইনে গ্রেপ্তার, জিয়ার প্রধানমন্ত্রী সমমর্যাদার সিনিয়র মন্ত্রী মশিউর রহমান যাদু মিয়া৷ যাদু মিয়া মওলানা ভাসানীর অন্যতম রাজনৈতিক ভাবশিষ্য। ক্যান্টনমেন্টে বসে জিয়া যে রাজনৈতিক দল করেছিলেন, তার অন্যতম প্রধান বেসামরিক স্থপতি ছিলেন যাদু মিয়া। 

২.

১৯৭৫ সালের ১১ নভেম্বর বেতার ও টেলিভিশন ভাষণে মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান বলেছিলেন, "আমি রাজনীতিবিদ নই। আমি একজন সৈনিক।… রাজনীতির সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই এবং আমাদের সরকার সম্পূর্ণ নির্দলীয় ও অরাজনৈতিক।" সেই সৈনিক জিয়াকে রাজনীতিবিদ জিয়াতে রূপান্তর করতে সব থেকে বেশি ভূমিকা রেখেছেন রিটা রহমানের বাবা মশিউর রহমান যাদু মিয়া।

জিয়াকে শুধু রাজনীতিবিদ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেই ক্ষান্ত হননি যাদু মিয়া, জিয়াকে জনপ্রিয় করে তুলতে অভিনব সব পদ্ধতি অবলম্বন করেছেন। 

 মশিউর রহমান যাদু মিয়ার ভাই মোখলেসুর রহমানের (সিধু ভাই) একটি সাক্ষাতকারকে উদ্ধৃত করে মহিউদ্দিন আহমদ লিখেছেন, "জিয়া বাংলা লিখতে-পড়তে জানতেন না। প্রথম দিকে তিনি বাংলায় যে বক্তৃতা দিতেন, সেগুলো উর্দুতে লিখতেন। তারপর সেটি দেখে বক্তৃতা দিতেন। তিনি ভালো করে বক্তৃতা দিতে পারতেন না। দিতে গেলে খালি হাত-পা ছুঁড়তেন।"

মোখলেসুর রহমানের সাক্ষাতকার গবেষক মহিউদ্দিন আহমদ তাঁর বইতে এভাবে তুলে ধরেছেন, "এসব দেখেটেখে যাদু একদিন আমাকে বললো যে, এ রকম হলে কী করে তাঁকে আমি চালিয়ে নেব? আমি বললাম, দেখো জিয়া বক্তব্য দিতে পারেন না ঠিক আছে। তিনি সবচেয়ে ভালোভাবে কী করতে পারেন, সেটা খুঁজে বের করো। জবাবে যাদু বললেন, হাঁটতে পারেন এক নাগাড়ে ২০ থেকে ৩০ মাইল পর্যন্ত। আমি বললাম এইতো পাওয়া গেল সবচেয়ে ভালো একটা উপায়, তুমি তাকে সঙ্গে নিয়ে পাড়াগাঁয়ে হাঁটাও। গাঁও- গেরামের রাস্তা দিয়ে যাবে আর মানুষজনকে জিজ্ঞেস করবে, কেমন আছেন? প্রেসিডেন্ট দেশের মিলিটারি লিডার, তিনি গ্রামের বাড়ি বাড়ি গিয়ে কানাকানচি দিয়ে ঘোরাঘুরি করছেন আর লোকজনের ভালো-মন্দের খোঁজ খবর করছেন, তাতেই তিনি জনপ্রিয় হয়ে উঠবেন।"

মোখলেসুর রহমানের ভাষ্য হচ্ছে, এভাবে দেখতে দেখতে জিয়াউর রহমান বক্তব্য দেয়াটাও রপ্ত করে ফেললেন। যেখানে কোনদিন ইউনিয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যানও যাননি, সেখানে খোদ দেশের প্রেসিডেন্ট যাচ্ছেন। সেটা এক বিশাল ব্যাপার।

"এসব দেখে গ্রামের লোকজন ভাবল, জিয়াউর রহমান এমন লোক, যিনি আমাদের খোঁজ খবর রাখেন," মোখলেসুর রহমানের সাক্ষাতকার এভাবেই উঠে এসেছে মহিউদ্দিন আহমদের বইতে।

৩.

কিন্তু রাজনৈতিক যাদু মিয়ার সাথে সৈনিক জিয়ার মিলল কিভাবে? কিভাবে দুইজন একত্রিত হলেন! সেই ঘটনাটা আরো বেশি আগ্রহোদ্দীপক। আমার কাছে এই লেখার সব থেকে চুম্বক অংশ এই মিলে যাওয়া, ঘটনার পরম্পরা

একদম শুরু থেকে শুরু করি।

দেশভাগেরও আগের কথা। বর্তমান বাংলাদেশের উত্তরবঙ্গ দিনাজপুর, রংপুর, ঠাকুরগাঁও, নীলফামারী তখন কৃষক আন্দোলনের আঁতুড়ঘর। রায়ত বিদ্রোহ, তোলাগন্ডি আন্দোলনের পর উত্তরের কৃষকেরা এবার ফুঁসেছে তেভাগার দাবিতে। আন্দোলনের নেতৃত্ব দিচ্ছে কমিউনিস্ট পার্টি। স্থানীয় জোতদারেরা তেভাগার সংগ্রাম কঠোর হস্তে দমন করতে মরিয়া হয়ে ওঠেন। এদের নেতা ছিলেন মশিউর রহমান যাদু মিয়া। তেভাগার এক পর্যায়ে জোতদারদের অতর্কিত হিংস্র আক্রমণের শিকার হয়ে শহীদ হন তন্নারায়ণ রায়। এ সম্পর্কে কমরেড নৃপেণ ঘোষ বলেন, "সবচেয়ে শেষে কাটা হয় যাদুমিয়াদের ধান। যেদিন ধানকাটা হবে তার আগেরদিন রাতে স্থানীয় নেতা তন্নারায়ণ রায় এক বর্গাদারের বাড়িতে বর্গাদারদের নিয়ে একটি বৈঠক করেছিলেন। সে বাড়িটি ছিল যাদু মিয়ার বাড়ির খুব কাছে। বৈঠক চলাকালে যাদু মিয়ার নেতৃত্বে ২৫/৩০ জনের একটি দল অতর্কিতে বন্দুক নিয়ে বর্গাদারদের আক্রমণ করে এবং এলোপাতাড়ি গুলি ছুঁড়তে থাকে। জোতদারদের একজন ত্বরিৎ গতিতে যেয়ে তন্নারায়ণের বুকে বন্দুক লাগিয়ে গুলি করে সবশুদ্ধ পালিয়ে যায়। তন্নারায়ণ সাথে সাথে মারা যান।"

কৃষক তন্নারায়ণ শহীদ হওয়া প্রসঙ্গে ওই অঞ্চলের তেভাগা আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক মণিকৃষ্ণ সেন বলেন, "সেদিন স্থানীয় কোন প্রোগ্রাম ছিল না। নেতারা বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে। সম্পূর্ণ সুস্থ না থাকায় আমাকে বিশ্রামে রাখা হয়েছে। সন্ধ্যাবেলা আমার 'ডেন' সংলগ্ন মাঠে পায়চারি করছিলাম একা একা। সে সময় গুলির আওয়াজ শোনা গেল, শব্দ শুনে মনে হলো প্রায় আধা মাইল দূরে। সংবাদের জন্য উদগ্রীব হয়ে আছি। কয়েক মিনিটের মধ্যে লাঠি হাতে জনৈক প্রৌঢ় মুসলিম কমরেড (নামটা স্মরণ নেই) এসে হাজির। জানালেন- 'খুব খারাপ খবর। জোতদারেরঘর, যাদু মিয়া (মশিউর রহমান) বন্দুকের গুলিত তন্নারায়নোক খুন করিচে। বারান্দাত বসি আছিল, টারীর মানুষ বাজারোত ইতি উতি, পুরুষরা কাহই আছিল না। লাশ বারান্দাত পড়ি আছে। বাচ্চাইয়েরঘর আগোত গেছিল, তারঘরোকও গুলি করিচে। পুলিশ আসিছে। তোমাক খবর দিবার আনু।'

পুলিশের প্রশ্রয়ে নিরস্ত্র তন্নারায়ণ রায়কে গুন্ডাবাহিনীর গুলি করে হত্যার ঘটনায় ক্ষুব্ধ জনগণ স্বতঃস্ফূর্ত বিক্ষোভ মিছিল বের করে 'হত্যার বিচার চাই, যাদু মিয়ার কল্লা চাই' শ্লোগানে আকাশ বাতাস কাঁপিয়ে তুললো।"

শহীদ তন্নারায়ণের সাথে প্রথম বেঈমানি তার তার কমরেডরাই। কিছুদিন বাদেই খুনি যাদু মিয়ার আশ্রয় হয় মওলানা ভাসানীর ন্যাপ।  ১৯৫৬সালে মাওলানা ভাসানী গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি ঘাটের সর্দারের চরে বৃহৎ কৃষক সমাবেশ করেন। শুরু হয় পুনরায় কৃষক সমিতি পুনর্জীবিত করার চেষ্টা। রংপুরে কৃষক সমিতি পূনর্গঠনের উদ্যোগে যুক্ত হন তেভাগার অন্যতম নেতা মণিকৃষ্ণ সেন। ভাসানীর নির্দেশে মণিকৃষ্ণ সেনের হাত ধরে ন্যাপে যাদু মিয়ার প্রবেশ ঘটে।

কমরেড শংকর বসু তার এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন- "রংপুর জেলা মুসলিম লীগের প্রভাবশালী নেতা মশিউর রহমান যাদু মিয়া-কে ন্যাপে নিয়ে আসার ক্ষেত্রে তার অগ্রজ মখলেসুর রহমান সিধু মিয়ার ন্যায় কমরেড মণিকৃষ্ণ সেনের ভূমিকাও ছিল প্রণিধানযোগ্য।"

যাদু মিয়ার সাথে মণিকৃষ্ণ সেনের রাজনৈতিক বন্ধুত্বে তেভাগার কর্মীদের প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায় খোদ মণিকৃষ্ণ সেনের এক সাক্ষাতকারে- "সে সময় রংপুর জেলা বোর্ডের চেয়ারম্যান ছিলেন মশিউর রহমান যাদু মিয়া। তিনি মুসলিম লীগেরও একজন প্রথম সারির নেতা ছিলেন। একদিন তিনি আমাকে বললেন, আমার সঙ্গে তার আলাপ-আলোচনা আছে। ডোমারে তখন দুর্ভিক্ষাবস্থা চলছিল। আমাকে সঙ্গে করে নিয়ে যেতে চাইলে আমি রাজি হলাম। তার সাথে ডিমলায় ও ডোমারে গেলাম। সে সময় তিনি আমার অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ হলেন। এরপরই তিনি ন্যাপে যোগদান করেন। ডোমারে দুইদিন অবস্থান করে এলাকার সামগ্রিক অবস্থা অবগত হলাম। ডিমলায় মশিউর রহমান যাদু মিয়া-র বাড়িতে যাওয়ায় ঐ এলাকার কৃষক কর্মীরা খুশি হতে পারেন নি।"

৪.

এবার সমীকরণের পালা। 

একটা ছোট ঘটনা বলি, আমি একবার এক ন্যাপ নেতার সাক্ষাৎকার নিয়েছিলাম, ভাসানীর অন্যতম রাজনৈতিক কর্মী এই মানুষটি মাওলানা ভাসানীর মৃত্যুর দিন পর্যন্ত তার পাশেই ছিলেন। সাক্ষাৎকারের শেষে তাকে যখন প্রশ্ন করা হয়েছিল, 'চাচা মাওলানা সাহেবের মৃত্যুর পর আপনারা জিয়াকেই কেন নেতা হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন'- ভদ্রলোক আমাদের একটা ঘটনা বলেছিলেন সেদিন। ভাসানীর অন্তিম মুহূর্তে মেজর জিয়া তাকে দেখতে হাসপাতালে এসেছিলেন। দিনভর হাসাপাতালে নিরাপত্তা বেষ্টনী, জেনারেলের আসার অপেক্ষা, অবশেষে তিনি এলেন। হুজুরের পাশে বসলেন, হুজুর জেনারেল জিয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলেছিলেন- 'বাবা তুমি তোমার এই পোশাক খুলে ফেল, জনগণের কাছাকাছি পৌঁছাতে পারবে, জনগণের নেতা হয়ে উঠতে পারবে।'

হুজুরের সেই মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়াকেই তার কর্মীরা হুজুরের খলিফা মনোনয়ন হিসেবে দেখেছিলেন। ভাসানীর মৃত্যুর পর তাই সবাই অলিখিতভাবে খলিফার একনিষ্ঠ কর্মী হয়ে গেলেন। (এই ব্যাখ্যাটা আমার নয়, উল্লেখিত সেই ভদ্রলোকের)

ইংরেজি আর উর্দু ছাড়া অন্য কোনও ভাষা না বোঝা জিয়া হয়ত সেদিন হুজুরের নসিহত ঠিক বুঝে উঠতে পারেননি। বুঝলেও হুজুরের আধ্যাত্মিক বাণী কিভাবে প্রয়োগ করবেন তা বুঝতে পারেননি। হুজুরের হয়ে সেই বোঝানোর কাজটা করেছিলেন আলোচিত রিটা রহমানের বাবা, জিয়ার অন্যতম থিংক ট্যাংক মশিউর রহমান যাদু মিয়া।

তাতে যাদু মিয়া ও জিয়াউর রহমান দুজনেরই লাভ ছিল। উল্লেখ্য যে, ১৯৭১ সালে মশিউর রহমান যাদু মিয়া ন্যাপের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৭৪ সালের ১৫ মে ভাসানী ন্যাপের অ্যাডহক কমিটি গঠন করা হয় এবং কেন্দ্রীয় ন্যাপ পুনরায় বিভক্ত হয়ে পড়ে। ১৫ জুলাই জাতীয় রিকুইজিশন কাউন্সিল অধিবেশন ডাকা হয়। দলের তরুণ বামপন্থী অংশ কাজী জাফর আহমদ ও রাশেদ খান মেননের নেতৃত্বে ১৯৭৪ সালের ১৭ নভেম্বর ইউনাইটেড পিপলস পার্টি (ইউপিপি) গঠন করে। কাজী জাফর আহমদ ও রাশেদ খান মেনন ইউপিপি গঠন করলে মূল ন্যাপের দায়িত্ব মশিউর রহমান যাদু মিয়ার উপর ন্যাস্ত হয়। ১৯৭৪ কাউন্সিল অধিবেশনে মওলানা ভাসানী সভাপতি ও যাদু মিয়া সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৭৫ সালে বাকশাল গঠন করলে ন্যাপ মোজাফফর ন্যাপ বিলুপ্ত করে বাকশালে যোগ দেন। আর মাওলানা ভাসানি ও যাদু মিয়ার নেতৃত্বে ন্যাপের বাকি অংশ বাকশালের তীব্র বিরোধিতা করে। বাকশালের বাইরে থাকা ন্যাপের নিবন্ধন বাতিল হয়ে যায়।

১৯৭৬ সালে জিয়াউর রহমান একটি রাজনৈতিক দল গঠন করার উদ্যোগ নিলে সারা বাংলাদেশে ন্যাপের সকল নেতা কর্মী নিয়ে মশিউর রহমান যাদু মিয়া ও জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) গঠন করেন।

উপরের সব কয়টি ঘটনা একবার পড়লে পাঠক হয়ত বুঝতে পারবেন বিএনপি-র গঠন থেকে প্রতিষ্ঠার প্রতি পরতে পরতে মিশে আছেন মশিউর রহমান যাদু মিয়া, এই মিশে যাওয়া এতটা গভীর আর সূক্ষ্ণ যে ইতিহাস সচেতন না হলে যাদু মিয়া-র রাজনৈতিক পরিচয় বুঝে ওঠা কঠিন হয়ে যায়। মশিউর রহমান যাদু মিয়ার প্রতি তাই বিএনপির ঋণের শেষ নেই। সেই ঋণ মেটাতেই বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় তিন নেতার হত্যার আসামী ও যাদু মিয়ার কন্যা রিটা রহমানকে মনোনয়ের ঘৃণিত সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। নতুন প্রজন্মকে আরেকবার দেখিয়ে দিয়েছে নিজেদের ভেতরের রূপ!