ফরহাদ মজহারের লেখার প্রতিক্রিয়া ডিজিটাল বিষোদগার

মোজাম্মেল বাবু
Published : 3 June 2010, 12:44 PM
Updated : 3 June 2010, 12:44 PM

'ডিজিটাল' শব্দের অর্থ 'ইলেকট্রনিক'। ইউটিউব, ফেইসবুক কিংবা চ্যানেল ওয়ান বন্ধ করা নিঃসন্দেহে এক একটি ডিজিটাল পদক্ষেপ, কিন্তু আমার দেশ পত্রিকার ডিক্লারেশন বাতিল হওয়ার সঙ্গে ডিজিটাল সংশ্রবটি কোথায়? তবে ফরহাদ মজহারের লেখাটিকে নির্দ্বিধায় 'ডিজিটাল বিষোদগার' বলা যেতে পারে, কেন না তা প্রকাশিত হয়েছে একটি ওয়েব মিডিয়ায়। বিষয়টি নিয়ে কিছু বলার আগে আমি ইউটিউব, ফেইসবুক, টুইটারসহ সকল ওয়েব সাইটকে অবারিতভাবে চলতে দেয়ার জন্য সরকারের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি। তথ্যপ্রবাহ আটকে দিয়ে 'অপতথ্য' মোকাবেলা করা যায় না, সে জন্য প্রয়োজন তথ্যের অবাধ চলাচল, কেবল সঠিক তথ্যই পারে ভুল তথ্যকে পরাজিত করতে, অন্য কিছু নয়।

হ্যাঁ, তিনি ঠিকই বলেছেন, 'প্রকাশকের নাম পরিবর্তনের বিষয়টি নিছকই আইনি প্রক্রিয়া।' অনুরূপভাবে কোনো পত্রিকার বৈধ প্রকাশক না থাকলে তার ডিক্লারেশন বাতিল হওয়াটাও একটি নিছকই আইনী প্রক্রিয়া, এখানে রাজনীতি খোঁজার সুযোগ নেই। আপাতত ভুলে যাওয়া যাক, আমার দেশ পত্রিকাটির রাজনৈতিক চরিত্র কিংবা উত্তরা ষড়যন্ত্রের নায়ক মাহমুদুর রহমানের আসল পরিচয়। তিনি কাদের অর্থে ও সমর্থনে 'একএগারো' আমলে আমার দেশ পত্রিকাটি দখল করে পাকিস্তানী রাজত্ব কায়েম করেছিলেন, সেটা আজকের আলোচ্য নয়।

আমি ফরহাদ মজহারকে একটা অতি সরল প্রশ্ন করতে চাই–একটি দৈনিকের প্রিন্টার্স লাইনে প্রকাশক হিসেবে যার নাম ছাপা হয় তিনি পত্রিকাটির দায়দায়িত্ব নিতে রাজি নন, প্রকাশনাটির কোনো সম্পাদকও নেই, ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক হিসেবে যার নাম মুদ্রিত হচ্ছে তার একটি দৈনিক পত্রিকার সম্পাদক হওয়ার মত অভিজ্ঞতা ও যোগ্যতা নেই, এ অবস্থায় অবৈধ প্রকাশনাটির দায় কে নেবে? আওয়ামী লীগ না হয় ফ্যাসিস্টই হলো, ফরহাদ মজহারের স্বপ্নের সরকার ক্ষমতায় থাকলে এ পরিস্থিতিতে কী পদক্ষেপ গ্রহণ করতেন?

দৈনিক পত্রিকা প্রকাশ করা কোনো ছেলেখেলা নয়, কিংবা তা নিছক রাজনৈতিক একটিভিজমও হতে পারে না। এটা অত্যন্ত দায়িত্বশীল একটি কাজ। প্রকাশক ও সম্পাদক উভয়ে পিতা ও মাতার মত যৌথভাবে এ দায় গ্রহণ করে থাকেন, প্রতিটি প্রকাশিত সংবাদ ও মন্তব্যের দায়দায়িত্ব তাদের ওপর বর্তায়। মাহমুদুর রহমান পত্রিকাটির প্রকাশক হাসমত আলীর মাথায় লবণ রেখে মনের সুখে বড়ই খেয়ে যাচ্ছিলেন, একের পর এক বানোয়াট ও মনগড়া সংবাদ প্রকাশ করে চলছিলেন। বিভিন্ন সময় তাকে এও বলতে শোনা গেছে–'আমাকে ধরবে কে, আমি প্রকাশকও না সম্পাদক না'?

আসলে মাহমুদুর রহমান সাংবাদিকও নন। তিনি যা করছিলেন তা ফরহাদ মজহারের ভাষায়, 'উগ্র আবেগ ও প্রতিহিংসাজনিত রাজনৈতিক সমর্থন।' এ অন্যায় ও জালিয়াতির অবসান হওয়া প্রয়োজন ছিল, হয়েছেও তাই। চ্যানেল ওয়ানের ব্যাপারটিও অনুরূপ। কিন্তু মালিকানার বিরোধের সুবাদে কেবল পত্রিকা কিংবা চ্যানেল বন্ধ করলেই সরকারের দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না, অনতিবিলম্বে প্রকৃত মালিক নির্ধারণ করে গণমাধ্যম দুটিকে সম্প্রচার/প্রকাশনায় ফিরিয়ে আনার মধ্যেই একটি সরকারের প্রকৃত কৃতিত্ব নির্ভর করবে। তবে বিষয়টি খুব সহজ হবে বলে মনে হয় না। কেননা আমার দেশ এবং চ্যানেল ওয়ান — দুটোই ঋণখেলাপী প্রতিষ্ঠান, ব্যাংকের দেনা পরিশোধ না করে শেয়ার ট্রান্সফারও সম্ভব নয়। সে কারণেই সম্ভবত হাসমত আলীর শেয়ার মাহমুদুর রহমানের নামে হস্তান্তর হচ্ছে না।

উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সাধারণ নাগরিকদের মনে আজ বড় প্রশ্ন উত্থাপিত হয়েছে, একটি ঋণখেলাপী প্রতিষ্ঠান কেবল 'গণমাধ্যম' হওয়ার কারণে কতখানি 'ইমিউনিটি' পেতে পারে? তাদের নৈতিক ভিত্তিটাই-বা কোথায়?