বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীকে ফেরত না পাওয়া কূটনৈতিক ব্যর্থতা নয় কি?

Published : 14 August 2019, 01:47 PM
Updated : 14 August 2019, 01:47 PM

বিশ্বে শুধু যেবঙ্গবন্ধু রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন তা না। বঙ্গবন্ধুর আগে-পরেঅনেক রাষ্ট্রপ্রধান বা সরকার প্রধান আততায়ীর হাতে অকালে প্রাণ দিয়েছন। অধিকাংশক্ষেত্রেই যারা প্রাণ দিয়েছেন তারা সৎ নিষ্ঠাবান ও জনপ্রিয় ছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রেরদুজন খুব জনপ্রিয় রাষ্ট্রপতি হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। একজন ছিলেন রিপাবলিকানদলের ষোড়শ রাষ্ট্রপতি আব্রাহাম লিংকন। আর দ্বিতীয় জন হলেন ডেমোক্র্যাট দলেররাষ্ট্রপতি জন এফ কেনেডি। প্রথম জনের হত্যাকারীকে সনাক্ত করা গেছে এবংহত্যাকাণ্ডের বিচার হয়েছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে জন এফ কেনেডির হত্যাকারীকেসনাক্ত করা যায়নি। সনাক্ত করা যায়নি বললে ভুল হবে বা সত্যের অপলাপ হবে। সত্যটাহলো তার হত্যাকারীকে সনাক্ত করার চেষ্টা করা হয়নি বরং মূল পরিকল্পনাকারীদের এবংহত্যাকারীকে কৌশলে দূরে রাখা হয়েছে।

এ ব্যাপারে আজবিস্তারিত লিখব না কেননা এটি নিয়ে আজকের লেখা নয়। কেনেডি হত্যার ক্ষেত্রেরাষ্ট্রযন্ত্র পুরোপুরি জড়িত ছিল। যেমন বঙ্গবন্ধু হত্যার ক্ষেত্রেও রাষ্ট্রযন্ত্রসক্রিয় ছিল। আর জড়িত ছিল আন্তর্জাতিক শক্তি। আমেরিকা, পাকিস্তান ও চীনকে সন্দেহ করা হয়।

তবে প্রথমদুইটা দেশের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ সন্দেহাতীতভাবেই পাওয়া গেছে। অনেক প্রতিকূলতাপেরিয়ে বঙ্গবন্ধু হত্যার আমরা আংশিক একটা বিচার করতে পেরেছি। মূল পরিকল্পনাকারী ও বেসামরিক যারা জড়িত ছিল তারা এই বিচার ব্যবস্থা থেকে পারপেয়েছে। এখানেও রাষ্ট্রের একটা অংশ সক্রিয় ছিল এবং তারা সফল হয়েছে। একজন সাবেকসেনাপ্রধান এবং পরবর্তীতে রাজনীতিবিদ তাকে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়ামের এক সদস্য বঙ্গবন্ধু-হত্যা নিয়ে দোষারোপ করেছেন করেছেন। পরবর্তীতে উভয়ে উভয়ের দিকে অঙ্গুলিনির্দেশকরেছন। এখান থেকেই পরিষ্কার যে সামরিক বাহিনীর কর্তারা এর সাথে জড়িত ছিল এবংরাজনীতিবিদরাও। কিন্তু চক্রান্তকারী রাজনীতিবিদদের ও সামরিক বাহিনীর কর্তাদেরবিচারের আওতায় আনা যায়নি এটা সরকারের বড় ধরনের ব্যর্থতা।

এরপরও সরকারকেসাধুবাদ দিতে হয় এজন্য যে তারা আংশিক বিচার অন্তত করতে পেরেছে। অনেক দেশ রাজনৈতিকহত্যার ক্ষেত্রে আংশিক বিচারও করতে পারেনি। যুক্তরাষ্ট্রের কথা আগেই বলেছি, এই দলে আছে সুইডেন। ১৯৮৬ সালে সুইডেনের একজন জনপ্রিয় প্রধানমন্ত্রী ওলোফপালমেকে আততায়ী গুলি করে হত্যা করেছিল। তিনি কোনও রকম নিরাপত্তাকর্মী ছাড়াইসস্ত্রীক সিনেমা দেখতে গিয়েছিলেন। একজন প্রধানমন্ত্রী কতটা সৎ, সাহসী ও জনগণকে বন্ধু ভাবলে এমন অরক্ষিত অবস্থায় সিনেমা দেখতে যেতে পারেন!একই জাতীয় কাজ বঙ্গবন্ধুও করেছেন। ধানমণ্ডির অরক্ষিত বাসভবনে রাষ্ট্রপতিপরিবারবর্গসহ অবস্থান করেছেন, সকল পরামর্শ উপেক্ষা করে।যতদূর জানি বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছাও ধানমণ্ডির বাসভবন ছেড়ে বঙ্গভবনে যেতে রাজিহননি। তার যুক্তি ছিল- বঙ্গভবনের জাঁকজমকপূর্ণ পরিবেশে তাদের সন্তানেরা বিলাসীহয়ে উঠতে পারে। আমি বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতার সিদ্ধান্তকে সম্মান জানাই। কিন্তু মাঝেমাঝে মনে হয় যদি বঙ্গবন্ধু বঙ্গভবনে থাকতেন তাহলে হয়তো তার হত্যাকাণ্ড রোধ করাযেত। আর আমরা অকালে অভিভাবকহীন হতাম না, এগিয়ে যেত দেশ অনেক অনেক গুণ।

সুইডেনেরতৎকালীন প্রধানমন্ত্রী প্রয়াত পালমে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড থেকে শিক্ষা নেননি। তিনি অরক্ষিত থেকেছেন এবং অকালে জীবন দিয়েছেন। ৩৩ বছর পার হয়ে গেল তারহত্যাকাণ্ডের বিচার করতে পারেনি সুইডেন। ১৪/১৫ বছর আগে পত্রিকায় পড়েছিলামসুইডেনের তৎকালীন পুলিশ প্রধান বলেছেন তারা আশাবাদী খুনিকে খুঁজে বের করবেন। তবেএখন পর্যন্ত আমাদের কাছে তেমন কিছুই দৃশ্যমান না। বঙ্গবন্ধুর পরেও বেশ কয়েকজনসরকার প্রধান ও রাষ্ট্রপ্রধানসহ বেশ কিছু রাজনীতিবিদ হত্যার শিকার হয়েছেন। তাদেরমধ্যে আছেন- আনোয়ার সাদাত, ইন্দিরা গান্ধী, রাজীব গান্ধীসহ অনেকেই।

বঙ্গবন্ধুছাড়া বাকি যারা হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন তারা কেউই সদ্য স্বাধীনতাপ্রাপ্ত একটারাষ্ট্রের প্রধান ছিলেন না। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার উদ্দেশ্য ছিল সদ্য স্বাধীনতাপ্রাপ্ত দেশটার গণতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ, প্রগতিশীল নীতি আদর্শকে গুড়িয়ে দেওয়া। অন্যান্য রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের মতোদ্বিপক্ষীয় কোনও শত্রুতা বা ব্যক্তিগত লাভের জন্য এ হত্যাকাণ্ড ঘটেনি।স্বাধীনতাবিরোধী প্রতিক্রিয়াশীল শক্তি ও পরাজিত শক্তি তাদের দেশীয় ও আন্তর্জাতিকমিত্রদের সমন্বয়ে এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছিল। শুধু বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেই তারা ক্ষান্তহয়নি। তার পরিবারবর্গ ও আত্মীয়-স্বজনকেও খুনিরা বাদ রাখেনি। পরবর্তীতে তারাবঙ্গবন্ধুর চার সহযোগীকেও হত্যা করেছে জেলের মধ্যে। বাংলাদেশের প্রগতিশীল চরিত্রকেরুখে দেবার জন্য এটা ছিল সুপরিকল্পিত। এই হত্যাকাণ্ডে সরাসরি লাভবান হয়েছে এদেশেরখুনি চক্র ও পরাজিত শক্তি আর আন্তর্জাতিক কিছু শক্তি। যেমন- চীন, যুক্তরাষ্ট্র ওআরব বিশ্বের দেশসমূহ। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর চীনও যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে তাদের একতরফা বাজার বানিয়েছে, যা এখনো বিদ্যমান। আর মধ্যপ্রাচ্য তাদের সংস্কৃতি রপ্তানি করেছে, আর নিম্নমানেরজ্বালানি তেল সরবরাহ করেছে। যা পাকিস্তান আমলে তারা পারেনি। অতএব সন্দেহাতীতভাবেবলা যেতে পারে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড দ্বিপক্ষীয় কোনও বিষয় ছিল না।

সুইডেনের মতএকটা দেশ ওলোফ পালমের হত্যাকারীকে খুঁজে না পাওয়া ও তার বিচার না করতে পারা সেদেশের জন্য লজ্জার। নাকি ব্যাপারটা এরকম সরকার এই খুনের বিচারে অনাগ্রহী ছিল, কোন অদৃশ্য কারণে। যেমন অনেকেই মনে করেন প্রিন্সেস ডায়ানাও হত্যাকাণ্ডের শিকারহয়েছেন। এই হত্যাকাণ্ড বা দুর্ঘটনার তদন্তকে বাধাগ্রস্ত করেছে ব্রিটেনের রাজপরিবার। ডায়ানার বন্ধু দোদি আল ফায়েদের বাবা সে অভিযোগ করেছেন অনেকবার। তাছাড়াওঅনেক পত্রিকা বিভিন্ন সময়ে রাজ পরিবারের দিকে অঙ্গুলিনির্দেশ করেছে। এটা সত্যি প্রিন্সেসডায়ানার গণতান্ত্রিক আচরণ রাজপরিবারের ভিতকে নাড়িয়ে দিয়েছিল। তিনি বলেছিলেন, "ব্রিটেনের নয়, জনগণের হৃদয়ের রানী হয়েথাকতে চাই।" এ কথায় তো রাজতন্ত্রের ভিতকে নাড়িয়ে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট ছিল।কিন্তু ওলোফ পালমে কি এমন কোন পদক্ষেপ নিয়েছিলেন যে সুইডিশ রাজতন্ত্র তার উপরবিরক্ত হয়েছিল, যার কারণে তাকে পৃথিবীথেকে সরিয়ে দেয়া হল? যার ফলে এই বিচারকে স্থবির করে দেওয়া হয়েছে? তা না হলেসুইডেনের মত আধুনিক একটা দ্বীপ দেশ থেকে হত্যাকারী তাদের প্রধানমন্ত্রীকে হত্যাকরে পালিয়ে যাওয়া সম্ভব না। আর ৩৩ বছরেও সে দেশের পুলিশ খুনিকে ধরতে পারল না!রাষ্ট্রযন্ত্র যদি কোন খুনের সাথে জড়িত থাকে সে হত্যার বিচার হয় না।

বঙ্গবন্ধুহত্যার পিছনে সুস্পষ্টভাবেই বলা যায় রাষ্ট্রযন্ত্র এবং আন্তর্জাতিক চক্র জড়িতছিল। যার কারণে রাষ্ট্র সংবিধানে মৌলিক অধিকারের পরিপন্থী এবং অবৈধ এক আইন পাসকরেছিল। যে আইন ক্ষতিপূরণ অধ্যাদেশ হিসাবে পরিচিত ছিল। যদিও সংবিধানের মৌলিক আইনেরপরিপন্থী এই আইনের কোনও ভিত্তি ছিল না। কিন্তু তারপরও ২১ বছর ধরে এই আইনের কারণেবিচার করা যায়নি। কারণ রাষ্ট্রযন্ত্রই সেখানে নির্বাক ছিল। আর সেই সময়ে বাংলাদেশেরযেসব ব্যক্তি নিজেদের আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন আইনজীবী বলে দাবি করেন, তারাও কোনও ব্যাখ্যা দেননি। কারণ তারাও কোন না কোনভাবে তৎকালীন শাসকদের কাছথেকে সুবিধা নিয়েছেন বা পেয়েছেন।

১৯৯৬ সালেরাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর সরকার বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের আংশিক বিচার করেছে, জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক শক্তির রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে। এই বিচার শুরু করতেপারাটাই কঠিন ছিল। রায় দেওয়ার সময় বিচারক দিক নির্দেশনা দিয়েছিলেন একটা কমিশনেরমাধ্যমে আন্তর্জাতিক চক্রান্তকারীদের খুঁজে বের করতে। আর বেসামরিক চক্রান্তকারীরাদুর্বল তদন্তের কারণে যে পার পেয়েছে সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। একটা পূর্ণাঙ্গবিচার না পাওয়ার অতৃপ্তি আমাদের আছে। কিন্তু এরপরেও সরকারকে ধন্যবাদ একটা বিচারকরতে পারার জন্য। এরপরের প্রশ্ন হলো দণ্ডপ্রাপ্ত আসামির শাস্তি কার্যকর করা যায়নি,আসামিরা পলাতক থাকার কারণে।

এই পলাতকআসামিদের নিয়ে একটা রাজনীতি চলছে দীর্ঘদিন ধরে। সব দেশের সাথে আমাদের বন্দিবিনিময় চুক্তি না থাকায় আমরা দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের ফিরিয়ে আনতে পারছি না। আরযেসব দেশে মৃত্যুদণ্ড নিষিদ্ধ সেসব দেশ তাদের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার জন্যআসামিদের হস্তান্তর করতে পারবে না। যুক্তরাষ্ট্রে মৃত্যুদণ্ড বৈধ হলেও তারা খুনিকেহস্তান্তর করেনি। বরং এক খুনিকে তারা রাজনৈতিক আশ্রয় দিয়ে সেখানে বসবাস এর বৈধতাদিয়েছে। খুনিদের মধ্যে আরও কয়েকজন অন্যান্য দেশে পালিয়ে আছে। কেউ কেউ বলেন তারানাকি অবস্থান পরিবর্তন করেই চলেছে। একসময় খুনিদের স্বর্গরাজ্য ছিল লিবিয়া, তাদেরসে স্বর্গরাজ্যে রাজার পতন হয়েছে। অনেকে মনে করেন কোন কোন খুনি হয়তো পাকিস্তানেআছে। সেটা অস্বাভাবিক কিছু না। একজন যুদ্ধাপরাধী পাকিস্তানে পালিয়ে গেছে। এছাড়াওঅনেক জঙ্গি নেতা পাকিস্তানি পালিয়ে আছে। সেক্ষেত্রে পাকিস্তানে তারা আশ্রয় পাবেসেটাই স্বাভাবিক, যে সরকারই সেখানে ক্ষমতায়থাকুক না কেন। যদি পাকিস্তানে কোনও খুনি থেকে থাকে তাকে আমরা ফিরিয়ে নিয়ে আসতেপারবো সেটা আমার মনে হয় না। ভারতের মতো একটা শক্তিশালী রাষ্ট্রই পাকিস্তান থেকেদাউদ ইব্রাহিমকে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে পারছে না। সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশ পারবে সেটাআমি মনে করি না।

সবচেয়ে বড়কথা আমাদের সরকারের কাছে সঠিক কোনও তথ্য নেই খুনিরা কে কোথায়! আগে আমরা শুনেছিদুই খুনি ভারতে পালিয়ে আছে কিন্তু পরে তার সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায়নি। বর্তমানসময়ে ভারতের সাথে বাংলাদেশের যে সম্পর্ক তাতে ভারত দ্রুতই খুনিদের হস্তান্তরকরতো। সাত খুনের হত্যার পরিকল্পনাকারীকে সহ বেশ কয়েকজন দুষ্কৃতিকারীকে তারাহস্তান্তর করেছে। আর জাতির জনকের খুনিকে ভারত অন্তত কোনোভাবেই প্রশ্রয় দেবে না।কারণ এটা বাংলাদেশের জনগণের জন্য একটা স্পর্শকাতর বিষয়। আমাদের সরকারের কয়েকজনমন্ত্রী অতীতে আশ্বাস দিয়েছেন এবং এখনও আশ্বাস দিয়ে যাচ্ছেন খুনিদের ফিরিয়ে আনারব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন। কিন্তু এটা আমার কাছে খুব বিশ্বাসযোগ্য মনে হয় না বিগতদিনের বাস্তবতার আলোকে।

যুক্তরাষ্ট্রেরসরকার পরিবর্তিত হয়ে এখন রিপাবলিকানরা ক্ষমতায়, তারা খুনিকে হস্তান্তর না করে রাজনৈতিক আশ্রয় দিয়েছে। এর আগে ডেমোক্রেটরাযখন ক্ষমতায় ছিল তখন একজন খুনিকে হস্তান্তর করেছিল এবং তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকরওহয়েছে। এক্ষেত্রে বলতে বাধ্য হচ্ছি সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রীরা ব্যর্থহয়েছেন কূটনৈতিক তৎপরতার মাধ্যমে খুনিকে ফিরিয়ে আনতে। যুক্তরাষ্ট্র কিন্তু কিছুসন্ত্রাসীকে তাদের হাতে তুলে দিতে বাংলাদেশকে বাধ্য করেছে, তাদের প্রভাব খাটিয়ে। বাংলাদেশ যেসব সন্দেহভাজন সন্ত্রাসীদের এফবিআই এর হাতেতুলে দিয়েছে সে ব্যাপারে কারণ দর্শাতে বলেছিল উচ্চ আদালত।

যুক্তরাষ্ট্রথেকে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীকে ফিরিয়ে না নিয়ে আসতে পারা আমাদের কূটনৈতিকব্যর্থতা। আর কানাডার ক্ষেত্রে সরকারের কিছু করার নেই। কিন্তু সরকার তাদের কাছেএকটা যুক্তি উপস্থাপন করতে পারে যে, তোমাদের দেশে মৃত্যুদণ্ডনিষিদ্ধ সেটা মেনে নিলাম। কিন্তু একটা খুনের আসামিকে তোমরা জামাই আদরে স্বাধীনভাবেচলাচল করতে দিতে পারনা। তাকে মৃত্যুদণ্ডের পর তোমাদের দেশে যে সর্বোচ্চ শাস্তি আছেসেটা দিয়ে জেলে রাখ। আমি জানি না সরকার এ জাতীয় কোনও প্রস্তাব তাদের কাছে রেখেছেকিনা। তবে আমি আমার জার্মান উকিল থমাস ডিটসকে একসময় এই ব্যাপার নিয়ে প্রশ্নকরেছিলাম। তিনি আমাকে বলেছিলেন, "তোমাদের সরকারএই মামলার সমস্ত কাগজপত্র পাঠিয়ে তাদেরকে এই অনুরোধ রাখতে পারে। এমনকি যদিজার্মানিতেও কোন খুনি থেকে থাকে তাহলে জার্মান সরকারকেও তারা সে অনুরোধ জানাতেপারে। একজন খুনির স্বাধীনভাবে চলাচল করতে পারার কোন অধিকার নেই।"

কিছুদিন আগেইংল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন অভিযোগ করেছিলেন, "বিশ্বের বিভিন্ন দেশের দুষ্কৃতিকারীরা লন্ডনে জড়ো হয়েছে।" কথাটা ঠিক, এ সমস্যা তাদের আইনের কারণে সৃষ্টি হয়েছে। তারা নিজেরাই খুনি সন্ত্রাসী ওমৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের জন্য লন্ডনকে খুনিদের অভয়ারণ্য তৈরি করে রেখেছে।আমাদের দেশের বেশ কয়েকজন যুদ্ধাপরাধীসহ দুষ্কৃতিকারীরা সে দেশে আশ্রয় পেয়েছে।অতি মানবতাবাদী কিছু দেশের আইন সন্ত্রাসীদেরকে সন্ত্রাসে উৎসাহিত করছে। সন্ত্রাসীও দুষ্কৃতিকারীরা এই আইনের সুযোগ নিয়ে সেখানে আশ্রয় গ্রহণ করছে।

আংশিক বিচারেরজন্য সাধুবাদ দেওয়া স্বত্ত্বেও খুশি হব সরকারের মন্ত্রীরা যদি বঙ্গবন্ধুর খুনিদেরফিরিয়ে আনার ব্যাপারে রাজনৈতিক বক্তব্য বা মিথ্যা আশ্বাস আমাদের না দেন। তারা বলেদিলেই পারেন সরকার বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের বিচারের প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ছিল, সেটা করেছে। কিন্তু বিভিন্ন দেশের আইনের কারণে তাদের ফিরিয়ে আনা সম্ভব না।

আর কিছু সংগঠনআছে রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে জন্য নিমিত্তে মাঝে মাঝে কানাডিয়ান দূতাবাসে স্মারকলিপিদিতে যান দুই-চার জন লোক নিয়ে। এসবস্মারকলিপি কানাডার সংবিধান পরিবর্তন করতে পারবে না। খুনি দণ্ড মাথায় নিয়ে ঘৃণ্যহয়ে এদেশে সেদেশ ঘুরছে এটাও এক রকম শাস্তি।

আর একজন খুনিরকথা বলা হয়েছে সে জিম্বাবুয়েতে মারা গেছে। ঢালাওভাবে এটা বিশ্বাস না করে এগুলোখতিয়ে দেখা উচিত যে, সে পরিচয় গোপন করেপালিয়ে আছে কিনা অন্য কোথাও। এমনও হতে পারে সে কসমেটিক সার্জারি করে চেহারা বদলকরে ফেলেছে। সরকারের উচিত তার কঙ্কালের ডিএনএ রিপোর্ট চাওয়া জিম্বাবুয়ে সরকারেরকাছে।

বঙ্গবন্ধুকেহত্যার পর বিভিন্ন সামরিক শাসকেরা তার মৃত্যুদিন পালন করাই আমাদের জন্য কঠিন করেতুলেছিল, জাতীয় শোক দিবস তো দূরেথাক। তারপর ক্ষমতার পট পরিবর্তনের সাথে সাথে আমরা জাতীয় শোক দিবস হিসেবে এখনদিনটাকে পালন করি। সরকার পরিবর্তনের সাথে সাথে আবার বাধার সৃষ্টি হয়।

বিএনপি ক্ষমতায় আসলে দিনটাকে জাতীয় শোক দিবস হিসেবে পালন করতে দেয় না। তখন আমাদের সাংবাদিকদের লেখার ধরন এবং চেহারা পাল্টে যায়। এখন দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকার কারণে একটা জিনিস লক্ষ করছি অগাস্ট মাস আসলেই বলা হয় শোকের মাস। আগে কিন্তু এই জাতীয় কথাবার্তা সাংবাদিকরা লিখতেন না। এটা আমার কাছে অতিরিক্তই মনে হয়। বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর ৪৪ বছর পরে পুরো অগাস্ট মাসকে শোকের মাস হিসাবে দেখার কি যৌক্তিকতা আছে আমি জানিনা। আমার কাছে মনে হয় বঙ্গবন্ধুর মৃত্যু দিনটাকে সম্মানের সাথে, ভাব-গাম্ভীর্যের সাথে, সার্বজনীনভাবে পালন করতে পারাটাই জরুরি। এই জাতীয় শোক দিবসে দলমত নির্বিশেষে একত্রে যাতে পালন করতে পারি সেদিকে নজর দেওয়া উচিত। একটা মাসকে শোকের মাস হিসাবে পালনের চেয়ে জরুরি বঙ্গবন্ধুর উপর গবেষণা করে যে সকল কাহিনী এখনও যা অজানা আছে তা উন্মোচিত করা, বঙ্গবন্ধু যে লক্ষে কাজ করেছেন সেই তা অর্জনে তার নীতি আদর্শের বাস্তবায়ন করা। তাহলেই তার আত্মা শান্তি পাবে আর বাংলাদেশ তার লক্ষ অর্জন করবে দ্রুত।