নগরে দোল খায় কৃষকের ভূত

Published : 10 August 2019, 12:18 PM
Updated : 10 August 2019, 12:18 PM

দুই জমির মাঝে যে সাপের মতো সরু আইল, তার উপর দিয়ে বাংকুয়া কাঁধে কৃষক চলেছে হাটের পথে, বাংকুয়ার দুইপাশে দোল খাচ্ছে দড়িতে বাঁধা পসরা, হোক তা চাল-ডাল কি তরি-তরকারি, তারপর হাটে গিয়ে বসছে খোলামাঠের সেই পরিচিত জায়গায়, বিক্রয় সাঙ্গ হলে কেনার যা থাকে তা নিয়ে ফিরে যাচ্ছে বাড়ির পথে, সন্ধ্যার সেই পথে সঙ্গী তার গাঁয়েরই মানুষ, তারা গান গায় বা গায় না, বা কেচ্ছা বলে যায়, আর তা শুনতে শুনতে পথ শেষ হয়ে আসে― বেচা-কেনার এই দৃশ্য পুরোনো হয়েছে সেই কবে। এখন কি কৃষক বাংকুয়ায় পসরা টানে হাটের পথে? আর হাঁটার যে সর্পিল পথ সেটাকে একটু চওড়া করে ইতিহাসের কোন বাঁকে সেটাতে গরু কি মোষের গাড়ি চলতে শুরু করেছিল, আর এখন তার দখল কি চলে যায়নি যন্ত্রের কাছে? শুধু কি তাই, গলার যে গান সেটাও তো হারিয়ে গেছে অতীতের গর্ভে। কৃষকের ছেলে কি আর কৃষক আছে? না-কি তার মেয়ে কি বউ সেই আগের দিনের মতো কলস নিয়ে নদীর দিকে ছোটে! মাত্র তিরিশ কি পঞ্চাশ কি সত্তর বছর, গ্রামের চেনা সেই দৃশ্যটি আর নেই। চাইলেও কার সাধ্য তাকে ফিরিয়ে আনে!

গ্রামেরই যেখানে এই হাল, সেখানে একশ কি দুইশ কি তিনশ বছর আগে মফস্বল নামে যে নগরায়নের সূত্রপাত হয়েছিল বাংলাদেশে, তার কী অবস্থা? জেলা বা মহকুমায় তবু সড়ক-টরক বলে কিছু না কিছু ছিল, না থাকলে টাউন হয় কীভাবে! কিন্তু থানা আসলে ছিল গ্রামেরই আরেক রূপ। তা গ্রাম না-কি শহর, সেই ব্যবধান ঘুঁচাতে থানাকে অপেক্ষা করতে হয়েছিল উপজেলা হওয়া অবধি। তখন সেখানে সড়ক আসে, তার সাথে তাল দিয়ে আসে ইশকুল, কলেজ আর শিক্ষিত মানুষদের পদচারণা, গেঁয়ো বা চান্ডালী কথার জায়গায় শোনা যেতে থাকে শুদ্ধ উচ্চারণে বাংলা। না, ইংরেজি তখনও উপজেলায় ঢোকেনি। এখনকার কথা অবশ্য আলাদা; এখন মহকুমা নেই, আর থানাগুলোও কেমন করে জানি উপজেলা হওয়ার পরে ঢঙ ও সঙ-এ সেই আগেরদিনের মহকুমাকে ছাড়িয়ে যেতে শুরু করেছে। শুধু কি তাই? ইংরেজিও ঢুকে পড়েছে উপজেলায়, সেখানে এখন কিন্ডারগার্টেন। ভাবা যায়? তা না ভাবতে চাইলে না ভাববেন, কিন্তু এখন তো শোনা যাচ্ছে গ্রামই হয়ে যাবে শহর। তা, সেটা যারা মানেন না, বা মানতে চান না, তারা কিন্তু বলে ভিন্ন কথা― আরে না, ওসব শহর টহর না, কেবল শহরের সুবিধাগুলো গ্রামে পৌঁছে যাবে মাত্র। শহরের সুবিধা মানে ধরেন যে বিদ্যুত আর পাকা রাস্তা যদি গ্রামে আসে, সাথে ইন্টারনেট, তো গ্রামের মানুষ ঘরে বসে বিশ্বের কাছাকাছি থাকবে, চাইলে প্রবাসে হোক কি বড় বড় শহরে, সেখানকার আন্ডাবাচ্চাদের সাথে কথা বলাও যাবে, চাই কি ভিডিওতে। এটাতো সম্ভব? তো অর্থনীতিতে নোবেলজয়ী অমৃত সেন গ্রামের এই অবস্থা দেখে কি বলতে কি বলেন, তৃপ্তি বলে কথা! আর এই তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলতে তুলতে সেই কৃষক যখন আসে উপজেলা কি জেলা শহরে, তখন কিন্তু তৃপ্তিটা গিয়ে ঠেকে তলানীতে। সকল নাগরিক উপদ্রব তখন একসাথে হামলে পড়ে তার উপরে – শব্দ, ধোঁয়া, ধুলা থেকে শুরু করে যানজট, এমনকি জনজটও। আর যদি বৃষ্টি নামে নগরে, তখন কৃষক দেখে বাইবেলে বর্ণিত সেই আজব দৃশ্য― নৌকা চলছে রাস্তায়, নূহ নবী না হোক, একালের মানুষ গাড়ি-না, রিকশা-না, তারা আল্লার ইশারায় চড়ে বসে নৌকায়, তারপর এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় চলে যায়। তা গ্রামে কি কখনো এমন দৃশ্য দেখা গেছে, না-কি বাপ-দাদাদের মুখে কেউ কোনোদিন শুনেছে এমন দৃশ্যের কথা? তাহলে নগরে এভাবে পানি আটকে থাকে কেন? এই প্রশ্ন কৃষকের মনে হয়তো জাগে না; কিন্তু নগর নিয়ে যাদের কারবার, সেই নগর পরিকল্পনাবিদ বলি কি স্থপতি কি সিভিল ইঞ্জিনিয়ার― এত এত মানুষ নিরন্তর কাজ করছে, রাস্তাঘাট-বাসাবাড়ি বানাচ্ছে, তাদের কারও মাথায় কি এই প্রশ্ন আসে না? গ্রামে যে জলাবদ্ধতা নেই, নদীর ধারে বসত হলে বন্যা যদিও হয়, জলাবদ্ধতা যে হয় না সেখানে! তো গ্রামে যে জলাবদ্ধতা হয় না, তার কারণটা কিন্তু সহজ; এতকিছুর পরেও গ্রাম এখনও প্রকৃতির বিরুদ্ধে যায় নি, বা প্রকৃতিকে বাগ মানাতেও চায় নি। কিন্তু নগরে যে প্রকৃতির সাথে মিতালি নেই, সেখানে মানুষ এমনকিছু করছে যা হয়তো প্রকৃতির ভাবনাতেই ছিল না, সেজন্য নগর বানাতে প্রকৃতির খেয়ালটা ভালোভাবে বুঝতে হয়।

তো প্রকৃতির খেয়ালটা কী? খু-উ-ব সংক্ষেপে যদি তালিকা করি, তাহলে তাতে বৃষ্টি তো থাকবেই, থাকবে আলো, বাতাস এবং আগুন। আমরা যে বলি মানুষই আগুন আবিষ্কার করেছিল প্রস্তরযুগে তা কিন্তু ধোপে টেকে না; কারণ তখন যেমন এখনও তেমন পাহাড়ে এবং জঙ্গলে গাছে-গাছে টোকা লেগে আগুন জ্বলে ওঠে এবং একবার শুরু হলে তা জ্বলেপুড়ে ছাড়খার করে দেয় বিস্তীর্ণ এলাকা। মানুষের কী সাধ্য সে আগুন নেভায়! কিন্তু মানুষ যখন আগুন ধরায়, তখন কিন্তু তাকে ভাবতে হয় তার নেভানোর পথটিও। শুধু কি তাই, যখন মানুষ ঠেকিয়ে দেয় বৃষ্টি আলো বা বাতাস, বা তাদের পথ ঘুরিয়ে দেয়, তখন তাকে ভাবতে হয় প্রকৃতির মন বা খেয়ালের কথা। তো সেই খেয়ালেই কিন্তু বৃষ্টিকে ঘিরে প্রকৃতি বানিয়েছে নদী-নালা-খাল-বিল-সাগর-মহাসাগর, এমনকি ঘাস-পাতা-লতা থেকে পাহাড়-পর্বত পর্যন্ত। কথা হচ্ছে, মানুষ তো মানুষ, যেকোনো প্রাণী যতক্ষণ প্রকৃতির কোলে থাকে, ততক্ষণ তার সেই খেয়ালের কথা মাথায় রাখতে হয় না, এ যেন মায়ের কোলে শিশু; কিন্তু মানুষ যখন বড় হয়ে ওঠে, অথবা ভাবে যে সে বড় হয়েছে যথেষ্ট এবং চাইলেই নিজের মতো করে যেতে পারে যেখানে খুশি সেখানে, অথবা করতে পারে যা খুশি তাই, তখন প্রকৃতির খেয়ালকে বুঝে-সুঝে মাথায় যে বুদ্ধি সেটা খাটিয়ে রাস্তাঘাট-বাসাবাড়ি থেকে শুরু করে সকলকিছু এমনভাবে বানাতে হয় যেন ওই খেয়ালির মাথায় বাজ না পড়ে।

বসত-বাড়ি হলো প্রকৃতির খেয়ালকে পাত্তা দেওয়ার প্রথম ধাপ, তা না হলে মানুষকে থাকতে হতো বনে-বাদাড়ে না হোক পাহাড়ের গুহায়। এক প্রস্ত মাটির দখল নিয়ে যখন মানুষ সেখানে গড়ে বসত, বা করে চাষাবাদ, তখন কিন্তু প্রকৃতির সাথে সমঝোতায় আসতে হয়। সেখানে যে আপসহীনতা অচল। সেখানে সে জল সেচুক বা আকাশের দিকে তাকিয়ে থাক, আর তা যদি না-ও হয় তো তুলুক পানি মাটির তলা থেকে, প্রকৃতি খু-উ-ব বেশি রাগ করে না তাতে। মানুষ যে তারই সন্তান। দুষ্টু বটে! আর সে কারণেই কি-না প্রকৃতির পক্ষপাতও তার প্রতি পনেরো আনা। কিন্তু যখন সে রাস্তা-ঘাট বানায়, ভাঁটায় মাটি পুড়িয়ে বানায় ইট আর সেই ইট দিয়ে বানায় ইমারত বা বড় বড় দালান-কোঠা, তারপর কোন ভূতল থেকে তুলে আনে তেল, সেই তেলের সঙ্গী হয়ে আসে বিটুমিন, আর সেই বিটুমিন পাথর কি বালিতে মিশিয়ে বানায় মহাসড়ক, এসব কিন্তু দুষ্টু বালকের পাগলামী মনে করে প্রকৃতি তার সংসারকে হেসে হালকা করে রাখে না। তো যারা সেটা বোঝে, তারা কিন্তু সিরিয়াস। তখন হিসাব কষে তারা ঠিক করে ঠিক কতটুকু করলে কী হতে পারে। সেজন্য রাস্তাঘাট বা ইমারত বানানোর সময় বৃষ্টির জল কীভাবে নদীতে গড়াবে, সেই হিসাবটুকু করতে হয়। শুধু কি তাই? তাকে তো হিসাব করতে হয় নদীর জলের যে প্রবাহমানতা, তার উপর যেন বাড়তি চাপ না পড়ে, সেদিকেও। সেজন্য বৃষ্টির জল ঘাসে পড়লে যে ধীর গতিতে নদী অভিমুখে যেত, ঘাসের বদলে কংক্রিটের ছাদ হওয়াতে সেই গতির চেয়ে বেশি গতিতে যেন জল নদীর দিকে না দৌড়ায়। ইংরেজি ভাষায় তারা এর নাম দিয়েছে 'রানঅফ কোএফিসিয়েন্ট'। বাংলায় একে বলা যেতে পারে প্রবাহ-সান্দ্রতা বা প্রসা। গলা খাকরি দিয়ে বিষয়টা একটু পরিষ্কার করতে হয়। কিউসেক শব্দটি নিশ্চয় পরিচিত, ওই যে কথায় কথায় বলি পদ্মা বা তিস্তায় অত কিউসেক পানি চাই-ই চাই। তো বিষয়টি কিন্তু খুব সহজ। এক ঘনফুট আয়তনের জল একটা বালতিতে নিয়ে আপনি যদি ছুটে চলেন, তাহলে এক সেকেন্ডে ওই জল যে পথ অতিক্রম করবে সেটাই জলের গতি। এখন নদীর জলের স্বাভাবিক গতি যদি ৩০ হাজার কিউসেক হয়, তো নদীকে শান্ত রাখতে ওই পরিমানের চেয়ে বেশি জল তাকে দিতে যাবেন না। নদী কিন্তু ভারবাহী গাধা না যে যা চাপাবেন তাই মেনে নেবে। সেজন্য নদীর ওই সংখ্যাটিকে মাথায় রেখে হিসাব কষতে হবে প্রসা কত হলে ভালো হবে, যেন বসতবাড়ির ছাদ কি লন কি রাস্তাঘাট থেকে বেশি গতিতে পানি এসে নদীতে আছড়ে না পড়ে। গুগলের কাছে শোনা, জুন-জুলাই মাসে ঢাকার একটা ৩ হাজার বর্গফুট বাসার ছাদে আকাশ থেকে ৫০ থেকে ৬০ কিউসেক জল পড়ে। তাহলে তো এরকম ১০০০ বাড়ির ছাদ ৫০ থেকে ৬০ হাজার কিউসেক জলের উৎস হয়ে যেতে পারে। তো বসতবাড়ির জায়গায় যদি থাকতো ঘাস, তবে ঘাসের প্রসা (০.২ থেকে ০.৩) হিসাবে জল গড়াত ১০ থেকে ১৫ হাজার কিউসেক হারে। আমাদের প্রকৌশলীগণ ছাদের জল নামার কোনো প্রসা ঠিক করে দিয়েছেন কি-না জানি না, কিন্তু উন্নত দেশে এই নম্বর কোনোভাবেই ০.৫ এর বেশি না। এখন যে পাইপ দিয়ে জল নামে তার কারণে ছাদের প্রসা যদি ০.৯ হয়, তবে ছাদ থেকে বাধাহীনভাবে জল তো নামবেই, আর তাতে করে ড্রেন না রাস্তা উপচে উঠবেই, তো এখানে প্রকৃতির দোষ কোথায়? দোষ তো পরে, তার তো রাগ করার কথা। আর করে বলেই কিন্তু জলাবদ্ধতা নগরে। তো ছাদে একটু জল জমতে দিন না, আর ৬-৭ ইঞ্চির একটা পুকুর হোক না সেখানে কিছুক্ষণের জন্য, হিসাব ঠিকঠাক থাকলে ছাদ ভেঙে মাথায় পড়বে না; কিন্তু তাতে করে রাস্তায় আর নৌকা চালাতে হবে না সেই নিশ্চয়তা কিন্তু থাকছে। তা কে শুনছে কার কথা? সব জঞ্জালের মতো জলের এই জঞ্জালও রাস্তায় ঠেলে দিয়ে আরামসে রবীন্দ্রসঙ্গীত না হোক গজল শুনতে তো অসুবিধা নেই, আর তাতেও তৃপ্তি না মিটলে সামাজিক মিডিয়া আছে কেন। বারান্দা থেকে একটা ছবি তুলে সরকারের না হোক সিটি মেয়রের চৌদ্দগোষ্ঠী উদ্ধার করতে কেউ কি মানা করেছে?

তো এভাবেইকি প্রকৃতির কাছে মার খেতে খেতে আর সেই মার দেউরির বাইরে ফিরিয়ে দিয়ে ঘুমিয়ে যাবো? জলেরজঞ্জাল না হয় নষ্ট বাপের পোলা, সে না হয় ছাড়লো না, কিন্তু আলো-বাতাসের সাথে কে গায়েপড়ে ঝগড়া করতে গেল যে তারও গোস্বা ভাঙাতে হবে? জ্বি, ঝগড়া বাঁধিয়েছেন তো সেই কবে। রবিরকিরণে আশ মেটেনি, তাইকুপিতে তেল ভড়িয়ে অনেকদিনধরে সূর্য মিয়াকে ভেংচি কাটার পরে এখন বিজলীবাতিকেই হাজিরকরেছেন ঘরের মধ্যে। আহ কী রোশনায়! শুধু কি ঘর, রাস্তা-ঘাট-হাট-বাজার এমনকি খেলারমাঠ, সর্বত্রআলো আমার আলো, ভূবনভরা আলো। তো এই আলো দিতে কত জোনাকির জীবন গেল, তার কোনো হিসাব আছে? জোনাকিইতো! ওই যে ভূতলে তেল,তা কি ভেসে এসেছে স্বর্গ থেকে? মোটেই না। কতদিন আগে প্রকৃতিরখেয়ালেই কি না মাছ না-কি প্রাণী কার জীবন সংহার হয়ে চাপা পড়ে গেল মাটির তলায়।দমবন্ধ হয়েছিল হয়তো,তাই সে জ্বলে ওঠে নতুন প্রাণের আশায়। ধন্য আশা কূহকিনী! তো জ্বলতে জ্বলতে কীহতে কী হয়, কারমাথায় আসে বুদ্ধি যে তামার কি অ্যালুমিনিয়ামের তার দিয়ে সেই জ্বলা বয়ে নেয়া যাবেমাইলের পর মাইল। তাই ঘরে এসে জ্বলে সে বাতির কোঠরে। আর যে জ্বলে না, সে কিন্তুঘোরায় পাখা না হলে কারখানার যন্ত্র।

তো কৃষক যখন নগরমুখী হলো, তখন কেন সে গ্রামের সেই আইলের উপর দিয়ে হাঁটা বা ফল ভেঙে তেল করে তা জ্বালানোর স্মৃতিটাকে ফেলে রেখে এল না? আসেনি জন্যই কিন্তু নগরে এসেও সেই পুরোনো জমি নিয়ে কামড়া-কামড়ি, পারলে সরকারের জমিতে ঢুকে পড়ে চোখের মনি স্থির হয়ে থাকে, ইশ! যদি এক ইঞ্চি বাড়াতে পারতাম, মাত্র এক ইঞ্চিই তো! আর তা করতে ঘুষ ঘাস যদি লাগে তো না করছে কেডা, আর একান্তই যদি না হয় তাহলে মামাতো ভাইয়ের খালাতো ভাইয়ের বউয়ের যে দুলাভাই মন্ত্রী, তিনি আছেন কী করতে! একদিন, দুই দিন, তিন দিন – তারপর মন্ত্রী মশাই যাকে বলার তাকে বলে দেন, বুঝছেন তো আপনার ভাবির কুলের আত্মীয়, বুঝতে চায় না, দু-চারটা এরকম আব্দার না রাখলে ভাবি যদি বাপের বাড়ি চলে যায় তো মিডিয়া কি ছাড়বে? হুকুম খেয়ে সরকারের লোকেরা কী বুঝতে কী বুঝে, তবে হুকুম তামিল হয়ে যায়, আর এভাবে রাস্তার দিকে এক ইঞ্চি জমি লম্বা হয়। আহা, কী শান্তি! আর যখন দুই মন্ত্রীর দুই শালা পাশাপাশি জমিতে ভবন গড়ে, তখন শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের নজির স্থাপিত হয় নগরের বুকে। পাশাপাশি টু-ইন টাওয়ার, একেবারে রোমিও-জুলিয়টের মতো জোড়া লেগে থাকে গায়ে গায়ে। তখন সেখানে অথবা প্রত্যেক ঘরে ঘরে কৃষকের ভূত ফাল দিয়ে ওঠে, গ্যাসের চুলা জ্বালায় রাখ ব্যাটা, গ্যাস কি সরকারের বাপের, আর তুই পয়সা দিছ না? মাগনা নাকি?

(রচনাকাল: জুন ১৯, ২০১৯, ক্যালগারি, আলবার্টা, কানাডা)