সরকার বিরোধী আন্দোলনের নতুন কৌশল!

স্বদেশ রায়
Published : 9 August 2019, 12:56 PM
Updated : 9 August 2019, 12:56 PM

রাজপথে আন্দোলন করে শেখ হাসিনার সরকারকেনড়ানো যাবে না এটা এখন দেশি ও বিদেশি মহলসহসবার কাছে প্রমাণিত। তাই যারা রাজপথে নামতেন ও যারা পেছনে থেকে নামাতেন সকলে কম বেশিএ কাজ থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন।

তারপরেও দেশের বিভিন্ন মহলের সার্বিক যেটুকুখবর পাওয়া যায় ও দেশের ভেতর ও বাইরের কিছু কাজ থেকে একটি বিষয় বেশ স্পষ্ট হয়ে উঠছে,দেশের অর্থনীতিতে একটি আঘাত করার চেষ্টা চলছে। অর্থাৎ সরকারকে আর্থিকভাবে দুর্বল করা।বাস্তবে অনেক ধরনের ইস্যুকে কেন্দ্র করে গত দশ বছরে রাজপথে নানান ধ্বংসাত্মক কাজ করাহয়েছে, মানুষ হত্যা করা হয়েছে বর্বরোচিতভাবে। কখনও কখনও মনে হয়েছে, দেশ যে অবস্থায়চলে গেছে এখান থেকে সরকার আর বের হতে পারবে না। কিন্তু শেখ হাসিনা অত্যন্ত ধৈর্য ধরে,শান্ত মাথায় সেখান থেকে দেশকে বের করে এনেছেন। আর সব থেকে তার বড় কৃতিত্ব, এ সকল ধরনেরঅরাজকতার ভেতর বসেও তিনি দেশের অর্থনীতির গতি ধরে রেখেছেন এবং প্রতি মুহূর্তে সেটাসামনের দিকে এগিয়েছে। যে কারণে এখন দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের জিডিপি আজ সব থেকে বেশি।অর্থাৎ  রাজপথের কোনও আন্দোলনের মধ্য দিয়েওদেশের অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করা সম্ভব হয়নি। আর এটাই শেখ হাসিনার ক্ষমতায় টিকে থাকারসব থেকে বড় স্তম্ভ। কারণ, দেশের মানুষ অর্থনৈতিকভাবে ভালো আছে। তারা চায় না দেশের অর্থনীতিক্ষতিগ্রস্থ হোক। তাই ছোট খাটো অনেক ভুলত্রুটি, স্থানীয় পর্যায়ে আওয়ামী লীগ নেতাদেরঅনেকের জমিদারী ব্যবহারের পরেও শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় রাখার জন্যে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছেমানুষ। তারা এই সত্য উপলব্ধি করেছে, শেখ হাসিনার কোনও বিকল্প নেই। এ কারণে তারা রাজপথেনামেননি। কোন আন্দোলনই সাধারণ মানুষকে রাজপথে নামাতে পারেনি। দেশের সাধারণ মানুষ অর্থনৈতিকউন্নতির এই ধারাবাহিকতাই চায়।

অন্যদিকে বাংলাদেশে সাধারণ মানুষের বাইরেএকটি 'বিশেষ সুশীল সমাজ' আছে। এই সুশীল সমাজটি ১/১১ এর আগ পর্যন্ত 'বিশেষ সুশীল সমাজ'ছিলনা। এই সুশীল সমাজের ব্যক্তিরা দেশের সার্বিক সুশীল সমাজের সঙ্গে মিশে ছিলেন। তাদেরকেকেউ আলাদা করতেন না। বরং তাদেরকেই সকলে দেশের উন্নয়ন ও সিভিল শাসনের সব থেকে বড় সমর্থকবলে মনে করতেন। কিন্তু ১/১১ এর পরে দেশের সুশীল সমাজের একটি অংশ 'বিশেষ সুশীল সমাজ'হয়ে যায়, তাদেরই কার্যকলাপের মাধ্যমে। তারা বেসামরিক শাসনের বিপক্ষে শুধু যান না দেশকেবিরাজনীতিকরণের চেষ্টায় নেমে পড়েন। এরাই  সেদিনদেশকে এই বিরাজনীতিকরণ ও বেসামরিক শাসন থেকে দূরে ঠেলে দেবার কাজ করেন। তাদের সঙ্গেএ কাজে বিদেশি কয়েকটি শক্তিকেও বেশ তৎপর দেখা গিয়েছিল। তারা দুবছর দেশকে শাসন করেছিল।কিন্তু শেষ অবধি রাজনৈতিক শক্তির চাপে তাদের সমর্থিত সরকার নির্বাচন দিয়ে বের হয়ে যেতেবাধ্য হয়। তখন দেখা গিয়েছিল ওই বিশেষ সুশীল সমাজের ব্যক্তিরা নির্বাচনের দুই দিন আগেওনির্বাচন ঠেকাতে নানান অপচেষ্টা করে। তাদের ছোটাছুটির অন্ত ছিল না এবং এই সময়ে তারাবাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী পাটি ( বিএনপি) ও জামায়াতকেও নির্বাচন ঠেকানোর কাজে সঙ্গে নেয়।ওই সময়ে শেষ মুহূর্তে বিএনপি-জামায়াত নির্বাচন ঠেকানোর পক্ষে চলে যায়। কারণ, তারাওবুঝতে পারে নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিশাল জয়লাভ করছে। এই বিশেষ সুশীল সমাজটির আরেকটিচরিত্র তখন থেকে পরিষ্কার হয়। তখনই বোঝা যায়, এরা আওয়ামী লীগ বা তাদের নেতৃত্বাধীন১৪ দল নয় বরং  বিএনপি নেতৃত্বাধীন জামাতসহ মৌলবাদীজোটকে পছন্দ করে।

যাহোক, তারা সেদিন নির্বাচন ও আওয়ামী লীগেরবিজয়কে ঠেকাতে পারেনি। তবে নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিজয়ী হবার পর দিন থেকে আজ অবধি তারাআওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটানোর জন্যে সব ধরনের কাজ করে যাচ্ছে। রাজপথে আন্দোলনের নামেমানুষ পুড়িয়ে হত্যা, চট্টগ্রামের সীতাকুন্ড, অন্যদিকে সাতক্ষীরায়, বগুড়ায়, চাপাই নবাবগঞ্জে২০১২-১৩ সালে তাণ্ডব চালিয়েছিল বিরোধী রাজনীতির নামে সেগুলোর কোনও নিন্দা কিন্তু এইবিশেষ সুশীল সমাজের কেউ করেনি। তারাও চেয়েছিল যেকোনওভাবে হোক সরকারের পতন। এমনকি সেদিনরাজপথে সন্ত্রাস সৃষ্টিকারীরা পোর্ট বন্ধ করার চেষ্টা করে, সরবরাহ লাইন বন্ধ করার চেষ্টাকরে- দেশের অর্থনীতিতে আঘাত করতে চেয়েছিল। এই জামাত-বিএনপির সহযোগী হিসেবে, বিশেষ সুশীলসমাজের ব্যক্তিরাও অর্থনীতিকে আঘাত করতে চেয়েছিলো। পদ্মা সেতু নির্মান বন্ধ করতে সেদিনএই সুশীল সমাজের ব্যক্তিরা যে ওয়ার্ল্ড ব্যাংক ও তৎকালীন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীরকাছে দৌড়াদৌড়ি করেছিল তার মূল উদ্দেশ্য ছিল অর্থনীতিতে আঘাত করা। কারণ পদ্মা সেতু তৈরিহয়ে গেলে আমাদের জিডিপিতে অন্তত ২ শতাংশ বাড়তি যোগ হবে। এ ছাড়া এই 'বিশেষ সুশীল সমাজের'হিসাব ছিল দক্ষিণবঙ্গের নির্বাচনী আসনগুলো আওয়ামী লীগের দিকে ঝুঁকে যাবে। তাই শুধুযে ড. ইউনূস গ্রামীণ ব্যাংকের এমডির পদ হারিয়েছিলেন এজন্য নয়, দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নযাতে আওয়ামী লীগ না করতে পারে এবং রাজনৈতিকভাবে আওয়ামী লীগ যাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়- সেজন্যইসেদিন পদ্মাসেতু নিয়ে তারা ষড়যন্ত্র করে।

অর্থনীতিতে আঘাত করার কৌশল তাই তাদের নতুননয়। তবে এবার তাদের কৌশলটি ভিন্ন। তারা এবার দেশের আর্থিকখাত বিশেষ করে ব্যাংকিং খাতেআঘাত করে দেশের অর্থনীতিকে পঙ্গু করার একটি চেষ্টায় নেমেছে। কারণ, এটা সত্য দেশের অর্থনৈতিকউন্নয়ন যে সুস্থ ধারায় এগিয়ে চলেছে দেশের সব ব্যাংক সেই সুস্থ ধারায় নেই। ব্যাংকেরঋণ-খেলাপি কালচার বেড়েছে। অন্যদিকে যে সমস্যাটি সৃষ্টি হয়েছে তা হল বিনিয়োগ বাড়ানোরজন্যে শিল্প ঋণের সুদ সিঙ্গেল ডিজিটে করতে গিয়ে সঞ্চয়ী ঋণের সুদ খুবই কমে গেছে। যারফলে অনেক মানুষ ব্যাংক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে অন্য কোথাও টাকা রাখার পথ খুঁজছে। তাছাড়াদীর্ঘদিন সামরিক শাসন ও তাদের উত্তরাধিকারদের শাসন থাকার ফলে সত্যি অর্থে দেশের অর্থনীতিনিয়ে কখনও ভাবা হয়নি। যে কারণে আমাদের সরকারী ব্যাংকগুলো ওইভাবে দেশজুড়ে তাদের শাখাবা নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে পারেনি। এমনকি এই গত দশ বছরে ডিজিটালাইজেশানের সুযোগ নিয়েওকিন্তু দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে সরকারী ব্যাংকগুলো খুব সহজ ও ছোট উইন্ডো আকারে ছড়িয়েপড়তে পারেনি। এর ফলে এখনও দেশের ৫০ ভাগ লোক ব্যাংকিং এর আওতার বাইরে, আবার সমাজের যেঅংশটি সব থেকে বেশি সঞ্চয়ী হয় অর্থাৎ নারীরা, তাদের আরও বেশি অংশ ব্যাংকিং এর আওতারবাইরে। একটি জরিপের মাধ্যমে দেখা গেছে, তাদের শতকরা ৬০ ভাগ ব্যাংকিং এর আওতার বাইরে।তবে বাস্তবতায় গিয়ে মনে হয় প্রকৃত জরিপ করতে পারলে এটা আরও বেশি হবে। ফলে, বাজারে যেঅর্থ আছে ব্যাংকে তার অর্ধেকও নেই। এর পরেও মরার পরে পড়েছে খাড়ার ঘা। অর্থাৎ সঞ্চয়েসুদ কমে যাওয়ায়, অনেক মানুষ ব্যাংকে সঞ্চয় করা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে।

কোনও দেশে যখন সঞ্চয় কমে যেতে থাকে ওই দেশেরঅর্থনীতি অনেকখানি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বাংলাদেশ কিছুটা হলেও সেই ক্ষতির মুখে- যা প্রধানমন্ত্রীবিবিসিকে দেয়া সাক্ষাৎকারেও বলেছেন। বিবিসির প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেছেন, যতটা বলাহচ্ছে অতটা নয়। বাস্তবতা হলো কিছু লোক নানানভাবে ঋণের নামে ব্যাংক থেকে টাকা সরিয়েনিয়েছে অন্যদিকে সঞ্চয়ও কমে গেছে। তবে সেটা দেশের মোট অর্থনীতির তুলনায় খুব বেশি নয়বা ওভারকাম করা সম্ভব এমন সুরটিই পাওয়া গেছে প্রধানমন্ত্রীর কথায়। কিন্তু এই যে ব্যাংকিংখাত নিয়ে কথা উঠছে এটাকে কাজে লাগাতে ইতোমধ্যে নেমে পড়েছে ওই 'বিশেষ সুশীল সমাজ'। তারাবেসরকারী পর্যায়ে ব্যাংক কমিশন করার ঘোষণা দিয়েছে  এবং এরা সবাই সেই সেনাশাসন প্রিয় ব্যক্তিবর্গ। ওয়ানইলেভেন থেকে, পদ্মা সেতুর ঋণ বন্ধ, জামাত-বিএনপির সব ধরনের সন্ত্রাসকে নীরব সমর্থনদেয়া থেকে শুরু করে যা যা করার দরকার দেশের অর্থনীতির বিরুদ্ধে সে কাজ তারা করে আসছেন।এখন তারা খুবই সেনসেটিভ একটি ইস্যু পেয়ে গেছেন। কারণ, একবার যদি তারা  রব ওঠাতে পারে যে, দেশের সার্বিক ব্যাংকিং সেক্টরেরঅবস্থা খারাপ তাহলে তার ফল খুবই মারত্মক হবে। অর্থাৎ মানুষ তখন ব্যাংক থেকে টাকা তোলাশুরু করবে। এতে করে দেশের অর্থনীতিতে খুবই বড় ধাক্কা আসতে পারে। তাই এখুনি সরকারকেএদের প্রতি সজাগ হতে হবে ওই যারা বেসরকারী পর্যায়ে ব্যাংক কমিশন করতে যাচ্ছে। কারণ,এরা চিহ্নিত ব্যক্তিবর্গ। এরা হয়তো তাদের মত সিলমারা নয়, এমন দু একজনকে বিভ্রান্ত করেসঙ্গে নিয়ে দেশের অর্থনীতি  ক্ষতি করতে সার্বিকব্যাংক সেক্টর নিয়ে অপপ্রচার করবে। এই অপপ্রচার যাতে না করতে পারে সেটা সরকারকে অবশ্যইবন্ধ করতে হবে।

অন্যদিকে সরকারী পর্যায়ে কোনও ধরনের কমিশনবা বিশেষ ব্যবস্থা নিয়ে দেশের মানুষের কাছে থাকা অর্থ কীভাবে ব্যাংকিং চ্যানেলের ভেতরদিয়ে প্রবাহিত করা যায় তার সঠিক পথ বের করতে হবে। কারণ এটা সত্য- সঞ্চয়ে সুদের হারকমে যাওয়ায় মানুষ সঞ্চয় থেকে সরে যাচ্ছে। তাই যে কোনও ধরনের ইনসেনটিভ দিয়ে হলেও মানুষকেব্যাংকিং চ্যানেলে এবং সঞ্চয়ের চক্রে আনতে হবে। এজন্য সরকারী ও বেসরকারী সব ব্যাংকগুলোযাতে তাদের শাখা বা উইন্ডো বাড়ায় তার ব্যবস্থা নিতে হবে। আর নারীদের কীভাবে বেশি ব্যাংকিংসেবার আওতায় আনা যায় তার উদ্যোগ নিতে হবে। বর্তমানে ব্যাংকিং খাতে যে অসুবিধা চলছেএটা সঠিক ম্যানেজমেন্ট ও সঞ্চয় বাড়ানোর ভেতর দিয়ে অনেকখানি সমাধান সম্ভব। তাই বিশেষসুশীল সমাজের অপপ্রচার সরকারকে ঠেকাতে হবে, আর ব্যাংকিং খাতে সঠিক ম্যানেজমেন্ট ও সঞ্চয়বাড়ানোর পথ বের করতে হবে। বিনিয়োগের জন্যে সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিট করতে গিয়ে যে সঞ্চয়কমে যাচ্ছে। এখানে একটি কঠিন চক্রের মধ্যে পড়ে গেছে সরকার। অর্থাৎ বিনিয়োগের ঋণের সুদসিঙ্গেল ডিজিটে না নিলে বিনিয়োগ বাড়ছে না। অন্যদিকে বিনিয়োগের ঋণ সিঙ্গেল ডিজিটে গেলেব্যাংককে কমাতে হচ্ছে সঞ্চয়ী ঋণের সুদের হার। যাতে সঞ্চয় কমে যাচ্ছে। এটা একটি সমস্যাই।  এই সমস্যার সমাধান সরকারকেই খুঁজে বের করতে হবেএবং এটা দ্রুতই করা দরকার, কারণ ওই বিশেষ সুশীল সমাজ এখন ব্যাংকিং খাতকে নিয়ে সরকাকেআঘাত হানতে আটঘাট বেঁধে নামতে যাচ্ছে।