তিন তালাকের ‘তালাকপ্রাপ্তি’, উত্তাল ভারত

হাসান মাহমুদহাসান মাহমুদ
Published : 2 August 2019, 05:11 PM
Updated : 2 August 2019, 05:11 PM

ইসলাম মুসলিম নারীদেরকে যে অধিকার দিয়েছিল তা হরণ করছেন আমাদের কিছু আলেম আর সেটা মুসলিম নারীদেরকে ফিরিয়ে দিলেন অমুসলিম নেতারা ।

ভারতের বহু আলেম তিন তালাকের বিরুদ্ধে, কিন্তু সর্বোচ্চ সংগঠন অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোন্যাল ল' বোর্ডের (AIMPLB) আলেমরা তিন তালাক নিষিদ্ধের ঘোর বিরোধী। ২৯ জুলাই ২০১৯ তারিখে সংসদে পাশ হল তিন তালাক নিষিদ্ধের বিল, তাৎক্ষণিক তালাক দিলে স্বামীর ৩ বছরের জেল ও জরিমানা হবে। এ নিয়ে ভারতে তোলপাড় – মুসলিম নারীরা ও মানবাধিকার কর্মীরা উৎসবে ফেটে পড়েছেন, বিক্ষুব্ধ AIMPLB মামলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছে।

তিন তালাকের কুফল কতদূর যেতে পারে? খবর:- "বারবার তিন তালাক স্বামীর – নিকাহ হালালার অছিলায় লাগাতার ধর্ষণ করেছে শ্বশুর – ইন্ডিয়ান টাইমস – এই সময় – ১৯ জুলাই ২০১৮। আপাতত: এই নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে:-

. স্বামীর তিন তালাক উচ্চারণ কি এক তালাক ধরা হবে?

. স্বামীর জেল হলে সংসারের খরচ কে দেবে?

. জেল থেকে ফিরে স্বামী তার স্ত্রীর সাথে কি ব্যবহার করবে তা সহজেই অনুমেয়। কাজেই, এই

আইন করে মুসলিম নারীদেরকে আরো বিপদের মুখে ঠেলে দেয়া হল না কি?

. এটা দেওয়ানী মামলা, এটাকে কেন ফৌজদারী বিভাগে ফেলা হল?

. তিন তালাক উচ্চারণে তালাক হবেনা। তাহলে, যে উচ্চারণের কোনো প্রভাব সমাজ বা জীবনের ওপর নেই তা কেন অপরাধ হবে?

. বহু ধর্মের বহু সংস্কৃতির ভারতে এটা কি "ইউনিফর্ম সিভিল কোড" অর্থাৎ "সবার জন্য এক

আইন"- সেদিকে পদক্ষেপ?

এগুলোর জবাব পেতে আমাদেরকে অপেক্ষা করতে হবে। এখন দেখা যাক এ ব্যাপারে ইসলাম নারীকে কি অধিকার দিয়েছে ও কিভাবে তা হরণ করা হয়েছে।

() কোরান কি বলে

দ্য ক্রাইটেরিয়ন, আল ফুরকান – সত্য মিথ্যার পার্থক্য নির্ধারণকারী গ্রন্থের সুস্পষ্ট মানদণ্ড- যে বিধানে নিরপরাধের কষ্ট হয় তা আল্লাহর বিধান হতে পারে না, পিরিয়ড (বাকারা ১৮৫, মায়িদা ৬ ও হজ্ব ৭৮)।

(ক) কোরানে দূর দূরান্ত পর্য্যন্ত কোথাও তাৎক্ষণিক তালাকের প্রতি বিন্দুমাত্র প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সমর্থন নেই বরং উল্টোটা আছে। সূরা বাকারা ২২৯ – তালাক পূর্ন হতে কমপক্ষে দু'মাস লাগে।

(খ) তিন তালাক সাধারণত: ঘটে স্বামীর রাগের মাথায়, পরে স্বামী প্রায়ই অনুশোচনা করে। কোরান তাকে অধিকার ও সুযোগ দিয়েছে ওই দুমাসের মধ্যে তালাক প্রত্যাহার করার কিন্তু তাৎক্ষণিক তালাকে পুনর্বিবেচনার সুযোগ নেই। এ আইন স্বামীর কোরান-প্রদত্ত অধিকার হরণ করে। ফলে সন্তান ও নারীর জীবনের ক্ষতি হয়, ইসলামের বদনাম হয়।

(গ) সূরা ত্বালাক আয়াত ২ অনুযায়ী তালাক বৈধ হতে দুইজন সাক্ষীর দরকার যা প্রায়ই তাৎক্ষণিক তালাকের ক্ষেত্রে থাকেনা। হাদিসেও আছে সাক্ষী ছাড়া তালাক অবৈধ – সুনান আবু দাউদ হাদিস ২১৮১। অথচ শারিয়া আইনে কি আছে দেখে নিন নীচে শারিয়া আইন অংশে।

. রাসুল (সা) কি বলেন

এ ব্যাপারে আমরা সহি সিত্তার ভেতরে থাকব, সেখানে পরস্পর-বিরোধী হাদিস আছে।

  • তিন তালাকের বিপক্ষে হাদিস

(ক) সহি মুসলিম হাদিস ৩৪৯২- "আবু সাহবা ইবনে আব্বাসকে (রা.) বলিলেন, 'আপনি কি জানেন যে আল্লারর রাসুলের (সা.) সময়ে, হজরত আবু বকরের (রা) সময়ে এবং হজরত ওমরের (রা) প্রথম তিন বছরের খেলাফতকালে তাৎক্ষণিক তিন তালাককে এক তালাক ধরা হতো?' ইবনে আব্বাস (রা.) বলিলেন, 'হ্যাঁ'।"

এই একই হাদিস আছে সহি মুসলিম ৩৪৯১ ও ৩৪৯৩ ও সুনান আবু দাউদেও – হাদিস ২১৯৪। সর্বপ্রথম তিন তালাকে পুরো তালাকের বিধান চালু করেন। দলিলে আমরা পাই হযরত ওমর (র)  তিন তালাক দেনেওয়ালা স্বামীকে ৪০ বেত্রাঘাতের শাস্তি দিয়েছেন অথচ সেই শাস্তি শারিয়া আইন দেখিনা।

(খ) "এক ব্যক্তি তার স্ত্রীকে তিন তালাক একসাথে দিয়েছে শুনে রাসুল (সা.) রাগে দাঁড়িয়ে গেলেন এবং বললেন, তোমরা কি আল্লাহর কিতাবের প্রতি ঠাট্টা করছ? অথচ আমি এখনও তোমাদের মধ্যেই রয়েছি!" -মওলানা মুহিউদ্দিনের অনুদিত বাংলা-কোরান পৃষ্ঠা ১২৭।

(গ) "এক সাহাবি তার স্ত্রীকে একসাথে তিন তালাক বলেছে শুনে রাসুল (সা.) বললেন, 'এই তিন তালাক মিলে হল এক তালাক। ইচ্ছে হলে এই তালাক বাতিল করতে পার"।- মওলানা ওয়াহিদুদ্দিনের 'Women in Islami Sharia'তে ফতহুল বারীর সূত্রে, পৃষ্ঠা ১০৮ ও ১০৯।

  • তিন তালাকের পক্ষে হাদিস:

(ঘ) "একই সঙ্গে তিন তালাক দিয়ে নিষ্কৃতি লাভ করা যদিও রাসুলের (সা.) অসন্তুষ্টির কারণ, যা পূর্ববর্তী বর্ণনায় উল্লেখ করা হয়েছে, এ জন্য সমগ্র উম্মত একবাক্যে একে নিকৃষ্ট পন্থা বলে উল্লেখ করেছে এবং কেউ কেউ নাজায়েযও বলেছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও যদি কেউ এ পদক্ষেপ নেয়, তবে এর ফলাফলও তাই হবে বৈধ পথে অগ্রসর হলে যা হয়। অর্থাৎ তিন তালাক হয়ে যাবে, এবং শুধু প্রত্যাহার নয়, বিবাহবন্ধন নবায়নের সুযোগও আর থাকবে না।" (সহি হাদিসের সূত্রে মওলানা মুহিউদ্দিনের অনুদিত বাংলা-কোরানের তফসির, পৃষ্ঠা ১২৭-১২৯)

(ঙ) "রাসুল (সা.) এরশাদ করেছেন তিনটি বিষয় এমন রয়েছে যে, হাসি-তামাশার মাধ্যমে করা ও বাস্তবে করা দুই-ই সমান। তন্মধ্যে একটি হচ্ছে তালাক… হাসি-ঠাট্টার ছলে হলেও এবং অন্তরে বিয়ে, তালাক ও তালাক-প্রত্যাহারের ইচ্ছা না থাকলেও মুখের কথা দ্বারা বিয়ে, তালাক এবং প্রত্যাহার বাস্তবায়িত হয়ে যাবে… জবরদস্তি অবস্থায় যদিও সে তালাক দিতে আন্তরিকভাবে সম্মত ছিল না, অক্ষম হয়ে তালাক শব্দ বলে দিয়েছে, তবুও তালাক হয়ে যাবে।" (সহি হাদিসের সূত্রে মওলানা মুহিউদ্দিনের অনুদিত বাংলা-কোরানের তফসির, পৃষ্ঠা ১২৮ ও ৭৫৮) ।

আমরা তিন তালাকের বিপক্ষের হাদীসগুলোই মানবো কারণ সেগুলো কোরানের বিধান ও নারীর অধিকার রক্ষা করে। আমাদের বুঝতে হবে স্বামী যদি স্ত্রীকে তিন তালাক না-ও দেয়, তবু তার সেই অধিকারটাই স্ত্রীর বিরুদ্ধে সন্ত্রাস।

() ইসলামী বিশেষজ্ঞেরা কী বলেন

শরিয়ার তাৎক্ষণিক তালাকের এ আইনের নাম "বিদাতি তালাক", এটা বানানো হয়েছে নবীজির (সা.) অনেক পরে। এ আইন ইসলাম বিরোধী সেকথা বলেছেন অনেক বিখ্যাত শরিয়া সমর্থক আলেমই। যেমন:

(ক) বিশ্বের সর্বোচ্চ আলেমদের অন্যতম ডক্টর ইউসুফ কারযাভী বলেন- "একই সময়ে এক এক করে তিন তালাক কিংবা এক বাক্যে তিন তালাক দেয় তবে তা শরীয়ত প্রদত্ত নিয়ম ও পন্থার সম্পূর্ণ পরিপন্থী হবে। সে লোক হেদায়েতের পথ ত্যাগ করে গুমরাহীর পথ অবলম্বন করে চলেছে, সিরাতুল মুস্তাকীমকে সে হারিয়ে ফেলেছে। সহীহ হাদিসে বলা হয়েছে, রাসূলে করীম (স) জানতে পারলেন এক ব্যক্তি তার স্ত্রীকে একসঙ্গে তিন তালাক দিয়েছেন। তিনি ক্রোধে দাঁড়িয়ে গেলেন এবং বললেন – 'আমি তোমাদের মধ্যে বর্তমান অবস্থায়ই এ লোকটি আল্লাহ'র কিতাব নিয়ে তামাশা খেলছে'? – "ইসলামে হালাল-হারামের বিধান" – পৃষ্ঠা ৩০০।

(খ) ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব, "আহলে হাদীছ" আন্দোলন বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা ও আমীর বলেন:- "কুরআন-হাদীছে বর্ণিত উপরোক্ত তালাক বিধানকে 'সুন্নতি তালাক' ও আবিষ্কৃত একত্রিত তিন-তালাককে 'বেদ'ঈ তালাক' নামে অভিহিত করা হয়েছে…. অথচ মুসলমান 'সুন্নত' মানতে পারে, কিন্তু কোন অবস্থাতেই 'বিদ'আত' মানতে পারে না।….. বিদ'আতের একমাত্র পরিণাম জাহান্নাম….অথচ বিদ'আতী তালাককে আইনসিদ্ধ করার মাধ্যমে মুসলিম সমাজে গোনাহের পথ খুলে দেওয়া হয়েছে… যার সরাসরি ও অসহায় শিকার হচ্ছে এদেশের সরল-সিধা মুসলিম নারী সমাজ" – "তালাক ও তাহলীল" – পৃষ্ঠা ৯ ও ১০।

(গ) ভারতের বর্ষীয়ান আলেম মওলানা ওয়াহিদুদ্দিন বলেন – "নবীজি (স) থেকে শুরু করে হজরত আবু বকর (র) ও হজরত ওমরের (র) সময় পর্যন্ত একসাথে তিন তালাক উচ্চারণকে এক তালাক ধরা হত …. হজরত ওমর একসাথে তিন তালাক বৈধ করেন এবং এই আইন চালু করেন।" – "Women in Islami শরিয়া" পৃষ্ঠা ১১০)।

(ঘ) বিশ্ববিখ্যাত শারিয়াবিদ ড. আবদুর রহমান ডোই বলেন- "নবীজির মৃত্যুর বহু পরে তালাকের এক নূতন নিয়ম দেখা যায়। স্বামী একসাথে তিন তালাক উচ্চারণ করে বা লিখিয়া দেয়। এই তালাকে অনুতাপ বা পুনর্বিবেচনার সুযোগ নাই। অজ্ঞ মুসলমানেরা এইভাবে গুনাহ্ করে। নবীজি তীব্রভাবে ইহাতে বাধা দিয়াছেন" – 'শরিয়া দি ইসলামিক ল', পৃষ্ঠা ১৭৯।

অন্যান্য গবেষকেরাও এর ওপরে বিপুল তথ্যসমৃদ্ধ কাজ করেছেন যেমন "তিন তালাক – নিকাহ ও হালালা"- লিখেছেন মো: শহিদুল ইসলাম। নিবন্ধটা ইন্টারনেটে পাওয়া যায়। তিন তালাক বিরোধী আলেমরা আরো সোচ্চার হলে এ ব্যাপারে জনসচেতনতা সৃষ্টি হবে।

এবারে দেখা যাক ইসলামে নারীর সেই অধিকার কিভাবে হরণ করা হয়েছিল।

()  শারিয়া আইন

শারিয়ার সবগুলো আইন যোগ করলে আমরা এগুলো পাই:-

(ক) "স্বামী তাহার স্ত্রীকে একই সময়ে একই বাক্যে অথবা পৃথক পৃথক সময় ও বাক্যে তিন তালাক দিলে তৎক্ষণাৎ বিবাহবন্ধন ছিন্ন হইয়া যায় এবং স্বামী তাহাকে ফিরাইয়া লইতে পারে না… (স্বামীর) সুস্পষ্ট বাক্যে অথবা পরোক্ষ বক্তব্যে অথবা ইশারা-ইঙ্গিতে অথবা লিখিতভাবে প্রদত্ত তালাক সঙ্ঘটিত হইবে… তালাক বলার সময় স্বামীর মনের যে সংখ্যা নির্ধারিত করে তাহা বা দেখানো আঙুল দিয়া তালাকের সংখ্যা ধরা যায়… যদি স্বামী বলে তোমাকে তালাক দিলাম, তবে বলিবার সময় স্বামীর মনে যে সংখ্যা থাকে তাহাই বলবৎ হইবে"।

সূত্র: বিধিবদ্ধ ইসলামি আইন ১ম খণ্ড ধারা ৩৪৩ ও ৩৫১, হানাফি আইন হেদায়া পৃষ্ঠা ৮১; শাফি'ই আইন উমদাত আল সালিক আইন নং এন.৩.৫।

ওপরের সূত্রগুলোর সাথে যদি আমরা নিচের শারিয়া কিতাবগুলো যোগ করি তাহলে এসব আইন পাই: স্বামী যদি অত্যাচারের চাপে, নেশার ঘোরে, রোগের কষ্টে অধীর হয়ে, হাসি-ঠাট্টায়, নোট লিখে বা টেলিফোনের অ্যান্সারিং মেশিনেও তালাক বলে রাখে তবু তালাক পুরো হয়ে যায়।

সূত্র:- মওলানা মুহিউদ্দীনের বাংলা-কোরানের তফসির পৃষ্ঠা ১২৮; মওলানা আশরাফ আলী থানভীর 'দ্বীন কি বাঁতে' পৃষ্ঠা ২৫৪, আইন # ১৫৩৭, ১৫৩৮, ১৫৪৬ ও ২৫৫৫; ইউরোপিয়ান ফতোয়া কাউন্সিল ও ক্যানাডার মওলানার ফতোয়া, বিধিবদ্ধ ইসলামি আইন ১ম খণ্ড ধারা ৩৪৭ ও ৩৪৯; মকসুদুল মুমেনিন ইত্যাদি।

(খ) সূরা ত্বালাক আয়াত ২ অনুযায়ী তালাক বৈধ হতে দুইজন সাক্ষীর দরকার যা প্রায়ই তাৎক্ষণিক তালাকের ক্ষেত্রে থাকেনা। হাদিসেও আছে সাক্ষী ছাড়া তালাক অবৈধ – সুনান আবু দাউদ হাদিস ২১৮১। অথচ শারিয়া আইনে আছে:-

(১) "তালাক সঙ্ঘটিত হওয়ার জন্য সাক্ষী শর্ত নহে" – বাংলাদেশ ইসলামী ফাউন্ডেশনের প্রকাশিত "বিধিবদ্ধ ইসলামী আইন" ১ম খণ্ড ধারা ৩৪৪,

(২) "বিয়ে ব্যতীত অন্য সব ব্যাপার সমাধা করার জন্য সাক্ষী শর্ত নয়" – মওলানা মুহিউদ্দিনের অনুদিত বাংলা-কোরানের তফসির, পৃষ্ঠা ১২৪)

(গ) কোরান বলছে তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রীকে ভরণপোষণ দিতে হবে (বাকারা ২৪১) কিন্তু শারিয়া আইনের কারণে তাৎক্ষণিক তালাকে স্ত্রীর ভরণপোষণ আদায় করা অসম্ভব। আইনটা হল:-

(১) "স্ত্রীর যে প্রয়োজনীয় ব্যয়ভার বহন করা স্বামীর যিম্মায় ওয়াজিব (বাধ্য), তা চারটি বস্তুর মধ্যে সীমাবদ্ধ − আহার, পানীয়, বস্ত্র ও বাসস্থান। স্বামী এর বেশি কিছু স্ত্রীকে দিলে অথবা ব্যয় করলে তা হবে অনুগ্রহ, অপরিহার্য নয়" – মুহিউদ্দীন খানের অনুদিত বাংলা কোরান পৃঃ ৮৬৭।

(২) "খাবার, বাসস্থান ও পোশাক দিতে স্বামী বাধ্য থাকিবে শুধুমাত্র বাধ্য স্ত্রীকে, অবাধ্য স্ত্রীকে নহে। ইহার বাহিরে সমস্ত খরচ এমনকি ডাক্তারের, ওষুধের বা সৌন্দর্য্য-চর্চার খরচ ইত্যাদি হইবে স্বামীর করুণা ও দয়া" – হানাফি আইন হেদায়া পৃঃ ১৪০; শাফি'ই আইন উমদাত আল সালিক আইন #m.11.4.

অর্থাৎ, স্বামী ওই আইনের বলে তাকে "অবাধ্য স্ত্রী" দাবি করে খরচ দেবেনা।

(ঘ) শারিয়া আইনে বলে এক বা দুই তালাক দেবার পরে স্বামী তার স্ত্রীকে ফিরিয়ে নিতে পারে, "স্ত্রীর সম্মতি থাকুক বা না থাকুক" – বিধিবদ্ধ ইসলামি আইন ১ম খণ্ড ধারা ৩৫২। এ আইন সরাসরি লঙ্ঘন করে কোরান ও রসূল (স)-এর হুকুম, নারীর ইচ্ছার বিরুদ্ধে তাকে বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ রাখা যাবেনা। এ বিষয়ে অন্য নিবন্ধে বিস্তারিত লিখব।

() কালতামামী

বাংলাদেশসহ অনেক মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশে তাৎক্ষণিক তালাক নিষিদ্ধ। কিন্তু এটা যে কোরআন-সুন্নাহ মোতাবেকও অবৈধ সে ব্যাপারে দেশে জনসচেতনতা সৃষ্টি করা হয়নি, করা দরকার। যে আইন প্রতিটি বিবাহিতা মুসলিম নারীকে স্বামীর ইচ্ছের অধীন করে রাখে, যে আইনে মুসলিম নারীর জীবন সন্তান-সংসার ধ্বংস হয় ও ইসলামের বদনাম হয় সে আইন কি ইসলামী হতে পারে? সরকারের উচিত অনতিবিলম্বে এইসব অমানবিক ব্যাখ্যার ব্যাপারে জাতিকে সচেতন করা এবং মুসলিম বিশেষজ্ঞদের লেখা ইসলামের মানবিক ব্যাখ্যার বইগুলো প্রচার করা। যে নারীকে তাৎক্ষণিক তালাকের মধ্যে পড়ে পর-পুরুষ দ্বারা ধর্ষিতা হতে হয় তার অপমান, তার ক্ষোভ-দুঃখ কবে আমরা বুঝব? এ কোন ইসলাম যে নিরপরাধের জীবন এত নিষ্ঠুরভাবে ধ্বংস করে? কোষ্ঠকাঠিন্য কেবল পেটেই নয়, বুদ্ধি ও বিবেকেও এই রোগটা হয়।

কেউ চাইলে উপরোক্ত সূত্রগুলোর কপি পাঠানো যেতে পারে।