আচার-বিচারের সংস্কৃতি, অতঃপর প্রিয়া সাহা…

কবীর চৌধুরী তন্ময়
Published : 24 July 2019, 02:30 PM
Updated : 24 July 2019, 02:30 PM

মিডিয়া ও স্যোশাল মিডিয়ায় একটি বিষয় নিয়ে আলোচনা সমালোচনার ঝড় বইছে। সাম্প্রদায়িক নিপীড়নের শিকার বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিদের সঙ্গে হোয়াইট হাউজে গিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছে প্রিয়া সাহা নামের বাংলাদেশি এক নারীর অভিযোগ নিয়ে প্রায় সকল শ্রেণিপেশার মানুষ মর্মাহত হয়েছে, পীড়া অনুভব করছেন। প্রায় সকলেই একবাক্যে স্বীকার করেছেন, 'বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক নিপীড়ন' এর অভিযোগ ছিল পুরোপুরি মিথ্যা এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। শুধু তাই নয়, প্রিয়া সাহার গোত্রীয় মানুষগুলোও তার অভিযোগের বিরুদ্ধে এবং বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির পক্ষে অবস্থান নিয়েছে, প্রিয়া সাহার মিথ্যাচারের বিপরীতে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে, ক্ষোভ-ঘৃণাও প্রকাশ করে।

বাংলাদেশ যে সঠিক পথেই এগিয়ে যাচ্ছে-এটিও এই আলোচনা-সমালোচনার মাধ্যমে ফুটে উঠেছে। আর সেই সুরেই সুর মিলিয়ে ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত রবার্ট মিলার বলেন, 'আমার প্রথম ৮ মাসের দায়িত্ব পালনকালে আমি বাংলাদেশের ৮টি বিভাগেই ঘুরেছি। মসজিদ, মন্দির ও চার্চে গিয়ে ইমাম পুরোহিতদের সঙ্গে কথা বলেছি। এখন আমি এসেছি একটি বৌদ্ধ মন্দিরে, আমার কাছে যেমনটা মনে হয়েছে, এখানকার ভিন্ন ভিন্ন বিশ্বাসের লোকজন একে অপরকে শ্রদ্ধা করে। তাই আমি মনে করি, তার (প্রিয়া সাহা) অভিযোগ সঠিক নয়, বরং ধর্মীয় সম্প্রীতির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ একটি উল্লেখযোগ্য নাম'

পাঠক, ঘটনাটি-সম্প্রতি চীন, তুরস্ক, উত্তর কোরিয়া, মিয়ানমারসহ ১৬টি দেশে সাম্প্রদায়িক নিপীড়নের শিকার হওয়া মানুষদের কয়েকজনকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের হোয়াইট হাউসে। গত ১৭ জুলাই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে দেখা করেন তারা। ট্রাম্প যখন একে একে সবার বক্তব্য শুনছিলেন তখন এক নারী নিজেকে বাংলাদেশি পরিচয় দিয়ে বলেন, 'স্যার, আমি বাংলাদেশ থেকে এসেছি। সেখানকার ৩ কোটি ৭০ লাখ সংখ্যালঘু হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান 'নাই' হয়ে গেছে। দয়া করে বাংলাদেশি জনগণকে সাহায্য করুন। আমরা আমাদের দেশে থাকতে চাই'

দেখুন, 'আমরা আমাদের দেশে থাকতে চাই' বলে মুলত প্রিয়া সাহা বাংলাদেশকে 'তার দেশ' হিসেবেই উল্লেখ করেছে। এটি 'তার দেশ নয়' কিংবা 'তার দেশ অন্যটি'- এটিও ট্রাম্পকে বোঝানোর চেষ্টা করেনি। প্রিয়া সাহা যে তথ্য দিয়ে বলেছে, 'এখনও সেখানে ১ কোটি ৮০ লাখ সংখ্যালঘু মানুষ থাকে। আমার অনুরোধ, দয়া করে আমাদের সাহায্য করুন। আমরা দেশ ছাড়তে চাই না। সেখানে থাকতে আমাদের সহযোগিতা করুন। আমি আমার বাড়ি হারিয়েছি। তারা বাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে। আমার জমি ছিনিয়ে নিয়েছে। কিন্তু কোনও বিচার হয়নি।'

এখানে প্রিয়া সাহার তথ্য বিভ্রাট হলেও সংখ্যালঘু বলতে শুধু হিন্দু সম্প্রদায়কে বোঝানো হয়নি। আর 'বাড়ি হারানো, পুড়িয়ে দেওয়া, জমি ছিনিয়ে নেওয়া'র তথ্যগুলো সরকার যাচাইবাচাই করে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলে আমি আশাবাদী।

তবে, এইভাবে অন্য দেশের রাষ্ট্রপতির কাছে নিজ দেশ নিয়ে, বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নিয়ে এই ধরনের নেতিবাচক মন্তব্য, অভিযোগ-এটি কোনো মহলের কাছেই গ্রহণযোগ্য হয়নি-এই সমালোচনাগুলো সত্যিই দেশপ্রেমের অংশ। প্রিয়া সাহার ব্যক্তিগত অভিযোগ বা মতামতের বিরুদ্ধে দল-মত ও গোত্রীয়ের উর্ধ্বে উঠে এইভাবে সমালোচনা, প্রতিবাদ, নিন্দা, ঘৃণা প্রকাশসহ উত্থাপিত তার বিচারের দাবিগুলোই প্রকাশ পায়- আমরাই বাঙালি, আমরাই বাংলাদেশ, দেশপ্রেমে আমরা সকলেই ঐক্যবদ্ধ।

 আমি ব্যক্তিগতভাবে প্রিয়া সাহাকে দোষারোপ করার আগে আমাদের কতিপয় রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গের দেশপ্রেম, বাংলাদেশের ভাবমুর্তি রক্ষায় তাদের নৈতিক দায়িত্ববোধের দিকে তাকাতে চাই।

পাঠকের নিশ্চয় মনে আছে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে আমাদের রাজনৈতিক নেতাদের বিদেশি প্রভুভক্তির কথা, কূটনৈতিক পাড়ায় তাদের আনাগোনা, উঠা-বসা আর দেন-দরবার করার গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদগুলোর কথা!

'ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে বিদেশি কূটনীতিকদের বৈঠক', শিরোনামে দেখবেন, 'একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠক করেছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। জোটের আহ্বায়ক ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে এ বৈঠক হয়। বুধবার (১৯ ডিসেম্বর ২০১৮) বেলা দুইটা থেকে রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে প্রায় দেড় ঘণ্টার এ বৈঠক হয়।

আবার একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর 'পুনর্নিবার্চন দিতে সরকারকে বোঝাতে কূটনীতিকদের আহ্বান ঐক্যফ্রন্টের'- এই শিরোনামে দেখবেন, 'আরেকটি ভালো নির্বাচন দেওয়ার জন্য সরকারকে বোঝাতে ঢাকায় কর্মরত বিদেশি কূটনীতিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। কূটনীতিকদের ঐক্যফ্রন্ট জানিয়েছে, সরকারের আগ্রাসনের জন্য দেশের জনগণ আকাঙ্খিত নির্বাচন পায়নি। দেশে গণতন্ত্র ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে পুনর্নির্বাচন দিতে ও জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিতে বিদেশি কূটনীতিকদের গঠনমূলক ভূমিকা রাখতেও অনুরোধ জানিয়েছে তারা'

পাঠক, তারও আগে যদি দেখেন অর্থাৎ, বাংলাদেশের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে যুক্তরাষ্ট্রের ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনে তদবির চালাতে বিএনপি ওয়াশিংটনে একটি 'লবিং ফার্ম' ভাড়া করেছে বলে রাজনীতি বিষয়ক ম্যাগাজিন পলিটিকো গত বছরের ১২ সেপ্টেম্বর তাদের প্রতিবেদনে বলেন, 'আব্দুল সাত্তার নামে বিএনপির একজন' গত অগাস্টে যুক্তরাষ্ট্রের 'ব্লু স্টার স্ট্র্যাটেজিস' এবং 'রাস্কি পার্টনার্স' এর সঙ্গে চুক্তি করেন, যাতে তারা বাংলাদেশের নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপির পক্ষে ট্রাম্প প্রশাসনের কাছে তদবির করে'

তার একদিন পরেই অর্থাৎ ১৩ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের আমন্ত্রণে তার সঙ্গে বৈঠক করতে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নিউ ইয়র্ক গেছেন বলে খবর ছড়ালেও এটি ছিল পরিকল্পিত মিথ্যাচার। আবার এই মিথ্যের উপর ভর করে বৈঠক শেষে বিএনপি মহাসচিব ওয়াশিংটন ডিসির উদ্দেশে রওনা হওয়ার সময় স্থানীয় সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বলেন, 'মহাসচিবের আমন্ত্রণে এ বৈঠকে এসেছিলাম। আসন্ন নির্বাচনসহ বাংলাদেশের সামগ্রিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে কথা হয়েছে। খালেদা জিয়ার সাথে সরকারের চরম বৈরী আচরণের প্রসঙ্গও স্থান পায় এ বৈঠকে'

অথচ, এই বৈঠক নিয়ে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলে জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র ফারহান আজিজ হক এক ই-মেইল বার্তা থেকে জানা যায়, 'জাতিসংঘে পদমর্যাদায় আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেলেরও পরে সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল বা সহকারী মহাসচিবদের অবস্থান। পদমর্যাদায় জাতিসংঘ মহাসচিবের পরে রয়েছেন একজন উপ মহাসচিব; তার নিচে রয়েছেন বর্তমানে ২১ জন আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল। এই আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেলদের সহায়তায় রয়েছেন বিভাগভিত্তিক অনেক সহকারী মহাসচিব। আর বিএনপির অনুরোধে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের সঙ্গে নয়, বরং সহকারী মহাসচিব মিরোস্লাভ জেনকা বিএনপি মহাসচিবকে সাক্ষাৎ দেন'

এখন খুব সহজ মনেই প্রশ্ন আসে, তাহলে দল বিএনপি এবং খোদ বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কেন এই মিথ্যের আশ্রয় নিলেন? তাদের সিনিয়র নেতাকর্মীরা বিভিন্ন সভা-সেমিনারে এই মিথ্যাকে সত্য করার আপ্রাণ চেষ্টা করেছিল কেন?

আবার, ২০১৫ সালের ৭ জুনের আরও একটি শিরোনাম 'মোদিকে খালেদা বললেন, বাংলাদেশে গণতন্ত্র অনুপস্থিত'- এ গেলেই দেখবেন, 'ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠকে বাংলাদেশে 'গণতন্ত্রের অনুপস্থিতির' কথা গুরুত্ব দিয়ে তুলে ধরেছে বিএনপি। দলটি বলেছে, বাংলাদেশে গণতন্ত্রহীনতা এ অঞ্চলের জন্য অস্থির পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে পারে'

পাঠক! উপরের শিরোনামগুলো এখানে উল্লেখ করেছি এই কারণে, আমাদের কতিপয় রাজনৈতিক দল ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ এদেশের জনগণকে কী শিক্ষা দিয়ে এসেছে, কী আদর্শ তৈরি করছে? বাংলাদেশের ভাবমুর্তি অক্ষুণ্ণ রাখতে তারা কী কী উদাহরণ জাতির সামনে সৃষ্টি করেছেন? এদেশে জনগণের কাছে না গিয়ে বিদেশী সরকার বা রাষ্ট্রপ্রধানকে বাংলাদেশের রাজনীতি ও নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করার জন্য বার বার আহ্বান করার কারণ কী?

হোয়াইট হাউজে গিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছে প্রিয়া সাহা নামের বাংলাদেশি নারীর অভিযোগ দেওয়ার এই শিক্ষা কে দিয়েছে- এটি আমাদের ভাবতে হবে! কারা পদ্মা সেতু নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে শেখ হাসিনা ও বাংলাদেশ নিয়ে মিথ্যাচার করে আমাদের ভাবমুর্তি নষ্ট করার ষড়যন্ত্র করেছে-এটিও বিজ্ঞ পাঠক অবগত আছেন বলে আমার বিশ্বাস।

আজ সামাজিক অবক্ষয়, মেয়ে শিশু থেকে ছেলে শিশু, নারী থেকে শত বছরের বৃদ্ধাও ধর্ষণের বর্বরতা থেকে রক্ষা পাচ্ছে না। কারণ, আমাদের কতিপয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ এখন আর জনগণের সেবা করার জন্য, জনগণের পাশে থেকে তাদের দুঃখকষ্টগুলো শেয়ার করার জন্য রাজনীতি করে না, তাদের সচেতন করে গড়ে তোলার জন্য রাজনীতি করে না। ক্ষমতাকেন্দ্রিক রাজনীতি প্রভুভক্ত করে তুলেছে। আর তাই জনগণের দোরগোড়ায় না গিয়ে রাশিয়া থেকে চীন, যুক্তরাষ্ট্র থেকে ভারত নেতাদের কাছে সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত নিয়ে বাংলাদেশ ও বাংলাদেশের জনগণের মান-মর্যাদা প্রশ্নবিদ্ধ করে আসছে, করছে।

আমি মনে করি, ব্যক্তি প্রিয়া সাহার চেয়েও সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রভুভক্ত ও প্রভুদের কাছে আচার-বিচার বা অভিযোগ অনেক ভয়ঙ্কর। তারপরেও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছে প্রিয়া সাহার উত্থাপিত অভিযোগ অগ্রহণযোগ্য হলেও খতিয়ে দেখার প্রয়োজনবোধ করছি।

প্রিয়া সাহা পরিচিত মুখ। সুশীল সমাজের উঠা-বসাসহ বিভিন্ন সেভা-সেমিনারেও তার স্বক্রিয় অংশগ্রহণ প্রকাশিত। তিনি একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের (এনজিও) শীর্ষ ব্যক্তিও। অন্যদিকে সংখ্যালঘুদের অধিকার রক্ষা বিষয়ক পরিচিত সংগঠন হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদেও কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদকের একজন। আর ব্যক্তিগত উদ্যোগে প্রিয়া সাহা ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন বলে দাবি করেছেন হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের রানা দাশগুপ্ত।

তবে, প্রিয়া সাহাকে কেন্দ্র করে যেভাবে হিন্দু সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে উসকানি ছাড়ানো হচ্ছে, এটি দুঃখজনক এবং এ ব্যাপারে আমাদের সবাইকে সচেতন-সাবধান হওয়া জরুরি বলে আমি মনে করছি। এক প্রিয়া সাহা বাংলাদেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব করছে না। আর হিন্দু সম্প্রদায়ের ব্যক্তিরাও প্রিয়া সাহার এই ধরনের কর্মকাণ্ডে মর্মাহত, ব্যথিত। বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ইতিবাচক দৃষ্টান্ত আমাদের সবাইকে মনে রাখতে হবে, ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে।

ইতোমধ্যে পদ্মাসেতুতে মানুষের মাথা লাগবে- এই গুজব ছড়িয়ে 'ছেলেধরা' বলে গণপিটুনিতে বেশ কয়েকজনকে হত্যা করেছে। শনিবার (২০ জুলাই) খোদ রাজধানীর উত্তর বাড্ডায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে 'ছেলেধরা' সন্দেহে মানসিক রোগী রেনু নামের এক নারীকে পিটিয়ে হত্যা করেছে বিক্ষুব্ধ জনতা।

 আমাদের একটা কথা মনে রাখতে হবে, শেখ হাসিনার শাসনামলে তার সরকারের বিরুদ্ধে বড় ধরনের কোনো আন্দোলন দাঁড় করাতে পারেনি কোনো মহল। বিদেশিদের দিয়েও নানানভাবে চেষ্টা করে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করাতে পারেনি। আর এখন প্রিয়া সাহার মতন একজন সচেতন নাগরীক সমাজের মানুষ কার এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে বাংলাদেশের ভাবমূর্তিকে প্রশ্নবিদ্ধ করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে এটি গভীরভাবে খতিয়ে দেখা জরুরি হয়ে পড়েছে। কারণ, বাংলাদেশে মোট জনসংখ্যার মধ্যে হিন্দু জনগোষ্ঠি ৮.৫ শতাংশ থেকে বেড়ে ১০.৫ শতাংশ হয়েছে। আর এটিও সম্ভব হয়েছে শেখ হাসিনার শাসনামলে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির কারণে।

অন্যদিকে ধর্মীয় ও গোত্রীয় উসকানি, ব্যক্তিগত দ্বন্দ্বে মিয়ানমার, ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, কাশ্মীর অঞ্চলসহ দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে সাম্প্রদায়িক হামলা-মামলাগুলো আমাদের বিবেচনায় রাখতে হবে। কারো উসকানিমুলক মন্তব্যে, অভিযোগে বা কর্মকান্ডে নিজ দেশ ও জনগণের ক্ষতি হয়-এমন কর্মকাণ্ড থেকে আমাদের সবাইকে সচেতন-সাবধান হতে হবে। বাংলাদেশের প্রতিটি মুসলমান এদেশের প্রতিটি হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টানসহ অন্যান্য ধর্মাবলম্বী মানুষের পাশে নিরাপত্তার বন্ধুত্বের বন্ধন তৈরি করবে-এটাই মনুষ্যত্বের পরিচয়, এটাই বাংলাদেশের পরিচয়।