আলিফ লাইলা-২: বিশ্ববিদ্যালয় র‌্যাংকিং খঞ্জের ঘোটকব্যাধি

শিশির ভট্টাচার্য্যশিশির ভট্টাচার্য্য
Published : 6 July 2019, 12:43 PM
Updated : 6 July 2019, 12:43 PM

[পূর্বকথা। তথাকথিত চরিত্রহীনা এক বেগমের পরকীয়ার যারপরনাই নারাজ হয়ে হিন্দুস্তানের বদমেজাজি বাদশাহ শাহরিয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন যে প্রতি রাতে তিনি এক যুবতীকে নিকাহ-এ-মুতা করবেন এবং ভোর হলেই এক রাতের সেই বেগমকে কতলের আদেশ দেবেন। কয়েক বৎসরে শত শত যুবতী বেঘোরে ইন্তেকাল ফরমালে ক্ষুরধার বুদ্ধিমতী উজিরকন্যা শেহেরজাদি করুণাপরবশ হয়ে বোন দিনারজাদির সঙ্গে সল্লা করে নিজেই বাদশা শাহরিয়ারকে নিকাহের প্রস্তাব দেন। প্রস্তাব গৃহীত হয়। জীবনের শেষ রাতে বেগম শেহেরজাদির আবদার রাখতে শ্যালিকা দিনারজাদিকে খবর দিয়ে আনা হয় বাসরঘরে। রাত গভীর হলে পূর্বপরিকল্পনামাফিক দিনারজাদি শেহেরজাদিকে বাংলাদেশের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় র‌্যাংকিং-এ না আসার কারণ জিজ্ঞাসা করেন। শেহেরজাদি একের পর এক কারণ বাৎলাতে শুরু করে দেন, কিন্তু ভোরের আজান শোনা মাত্র র‌্যাংকিং-কাহিনি বন্ধ করে নকশি-লেপ মুড়ি দিয়ে শুয়ে পড়েন। বাদশাহ যেহেতু বাকি কারণগুলো জানতে আগ্রহী ছিলেন, সেহেতু সেদিনকার মতো মৃত্যুদণ্ড বাতিল হয় শেহেরজাদির। আজ সেই সওয়াল জওয়াবের দ্বিতীয় রাত্রি।]

শোনো বোন দিনারজাদি! বিশ্ববিদ্যালয় র‌্যাংকিং-এ উপরের দিকে থাকার অন্যতম নিয়ামক শিক্ষার্থী বনাম শিক্ষক/কর্মকর্তার অনুপাত। বিশ্বের শ্রেষ্টতম একটি বিশ্ববিদ্যালয় অক্সফোর্ডে কর্মকর্তা-শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর অনুপাত ১:১১, অর্থাৎ প্রতি ১১ জন শিক্ষার্থীর জন্যে একজন শিক্ষক কিংবা কর্মকর্তা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা এর দশ বা বিশ গুণ বেশি হওয়া অসম্ভব নয়। কিন্তু এত বেশি শিক্ষার্থীর জন্যে এত কম শিক্ষক-কর্মকর্তা নিয়ে কখনই বিশ্ব র‌্যাংকিং-এর ধারে কাছেও যাওয়া যাবে না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বিশ্ব র‌্যাংকিং-এ অন্তর্ভুক্ত না হবার এটি পঞ্চম কারণ।

প্রাচীন যুগের ব্রাহ্মণের যজন, যাজন ও অধ্যাপনের মতো একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকেরও তিনটি কাজ থাকে: নিজে গবেষণা করা, শিক্ষার্থীদের দিয়ে গবেষণা করানো এবং অধ্যাপনা। এই তিনটি কাজ যারা জানেন না তারা পাশ্চাত্যে শিক্ষক হতেই পারেন না। গবেষণায় যাঁর আগ্রহ আছে, তিনি পি.এইচ.ডি. করতে করতে প্রকাশনা এবং অধ্যাপনার চেষ্টা করেন। বছর পাঁচেক এভাবে চলার পর এবং পি.এইচ.ডি. ডিগ্রি শেষ হলে কোথাও হয়তো প্রভাষক হিসেবে অস্থায়ী নিয়োগ পান। এর পর নির্দিষ্ট সংখ্যক প্রবন্ধ গবেষণা প্রকাশিত হবার পর সেই নিয়োগ স্থায়ী হয়। সহকারি অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক এবং অধ্যাপক পদে পদোন্নতি হবে পদ যদি থাকে তবেই। প্রতিটি পদে নতুন করে অস্থায়ী নিয়োগ দেওয়া হয় এবং নির্দিষ্ট সংখ্যক পিয়ার রিভিউড প্রবন্ধ জমা দিয়ে প্রতিটি নিয়োগ স্থায়ী করতে হয়। পাশ্চাত্যে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে মাধ্যমিক কিংবা স্নাতক পর্যায়ের ফলাফল নয়, গবেষণা এবং পাঠদানের ক্ষমতাই বিবেচ্য। সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা একেকজন জাত গবেষক হয়ে থাকেন। গবেষক নন কিংবা পি.এইচ.ডি নেই– এমন কেউ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হতেই পারেন না।

'বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক-নিয়োগ কীভাবে হয়?' জিগ্যেস করে দিনারজাদি। ভালো রেজাল্ট করা এম.এ. পাশ ছোকরারা শিক্ষক হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢোকে। কিন্তু ভালো ছাত্র মাত্রেই ভালো শিক্ষক হন না। তাছাড়া হঠাৎ করে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পাওয়া সেই ছাত্রেরা গবেষণা করতে সক্ষম কি না কিংবা আদৌ গবেষণা করার কোনো ইচ্ছা তাদের আছে কি না… এসব তথ্য ধর্তব্যের মধ্যেই আনা হয় না। নিয়োগপ্রাপ্ত তরুণ প্রভাষকদের একটি অতি ক্ষুদ্র অংশ নিজের চেষ্টায় ভালো শিক্ষক কিংবা গবেষক হয়ে উঠতে পারলেও সিংহভাগের সেই ক্ষমতা থাকে না। 'তিন তি বিনা নাহি গতি। জ্ঞানে মতি, প্রস্তুতি, গুরুভক্তি।' তিন তি-র কোনটিই যাদের নেই, তারা কীভাবে গবেষক হবে?

যদিও গবেষণা ছাড়া পদোন্নতি দেবার নিয়ম নেই, সবাই আগে পরে অধ্যাপক হয়েই যায়। বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে তথাকথিত গবেষণা পত্রিকাগুলো কাগজে-কলমে পিয়ার-রিভিউড দাবি করা হলেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই লেখক জানেন, রিভিউয়ার কে। রিভিউয়ারের উপর চাপ সৃষ্টি করা হয়। চক্ষুলজ্জার খাতিরেই হোক, কিন্তু সহমর্মীতার কারণেই হোক, শিক্ষকেরা একে অপরের পৃষ্ঠপোষণ করেন, করতে বাধ্য হন। সেই সাহস কি কারো আছে যে রিফিউজ করবে কোনো প্রবন্ধ? সাহস করে এই সত্যি কথাটা কি বলতে পারবে কোনো রিভিউয়ার এই জীবনে: 'বাপুহে, তোমার প্রবন্ধের মান নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থীর গরু রচনার সমতুল্য নয়!' প্রত্যেকের ঘাড়ে মাথা তো একটাই, নাকি? কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে অর্জুন যেমন কৃষ্ণকে বলেছিল: 'ওহে সখা, যারা আমার সঙ্গে যুধ্যমান, তারা সবাই আমার ভাই, বন্ধু, আত্মীয়, পরিচিত। এদের বুকে কী করে শর নিঃক্ষেপ করবো!' 'সীদন্তি মম গাত্রানি, মুখং চ পরিশুষ্যতি!' অর্থাৎ 'আমার গায়ে ঘাম হচ্ছে, মুখ শুকিয়ে যাচ্ছে।' সবাই সবার মুখচেনা এবং চেনামুখ রক্ষা না করে উপায় কি!

ফলে যা হবার তাই হচ্ছে। পাগলে কী না বলে, ছাগলে কী না খায়? সবই ছাপা হয় এবং সবাই প্রমোশন পায়। সিংহভাগ প্রবন্ধ, অভিসন্ধর্ভ 'গরুমার্কা', যেগুলো লেখার উদ্দেশ্য আদৌ গবেষণা নয়, পদোন্নতি মাত্র। যিনি গরুমার্কা প্রবন্ধ লিখে পদোন্নতি পেয়ে অধ্যাপক হয়েছেন, তার সঙ্গেই অন্যরা পি.এইচ.ডি. করছে। রতনে রতন চেনে। একই রকম পালকের পাখি একসাথেই উড়ে। এভাবে মূর্খে ভরপুর হয়ে যাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়, সারা বাংলাদেশ। ছাইভস্ম লিখে একেকজন অধ্যাপক হয়ে যাচ্ছে এবং অধ্যাপক হবার পর সেই ছাইভস্মও আর লিখছে না। বিশ্ববিদ্যালয় ভাবছে: 'যেখানে দেখিবে ছাই, উড়াইয়া দেখ তাই!' ছাই হাল্কা জিনিষ, উড়ে যায়, মানিক রতন কখনও মিলে না। কেউ যদি বলে যে অধ্যাপকদের বেতন দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় বেহুদা ভস্মে ঘি ঢালছে! – তবে সে খুব একটা ভুল বকছে না।

লেখাপড়া না করাটাই আজকাল দস্তুর, কী বিশ্ববিদ্যালয়ে, কী কলেজে, সমাজের সর্বত্র। পরীক্ষার রেজাল্ট ভালো হচ্ছে, কিন্তু লেখাপড়া হচ্ছে না। সকল শিক্ষক বিবিধ ধান্ধায় ব্যস্ত। লেখাপড়ার পরিবেশই বা কোথায়, প্রয়োজনই বা কী! শতকরা পাঁচজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকও বাংলা কিংবা ইংরেজি ঠিকঠাকমতো লিখতে পারেন না। এর জন্যে কে দায়ী, প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের লেখাপড়ার ঘাটতি এর কারণ কিনা, সেটা গবেষণা ছাড়া বলা সম্ভব নয়। তবে একটু খেয়াল করলেই বোঝা যায়, বাংলাদেশের পরিবার, সমাজ কিংবা সরকার গবেষণা কিংবা চিন্তাপ্রবণ নয়। গবেষণায় সরকারি বিনিয়োগের পরিমান যদিও শূন্যের কাছাকাাছি, তবু সরকার প্রতিমাসে গবেষণার জন্যে কয়েক হাজার টাকা দেন প্রত্যেক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষককে। এই সামান্য টাকায় গবেষণা হয় না, ঠিক আছে, কিন্তু এই টাকায় শিক্ষকেরা বই কিনলেও তো বাংলাদেশের প্রকাশনা শিল্প বিকশিত হয়ে আজ কোথায় চলে যেতো। কিন্তু বেশিরভাগ শিক্ষকের ঘরে বই দূরে থাক, আগে যে ব্যাংকের চেকবই ছিল, ক্রেডিট কার্ড এসে ইদানিং সেটাও গেছে। বইহীন একটা পরিবেশে শিক্ষকেরা কিংবা শিশুরা কীভাবে মননশীল হয়ে গড়ে উঠবে?

গোঁদের উপর বিষফোড়ার মতো আশির দশকে শুরু হয়েছিল রিস্ট্রাকচারিং নামের এক কুপ্রথা পাশ্চাত্যের বিশ্ববিদ্যালয়ে কিংবা ৭৩-এর অধ্যাদেশে যার অস্তিত্ব নেই। মুহম্মদ শহীদুল্লাহর মতো পণ্ডিত অধ্যাপক হতে পারেননি, কারণ তাঁর বিভাগে পদ ছিল না। এখন পদ থাকার প্রয়োজন নেই। নির্দিষ্ট সংখ্যক বছর সার্ভিস দেবার পর, প্রয়োজনীয় সংখ্যক গবেষণার প্রমাণ দেখিয়ে কিংবা তার পরিবর্তে অন্য কোনো সার্ভিস দেখিয়ে যে কেউ অধ্যাপক হতে পারবেন। সমস্যা হচ্ছে, এই রিস্ট্রাকচার্ড অধ্যাপক মহোদয় অবসরে গেলে কোনো অধ্যাপক পদ খালি হবে না। খালি হবে যে পদে তিনি আদতে ছিলেন সেই সহকারী বা সহযোগী অধ্যাপক পদটি, যার মানে হচ্ছে, রিস্ট্রাকচার্ড অধ্যাপক অনেকটা ভিতরে টয়োটার ইঞ্জিনযুক্ত মার্সিডিস গাড়ির মতো। ঈশপের গল্পের সিংহচর্মাবৃত গর্দভ। পাশ্চাত্যে একটি অধ্যাপক পদের জন্যে শিক্ষকদের মধ্যে তীব্র প্রতিযোগিতা হয় এবং যিনি সর্বাধিক যোগ্য তিনিই পদোন্নতি পান। বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে মুড়ি-মুড়কির একদর। এই পরিবেশে শিক্ষকেরা গবেষণা করতে উৎসাহী হবেন কেন? গবেষণা-বিমুখ পরিবেশে বেড়ে ওঠা এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বিশ্বসেরা বিশ্ববিদ্যালয়ই বা হবে কীভাবে?

পদোন্নতির জন্য গবেষণাকে বাধ্যতামূলক করা বাঙালির সামাজিক-মানসিক প্রবণতার সঙ্গে একেবারেই সঙ্গতিপূর্ণ নয়। স্বাভাবিক কামকে বাধা দিলে মানুষ বিকৃতকামের আশ্রয় নেবেই নেবে। গবেষণা করার লোক যে নয়, তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দিয়ে গবেষণা করতে বাধ্য করা হলে সে পরিত্রাণের পথ খুঁজবেই। এর মানে হচ্ছে, আমাদের নিয়োগ প্রক্রিয়ার মধ্যেই গলদ রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের যাবতীয় সমস্যার শুরু এখানেই। যার কাজ তার সাজে, অন্য লোকের লাঠি বাজে। শিক্ষা-গবেষণায় অনধিকারী শিক্ষকদের নিয়ে র‌্যাংকিং-এর স্বপ্ন দেখা সাধু বাংলায় 'খঞ্জের ঘোটকব্যাধি' বা চলিত বাংলায় 'খোঁড়ার ঘোড়ারোগ'।

বাংলাদেশে বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণাখাতে বিনিয়োগের পরিমাণ অতি সামান্য। গবেষণার জন্য প্রয়োজনীয় ফান্ড চেয়ে কেউ আবেদন করতে চায় না, কারণ যে সামান্য অর্থ দেওয়া হয় তা দিয়ে গবেষণা হয় না। ফান্ড পেতেও হাজার হ্যাপা এবং পাওয়াও আরেক 'প্যাড়া'। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা করতে উৎসাহও দেওয়া হয় না। কর্তারা বড় গলায় বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় দুই প্রকার: রিচার্স বিশ্ববিদ্যালয় এবং টিছিং বিশ্ববিদ্যালয়। ঢাবি যেহেতু 'টিছিং' বিশ্ববিদ্যালয়, গবেষণা এখানে অতটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকেরাও বুড়োহাবড়াদের এইসব রূপকথা বিশ্বাস করতে শুরু করেছে। বিরল দুই একজন বাদে গবেষণা খুব একটা কেউ করে না এই বিশ্ববিদ্যালয়ে। বাংলাদেশে প্রাইভেট-পাবলিক কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা হচ্ছে না বললেই চলে। গবেষণাহীনতায় কে বাঁচিতে চায় রে, কে বাঁচিতে চায়! পৃথিবীর বেশিরভাগ জাতি চায় না, বাঙালিরা চায়। শিক্ষক নিয়োগে গলদ র‌্যাংকিং থেকে বাদ পড়ার ষষ্ঠ কারণ। এর ফলশ্রুতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণাহীনতা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় র‌্যাংকিং থেকে বহু দূরে ছিঁটকে পড়ার সপ্তম এবং অন্যতম প্রধান কারণ।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাদা দলের এক জনপ্রিয় নেতা-শিক্ষক কথাপ্রসঙ্গে বলছিলেন যে গত কয়েকটি নির্বাচনে তিনি হেরেছেন বটে, কিন্তু তাঁর ভোট কিন্তু কমেনি। বেশ কয়েক বছর ধরে শিক্ষক সমিতি নির্বাচনে প্রায় সব সিট পেয়ে আসছে নীলদল, কারণ গত ৮/১০ বছরে সব পদে নীল দলের সমর্থকেরাই নিয়োগ পেয়েছেন এবং তাদের প্রায় কাউকেই ঐ শিক্ষক ভাগিয়ে আনতে পারেননি। ধরা যাক, একজন প্রার্থীর রেজাল্ট ভালো, বিদেশি ডিগ্রিও আছে, কিন্তু প্রার্থীর বাবা হয়তো ক্ষমতাসীন দলকে সমর্থন করে না কিংবা প্রার্থীর দাদা বা নানা ছিল স্বাধীনতাবিরোধী রাজাকার। এমন প্রার্থী কখনই নিয়োগ পাবেন না নীল দলের আমলে। আবার এই প্রার্থীকেই হয়তো লুফে নেওয়া হবে সাদা দল ক্ষমতায় থাকলে। অনেক সময় খাঁটি আওয়ামি সমর্থককেও 'রাজাকার' তকমা দিয়ে অন্যায়ভাবে বাদ দেয়া হয়। শিক্ষকদের সন্তানেরা অনেকেই শিক্ষক হচ্ছেন, বিশেষত বাণিজ্য অনুষদে এবং এ ধরনের নিয়োগে স্বজনপ্রীতির অভিযোগ বিরল নয়, যদিও আবার কিছু ক্ষেত্রে শিক্ষকের সন্তান– কেবল এই অজুহাতেই বাদ দেওয়া হচ্ছে উপযুক্ত প্রার্থীকে। তবে মূলত দলবাজিই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে উপযুক্ত শিক্ষক নিয়োগে প্রধানতম বাধা। অনুপযুক্ত, অনধিকারী ব্যক্তিরা শিক্ষক হয়েও বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারেন না, কারণ, প্রথমত তাদের মেধা নেই, দ্বিতীয়ত, দলের নেতাদের কথামতোই তাদের চলতে হয়। সব শিয়ালের এক রা, কিন্ত সব শিয়াল মিলেও যে সত্যি কথা বলবে, তার নিশ্চয়তা কী? শিয়াল বলে কি মানুষ নয়!

['আল্লাহু আকবর!' মুয়াজ্জিন ভোরের আজান দিলেন। শেহেরজাদি পূর্বরাত্রির মতোই র‌্যাংকিং-কাহিনি বলা বন্ধ করে, ফজরের নামাজ পড়ে, নকশি-লেপ মুড়ি দিয়ে শুয়ে পড়লেন। র‌্যাংকিং থেকে বাদ পড়ার এত এত কারণ রয়েছে যে সেগুলো দুই এক রাত্রিতে বলে শেষ করা অসম্ভব। বাকি কারণগুলো জানার প্রবল আগ্রহ ছিল বলে শেহেরজাদির মৃত্যুদণ্ড তৃতীয় রাত্রি পর্যন্ত স্থগিত করে বাদশা শাহরিয়ার নামাজ ও রাজকার্যে বহির্গত হলেন।]