ধর্ষিতা-বলাৎকার ট্যাবু এবং ‘ধর্ষণের শিকার’ হয় পুরুষও  

আইরিন সুলতানাআইরিন সুলতানা
Published : 7 May 2019, 11:13 AM
Updated : 7 May 2019, 11:13 AM

অক্সফোর্ড ডিকশনারিতে রেইপ শব্দের অর্থ বলা হয়েছে, এটি একটি অপরাধ যা একজন পুরুষের (man) দ্বারা হয়ে থাকে যেখানে অপর ব্যক্তির (person) ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়ে অপরাধী তার সঙ্গে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করে।

কেমব্রিজ ডিকশারি রেইপ শব্দের অর্থ ব্যাখ্যায় বলছে,  অনিচ্ছুক হওয়ার পরও কাউকে (someone) নিপীড়ন-নির্যাতনের মাধ্যমে যৌন সম্পর্কে বাধ্য করা।

ইংরেজিতে পুরুষকে 'হি' আর নারীকে 'শি' বলা হলেও রেইপ শব্দটি নারী বা পুরুষের জন্য আলাদা করে নেই। 'রেইপ ভিকটিম' ব্যবহার করা হয় যিনি ধর্ষণের শিকার হচ্ছেন তার জন্য, রেপিস্ট  ব্যবহার করা হয় যিনি ধর্ষক তার জন্য।

অবশ্য বাংলা ভাষায় আমরা অনেক গভীরে চলে গেছি ধর্ষণ নিয়ে। শব্দ উৎপত্তির প্রয়োজনীয়তা ও এর প্রচলন গবেষণা করে সামাজিক মনস্তত্বকেও যে চেনা যায় তার জলন্ত দৃষ্টান্ত আমাদের সমাজে 'ধর্ষিতা' শব্দটি। ধর্ষকের দ্বারা ধর্ষণের শিকার হওয়া নারীকে পরিচয় করিয়ে দিতে 'ধর্ষিতা' শব্দটি চালু করতে হয় যে সমাজকে সে সমাজ দৈন্য।

তবে ধর্ষিতা শব্দের মধ্যে বিপুল পুলকবোধ খুঁজে পাওয়া সমাজেও দিনে দিনে অধিকার সচেতনতা বাড়তে থাকায় তুলনামূলকভাবে কাগজে-কলমে কমে আসছে এই শব্দের ব্যবহার।  এখানে মিডিয়ার ভূমিকা প্রশংসনীয়। সংবাদে এখন ধর্ষিতা নয়, শিরোনামে-বিবরণে লেখা হয় 'ধর্ষণের শিকার'। ভিকটিম অথবা নির্যাতিত নারীকে 'ধর্ষিতা' হিসেবে পরিচয় করিয়ে তাকে পুনরায় অবমাননা করা থেকে সরে আসার মত দায়িত্ব দেখাচ্ছে অনেক মিডিয়া হাউজ।

এরপরও কিছু আগডুম-বাগডুম ডটকম ও ফেইসবুক পেইজ সর্বস্ব পত্রিকা পরিচয়দানকারী খবরের সাইট সমাজের কতিপয় অসুস্থ মানসিকতার মানুষকে পাঠতৃপ্তি দিতেই বোধহয় সংবাদের শিরোনামে-বিবরণে 'ধর্ষিতা' জুড়ে হিট কামিয়ে নেন। তাদেরই বা দোষ কী? ধর্ষিতা শব্দটি তো বাংলা একাডেমির অভিধানেই রয়েছে।

বাংলা একাডেমির ব্যবহারিক বাংলা অভিধানে (দ্বাদশ মুদ্রণ, ২০১০) ধর্ষিতা একটি স্ত্রীবাচক শব্দ।  'বলপূর্বক (কোনো নারীর) সতীত্ব নষ্ট করা হয়েছে এমন' হচ্ছে বাংলা একাডেমির ধর্ষিতা শব্দের ব্যাখ্যা।

আমাদের সমাজে নারীর সতীত্ব এতটাই বদ্ধমূল ধারণা যে, ধর্ষণের শিকার হওয়া নারীটিকে সমাজ প্রথমেই বিচার করে নেয় সতীত্ব নষ্ট হওয়া নারী হিসেবে। ধর্ষণ নিয়ে সমাজের যেটুকু উৎকণ্ঠা সেটা আসলে নারীর মর্জির বাইরে গিয়ে নির্যাতনের মধ্যে দিয়ে যৌন সম্পর্ক করে তাকে শারীরিক ও মানসিকভাবে অবমাননা করা নিয়ে নয়। একটি ধর্ষণ ঘটনার পর সমাজের হায় হায় রব আসলে  'গেল গেল হাইমেন ছিঁড়ে গেল' নিয়ে। ধর্ষিতা অর্থ সতীত্ব নষ্ট হওয়া নারী উল্লেখ করে ভাষার মর্যাদা ধরে রাখার পীঠস্থান বাংলা একাডেমি সেই সমাজের অংশ হয়ে উঠতে পেরেছে।

আগে হিন্দি সিনেমায় ইংরেজিতে রেইপ বা রেইপড শব্দটি বলা হতো না খুব একটা। হিন্দিতে 'বলাৎকার' শব্দটিই শোনা যেত নিয়মিত। এর বাইরে শোনা বা পড়া হয়নি বলে বলাৎকার যে বাংলা শব্দ তা বুঝে ওঠার সুযোগ হয়নি।

আজকাল খবরে নিয়মিত বলাৎকার বা বলৎকার শব্দটির ব্যবহারে বুঝি এটাও তাহলে বাংলা শব্দ। বাংলা অভিধানে ধর্ষণের যে কয়েকটি অর্থ উল্লেখ করা আছে তার একটি বলাৎকার। এই বলাৎকারের অর্থ বলা হয়েছে 'বলপূর্বক গ্রহণ'। এর অর্থ বা উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে নারীধর্ষণ। আমাদের মনোজগতে ধর্ষণ অপরাধে নিপীড়িত হিসেবে শুধু নারীকেই ভাবা হয় বলেই বুঝি সরাসরি নারীধর্ষণ লেখা যায় অভিধানে।

বিভিন্ন মিডিয়ার সংবাদ খুঁজে-পড়ে বুঝতে পারলাম,  যখন ছেলে বা কিশোর বা পুরুষ 'ধর্ষণের শিকার' হচ্ছে তখন তাকে 'ধর্ষিত' তো বলছেই না, ধর্ষণের শিকারও বলা হচ্ছে না। মনস্তত্বটা খুব স্পষ্ট এখানে- নারীর ক্ষেত্রে  ধর্ষণ ও ধর্ষণের শিকার; পুরুষের ক্ষেত্রে বলাৎকার ব্যবহার করা হচ্ছে।

কেন এমন শব্দগত পার্থক্য করা হলো? এর মধ্যে দিয়ে নারী ও পুরুষকে ধর্ষণে এই যৌন প্রক্রিয়াটির বিশেষ কোনো পার্থক্য বোঝাতে চাওয়া হচ্ছে কি? পুরুষের হাইমেন নষ্ট হচ্ছে না বুঝিয়ে পুরুষকে আলাদা রাখতে কি বলাৎকার শব্দের ব্যবহার?

মি-টু আন্দোলনকে  পুরোপুরি নারীমুখী করে দেওয়ায় হতাশ হয়েছিলাম। তারপর যখন অনেক পুরুষ যৌন নিপীড়িত নারীর পক্ষে আছেন বলে ঘোষণা দিয়ে বেড়াচ্ছিলেন, তখনও মনের মধ্যে খচ খচ চলছিল। নারীকে সমর্থন দিযে বেড়ানোর বদলে পুরুষ কেন নিজের জন্য 'হ্যাশট্যাগ মি টু' লেখেনি?

পুরুষ নারীকে ধর্ষণ করে নারীর কর্তৃত্ব নিতে চায়। পুরুষ ধর্ষণের শিকার নারীর পাশে দাঁড়িয়েও নারীর কর্তৃত্ব নিতে চায়। অথচ বাস্তব তো এটাও যে শুধু নারী নয়, পুরুষও হতে পারে যৌন নিগ্রহের শিকার। পুরুষ নিজেও যে পুরুষ দ্বারাই ধর্ষণ হচ্ছে এবং হতে পারে সে কথা কই? পুরুষ কি মেল-ইগোতে ভুগে চেপে যাচ্ছে সে সব কথা?

নারী যৌন হয়রানির শিকার হবে তা নিয়ে কন্যা সন্তানের জন্মের পর থেকেই বিচলিত হয়ে ওঠে পরিবার। এরপর রয়েছে সমাজও। নারীর সঙ্গে এমন ভয়াবহ অপরাধ হয়ে গেলে রাষ্ট্রও তৎপর হয়।  মাদ্রাসার শিক্ষার্থী নুসরাতের বেলায় যেমন বিচলিত হয়েছে রাষ্ট্র। উচ্চ আদালত এই বিচার প্রক্রিয়ায় ঢিমেতাল হলে প্রয়োজনে হস্তক্ষেপ করারও ঘোষণা দিয়েছে। প্ল্যাকার্ড হাতে ছবি তুলে নারীবাদী আর প্রগতিশীলরাও রাজপথে নেমেছেন। কী বলছে রাজপথে-পত্রযাত্রায় তাদের ব্যানার আর প্ল্যাকার্ড?

'নুসরাত হত্যার বিচার চাই'।'অপরাধীর ফাঁসি চাই'। নুসরাত যখন থেকে প্রাণ সঙ্কটে তখন থেকে ঘটনাটি আমলে রেখেছে সরকার। অবশ্য নুসরাতের সঙ্গে আগেও যৌন হয়রানির ঘটনা ঘটেছে যা সে প্রশাসনের নজরে আনতে গিয়ে সহযোগিতার বদলে হেনস্তা হয়েছে।  তখন ব্যবস্থা নিলে নুসরাত হয়ত বেঁচেই যেত। এমন নির্লিপ্ততার দায় একা প্রশাসনেরই কি?  নুসরাত যতক্ষণ জীবন-মৃত্যুর সঙ্কটকাল পার করছিল হাসপাতালে, তখনও তো অপরাধীর বিচার চেয়ে পদযাত্রা হয়নি নারীবাদী-প্রগতিশীলদের। নুসরাত মরে গেলে তবেই না অপরাধীর ফাঁসির দাবিতে তপ্ত হবে পদযাত্রা!

রাষ্ট্র যখন দায় নিয়েছে নুসরাত হত্যার বিচারের তখন গতানুগতিক স্লোগানগুলো আরো বেশি ক্লিশে ঠেকে। বরং নারীবাদী-প্রগতিশীলরা আরো গভীরে ভাবতে পারেন ঘটনার। সময় থাকতে ব্যবস্থা নিলে যদি এই ভয়াবহতা, এই হত্যা ঠেকানো যায়, তাহলে সময়ের কথা, সময়ের দাবি নিয়ে পদযাত্রা করতে হবে নারীবাদী-গ্রগতিশীলদের। এবং মানবাধিকার কমিশনকেও।

যখন মাদ্রাসার কিছু মেয়ে শিক্ষার্থীদের নুসরাতকে যৌন হয়রানি করা মাদ্রাসার শিক্ষক সিরাজ-উদ-দৌলার পক্ষে মিছিল করতে দেখি, তখন উপলব্ধি হয়, কী বিচিত্র মনোজগতে, মানসিক চাপে আবদ্ধ রেখে এদের বড় করা হচ্ছে। এই শিশুদের শারীরিক-মানসিক নিরাপত্তার জন্য পদযাত্রা কে করবে? এই শিশুদের সঙ্গে আজ হওয়া ও আগামী হতে চলা যৌন অত্যাচার আগাম ঠেকাতে এগিয়ে আসবে কি মানবাধিকার কমিশন?

অবশ্য এই এগিয়ে আসার ঠিক আগের পদক্ষেপটি হচ্ছে, ধর্ষণ আসলে কী তা বোঝার মত পরিপক্কতা আনা। নারীর সতীত্ব নষ্ট হচ্ছে এই ধারণা নিয়ে ধর্ষণ-ধর্ষকের বিচার চাওয়া মানে নারীকে পুনরায় হেয় করা। নারীকেই ধর্ষণ করা যায়, এমন চিন্তার প্রতিষ্ঠা করে  নারীকে সামাজিক-মানসিকভাবে দুর্বল করেও ফেলা হচ্ছে। আর এসবের মধ্যে আড়ালে থেকে যাচ্ছে ছেলেশিশু-কিশোরকে ধর্ষণের ঘটনাও।

মিরপুর শেওড়াপাড়ার মাদ্রাসা থেকে কেরানীগঞ্জের মাদ্রাসার ছেলেশিশু; দিনাজপুরের বীরগঞ্জের মাদ্রাসা হোক অথবা ঢাকার মোহাম্মদপুরের মাদ্রাসার কিশোর; এদের সঙ্গেও প্রতিনিয়ত ঘটছে যৌন অত্যাচার। ঘটছে যৌন হয়রানি সংশ্লিষ্ট আত্মহত্যা ও হত্যার ঘটনাও। 

যৌন হয়রানি শুধু নারীকেই করা যায় এমন ধারণা থেকে বেরিয়ে আসার প্রক্রিয়ায় রয়েছে ভারত। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যৌন হয়রানির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া নিশ্চিত করতে  ২০১৬ সালে ভারতের বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের দেওয়া নির্দেশনায় স্পষ্ট করে বলা হয়েছিল, যৌন হয়রানি জেন্ডার নিরপেক্ষ (sexual harassment is gender neutral)। তাই শিক্ষার্থী যে লিঙ্গেরই (all sexes) হোক না কেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে তার অভিযোগ আমলে নিয়ে ব্যবস্থা নিতে হবে।

হ্যা, এর অর্থ তাহলে এও দাঁড়াচ্ছে যে একজন হিজড়া, যাকে আমাদের রাষ্ট্র লৈঙ্গিক মর্যাদা দিলেও সমাজে লিঙ্গহীন বলেই যিনি বিবেচিত, তিনিও যৌন হয়রানির শিকার হতে পারেন এবং আইনগতভাবে এর বিচার পাবার অধিকার রাখেন। কিন্তু যৌন হয়রানি ও ধর্ষণ নিয়ে নারী ও শিশু জন্য আইন থাকলেও পুরুষ ও হিজড়াদের জন্য আমাদের দেশের আইনে কিছু নেই।

নিরুপায় এক অনুভূতি নিয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে চোখ বুলিয়ে পেলাম নারীর জন্য প্রণিত একটি রাষ্ট্রীয় আইনে ধর্ষণের শিকার নারীকে পরিচয় করাতে তিনবার 'ধর্ষিতা' শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে।

'যদি কোন ব্যক্তি কর্তৃক ধর্ষণ বা উক্ত ধর্ষণ পরবর্তী তাহার অন্যবিধ কার্যকলাপের ফলে ধর্ষিতা নারী বা শিশুর মৃত্যু ঘটে' অথবা 'যদি পুলিশ হেফাজতে থাকাকালীন সময়ে কোন নারী ধর্ষিতা হন' অথবা 'সেই ব্যক্তি বা ব্যক্তিগণ ধর্ষিতা নারীর হেফাজতের জন্য সরাসরিভাবে দায়ী ছিলেন'

এসব বাক্যে নারীকে 'ধর্ষিতা' হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিয়ে আইনই নারীকে সামাজিকভাবে অরক্ষিত করে দিল। আইনই যখন নারীকে ধর্ষিতা বলে ডাকে, তাহলে সমাজ তো ওই নারীকে তার বাকি জীবন  'ধর্ষিতা' পরিচয় থেকে নিস্তার দেবে না কখনই।

আইনে শিশু বলতে কন্যাশিশু না ছেলেশিশু তা স্পষ্ট করা হয়নি।  আমি কিছুটা আশ্বস্ত হয়েছিলাম এই ভেবে, তাহলে এই আইনেই মাদ্রাসায় যৌন নির্যাতন ও ধর্ষণের শিকার ছেলেশিশুদের জন্য বিচার চাওয়া যেতে পারে। আমার যুক্তিকে নিমিশেই পরাহত করে কেউ কেউ জানালেন, এমন সুযোগ নেই;  এই আইন কন্যাশিশুর জন্যই। ছেলেশিশুদের যৌন নির্যাতক  ও ধর্ষকের বিচার চাওয়ার জন্য এই আইন ব্যবহারের কোনো নজির নেই।

কিন্তু কেন? আমাদের সমাজ ২০১৯ সালে এসেও মনে করে পুরুষকে ধর্ষণ করা যায় না; পুরুষকে যৌন হয়রানি করা যায় না; পুরুষকে যৌন নির্যাতন করা যায় না। তাহলে আর আইন করার ভাবনাটা আসবে কোথা থেকে?

এই যে মাদ্রাসার ছেলেশিশুরা অকথ্য যৌন নির্যাতনের শিকার হচ্ছে সেই সব ধর্ষকের বিচার চাওয়ার উপায় কী তবে? বাংলাদেশের দণ্ডবিধি আইনের ৩৭৭ ধারায সমকামকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করে যে শাস্তির বিধান আছে, মাদ্রাসার ছেলেশিশুকে যৌন হয়রানির অপরাধগুলোকে 'সম্ভবত' এই আইনে ফেলা হয়ে থাকে। সম্ভবত বলার কারণ এটাই যে, এ ধরনের ঘটনাগুলোতে পরে আইনগতভাবে কীভাবে-কী প্রমাণ হলো, কী শাস্তি হলো তা নিয়ে কখনই কোনো খবর চোখে পড়ে না সাধারণত। অথবা শাস্তি চেয়ে কখনই শাহবাগে বড় ব্যানারে আন্দোলনে নামেনি কেউ; টকশোতে গলা তোলেনি কোনো বক্তা।

অথচ ৩৭৭ ধারায় এমন অপরাধ ফেলার অর্থ রাষ্ট্র পুরুষ ধর্ষণের অপরাধটি নিয়ে লুকোচুরি করছে।

উন্নয়ন মানে কংক্রিটের উঁচু উঁচু সেতু নয়; উন্নয়ন মানে শুধু হাই স্পিড ইন্টারনেটে যোগাযোগ নয়; সমাজে মানবিক অধিকারগুলো কতটা উঁচু স্তরে উঠেছে, আইন এর ভাষা ও প্রয়োগ নিয়ে সর্বস্তরের অধিকার রক্ষায় যোগাযোগ করতে কতটুকু সক্ষম হচ্ছে তা দিয়েও উন্নয়নকে চুলচেরা মাপতে হবে।

এ সমাজ এও ভাবতে জানে না একজন নারীও পুরুষকে যৌন হয়রানি করতে পারে। অথচ আমেরিকা, যুক্তরাজ্য এমনকি  ভারতও নারীর দ্বারা পুরুষের যৌন হয়রানি হওয়ার ঘটনাগুলো আমলে নিয়ে প্রমাণ পেয়ে শাস্তি নিশ্চিত করেছে।

অর্থ্যাৎ ধর্ষণ জেন্ডার সংবেদনশীল হতে পারে না। একজন ব্যক্তি  মর্জির বাইরে গিয়ে, ধোঁকা দিয়ে অথবা নির্যাতন করে অপর ব্যক্তির সঙ্গে  যে শারীরিক প্রক্রিয়াতেই যৌন সম্পর্ক করে থাকুক, সেটাকে ধর্ষণ বলতে দ্বিধা করা যাবে না। এখানে ব্যক্তি মানে নারী অথবা পুরুষ অথবা হিজড়া– যে কেউ হতে পারে।

শিশু নির্যাতন আইনে শিশু বলতে কন্যাশিশু ও ছেলেশিশুকেও যে গণ্য করা হচ্ছে তা স্পষ্ট করে উল্লেখ করতে হবে।

ধর্ষণের অর্থ কোনোভাবেই নারীর সতীত্ব নষ্ট হওয়া নয়। নারীকেই ধর্ষণ করা যায় এ কথা প্রতিষ্ঠা করে ধর্ষকামী মানসিকতাকেও আশকারা দেওয়া যাবে না।

বলাৎকার অথবা ধর্ষিতা শব্দে পুরুষ ধর্ষণ ও নারী ধর্ষণকে আলাদা করার ট্যাবু থেকে বেরিয়ে এলেই বোঝা যাবে ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ  ও সর্বোপরি রাষ্ট্র উন্নতির কোন স্তরে এসে ঠেকেছে। আর এজন্য পুরুষ ধর্ষণকে আমলে নিতে হবে, ধর্ষণকে ধর্ষণই বলতে হবে, ধর্ষককে ধর্ষক। মনোজগত, সমাজ, আইন আর অভিধান থেকে মুছে ফেলতে হবে ধর্ষিতা শব্দের অস্তিত্ব।