মায়ের মানসিক স্বাস্থ্য এবং মিডওয়াইফ

রুবিনা জাহান
Published : 5 May 2019, 12:58 PM
Updated : 5 May 2019, 12:58 PM

মায়ের শরীরে বেড়ে ওঠা শিশুটির সাথে মায়ের যোগাযোগ শুধু শরীরের নয়, মনেরও। মায়ের যদি মন খারাপ থাকে, মা যদি মানসিক চাপে থাকে, তাহলে তার প্রভাব শিশুর উপরও পড়ে। শিশুর শারিরীরক গঠন, বেড়ে ওঠার শুরুটা কিন্ত মায়ের গর্ভেই। তাই গর্ভকালীন শারীরিক স্বাস্থ্যের দেখাশোনা করা যেমন গুরুত্বপূর্ণ ঠিক ততখানি গুরুত্বপূর্ণ মানসিক স্বাস্থ্যের দিকে নজর দেওয়া।

একজন গর্ভবতী মা যদি মানসিকভাবে সুস্থ থাকেন কেবল তখনই তার গর্ভকালীন চ্যালেঞ্জ এবং নবজাতক নিয়ে নতুন জীবনকে সুন্দরভাবে গ্রহণ করতে পারবেন। দুঃখজনকভাবে হরমোনের পরিবর্তন সহ শারীরিক এবং পরিবেশগত পরিবর্তনের ফলে বেশিরভাগ গর্ভবতী মা-ই মানসিক চাপ অনুভব করেন এবং নানান ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হন।

শুধু তাই নয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, উন্নয়নশীল দেশসমূহে ১৫ দশমিক ৬ শতাংশ গর্ভবতী নারী এবং ১৯ দশমিক ৮ শতাংশ সন্তান জন্মদানের পরে মানসিক রোগ, বিশেষ করে বিষণ্ণতায় ভোগেন (পোস্টপার্টাম ডিপ্রেশন)। যা একজন মা এবং ভবিষ্যত শিশুর জীবনে দীর্ঘস্থায়ী নেতিবাচক প্রভাব ফেলে থাকে। এই কারণেই সময়োপযোগী এবং যথোপযুক্ত চিকিৎসার জন্য মানসিক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে থাকা মায়েদের চিহ্নিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূণ। আর এটা করা যেতে পারে সেই সব স্বাস্থ্যকর্মীদের সহযোগিতায় যারা সরাসরি গর্ভবতী মায়েদের নিয়েই কাজ করেন।

হ্যা, আমি 'মিডওয়াইফ'-দের কথাই বলছি। কেননা 'মিডওয়াইফরা'ই সেই পেশাজীবী যাদের কাজই হচ্ছে মা ও শিশুকে স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া এবং তাদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা। মিডওয়াইফরা-ই মূলত গর্ভপূর্ববর্তী, গর্ভকালীন এবং গর্ভপরবর্তী মাতৃস্বাস্থ্য নিয়ে সরাসরি কাজ করেন, যেখানে তিনি একজন মায়ের সার্বিক শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্যের খেয়াল রাখেন এবং প্রয়োজনীয় সেবা দেন।

সবচেয়ে বড় ব্যাপার, মিডওয়াইফ পেশাজীবীদের শিক্ষাব্যবস্থায় মায়ের মানসিক স্বাস্থ্যের পাঠ সরাসরি অন্তর্ভূক্ত  থাকায় তারা মানসিক স্বাস্থ্য ঝুঁকিগুলো সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা লাভ করে থাকেন।  মিডওয়াইফরা সহমর্মী এবং মায়ের প্রতি শ্রদ্ধাশীল মনোভাবসম্পন্ন হন একই সাথে তারা গোপনীয়তা রক্ষার ব্যাপারে বিশেষ গুরুত্ব দেন।

গুণগত শিক্ষাগ্রহণের পাশাপাশি উল্লেখিত ইতিবাচক চর্চার কারণে মিডওইয়াফ-রা খুব সহজে মা ও পরিবারের আস্থার জায়গাটি নিতে পারেন এবং একটি নির্ভরশীল সম্পর্ক তৈরি করেন। এর ফলে সেবা প্রদান এবং গ্রহনের পথটি সহজ হয়ে যায়। আর এ কারণেই একজন মিডওয়াইফ অন্য সকল পেশাজীবীর আগেই মায়ের সম্ভাব্য মানসিক স্বাস্থ্য ঝুঁকিগুলো চিহ্নিত করতে সক্ষম হন এবং অবস্থা বুঝে মাকে যথোপযুক্ত পেশাজীবীর কাছে যাওয়ার পরামর্শ দিতে পারেন। ফলে দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতি প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়।

এভাবেই একজন মিডওয়াইফ শুধুমাত্র সন্তান প্রসবে নয় বরং মায়ের মানসিক স্বাস্থ্যের অগ্রগতিতে অভাবনীয় ভূমিকা পালন করতে পারেন। এখনো বাংলাদেশে মিডওয়াইফারি পেশা একটি নতুন ধারণা। সরকারি এবং বেসরকারি পর্যায়ে আমাদেরকে আরও বেশি করে  মিডওয়াইফারি পেশায় বিনিয়োগ করতে হবে যাতে করে শহর এবং গ্রাম সকল পর্যায়ে এই পেশার গুরুত্ব সম্পর্কে মানুষ জানতে পারে এবং মানুষ মিডওয়াইফারিকে পেশা হিসেবে নির্বাচন করে।  তাহলে মিডওয়াইফারির গ্রহণযোগ্যতা যেমন বাড়বে তেমনি করে তাদের সেবা নেওয়ার ক্ষেত্রেও আগ্রহ আসবে।  ভবিষ্যতে আমাদের তরুণ মিডওয়াইফরা সার্বিকভাবে সুস্থ মাতৃস্বাস্থ্য নিশ্চিত করে অন্যান্য স্বাস্থ্য পেশাজীবীদের পাশাপাশি মাইলফলক তৈরি করতে সক্ষম হবে।