কথিত আইএস বার্তা, অত:পর…

কবীর চৌধুরী তন্ময়
Published : 3 May 2019, 01:31 PM
Updated : 3 May 2019, 01:31 PM

শ্রীলঙ্কায় আত্মঘাতী সিরিজ বোমা হামলার পর শুধু বাংলাদেশই নয়, বিশ্ব এখন উদ্বিগ্ন। কে, কখন, কোথায়, কীভাবে এই বর্বরতার শিকার হবে- এই ধরনের আশঙ্কা বিশ্বের সরকার-রাষ্ট্র প্রধানের সাথে সাথে দেশের সচেতন জনগণের মাঝেও বিরাজ করছে। কারণ, সংঘঠিত অপরাধ থেকে অন্য অপরাধীরা উদ্বুদ্ধ হয়ে পরবর্তী হামলার জন্য নিজেরা অস্থির হয়ে পড়ে। অপরের কার্যক্রম নিয়ে নিজেদের মাঝেও এক ধরনের হতাশা কাজ করে। আর সেখান থেকেই নিজেদের অবস্থান জানান দিতে, শক্তিমত্তা বোঝাতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করে থাকে। সেটা ব্যক্তি অপরাধ থেকে গ্রুপ কিংবা সাংগঠনিকভাবে পরিচালিত অপরাধ সংঘঠিত করতে মরিয়া হয়ে উঠে।

একটু লক্ষ করলেই দেখবেন, নিউ জিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে এলোপাতাড়ি গুলি চালিয়ে ৪০জন মুসলিমকে হত্যা করেছেন ব্রেন্টন ট্যারেন্ট নামে অস্ট্রেলিয়ার এক শ্বেতাঙ্গ সন্ত্রাসী। আর সেও এই হামলা চালানোর জন্য উদ্বুদ্ধ হয়েছিল অ্যান্ডারস ব্রেভিক নামের আরেক সন্ত্রাসীর কাছ থেকে। সেই ব্রেভিকও হামলা করে ৭৭ জনকে হত্যা করেছে। যেটি ২০১১ সালে নরওয়ের অসলোতে সংগঠিত হয়েছে।

ব্রেন্টন ট্যারেন্ট মুসলিমদের ঘৃণা করতো। বেশি ঘৃণা করতো যারা অন্য ধর্ম থেকে এসে মুসলিম হয়েছেন, ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছেন, তাদের। তার এই ঘৃণা, ক্ষোভ তাকে এতোটাই হতাশাগ্রস্ত করে তুলেছিল, একটা সময় সে-ও সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম হয়েছে যে, সে পারবে এবং হামলা করার দৃশ্য ফেসবুকে লাইভও সে দেখিয়েছে। হামলার ওই ভিডিও যারা দেখেছে তাদের নিশ্চয়ই বোঝার বাকি নেই যে, অস্ট্রেলিয়ান সন্ত্রাসী ব্রেন্টন ট্যারেন্ট তখন কতটা নির্দয়, নির্মম ছিল। সেসময় রাস্তার পাশে 'হেল্প…হেল্প…' বলে চিৎকার করা এক নারীকে গুলি করে হত্যার দৃশ্য পুরো মানব জাতিকে আতঙ্কিত করে তুলেছে।

নিউ জিল্যান্ডের এই বর্বরতার ঠিক পঁয়ত্রিশ দিনের মাথায় শ্রীলঙ্কায় হামলা। এটি কোনও একক ব্যক্তির সংগঠিত অপরাধ নয়, নয় কোনও ছোটখাটো হামলা। তৃতীয় বিশ্বের নেতাদের রীতিমত নতুন চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছে। ২১ এপ্রিল শ্রীলঙ্কায় গির্জায় এবং আবাসিক হোটেলে ধারাবাহিক আত্মঘাতী বোমা হামলার ঘটিয়ে প্রায় সাড়ে তিন শরও বেশি শিশু-কিশোর থেকে নারী-পুরুষকে হত্যা করেছে। আহত করে পাঁচ শরও বেশি মানুষজন।

আমি মনে করি, রাজনৈতিক অস্থিরতা ও সরকার পরিচালিত রাষ্ট্রযন্ত্রগুলোর অদক্ষতা, দুর্বলতা আর সরকারের মাঝে সমন্বয়হীনতার সুযোগ বুঝেই আদর্শভিত্তিক জঙ্গি সংগঠনগুলো এই ধরনের সমন্বিত হামলা সংগঠিত করে থাকে যা শ্রীলঙ্কার সরকারের মাঝে প্রতীয়মাণ। কিন্তু নিউ জিল্যান্ডের কাছে সময় ছিল একেবারেই কম।

অস্ট্রেলিয়ান সন্ত্রসী ব্রেন্টন ট্যারেন্ট ক্রাইস্টচার্চে হামলার ঠিক ৯মিনিট আগে নিউ জিল্যান্ডের সরকার প্রধান জেসিন্দা বরাবর মেইল পাঠিয়ে হামলার ব্যাপারে আগাম বার্তা পাঠিয়েছিল। সরকার প্রধানের দপ্তর দ্রুততার সাথে তার সরকারের পুলিশ প্রধানের কাছে পাঠানোর পর কোথা থেকে মেইল এসেছে, সম্ভাব্য হামলা কোথায় হতে পারে, কে বা কারা পাঠাতে পারে- এই নিয়ে বিস্তারিত জানতে জানতেই ব্রেন্টন ট্যারেন্ট ক্রাইস্টচার্চে হামলা করে।

অন্যদিকে বিদেশি একটি গোয়েন্দা সংস্থা থেকে শ্রীলঙ্কায় কোথায় এবং কারা হামলা করতে পারে- এটি দীর্ঘ ১১দিন আগে শ্রীলঙ্কান সরকারকে জানানোর পরেও তারা কোনও ব্যবস্থা নিতে পারেনি। কারণ, শ্রীলঙ্কার সরকারে অভ্যন্তরীণ কোন্দল বিরাজমান ছিল, ছিল সরকার পরিচালিত রাষ্ট্রযন্ত্রগুলোর সমন্বয়হীনতা।

আমাদের বাংলাদেশও এই বিতর্কের উর্ধ্বে নয়। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের পরিচালিত রাষ্ট্রযন্ত্রগুলো তখন কতটা প্রশ্নবিদ্ধ ছিল, এটি এদেশের জনগণের মনে থাকার কথা। আর সেটি প্রমাণিত হয়, ২১ অগাস্ট গ্রেনেড ছোঁড়ার গল্প যখন জজ মিয়ার নাটক তৈরি করে। তখন সাংবিধানিক দায়িত্ব অবহেলা করে ব্যক্তি বিশেষকে খুশি করতে রাষ্ট্রযন্ত্রের ছোট কর্মকর্তা থেকে বড় কর্মকর্তাও ছিল বিতর্কিত ও অদক্ষ।

যেমন, ব্লগার ও গণজাগরণ মঞ্চের কর্মী নীলাদ্রি চট্টোপাধ্যায় নিলয় ফেসবুকে ও মুঠোফোনে বার বার হত্যার হুমকি পেয়ে খিলগাঁও-এর পরে শাহজাহানপুর থানায় নিরাপত্তা চেয়ে সাধারণ ডায়রি করতে গেলেও সাংবিধানিক দায়িত্ব পালন না করে বরং থানা কর্মকর্তারা নিলয়কে দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন।

দুই থানার কোনও ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাই তখন হত্যার হুমকির ব্যাপারটি গুরুত্ব দেননি। বরং নিজেদের দায়িত্বে অবহেলা আর অদক্ষতার পাশাপাশি রাষ্ট্রযন্ত্র পুলিশ বাহিনীকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। যার কিছুদিন পর ২০১৫ সালের ৭ অগাস্ট এক শুক্রবার খিলগাঁওয়ের বাসায় ঢুকে দিনদুপুরে কতিপয় সন্ত্রাসী পিস্তল ও রামদা নিয়ে নীলাদ্রিকে কুপিয়ে হত্যা করে।

আর এখনও যে রাষ্ট্রযন্ত্রের কতিপয় কর্মকর্তা এ ব্যাপারে দায়িত্ববান বা দক্ষ- এটিও নিশ্চিত করে বলা যাবে না। আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতাও সুখকর নয়। '২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর দিনটি ছিল আমার জন্য শেষ দিন। ৩১ ডিসেম্বর আমার রক্ত দিয়ে গোসল করা হবে। আমার শেখ হাসিনা মাও আমাকে রক্ষা করতে পারবে না'- এমন হুমকি পাওয়ার পর রাজধানীর শাহবাগ থানায় জিডি করেছি।

বোয়াফ সভাপতিকে হত্যার হুমকি- এই শিরোনামে দেশের অধিকাংশ প্রথম সারির সংবাদমাধ্যম হুমকিকে গুরুত্ব দিলেও আজও শাহবাগ থানার কেউ আমার সাথে যোগাযোগ করেননি। সর্বশেষ তথ্যও আমি জানি না।

আমার চেয়েও আরও ভয়াবহ ফেনীর সোনাগাজী মাদ্রাসা ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি এর ঘটনা। নুসরাতের ঘটনায় ইতোমধ্যে সোনাগাজী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে বহিষ্কার করলেও সপদে আছেন এসপি। এসপি সুকৌশলে ওসিকে বাঁচানোর সব রকমের চেষ্টা করেছে যার প্রমাণ পুলিশ সদর দপ্তরে ওসির পক্ষে পাঠানো সেই চিঠি ও গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ। আর পুলিশ সদর দপ্তর গঠিত তদন্ত কমিটি ৩০ এপ্রিল জমা দেওয়া তাদের তদন্ত প্রতিবেদনেও ফেনীর পুলিশ সুপার জাহাঙ্গীর আলম সরকার ও সোনাগাজী থানার সাবেক ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনসহ চার পুলিশ কর্মকর্তার গাফিলতি পাওয়া গেছে বলেও উল্লেখ করেন।

এখানে এসব বলছি কারণ, সরকার ও সরকার পরিচালিত রাষ্ট্রযন্ত্রগুলো শক্তিশালী ও দক্ষ হলে যেকোনও অপরাধ- সেটা ব্যক্তি পর্যায় হোক আর গ্রুপ কিংবা সমন্বিত চেষ্টায় হোক, প্রতিহত করা সহজ ও সম্ভব। সেদিন যদি নিলয়ের জিডি গ্রহণ করত, নুসরাতের অভিযোগ গুরুত্ব আকারে বিবেচনা করত, তাহলে কখন কী করতে হবে- এটারও আইনি প্রসিডিউর হতো।

এমনি করে, নিউ জিল্যান্ড যদি মাত্র ৯মিনিটের বেশি সময় পেত, ১১ দিন আগে কোথায়, কে হামলা করবে- এটি জানার পরে শ্রীলঙ্কা যদি সাথে সাথে ব্যবস্থা গ্রহণ করতো, তাহলে এই মানুষগুলো হত্যা হয় না।

বিএনপি-জামায়াত সরকার পরিচালিত রাষ্ট্রযন্ত্রের দায়িত্বে অবহেলা, অদক্ষতা কিংবা মদতে ২০০৪ সালের ২১ অগাস্ট শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে গ্রেনেড ছুঁড়ে আওয়ামী লীগের ২৪জন নেতাকর্মীকে হত্যার ঘটনা বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ও সরকার পরিচালিত রাষ্ট্রযন্ত্রের জন্য যেমন কলঙ্কিত অধ্যায়, তেমনিভাবে শ্রীলঙ্কান সরকারের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব আর সমন্বহতীনতার সুযোগ পেয়ে আত্মঘাতী সিরিজ বোমা হামলা চালিয়ে শ্রীলঙ্কার ইতিহাসে আরেক বর্বরতার অধ্যায় সংযুক্ত করেছে।

বুঝতে হবে, কথিত আইএস বার্তাকে 'কথিত' বলে উড়িয়ে দেওয়ার মাসুল দিতে হয়েছে ২০১৬ সালের পয়লা জুলাই ঢাকার গুলশানে হলি আর্টিজান হামলার শিকার হয়ে। বাংলাদেশে আইএস আছে কি নেই- এই বিতর্কের চেয়ে আইএস-এর নাম বলে হামলা সংঘঠিত করছে, হামলার হুমকি দিচ্ছে- এটাই বাস্তবতা। আর এই বাস্তবতাকে আমাদের উপলব্ধি করতে হবে, গুরুত্ব দিতে হবে।

আমাদের মনে রাখতে হবে, আইএস একটি নাম, একটি আদর্শ। আর এই আদর্শ যে কেউ ধারণ করতে পারে। তাকে সিরিয়া থেকেই আসতে হবে- এমন তো কথা নেই। তাকে আইএস-এর ঘরেই জন্ম নিতে হবে, ব্যাপারটি এমনও নয়।

'শিগগিরই আসছি, ইনশাআল্লাহ…' কথিত আইএস বার্তার পর পরই জেএমবির সক্রিয় একটি গ্রুপ নাশকতা করতে পারে, এমন খবর পেয়ে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বসিলায় জঙ্গিদের টিনশেড আস্তানায় অভিযান চালায় র‌্যাব। সেখানে অবস্থানরত জঙ্গিরা র‌্যাবকে লক্ষ্য করে গুলি করাসহ একটা সময় বিস্ফোরণও ঘটায়। আবার ঢাকার গুলিস্তানের ডন প্লাজার সামনের রাস্তায় দায়িত্ব পালনরত পুলিশ সদস্যদের ওপর ককটেল ছুঁড়ে মারার ঘটনাটিও কথিত আইএস দায় স্বীকার করেছে। আরেকটি ঘটনা হচ্ছে হাফেজ মাওলানা কামরুজ্জামান নামক এক ব্যক্তি নিজেকে জেএমবি'র কর্মী পরিচয় দিয়ে বায়তুল মোকাররম মসজিদ ও ইসলামিক ফাউন্ডেশনে বোমা হামলার হুমকি দিয়ে চিঠি পাঠিয়েছে।

১৯৯৯ সালে উদীচীর হামলার মধ্য দিয়ে শুরু হওয়া বোমা হামলার সর্বশেষ গুলিস্তানের হামলার বিষয়াদি নিয়ে পর্যবেক্ষণ করলে, কথিত আইএস 'কথিত'-ই থেকে যায়, বরং দেশিয় জঙ্গি ও কতিপয় রাজনৈতিক দলের পৃষ্ঠপোষকতা পাওয়া ব্যক্তি, গ্রুপ এবং সরাসরি রাজনৈতিক সংগঠনের সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়। আর তারা নিউ জিল্যান্ড, শ্রীলঙ্কায় হামলায় উদ্বুদ্ধ হবে, উত্তেজিত কর্মকাণ্ড করবে এবং সমন্বিত হামলা করারও চেষ্টা করবে- এটা আমাদের মাথায় রাখতেই হবে।

বাংলাদেশে কমপক্ষে অর্ধশত উগ্রবাদ ও জঙ্গি সংশ্লিষ্ট সংগঠনের কার্যক্রম চলছে বলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও স্বীকার করেছে, যার মধ্যে মাত্র ৬টি নিষিদ্ধ। অন্যদিকে সক্রিয় কার্যক্রম চালাচ্ছে কমপক্ষে ২০টি সংগঠন। আবার যে ৬টি সংগঠনকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে তাদের কর্মকাণ্ডও পুরোপুরি বন্ধ হয়নি বা বন্ধ করা যায়নি। র‌্যাব এই পর্যন্ত ১৬টি সংগঠনের এক হাজার ১৮১ জন জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করেছে। আর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগও ১৪টি সংগঠনের এক হাজারেরও বেশি জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছে, যাদের মধ্যে আবার নিষিদ্ধ ৬টি সংগঠনের জঙ্গিও রয়েছে। গ্রেপ্তারদের মধ্যে অনেকেই জামিনে বেরিয়ে এসে আবার একইভাবে জঙ্গি সংগঠনগুলোতে জড়িয়ে পড়েছে।

আর্থ-সামাজিক অবক্ষয়, রাজনৈতিক অস্থিরতা ও সরকার পরিচালিত রাষ্ট্রযন্ত্রগুলোর অদক্ষতা, দুর্বলতার কারণে মানুষের রাগ, ক্ষোভ আর ঘৃণার জন্ম হয়। ব্যক্তি থেকে গ্রুপ হয়েও মানুষ প্রতিশোধের নেশায় মত্ত হয়। তখন সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদী কর্মকাণ্ডেও জড়িয়ে পড়তেও দ্বিধাগ্রস্ত হয় না। অনেক সময় নিজে না পারলে, তখন অন্যদের পৃষ্ঠপোষক করে থাকে। আর মাদ্রাসা ছাত্রী নুসরাতের মাধ্যমে বাংলাদেশে শুধু সামাজিক অবক্ষয়ই ফুটে উঠেনি বরং রাষ্ট্রযন্ত্র পুলিশ বাহিনীর কতিপয় কর্মকর্তার সাংবিধানিক দায়িত্ব অবহেলা, অপরাধীদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দেওয়াসহ দুর্নীতিগ্রস্ত হয়ে পড়ার অবস্থানও আমাদের সামনে উঠে এসেছে।

২০১১ সালে নরওয়ের অসলোতে সংঘঠিত সন্ত্রাসী হামলা থেকে উদ্বুদ্ধ হয়ে নিউ জিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে হামলা। নিউ জিল্যান্ডের হামলা থেকেও উদ্বুদ্ধ হয়ে শ্রীলঙ্কায় হামলা চালাতে পারে। এখানে নিউ জিল্যান্ড থেকে শ্রীলঙ্কার হামলার ব্যবধান পয়ত্রিশ দিন হলেও পরিকল্পনাটি ছিল সুযোগের বা মোক্ষম সময়ের।

আর শ্রীলঙ্কার হামলায় সারা বিশ্বে উগ্রবাদের যে প্রভাব পড়েছে, বাংলাদেশও তার বাইরে নয়। আদর্শভিত্তিক জঙ্গি সংগঠনগুলো বা ব্যক্তি পর্যায় ততটা সংঘবদ্ধ বা বড় ধরণের নাশকতা করার ক্ষমতা না রাখলেও বিচ্ছিন্নভাবে যেকোনও হামলা করতে পারে-এটিকে উড়িয়ে দেওয়া উচিত নয়। কথিত আএস বার্তার পরপরই রাজধানীর গুলিস্তানে শক্তিশালী ককটেল বোমা বিস্ফোরণ, জেএমবি এর কর্মী পরিচয় দিয়ে বায়তুল মোকাররম মসজিদ ও ইসলামিক ফাউন্ডেশনে বোমা হামলার হুমকি, এদেশে আইএস নেই- এটি সরকার ও সরকার পরিচালিত রাষ্ট্রযন্ত্রের এই বক্তব্যকে মিথ্যা প্রমাণিত করার কৌশলও হতে পারে।

আমাদের মনে রাখতে হবে, আল-কায়দা, আইএস হলো সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের আইডিওলজি। যে কেউ, যে কারও পৃষ্ঠপোষকতা পেয়ে আল-কায়দা বা আইএস-এর নাম ব্যবহার করে সন্ত্রাসী ও জঙ্গিবাদী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে পারে। কারণ, এই নামগুলোর সাথে তাদের নিজেস্ব আদর্শ ও আন্তর্জাতিক শক্তিমত্তার বিষয়টিও স্পষ্ট করে তোলা। এখানে কোনও রাজনৈতিক দল বা গ্রুপ জড়িত কিংবা আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র আছে কিনা-এটির চেয়ে এই ধরনের ব্যক্তি ও কর্মকাণ্ডকে প্রতিহত, প্রতিরোধ করার বিষয়টিকে আগে গুরুত্ব দিতে হবে। 'কথিত' বলে উড়িয়ে দেওয়ার চেয়ে সরকার পরিচালিত রাষ্ট্রযন্ত্রকে কথিত আইসএস বার্তার পক্ষে-বিপক্ষে বিচার-বিশ্লেষণ করে দ্রুততার সাথে ব্যবস্থা নিতে হবে।