বিমান সংহার- উপসংহার

Published : 28 April 2019, 12:06 PM
Updated : 28 April 2019, 12:06 PM

বিমান বিকিরণ বিষয়ে কথা বলার সুযোগ আমাদের হয় না। বলতে হয় অস্পৃশ্য এবং অনৈতিক বিষয়াদি নিয়ে কথা। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স আমাদের তেমনি একটি প্রতিষ্ঠান যাকে নিয়ে আশার কথা আমরা বলতে পারি, কিন্তু তার বাস্তবায়ন সম্পর্কে থাকি শতভাগ সন্দিহান। সম্প্রতি বিমানের কার্গো পরিবহন এবং টিকেট বিক্রি বিষয়ে বড় অংকের দূর্নীতি নিয়ে পত্র-পত্রিকায় সংবাদ-কলাম প্রকাশিত হয়েছে। আমি সম্প্রতি এ বিষয়ে বিশ্বব্যাপী পাঠকপ্রিয় অনলাইন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম এ 'বিমান সংহার' শিরোনামে একটি কলাম লিখেছি। যা গত ১৮ এপ্রিল প্রকাশ হয়।

এ কলামটি প্রকাশ হওয়ার পরপর লন্ডনে আসে দুই সদস্যের একটি তদন্ত টিম। আমি ওই কলামে তিনটি বিষয় উপস্থাপন করেছি। প্রথম. কার্গো পরিবহনে প্রায় ৪১২ কোটি টাকার অনিয়ম, দ্বিতীয়. বিনামূল্যে টিকেট বিক্রি দেখিয়ে ১৬ কোটি টাকা আত্মসাৎ এবং তিন. অতিরিক্ত পণ্য পরিবহনে হিথরো এয়ারপোর্টে যাত্রীদের কাছ থেকে নগদ অর্থ গ্রহণ। তদন্ত দল লন্ডনে এসেছে প্রায় সপ্তাহ খানেক হলো। তারা বিভিন্ন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কাজ থেকে উত্থাপিত অভিযোগ বিষয়ে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করেছেন। আমি তাদের কাজের খোঁজ-খবর রাখার চেষ্টা করেছি। জানলাম তারা উপরোল্লিখিত বিষয় তিনটি নিয়েই তদন্ত করছেন। ২৫ এপ্রিল বিকালে তদন্ত টিমের সাথে দেখা করলাম এক্সফোর্ড সার্কাসে বিমান কার্যালয়ে। দুই সদস্যের একজন মিনিস্ট্রি অব সিভিল এভিয়েশন অ্যান্ড ট্যুরিজমের যুগ্ম সচিব জ্ঞানেন্দ্র নাথ সরকার এবং অপরজন বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের কন্ট্রোলার অব অ্যাকাউন্টস এ এস এম মনজুর ইমাম। আমার সাথে কথা হলো জ্ঞানেন্দ্র নাথ সরকারের সাথে। তিনি শুরুতেই বললেন তদন্ত বিষয়ে কোনও কথা বলা যাবে না। তবুও প্রসঙ্গ ছেড়ে উঠলাম না। একথা সেকথা বলতে গিয়ে থেকেছি প্রসঙ্গে। জানলাম কিছু তথ্য।

প্রথমে আসা যাক হিথরো এয়ারপোর্টে অতিরিক্ত পণ্য পরিবহনে যাত্রীদের কাছ থেকে নগদ অর্থ গ্রহণের বিষয়ে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বেশ আগ্রহ নিয়েই জ্ঞানেন্দ্র নাথ কথা বললেন। বললেন, বিষয়টি তারা বেশ গুরুত্বের সাথে নিয়েছেন। এভাবে নগদ অর্থের লেনদেন আর করতে দেওয়া হবে না। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সদ্য লন্ডনের যোগ দেয়া বিমানের ম্যানেজার এম হারুন খান। তার সাথে এ বিষয়ে আগের লেখাটি তৈরির প্রাক্কালে কথা বলেছিলাম। তিনি তখন বলেছিলেন, বিমানের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট রয়েছে বার্কলেস ব্যাংকে। সে ব্যাংক কার্ড মেশিন দিতে চায় না। এ কথাটি যে একেবারে অবুঝের প্রলাপ ছিলো তা আজ তিনি স্বীকার করলেন। বললেন, তিনি জানেন না অন্য প্রতিষ্ঠান থেকেও কার্ড মেশিন নেওয়া যায়। জ্ঞানেন্দ্র নাথও বললেন, বার্কলেস ব্যাংকের সাথে চুক্তি থাকার কারণে সে ব্যাংক থেকেই কার্ড নিতে হবে। আমি বললাম, না শুধু ব্যাংক নয়, কার্ড মেশিন সরবারাহ করে লন্ডনে এমন প্রতিষ্ঠান রয়েছে অগুনতি। যে কোনও প্রতিষ্ঠান থেকে কার্ড মেশিন নেয়া যেতে পারে। বার্কলেস ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট বলে শুধু সেখান থেকে কার্ড মেশিন নিতে হবে তা কিন্তু ঠিক নয়।

এ বিষয়ে জ্ঞানেন্দ্র নাথ কিংবা এম হারুন খানের জেনেই লন্ডনে আসা উচিত ছিল। একটি দেশে দায়িত্ব পালন করতে আসলে, কাজের সাথে যুক্ত এমন বিষয়ে সে দেশের মৌলিক নিয়ম কানুন জেনে আসা উচিত বলে মনে করি। এখন কথা হলো, হিথরো এয়ারপোর্টে যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত পণ্যের জন্য বিমানের নগদ অর্থ গ্রহণ নতুন কিছু নয়। চার/পাঁচ বছর ধরে এ প্রক্রিয়া চলছে। নগদ অর্থ কোথায় যায় তার কোন হিসেব নেই। আমি আগে যিনি ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করেছেন তাকেও এ বিষয়ে একবার জিজ্ঞেস করেছিলাম, তিনি গুরুত্ব দেন নি। এখন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমে, এ বিষয়ে লেখার পর কেন টনক নড়লো উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের? উপরতলার কর্মকর্তারা কি জানতেন না এভাবে হিথরো এয়ারপোর্টে লেনদেন হয়? অবশ্যই জানতেন। কর্তৃপক্ষের সম্মতি ছাড়াতো আর এ প্রক্রিয়া চালু হয় নি। তদন্ত টিম নাকি এ বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদের সময় বলেছেন, কোনও যাত্রী দুইশ পাউন্ডের অতিরিক্ত পণ্য নিলে একশ পাউন্ড হিসাবে দেখিয়ে বাকি একশ পাউন্ড আত্মসাত করা হয়।

কথা যদি সত্য হয়ে থাকে তাহলে গত কয়েক বছর ধরে চলে আসা এই অনিয়মের হিসেব কেন চাওয়া হবে না? গত কয়েক বছরে কত অর্থ এখান থেকে আত্মসাৎ হয়েছে তার একটা পরিষ্কার হিসাব প্রস্তুত করতে হবে। হয়তো এ হিসেব তৈরি কখনোই সম্ভব নয়। কারণ করতে দেওয়া হবে না। ধরা যাক, নগদ গ্রহণ করা অর্থের হিসাব রাখে হিসাব বিভাগ। লন্ডন বিমান অফিস থেকে সদ্য ঢাকায় পদোন্নতি নিয়ে ফিরে যাওয়া ফাইনান্স ম্যানেজার প্রিয়রঞ্জন মহাজন নগদ গ্রহণ করা অর্থের হিসাব নিশ্চয় রাখতেন। জানতেন এই অর্থের নয়-ছয়ের গল্পও। তিনি কি সে হিসাব দেবেন? সাবেক ম্যানেজার শফিকুল ইসলাম কি সে হিসাব দেবেন? আর এই নগদ অর্থ গ্রহণের বিষয়টি তদন্তে আসা হিসাব নিয়ন্ত্রক এ এস এম মনজুর ইমামের অজানা থাকার কথা নয়। তিনিই তো সর্বোচ্চ অর্থ নিয়ন্ত্রণকর্তা। আবার তিনিই এসেছেন এ বিষয়ে তদন্তে! বিড়ালের কাছে শুটকি জমা রাখার মতো ব্যাপার। তাহলে বলুন তো শর্সের ভিতরের ভূত তাড়াবে কে! আমি লেখার পর কেন এ বিষয়টি গুরুত্ব পেল? না লিখলে বা চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে না দিলে কি অনিয়ম নিয়মে পরিণত হয়ে চলতে থাকবে বছরের পর বছর? তারপরও অপেক্ষায় থাকা যাক চূড়ান্ত তদন্ত প্রতিবেদনের জন্য। দেখা যাক কর্তারা কী প্রকাশ করেন!

এবার আসা যাক কার্গো পরিবহনে অনিয়ম প্রসঙ্গে। এ খাতে ৪১২ কোটি টাকার অনিয়ম হয়েছে বলে উল্লেখ করেছিল আগের তদন্ত প্রতিবেদনে। তবে লন্ডন-ঢাকা রুটে অনিয়মের অর্থ কত তা প্রকাশ করা হয় নি। কার্গো পরিবহনে অনিয়ম বিষয়ে জানার জন্য লন্ডনে আসা তদন্ত টিমের দুই সদস্য সব ক'টি কার্গো প্রতিষ্ঠানের সাথে বৈঠক করেছেন। তবে সম্মিলিত বৈঠকে রাখা হয়নি জেএমজি কার্গোকে। এই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধেই সাবেক ম্যানেজার শফিকুল ইসলামের কাছ থেকে বিশেষ সুবিধা গ্রহণের অভিযোগ উঠেছে। তবে জেএমজি এর সাথে আলাদা বৈঠক করেছে তদন্ত টিম। কিন্তু জ্ঞানেন্দ্র নাথ আমাকে এ বিষয়ে কোনও কিছু জানাতে অস্বীকার করেছেন। বলেছেন, চূড়ান্ত প্রতিবেদনেই সবকিছু প্রকাশ করা হবে। তবে কার্গো প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে বৈঠকে তিনি অনিয়মের আশি ভাগের তথ্য প্রমাণ উদঘাটন করতে পেরেছেন বলে দাবি করেছেন। তারা এও দাবি করেছেন, যে কার্গো খাতে অভিযোগের পুরো প্রমাণ পাওয়া গেছে। তাদের হাতে রয়েছে রিপোর্ট। একটি তদন্ত টিমের জন্য এটা বিশাল সাফল্যের কথা। এছাড়া কার্গো পরিবহনে ওজনে অনিয়ম করা হয়েছে বলে তদন্ত টিমের অভিমত। এটা হতেই পারে। যদিও লন্ডনে কর্মরত বিমান কর্মকর্তারা দাবি করেছেন, এটা কোনওমতেই সম্ভব নয়। কারণ একটি বিমান ছাড়ার আগে কার্গো পরিবহনে নিয়োজিত প্রতিষ্ঠান ডানাটা চূড়ান্ত ওজনের রিপোর্ট সংগ্রহ করে। তবে ওজনে যদি অনিয়ম হয়েই থাকে তাহলে এসওবি (সোল অন বোর্ড) রিপোর্ট দেখলেই তার হিসেব পাওয়া যাবে। আশা করি তদন্ত টিম এ রিপোর্ট সংগ্রহ করেছে ডানাটা-র কাছ থেকে। তবে কথা হলো এতো বিশাল অংকের অনিয়ম তো একদিনে হয় নি। ধারাবাহিকভাবে চলতে থাকা এই অনিয়মের পেছনে কারা সহায়তা করেছে, সে তালিকা কি প্রকাশ করা সম্ভব?

তা না হলে এসব তদন্তে কোনও কাজ হবে না। তদন্ত টিম কার্গো প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে বৈঠক করার সময় সব প্রতিষ্ঠানই অভিযোগের আঙ্গুল তুলেছে জেএমজি কার্গোর দিকে। বলেছে বিশেষ সুবিধার কথা। এই বিশেষ সুবিধার ধরন কী? তা নিশ্চয় তদন্ত টিম বলতে পারবে। লন্ডনের সাবেক বিমান ম্যানেজার শফিকুল ইসলামের সাথে জেএমজি কার্গোর সখ্যতার খবর সর্বজনবিদিত। আমিও মনে করতাম জেএমজি কার্গোর সাথে পার্টনারশিপ রয়েছে শফিকুল ইসলামের। সে যাই হোক সম্পর্ক থাকতেই পারে কারো কারো সাথে। তাতো আর প্রমাণ ছাড়া ঢালাওভাবে অনিয়ম প্রসঙ্গে কিছু বলা যাবে না। দেখা যাক এ বিষয়ে তদন্ত রিপোর্টে কি উঠে আসে।

এবার আসার যাক শফিকুল ইসলামের ১৬ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়া প্রসঙ্গে। এটা রীতিমত অবাক করে দেয়ার মতো ঘটনা। আত্মসাৎ করা এই টাকার মধ্যে দেখানো হয়েছে তিন বছরে ৪২৭ টি টিকেট ফ্রি দেয়ার খরচও! ৪২৭টি টিকেট ফ্রি দেওয়া হলো অথচ কর্তৃপক্ষ টের পেল না! শফিকুল ইসলামও তদন্ত কমিটির কাছে বলেছেন যে, বিজ্ঞাপন খাতে এই ফ্রি টিকেট দেয়া হয়েছে। কোন বিজ্ঞাপন খাতে? আমার জানা মতে লন্ডনের বাংলা মিডিয়াগুলো বিমানের বিজ্ঞাপন খুব একটা পায় না। কালেভদ্রে পেলেও টাকার অংক একেবারে নগন্য। আমার মনে আছে, ২০১৭ সালে বাংলা টিভি পিঠা উৎসবে ঢাকা থেকে শিল্পী আনার জন্য টিকেট আবেদন করে পায় নি। তাহলে কাদের বিজ্ঞাপন খাতে এতো বিশাল অংকের অর্থ বেহাত হলো? তদন্ত টিমের জ্ঞানেন্দ্রনাথ সরকারের কাছে বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি বলেন, "আসলে যেভাবে তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঠিক বিষয়টি তা নয়। কোনও একটি ট্রাভেল এজেন্সি নির্দিষ্ট পরিমাণ টিকেট বিক্রি করলে সে প্রতিষ্ঠানকে ক'টি টিকেট ফ্রি দেয়ার নিয়ম রয়েছে।" তাও মানলাম।

তাই বলে ১৬ কোটি টাকার টিকেট! এখানে উল্লেখ করতে চাই যে, কথা বলার এক পর্যায়ে জ্ঞানেন্দ্র নাথ বলেছেন, বিমানের সাম্প্রতিক সময়ের সব ক'টি তদন্ত কমিটিতে তিনি ছিলেন। তাহলে ঢাকায় যে প্রতিবেদন তিনি দিয়ে এলেন, লন্ডনে এসে তিনি সে প্রতিবেদনকে অস্বীকার করলেন, 'প্রতিবেদনে যা বলা হয়েছে তা ঠিক সে রকম নয়' বলে। তদন্ত টিমের মধ্যেই যদি স্ববিরোধী কথা থাকে তাহলে সে প্রতিবেদন নিয়ে প্রশ্ন করা যেতেই পারে। আমি আগের লেখায়ও বলেছিলাম, অভিযুক্তরা তদন্ত কমিটিকে বশে আনার চেষ্টা করছে। জ্ঞানেন্দ্র নাথের কথা তারই প্রতিফলন কিনা তা চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ হলেই বোঝা যাবে। আমার জানা মতে, বিমানে কোনও ফ্রি টিকেট দিতে হলে ব্যবস্থাপনা পরিচালকের অনুমতি প্রয়োজন হয়। শফিকুল ইসলাম তাহলে অনুমতি ছাড়াই এতো টিকেট দিলো কী করে?

তিন, প্রসঙ্গ ছেড়ে এবার বিষয়গুলো তদন্তে আসা টিমের সদস্যদের লন্ডনে অবস্থান বিষয়ে কথা বলা যাক। লন্ডনে এসে তদন্ত টিমের দুই সদস্য বিমানের কোনও গাড়ি ব্যবহার করেন নি। কোনও হোটেলেও থাকেন নি। ব্যবহার করেছেন ব্যক্তি বিশেষের গাড়ি এবং থেকেছেন ব্যক্তি বিশেষের বাড়ি। যদিও বিমান থেকে তাদের পরিবহন এবং থাকার খরচ বহন করা হবে। আমার জানা মতে এ এস এম মনজুর ইমাম ছিলেন বিমানের লন্ডন অফিসের অ্যাকাউন্সের এক কর্মকর্তার বাসায়। জ্ঞানেন্দ্র নাথ সরকারও থেকেছেন হোটেলে নয় অন্য বাসায়। আর দু'জনকেই সার্বক্ষণিক সময় দিয়েছেন কার্ডিফ নিবাসী খিজির আহমদ নামে জনৈক ব্যক্তি। এই ব্যক্তি তদন্ত কমিটির সদস্যদের পরিবহন, থাকা-খাওয়া-বেড়ানো এসবের জন্য বিমানের কাছে থেকে অনুমতিপ্রাপ্ত কিনা আমার জানা নেই। আমি বহুবার চেষ্টা করেছি ওনার সাথে ফোনে যোগাযোগ করার। তিনি ফোনে প্রথমবার একটু কথা বলে ব্যস্ত আছেন এবং পরে ফোন করবেন বললেও করেন নি।

আমি এর পরে বার কয়েক ফোন করলেও তিনি ধরেন নি। টেক্সট করে তারও কোন উত্তর পাই নি। তদন্ত কমিটির সদস্যরা যেখানেই বৈঠক করেছেন সেখানে তিনি ছিলেন। কার্গো প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে বৈঠক করার সময় তার পরিচয় জানতে চাওয়া হলেও তিনি পাশ কাটিয়ে যান। জানা গেল, তিনিই বিভিন্ন ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠানের সাথে বৈঠক করার জন্য তদন্ত কমিটির সদস্যদের নিয়ে গেছেন। অনেক প্রতিষ্ঠানকে দেখলাম এ বিষয়ে প্রশ্ন তুলতে। সে আগ্রহ থেকে আমি একটু খোঁজ-খবর করলাম এই ব্যক্তি সম্পর্কে। জানা গেল, খিজির আহমদের সাথে বিমানের উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের সুসম্পর্ক রয়েছে। তিনি নিজেই নাকি বলেন বিমানের পাইলটরা লন্ডনে নেমেই তাকে ফোন দেন। তার সাথে ঘোরা-ফেরা করেন। সরাসরি বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ এম মোসাদ্দেক আহমদের সাথেও তার সুসম্পর্ক রয়েছে। ফোনে প্রায়ই কথা হয় বলেও তিনি দাবি করেন। বাংলাদেশে যাওয়ার সময় ইকোনমি ক্লাসে টিকেট কিনে বিজনেস ক্লাসে বসে যাওয়ার সুযোগও পাইলটরা তাকে দিয়ে থাকেন বলেও জানলাম বিমানের এক কর্মকর্তার সূত্রে। বিমানের উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের সাথে যেহেতু খিজির আহমদের এতো ভালো সম্পর্ক তাতে করে বিমান কর্তৃপক্ষ তদন্ত টিমকে তার তত্বাবধানে থাকার অনুমতি দিয়েছে কিনা তাই আমার জানার আগ্রহ, আর কিছু নয়। তা না হলে সুদূর কার্ডিফ থেকে লন্ডনে টানা এক সপ্তাহ তিনি কেন সময় দিবেন? যদি বিমান কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়াই এ দায়িত্ব তিনি পালন করে থাকেন তাহলে তদন্ত কমিটির স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই পারে। তদন্ত কর্মকর্তারাতো বিমানের তত্বাবধানেই থাকবেন। ব্যক্তি বিশেষের সাথে থাকা এবং তা যদি তদন্তের ক্ষেত্রে প্রভাব বিস্তার করে তাহলে প্রতিবেদনে তার কোনও ছাপ আছে কিনা খতিয়ে দেখতে হবে। আমি অনেক চেষ্টা করেও খিজির আহমদের হদিস করতে পারলাম না। কেন তিনি কথা বলতে চাইলেন না, এ প্রশ্ন আমার মনে জেগেছে, তাই তার প্রসঙ্গ নিয়ে এলাম।

সে যাই হোক ২৬ এপ্রিল তদন্ত কমিটির দুই সদস্য ঢাকা ফিরে গেছেন। আগামী ৩০ এপ্রিল তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করার কথা রয়েছে। আমরা সে পর্যন্ত অপেক্ষা করতে পারি।