অনেক নয়, দরকার বিশ্বমানের বিশ্ববিদ্যালয়

মোহাম্মদ আব্দুল বাছিত
Published : 10 April 2019, 04:04 PM
Updated : 10 April 2019, 04:04 PM

পৃথিবীর প্রাচীনতম বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে ইতালির বোলোগনা বিশ্ববিদ্যালয়। অন্যদিকে ইংরেজি ভাষাভাষী বিশ্বের প্রাচীনতম বিশ্ববিদ্যালয় 'অক্সফোর্ড'। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সঠিক তারিখ জানা না গেলেও অনুমান  করা হয় ১১শ শতাব্দীর প্রথম থেকেই অক্সফোর্ডে উচ্চশিক্ষার কার্যক্রম শুরু হয়। ওই সময় ইংল্যান্ডের একমাত্র উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান অক্সফোর্ডের পণ্ডিতদের সাথে স্থানীয় লোকদের বিবাদ লেগেই থাকতো। শ্রেণিবিভেদ আর চার্চের বিষোদগার মিলে ১৩শ শতকের শুরুর দিকে অক্সফোর্ডে শুরু হয় এক ভয়াবহ দাঙ্গা। ওই সময়ে ভিন্নমত পোষণকারী অনেক শিক্ষার্থী এবং পণ্ডিত অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পালিয়ে আশ্রয় নেন ক্যামব্রিজ শহরে। আর এভাবেই অক্সফোর্ড থেকে পালিয়ে আসা কিছু শিক্ষক-শিক্ষার্থীর হাতে গড়ে ওঠে পৃথিবীর ইতিহাসের অন্যতম শ্রেষ্ঠ আরেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়।

১২৩১ সালে রাজা তৃতীয় হেনরি অক্সফোর্ডের পাশাপাশি ক্যামব্রিজকে রয়্যাল চার্টার প্রদান করে করমুক্ত ঘোষণা করেন। এভাবেই প্রাচীনতম দুটি বিশ্ববিদ্যালয় ইংল্যান্ডের দুটি শহরকে পৃথিবীর মানচিত্রে এক অনন্য মহিমায় প্রতিষ্ঠিত করে। জ্ঞান বিতরণের পাশাপাশি জ্ঞান সৃষ্টি করার মাঝেও অনন্য হয়ে ওঠে এই দুটি বিশ্ববিদ্যালয়।

শত শত বছর ধরে  নিজেদের ইতিহাস-ঐতিহ্য অক্ষুণ্ণ রেখে এমন কঠোরভাবে শিক্ষা এবং গবেষণার মান নিয়ন্ত্রণ করতে করতে এগিয়ে চলা বিরল দুটি বিশ্ববিদ্যালয় এই  'অক্সব্রিজ'। যে কোনও র‌্যাঙ্কিংয়ে প্রায় প্রতি বছরই বিশ্বসেরা দশটি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যেই  অবস্থান করে অক্সফোর্ড এবং ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়। এর পেছনে নানাবিধ কারণ রয়েছে। তবে একটি কারণ অবশ্যই অর্থনৈতিক।

২০১৭-১৮ অর্থবছরে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট সম্পদের অর্থমূল্য ছিল ৪ বিলিয়ন পাউন্ড (প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা)। একই বছর বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট খরচ ছিল ২ দশমিক ১ বিলিয়ন পাউন্ড। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট সম্পদের অর্থমূল্য ছিল ৫ দশমিক ২ বিলিয়ন পাউন্ড। ওই অর্থবছরে মোট খরচ ছিল ১ দশমিক ৯ বিলিয়ন পাউন্ড যা বাংলাদেশি টাকায় ২০ হাজার কোটি টাকারও বেশি।

উল্লেখ্য যে, বাংলাদেশের সর্বোচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরের বাজেট ছিল ৬৬৪ কোটি টাকা,  ওই অর্থবছরে প্রকৌশল ও প্রযুক্তি শিক্ষার সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেট ছিল মাত্র ১৮৬ কোটি টাকা। অবাক করার মতো বিষয় হচ্ছে যে, অক্সফোর্ড কিংবা ক্যামব্রিজের মোট আয়ের মাত্র এক-তৃতীয়াংশ আসে সরকারি অনুদান থেকে। বাকি অর্থ আসে গবেষণা, শিক্ষার্থীদের বেতন, পাবলিশিং সার্ভিস, অ্যালামনাইদের অনুদান এবং অন্যান্য খাত থেকে।

৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ রয়টার্সের একটি সংবাদ শিরোনাম ছিল, 'ক্যামব্রিজের সেন্ট ক্যাথরিন কলেজের এলামনাস ডেভিড হার্ডিং তার নিজের এবং স্ত্রী ক্লডিয়া হার্ডিংয়ের যৌথ ফাউন্ডেশন 'ডেভিড অ্যান্ড ক্লডিয়া হার্ডিং ফাউন্ডেশন' থেকে ১০০ মিলিয়ন পাউন্ডের (প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা) রেকর্ড পরিমাণ অনুদান দিয়েছেন ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়কে।

আমদের দেশে গত দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে অনেকগুলি সরকারি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। অত্যন্ত দুঃখের সাথে বলতে হয়, ষোল কোটি মানুষের একটি দেশে এখন পর্যন্ত আন্তর্জাতিক মানের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ও নেই। বৈশ্বিক র‌্যাঙ্কিংয়ের কথা বাদই দিলাম,  এশিয়ার তালিকায়ও বাংলাদেশের কোনও বিশ্ববিদ্যালয় সেরা ১০০ বিশ্ববিদ্যালয়ের  মধ্যে নেই।

শিক্ষার সাথে সংশ্লিষ্ট একজন নাগরিক হিসেবে কল্পনা করি, যদি দেশের আটটি বিভাগীয় শহরে সম্পূর্ণ নতুন আঙ্গিকে একটি করে নতুন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হতো। এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে ছয়টি করে ফ্যাকাল্টি থাকবে: (ক) ফ্যাকাল্টি অব সায়েন্স, (খ) ফ্যাকাল্টি অব আর্টস, (গ) ফ্যাকাল্টি অব ইঞ্জিনিয়ারিং, (ঘ) ফ্যাকাল্টি অব কমার্স, (ঙ) ফ্যাকাল্টি অব মেডিসিন ও (চ) ফ্যাকাল্টি অব এগ্রিকালচার।

এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যরা হবেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন এক একজন স্কলার। উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে, ইউনিভার্সিটি অব ম্যাসাচুয়েটস ডার্থমাউথ-এর প্রভোস্ট এবং নির্বাহী ভাইস-চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. মোহাম্মাদ আতাউল  করিম কিংবা পদার্থ বিজ্ঞানে নোবেল প্রাপ্তির দ্বারপ্রান্তে থাকা প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জাহিদ হাসান এর নাম। এইরকম অনেক বাংলাদেশি স্কলার পৃথিবীর নানা প্রান্তে ছড়িয়ে রয়েছেন, তাদের মধ্য থেকে প্রতিশ্রুতিশীল যোগ্য ব্যক্তিরাই হবেন এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য। পাশাপাশি ভিন্ন দেশের যোগ্যতাসম্পন্ন স্কলারদেরও উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেয়া যেতে পারে।

এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগের জন্য ন্যূনতম যোগ্যতা হবে পিএইচডি ডিগ্রি, সাথে বিদেশের কোনও শিক্ষা কিংবা গবেষণা প্রতিষ্ঠানে দুই বছর কাজের অভিজ্ঞতা। একজন শিক্ষক পৃথিবীর যে কোনও দেশের নাগরিক হতে পারবেন, তবে বাংলাদেশের কোনও প্রতিষ্ঠানে এই মুহূর্তে কর্মরত কোনও ব্যক্তি শিক্ষক হিসেবে আবেদন করতে পারবেন না। আইনগতভাবে সম্ভব না হলেও অন্তত অলিখিতভাবে বৃহত্তর স্বার্থে এই চর্চা করতে হবে। ষোল কোটি মানুষের দেশে প্রতিষ্ঠিত কোনও বিশ্ববিদ্যালয় কোনওভাবেই যেন ক্ষতিগ্রস্ত কিংবা অবহেলার শিকার না হয় তা অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে। বর্তমানে কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত শিক্ষক এসব নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে এলে স্ব স্ব বিশ্ববিদ্যালয় ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

পাশাপাশি দীর্ঘদিন থেকে দেশের পুরাতন বিশ্ববিদ্যালয়ের তথাকথিত নিয়মকানুনের সাথে তাদের অভ্যস্ততা নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জনে ব্যাঘাত ঘটাবে। নতুন এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা যে কোনো বাংলাদেশি আবেদন করতে পারবেন। শিক্ষকদের টিচিং লোড থাকবে ৪০ শতাংশ, গবেষণা লোড ৬০ শতাংশ। গবেষণার জন্য প্রত্যেক শিক্ষকের তত্ত্বাবধানে অন্তত দুইজন ফুল ফান্ডেড পিএইচডি ছাত্র এবং একজন পোস্টডক্টরাল ফেলো থাকবেন। প্রাথমিকভাবে পাঁচ বছরের জন্য শিক্ষক নিয়োগ করা হবে, কর্মদক্ষতা যাচাই করে পরবর্তী পাঁচ বছরের জন্য নিয়োগ দেয়া হবে। সকল ধরনের প্রমোশনের জন্য বিগত তিন বছরের কর্মই একমাত্র বিবেচ্য বিষয় হবে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের জন্য পৃথক একটি বেতন স্কেল থাকবে।

এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র হিসেবে ভর্তি হতে পারবে বাংলাদেশসহ পৃথিবীর যে কোনও দেশের নাগরিক। স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর যে কোনও পর্যায়ে ছাত্র ভর্তির আবেদনের জন্য একটি ন্যূনতম গ্রেড থাকবে। প্রাথমিকভাবে বাছাইকৃত যোগ্য প্রার্থীদের মধ্য থেকে SAT, GMAT কিংবা GRE-এর অনুরূপ কোনো পরীক্ষার স্কোর, রিকমেনডেশন লেটার, এবং আনুষঙ্গিক ডকুমেন্ট পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেই ভর্তির জন্য বিবেচনা করা হবে। SAT, GMAT কিংবা GRE-এর অনুরূপ একটি ভর্তি পরীক্ষা প্রণয়ন খুব কঠিন কাজ নয়। তবে কোনওভাবেই এখনকার মতো ভর্তি পরীক্ষা থাকবে না।

যে কোনও ফ্যাকাল্টির অধীনে একটি বিভাগ খোলার জন্য সবার প্রথমে অন্তত বিশজন শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হবে। নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকেরা এক বছর সময় পাবেন সিলেবাস এবং আনুষঙ্গিক ল্যাব তৈরি করতে। প্রথম সেমিস্টারে ছাত্র ভর্তির পূর্বে এই সমস্ত প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হবে। যে কোনও বিভাগের একটি ক্লাসের একটি সেকশনে চল্লিশ জনের বেশি শিক্ষার্থী থাকতে পারবে না । স্নাতক পর্যায়ে ক্লাস হবে সকাল আটটা থেকে দুপুর দুইটা পর্যন্ত। স্নাতকোত্তর পর্যায়ের ক্লাস দুইটার পরে হতে পারে। লাইব্রেরি এবং গবেষণা ল্যাব প্রায় সার্বক্ষণিক খোলা থাকবে। সকাল এগারোটা থেকে সাড়ে এগারোটা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে সকল ক্লাস, পরীক্ষা বন্ধ থাকবে। স্নাতক ক্লাসে একজন শিক্ষকের সাথে থাকবেন একজন টিচিং/গবেষণা সহকারী এবং একজন সহযোগী। টিচিং সহযোগীর প্রধান কাজ হবে ছাত্রদের গ্রেডিং করা। টিচিং সহকারী হবেন ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক লেভেলের শিক্ষার্থী, সহযোগী হবেন স্নাতকোত্তর পর্যায়ের শিক্ষার্থী (প্রথম কয়েক সেমিস্টার ব্যতিক্রম)।

অনেকেই জেনে অবাক হবেন যে, ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরে ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ ২৭ শতাংশ আয় ছিল গবেষণা অনুদান এবং কন্ট্রাক্ট থেকে। পৃথিবীর সব সেরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে একই চিত্র অর্থাৎ গবেষণাই আয়ের সর্বোচ্চ উৎস। একটি কথা মনে রাখা উচিত আমাদের শিক্ষার্থীরা বিদেশের উন্নত গবেষণা পরিবেশে শুধু ভালো গবেষণাই করেন না, নভেল আইডিয়া সৃষ্টি করে সামনে থেকে নেতৃত্বও দেন। সুতরাং শুরুতেই যেন নতুন বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে একটি উন্নত গবেষণা সংস্কৃতি গড়ে উঠে তা নিশ্চিত করতে হবে। এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে প্রতিষ্ঠা করতে হবে অন্তত একটি 'সেন্টার অব এক্সিলেন্স ফর অ্যাডভান্সড রিসার্চ' যেখানে থাকবে মান সম্মত গবেষণার জন্য সমস্ত আধুনিক যন্ত্রপাতি ।

এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে আরও থাকবে সকল সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত আধুনিক লাইব্রেরি, উন্নত হেলথ ক্লাব, সেন্ট্রাল ক্যাফেটেরিয়া, সুইমিং পুল, বড় মাঠ এবং সুউচ্চ টাওয়ার। সকল ধরনের সমাবেশের  জন্য থাকবে একটি স্কয়ার । অনুমতিসাপেক্ষে যে কোনো অনুষ্ঠান, যে কোনো প্রতিবাদ শুধু ঐ স্কয়ারে নির্দিষ্ট সময়ে করা যাবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকবে একটি আধুনিক কনফারেন্স সেন্টার, সাথে ফাইভ স্টার হোটেলের মানের একটি গেস্ট হাউজ। বছরের বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন গবেষণাক্ষেত্রে আয়োজিত কনফারেন্স, সেমিনার, সিম্পজিয়ামে আগত ব্যক্তিরা নির্ধারিত ফি দিয়ে ওই গেস্ট হাউজে থাকতে পারবেন। আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস রুম, অফিস রুম, বাথরুম সব কিছুতেই অপরিচ্ছন্নতা চোখে পড়ার মতো। নতুন ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস রুম থেকে বাথরুম পর্যন্ত সবকিছু থাকবে চকচকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন।

শিক্ষার্থীদের আবাসিক হল থাকবে। তবে ওইসব হলে শুধু প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীরা থাকতে পারবেন। দ্বিতীয় বর্ষ থেকে আবাসিক হলে কোনও শিক্ষার্থী থাকতে পারবেন না। প্রথম বর্ষের ছাত্ররা সম্পূর্ণ নতুন একটি শহরে আসার পর স্বভাবতই থাকা-খাওয়ার জন্য অনেক সমস্যার সম্মুখীন হন। ফলে অনেক ভালো শিক্ষার্থী পড়াশোনায় উৎসাহ হারিয়ে ফেলেন, হতাশাগ্রস্ত হন। নির্ধারিত সময়ে তারা ডিগ্রি অর্জন করতে পারেন না বিধায় অতিরিক্ত সময় আবাসিক হলে অবস্থান করেন এবং হল তথা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত করেন। প্রস্তাবিত নতুন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে প্রথম বর্ষে কতজন ছাত্র ভর্তি হবে ওই হিসেব করেই আবাসনের ব্যবস্থা করা হবে। প্রথম বর্ষের পরে শিক্ষার্থীরা নিজ দায়িত্বে শহরে তাদের বাসস্থানের ব্যবস্থা করবেন।

নতুন এই আটটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনও কিছুই ফ্রি দেয়া হবে না। পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ বিশ্ববিদ্যালয়গুলির নিজস্ব আয় ঈর্ষণীয় । আয়ের আরও একটি বড় উৎস শিক্ষার্থীদের বেতন। ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরে ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের আয়ের ১৫ শতাংশ এসেছিলো শিক্ষার্থীদের বেতন থেকে। কাজেই বাংলাদেশের নতুন এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার্থীদের একটি যৌক্তিক ফি অবশ্যই দিতে হবে। এটি অসম্ভব কিংবা অবাস্তব নয়। কেননা বর্তমানে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে আমাদের হাজার হাজার শিক্ষার্থী উল্লেখযোগ্য পরিমাণ ফি দিয়েই পড়ছেন। বাংলাদেশের আর্থিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় রেখে দেশীয় শিক্ষার্থীদের জন্য যে ফি নির্ধারণ করা হবে, বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য তা অন্তত দুই থেকে তিনগুণ বেশি হবে। তবে ভর্তির জন্য বিবেচিত বাংলাদেশি কোনও শিক্ষার্থীর পরিবারের আর্থিক অসচ্ছলতা থাকলে তার ঋণ পাওয়ার ব্যবস্থা থাকতে হবে। পাস করার পর ধাপে ধাপে এই ঋণ পরিশোধ করতে হবে। ঋণ পরিশোধের জন্য একটি যৌক্তিক নীতিমালা প্রণয়ন করা হবে। পাশাপাশি টিচিং/গবেষণা সহকারী এবং সহযোগী হিসেবে সম্ভব সর্বোচ্চ সংখ্যক শিক্ষার্থীদের অন্তর্ভুক্ত করা হবে। এতে করে শিক্ষার্থী এবং বিশ্ববিদ্যালয় উভয় পক্ষই যথেষ্ট লাভবান হবে।

আমাদের অর্থনৈতিক উন্নয়ন হয়েছে, বিশেষ করে কৃষিক্ষেত্র, যোগাযোগ, এবং গার্মেন্টস শিল্পে অভূতপূর্ব উন্নয়ন হয়েছে। আমাদের ক্রিকেট হয়েছে আন্তর্জাতিক মানের। অথচ উচ্চশিক্ষা এবং গবেষণায় আমরা উন্নত দেশের চেয়ে এখনো অনেক পিছিয়ে। উচ্চশিক্ষা এবং গবেষণায় আন্তর্জাতিক মান অর্জন করতে হলে আপাতদৃষ্টিতে এরকম অসম্ভব কিছুকে বাস্তব এবং সম্ভব করতে হবে। মনে রাখতে হবে শুধু শিক্ষা এবং গবেষণায় আন্তর্জাতিক মান অর্জন করতে পারলে এই স্রোতেই আরও অনেক কিছু আন্তর্জাতিক মানের হয়ে যাবে। এই তত্ত্ব ইউরোপ-আমেরিকার কথা বাদ দিলাম, এশিয়ার কিছু দেশেই প্রমাণিত। কিন্তু এই সহজ তত্ত্বটি আমরা এখনো কেন উপলব্ধি করতে পারছি না !