কর্মক্ষেত্রে স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা: আমাদের করণীয়

শুভংকর বিশ্বাস
Published : 1 April 2019, 06:49 AM
Updated : 1 April 2019, 06:49 AM

ঘটনা-০১

২০১০ সালের ৩ জুন পুরান ঢাকার নবাব কাটরার নিমতলিতে এক ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে ১১৯ জন মানুষ নিহত ও প্রায় ২০০ জন আহত হন। ঘটনার কারণ হিসেবে আমরা জানতে পারি, ভবন সংলগ্ন স্থানে একটি বৈদ্যুতিক ট্রান্সফর্মার বিস্ফোরিত হলে সেখান থেকে আশপাশের ভবনগুলোতে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। আবার আক্রান্ত ভবনগুলির মধ্যে কয়েকটিতে দাহ্য রাসায়নিক মজুদ থাকায় তা বিস্ফোরণের ফলে আগুনের লেলিহান শিখা আরও দ্রুত পাশের ভবনগুলোতে ছড়িয়ে পড়ে। আবার জায়গাটি অত্যন্ত সংকীর্ণ হওয়ায় ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা সময় মতো সেখানে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রন ও উদ্ধারকাজ চালাতে পারেননি। ফলে বহুসংখ্যক প্রাণহানি ঘটে।

ঘটনাটিকে আমি তিন ধাপে ভাগ করব। এক. বৈদ্যুতিক ট্রান্সফর্মার বিস্ফোরণে আগুনের সূত্রপাত, দুই. ভবনে দাহ্য রাসায়নিক পদার্থ মজুদের ফলে আগুনের ভয়াবহ পরিব্যাপ্তি, ও তিন. রাস্তা সরু হওয়ায় ফায়ার সার্ভিসের দল কর্তৃক সময় মতো উদ্ধার তৎপরতা চালাতে না পারা।

ঘটনা-০২

২০১২ সালের ২৪ নভেম্বর ঢাকার আশুলিয়ার নিশ্চিন্তপুরের তাজরিন ফ্যাশনসে আগুন লেগে ১১৩ জন কর্মরত শ্রমিক প্রাণ হারান ও তিন শরও বেশি আহত হন। ঘটনার বিবরণে আমরা জানতে পারি, ওই দিন তাজরিন ফ্যাশনসের ফ্যাক্টরির নিচতলার তুলার গুদামে আগুন লাগলে কারখানাটির সহস্রাধিক শ্রমিক প্রাণে বাঁচতে ভবন থেকে নামার চেষ্টা করেন। কিন্তু শ্রমিকদের বাইরে যাওয়া ঠেকাতে নিচতলায় বাইরে থেকে তালা লাগিয়ে দেয় নিরাপত্তাকর্মীরা। ফলে শ্রমিকরা আর কারখানার বাইরে বের হতে পারেননি। এতে করে আগুনে পুড়ে এবং কারখানার ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়ে জীবন হারাতে হয় শ্রমিকদের।

ঘটনা-০৩

২০১৯ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি পুরান ঢাকার চকবাজারের চুড়িহাট্টায় আরেক ভয়াল অগ্নিদুর্ঘটনায় ৮০ জনের অধিক নিহত ও কমপক্ষে প্রায় ৫২ জন আহত হন। ঘটনার একটি বিবরণে প্রাথমিকভাবে বলা হয়, উক্ত স্থানে একটি সিএনজি চালিত গাড়ির গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণের ফলে তৎসংলগ্ন একটি খাবারের দোকানের সিলিন্ডারেও বিস্ফোরণ ঘটে, সেখান থেকে আগুন বৈদ্যুতিক ট্রান্সমিটারে লাগলে তা বিস্ফোরিত হয়। এই দুইয়ের মিলিত প্রভাবে পার্শ্ববর্তী ভবনগুলোতে আগুন ছড়িয়ে পড়ে যেখানে দাহ্য রাসায়নিক পদার্থ মজুদ ছিল। পরবর্তিতে ভয়ঙ্করভাবে আগুন চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে এবং ভবনগুলোতে থাকা মানুষজন আটকা পড়ে। পর্যাপ্ত পরিমান পথ না থাকায় যথারীতি ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ও সরঞ্জাম যেতে সময়ক্ষেপন হওয়ায় দ্রুত আগুন নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়নি এবং ফলে এতগুলো জীবন প্রদীপ নিভে গেল। যদিও পরে তদন্ত কমিটি জানায়, সেখানে আগুনের সূত্রপাত হয়েছিল ওয়াহেদ ম্যানশনে দোতলা থেকে। হয়তো শর্টসার্কিটই হয়েছিল!

এক্ষেত্রেও ঘটনাটিকে আমি প্রথম ঘটনার মতই তিন ধাপে ভাগ করব। এক. যেকোনও কারণেই হোক  আগুনের সূত্রপাত, দুই. ভবনে থাকা দাহ্য রাসায়নিক পদার্থের কারণে আগুনের পরিব্যাপ্তি, ও তিন. পর্যাপ্ত জায়গা না থাকায় ফায়ার সার্ভিস কর্তৃক উদ্ধার তৎপরতায় বিলম্ব।

ঘটনা-০৪

গত ২৮ মার্চ দুপুরে বনানির এফআর টাওয়ারে আগুন লেগে ২৫ জন নিহত ও প্রায় ৭৪ জন আহত হন। ঘটনার (আগুনের উৎস) কারণ এখনও অস্পষ্ট থাকলেও পত্রিকাসমুহের বিবরণ থেকে এটা স্পষ্ট যে, ২২ তলাবিশিষ্ট ভবনটির ৭ম থেকে ৯ম তলার মধ্যে কোথাও থেকে, সম্ভবত কোন রেস্টুরেন্টের রান্নাঘর থেকে অথবা বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। ভবনটির অননুমোদিত নকশা এবং এতে পর্যাপ্ত অগ্নিনির্বাপণের ব্যবস্থা না থাকায় আগুন চারিদিকে ছড়িয়ে পড়লে এই ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা ঘটে।

দেখুন, এরকম অসংখ্য ঘটনা বাংলাদেশে নিত্যনৈর্মিত্তিক ঘটে চলেছে যেগুলোর কারণগুলো খুব কাছাকাছি। তবে উপরোক্ত ঘটনাগুলির ক্ষয়ক্ষতির (নিহতের সংখ্যা) পরিমাণ বেশি হওয়ায় আমি শুধু সেগুলোই উল্লেখ করেছি মাত্র। আপনারা অনেকেই হয়তো আমার সাথে একমত হবেন যে, এমন অসংখ্য প্রানহাণির জন্য প্রধানত আমাদের অজ্ঞতাই দায়ী। আমরা একটু সচেতন হলেই অধিকাংশ সংঘটিত দুর্ঘটনা এড়াতে সক্ষম হতাম। আমি বিশ্বাস করি যে, বিস্ফোরিত গ্যাস সিলিন্ডারের গাড়ির মালিক, কিংবা যেসব রাসায়নিক গুদামে আগুন লেগেছে তাদের মালিকসমূহ, তাজরিন ফ্যাশনসের মালিক এবং এফআর ভবনের মালিক- কেউই চাননি তাদের কারণে এমন ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটুক। তাই আমি বলব, যথাযথভাবে ভবন নির্মাণ, এবং কারখানা ও রাসায়নিক গুদামের ঝুঁকিমুক্ত রক্ষণাবেক্ষণের জন্য পর্যাপ্ত তথ্য সরবরাহ ও প্রশিক্ষণ দিয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সচেতন করে তুলতে পারলে ভবিষ্যতে এ ধরনের ভয়াবহ দুর্ঘটনা থেকে আমরা রেহাই পাব।

আমরা যারা বিদেশে থাকি, আমাদের পেশা যা-ই হোক না কেন, কর্মক্ষেত্রের নিরাপত্তা সম্পর্কে আমরা শতভাগ ওয়াকিবহাল। অস্ট্রেলিয়া, ইউরোপ ও আমেরিকাসহ অনেক দেশে কর্মক্ষেত্রে/পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার (Workplace/Occupational Health & Safety, সংক্ষেপে W/OHS) বিষয়টিকে সর্বাধিক গুরুত্ব সহকারে দেখা হয়। আর এজন্য প্রতিষ্ঠানসংশ্লিষ্ট সকলকে অবধারিতভাবে তাদের স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার বিষয়ে সচেতন করা হয় এবং জরুরি অবস্থায় করণীয় সম্পর্কে যথেষ্ট প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।

আসুন অতি সংক্ষেপে জেনে নেয়া যাক, কর্মক্ষেত্রে/পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা (WHS বা OHS) কী? কর্মক্ষেত্রে স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা হলো একটি প্রতিষ্ঠান বা সংস্থার সকল বিভাগের সমন্বয়ে গঠিত একটি সংমিশ্রণ ক্ষেত্র যা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের সাথে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে যুক্ত সকলের স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা ও কল্যানের নিমিত্তে কাজ করে থাকে। উল্লেখ্য যে, এখানে স্বাস্থ্য বলতে শুধু রোগবালাইকে বোঝানো হয় না, বরং স্বাস্থ্য বলতে সামগ্রিক স্বাস্থ্য, অর্থাৎ দৈহিক, মানসিক ও সামাজিক স্বাস্থ্যকে বোঝানো হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা বিষয়টির প্রধান কাজ হলো কর্মক্ষেত্রে যেকোনও ধরনের ঝুঁকি বা সম্ভাব্য বিপদ প্রতিরোধ করা।

কর্মক্ষেত্রে স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা বিষয়টি এত বড় যে, মতামতের কলামে তা আঁটবে না। তাই এই বিষয়ে বিস্তারিত বর্ণনা না করে আমরা বরং আলোচনার মূল বিষয়বস্তুর মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকি। এক্ষেত্রে আমি রাসায়নিক দ্রব্য সংরক্ষণ ও অগ্নি নিরাপত্তাব্যবস্থার ব্যবহারিক দিক নিয়ে আলোকপাত করবো।

২০১১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে আমি অস্ট্রেলিয়ার নিউ ক্যাসেল বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি করতে আসি। আমার রিসার্স সেন্টার "Newcastle Institute for Energy & Resources" বা সংক্ষেপে "নিয়ার" (NIER) ছিল নয় তলাবিশিষ্ট ভবন, যার সপ্তম তলায় ছিল আমার বসার ডেস্ক। শুরুর প্রথম দিনই আমার গবেষণা সুপারভাইজার ও একজন দায়িত্বপ্রাপ্ত অগ্নিনিরাপত্তা তত্ত্বাবধায়ক (fire safety warden) আমাকে নিয়ে উক্ত ভবনের স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তাব্যবস্থা সম্পর্কে (building health & safety induction) অবহিত করেছিলেন ভবনের চারিদিকে ঘুরে ঘুরে। উনারা আমাকে দেখিয়েছিলেন কোথায় কোথায় প্রাথমিক চিকিৎসার সরঞ্জাম (first aid kit) আছে এবং এর মধ্যে কী কী থাকে, জরুরি নির্গমন পথ (বিকল্প সিঁড়ি দিয়ে নামার পথ), অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র ও এর ব্যবহারবিধি, জরুরি ক্ষেত্রে কাঁচের জানালা এবং দরজা ভাঙ্গার সুইচ (glass breaker), হাতুরি (কাঁচের জানালা-দরজা ভাঙ্গার সুইচ কাজ না করলে অতিরিক্ত হিসেবে বিকল্প ব্যবস্থা), টর্চলাইট, অগ্নি নিরোধক জ্যাকেট, এবং ভবনের বাইরে অবস্থিত নিরাপদ সমাবেশ স্থান (assembly point)।

এখানেই শেষ নয়। ওই বিল্ডিং এককভাবে ঢোকার অনুমতি পাওয়ার জন্য আমাকে রীতিমত ভবনের নিরাপত্তা বিষয়ক লিখিত পরীক্ষায় পাস করতে হয়েছিল (safety induction)। তারপরও প্রতি সপ্তাহে একদিন আমাদের রিসার্স গ্রুপের মিটিং-এ এই সেফটি শেয়ার বাধ্যতামূলক ছিল যেখানে আমাদের প্রত্যেককেই ভবনে চলার পথে বা কাজ করার সময় কোথাও কোনও হ্যাজার্ড (বিপদের ঝুঁকি) থাকলে তা বলতে হতো। উল্লেখ্য যে, এই সেফটি শেয়ার প্রত্যেকটি রিসার্স গ্রুপসহ অন্যান্য গ্রুপ যথা- টেকনিশিয়ান গ্রুপ, প্রকৌশলী গ্রুপ ও ম্যানেজমেন্ট গ্রুপেও বাধ্যতামূলক ছিল। এই সেফটি শেয়ার থেকে যদি কোনও বিপদের ঝুঁকি উঠে আসত তবে তা সাথে সাথেই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানো হতো এবং তারা তাৎক্ষণিকভাবে তা সমাধানের পদক্ষেপ নিতেন। সুতরাং দেখুন, এই ভবনের সবার নিরাপত্তার জন্য শুধু বিশেষভাবে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নিরাপত্তা তত্ত্বাবধায়কই নয় (উল্লেখ্য, এই পদটি একটি স্বেচ্ছাসেবক পদ, এর জন্য আলাদা কোনও বেতন দেওয়া হয় না), বরং আমরা ইনস্টিটিউটের সবাই মিলে একটি সেফটি কালচার গড়ে তুলেছিলাম নিজেদের মধ্যে বিপদের ঝুঁকি সংক্রান্ত তথ্য শেয়ারের মাধ্যমে। সাধারণভাবে এটাই অস্ট্রেলিয়ার সেফটি কালচার।

এবার আসি ফায়ার অ্যালার্ম প্রসঙ্গে। অস্ট্রেলিয়ায় শুধু অফিস-আদালত নয়, বরং আবাসিক ভবনসমূহেও ফায়ার অ্যালার্ম সেট করা বাধ্যতামূলক। কোথাও আগুন লাগলে সরকারের ইমার্জেন্সি নম্বর, ট্রিপল জিরোতে (০০০) ফোন করলে দ্রুততম সময়ের মধ্যে অগ্নি নির্বাপক গাড়ি এসে হাজির হয়। তবে বড় বড় অফিসগুলোর ক্ষেত্রে ফায়ার ব্রিগেড অফিস সরাসরি উক্ত ভবনের ফায়ার অ্যালার্মের কেন্দ্রীয় সুইচবোর্ডের সাথে প্রযুক্তির মাধ্যমে যুক্ত থাকে (this system is known as "Automatic Fire Alarm (AFA) System") । যদি ওই সব ভবনে আগুন লাগে তবে কেউ তাদেরকে জানানোর আগেই ফায়ার ব্রিগেড নিজ থেকেই সেখানে এসে হাজির হয়।

ফায়ার ব্রিগেডের লোকজন আসলে না হয় তারা আগুন নিভানোর কাজ করবে। কিন্ত তার আগে এই ভয়ঙ্কর মুহূর্তে আমার করণীয় কী! অধিকাংশ ক্ষেত্রে ফায়ার অ্যালার্মগুলোর শব্দের তীব্রতা সময়ের সাথে ক্রমেই বাড়তে থাকে এবং একটা পর্যায়ে অ্যালার্ম থেকে ভবন খালি করার নির্দেশ দেয় (evacuation directed)। এখন আমার কাজ হলো আমি যে অবস্থায় থাকি না কেন, আমাকে ভবন থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। এই সময় কোনও অবস্থাতেই আমি লিফট ব্যবহার করতে পারব না। আমাকে যেকোনও সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে আসতে হবে। কোথাও কোন বাধা পেলে গ্লাস ব্রেকার, হাতুড়ি, বা অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র ব্যবহার করে যেকোন উপায়ে বাইরে এসে নিরাপদ সমাবেশ স্থানে জড় হওয়া। উল্লেখ্য যে, বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেলে সিঁড়ির প্রতি ধাপের কিনারে আড়াআড়িভাবে যুক্ত ফ্লুরোসেন্ট লাইনার দিয়ে অবিরত মৃদু আলো বের হতে থাকে যাতে সিঁড়ির কিনারাগুলো এবং নির্গমন পথ- দুটিই ভালোভাবে চেনা যায়।

তবে এই সিস্টেম ঠিক মতো কাজ করছে কিনা (অ্যালার্ম বাজা এবং আমাদের অতি দ্রুত ভবন খালি করা) তা যাচাই করতে আমাদের বেরসিক কর্তৃপক্ষ ইচ্ছাকৃতভাবে মাঝে মাঝেই আমাদেরকে না জানিয়ে কৃত্রিম উপায়ে ফায়ার অ্যালার্ম বাজাতো। এতে করে যে শুধু ফায়ার অ্যালার্মের কার্যকারিতা নিশ্চিত করত তা-ই নয়, সাথে আমাদেরও জরুরি অবস্থায় করণীয় সম্পর্কে বাস্তব প্রশিক্ষণ হয়ে যেত।

এতক্ষণ তো আলোচনা করলাম আগুন লাগার পর কিভাবে আত্মরক্ষা করতে হয় সেটা নিয়ে। কিন্তু সেই আগুন লাগার উৎস কী? এটা কর্মক্ষেত্রের প্রকৃতির উপর নির্ভর করে বিভিন্ন রকমের হতে পারে। তবে মোটা দাগে আমি দুটি প্রধান বিষয়ের কথা উল্লেখ করব। এক. বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট, ও দুই. অগ্নিদাহ্য পদার্থের উপস্থিতি। দেখুন, আমি বাংলাদেশের যে চারটি ট্র্যাজেডির কথা উল্লেখ করেছি, তার সবগুলিই কিন্তু এই দুইটি কারণে সৃষ্ট। তবে এটা প্রতিরোধ করা সম্ভব কেবল তিনটা কাজ করতে পারলে। প্রথমত, সংশ্লিষ্ট দাহ্য পদার্থের বিষয়ে আমাদের পর্যাপ্ত জ্ঞান আহরণ এবং ঝুঁকি নির্ণয় করা, আমরা যেটাকে "Material Safety Data Sheet" বা সংক্ষেপে "MSDS" বলি। দ্বিতীয়ত, মালিক পক্ষকে লোভ পরিহার করে আন্তরিকতার সাথে সবার নিরাপত্তা নিয়ে ভাবা (MSDS মেনে দাহ্য পদার্থ সংরক্ষণ করা ও বিল্ডিং কোড মেনে বাড়ি বানানো), এবং তৃতীয়ত, যেসব সরকারী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা/কর্মচারীরা এসব বিষয় তদারকির কাজে নিয়োজিত তাদের সততার সাথে কাজ করা এবং ব্যবহারিক জ্ঞানে প্রশিক্ষিত করা।

আমি জানি এটা এক দিনে গড়ে উঠবে না। কিন্তু কোথাও না কোথাও থেকে শুরু তো করতে হবে। না হলে আমরা যে আমাদের পরবর্তী বংশধরদেরকে বাংলাদেশ নামক একটা জীবন্ত আগ্নেয়গিরি উপহার দিয়ে যাবো, যার লাভায় পুড়বে আপনার বা আমার মতোই কারও না কারও সন্তান!