আন্তর্জাতিক মানের কনফারেন্স: অপরিহার্য ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি

মোহাম্মদ আব্দুল বাছিত
Published : 24 March 2019, 01:48 PM
Updated : 24 March 2019, 01:48 PM

২০০৯ সালের ২০ থেকে ২৪ জুলাই জার্মানির বার্লিন শহরে অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২০তম International Colloquium on Magnetic Films and Surfaces (ICMFS)। সারা পৃথিবীতে যে সব বিজ্ঞানী, অধ্যাপক ও গবেষক ম্যাগনেটিজম (চুম্বকত্ব) বিষয়ে, বিশেষ করে মাইক্রো এবং ন্যানো ম্যাগনেটিজমে গবেষণা করেন তাদের কাছে প্রতি দুই বছর অন্তর অনুষ্ঠিত এই কনফারেন্সটি খুবই আরাধ্য। সংশ্লিষ্ট বিষয়ের রথী-মহারথী বিজ্ঞানীদের সাথে ২০তম কলোকুইয়ামে উপস্থিত ছিলেন ফরাসি বিজ্ঞানী আলবার্ট ফার্ট এবং জার্মান বিজ্ঞানী পিটার গুয়েনবার্গ ।

উল্লেখ্য যে, জায়ান্ট ম্যাগনোটোরেজিস্ট্যান্স বিষয়ক গবেষণার জন্য ২০০৭ সালে আলবার্ট ফার্ট এবং পিটার গুয়েনবার্গ পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন। আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে যে, ১৯৮৮ সালে ফ্রান্সের লে ক্রুসোটে অনুষ্ঠিত ১২তম ICMFS এ এই দুই বিজ্ঞানী  জায়ান্ট ম্যাগনোটোরেজিস্ট্যান্সের উপর তাদের গবেষণার ফলাফল উপস্থাপন করে ম্যাগনেটিজম সম্প্রদায়ের বিজ্ঞানীদের মধ্যে উল্ল্যেখযোগ্য পরিমাণ আগ্রহ সৃষ্টি করেছিলেন। উপস্থাপিত গবেষণার জন্য মাত্র (!) উনিশ বছর পর নোবেল পুরস্কারে ভূষিত হয়ে ২০তম ICMFS এ  তাদের উপস্থিতি ভিন্ন এক মাত্রা যোগ করেছিল। উল্লেখ্য যে, ২০তম ICMFS অনুষ্ঠিত হয়েছিল ফ্রি ইউনিভার্সিটি অব বার্লিনের অত্যাধুনিক কনফারেন্স হল রুমে। গ্লাসগো থেকে আমি আমার গ্রুপ মেম্বারদের সাথে ওই সম্মেলনে যোগ দিয়েছিলাম।

বেশিরভাগ আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান সম্মেলনে একসাথে অনেকগুলি সেশন চলে, তবে ICMFS এ  কোনও প্যারালাল সেশন ছিল না।  একটি আধুনিক হল রুমে সকল অংশগ্রহণকারী  উপস্থিত থাকতেন এবং গবেষকদের প্রবন্ধ উপস্থাপন উপভোগ করতেন। প্রত্যেক সেশনে একজন অভিজ্ঞ প্লেনারি স্পিকার থাকতেন, তিনি প্রবন্ধ উপস্থাপনের জন্য সময় পেতেন চল্লিশ মিনিট। তার প্রবন্ধ উপস্থাপনের পর বিশ মিনিটের চমৎকার একটি প্রশ্নোত্তর পর্ব থাকতো। প্রশ্নকর্তার প্রশ্ন করার ধরন, উত্তরদাতার উত্তর দেবার ধরন, সেশন চেয়ারের ভূমিকা দেখে আমি মুগ্ধ হয়েছিলাম। প্লেনারি  টকের পর গবেষকরা একের পর এক গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপন করতেন । প্রবন্ধ উপস্থাপনের জন্য তারা সময় পেতেন ত্রিশ মিনিট, শেষের পাঁচ মিনিট থাকতো প্রশ্নোত্তর পর্ব। প্রতিদিন দুপুর বারোটা থেকে দুইটা পর্যন্ত পোস্টডক্টরাল ফেলো, পিএইচডি এবং মাস্টার্স লেভেলের ছাত্ররা নির্ধারিত দেয়ালে পোস্টার ঝুলিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতেন।  সবাই ঘুরে ঘুরে পোস্টার প্রেজেন্টেশন  উপভোগ করতেন এবং ফাঁকে ফাঁকে লাঞ্চ করে ফেলতেন। এইরকম তিনটি দিন সকাল থেকে সন্ধ্যা আমরা সবাই মন্ত্রমুগ্ধের মতো এই রকম একটি বৈজ্ঞানিক সম্মেলন উপভোগ করেছিলাম।

২০০৭ সালে যুক্তরাজ্যে যাবার পূর্বে আমি বাংলাদেশে বেশ কয়েকটি জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান সম্মেলনে অংশ নিয়েছিলাম। আমাদের সম্মেলন শুরু হতো একটি অপ্রয়োজনীয় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মাধ্যমে। অত্যন্ত দুঃখের সাথে বলতে হচ্ছে অনেক ক্ষেত্রেই মনে হয়েছে এই আনুষ্ঠানিকতার সাথে ব্যক্তিস্বার্থ জড়িত রয়েছে, যা খুবই অনাকাঙ্খিত। পৃথিবীর কোন দেশে ভালো কোনও কনফারেন্সে এই রকম উদ্ভট কোনও উদ্বোধনী অনুষ্ঠান থাকে না। স্বভাবতই ICMFS এ কোনও উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ছিল না। সমস্ত আয়োজন দেখে আমি এতোটাই মুগ্ধ হয়েছিলাম যে, মনে মনে ঠিক করে রেখেছিলাম যদি কখনো সুযোগ পাই তাহলে বাংলাদেশে একদিন এই ধরনের একটি কনফারেন্স করবো।

২০১৭ সালের মে মাসে উচ্চশিক্ষা মানোন্নয়ন প্রকল্প (হেকেপ) এর আওতায় একটি উপ-প্রকল্প থেকে কিছু গ্রান্ট পাই। ওই উপ-প্রকল্পের আওতায় ২০১৮ সালের ১১-১২ জানুয়ারি আমরা বুয়েটে আয়োজন করি  International Conference on Nanotechnology and Condensed Matter Physics (ICNCMP 2018)। সারা দেশ থেকে Nanotechnology এবং Condensed Matter Physics এ  আমাদের শ্রেষ্ঠ গবেষকদের খুঁজে বের করি এবং ওই কনফারেন্সে আমন্ত্রিত বক্তা (ইনভাইটেড স্পিকার) হিসেবে প্রবন্ধ উপস্থাপনের জন্য অনুরোধ করি। পাশাপাশি বিদেশে এই ফিল্ডে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত যে সব গবেষক রয়েছেন তাদের মধ্য থেকে চারজনকে আমন্ত্রণ করি। এভাবে দেশ থেকে চৌদ্দজন এবং বিদেশ থেকে দুইজন গবেষক আমন্ত্রিত বক্তা হিসেবে আমাদের আমন্ত্রণে সাড়া দেন এবং কনফারেন্সে যোগ দেন।  দেশের বাইরে থেকে আসা বাকি দুই জন প্লেনারি বক্তা হিসেবে  প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।

১১ জানুয়ারি, ২০১৮ সালে এক মিষ্টি শীতের সকালে কনফারেন্স চেয়ারের কয়েক মিনিটের একটি বক্তৃতার মাধ্যমে আমরা শুরু করি ICNCMP 2018। আমাদের কনফারেন্সে ছিল না কোনও উদ্বোধনী অনুষ্ঠান, ছিলেন না কোনও প্রধান কিংবা বিশেষ অতিথি। ঠিক নয়টা পাঁচ মিনিটেই একজন আমন্ত্রিত বক্তার প্রবন্ধ উপস্থাপনের মধ্য দিয়ে কনফারেন্সের মূল পর্ব শুরু হয়। কোনও প্যারালাল সেশন না থাকায় কনফারেন্স হল ভর্তি ছিলেন ছাত্র, শিক্ষক আর গবেষকরা। একে একে তিনটি প্রবন্ধ উপস্থাপিত হয় এ সেশনে, তারপর ছিল একটি কফি ব্রেক। পরের সেশনে ছিলেন দুইজন প্লেনারি বক্তা, দুপুরের পরের সেশনে আমন্ত্রিত বক্তারা তাদের গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। পাঁচটা থেকে শুরু হয় পোস্টার সেশন।

প্লেনারি সেশনে চেয়ার ছিলেন অধ্যাপক ড. এম মুহিবুর রহমান (ইউজিসি প্রফেসর)। এখানে বলে রাখা দরকার যে, ভাল মানের কনফারেন্সে সেশন চেয়ারের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের কিছু কিছু কনফারেন্সে লক্ষ্য করেছি যে, সেশন চেয়ারের দায়িত্ব আয়োজকরা ভাগাভাগি করে নেন, নতুবা নিজেদের একান্ত লোকদের উপর দায়িত্ব আরোপ করে দেন। এই প্রসঙ্গে একটি ঘটনার অবতারণা করতে চাই। ১৯৮৮ সালে আলবার্ট  ফার্ট জায়ান্ট ম্যাগনোটোরেজিস্ট্যান্স বিষয়ে (যে আবিষ্কারের জন্য ২০০৭ সালে নোবেল প্রাইজ পেয়েছিলেন) আমেরিকায় একটি কনফারেন্সে তার গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপন করছিলেন। নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে উপস্থাপনাটি সম্পূর্ণ করতে পারবেন কি না এই নিয়ে ফার্ট খুব চিন্তিত ছিলেন। সেশন চেয়ার ছিলেন পদার্থবিজ্ঞানী  ব্রেট হেনরিচ (ফেলো, আমেরিকান ফিজিক্যাল সোসাইটি)। ফার্ট জিজ্ঞেস করলেন, "ব্রেট , কতটুকু সময় বাকি আছে?" গবেষণার গুরুত্ব অনুধাবন করে ব্রেট বলেছিলেন, "যতক্ষণ দরকার ততক্ষণ পর্যন্ত চালিয়ে যেতে পার"। নির্দিষ্ট সময়ে সেশন শেষ করা যেমন একজন সেশন চেয়ারের দায়িত্ব, ঠিক তেমনি যুগান্তকারী আবিষ্কারের গুরুত্ব অনুধাবন করে যথাযথ প্রতিক্রিয়া দেখানোও তার নিকট প্রত্যাশিত।

ICNCMP 2018 এর দ্বিতীয় দিনের প্রোগ্রাম শুরু হয় সকাল ৯টায় আরেকজন আমন্ত্রিত বক্তার প্রবন্ধ উপস্থাপনের মধ্য দিয়ে । পাঠকের উদ্দেশ্যে জানাতে চাই যে, ওই কনফারেন্সের জন্য মাস্টার্স এবং পিএইচডি লেভেলের ছাত্র এবং অপেক্ষাকৃত নবীন গবেষকদের কাছে অ্যাবসট্র্যাক্ট সাবমিশনের জন্য চিঠি পাঠানো হয়। আমরা প্রায় দেড়শ অ্যাবসট্র্যাক্ট পাই, এদের মধ্য থেকে পনেরজন গবেষককে একটি সেশনে প্রবন্ধ উপস্থাপনের সুযোগ দেয়া হয়। প্রত্যেকের জন্য সময় বরাদ্দ ছিল পনের মিনিট। কনফারেন্সের প্রথম এবং দ্বিতীয় দিনে মোট ছিয়ানব্বইটি পোস্টার ছাত্ররা উপস্থাপন করে।

ICNCMP 2018 এর লক্ষণীয় বিষয়গুলি হচ্ছে-

(১) কোনও উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ছিল না। কোনও প্যারালাল সেশন ছিল না। (বড় আকারের কনফারেন্স হলে প্যারালাল সেশন থাকতে পারে, তবে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে কখনোই প্যারালাল সেশন  দুইটির বেশি প্রত্যাশিত না। )

(২) বাংলাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে গত কয়েক বছর ধরে যারা ভালো গবেষণা করেছেন শুধু তাদেরকেই আমন্ত্রিত বক্তা হিসেবে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। তাদের বয়স কিংবা অন্য কোনও পরিচয়কে বিবেচনায় নেয়া হয় নাই। বেশিরভাগই দেশের গবেষক হওয়ায় দেশের বিভিন্ন গবেষণা ল্যাবে কোনও গবেষক কোনও ধরনের গবেষণা কর্মের নেতৃত্ব দিচ্ছেন তা সবাই বিশেষ করে ছাত্ররা জানতে পেরেছেন। ফলে ভবিষ্যতে বিভিন্ন রকমের কোলাবোরেশনে কাজ করার জন্য একটি সেতুবন্ধন তৈরি হয়েছে।

(৩) এই কনফারেন্সে ফিজিক্স, কেমিস্ট্রি, ম্যাথস, ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, ম্যাটেরিয়ালস সায়েন্সের গবেষকরা অংশ নিয়েছেন। তবে কোনও প্রবন্ধই কনফারেন্সের থিমের সাথে অপ্রাসঙ্গিক ছিল না বিধায় প্রতিটি প্রবন্ধ উপস্থাপনের সময় হল ভর্তি দর্শক ছিলেন এবং তারা উপভোগ করেছেন বলেই আমাদের কাছে মনে হয়েছে।

(৪) প্রত্যেক আমন্ত্রিত বক্তাকে ত্রিশ মিনিট সময় দেয়া হয়েছিল। তারা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই তাদের প্রবন্ধ উপস্থাপন শেষ করেছেন। সেশন চেয়ারগণ সময়ের ব্যাপারে খুবই সচেতন ছিলেন। প্রতিটি সেশন একদম সময়মত শুরু হয়েছে, আবার সময়মত শেষ হয়েছে (প্রথম দিন শেষ হতে পাঁচ মিনিট দেরি হয়েছিল) ।

(৫) পনেরজন নবীন গবেষকের ওরাল প্রেজেন্টেশন খুব উঁচু মানের ছিল। প্রায় সবাই ঠিক পনের মিনিটেই তাদের প্রবন্ধ উপস্থাপন শেষ করেছেন। দুইদিন বিকেলেই ছাত্রদের পোস্টার সেশন ছিল। এই পোস্টার সেশন খুবই উপভোগ্য ছিল। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছয়জন অধ্যাপক বিচারকের দায়িত্বে ছিলেন। তারা আলাদা আলাদাভাবে নম্বর দিয়েছেন। প্রত্যেকের নম্বর গড় করে একটি বেস্ট ওরাল প্রেজেন্টেশন অ্যাওয়ার্ড এবং চারটি বেস্ট পোস্টার প্রেজেন্টেশন অ্যাওয়ার্ড দেয়া হয়। গবেষণার মান, গবেষণা ফলাফল, উপস্থাপনা ইত্যাদি মার্কিং এর সময় বিবেচনা করা হয়। উল্লেখ্য যে, 'কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্ট' এড়ানোর জন্য আয়োজক বিভাগ থেকে কোনও বিচারক ছিলেন না। ১২ জানুয়ারি রাতে ছোট একটি সমাপনী অনুষ্ঠানে বেস্ট ওরাল এবং বেস্ট পোস্টার প্রেজেন্টেশন অ্যাওয়ার্ড দেয়া হয়।

(৬) কনফারেন্সে উপস্থাপিত পেপারগুলির শুধু অ্যাবস্ট্র্যাক্ট পাবলিশ করা হয়েছে। পোস্টার উপস্থাপনের সময় ছাত্ররা অনেক গঠনমূলক সমালোচনা, পরামর্শ ও অনুপ্রেরণা পেয়েছিল। উপস্থাপিত গবেষণা পরবর্তীতে জার্নালে পাবলিশ  করার জন্য সহায়ক হয়েছিল।

ICNCMP 2018 কনফারেন্স কতটুকু সফল হয়েছে তা আমার পক্ষে বলা সম্ভব না, একজন আয়োজক হিসেবে সফলতা মূল্যায়ন করা উচিতও না। তবে একটি কথা বলতে চাই, বিভিন্ন সময় উক্ত কনফারেন্সে অংশগ্রহণকারী অনেকের সাথে দেখা হয়েছে, তারা অনেকেই বলেছেন এই কনফারেন্সটি বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত খুব ভালো মানের একটি কনফারেন্স ছিল।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সালেহ হাসান নকিবের কমেন্ট ছিল, "আশা করি ভবিষ্যতে ICNCMP 2018 এর মত আরো কনফারেন্স হবে… একটি বেঞ্চমার্ক সেট করা হয়েছে।" ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কামরুল হাসানের মন্তব্য ছিল, "এরকম কনফারেন্স দেশে নিয়মিত সংঘটিত হওয়া উচিত যাতে আমরা একে অপরকে জানতে পারি। I can't thank you enough for setting the bar high."

কনফারেন্স জাতীয় কিংবা আন্তর্জাতিক যাই হোক না কেন মান হতে হবে অবশ্যই আন্তর্জাতিক। ICNCMP 2018 এর একজন আয়োজক হিসেবে বলতে চাই, বিজ্ঞান কিংবা প্রকৌশল বিষয়ে বছরে একটি আন্তর্জাতিক মানের কনফারেন্স করার মতো সামর্থ্য এবং গবেষণা- দুটোই আমাদের রয়েছে।

অনেকের ধারণা বিদেশি গবেষক থাকলেই কনফারেন্সের মান ভালো হয়, যা একদম ভুল কথা। আরও একটি বিষয় উল্লেখ করা প্রয়োজন। কিছু কিছু কনফারেন্স থেকে কনফারেন্স প্রসিডিংস প্রকাশ করা হয়। পিয়ার-রিভিউড না হলে এইসব কনফারেন্স পেপার অর্থহীন। ছাত্রদের উদ্দেশ্যে বলছি, কনফারেন্সে নিজের গবেষণাকর্মকে অভিজ্ঞ গবেষকদের সামনে উপস্থাপন করে তাদের মতামত ও মূল্যায়নের বিশেষ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে পিয়ার-রিভিউড জার্নালে পেপার পাবলিশ করাই বেশি অর্থবহ। দশটি সারবত্তাহীন পেপার অখ্যাত জার্নালে পাবলিশ করার চেয়ে পিয়ার-রিভিউড এবং স্বীকৃত (ইন্ডেক্সড) জার্নালে একটি পেপার পাবলিশ করা যে কোন বিচারে শ্রেয়তর।

একটি ভালো কনফারেন্সের উদ্দেশ্য হল- (ক) অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে তথ্য, জ্ঞান, দক্ষতা এবং ধারণা বিনিময়। (খ) নবীন এবং অভিজ্ঞ শিক্ষাবিদ, বিজ্ঞানীদের মধ্যে সম্পর্ক শক্তিশালী করা এবং কোলাবোরেশন স্থাপন (গ) স্থানীয় শিল্প উদ্যোক্তাদের সাথে সম্পর্ক স্থাপন।

এই সমস্ত লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য পূর্ণ হলেই একটি কনফারেন্সকে সত্যিকার অর্থে সফল বলা যাবে। কতজন বিদেশি গবেষক কনফারেন্সে আসলেন কিংবা কত ক্ষমতাধর ব্যক্তি কনফারেন্স উদ্বোধন করলেন তা কোনওভাবেই সফলতার মাপকাঠি হতে পারে না।