শতবর্ষে সওগাত: সাহিত্য ও নারী জাগরণের পথিকৃৎ মোহাম্মদ নাসিরউদ্দিন 

দিল মনোয়ারা মনু
Published : 27 Feb 2019, 11:41 AM
Updated : 27 Feb 2019, 11:41 AM

সওগাত সম্পাদক মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন একজন কালোত্তীর্ণ যুগস্রষ্ঠা মানুষ। কিংবদন্তী সম এই মানুষটিকে স্মরণ করতে গেলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে পুরনো ঢাকার পাটুয়াটুলীর সওগাত অফিসের নিজ কার্যালয়ে বসে তাঁর চোখ বুজে ঠোটে জয়ের হাসি নিয়ে স্মৃতি চারণের সেই দুর্লভ মূহুর্তগুলো।

শুভ্র সমুজ্জল একজন সফল মানুষের প্রতিকৃতি যেন। কাজের ফাঁকে ফাঁকে দীর্ঘ ২৫ বছরে অসংখ্য বার তার মুখোমুখি হয়েছি। তার স্মৃতি চারণের মধ্য দিয়ে জীবন্ত হয়ে ওঠা আত্মমগ্ন সব সংলাপ এখনও কানে বাজে আমার। উন্মোচিত হয় এক সংস্কৃতির বৃহত্তর ইতিহাস ও সত্যের জগত। সওগাতই প্রথম বাঙালী মুসলমান সমাজে প্রগতিশীলতার দ্বার উন্মোচন করেছে। নারী স্বাধীনতা নিশ্চিতে যেমন ভূমিকা রেখেছে তেমনি নারী পুরুষ নির্বিশেষে শিক্ষা, সাহিত্য, সংস্কৃতির উদার আবহ সৃষ্টিতে বিরাট ভূমিকা রেখে ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেছে।

শতবর্ষ আগে জন্ম নেয়া সময় অতিক্রমকারী এই আধুনিক বুদ্ধিদীপ্ত মানুষটি সেই পাথরচাপা জগদ্দল অন্ধকার যুগে সওগাতের মতো আধুনিক মুক্তচিন্তার পত্রিকাই শুধু বের করেননি, সেখানে নারী লেখকদের লেখা প্রকাশ এবং পরবর্তী সময়ে মহিলা সংখ্যা সওগাত এবং তারই ধারাবাহিকতায় সাপ্তাহিক 'বেগম' পত্রিকা বের যে সাহসী অনুকরণীয় বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন তা আজ ইতিহাসের অংশ হয়ে আছে। এদেশের নারী জাগরণ ও সমাজ বির্নিমানে এর ভূমিকা সর্বজন স্বীকৃত। একমাত্র সন্তান নূরজাহান বেগমের সুযোগ্য সম্পাদনায় দীর্ঘ ষাট বছর ধরে প্রকাশিত হচ্ছে বেগম পত্রিকা, ধরে রেখেছে তার ঐতিহ্য।

ভাবতেই অবাক লাগে, কল্পনা করলেও বিস্মিত হতে হয় অশিক্ষা, অজ্ঞতার অন্ধকারে ডুবে থাকা চাঁদপুরের পাইকারদী গ্রামে ১৮৮৮ সালের নভেম্বর মাসে জন্ম নেয়া এই মানুষটি তার আনুষ্ঠানিক স্বল্প শিক্ষা, নিজ উদ্যোগে আহরিত মুক্ত জ্ঞান, সামান্য অর্থ এবং অসম্ভব সাহসকে পুঁজি করে এই অসাধ্য সাধন কিভাবে করেছিলেন। পরাধীন এক ঘুনেধরা সমাজে সওগাতের মতো পত্রিকা প্রকাশই শুধু নয় তাকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা এক শক্তিশালী সাহিত্যিক সমাজ ও সাংস্কৃতিক আন্দোলন সেই সময়ে সমাজ বির্বতনে অসাধারণ ভূমিকা রেখেছিলো। কিন্তু দু:খের বিষয়, আমরা আজকের দিনে তাকে সেভাবে স্মরণ করি না। অনেকটা নীরবে নিভৃতেই চলে যায় তার জন্ম ও মৃত্যু দিন। জাতি হিসেবে এটা কি আমাদের জন্য লজ্জার নয়? তাঁর অবদানকে খাটো করে দেখার কি কোনও অবকাশ আছে? এ বছর নিরবেই চলে গেলো তার শতবর্ষ কেউ সেভাবে পত্রিকাটির এই মহিমাময় অবদানকে স্মরণ করলোনা।

সওগাত শুরুর উদ্দেশ্যই ছিল শিক্ষা প্রগতির আলোয় আলোকিত একটি সমাজ গড়া এবং সেই লক্ষ্যেই সাহিত্য সৃষ্টিতে নবচেতনা ও বিপ্লব ঘটাতে এক লড়াকু সৈনিকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন তিনি। সওগাত যুগের অবসান ঘটেছে কিন্তু তার প্রভাব এখনও সর্বত্র বিরাজমান। এই প্রগতিবাদী পত্রিকার সাহিত্য রুচির আলোকে এখনও তরুণরা পত্রিকা বের করছে এটা অত্যন্ত আনন্দ ও আশার কথা।

কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সহ বিশিষ্ট কবি সাহিত্যিকরা (যাদের অধিকাংশই হিন্দু সম্প্রদায়ভুক্ত ছিলেন) তাঁকে আন্তরিকভাবে সমর্থন দিয়েছিলেন। সমাজ অবাক হয়ে দেখলো প্রথম সংখ্যা সওগাতে মোট সাতাশটি লেখার মধ্যে বাইশটিই ছিল মুসলমান লেখকদের মুক্ত ও স্বাধীন চিন্তার প্রকাশ। এদের মধ্যে যাদের নাম উল্লেখ করা যায়, তারা হলেন- কবি মোজাম্মেল হক, কায়কোবাদ, সৈয়দ এমদাদ আলী, সৈয়দ ইসমাইল হোসেন সিরাজী, আব্দুল করিম সাহিত্য বিশারদ প্রমুখ। নারী লেখকদের মধ্যে ছিলেন- রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন. আশরাফুন্নেসা ও সৈয়দা মোতাহেরা বানু, নুরুন্নেসা খাতুন, মাহমুদা খাতুন সিদ্দিকা প্রমুখ। অমুসলমান লেখকদের মধ্যে যাদের নাম উল্লেখ না করলেই নয়, তারা হচ্ছেন- বিশ্ব কবি রবীন্দনাথ ঠাকুর, ব্রজেন্দ্রনাথ ঠাকুর, ভূজঙ্গধর রায় চৌধুরী, জীবেন্দ্র কুমার দত্ত প্রমুখ।

সওগাতের প্রথম পর্যায়ের লেখকদের মধ্যে যাদের নাম করতে হয় তারা হচ্ছেন 'বাউন্ডেলের আত্মকাহিনী'র লেখক আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম, আবুল কালাম শামসুদ্দীন, ড. কাজী মোতাহার হোসেন, মোহাম্মদ বরকত উল্লাহ, আব্দুল হাকিম বিক্রমপুরী, ফজলুল রহীম চৌধুরী সহ অনেকে। বলা বাহুল্য এইসব কবি, সাহিত্যিক, লেখকরা প্রায় সকলেই সেই সময়ই বিশ্বখ্যাত এবং অনেকে পরবর্তী সময় দেশজোড়া খ্যাতি ও যশের অধিকারী হয়েছেন।

কবি কাজী নজরুল ইসলাম প্রথম থেকে নিয়মিত লিখে এবং পরবর্তী সময়ে পত্রিকার সাথে সংযুক্ত হয়ে এর প্রচার ও প্রসারে বিশেষ ভূমিকা রাখেন। আমি সওগাত সম্পাদকের কাছে জেনেছি কবি নজরুলের 'চানাচুর' বিভাগটি রাতারাতি সওগাতের কাটতি অনেক বাড়িয়ে দিয়েছিল। সম্পাদক নাসিরউদ্দিন বলতেন- আমার অযোগ্যতা এবং অভিজ্ঞতার অভাব সম্পর্কে আমি সচেতন ছিলাম। তাই সুযোগ্যদের সহযোগিতা, প্রবল ইচ্ছা এবং সাহসকে পুঁজি করেই এই কষ্টসাধ্য কাজ সফল করে তোলার জন্য এগিয়ে চলেছি সব সময়। সওগাত পরিচালনার দীর্ঘ জীবনে তিনি সওগাতের জন্য যে কয়েকটি নীতিমালাকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছিলেন তার মধ্যে বিশেষভাবে প্রণিধান যোগ্য হলো- লেখকদের স্বাধীন মত প্রকাশের সুযোগ দেয়া, অজ্ঞতা ও কুসংস্কারের বিরুদ্ধে আন্দোলন পরিচালনা করা, সচিত্র প্রবন্ধ ও মুসলমান জগতের তরুণ লেখকদের লেখা প্রকাশ করা সর্বোপরি জাগরণমূলক সচিত্র প্রবন্ধ ও চিত্রে মহিলা জগত প্রকাশ করে নারীদের সাহিত্য চর্চায় উৎসাহিত করা নির্ভীক নিরপেক্ষ সম্পদকীয় নীতি গ্রহণ করেও তিনি তখন প্রশংসিত হয়েছিলেন।

সওগাতের আগে বাংলার মুসলমান সমাজের কোন পত্রিকায় মানুষের ছবি বা কার্টুন প্রকাশিত হতোনা। নারীদের ছবি ছাপানো তো কল্পনার বাইরেই ছিল। প্রথম সংখ্যা সওগাতে সমস্ত বাধা উপেক্ষা করে পুরুষ ও নারীর ছবি ছাপা হলে গোড়া মোল্লা শ্রেণীর লোকেরা সওগাতের বিরুদ্ধে নানা প্রচারণা ও প্রতিরোধ শুরু করে। যদিও ওই সময়ে চিন্তাশীল সাহিত্যিক সমাজ এবং তরুণরা লেখা ও সাহস দিয়ে তাকে ব্যাপকভাবে অভিনন্দন ও সমর্থন জানিয়েছিলেন। এ যেন এক নতুন সম্ভবনা, নতুন জাগরণের জোয়ার। কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রথম সংখ্যা প্রকাশের পর তাঁকে আর্শীবাদ জানিয়ে একখানি চিঠি এবং সওগাতে প্রকাশের জন্য 'পথের দাবী' শিরোনামের একটি কবিতা পাঠিয়ে মোহাম্মদ নাসির উদ্দিনকে উৎসাহিত করেছিলেন।

রোকেয়া সাখওয়াত হোসেনকে তিনি চিঠি লিখে তার লেখা চেয়ে বলেছিলেন 'আমি নারীদের অগ্রগামী' দেখতে চাই। প্রথম সংখ্যার জন্য 'সওগাত' নামে একটি কবিতা ও 'সিসেম ফাঁক' নামে একটি প্রবন্ধ বেগম রোকেয়া লিখে পাঠান। মাইকেল মধুসূদন দত্তের ভাইয়ের মেয়ে মানকুমারী বসুও 'সুপ্রভাত' নামে একটি কবিতা পাঠান সওগাতের জন্য। এই দুটি কবিতা ও প্রবন্ধ সওগাতের প্রথম সংখ্যায় প্রকাশিত হয়। ১৯৩৬ সালে প্রথম মহিলা সংখ্যা সওগাত (নারীদের ছবি সহ) প্রকাশিত হলে রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন তাকে আন্তরিক অভিনন্দন জানান এবং পরবর্তী সময়ে সহযোগিতা প্রদানের আশ্বাস দেন। এভাবেই দিনে দিনে সেই সমাজের বেড়ে ওঠে সৃজনশীল নারীর সংখ্যা। আলেকিত নারী সমাজের জন্য তার সর্বশেষ প্রচেষ্টা ছিল সচিত্র সাপ্তাহিক 'বেগম'। ১৯৪৭ সালে যার প্রথম প্রকাশ। এই পত্রিকার প্রথম সম্পাদক ছিলেন কবি সুফিয়া কামাল। চৈত্র সংখ্যায় তার 'বাসন্তী' শিরোনামে একটি কবিতা প্রকাশিত হয়। জানা গেছে এটিই তার পত্রিকায় প্রকাশিত প্রথম কবিতা। সওগাতকে কেন্দ্র করে তার লেখালেখির চর্চা তখন থেকেই নিয়মিত চলতে থাকে। কবিতার পাশাপাশি গল্পও লেখেন সুফিয়া কামাল। সওগাতে ছাপার জন্য সেই সময় সওগাত সম্পাদকের সাথে স্টুডিওতে গিয়ে পুরুষ ফটোগ্রাফারের হাতে নিজের ছবি তোলেন। সেই ছবি সওগাতে প্রকাশ হওয়ার পর ভীষণভাবে আলোচিত হয়েছিলেন তিনি। শুধু সওগাতেই নয়, বেগম পত্রিকার বিশেষ সংখ্যায়ও তার লেখা কবিতা প্রথম থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত নিয়মিত প্রথম পাতায় প্রকাশিত হয়েছে।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সুফিয়া কামালের কবিতা ও গল্পের প্রশংসা করে এবং সাথে কয়েক লাইন কবিতা লিখে তার 'গোরা' উপন্যাস কবিকে উপহার দিয়েছিলেন। কবি কাজী নজরুল ইসলামও শুরু থেকে সুফিয়া কামালকে সওগাতে লেখার জন্য উৎসাহ ও সহযোগিতা করেছেন। দেশ ভাগের পর ঢাকায় এসে বেগম পত্রিকার উদ্যোগে ১৯৫৪ সালের ১৫ ডিসেম্বর 'বেগম' ক্লাব প্রতিষ্ঠা হলে তার নেতৃত্ব দেন কবি সুফিয়া কামাল। সাথে ছিলেন বেগম শামসুন নাহার মাহমুদ ও তখনকার বেগম সম্পাদিকা নূরজাহান বেগম। এই বেগম পত্রিকা ও বেগম ক্লাবকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে এদেশের প্রগতিশীল সাহিত্য চর্চা ও নারী অধিকার ও জাগরণের আন্দোলন। শুধু এদেশের নারীরাই নন, বিদেশের বিশিষ্ট নারী নেত্রীরা আর্ন্তজাতিক লেখক সংগঠনের মহিলা প্রতিনিধিও এই ক্লাবের অনুষ্ঠানে বিভিন্ন সময়ে যোগ দিয়েছিলেন। এদের মধ্যে তৎকালীন গণচীনের প্রধানমন্ত্রী চৌ এন লাই এবং মিসেস চৌ এন লাই, সেলিমা আহমেদ, রানা লিয়াকত আলী খান, গণচীনের মহিলা প্রতিনিধি দল, শান্তিনিকেতনের সাংস্কৃতিক প্রতিনিধিদল, ইন্দোনেশিয়ার মহিলা প্রতিনিধির দলের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

প্রখ্যাত মহিলা সাংবাদিক, সাহিত্যিক মিসেস আলদা আহসেথ এ সময় বেগম ক্লাব ও বেগম পত্রিকার কার্যালয় পরিদর্শন করতে এসে বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রে মহিলাদের মাসিক পত্রিকা আছে কিন্তু এখনও কোনও সাপ্তাহিক নেই। সওগাত সে সময়ে অনন্য সাধারণ দুটো সম্বর্ধনার আয়োজন করে নন্দিত হয়েছিলেন যার উল্লেখ না করলে এ লেখা অসম্পূর্ণ থেকে যাবে তা হচ্ছে বাংলা ১৩৩৬ সনে কবি কাজী নজরুল ইসলামকে এলবার্ট হলে দেয়া বিশাল সুধীজন সম্বর্ধনা, অপরটি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অংক শাস্ত্রে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হওয়া প্রথম মুসলমান নারী ফজিলাতুন নেসাকে সওগাত কার্যালয়ে বিদগ্ধ সমাজের দেয়া এক আনন্দঘন সম্বর্ধনা। প্রবল বাধা ও প্রতিরোধের মুখে দেয়া এ দুটো সম্বর্ধনা সেই সময়ে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিলো।

প্রগতিবাদী অসাম্প্রদায়িক এই মানুষটি শুধু সম্বর্ধনাই নয় তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী নবাব মোশাররফ হোসেনকে ধরে উচ্চশিক্ষার জন্য তার বিলেত যাবার ব্যবস্থাও করেন। সওগাত সম্পাদকের কাছ থেকে জেনেছিলাম এই সম্বর্ধনা ও বিদেশ যাবার ব্যবস্থা করার জন্য বহুদিন তিনি প্রাণভয়ে একা সওগাত কার্যালয়ের বাইরে বের হননি।

নজরুলের সম্বর্ধনা সম্পর্কে তিনি বলেন ফুলে সাজানো গাড়ীতে চড়ে কাজী নজরুল ইসলাম সম্বর্ধনা সভায় এসেছিলেন। সোনার দোয়াত কলম ও মানপত্র তাকে দেয়া হয়েছিল। মোহাম্মদ ওয়াজেদ আলীর নেতৃত্বে একদল সাহিত্যিক এই মানপত্র রচনা করেছিলেন এবং সওগাত প্রেসেই তা ছাপা হয়। একটি শক্তিশালী প্লাটফর্ম তৈরি করে সাহিত্য চর্চার মধ্য দিয়ে প্রগতির পথে হাঁটার ব্যবস্থাই তিনি শুধু করেননি, তিনি বিদ্রোহী কবির অসুস্থতায় চিকিৎসার ব্যবস্থা, পারিবারিক অর্থ সংকটের সময় পাশে দাঁড়ানোর উদ্যোগ, চার বছরের শিশুপুত্র বুলবুলের মৃত্যু সময়ে এবং অসুস্থ কবি পত্নী-প্রমীলা নজরুলের অসুস্থতার সময়ে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন এই মোহাম্মদ নাসিরউদ্দিনই। আজকের সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক জগতের বহু পুরোধা ও স্বনামখ্যাত ব্যক্তিরই সওগাত পত্রিকার মধ্য দিয়ে আত্মপ্রকাশ ঘটেছে, এ কথা সত্য। তাদের আমরা মনে রেখেছি, সঠিক মূল্যায়ন, শ্রদ্ধা ও সম্মান জানাতে নানা উদ্যোগও গ্রহণ করে থাকি। কিন্তু নেপথ্যের সেই ত্যাগী মহান মানুষটিকে জন্ম দিনে স্মরণ করিনা, মর্যাদা দিইনা, শিক্ষা নিতে ভুলে যাই প্রগতির পথে হাটার জন্য নিরন্তর লড়াই করা আপসহীন সেই মানুষটির কাছ থেকে। অনুধাবন করিনা সওগাত সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক পত্রিকা হিসেবে কালের দাবী পূরণে ইতিহাসের গতি নিরুপক হিসেবে এক মহান দায়িত্ব পালন করেছে। এই সত্য অনুধাবন করে বক্তব্য রেখেছেন বই মেলায় লিটল ম্যাগাজিন চত্বরে সওগাত পত্রিকার শতবর্ষ শীর্ষক আলোচনায় সভাপতির বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপ উপাচার্য মুহম্মদ সামাদ এ কথা বলেন। ব্যাপক গবেষণার মধ্য দিয়ে এই অসাধারণ সাহিত্য প্রেমী, সাহিত্যের অগ্রগামী পৃষ্ঠপোষক, উদার সমাজের স্বপ্নদ্রষ্টার সেই মহাযজ্ঞের অন্তর্নিহিত পরম সত্যটি সকলকে জানানোর ও অনুধাবন করার ব্যাপক কর্ম উদ্যোগ রাষ্ট্রীয় ও সামাজিকভাবে অনুপস্থিত। আজকের সাহিত্যিক, কবি, গবেষক ও সুধী সমাজকে এই বিষয়ে তাদের করণীয় নিয়ে অবশ্যই ভেবে দেখতে হবে।