ধর্ষণের বিরুদ্ধে পুরুষের বোধোদয় হোক এবার

Published : 9 Feb 2019, 01:28 PM
Updated : 9 Feb 2019, 01:28 PM

ধর্ষণের ইচ্ছা কতটা অদম্য? কতটা প্রবল, নিয়ন্ত্রণহীন? ধর্ষণের উত্তেজনা কতটা তৃপ্তিদায়ক? কী সেই প্রাপ্তি, কতটা আকাঙ্ক্ষিত সেই শারীরিক আনন্দ যা একা বা দলবেঁধে উপভোগ করার মতো ঘটনায় পরিণত হয়? এমনকি কাউকে কাউকে  নিজের সন্তানকেও ধর্ষণ করতে ধাবিত করে?

না, আমি শুধু একজন সাবেক সেনা কর্মকর্তার নিজের দশ বছরের কন্যাকে ধর্ষণের কথা বলছি না। পৃথিবীতে অসংখ্য বাবা আছেন যারা বুক দিয়ে নিজের কন্যাকে আগলে রাখেন। বাবাই তাদের পরম আশ্রয়। একজন বিকৃতমনস্ক পিতাকে দিয়ে সকল পিতাকে বিচার করা যায় না। যদিও কোনও সন্তানবৎসল পিতা অন্য কারও সন্তানের ধর্ষক হিসাবে আবির্ভূত হবে না, এ কথা হলফ করে বলা যায় না। যাহোক,  এই সেনা কর্মকর্তার মানসিক বিকৃতির ব্যাখ্যা নিশ্চয়ই মনোবিজ্ঞানীরা দিতে পারবেন।

কিন্তু এই ধর্ষণকে ঘিরে আমাদের সমাজের যে বিকৃতি, তার ব্যাখ্য কে দেবে? ইতিমধ্যে কিছু মানুষ দাঁড়িয়ে গেছে ধর্ষক পিতার পক্ষে। চরিত্রহনন করতে বসেছে শিশুটির মায়ের। যেমন তারা করতে বসে যেকোনও ধর্ষণের ঘটনার পর ধর্ষণের শিকার নারীটির। তর্কের খাতিরে যদি ধরেও নেই, শিশুটির মা চরিত্রহীন (!), তাহলেও নিজের কন্যাকে বা যেকোনও শিশুকে বা নারীকে ধর্ষণ করা যে জায়েজ হয়ে যায় না, এই সহজ কথাটা বুঝতে পুরুষ সমাজের অনেকেই অপারগ।

এইদেশে একটা দিনও বাদ যায়না যেদিন কোন ধর্ষণের ঘটনা পত্রিকার পাতায় প্রকাশ হয় না। আর অপ্রকাশিত শত ঘটনার কথা না হয় বাদই দিলাম। তবুও এর প্রতিবাদে মানুষের ঢল নামে না। বৃহত্তর আন্দোলন দানা বাঁধতে মানুষের লাভ ক্ষতির হিসাব আর আবেগের মিশেল লাগে। ধর্ষণের প্রতিবাদে এই দুটোরই অভাব আছে।  ধর্ষণ এই সমাজের কাছে কেবলই ধর্ষণের শিকার নারী আর তার পরিবারের ব্যক্তিগত বিষয়। বৃহত্তর সমাজের, বিশেষ করে, পুরুষের ধর্ষণে কোনও ক্ষতি নেই।

সমাজ (এবং প্রধানত পুরুষজাতি) নারীকে বরং সাত কাপড়ের মোড়কে ঢাকতে বেশি আগ্রহী। নারীর পোশাক নিয়ে তারা ফতোয়া জারি করে, ওয়াজ মাহফিলে মাইক ফাটায়। শত শত শ্রোতাকে ওয়াদা করিয়ে নেয় মেয়েকে স্কুলে না পাঠানোর। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নোংরা চিৎকার করে। মানব বন্ধন করে বাল্যবিয়ের দাবিতে। রাস্তাঘাটে হেনস্তা করে ন্যুনতম সুযোগে। শুধু নিজেদের বিকৃতির দিকে তাকায় না ভুলেও। একটি তিনমাসের কিংবা দশ বছরের শিশুকে (ছেলে শিশুসহ) ধর্ষিত হতে দেখেও তাদের হুঁশ ফেরে না। তাদের এতোসব দাবীর অসারতা বুঝতে তারা নিদারুণভাবে অক্ষম।

পুরুষেরা কবে নাগাদ তবে নিজেদের বিকৃতিটা বুঝতে পারবে? কবে নাগাদ জুতা আবিস্কারের গল্পের মতো পৃথিবীকে নয়, নিজের পা' কে ঢাকতে শিখবে? কবে নাগাদ পুরুষ শুধুমাত্র পুরুষ থেকে মানুষ হয়ে উঠবে? পুরুষের বোধোদয় এখন সময়ের দাবি।

ধর্ষণ বন্ধে পুরুষকেই জাগতে হবে সবার আগে। তাদের বুঝতে হবে, নারীর পোশাক বা অন্য কিছু নয়, পুরুষের অনিয়ন্ত্রিত ও বিকৃত যৌন আকাঙ্ক্ষাই ধর্ষণের সবচেয়ে বড় কারণ এবং পুরুষের সবচেয়ে বড় অসুস্থতা।

অনেক তো হলো, আর কত? এবার জাগুন পুরুষ বন্ধুরা। এতটুকু সৎ সাহস দেখান। লাগাম পড়ান নিজের বিকৃত যৌনাকাঙ্ক্ষায়। যতদিন পর্যন্ত না আপনারা নিজেরা নিজেদের বিরুদ্ধে দাঁড়াবেন, ততদিন ধর্ষণের এই মহামারী বন্ধ হবে না। যতই আইন হোক, যতই কঠোর থেকে কঠোরতর শাস্তির বিধান রাখা হোক, যতই হারকিউলিসের আবির্ভাব ঘটুক, কিচ্ছু হবে না।

আপনাদের শুভবুদ্ধির উদয় হোক।