প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়েছেন। তিনি এখন পরপর তিন বারের প্রধানমন্ত্রী। তার দায়িত্ব যেমন বেশি, তেমনি এখন সবাইকে এক করে দেশ পরিচালনাও দরকার। তার এই ডাক তাই সময়োপযোগী।
এদিকে সামাজিক মিডিয়ায় তোলপাড় করা খবর দেখলাম রুহুল কবির রিজভীর। সম্প্রতি তিনি হতাশ হয়ে চেয়ার ছুঁড়ে মেরেছেন। এই হতাশার কারণ দেশের কেউ বা দেশের কোনও ঘটনা না। এর কারণ সুদূর আমেরিকার পাগলা রাজা ট্রাম্প। তিনি শেখ হাসিনাকে বিজয়োত্তর অভিনন্দন জানানোয় রিজভি ক্ষিপ্ত হয়ে এমনটি করেছেন বলা হচ্ছে। আরো আছে। সামাজিক মিডিয়া তোলপাড় করা আরেকটা ছবি মির্জা ফখরুলের। নেতাদের বচসা থামাতে তিনি লিফটে এক নেতার শার্ট চেপে ধরেছেন। এ ঘটনাও কেমন যেন অবিশ্বাস্য। তারপরও এটাই এখন ঘটনা। দেখে শুনে মনে হচ্ছে বিএনপি'র নেতাদের শরীর মন ঠিক নাই। যা তাদের জন্য যেমন রাজনীতির জন্যও অস্বস্তির।
মিডিয়ার খবরগুলো বলে দিচ্ছে বিএনপি আসলে টালমাতাল এক জায়গায়। তাদের ভেতর এখন নানামুখি ধারা। একদল স্পষ্টতই চাচ্ছে খালেদা জিয়া ও তারেক জিয়াকে বাদ দিয়ে নতুন ভাবে এগোতে। বা সাময়িকভাবে দূরে রাখতে। আরেকদল সেটা মানছেনা। এটা তারা জানেনা পারিবারিক রাজনীতির দেশে এ ছাড়া পথ নাই। কিন্তু বিএনপির সাথে ভারতের কংগ্রেস পাকিস্তানের মুসলিম লীগ বা বাংলাদেশের আওয়ামী লীগের তফাৎ আরেক জায়গায়। রাহুল, প্রিয়াংকা বা বেনজীর তার পুত্র কিংবা পুতুল-জয় এরা মেধাবী। মেধাবী টিউলিপেরা। তারা নিজেদের তৈরি করেছেন। এখনো তৈরি হচ্ছেন। তাদের রক্তের উত্তরাধিকারের পাশপাশি আছে পড়াশোনা। দুর্ভাগ্য খালেদা জিয়া তা পারেননি। বরং তার বড়পুত্র বিলেতে থেকে একের পর এক ভুল চাল আর গোঁয়ার্তুমির রাজনীতি করে দেশের সর্বনাশ সাধনে তৎপর। তাই বিএনপির উচিত অচিরেই এর একটা বিহিত করা।
দেশের রাজনীতির মূলধারা থেকে ক্রমে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া বিএনপির আসলে শক্তি কতটা? এখন যা দেখছি তাতে মনে হচ্ছে মিডিয়া আর আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতাই এদের বাঁচিয়ে রেখেছেন। যেমন ধরুন সরকারী দলের সাধারণ সম্পাদক। প্রতি কথায় তিনি কেন জানি বিএনপিকে টেনে আনেন। তিনি তো স্পষ্ট করে বলে দিলেই পারেন তাদের যা ভোটের হিসেব বা যা হয়েছে তাতে তাদের আসা যাওয়ায় আমাদের কিছু যায় আসেনা। কিন্তু তার কথা শুনলে মনে হয় যেন কেবল তারা ভোটে আসলে বা হারলেই কেবল নির্বাচন সঠিক হয়েছে বলে মনে হবে। দেশের রাজনীতিতে সক্রিয় অন্য বিরোধী দলগুলো নিয়েতো এমন কথা তারা বলেন না! বাম দল, ডান দল এমনকি জাসদ নিয়েও বলেননা। এর মানে কি?
এর ভেতর কি বিএনপিকে চাঙ্গা করার ইন্ধন? না তাকে ভোলা যায় না? করুক না তারা তাদের রাজনীতি। মানুষ যদি তাদের হয়ে মাঠে নামে বা দেশ শাসনে তাদের আনতে চায়- তো চাইবে। তার আগে এতটা গুরুত্ব দেয়ার দরকার কী? প্রধানমন্ত্রী ঐক্যফ্রন্টকে সম্বোধন করে যখন বলেন তখন আমরা তার মানে বুঝতে পারি। কারণ এই ফ্রন্ট গঠনের পরপরই বিএনপি পরের পায়ে ভর দিয়ে নির্বাচনে আসতে পেরেছিল। তাদের ভরাডুবির পর তারা আবার যে জামায়াতকে চাইবে এটাইতো স্বাভাবিক। এখন প্রশ্ন হচ্ছে যে দল নিবন্ধনহীন একটি দলের সাথে ছায়া আঁতাত রেখে দেশের রাজনীতিতে থাকে তাদের সাথে ঐক্য হবে কী করে? এরা রাজনীতির কোন নিয়মই মানছেন না। উল্টো মানুষ হাসাচ্ছেন। নির্বাচন ও ফলাফল নিয়ে অসুখি বিএনপি আর কী করে তাই এখন দেখার বিষয়। তারা বিদেশি প্রভু নির্ভর রাজনীতি বাদ না দিলে এমন হাল চলতেই থাকবে।
দেশ এখন যেভাবে এগুতে চাইছে তার সাথে অকারণ বিরোধিতার রাজনীতি যায় না। যায় না হিংসার রাজনীতি। তার পরিবর্তে দলে বা জোটে ভাঙনের বিরুদ্ধে সচেতন হবার দরকার আছে। খবরে দেখলাম জাসদ অখুশি। বিদায়ী তথ্যমন্ত্রী ইনু মন্ত্রিত্ব আশা করেছিলেন। এতটাই যে তিনি আওয়ামী লীগকে এটাও মনে করিয়ে দিয়েছিলেন তারা বিশ পয়সা আর আওয়ামী লীগ আশি পয়সা । তাদের সাথে না নিলে একশ পয়সা বা একটাকা হয়না। সে মানুষটির অতীত রাজনীতি কী বলে? সেদিকে তাকিয়ে দলের ভবিষ্যত কর্মপন্থা নির্ধারণ করাই সঠিক বলে বিবেচনা করি। শরীক দলগুলোর সাথে ঐক্য আর অন্যান্য দলগুলোকে সামনে না আনলে দেশের রাজনীতির ওপর বিএনপির ভূত ছায়া ফেলে রাখবেই। বের হবার পথ তাদের আলোচনা ও মিডিয়া মুক্ত রাখা। বাকিটা জনগণের হাতে। ইদানিং মির্জা ফখরুলও আবোল তাবোল বকছেন। না পারছেন দলের মহাসচিব পদ ছাড়তে, না পারছেন টোপ গিলতে। তাই সাবধানতার বিকল্প নাই। মনে রাখা দরকার তারা বারুদের সন্ধানে আছে। সুযোগ পেলেই আগুন ধরিয়ে দেবে তারা।
শেখ হাসিনার প্রতি আমাদের অনুরোধ তিনি যেন এসব নেতাদের অচিরে বাতিল মাল করার নীতি গ্রহণ করেন। বিএনপিরও বুঝতে হবে তাদের বদলাতে হবে। বয়সী আর কথায় কথায় রেগে যাওয়া নেতাদের নিয়ে আর কতদিন? তারা যে অতীত দেখেছেন তা এখন মৃত। এখনকার বাংলাদেশ ও তার স্পন্দন বুঝতে না পারলে কী করে রাজনীতি করবেন তারা? অথচ কাগজে কলমে তারাই প্রধান বিরোধী দল। এর একটা উত্তর বা বিহিত নাহলে রাজনীতি অচল হয়েই থেকে যাবে। লেজ যেমন সোজা হয়না বিএনপি ও গণতন্ত্রের পথে আসবেনা। তাদের জন্ম হয়েছিল সেনা শাসনে জেনারেলের অধীনে। গদিতে থেকে একটা দল গড়া আর মাঠে নেমে মানুষের সাথে দল করার তফাৎ এখন বুঝছেন তারা।
আপনি যদি সময়ের দিকে তাকান দেখবেন কোন আন্দোলন বা সংগ্রামের ফসল নাই তাদের। এরশাদ পতনের সময়ও তারা আওয়ামী লীগসহ অন্যান্য দলের সাথে থেকেই তা করেছে মাত্র। ফল ভোগ করেছে সাম্প্রদায়িকতা আর ভারত বিরোধিতার। যা এখন পারছেনা। যে দলের দেশ শাসন, দেশ গঠন বা উন্নয়ন বিষয়ে কোনও স্বচ্ছ ধারণা নাই তারা কিভাবে জনমনের ভাষা বুঝবে?
বিএনপির ছায়া ভূতের কবল মুক্ত হতে হবে আওয়ামী নেতাদের। বিশেষত যারা তাদের আমলে রাজনীতি করতেন বা নেতা ছিলেন তাদের মনেই বিএনপি । নতুনরা জিয়ার ইমেজ নিয়ে ভাবেন না। বোঝেনও না। তাদের কাছে হয়তো অন্য বিকল্প বা বিকল্পের সন্ধান আছে। সেদিকেই যাই না কেন আমরা?