বাংলাদেশের নির্বাচন ঘিরে ভারতের একাংশের প্রগতিশীলদের বিভ্রান্তি প্রসঙ্গে

গৌতম রায়
Published : 17 Jan 2019, 11:34 AM
Updated : 17 Jan 2019, 11:34 AM

বাংলাদেশের জাতীয় সংসদের সদ্য সমাপ্ত নির্বাচন ঘিরে সেদেশের পর্যুদস্ত বিরোধিরা যে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন, তার বেড়াজালে ভারতের প্রগতিশীল মানুষদের একটা বড়ো অংশ আটকা পড়ছেন খুব সহজেই। এ প্রগতিশীল মানুষদের ভেতরে যেমন 'স্বঘোষিত বামপন্থি'রা আছেন, তেমনি রয়েছেন প্রতিষ্ঠিত বামপন্থিদের একটি অংশ। তাদের বেশিরভাগই বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী, কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধীদের দ্বারা প্রভাবিত এবং নিজেদের নামের পেছনে একটি 'কমিউনিস্ট' শব্দ জুড়ে এরা নিজেদের আপাতভাবে বামপন্থি হিসেবে জনমানসে প্রতিষ্ঠিত করতে চাইলেও, রাজনৈতিক চরিত্রের বিচারে বামপন্থার সঙ্গে এদের কোনওঅবস্থাতেই সাযুজ্য নেই। এদের রাজনৈতিক কার্যক্রম প্রকারান্তরে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী, পাকিস্তানপন্থি শিবিরকেই বেশি উৎসাহিত করে।

মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী পাকিস্থানপন্থি রাজনৈতিক শিবির, যাদের একটা বড়ো অংশ একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে যুদ্ধরত বাঙালির বিপক্ষে থেকে তাদের পাক হানাদারদের হাতে ধরিয়ে দিয়ে- পাকিস্তানিদের কাছ থেকে নানা ইনাম পেয়েছে, সে-ই শক্তি এখন শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার নবজাগরণে রাজনৈতিকভাবে সম্পূর্ণ পর্যুদস্ত হয়ে নির্বাচনী সংগ্রামেও বিপর্যস্ত হয়েছে। সেই বিপর্যয়ের দায়টিকে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির উপরে চাপিয়ে দিতেই তারা সদ্য সমাপ্ত নির্বাচনটিকে ঘিরে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক স্তরে নানা বিভ্রান্তি তৈরি করে বাংলাদেশ এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী বাঙালিকে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক স্তরে হেনস্থা করবার খেলায় নেমেছে।

এই খেলায় যে কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধীদের সঙ্গীসাথীরা, রাজাকার, আলবদর, আল-শামসদের উত্তরাধিকারীরা এবং পাকিস্তান ও মার্কিন সাম্রাজ্যবাদী শক্তি খুব ভালোভাবেই মদদ জুগিয়ে চলেছে- তা আর বলবার অপেক্ষা রাখে না।

আজ যদি বাংলাদেশে ধর্মনিরপেক্ষ শক্তি পরাজিত হতো, তাহলে সেদেশে যারা ক্ষমতায় আসতো, সেই বিএনপি-জামায়াত জোট কোনও অবস্থানেই মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাস করে না। মুক্তিযুদ্ধের মূলমন্ত্র অসাম্প্রদায়িক, ধর্মনিরপেক্ষ চেতনায় বিশ্বাস করে না। ওই জোট যদি বাংলাদেশে ক্ষমতায় আসতো তাহলে বাংলাদেশ একই সঙ্গে 'মুসলিম মৌলবাদী', পাকিস্তান এবং মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের মুক্তাঞ্চলে পরিণত হতো।

পাঠক ভুলে যাবেন না, বাংলাদেশের আদালতের নির্দেশে মুহাম্মদ ইউনুস যখন বাংলাদেশ গ্রামীণ ব্যাংকের প্রধানের পদ থেকে অপসারিত হয়েছিলেন, তখন তাকে পুনর্বহালের জন্যে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে টেলিফোন করে কার্যত হুমকি দিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন। তাই যদি সদ্য সমাপ্ত বাংলাদেশের একাদশ জাতীয় সংসদের নির্বাচনে সেদেশের ধর্মনিরপেক্ষ শক্তির পরাজয় ঘটতো, রাষ্ট্রশক্তিতে অধিষ্ঠিত হতো পাকিস্তানের দোসর বিএনপি- জামায়াত জোট। তাহলে বাংলাদেশটি মার্কিন সাম্রাজ্যবাদীদের মুক্তাঞ্চলে পরিণত হতো। এদেশে যারা নির্বাচনী সন্ত্রাস ইত্যাদির অভিযোগ তুলে মুক্তাযুদ্ধের চেতনার সপক্ষের শক্তি, অসাম্প্রদায়িক, ধর্মনিরপেক্ষ চেতনার মূর্ত প্রতীক শেখ হাসিনার বিরোধিতা করে চলেছেন, নির্বাচনী রাজনীতির প্রেক্ষিতে তাকে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে কার্যত একাত্ম করে 'স্বৈরাচারি', 'ফ্যাসিস্ট' ইত্যাদি বিশেষণে ভূষিত করে চলেছেন, তারা কি একটিবারের জন্যও এই সমস্ত প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে দেখেছেন?

গত দশ বছর ধরে বাংলাদেশে শেখ হাসিনার প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বপালনের অন্যতম সেরা কৃতিত্ব হলো- যুদ্ধাপরাধী, মানবাধিকার বিরোধী রাজাকার, আলবদর, আল-শামসদের বিরুদ্ধে সেদেশের মানুষদের ভিতরে একটা আলাদা চেতনা তৈরি করতে পারা। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সপরিবারে শাহাদাত বরণের পর থেকে খুনি খোন্দকার মোশতাক, রাজাকার পুনর্বাসনকারী জিয়াউর রহমান, স্বৈরাচারী এরশাদ, খালেদা জিয়া বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, একুশের চেতনা, অখণ্ড বাঙালি জাতীয়তাবাদের চেতনাকে সেদেশের মানুষ, বিশেষ নতুন প্রজন্মের মানুষদের ভুলিয়ে দিতে যে আপ্রাণ চেষ্টা করেছিলেন, সেই চেষ্টার বিরুদ্ধে প্রতিরোধের দেয়াল তুলতে সমর্থ হয়েছেন শেখ হাসিনা।

এ প্রতিরোধের দেয়াল তোলার প্রেক্ষাপট রচনায় যে ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেছিলেন শহীদ জননী জাহানারা ইমাম, বঙ্গজননী সুফিয়া কামাল, শামসুর রাহমান, কবীর চৌধুরী, কলিম শরাফি, দেবেশচন্দ্র ভট্টাচার্য, অনুপম সেন, মহাদেব সাহা, সৈয়দ হাসান ইমাম প্রমুখ মুক্তবুদ্ধির পান্থজন, তাদেরই পদাঙ্ক অনুসরণ করে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গত দশ বছরে সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে একাত্তর উত্তর প্রজন্মের ভিতরে তৈরি হয়েছে যুদ্ধাপরাধীদের সম্পর্কে এক মারাত্মক ঘৃণা।

শহীদ জননী জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে গত শতকের নব্বইয়ের দশকে কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে গড়ে ওঠা ঐতিহাসিক আন্দোলনকে রাজনৈতিক আন্দোলনে পর্যবসিত করে গত দশ বছরে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এবং ফাঁসির ভেতর দিয়ে তাদের সম্পর্কে সাধারণ মানুষের ভিতরে যে ঘৃণার সঞ্চার করতে পেরেছেন শেখ হাসিনা, এবারের নির্বাচনে সেই যুদ্ধাপরাধীদেরই একটা বড়ো অংশকে বিএনপি-জামায়াত জোটের প্রার্থী হতে দেখে, সেই ঘৃণারই বহিঃস্ফূরণ বাংলাদেশের মানুষ ঘটিয়েছেন ব্যালট বক্সে। বাংলাদেশের মানুষের জামায়াত-বিএনপি-পাকিস্তানবাদী, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী শক্তির প্রতি সেই সীমাহীন ঘৃণাকে উপলব্ধি করবার মতো রাজনৈতিক চেতনা, প্রজ্ঞার অভাব যে এপার বাংলার স্বঘোষিত বামপন্থী এবং প্রতিষ্ঠিত বামপন্থীদের একটি অংশের ভিতরে খুব জোরদারভাবেই রয়ে গেছে, বাংলাদেশের ভোট ঘিরে তাদের বিভ্রান্তিমূলক অবস্থান দেখে তা খুব পরিষ্কারভাবেই বোঝা যাচ্ছে।

বাংলাদেশের সদ্য সমাপ্ত জাতীয় সংসদের নির্বাচনের পর সেদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী শিবিরের কথাকে জপমন্ত্র করে এদেশের প্রগতিশীল সমাজের যে অংশটি এই নির্বাচনকে কারচুপি অভিহিত করে শিবকীর্তন জুড়েছেন, তারা কি জানেন, যার বিরুদ্ধে তারা গলা চড়াচ্ছেন, সেই শেখ হাসিনাকে 'ভারতের চর' বলে চিহ্নিত করতে এই মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী শক্তি সেদেশেই সবথেকে বেশি সোচ্চার?

গত শতকের নব্বইয়ের দশকে (১৯৯৬ সালে) পশ্চিমবঙ্গের তদানীন্তন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুর আন্তরিকতায় গঙ্গার জল বণ্টন নিয়ে একটি আন্তর্জাতিক চুক্তি সম্পাদনে সমর্থ হয়েছিলেন শেখ হাসিনা। কিন্তু সাম্প্রতিক অতীতে পশ্চিমবঙ্গের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের চরম বিরুদ্ধতার কারণে তিস্তার জলের ন্যায্য হিসসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বাংলাদেশ।

মমতার নেতিবাচক মানসিকতার জন্য নিজের দেশে যে প্রতিবদ্ধকতার সামনে শেখ হাসিনা পড়েছেন, সেটিকে বিএনপি- জামায়াত জোট কেবল হাসিনার কূটনৈতিক ব্যর্থতা হিসেবেই দেখাচ্ছে না, বরং গোটা বিষয়টিকে তারা দেখাচ্ছে এই ভাবে যে- 'বাংলাদেশের স্বার্থ হাসিনা জলাঞ্জলি দিলেন ভারতের কাছে'। এ নির্বাচনকে ঘিরে হাসিনার বিরুদ্ধে বিষোদগারের ভিতর দিয়ে ভারতের বিশেষত পশ্চিম বাংলার তথাকথিত প্রগতিশীলেরা বাংলাদেশের সেই ভারতবিরোধী শক্তিকেই কার্যত মদদ দিলেন।

জামায়াত, যুদ্ধাপরাধী, আলবদর, আলশামস এবং বিএনপি সম্পর্কে এই রাজ্যের একটা বড়ো অংশের মানুষের স্পষ্ট কোনও ধারণা নেই। বাংলাদেশের স্বাধীনতার চেতনাবিরোধী এ শক্তি একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন নয় মাসে মুক্তিযুদ্ধ এবং মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে কতোখানি অমানবিক আচরণ করেছিল, সে সম্পর্কে যদি বিন্দুমাত্র ধারণা তাদের থাকতো, তাহলে নিশ্চয়ই তারা এমন কোনও অবস্থান নিতেন না, যে অবস্থানের দ্বারা সেদেশের মৌলবাদী, সাম্প্রদায়িক, পাকিস্তানপন্থিরা বিন্দুমাত্র সুবিধা পায়।

আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন জোটের বিরুদ্ধে যে জোট ক্রিয়াশীল ছিল সেদেশের বিগত নির্বাচনে, তাদের ৯৮ শতাংশই যুদ্ধাপরাধ, মৌলবাদ, সাম্প্রদায়িকতা, দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত।

শেখ হাসিনার ধারাবাহিক দশ বছরের শাসনে বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক রাজনীতি এখন অনেকখানিই কোনঠাসা। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, ফাঁসি ইত্যাদি ঘটনাবলির ভিতর দিয়ে নবীন প্রজন্মের ভোটারদের কাছে বিএনপি- জামায়াত জোটের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী অবস্থান এখন অনেকখানি পরিষ্কার। তাই নতুন প্রজন্মের ভোটাররা শেখ হাসিনা প্রশাসনের অনেক দুর্বলতা সত্ত্বেও তার বিকল্প হিসেবে কখনওই বিএনপি- জামায়াত জোট বা খালেদা জিয়ার মতো পাকিস্তানপ্রেমীকে চাননি। এ সহজ সত্যটি বাংলাদেশের রাজনীতি সম্পর্কে সম্যক ধারণার অভাব নিয়ে একাংশের স্বঘোষিত বামপন্থি এবং একাংশের প্রতিষ্ঠিত বামপন্থিরা সামাজিক গণমাধ্যমে সোরগোল তুলে কার্যত দুই দেশেরই মৌলবাদী, সাম্প্রদায়িক শিবিরকে অনেকখানি অক্সিজেন জোগালেন।

নামের শেষে 'কমিউনিস্ট' শব্দটি যুক্ত দেখলেই তাদের 'বামপন্থি' হিসেবে ঠাওরে নিয়ে বাংলাদেশের এ নির্বাচনে বামপন্থিদের উপর আক্রমণ হয়েছে বলেও সামাজিক গণমাধ্যমে স্বঘোষিত বামপন্থিরা সোচ্চার হয়েছেন। এ স্বঘোষিত বামপন্থিদের কাছে বিনীত জিজ্ঞাসা- আপনাদের মূল্যায়ন অনুসারে বাংলাদেশে যাদের জন্য আপনারা 'বামপন্থি' বলে কুম্ভিরাশ্রু বিসর্জন করছেন, সেই যুক্তিতেই এদের সঙ্গে সাযুজ্য থাকা ভারতের ডানপন্থি ইউসিপিআই দলটিকেও আপনারা 'বামপন্থি' বা 'কমিউনিস্ট' বলতে প্রস্তুত আছেন তো? দুঃখের বিষয়- অনেক স্বঘোষিত বামপন্থি, যারা সামাজিক গণমাধ্যমে নিজেদের সিপিআই (এম) দলের সমর্থক বলে দাবি করেন, এমনকি প্রতিষ্ঠিত বামপন্থি- সিপিআই (এম) দলের রাজ্য কমিটির এক সভাও, সামাজিক গণমাধ্যমে বাংলাদেশের জাতীয় সংসদের সদ্য সমাপ্ত নির্বাচনের প্রেক্ষিতে তাদের দলের সঙ্গে দলগত অবস্থানে সম্পর্কযুক্ত ওয়ার্কাস পার্টির অবস্থানের বিপরীত অবস্থান নেন। তারা হয়তো জানেনই না, সিপিআই (এম) দলের সঙ্গে 'পার্টি টু পার্টি' সম্পর্কে যুক্ত বাংলাদেশের ওয়ার্কাস পার্টি এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন জোটে ছিল এবং তাদের প্রার্থীরা ভোটে জিতেছেন। এসব স্বঘোষিত বামপন্থিরা সামাজিক গণমাধ্যমে 'হাসিনাবাদী প্রগতিশীল' জাতীয় শব্দ লিখে কার্যত দুদেশেরই মৌলবাদী, সাম্প্রদায়িক শিবিরকে শক্তি জুগিয়েছে।

পরিশেষে আর একটি কথা বলতে হয়। বাংলাদেশে বসবাসকারী নিম্নবর্গীয় এবং নিম্নবিত্তের হিন্দুরা শেখ হাসিনার শাসনকালে পেয়েছেন আর্থিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, ধর্মীয় নিরাপত্তা। সেদেশের সংখ্যালঘু হিন্দুদের বৃহত্তর অংশ ধর্মনিরপেক্ষ আওয়ামী লীগের সমর্থক। এই কারণে তাদের জিয়াউর রহমান, এরশাদ, খালেদার আমলে বহু নির্যাতন সহ্য করতে হয়েছে। বাংলাদেশের সংখ্যালঘু হিন্দুদের উপর সেদেশের সংখ্যাগুরু মুসলিম মৌলবাদী, যারা রাজনৈতিকভাবে বিএনপি- জামায়াতের সমর্থক, তাদের নির্যাতনের সবথেকে বড়ো কারণ হলো- সংখ্যালঘু হিন্দুদের বেশির ভাগই আওয়ামী লীগের সমর্থক। হিন্দু এবং আওয়ামী লীগকে একাত্ম করেই সেদেশের সংখ্যাগুরু মুসলিম মৌলবাদীরা শারীরিক, মানসিক, সামাজিক, ধর্মীয় নির্যাতন চালায় সংখ্যালঘু হিন্দুদের উপর। এ অত্যাচারিত সংখ্যালঘু হিন্দুদের ভেতরে যারা বিত্তশালী, তাদের একটা বড়ো অংশ ভারত ও বাংলাদেশে তাদের দ্বৈতসত্তা বজায় রেখে বসবাস করেন। এ বিত্তশালী সংখ্যালঘু হিন্দুদের একটি বড়ো অংশ বাংলাদেশে থেকে শেখ হাসিনার শাসনকালেও ব্যবসা বাণিজ্য, চাকরি ইত্যাদির মাধ্যমে বিপুল টাকা উপার্জন করে, সেই টাকা স্থানান্তরিত করছেন ভারতে। এখানেও তাদের বাড়ি, জমি, ফ্ল্যাট ইত্যাদি থাকছে। ধীরে ধীরে তারা নাগরিকত্ব বদল করছেন। আমার পরিচিত এমন একটি পরিবারের কথা বলার লোভ সম্বরণ করতে পারছি না। এই পরিবারটির বাড়ি বাংলাদেশের বৃহত্তর খুলনা জেলাতে। সেই পরিবারটি বিগত পঁচিশ- তিরিশ বছর হলো দেশত্যাগ করে ভারতে বাস করছে। বিত্তশালী পরিবার। তারা এখন কলকাতা সংলগ্ন একটি জেলা সদরে বিপুল অর্থসহ একটি পেট্রোল পাম্পের মালিক। এ পরিবারেরই পরের প্রজন্ম বামপন্থী ছাত্র আন্দোলন করতো। এখন একটি কলেজে অধ্যাপনা করে এবং একটি বামপন্থী দলের সদস্য। সেই দলের হয়ে সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে দলীয় ক্লাস নেয়। সেই ছেলেটিই বাংলাদেশে সদ্য সমাপ্ত নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ ঘিরে সামাজিক প্রচার মাধ্যমে গলা ফাটিয়েছে। যদিও তাদের বৃহত্তর পরিবারের একটা বড়ো অংশ এখনও বাংলাদেশে করে-কম্মে খাচ্ছে। আসলে ভূতটা সর্ষের মধ্যেই!