তারুণ্যের ভবিষ্যত শেখ হাসিনায়, বিএনপিতে দুর্নীতি ও সন্ত্রাস

স্বদেশ রায়
Published : 28 Dec 2018, 01:43 PM
Updated : 28 Dec 2018, 01:43 PM

এ প্রজন্মের তরুণরা পৃথিবী নামক গ্রামটির সন্তান। তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়নের কারণে, তথ্যের অবাধ প্রবাহ সর্বোপরি শেখ হাসিনার তৈরি ডিজিটাল বাংলাদেশের কল্যাণে পৃথিবীর সব কিছু এখন একটি মোবাইল সেটের ভেতর। হাতে একটি মোবাইল ফোনের সেট থাকলে সে গোটা পৃথিবীকে চিনতে পারে। বাংলাদেশের তরুণদের কাছে এখন পৃথিবীর প্রতিটি প্রান্ত পরিচিত।

পৃথিবীকে এভাবে চেনার ফলে তরুণ প্রজন্ম জানতে পেরেছে উন্নত জীবন কী? এখন থেকে দশ বছর আগেও দেশের তরুণরা উন্নত জীবন কী, তা ঠিক এতটা পরিষ্কারভাবে জানত না। এখন তারা জানে আর এ কারণে আজ বাংলাদেশের তরুণদের চাহিদা উন্নত জীবনের। পৃথিবীর নানান প্রান্তের উন্নত দেশগুলোতে যেভাবে তরুণরা সুখি জীবন নিয়ে, স্বচ্ছল জীবন নিয়ে আরও সুন্দর ভবিষ্যত সৃষ্টির দিকে এগিয়ে যায়, বাংলাদেশের তরুণদেরও আজ সেই একই আকাঙ্ক্ষা।

মানুষ কখনই হতদরিদ্র বা দারিদ্র্যসীমার নিচে থেকে এই উন্নত জীবনের স্বপ্ন দেখতে পারে না। মানুষের জীবনযাত্রার মান বেড়ে একটা পর্যায়ে এলে, একটা ন্যূনতম স্বচ্ছলতা এলে তখনই মানুষ একটি উন্নত জীবনের স্বপ্ন দেখে। কঠিন দারিদ্র্যের মধ্যে বসে, ক্ষুধার ভেতর বসে কখনই মানুষ উন্নত জীবনের স্বপ্ন দেখতে পারে না। এখন থেকে দশ বছর আগে বাংলাদেশের শতকরা নব্বইভাগ তরুণের কোন উন্নত জীবনের স্বপ্ন দেখার সুযোগ ছিল না। কারণ, ভোরে ঘুম থেকে উঠেই দেখত তাদের পরিবার মূল খাবার- চাল, ডাল, মাছ এগুলো জোটাতে পারছে না। পরিবার যেখানে ন্যূনতম প্রয়োজনীয় খাবার জোগাড় করতে পারছে না সেখানে উন্নত জীবনের স্বপ্ন দেখা বিলাসিতা মাত্র। গত দশ বছরে বাংলাদেশের ওই অবস্থা বদলে গেছে। আজ বাংলাদেশের একজন কৃষিশ্রমিকও একদিন কাজ করে বিশ কেজি চাল কেনার অর্থ রোজগার করে। তাই আজ তার ঘরের সন্তানটিও উন্নত শিক্ষা ও উন্নত জীবনের স্বপ্ন দেখে। এমনকি আজ দেশের মাদ্রাসার পরিবেশ মানেই দারিদ্র্যের পরিবেশ নয়। সেখানেও তথ্যপ্রযুক্তির ছোঁয়া, সেখানেও উন্নত জীবনের, ভাল জীবনের আকাঙ্ক্ষা।

বাংলাদেশে এই উন্নত জীবনের আকাঙ্ক্ষা কীভাবে এলো? গত দশ বছরে কী ঘটেছে? গত দশ বছরে মোটা দাগে দেখলে যা সামনে আসে তা হলো, দেশ মূল খাদ্য চাল ও আটায় স্বয়ংসম্পন্ন হয়েছে। অনেকে বলতে পারেন গমে তো স্বয়ংসম্পন্ন হয়নি। তাহলে তা থেকে উৎপাদিত আটায় কীভাবে স্বয়ংসম্পন্ন হলো? আমাদের যে আটা তৈরি হচ্ছে, তাতে প্রায় ৬০ ভাগ দেশে উৎপাদিত ভুট্টা ব্যবহৃত হচ্ছে।

এ কারণে আমাদের আটার মান আরও পুষ্টিকর। আর আটার দাম সব থেকে কম বাংলাদেশে। এছাড়া পৃথিবীতে বাংলাদেশের অবস্থান মাছ উৎপাদনে চতুর্থ, সবজি উৎপদানে তৃতীয়, দেশের প্রয়োজনীয় গরুর মাংস এখন দেশই উৎপাদন করে। তাই স্বাভাবিকভাবে দেখা যাচ্ছে দেশের মূল খাদ্যগুলোর এখন আর কোনও অভাব নেই। এর পরে রয়েছে পোশাক। বাংলাদেশে সব ধরনের পোশাকের দাম অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক কম। জুতোর দাম কম। দেশের ছোট ছোট বাজারের অলিগলিতেও বিদেশি ব্রান্ডের টি শার্ট, পোলো শার্ট, জিনসের প্যান্ট নামমাত্র দামে পাওয়া যায়। এত কম দাম যে অনেক সময় বিদেশিরা এখান থেকে কিনে নিয়ে যান। অন্যদিকে ষোলো কোটি মানুষের ভেতর তেরো কোটি মানুষের হাতে মোবাইল ফোন। ল্যাপটপ ব্যবহার করছে শতকরা ষাট ভাগের ওপর ছাত্রছাত্রী। আর বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে প্রায় শতভাগ। এই তথ্যপ্রযুক্তিকে সহায়তা দিতে দেশের প্রায় ৯৪ ভাগ বাড়িতে পৌঁছে গেছে বিদ্যুত।

এই বাস্তবতায় বসে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ দেখছে আরও নতুন স্বপ্ন। তারা তাদের চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছে দেশ নিজ অর্থে পদ্মা সেতু তৈরি করছে। দেশের দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ বিশেষ করে তরুণরা বুঝতে পারছে এই পদ্মা সেতু চালু হলেই দক্ষিণাঞ্চলে বিশাল কর্মচাঞ্চল্য চলে আসবে। সেতুর দুপাড়ের জমি কিনছে এখন বড় বড় শিল্প গ্রুপ। তারা সেখানে শিল্প কারখানা তৈরি করবে। কর্মসংস্থান হবে হাজার হাজার তরুণের। তাছাড়া নতুন নতুন পেশার ও কাজের পরিবেশ সৃষ্টি হবে সেখানে। তেমনি দক্ষিণ চট্টগ্রামের মানুষ অর্থাৎ সন্দ্বীপ, মহেশখালী, কুতুবদিয়ার মানুষ দেখছে সেখানে তৈরি হচ্ছে বিদ্যুত হাব, তৈরি হচ্ছে কয়লাবন্দর।

এগুলো চালু হলেই এই এলাকার হাজার হাজার তরুণের জন্য সৃষ্টি হবে কর্মসংস্থানের। তারা ভাল চাকরি পাবে সেখানে। এমনকি সেখানকার মানুষকে আর বিদেশ যাবার চেষ্টা করতে হবে না কাজের জন্য। আবার দেশে নতুন যে সমুদ্রবন্দর হয়েছে, পায়রাবন্দর, তার কাজ এখনও আংশিক শুরুই হয়নি, তাতেই ওই এলাকা বদলে গেছে। আর পুরোপুরি চালু হলে ওই এলাকাই একটি সিঙ্গাপুর হবে। এখানে একটি কথা আরও সামনে আসে- এদেশ নদীমাতৃক, আবার দেশটি সমুদ্র ব-ভূমি। এখানে অর্থনীতির মূল শক্তি নদী ও সমুদ্র। বিদেশি বণিক-শাসক ব্রিটিশ এখানে দুটি সামুদ্রিক বন্দর তৈরি করে গিয়েছিল।

তার পরে এত শাসক এলো-গেল কেউ কোনও সমুদ্রবন্দর তৈরি করেনি। শেখ হাসিনা প্রথম আরেকটি সমুদ্রবন্দর তৈরি করছেন। সিঙ্গাপুরের মতো ক্ষুদ্র দ্বীপরাষ্ট্রটি তাদের সমুদ্রবন্দর দিয়ে দেশকে কোথায় নিয়ে গেছে। তাই বাংলাদেশ যদি আগামী পাঁচ বছরে আরও দুটি সমুদ্রবন্দর করতে পারে তাহলে পাঁচটি সমুদ্রবন্দর এই দেশকে কয়টি সিঙ্গাপুরের সমান বানাবে তা সহজে বোঝা যায়। দেশের তরুণরা বুঝতে পারছে দেশে আগামীতে আরও সমুদ্রবন্দর হবে। তাদের দেশ আরও উন্নত হবে। আর এসব বন্দরে কর্মসংস্থান, নতুন ব্যবসার সংস্থান বদলে দেবে তাদের জীবন। পাশাপাশি তৈরি হচ্ছে কয়েক শ ইকোনমি জোন। সেখানে কত লাখ তরুণের কাজের ব্যবস্থা হবে তা সহজে হিসাব করা যায়। তাই দেশের তরুণরা এখন পৃথিবীর অন্যান্য উন্নত দেশের তরুণদের সমান তাদের জীবন হবে, সে কল্পনাই করছে।

বাংলাদেশের তরুণরা তাদের বর্তমানের এই উন্নত জীবন আর ভবিষ্যতে নানান ধরনের কাজের সুযোগের একটি দেশ চায়। এ মুহূর্তে দেশে বেকারত্ব আছে ঠিকই, তবে কর্মহীন কেউ নেই। নিজের ঘরের সন্তান থেকে শুরু করে সব তরুণকে দেখি, তারা সবাই কিছু না কিছু রোজগার করছে সব সময়ই। আমাদের তরুণবেলায় আমরা যেমন একেবারে শতভাগ পরিবারের ওপর নির্ভরশীল ছিলাম, এখন সেই অবস্থা আর কোনও তরুণের নেই। তাছাড়া কয়েকটি মাত্র সরকারী চাকরি ছাড়া আমাদের সময় অন্য চাকরির সুযোগ ছিল কম। এখন সেদিন বদলে গেছে। এখন মেধাবী তরুণদের অধিকাংশই সরকারি চাকরিতে যেতে চায় না। বেসরকারি খাতে এখন অনেক বেশি সুযোগ-সুবিধা। তাছাড়া সেখানে উদ্ভাবনী শক্তিকে কাজে লাগানোর সুযোগ আছে। এখন তরুণরা চায় রাষ্ট্র তাদের উদ্ভাবনী শক্তিকে কাজে লাগানোর সুযোগ দিক।

তরুণদের এই স্বপ্ন দেখার স্থানে দেশকে গত দশ বছরে নিয়ে এসেছেন শেখ হাসিনা। এখন প্রতিটি তরুণ বুঝতে পারছে সমুদ্রসম্পদ নির্ভর, একটি সুবিধাজনক ভৌগোলিক অবস্থানগত এই দেশটিকে শেখ হাসিনা যেখানে নিয়ে গেছেন সেখানে বসে স্বপ্ন দেখা যায়। স্বপ্ন দেখা যায় আগামী দশ বছরের ভেতর বাংলাদেশ এশিয়ার অন্যতম অর্থনীতির একটি দেশ হবে। বাস্তবে লী কুয়ান যেমন সিঙ্গাপুরকে পরিবর্তন করে দিয়ে গেছেন, রাজা ভুমিবল যেমন থাইল্যান্ডকে পরিবর্তন করে দিয়ে গেছেন, মাহাথির যেমন পরিবর্তন করেছেন মালয়েশিয়াকে; শেখ হাসিনাও তেমনি পরিবর্তন করেছেন বাংলাদেশকে। আর শেখ হাসিনা যে বাংলাদেশকে সত্যি সত্যি পরিবর্তন করেছেন তার সুফল মানুষ যেমন বুঝতে পারছে তেমনি আরেকটি সত্য হলো, তার বিরোধীরা কেউ টু শব্দ করতে পারছে না উন্নয়ন কর্মকাণ্ড নিয়ে।

আজ গভীরভাবে লক্ষ্য করলে দেখা যাবে শেখ হাসিনার বিরোধীদের বক্তব্য দুটো। এক, তাদের নেতাকে জেলে রাখা হয়েছে। দুই, তাদের কর্মীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে এবং তাদের এক নেতা বিদেশে পলাতক জীবন কাটাচ্ছে, তাকে দেশে ফেরাতে হবে। এখানে বাস্তবতা হলো, তাদের নেতা জেল খাটছেন রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থেকে দুর্নীতি করার অপরাধে। আর তাদের কর্মী যাদেরকে বলা হচ্ছে তাদের সকলের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে পেট্রোলবোমা হামলা থেকে নানান ধরনের সন্ত্রাসের।

এদেশের তরুণ সমাজ জানে ২০১২, ১৩ ও ১৫ সালে দেশে কী ব্যাপক সন্ত্রাস করেছিল ওই দল ও জোটটি। যে লাখ লাখ সন্ত্রাসের ঘটনা ঘটেছিল, সে হিসেবে কিন্তু মামলার সংখ্যা অনেক কম? শুধু তাই নয়, যাদের নেতৃত্বে এই পেট্রোলবোমা সন্ত্রাস, আগুনসন্ত্রাস হয়েছিল, সেসব নেতা অর্থাৎ ফখরুল, রিজভীরা নির্বিঘ্নে আছেন। নির্বাচন করছেন। দলের নির্বাচনী কাজ পরিচালনা করছেন। এখানেও সরকারের নীতি বিশ্লেষণ করলে দেখা যাচ্ছে, উন্নয়নের স্বার্থে তারা দেশের অনেক অন্যায়কে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখছে। আর ওই ফখরুল, রিজভী প্রমুখ বলতে পারছেন না দেশে উন্নয়ন হয়নি। এছাড়া তাদের যে নেতা বিদেশে পলাতক, তার একটি মামলায় সাজা হয়েছে দুর্নীতির দায়ে, ঘুষ নেবার অভিযোগে; ওই মামলায় আমেরিকান গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআইর প্রতিনিধি এসে সাক্ষ্য দিয়েছিল। আর অন্য যে মামলায় তার জেল হয়েছে, সেটা ২১ অগাস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায়। ওই হামলায় তিনি যে মাস্টারমাইন্ড, সেটা মূল হামলার পরিকল্পনাকারী তিনজন স্বীকার করেছে। যা হোক, এসব অপরাধীকে তারা অপরাধের শাস্তি থেকে পার পাওয়াতে চাচ্ছে নির্বাচনের ভেতর দিয়ে। এছাড়া শেখ হাসিনার উন্নয়নের বিরুদ্ধে কোন কথা বলতে পারেনি। অন্যদিকে এর থেকে বেশি উন্নয়ন তারা করতে পারবে, তাও তাদের ইশতেহারে বলতে পারেনি। সর্বোপরি তাদের উন্নয়নের কোনও রের্কড নেই। তাদের আমলে সব সময়েই দেশ বিদ্যুত উৎপাদনে, খাদ্য উৎপাদনে পিছিয়ে গেছে।

তাই এবারের নির্বাচনে দেখা যাচ্ছে, একপক্ষ বিএনপি- জামায়াত গণতন্ত্রের ছদ্মাবরণে দুর্নীতি, সন্ত্রাস ও মানুষ হত্যার দায়ে দণ্ডিত কিছু ব্যক্তির মুক্তি চাচ্ছে। অন্যদিকে রয়েছেন শেখ হাসিনা, যিনি তরুণদের উন্নত জীবনের স্বপ্ন দেখার পথ তৈরি করে দিয়েছেন। দেশকে সেখানে নিয়ে এসেছেন। তাই শেখ হাসিনার সঙ্গেই তরুণদের উন্নত ভবিষ্যত আর বিএনপি-জামায়াত ও নব্য জামায়াতি ড. কামালের (মুনতাসীর মামুনের ভাষায় ড. জামায়াত) সঙ্গে রয়েছে দুর্নীতিবাজ ও সন্ত্রাসীদের মুক্তি দেবার পথ। তরুণদের নিশ্চয়ই কোনও দায় নেই দুর্নীতিবাজ ও সন্ত্রাসীদের মুক্তি দিয়ে দেশকে আবারও সন্ত্রাস ও দুর্নীতিতে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার; বিএনপি আমলের সেই পাঁচবার দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হওয়া। তরুণদের দরকার উন্নত ভবিষ্যত। আর উন্নত ভবিষ্যত যে সবাই দিতে পারেন না তার প্রমাণ মালয়েশিয়াকে আবারও নব্বই বছরের মাহাথিরকে ফিরিয়ে আনতে হয়েছে। আসলে একটি দেশকে উন্নত করার ক্ষমতা সবার থাকে না। বাংলাদেশের ৪৭ বছরে প্রমাণ হয়েছে, একমাত্র শেখ হাসিনার সেই ক্ষমতা আছে। তিনিই ভবিষ্যত প্রজন্মকে আরও উন্নত জীবন দিয়ে যাবেন। তাই আগামী রবিবারের নির্বাচনে তরুণরা শেখ হাসিনার সঙ্গেই থাকবেন। কারণ, শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই রয়েছে তরুণদের উন্নত ভবিষ্যত।