অপপ্রচারের নতুন ধরন, ‘দেশটা কারও বাপের না’ বিজ্ঞাপন

পাপ্পু দত্ত
Published : 27 Dec 2018, 03:10 PM
Updated : 27 Dec 2018, 03:10 PM

তারুণ্য মানেই খুব প্রাণবন্ত, ঝলমলে সময়ের কথা বলে। বুদ্ধিমত্তা, শক্তি, যেকোনও লড়াইয়ে নেমে যাবার আকাঙ্ক্ষা সবকিছুই এসময় তুঙ্গে থাকে। দেশকে এগিয়ে নিতে তরুণ প্রজন্মের অবদান এবং ডিজিটাল বাংলাদেশের সমন্বয় হতে পারে খুব চমৎকার কিছু। প্রবীণদের রিলে রেসের ব্যাটন তরুণদের হাতেই তুলে দিতে হবে।

তাই ৩০ ডিসেম্বর ২০১৮ তারিখে অনুষ্ঠিতব্য এগারোতম জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে অংশগ্রহণকারী সবগুলো দলই তারুণ্যের শক্তিকে উপেক্ষা করছে না। রাজনৈতিক দলগুলো তাদের ইশতেহারে তরুণদের টার্গেট করে কিছু না কিছু রেখেছে। সেগুলোর কোনটা কতখানি গ্রহণযোগ্য বা বাস্তবসম্মত সে আলোচনায় আপাতত যাচ্ছি না, যেহেতু এই লেখার ফোকাস মূলত সোশ্যাল মিডিয়ায় তরুণদের প্রতি রাজনৈতিক দলগুলোর বার্তা প্রেরণের ধরন ও দায়বদ্ধতা।

বাংলাদেশে সোশ্যাল মিডিয়ায় সক্রিয় অন্তত তিন কোটি তরুণ যারা কিনা আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নতুন ভোটারও। অংশগ্রহণকারী প্রত্যেকটি দলই তরুণদের নিজ নিজ দলের পক্ষে আকৃষ্ট করতে বিভিন্ন ধরনের কনটেন্ট ছড়িয়ে দিয়েছেন। নিত্যনতুন আরও অনেক কিছুই আসছে। আমি নিজে সামনের নির্বাচনসহ তিন বারের ভোটার। খুব মনযোগ দিয়ে ভিডিওগুলো দেখি। সেগুলো নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা করি। ভালো হলে অন্যকে দেখাই।

এরকম করে দেখতে দেখতেই গতকাল নিবন্ধন হারানো জামায়াত এবং শিবিরের বেশ কিছু চিহ্নিত পেইজ ও গ্রুপ থেকে ছড়ানো একটি ভিডিও-র দিকে হঠাৎ  চোখ আটকে গেলো। ভিডিওর মূল বার্তা ছিল তরুণদের উদ্দেশ্যে যেখানে কয়েকজন ছেলেমেয়ে বলছে, 'দেশটা কারোর বাপের নয়'। ছেলেমেয়েগুলো দেখতে কেমন, কোথাকার, তাদের উচ্চারণ কী ধরনের সেসব ছাপিয়ে আমার কানে বার বার ধাক্কা দিচ্ছে, 'দেশটা কারোর বাপের নয়'- এই বাক্যটি।

আগেও এই বাক্যটি কোথায় যেন শুনেছি মনে করতে করতে হঠাৎ খেয়াল হলো, এধরনের কথাবার্তা বলা হতো মূলত বঙ্গবন্ধু তনয়াকে উদ্দেশ্য করে। বিএনপি সমর্থকদের মুখের কমন উচ্চারিত বাক্য এটি। সাথে যুক্ত আছে জামায়াত। নির্বাচন উপলক্ষে তারুণ্যকে টার্গেট করে প্রকাশিত ভিডিওটি আমায় নস্টালজিক করে দিলো, সাথে উদ্বিগ্নও। তরুণরা স্বভাবে উচ্ছ্বল, অনেকখানি অদম্য। তারা কোন পথে যাবে তা নির্ভর করে তাদের সামনে কি দিকনির্দেশনা আছে, কারা দিচ্ছে এবং কিভাবে- তার ওপরে। সুতরাং সঠিক নির্দেশনা যে খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তা ব্যাখ্যা না করলেও চলে।

কেননা, '৭৫ পরবর্তী সময়ে তাদের প্রতি ভুল নির্দেশনাই পরবর্তীতে বাংলাদেশে রাজনৈতিকভাবে অসচেতন, ধর্মান্ধতা এবং ইতিহাসবিমুখ প্রজন্ম গড়ে উঠতে মূল ভূমিকা পালন করেছে। যাই হোক, ভিডিও প্রসঙ্গে আসি। নির্বাচন উপলক্ষে ভোটারদের আকৃষ্ট করতে সাধারণত কী করা হয়? নিজ নিজ দলের ইতিবাচক কাজগুলো, ভোটারের ধরন বুঝে নির্দিষ্ট শ্রেণি-গোষ্ঠিকে টার্গেট করে তাদের জীবনমান উন্নয়নে করা কাজগুলো, সেসব কাজের ওপর ভিত্তি করে এই নির্বাচনে ক্ষমতায় এলে ভবিষ্যতে আরও কী কী করা হবে সেধরনের পরিকল্পনাগুলো ভিডিওর মাধ্যমে এবং লিখিত আকারে সোশ্যাল মিডিয়াতেও সাজিয়ে উপস্থাপন করা হচ্ছে। এমনকি লাইভ প্রোগ্রামের মাধ্যমে বিভিন্ন জেলায় যে নির্বাচনী জনসভা হচ্ছে তা সুন্দরভাবে দেশে-বিদেশের যেকোনও জায়গা থেকেই দেখা যাচ্ছে। এত স্বচ্ছভাবে যেখানে সবকিছু চলছে সেখানে জামায়াত-শিবিরপন্থি পেইজ থেকে ছড়ানো এই ভিডিওতে আমরা কী দেখছি? অত্যন্ত দুর্বিনীতভাবে 'দেশটা কারোর বাপের নয়'! বলে যে স্লোগান ছড়ানো হচ্ছে এখান থেকে তরুণরা কী বার্তা পাবে? তরুণদের প্রতিনিধিত্ব ঠিক এরকম হওয়া উচিত কি-না?

গত দশ বছরের আওয়ামী শাসনামলে তরুণদের কিছু দাবি আদায়ের আন্দোলন যেমন কোটা আন্দোলনের ব্যাকগ্রাউন্ড উল্লেখিত ভিডিওতে ব্যবহার করা হয়েছে। আওয়ামী আমলে সংঘটিত প্রতিটি আন্দোলনই কমবেশি মীমাংসিত। কেননা, সাধারণ তরুণরা যখনই যৌক্তিক এবং ন্যায্য দাবিতে রাস্তায় নেমেছে তাতে জনসমর্থন ছিলো। সরকারও সেগুলো আমলে নিয়েছে এবং বিবেচনা করার কথা বার বার বলেছে। কিছু আন্দোলন যেমন নিরাপদ সড়কের দাবিতে নেওয়া পদক্ষেপগুলো যাতে বাস্তবায়িত হয় তার জন্য সংসদে দ্রুততম সময়ের ভেতর আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। ভ্যাট ইস্যুতেও তরুণরা তাদের দাবি আদায়ে সক্ষম হয়েছে। এর একটাও রাজনৈতিক ছিল না।

কিন্তু গত দশ বছরে তরুণদের প্রতিটি আন্দোলনই বহুবার সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো হাইজ্যাক করার চেষ্টা করেছে, তাদের উসকে দিতে চেয়েছে এবং পুরো বিষয়টিকে লেজেগোবরে করে যেকোনও মূল্যে সরকারবিরোধী আন্দোলনে রূপ দিতে আপ্রাণ চেষ্টা করেছে। এ কারণেই আন্দোলনগুলোতে কিছু কিছু সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে যেগুলো এখন সরাসরি ব্যবহার করা হচ্ছে তরুণদের ভোট পাবার আশায়। কিভাবে নির্দোষ তরুণরা অন্যদের রাজনৈতিক স্বার্থ উদ্ধারের হাতিয়ার হয়ে যায় তা যাদের রাজনৈতিক আন্দোলনের অভিজ্ঞতা নেই তাদের পক্ষে চট করে অনুধাবন করা একটু কঠিন। যেহেতু সরকার পরিচালনার দায়িত্বে ছিল আওয়ামী লীগ তাই ক্ষমতায় আসতে মরিয়া পক্ষগুলো তরুণদের অরাজনৈতিক দাবি আদায়ের আন্দোলনকেও ছাড় দেয়নি। ফলাফলস্বরূপ, কিছু সংঘর্ষ অবধারিত ছিলো। তবে সামগ্রিকভাবে একটি সরকারের টানা দুই টার্ম-এর ভালোমন্দ মূল্যায়নের জন্য এটা একেবারেই যথেষ্ট নয়। মূল্যায়ন করতে গেলে সর্বপ্রথমে যেটা মনে রাখা প্রয়োজন সেটা হচ্ছে, জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে একাধিক রাজনৈতিক দল। প্রত্যেকেই তাদের গণতান্ত্রিক অধিকারবলে জনগণের কাছে নিজদের যোগ্য দাবি করছে এবং ভোট প্রার্থনাও। দশ বছর আওয়ামী সরকারের শাসন আমলে শুধু তাদের একার ইতিবাচক ও নেতিবাচক কাজের মধ্যকার মূল্যায়ন পূর্ণাঙ্গ ফলাফল তো দেবেই না বরং ভুল রিডিং-এর সম্ভাবনাকে অনেক বাড়িয়ে দেবে।যে বয়সটা সুকান্তের ভাষায় আঠারো থেকে শুরু হয় সেই অগ্নিবর্ষী সময়ের তরুণরা বুদ্ধিমান নয়- এমন ভাবাও যে ধৃষ্টতা!

'দেশটা কারোর বাপের নয়' বলার পূর্বে ফিরে যেতে হবে ৪৭ বছর আগে। বঙ্গবন্ধু একটি 'অনিচ্ছুক জাতি'কে স্বাধীনতা এনে দেবার জন্য যা যা প্রয়োজন সবই করেছিলেন। উনি কারাগারে ছিলেন ৪ হাজার ৬৬২ দিন অর্থাৎ ১৪ বছর। তার আহ্বানে সারা দেশ যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছে। পাকিস্তানের কারাগারে তাকে মেরে ফেলার আয়োজন যখন সম্পন্ন সে মুহূর্তেও তিনি বুক চিতিয়ে হুঙ্কার দিয়ে বলেছেন, 'আমি বাঙালি, আমি মানুষ, আমি মুসলমান, একবার মরে, দুইবার মরে না।'

আমরা জাতি হিসেবে তার উত্তরসূরি; 'দেশটা কারোর বাপের নয়' যাদের মুখ দিয়ে বের হয় তাদের নই। তারা তো দেশ চায়নি তাহলে দেশ তাদের হবার প্রশ্ন আসছে কী করে! ১৯৭২-এর ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু ফিরলেন, দেশ গঠনের কাজে নিয়োজিত হলেন। '৭২-এর সংবিধানে প্রথম সংশোধনী এলো যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ইস্যুতে। যুদ্ধে সংঘটিত অপরাধের ধরন বুঝে সাধারণ ক্ষমার বাইরে রয়ে গেল ১১ হাজার যুদ্ধাপরাধী যারা দালাল আইনে আটক ছিলো। '৭৫ পরবর্তী সময়ে জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসে দালাল আইন বাতিল করে এদের মুক্ত করেন। গোলাম আযমের নাগরিকত্বও তিনি পাকাপাকি করেন এবং বাংলাদেশে জামায়াতের রাজনীতির লাইসেন্স দেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানের হয়ে নৃশংসতাকারী রাজাকার-আল বদর এবং আল শামস জামায়াতে ইসলামী নামে বাংলাদেশে রাজনীতি শুরু করে। ইসলামী ছাত্রসংঘ নাম পালটে হয়ে যায় ইসলামী ছাত্রশিবির। বিএনপির সাথে সরাসরি জোটবদ্ধ হয়ে নিজেদের স্থান আরও পাকাপোক্ত করে জামায়াতের চিহ্নিত সব যুদ্ধাপরাধীরা। অর্থাৎ বাংলাদেশে তাদের প্রতিষ্ঠা এবং ক্ষমতার কেন্দ্রে পৌঁছে দিতে গ্রাউন্ড ওয়ার্ক করা দলটির নাম বিএনপি।

বঙ্গবন্ধু বাকশাল গঠন করেছিলেন। আজ তরুণরা সমান অধিকারের কথা বলো, সুশাসনের কথা বলে। সরকারের সমালোচনা করে, তাদের দেশভাবনা সকলের সঙ্গে ভাগাভাগি করে – এগুলো খুবই যৌক্তিক।  বঙ্গবন্ধু কৃষক-শ্রমিক থেকে শুরু করে সমাজের সকল স্তরের মানুষদের অংশগ্রহণে তেমন সমাজ আর মানুষের অধিকার নিশ্চিত করতে চেয়েছিলেন বাকশাল বাস্তবায়নের মাধ্যমেই। পরিণামে তাকে সপরিবারে হত্যা করা হয়েছে। তাতেই থেমে যায়নি হত্যাকারীরা। বঙ্গবন্ধুর মুক্তিযোদ্ধা সন্তানদের বিরুদ্ধে ব্যাংক ডাকাতি, চারিত্রিক দূর্নাম ছড়িয়ে, অসংখ্য মিথ্যা দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছে ইতিহাসের খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি আখ্যান। এতে বাংলাদেশে জন্ম নেওয়া তারুণ্য বিভ্রান্ত হয়েছে অন্তত তিন দশকব্যাপী, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে একটি স্বাধীন দেশ এবং পিছিয়ে গেছে অন্তত পঞ্চাশ বছর। অর্থাৎ ঠিক যে ধরনের বাংলাদেশের কথা এখনকার অল্পবয়সী ছেলেমেয়েরা বলে, তাদের প্রত্যাশায় যা যা আসে সেই বাংলাদেশ উপহার দিতে চাওয়ার অপরাধে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়েছে। উনাকে হত্যা না করা পর্যন্ত এ দেশে যুদ্ধাপরাধীদের ঘাঁটি তৈরি করা সম্ভব ছিল না। একটি ভাষা আন্দোলন, ছেষট্টির ছয় দফা, উনসত্তরের গণঅভ্যুথান, সত্তরের নির্বাচনে বাঙ্গালিদের নিরঙ্কুশ বিজয়, একটি একাত্তর কখনও সম্ভব হতো না একজন শেখ মুজিব না থাকলে এবং তার সাথে তরুণদের অংশগ্রহণ ছাড়া। রুমীদের বয়েসী ছেলেমেয়েরা ক্র্যাক প্লাটুনের ইতিহাস জেনেছে, অন্যান্য মুক্তিযোদ্ধা এমনকি বাদ যায়নি শিশু মুক্তিযোদ্ধার ইতিহাসও। কিন্তু তারুণ্যের অসামান্য শক্তিকে একত্রিত করে কাজে লাগিয়ে একটি দেশ কিভাবে স্বাধীন করে ফেলা যায় তা প্রায় পুরোটাই অসম্পূর্ণ থেকে যাবে বঙ্গবন্ধুকে শুরু থেকে না জানলে।

ভিডিওটিতে শুধুআওয়ামীলীগের দশ বছরে তরুণদের ন্যায্য দাবি আদায়ের আন্দোলনকে উপজীব্য  করে যা বোঝাতে চাওয়া হয়েছে, সেখানে সম্পূর্ণভাবে উপেক্ষিত তরুণদের অবদান এবং সাফল্য। খুব কৌশলে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে একই সময়ে সরকারের বাইরে থাকা বিএনপি-জামায়াত ও অন্যান্য রাজনৈতিক দলের ভূমিকা। অথচ আমরা জানি ক্ষমতায় নেই বলে তারা মোটেও নিষ্ক্রিয় ছিলো না। পেট্রোল বোমা ছুঁড়ে মানুষ হত্যা, যুদ্ধাপরাধের বিচার যাতে না হয় তার জন্য সারাদেশব্যাপী জামায়াতশিবিরের হত্যাকাণ্ড এবং জ্বালাওপোড়াও কিছুই বাদ যায়নি। দশ বছরে আওয়ামী সরকারের সাফল্য-ব্যর্থতার খতিয়ান বিভিন্ন তরফ থেকে তরুণরা দেখেছে। কিন্তু যারা এই মেসেজ দিচ্ছে, 'দেশটা কারোর বাপের নয়'- তাদের অর্জন কী? এযাবৎ কালে তরুণদের জন্য তারা কী করেছে? তরুণরা যেন না ভাবে যে এই মেসেজ প্রদানকারী দল পূর্বে কখনও দেশের নেতৃত্বে আসেনি। তাদের নেতারাও কেউ তরুণ নয়। তাদের প্রত্যেকেরই স্বাধীনতাপরবর্তী সময়ে দেশ গঠনে ভূমিকা রাখার একাধিক সুযোগ এসেছে। প্রশ্ন থাকে যে সেই ভূমিকায় তারা নিজেরা কতখানি সফল?

সবকিছু ছাপিয়ে যে প্রশ্নটি বার বার পীড়া দেয়-যুদ্ধাপরাধী জামায়াত এবং তাদের ছাত্রসংগঠন শিবিরের অনুসারী কিংবা তাদের সহযোগী হয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের তারুণ্যের প্রতিনিধি হবার যোগ্যতা তাদের আছে কি-না? সে অধিকার তারা রাখেন কি-না?

তরুণদের বিভ্রান্ত করার জন্য অসংখ্য উপাদান সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে রাখা হয়েছে। আঠারো বছর বা অনুর্ধ্ব বয়সী ছেলেমেয়েদের যতখানি জেনেছি তাতে বলা যায়, তারা অন্যায়কে সহ্য করে না, যে কোনও বিষয়ে সরাসরি অবস্থান নিতে ভয় পায় না। ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই তারুণ্যই জানিয়ে দিয়েছিল তারা বাংলাদেশে অবস্থানরত যুদ্ধাপরাধী রাজাকারদের বিচারের পক্ষে। ২০১৩-তে শাহবাগে যুদ্ধাপরাধের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে যে গণজোয়ার তা এসেছে তরুণদের হাত ধরেই। তাদের অংশগ্রহণ ইতিহাস হয়ে রবে। তরুণদের বিভ্রান্ত করতে যারা এখন সক্রিয়, সোশ্যাল মিডিয়ায় অগ্রহণযোগ্য ভাষায় ভিডিও তৈরি করে ছেড়ে দিচ্ছে 'দেশটা কারোর বাপের না' বলে তারা কখনও যুদ্ধাপরাধ নিয়ে কথা বলেনি, তারা চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধী এবং তাদের দল জামায়াতকেও ত্যাগ করেনি। তারা এটাও চায় না ত্রিশ লাখ শহীদের উত্তর প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, বাংলাদেশ ও বঙ্গবন্ধুকে ধারণ করুক। তাই সমস্ত আয়োজনই হয় উল্লেখিত বিষয়গুলো বাদ দিয়ে। ত্রিশ লাখ শহীদ, আরও কয়েক লাখ নির্যাতিতা নারী যাদের আমরা বীরাঙ্গনা বলি (সরকার তাদের নারী মুক্তিযোদ্ধার সম্মান দিয়েছেন), শহীদ বুদ্ধিজীবীদের হত্যার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের যে তরুণরা ক্ষমা করেনি, কখনও করতে পারে না তা আরেকবার জোরালো ভাষায় জানান দেওয়ার সময় এসেছে।

রাজনৈতিক স্বার্থে শুধু আওয়ামী সরকারকেই নয়, ছাত্রলীগকেও তরুণদের বিপক্ষ হিসেবে দাঁড় করিয়ে দেবার প্রয়াস বহুবার দেখেছি। যারা এবার নতুন ভোটার হয়েছে তাদের অনেকের বয়স ২০০১ সালে এক থেকে পাঁচ বছরের মধ্যে ছিল। বিগত দশ বছরে তরুণ শিক্ষার্থীদের দাবি আদায়ের লক্ষ্যে আন্দোলন চলাকালীন ছাত্রলীগের বা ছাত্রলীগ নামধারীদের সঙ্গে কোথাও কোথাও সংঘর্ষ ঘটেছে। ছাত্রলীগ নিয়ে কিছু কথা বলার আছে। এই প্রাচীন ছাত্রসংগঠনের পথচলার শুরু আওয়ামী লীগেরও আগে।  বঙ্গবন্ধুর নিজের হাতে গড়েছেন। আমাদের মুক্তিযুদ্ধে শহীদ ছাত্রলীগ কর্মীর সংখ্যা সত্তর হাজার। মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে ছাত্রলীগ এখন পর্যন্ত একাত্তরের ছাত্রসংঘ অর্থাৎ বর্তমান ইসলামী ছাত্রশিবিরের ক্লিনজিং-এর শিকার। সেসব হত্যাকাণ্ডের নমুনা দেখলে শিউরে উঠতে হয়। বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মতাদর্শগত অনুসারী ছাত্রসংগঠনগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি নিগৃহীত এবং সহিংসতার শিকার দলটির নামও ছাত্রলীগ। গত দশ বছর ধরে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায়। মতাদর্শগত অনুসারী বাদেও স্বার্থসিদ্ধিজনিত কারণে তাই বর্তমানে সারাদেশব্যাপী ছাত্রলীগ কর্মীর আধিক্য আমরা দেখতে পাই। মানুষ হিসেবে তাদের অনেকের জ্ঞানের সীমাবদ্ধতা আছে, কারোর কারোর বঙ্গবন্ধুর মতাদর্শের প্রতি সম্মানবোধ নেই, হয়তো ব্যক্তিগত স্বার্থই লক্ষ্য। কিছু ভুল বা অন্যায় তারাও করে এটাও সত্যি।

কিন্তু প্রিন্ট-ইলেকট্রনিক-সোশ্যাল মিডিয়ায় সবসময় তারা যেভাবে ফোকাসড সে হিসেবে অন্যান্য ছাত্রসংগঠনগুলোর কর্মকাণ্ড অনেকখানিই আড়ালে। রাজনীতিতে মিডিয়ার ভূমিকা নিয়ে যদি বলি তাহলে আলাদা চ্যাপ্টার হয়ে যাবে। সে প্রসঙ্গ আপাতত থাক। তরুণদের বিভিন্ন দাবিতে চলা আন্দোলনগুলোয় ঘটে যাওয়া নেতিবাচক ঘটনাগুলোর প্রেক্ষিতে এবং মিডিয়ার ভূমিকা মিলিয়ে ছাত্রলীগ বিষয়ে তাদের ক্ষুব্ধ মনোভাব স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া হিসেবেই নিয়েছি। পাশাপাশি ভাবনার খোরাক যুগিয়েছে অন্যান্য কিছু বিষয়, যেমন তরুণদের কাছে শিবির কর্তৃক ছাত্রলীগের ছেলেপেলেদের রগ কাটার খতিয়ান নেই, ছাত্রদল বা অন্যান্য সংঠনগুলোর কর্মকাণ্ডের প্রত্যক্ষদর্শীও তারা নয়, ছাত্রলীগের ইতিবাচক কাজগুলোর মিডিয়া ফোকাস নেই, এমনকি তরুণদের মধ্যে রাজনীতিকে ঘৃণা করার প্রবণতাও বিদ্যমান।

তাদের মনে কখনও কী প্রশ্ন জাগে, রাজনীতিতে তারুণ্যের অংশগ্রহণ কতখানি গুরুত্বপূর্ণ? ময়লা সাফ করতে চাইলে নর্দমায় নামতেই হয়। এক্ষেত্রে ভালো উদাহরণ হতে পারেন মাশরাফি বিন মর্তুজা। রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন আমরা সবাই চাই। তবে শুধু দাবি জানানো, ঘৃণায় মুখ ঘুরিয়ে থাকা বা ক্ষুব্ধ অনুভূতি ব্যক্ত করে তা সম্ভব নয়। নিজের অবস্থান থেকে সামর্থ্য অনুযায়ী কী করা যায় সেটা ভাবার বিষয় বৈকি। যারা তরুণদেরকে রাজনীতির খারাপ দিকগুলোই শুধু চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখায়, তাদের কানে মন্ত্র জপে 'দেশটা কারোর বাপের নয়', তারা কিন্তু কখনওই বলে না যে তরুণদেরই এখানে বেশি বেশি অংশগ্রহণ করতে হবে, পরিবর্তনের জন্য সক্রিয় হতে হবে, নিজেদের তৈরি করে ভবিষ্যতে নেতৃত্ব দিতে হবে। বিভ্রান্ত করার জন্য এধরনের কুৎসিত ভিডিও বানিয়ে উপস্থাপন খুব সহজ। এখানে আস্ত একটি প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের প্রতি ন্যূনতম দায়িত্বশীল হওয়ার প্রয়োজন তাদের কাছে নেই। যা আছে তা মোটাদাগে ভোটের হিসেব। সোশ্যাল মিডিয়া থেকে বার বার ৪৭ বছর আগের ইতিহাসে ফিরে যাচ্ছি, যুদ্ধাপরাধ নিয়ে কথা বলছি, দেশের সরকার ব্যবস্থায় গুণগত পরিবর্তন এবং উন্নয়ন যেখানে মুখ্য, বেকারদের কর্মসংস্থান এবং অন্যান্য সমস্যা ফোকাস না করে, সুশাসন নিয়ে কথা না বলে টেপ রেকর্ডারের মতো কেন একই বাজনা বাজাচ্ছি?

তাহলে বলি, তরুণদের উদ্দেশ্যে প্রায়ই যে প্রশ্নটি ছুঁড়ে দেওয়া হয়, 'বর্তমানের চিন্তা করে ভবিষ্যতে দেশ এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সমর্থন করো নাকি পুরনো অতীত অর্থাৎ মুক্তিযুদ্ধ, একাত্তর, পঁচাত্তর ইত্যাদি নিয়ে পড়ে থাকতে চাও? একটু খেয়াল করে দেখা যাক।

প্রশ্নটির মাধ্যমে খুব সুচতুরভাবে এগিয়ে যাবার প্রসঙ্গ তোলা হয়েছে বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে মূল ইতিহাসকে ধারণ করার কথা বাদ দিয়ে। কে বলেছে মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধুকে ধারণ করলে এগিয়ে যাওয়া যাবে না? বিশ্বের যত দেশ স্বাধীন হয়েছে অন্য রাষ্ট্রের দখলদারিত্ব থেকে তারা কেউই কিন্তু এভাবে বলে না। ইতিহাস অস্বীকার করে না কিংবা এই প্রশ্নে কোনওরকম বিভাজনের রাজনীতিতেও নেই। তাদের মধ্যে অভ্যন্তরীণ নীতিগত অনেক পার্থক্য থাকতে পারে কিন্তু নিজের দেশকে অন্তরে ধারণ করতে হলে যে মৌলিক চেতনাগুলো গভীরে প্রোথিত থাকতে হয় সেগুলো নিয়ে অন্তত দ্বিধায় ভোগে না। সবচে বড় কথা, বিশ্বের অন্য কোনও দেশে স্বীকৃত যুদ্ধাপরাধীদের অনুসারী হয়ে রাজনীতি করার সুযোগই রাখা হয়নি। গত দশ বছরের আগে ১৯৯৬-তে আরও এক টার্ম আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছিল। তখনও কিন্তু বলার মতো অর্জন কম ছিল না।

এবার যারা নতুন ভোটার তাদের অনেকের জন্মই হয়নি সেসময়। গঙ্গার পানি চুক্তি, পার্বত্য শান্তি চুক্তি, বঙ্গবন্ধু সেতু যা যমুনা সেতু নামেও পরিচিত (উত্তরবঙ্গের যোগাযোগব্যবস্থাই পালটে দিয়েছিলো), আর্মিদের দুইবেলা আমিষসহ ভাতের ব্যবস্থা, তলাবিহীন ঝুড়ি হিসেবে আখ্যায়িত বিদেশি সাহায্যনির্ভর অর্থনীতিতে স্বাবলম্বী করা, শিল্প ও কৃষিখাতে উন্নয়নসহ যথেষ্ঠ অবদান রেখেছিলো।

বর্তমান দুই টার্ম অর্থাৎ দশ বছরে এই সরকারের অর্জন নিয়ে লিখলে আলাদা করে লিখতে হবে। তবে ব্যক্তিগতভাবে আমার দৃষ্টিতে আওয়ামী সরকারের সবচে বড় অবদান আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে যুদ্ধাপরাধের বিচার এবং চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা। বিচার এখনও চলমান। সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার বিচারের রায় পেতেও অপেক্ষা করতে হয়েছে দীর্ঘ এক যুগেরও বেশি। দশ ট্রাক অস্ত্র মামলা এবং একুশে অগাস্টের হত্যাকাণ্ডের বিচার হয়েছে। বিশ্বজিতের হত্যাকারীরা রেহাই পায়নি। কিছু অপরাধের বিচার চলমান, কিছু ভবিষ্যতের জন্য অপেক্ষমান, কিছু ক্ষেত্রে ব্যর্থতা আছে। তো ইতিহাসকে সঙ্গী করেই দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায় এটা গত দশ বছরে প্রমাণিত। যারা এ নিয়ে কদাকার প্রশ্নটি করে, 'দেশটা কারোর বাপের নয়' বলে তরুণদেরকে বাস্তবতা বিবর্জিত ইউটোপিয়ায় নিয়ে যাবার আশ্বাস দেয় তাদেরকে আঙ্গুল তুলে সত্যিটা দেখিয়ে দেওয়া জরুরি।

যে তরুণরা এবারের নির্বাচনে প্রথম বার ভোট দিতে যাচ্ছে তাদের প্রত্যাশা অনেক বেশি। কেননা, তাদের  স্মৃতিতে আছে বিগত দশ বছরের আওয়ামী সরকারের কর্মকাণ্ড। অবাধ তথ্যপ্রবাহের তাদের পক্ষে প্রকৃত ইতিহাস জানা, পূর্বাপর সবগুলো সরকারের শাসন আমল কেমন ছিল, তাদের ইশতেহার, জনগণ বিশেষক করে তরুণদেরকে দেওয়া প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন কতখানি হয়েছে, তারুণ্যের চাওয়া-কে কতখানি পূর্ণ করেছে সবকিছুর তুলনামূলক চিত্র চাইলেই বের করে নেওয়া যায়। এই লেখায় সেগুলো আর সংযুক্ত করছি না। বিগত দশ বছরে বাংলাদেশের প্রতিটি সেক্টরে গ্রামে-শহরে-বন্দরে খুঁটিনাটি অনেক কাজ হয়েছে, বড়দাগে অবকাঠামোগত উন্নয়ন তো আছেই। দেড় কোটি কর্মসংস্থান, প্রতিবছর নিয়ম করে বিসিএস এবং অন্যান্য চাকরিতে নিয়োগ, দশটি নতুন ইকোনোমিক জোনও তৈরি হচ্ছে। হাইস্পিড ইন্টারনেট অজগাঁয়ে বসেও পাওয়া যায়। যে সুশাসন নিয়ে কথা হয়, যেটাকে ইস্যু করে বর্তমান আওয়ামী লীগের ইশতেহারে এবার দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ওপর যথেষ্ট গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে, ক্ষমতায় এলে বাস্তবায়নের সৎ চেষ্টা আমরা দেখতে পাবো এমন প্রত্যাশাই করি; উল্টোদিকে 'দেশ তোমার বাপের না" স্লোগান সংবলিত ভিডিও যারা তরুণদের জন্য তৈরি করেছে তাদের সময়কার 'সুশাসনে'র নমুনা সম্পর্কেও জেনে রাখা প্রয়োজন। ভোট দিতে হবে অংশগ্রহণকারী দলগুলোর ইতিবাচক-নেতিবাচক এবং অবশ্যই মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু ও যুদ্ধাপরাধ বিষয়ক অবস্থানকে আমলে নিয়েই। সেক্ষেত্রে দশ বছরে প্রায় ৭৫ ভাগ সফল শুধু আওয়ামী সরকারের দিকে তাকিয়ে বাকিদের সফলতা-ব্যর্থতা অনুধাবন করা যাবে না- এ কথা আগেই বলা হয়েছে। তরুণদের নিকট প্রতিটি রাজনৈতিক দলেরই তাদের স্ব স্ব সরকার ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় জনগণকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি, সার্বিক কর্মকাণ্ড ও অর্জন খতিয়ে দেখার অনুরোধ রইলো।

কথা হচ্ছিল ভোটের বাজারে সোশ্যাল মিডিয়ায় জামায়াত-শিবিরের পেইজ থেকে নৈতিকতাবিহীন প্রচারণা নিয়ে। এটা খুব ভয়ংকর যে নতুন ভোটারদেরকে তাদের পক্ষে নেবার জন্যই নেতিবাচক এ উপস্থাপন। তারুণ্যের মতো অসাধারণ সুন্দর একটি ধারণার সঙ্গে এরকম নোংরা ব্যাপার যায় না।

প্রিয় তারুণ্য, বিষয়টি আওয়ামী লীগ-বিএনপি-বাম ইত্যাদিতে সীমাবদ্ধ নয়। এমনকি পাঁচ বছর পর পর ক্ষমতার পালাবদলেও নয়। আমাদের ভাবতে হবে যে কেন মুক্তিযুদ্ধের ৪৭ বছরের পরেও তা নিয়ে বার বার কথা বলতে হয়। মুক্তিযুদ্ধ এবং বঙ্গবন্ধু আমাদের শেকড় এবং একইসাথে বাংলাদেশে পুনর্বাসিত যুদ্ধাপরাধী এবং তাদের মতাদর্শ সর্বাংশে বর্জনীয়। একাত্তরের যুদ্ধাপরাধ ইস্যু আমাদের দেশে ততদিনব্যাপী জ্বাজল্যমান থাকবে যতদিন না পর্যন্ত যুদ্ধাপরাধী এবং তাদের অনুসারী রাজনৈতিক সংগঠন এবং ছাত্রসংগঠন তথা জামায়াত-শিবির এবং তাদের সহযোগী, তাদের হয়ে কথা বলা, তাদেরকে প্রতিষ্ঠা করা লোকগুলো পাকিস্তানি মতাদর্শ ছড়িয়ে দিতে তৎপর থাকবে।

যুদ্ধাপরাধের বিভিন্ন অপব্যাখ্যা আজকাল তারা দেবার চেষ্টা করে। কিন্তু যুদ্ধাপরাধী বলতে সরাসরি পাকিস্তানি সৈন্যদের সহযোগী হয়ে যারা বাঙালিদের হত্যার তালিকা করেছিল, হত্যা-ধর্ষণ-লুটপাটে সহযোগিতা করেছিল তাদেরকে সর্বাগ্রে বিবেচনা করা হয়। এরপর অপরাধের ধরন বুঝে ধাপে ধাপে যুদ্ধাপরাধকে সংজ্ঞায়িত করার বিষয় থাকতে পারে। কিন্তু যুদ্ধাপরাধী এবং তাদের সহযোগীদের বিরুদ্ধে যারা দাঁড়িয়ে কথা বলে উলটো তাদের সম্পর্কে নানাবিধ অপপ্রচারের মাধ্যমে তরুণদেরকে ভ্রান্ত ধারণা দেবার চেষ্টা দৃষ্টিকটূভাবেই দৃশ্যমান।

এখানে কারোর দ্বারা প্রভাবিত না হয়ে সরাসরি তথ্যপ্রমাণসহ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ দাখিলের সুযোগ আছে, কেউ বানোয়াট তথ্য দিলে তাকে সরাসরি চ্যালেঞ্জ করা যেতে পারে। লড়াইটা কিন্তু সেই একাত্তরে পরাজিত পক্ষটির বিরুদ্ধে যারা আমাদেরই পূর্বপুরুষের কাছে হেরে গিয়েছিল। এ দু'য়ের মধ্যকার কোনো বিন্দু নেই যেখানে দাঁড়িয়ে সুবিধামতো যে কোনো দিকে মাথা ঘুরানো যায়। বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযোদ্ধা নাকি পরাজিত রাজাকার?- তরুণ প্রজন্ম চিৎকার করে জানিয়ে দিক তারা কার উত্তরসূরী। জানিয়ে দিক যুদ্ধাপরাধী এবং তাদের আশ্রয়দানকারীদের তারা কিছুতেই গ্রহণ করবে না। সোশ্যাল মিডিয়ায় 'দেশটা কারোর বাপের না' দেখে পূর্বপুরুষের বলিদান যদি তারা ভুলে তাহলে সে দায় তাদেরকেই কড়ায়গণ্ডায় চুকাতে হবে। তরুণদের প্রথম ভোট হোক মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে; বিজয়ের মাসে আবার নিশ্চিত হোক যে গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসকে হৃদয়ে ধারণ করেই দেশকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়।