ড. কামালের খামোশ হুঙ্কার: স্তব্ধ স্মৃতিসৌধ

অজয় দাশগুপ্তঅজয় দাশগুপ্ত
Published : 16 Dec 2018, 01:25 PM
Updated : 16 Dec 2018, 01:25 PM
এক সাথে দুটো ঘটনা দেখলাম মিডিয়ায়। প্রথমটি হামলার আগে। বাকীটা হামলার পরের। প্রথমটায় ড. কামাল হোসেন খুব উত্তেজিত। তিনি গিয়েছিলেন জাতীয় স্মৃতিসৌধে। ঐক্যফ্রন্টের নেতারা সেখানে যাবেন এটাই স্বাভাবিক। এই সৌধ জাতির সকলের। এরা আমাদের জাতির বীর ও পবিত্র সন্তান। যাদের রক্তধারায় শুদ্ধ হয়েছিল এই মাটি।
রায়ের বাজার ঢাকা থেকে খুব বেশি দূরে না। তখনকার এই নির্জন জায়গাটিকে বেছে নিয়েছিলো পাক হানাদার বাহিনী ও তার দোসরেরা। ইতিহাস জানে রাও ফরমান আলীর পরিকল্পনায় বিদেশে পালিয়ে থাকা ঘাতক চৌধুরী মঈনুদ্দীনসহ দালালেরা মিলে আমাদের সেরা সন্তানদের তালিকা করে তাদের ধরে নিয়ে গিয়েছিল। ইসলামী ছাত্রসংঘের তখনকার নেতা ফাঁসিতে যাওয়া নিজামী ছিল এই বাহিনীর হোতা। তারা আমাদের শহীদ বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে মেধাশূন্য করতে চেয়েছিল। সে বাস্তবতা কাটিয়ে বাংলাদেশ আজ নিজের পায়ে দাঁড়ালেও ইতিহাসের এই ঘাতকদল মাঠ ছাড়েনি। নামে বেনামে তাদের ষড়যন্ত্র চলছে।
স্মৃতিসৌধে যাওয়া সাংবাদিক মিডিয়া বা সাধারণ মানুষের মনে মনে যে ঘৃণা আর ক্রোধ তার বাইরে জামায়াত থাকবে না এটাই স্বাভাবিক। একথা মানতে হবে পদ্মার পানিতে যেমন অনেক ঢেউ গড়িয়েছে তেমনি অনেক বিষয়ে দেশ ও জাতিতে ব্যাপক পরিবর্তনও এসেছে। তার মানে এই না যে, আমাদের ইতিহাস বা অতীতের গর্ব নিয়ে ছিনিমিনি খেলা জায়েজ। এইদেশ পঁচাত্তর থেকে ছিয়ানব্বই পর্যন্ত নানাভাবে পাকি কায়দায় শাসিত হবার কারণে একসময় মানুষ বিভ্রান্ত হয়ে পড়েছিল তারপর ও তারা আবার গদিতে আসে আর হত্যা ও ষড়যন্ত্রের রাজনীতি চালু রাখে।
কিন্তু ইতিহাস বা সময় ছেড়ে কথা বলেনি। তাই বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়িয়ে তাদের কাউকে কাউকে বিচারের মুখোমুখি করেছে। দিয়েছে চরম শাস্তি। আমি বিশ্বাস করি, এই কারণে শেখ হাসিনার প্রতি অন্ধ আক্রোশ আছে কিছু মানুষের। তার ব্যক্তিগত বিরোধী বা দলছুট নেতারা এর সুযোগ নিয়ে দেশের মানুষকে বিভ্রান্ত করতে চায়। যার এখন পুরোভাগে আছেন ড. কামাল হোসেন। তিনি ঐক্যফ্রন্টের হয়ে স্মৃতিসৌধে গিয়েছিলেন- ভালো কথা। যে সাংবাদিক যে তরুণ তাকে সহজ প্রশ্নটি করেছিল তার উত্তর কেন তিনি সহজ ভাবে দিতে পারলেন না? তার কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল নিবন্ধন বাতিল হয়ে যাওয়া জামায়াত কী নির্বাচন করছে?  করলে কী ভাবে?  দেখলাম বয়সী কামাল হোসেন প্রচণ্ড রেগে গিয়ে যুবকটিকে বলছেন, তাকে এ ধরনের প্রশ্ন করার জন্য কত টাকা দেয়া হয়েছে। এখানেই শেষ না। এতবড় একজন আইনজীবী দেশের সম্মানিত মানুষ একটি নিরীহ সাংবাদিককে বলছেন, নাম জেনে রাখলাম। দেখে নেব। খামোশ।
লজ্জায় মাথা হেঁট হয়ে যায়। আইনজীবীদের শিরোমনি যদি এভাবে থ্রেট করে কথা বলেন মানুষ যাবে কোথায়? প্রশ্ন পছন্দ না হলে কিংবা আপত্তি থাকলে তিনি তা ভালোভাবেই জানাতে পারতেন। বলতে পারতেন, আমি এর উত্তর দেব না। এই যে তিনি বললেন, শহীদ মিনারে এসেছো। শহীদদের সম্মান করো। এর মানে কী? শহীদদের তো তিনিই অপমান করলেন। তাদের রক্তপিপাসু ঘাতক দলের নাম শুনলেই রেগে যেতে হবে? একেই কী বলে, ঠাকুর ঘরে কে রে? আমি কলা খাইনা।
কামাল হোসেন সাহেবরা ভালো জানেন তাদের আঁতাত কার সাথে। বিএনপি ও জামায়াত যে একছত্রে, এক সূত্রে গাঁথা- এটা তারা জানেন বলেই রেগে গেছেন। হিতাহিত জ্ঞান শূন্য হয়ে স্মৃতিসৌধ কে বলছেন শহিদ মিনার। যে নেতা সৌধ আর মিনারের তফাৎ বোঝেননা তাঁর কাছে শহিদের স্মৃতি কতটুকু নিরাপদ?
সামনে নির্বাচন। নির্বাচনের আগে কিসের জোরে কোন বলে তারা এমন মারমুখি আচরণ করছেন? মানুষতো নির্বাচনের সময় নরম নেতাদের কোমল রুপ দেখতে অভ্যস্ত। তারা অন্যসময় রাগ করলেও এসময় নরম থাকেন। ভোটের আশা থাকলে এমন আচরণ এমন উগ্রতা মানায়না। আমরা তাই ধরে নিতে পারি এর ভেতর কোন কিছু রহস্য আছে। যা এখন বোঝা না গেলেও পরে টের পাওয়া যাবে। দেশের স্বাধীনতা সাতচল্লিশ বছরে দাঁড়ালেও দিকভ্রান্ত নেতাদের আচরণে এখনো বালখিল্যতা আর দেশপ্রেম নিয়ে সংশয় আছে।
এরপর দেখলাম ফেরার পথে তার গাড়িবহরে নাকি হামলা হয়েছে। আহত হয়েছেন আ স ম রবের ড্রাইভার। যারাই হামলা করুক বেচারী নিরীহ ড্রাইভারের জন্য মায়া লাগছে। স্বাভাবিকভাবেই এর দায় যাবে সরকারী দলের কাঁধে। তাদের অতি উৎসাহী ক্যাডারেরা হামলা করলেও করতে পারে। যা কোনওভাবেই সমর্থনযোগ্য না। আবার রাজনীতির খেলায় নিজেরা হামলা করে সহানুভূতি কুড়ানোর চেষ্টা ও বাদ দেয়া যাবেনা। যে ভাবেই হোক হামলা বাদ দিতে হবে। এর মাধ্যমে সবার অকল্যাণ আর নির্বাচনের বারোটা বাজানো ছাড়া কিছু নাই।
ড. কামাল হোসেনর আচরণে মর্মাহত হবার পাশাপাশি মনে হলো সাধে কী শাস্ত্রে বলেছে- চল্লিশের পর বানপ্রস্থে যাবার কথা। কোন বয়সে ত্যাগ করতে  হয়  আর কোন বয়সে বাড়িতে থেকে সম্মান পেতে হয় সেটাও গুলিয়ে ফেলেছে রাজনীতি। ড. কামাল হোসেনের 'বাচ্চা সাংবাদিক'কে দেখে নেয়ার আস্ফালনে স্তব্ধ স্মৃতিসৌধ কী ভাবছিলো জানিনা। তবে শহীদের আত্মা নিশ্চয়ই মনে মনে বলছিলো: এ জন্যেই কী আমরা প্রাণ দিয়েছিলাম? যেমনটা গয়েশ্বর বলেছিল এক সভায়। শহীদরা নাকি 'বোকা মানুষ'। নাহলে তারা কেন চৌদ্দ ডিসেম্বর বাড়িতে বসে ছিলেন। কেন তারা যুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বেতনে চলতেন? ধারণাটা এই সেসময় গয়েশ্বরের বাবার টাকা চালু ছিল দেশে। এই রাজনীতির উত্তরাধিকার বহন করতে হলে এমন অপ্রস্তুত হতেই হবে ড. কামাল হোসেন। বাকি চয়েস আপনার।