সবুজ অর্থনীতি ও বাংলাদেশে সিডিএম

দানেশ মিয়া
Published : 1 Dec 2013, 10:02 AM
Updated : 21 June 2012, 02:21 PM

পৃথিবীর সাম্প্রতিক সামষ্টিক দুর্বল অর্থনীতি এবং বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন পৃথিবীর জীবকূলকে হুমকীর মধ্যে ফেলে দিয়েছে। শিল্পবিপ্লবের পর থেকে পৃথিবীর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং তার অনিবার্য ফলশ্রুতিতে গ্রীনহাউজ গ্যাস নির্গমন বৈশ্বিক পরিবেশকে শংকিত করে দিয়েছে। পৃথিবী এখন চেষ্টা করছে মন্দা কাটিয়ে উঠে দাঁড়ানোর । এই উঠে দাঁড়ানোয় পরিবেশ সম্মত টেকসই উন্নয়নের কথাই ভাবছে সবাই। আর এই উন্নয়নে 'সবুজ অর্থনীতি'ই হতে পারে প্রাণশক্তি।

এবারের বিশ্ব পরিবেশ দিবস ২০১২ এর মূল স্লোগান ছিল 'সবুজ অর্থনীতি: আপনি কি তাতে অন্তর্ভূক্ত আছেন?'। জাতিসংঘ পরিবেশ কর্মসূচী (ইউনেপ) সবুজ অর্থনীতিকে এভাবে বোঝাতে চায় যে, "সবুজ অর্থনীতি হচ্ছে এমন এক অর্থনীতি, যা মানব কল্যাণ ও সামাজিক বৈষম্য নিরসনে কাজ করে, পাশাপাশি পরিবেশগত শংকা ও বিপদের সম্ভাবনা কমিয়ে দেয়"। পৃথিবীব্যাপী সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, সবুজ অর্থনীতি অত্যন্ত স্বল্প কার্বনে উন্নয়ন করতে সক্ষম, সম্পদের যথাযথ ব্যবহার এবং সমাজকে তাতে সংশ্লিষ্ট করতে পারে সহজেই। বিশ্বব্যাপী ভোগ বিলাসের যে অর্থনীতি আমরা গত কয়েকশ বছর চালিয়েছি, তাতে পৃথিবীর পরিবেশ প্রতিবেশকে ব্যাপকভাবে অগ্রাহ্য করা হয়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে, ১৯৮১-২০০৫ এর মধ্যে বৈশ্বিক জিডিপি প্রায় দ্বিগুন হয়েছে, কিন্তু তাতে পৃথিবীর প্রতিবেশের প্রায় ৬০% ক্ষয়প্রাপ্ত হয়েছে কিংবা তার ব্যাপক অপব্যবহার করা হয়েছে। এক হিসেবে দেখা গেছে, গত ৪০ বছরে পৃথিবীর সম্পদের উপড় মানুষের চাহিদা দ্বিগুণ হয়েছে যা পৃথিবীর মোট উৎপাদনশীলতা সীমার বাইরে প্রায় ৩০% ভাগ বেশী। বর্তমানে পৃথিবীব্যাপী যে হারে (বছর প্রতি ৪২ গিগাটন কার্বন-ডাই-অক্রাইড ইকুইভ্যালেন্ট) গ্রীনহাউজ গ্যাস নির্গমন হচ্ছে, তা বায়ুমন্ডলের স্বাভাবিক ধারণক্ষমতার চেয়ে প্রায় ৫ গুণ বেশী। একজন মানুষের যে পরিমান ভার বহন করার ক্ষমতা আছে, তাকে যদি তার ক্ষমতার ৩০% ভাগ বেশী বহন করতে দেয়া হয়, তাহলে যে পরিস্থিতি তৈরি হবে, বর্তমান পৃথিবীকেও তার ক্ষমতার থেকে অধিক ভার বহন করতে দিয়ে একই রকম পরিস্থিতির সম্মুখীন করেছি আমরা। সবুজ অর্থনীতির ধারণা আমাদেরকে এই বিপদসংকুল পরিস্থিতি থেকে উদ্ধার পাওয়ার সবুজ সংকেত দিচ্ছে। যথার্থ বিনিয়োগই পারবে এই সবুজ অর্থনীতিকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে। এই বিনিয়োগ হবে প্রাকৃতিক মূলধনের উপড় এবং শক্তি ও সম্পদ ব্যবহারে দক্ষতা বৃদ্ধিকরনের উপড়। কৃষি, বন, মৎস্য ও পানির উপড় পর্যাপ্ত বিনিয়োগই পারবে সবুজ অর্থনীতির বেশীরভাগ যোগান দিতে। তাছাড়া নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহার, বর্জ্য পূনঃব্যবহার, দালান কোঠা নির্মান, যানবাহন, পর্যটন ও শহর বিনির্মাণ খাতে প্রচুর সম্ভাবনা আছে সবুজ অর্থনীতির যোগানদাতা হিসেবে।

বাংলাদেশ একটি স্বল্পোন্নত দেশ হলেও গত দুই দশক ধরে জিডিপির একটি উন্নয়নশীল ধারা বজায় রেখেছে, যা প্রশংসাসূচক। পৃথিবীর উন্নয়নের ইতিহাস বলে, কোন উন্নয়নশীল দেশ যখন দ্রুত জিডিপির অগ্রগতি অর্জন করে, তখন একটা পর্যায় পর্যন্ত উন্নয়ন কর্মকাণ্ডগুলো পরিবেশের সুস্থ্যতার কথা ভাবার ফুরসত পায় না। পরিবেশের সুস্থ্যতা বজায় রেখে উন্নয়ন করার বিষয়টি তখন গৌণ হয়ে যায়। উন্নয়ন ইতিহাস থেকে আমরা তাও জানি যে, জিডিপি উন্নয়নের একটি পর্যায়ে একটি দেশের মোড় ঘুরতে থাকে অর্থনীতির অদৃশ্য শক্তির কারনেই। আর তখন পরিবেশের কথা সবাই ভাবতে বাধ্য হয়। আজকের অনেক উন্নত দেশগুলোকেই সেসব পর্যায় পার করতে হয়েছে। অর্থনীতির মোড় নেয়ার ওই পর্যায়ে যেতে পৃথিবীর অনেক উন্নত দেশের মাথাপিছু জিডিপি পরিবেশের নিয়ামক ভেদে ৪০০০ থেকে ৩৫০০০ মার্কিন ডলার পর্যন্ত হতে হয়েছে। বাংলাদেশের বর্তমান মাথাপিছু জিডিপি হচ্ছে প্রায় ১৭০০ মার্কিন ডলার। অর্থনীতির স্বাভাবিক সেই মোড় পর্যন্ত পৌঁছাতে আরো একশত বছর বাংলাদেশের জন্য যথেষ্ঠ কিনা, তা সামষ্টিক অর্থনীতিবিদরা বলতে পারবেন। তবে এটা বলা যায়, যদি আমরা আমাদের দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতিতে পরিবেশের সুস্থ্যতাকে এখনি সংশ্লিষ্ট না করে সেই 'মোড়ে' পৌঁছানোর স্বপ্নে বিভোর থাকি, ততদিনে আমাদের পরিবেশের সবকিছুই শেষ হয়ে যাবে; আমরা আমাদের পরবর্তী বংশধরদের জন্য কিছুই রেখে যেতে পারবো না। ইতিমধ্যেই, বনধ্বংস, জীববৈচিত্র্য ক্ষয়প্রাপ্ত হওয়া, পানি ও মাটি দূষণ, বর্জ্য অপসারনে সমস্যা, খাদ্যে নিরাপত্তাহীনতা এবং সামাজিক অসমতা লক্ষ্য করছি। তাছাড়া, বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে পৃথিবীর সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ একটি দেশ। এখনই যথেষ্ঠ সচেতন না হলে বাংলাদেশে পরিবেশের বিপর্যয় অবশ্যম্ভাবী। এর থেকে বাঁচার জন্য 'সবুজ অর্থনীতি'তে প্রবেশ করা ছাড়া বাংলাদেশের আর কোন উপায় নেই। গবেষণায় দেখা গেছে, সবুজ অর্থনীতিতে খুব দ্রুত প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়। এই অর্থনীতি দারিদ্র্য বিমোচনে কাজ করে এবং শক্তি ও সম্পদের যথাযথ ব্যবহারকে নিশ্চিত করে। এর মাধ্যমে স্বল্পমেয়াদী ও দীর্ঘমেয়াদী চাকুরীর ক্ষেত্র তৈরি হতে পারে। পাশাপাশি এটি গ্রীনহাউজ গ্যাস নির্গমনকে হ্রাস করতে পারে।

বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন ঠেকানোর কোন কমিটমেন্ট বাংলাদেশের না থাকলেও কিয়োটো প্রটোকলের সদস্যদেশ হিসেবে কিছু নৈতিক দায়িত্ব থেকেই যায়। দায়ী দেশগুলোর সাথে সহযোগিতামূলক কিছু কর্মকাণ্ড আমাদের সেই দায়বদ্ধতা প্রকাশ করতে পারে। শুধু দায়বদ্ধতাই নয়, বাংলাদেশের সবুজ অর্থনীতিতেও এটি বিরাট নিয়ামক হিসাবে কাজ করতে পারে। সেই সহযোগীতামূলক কর্মকাণ্ডের মধ্যে সিডিএম (ক্লিন ডেপলপমেন্ট মেকানিজম) এখনো পর্যন্ত অন্যতম। সিডিএম হচ্ছে এমন একটি কার্যকরী কৌশল যাতে বিশ্বের শিল্পোন্নত দেশের (এনেক্স ১) সাথে দরিদ্র দেশগুলোর (নন-এনেক্স ১) কার্বনের একটি ব্যবসায়ের সম্পর্ক সৃষ্টি করা হয়েছে, যার মূল লক্ষ্য হচ্ছে দরিদ্র দেশগুলোতে 'টেকসই উন্নয়ন' অর্জন করতে সহযোগিতা করা। এই কৌশলটি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে কিউটো প্রটোকল এর ১২ নম্বর ধারা অনুসারে। সিডিএম এর মাধ্যমে উন্নত দেশগুলোর কার্বন নির্গমন কমানোর যে টার্গেট আছে তা পূরণ করার উদ্দেশ্যে এনেক্স ১ দেশগুলো নন-এনেক্স ১ দেশগুলো থেকে 'কার্বন নির্গমন কমানো'র প্রকল্পের মাধ্যমে 'সনদপ্রাপ্ত কার্বন নির্গমন কমানো' ক্রয় করতে পারবে। তবে এই 'সনদপ্রাপ্ত কার্বন নির্গমন কমানো' হতে হবে বাস্তবসম্মত, গণনাযোগ্য এবং বর্তমান কার্বন নির্গমন কমানো'র অতিরিক্ত। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নন-এনেক্স ১ দেশগুলো যে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করবে তা দিয়ে সে দেশের টেকসই উন্নযন অর্জন করা যাবে বলে ধারণা করা যায়।

বাংলাদেশে এ পর্যন্ত দুটি বৃহৎ পরিসরের সিডিএম প্রকল্প অনুমোদিত হয়েছে। দুটি প্রকল্পই শক্তি সংক্রান্ত। ২০০৫ সনে কার্যকরী হওয়া সিডিএম মেকানিজমে সারাদেশে কেবল মাত্র দুটি প্রকল্পের অনুমোদন পাওয়া সিডিএম বিষয়ক আমাদের সচেতনতা ও দক্ষতার স্বল্পতাই প্রকাশ করে। অথচ আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে এ পর্যন্ত ক্ষুদ্র ও বৃহৎ পরিসরের অসংখ্য সিডিএম প্রকল্প অনুমোদিত হয়েছে। ভারত শুধু শক্তি বিষয়ক প্রকল্পই নয়, বায়োগ্যাস, শক্তি ব্যবহারে দক্ষতা বৃদ্ধি, কম দক্ষ জ্বালানি থেকে বেশি দক্ষ জ্বালানিতে স্থানান্তর, হাইড্রোফ্লোরোকার্বন কমানো, জল বিদ্যুৎ, অন্যান্য নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার, বিভিন্ন শিল্পের প্রক্রিয়ার পরিবর্তন, অব্যাবহৃত গ্যাস ও তাপের ব্যবহার, এবং বায়ুশক্তি বিষয়ক প্রচুর সংখ্যক প্রকল্পে হাত দিয়েছে। যার মাধ্যমে নির্দিষ্ট এনেক্স ১ দেশগুলো প্রতিবছর ভারত থেকে কোটি কোটি ডলারের 'সনদপ্রাপ্ত কার্বন নির্গমন কমানো' কিনে নিচ্ছে। অথচ বাংলাদেশ এ বিষয়ে তেমন কিছুই করতে পারেনি। এর পিছনের একমাত্র কারণ হচ্ছে সিডিএম বিষয়ে আমাদের অস্পষ্ট ধারণা। নীতিনির্ধারক মহল থেকে শুরু করে প্রত্যেকটি পর্যায়ে এটিকে একটি দুর্বোধ্য ও জটিল বিষয় হিসেবে মনে করা হচ্ছে। কখনো কখনো এই বিষয়ে খন্ডিত ধারণা তৈরি হয়েছে। অথচ ভারতে অনুমোদিত উপরোক্ত প্রত্যেকটি ক্ষেত্রেই বাংলাদেশেও সিডিএম প্রকল্প নেয়া সম্ভব। সিডিএম প্রকল্পের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের কৃষি ও বন সেক্টরও যে একটি বৃহৎ ভূমিকা পালন করতে পারে সেক্ষেত্রে আমাদের ধারণার অস্পষ্টতাও এখানে উল্লেখযোগ্য। এজন্য বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক গবেষণার মাধ্যমে যে অনুমোদিত একটি ভিত্তি তৈরি করার কথা তার তেমন কিছুই বাংলাদেশে হয়নি। নতুন বন সৃজন এবং বন পূনঃসৃজন বাংলাদেশে বৃহৎ এবং ক্ষুদ্র পরিসরের অনেক প্রকল্প হতে পারে।

কার্বন সংক্রান্ত বিশ্বব্যাপী যে বাজার ব্যবস্থার ছক তৈরি করা হয়েছে এবং এতে ক্রেতা ও বিক্রেতা হওয়ার যে পূর্বশর্ত এবং নিয়মনীতি নির্ধারণ করা হয়েছে, তা আপাত দৃষ্টিতে একটু দুর্বোধ্য বটে। আর এজন্যই নন-এনেক্স ১ দেশগুলোতে এমনকি এনেক্স ১ দেশগুলোতেও এ বিষয়ে ব্যাপক প্রচারণা ও দক্ষতা বাড়ানোর কাজ হয়েছে। বিশেষ করে রাষ্ট্রীয় নীতিনির্ধারক ও জলবায়ু বিষয়ক গবেষকদের মধ্যে এই ধারণাটি স্পষ্ট করার ব্যাপক কাজ হয়েছে। এক্ষেত্রে গণমাধ্যমগুলোও ব্যাপক ভূমিকা রেখেছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে বাংলাদেশে এ নিয়ে তেমন কোন সুস্পষ্ট প্রচেষ্টা চোখে পড়েনি। তবে এটি স্পষ্ট করে বলা যায়, সিডিএম-এর মাধ্যমে বাংলাদেশে কার্বনের বাণিজ্যে ব্যাপকভাবে অংশগ্রহণ করার সুযোগ রয়েছে। কারণ এই বাণিজ্যে বিক্রেতা হওয়ার যে পূর্বশর্ত তার অনেকগুলোই বাংলাদেশের আছে। আর এই বাণিজ্যের মাধ্যমে অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রা আমাদের সবুজ অর্থনীতিতে অনিবার্যভাবেই 'টেকসই উন্নয়ন'-এ ব্যাপক ভূমিকা রাখতে পারে।

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রতিক্রিয়া এবং পরিবেশ বিপর্যয়ের যে দুর্যোগ আমাদের দেশে ধেয়ে আসছে এবং তার ধ্বংস থেকে কাটিয়ে উঠার জন্য আমরা পৃথিবীর উন্নত দেশে যে ক্ষতিপূরণের ডাক দিয়েছি, সেটা অবশ্যই আমরা চাই। কিন্তু এই জলবায়ু পরিবর্তন ঠেকাতে যে কার্বনের ব্যবসায়ের কথা বলা হচ্ছে, সেটাতেও আমরা অংশগ্রহণ করতে চাই। এতে রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের জলবায়ু পরিবর্তন ঠেকাতে যে বৈশ্বিক প্রচেষ্টা তাতেও আমরা শামিল হতে পারব এবং আমাদের দায়িত্ব পালন করতে পারব। কিন্তু এখনই আমাদের যা দরকার তা হচ্ছে, বাংলাদেশে সবুজ অর্থনীতি বিনির্মানের জন্য সম্ভাব্য স্থানগুলোকে চিহ্নিত করে বিনিয়োগের ডাক দিতে হবে সর্বতোভাবে। এর মধ্যে সিডিএম-এর দুর্বোধ্যতা হ্রাস করার জন্য বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানের সেমিনার, সিম্পোজিয়াম, ওয়ার্কশপ এবং ট্রেইনিং প্রোগ্রামের ব্যবস্থা করতে হবে। সর্বোপরী গণমাধ্যমগুলোকে এ বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টিতে এগিয়ে আসতে হবে।

ড. দানেশ মিয়া: অধ্যাপক, বনবিদ্যা ও পরিবেশবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।