একটি দুর্বল বিরোধী দলের বিকল্প নেই

শামস্ রহমানশামস্ রহমান
Published : 2 Dec 2018, 01:02 PM
Updated : 2 Dec 2018, 01:02 PM

বিশ্বজুড়ে গণতন্ত্রের পণ্ডিতদের মতে, একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের সুষ্ঠু পরিচালনার জন্য একটি স্বচ্ছ, জবাবদিহিতাপূর্ণ সরকার বা সরকারী দলের যেমন প্রয়োজন, তেমনি প্রয়োজন একটি শক্তিশালী বিরোধী দলের। তাতে, রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণে পরিলক্ষিত হবে ভারসাম্য ও স্বচ্ছতা এবং প্রতিষ্ঠিত হবে আইনের শাসন। আর এই উৎকর্ষ চক্রের প্রক্রিয়ায় রাষ্ট্র ধাপে ধাপে অর্থনৈতিক ও সামাজিক সমৃদ্ধির পথে হাঁটবে।

বাংলাদেশের বহু কলামনিস্ট, রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও গবেষক, সেই সাথে সুধীজনেরাও একই ধারণা পোষণ করে থাকেন। প্রশ্ন হচ্ছে – পশ্চিমা উন্নত গণতান্ত্রিক দেশের জন্য যা যথোচিত, তা কী বাংলাদেশ তথা তৃতীয় বিশ্বের  উন্নয়নশীল দেশের জন্যও একইভাবে প্রযোজ্য? সমভাবে ভাবার ভাবনাটা একটু বুকিশ নয় কি?

প্রশ্ন হচ্ছে – উন্নত গণতান্ত্রিক দেশের সরকারী দল (বা সরকার) ও বিরোধী দলের রাজনৈতিক চরিত্রের সাথে কি বাংলাদেশের সরকার ও বিরোধী দলের রাজনৈতিক চরিত্রের তুলনা চলে? এর উত্তর যদি নেতিবাচক হয়, তাহলে বাংলাদেশের উন্নয়নের পথে গণতান্ত্রিক চিত্রের রূপ ভিন্ন হওয়াটাই  স্বাভাবিক। মোটাদাগে, বিরোধী দল হিসেবে বিএনপির রাজনৈতিক মূল্যবোধ বাংলাদেশের স্বাধীকার আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের ধাপে ধাপে গড়ে উঠা জাতীয় দিকনির্দেশনার সাথে সংঘাতপূর্ণ। আর এ বিষয়টিই বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন এবং সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক পরিবেশ সৃষ্টি ও চর্চায় সবচেয়ে বড় অন্তরায়। সঙ্গত কারণেই, আজকের বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে একটি শক্তিশালী নয়, বরঞ্চ পার্লামেন্টের ভিতরে এবং বাইরে একটি দুর্বল বিরোধী দল একান্ত কাম্য। তবে এই প্রস্তাব বিশ্লেষণের দাবি রাখে।

সমকালে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর মাঝে ব্যাপক উন্নতি লাভ করেছে এমন দেশের প্রসঙ্গ এলে, বাংলাদেশের মানুষ সচরাচর মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর বা চীনের উদাহরণ দিয়ে থাকে। প্রশ্ন হচ্ছে – আমরা কতুটুকু জানি এই দেশগুলির শাসন ব্যবস্থা সম্পর্কে? মানে জন্মলগ্ন থেকে এই দেশগুলো কিভাবে পরিচালিত হয়েছে রাজনৈতিকভাবে?

মালয়েশিয়ার কথাই ধরা যাক। এই দেশটি ১৯৫৫ থেকে পরবর্তী প্রায় ৬১ বছর একমাত্র 'বারিসান ন্যাশনাল' দল দ্বারা পরিচালিত এবং শাসিত হয়েছে একটি দুর্বল বিরোধী দলের বা জোটের বিপরীতে। আধুনিক মালয়েশিয়ার প্রসঙ্গ এলেই চলে আসে  মাহাথির মোহাম্মদের নাম এবং তার শাসনামল। তিনি ১৯৮১ থেকে ২০০৩ পর্যন্ত একটানা ২৪ বছর প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন একটি দুর্বল জোটের বিরুদ্ধে। তার শাসনামলে মালয়েশিয়া শিক্ষা, বিজ্ঞান ও কারিগরি ক্ষেত্রে একটি আধুনিক এবং অর্থনীতিতে একটি সমৃদ্ধ রাষ্ট্রে রূপান্তরিত হয়।

এবার সিঙ্গাপুরের প্রসঙ্গ। ১৯৫৯ সনে লি কুয়াং ইউ'এর নেতৃত্বে ক্ষমতায় আসে পিউপলস্‌ অ্যাকশন পার্টি। একটানা ১৯৮৪ পর্যন্ত দেশ শাসন করে পার্লামেন্টে বিরোধী দলীয় কোনও প্রতিনিধি ছাড়াই। তারপর থেকে এক-দুইজন করে সাংসদ বিরোধী দলের প্রতিনিধিত্ব করে এবং বর্তমানে ৮৯ আসনের পার্লামেন্টে বিরোধী দলের প্রতিনিধি মাত্র ছয় জন সাংসদ। পার্লামেন্টের ভিতরে এবং বাইরে একটি দুর্বল বিরোধী দলের প্রেক্ষাপটে লি কুয়াং ইউ তার রাজনৈতিক দূরদর্শিতার মাঝে প্রাকৃতিক সম্পদবিহীন সিঙ্গাপুরকে তৃতীয় বিশ্বের একটি দেশ থেকে গড়ে তুলেন একটি প্রথম বিশ্বের রাষ্ট্রে।

গত দশ বছরে বাংলাদেশে কী দেখেছি আমরা? ২০০৯ এর নির্বাচনে বিএনপি পার্লামেন্টের ভিতরে নিজ দলের বা জোটের প্রতিনিধিত্বের মাপকাঠিতে অপেক্ষাকৃত একটি দুর্বল বিরোধী দলে পরিণত হয়। তবে, পার্লামেন্টের বাইরে তারা তখনও যথেষ্ট শক্তিশালী। তাই তারা ধর্মঘট, হরতাল থেকে শুরু করে নানা ধরনের জ্বালাও পোড়াও তৎপরতায় লিপ্ত থাকে। অবশ্য সরকারের শক্ত হস্তক্ষেপে তা ধীরে ধীরে সংকোচিত হয়ে আসে। আর ২০১৪ তে বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার ফলে এরশাদ এবং রওশন এরশাদের জাতীয় পার্টি সংসদে বিরোধী দলের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়। বিএনপি'র অনুপস্থিতিতে জাতীয় পার্টি সংসদে যে ভুমিকা পালন করে তা বিএনপি থেকেও দুর্বল। সেই সময়ে, মানে গত দশবছরে, পার্লামেন্টে একটি  শক্তিশালী বিরোধী দলের অবর্তমানে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশে অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নতি সাধিত হয়।

বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে, বিরোধী দল পার্লামেন্টের ভিতরে এবং বাইরে যত দুর্বল হয়েছে, বাংলাদেশের অর্থনীতি তত বেশি শক্তিশালী হয়ে উঠে। এই দাবিটি জিডিপির মাপকাঠিতেই দেখা যাক। বিশ্ব ব্যাংকের হিসেব অনুযায়ী, ২০০৯ এ আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রীয় পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণের এক বছরের মাথায় জিডিপি হার দাঁড়ায় ৫ দশমিক ০৪৫ শতাংশ। ২০১০ এ তা বেড়ে দাঁড়ায় ৫ দশমিক ৫৭২ শতাংশে। ২০১১ এবং ২০১২তে তা বৃদ্ধি পেয়ে যথাক্রমে ৬ দশমিক ৪৬৪ এবং ৬ দশমিক ৫২১ শতাংশে এসে দাঁড়ায়। ঠিক একইভাবে জিডিপি হার ক্রমাগত বৃদ্ধি পেতে থাকে যা ২০১৫ তে দাঁড়ায় ৬ দশমিক ৫৫৩ শতাংশে, ২০১৬ তে ৭ দশমিক ১১৩ শতাংশে এবং ২০১৭ তে ৭ দশমিক ২৮৪ শতাংশে। সেই সাথে, বিশ্ব ব্যাংকের ভবিষ্যতবাণী অনুযায়ী ২০১৮ তে বাংলাদেশের জিডিপির হার বেড়ে দাঁড়াবে ৭ দশমিক ৩ শতাংশে। শুধু তাই নয়, অর্থনীতির চাকা এই ভাবে চলতে থাকলে আজকের অর্থনীতির পরিমাণ ৩০০ বিলিয়ন ডলার থেকে বেড়ে দ্বিগুণের বেশি হয়ে ২০৩০ এ এসে তা দাঁড়াবে ৭০০ বিলিয়ন ডলারে (https://data.worldbank.org/indicator/NY.GDP.MKTP.KD.ZG?locations=BD) ।

তাহলে এটা প্রতীয়মান যে, গত দশ বছরে বিরোধী দল পার্লামেন্টের ভিতরে এবং বাইরে যতো দুর্বল হয়েছে, বাংলাদেশের অর্থনীতি তত বেশি শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। সঙ্গত কারণেই, মালয়েশিয়ার মাহাথিরের কিংবা সিঙ্গাপুরের লি কুয়ান ইউ এর মতো বাংলাদেশেও উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষায় এই মুহূর্তে শেখ হাসিনার সরকারের ধারাবাহিকতার বিকল্প নেই।

উল্লেখ্য, ২০১৩ – ২০১৪ বিএনপি-জামায়াত, মহাজোটের সরকারকে উৎক্ষাতের জন্য বেপরোয়া হয়ে উঠে এবং জ্বালাও-পোড়াও এর রাজনীতিতে মেতে উঠে যার প্রভাব পড়ে দেশের অর্থনীতিতে। তাই, ২০১৩ – ২০১৪' এর জিডিপির হার ২০১২ এর তুলনায় খানিকটা নেমে আসে। এ থেকে এটাও দৃশ্যমান যে, বর্তমানের বিরোধীদলীয় রাজনৈতিক মূল্যবোধের প্রেক্ষাপটে দেশের  সার্বিক উন্নয়নের স্বার্থে শুধু পার্লামেন্টের ভিতরে নয়, বাইরেও একটি দুর্বল বিরোধীদল অত্যাবশ্যক।

সন্দেহ নেই রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও গণতান্ত্রিক শাসনের ধারাবাহিকতা উন্নয়নশীল দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের সহায়ক। তবে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে একটি দুর্বল বিরোধী দল চাওয়ার পিছনে একটি অতিরিক্ত কারণ হচ্ছে বিএনপি'র রাজনৈতিক মূল্যবোধের বিষয়টি যা স্বাধীনতার মূল্যবোধ ও জাতীয় দিকনির্দেশনার সাথে সংঘাতপূর্ণ। বিষয়টি ব্যখ্যার দাবি রাখে।

আওয়ামী লীগ ও বিএনপি বাংলাদেশের দুটি প্রধান রাজনৈতিক দল। জাতীয় মূল্যবোধের আদর্শে দুটি দলের অবস্থান দুই মেরুতে।

দীর্ঘ রাজনৈতিক সংগ্রাম ও সশস্ত্র যুদ্ধে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে অর্জিত হয়েছে স্বাধীনতা। সংগ্রামের ধাপে ধাপে গড়ে উঠেছে জাতীয় মূল্যবোধের ভিত্তি এবং রচিত হয়েছে জাতির দিকনির্দেশনা। যেমন, 'জয় বাংলা' ধ্বনি। এ ধ্বনি কোনও দলের নয়। যাদের মুক্তিযুদ্ধে যাবার বা দেখার সুযোগ হয়েছে, তারা বোঝে এ ধ্বনির মর্মবাণী। যুদ্ধের মাঠে এ ধ্বনি জুগিয়েছে অদম্য সাহস, শক্তি ও মানসিক বল। মিটিং-মিছিলে এবং রনাঙ্গণে আওয়ামী লীগের এ ধ্বনি ধীরে ধীরে রূপান্তরিত হয়েছে বাঙালি জাতির ধ্বনিতে।

১৯৭৫ বঙ্গবন্ধুর হত্যার পর 'জয় বাংলা' রাতারাতি পরিবর্তিত হয়ে যায়  'বাংলাদেশ জিন্দাবাদে'। এ পরিবর্তন কেবল একটি ধ্বনির পরিবর্তন নয়। এর একটা মনস্তাত্ত্বিক দিক আছে। এ পরিবর্তন স্বাধীনতার ধ্বনির পরিবর্তে পরাধীনতার ধ্বনিকে স্থাপন করা।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে জাতির পিতা বা বন্ধু বলে সম্মোধন করি; কিংবা শুধু মুজিব বলেই ডাকি না কেন, তাতে কিছু যায় আসে না। তবে এটা অনস্বীকার্য, বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রতীক। তার ৭ই মার্চের বজ্রকণ্ঠ হয়ে উঠে বাঙালির মুক্তির সনদ। ১৫ অগাস্ট বঙ্গবন্ধুকে নৃশংসভাবে হত্যার পর চক্রান্ত হয়েছে তাকে বাংলাদেশের ইতিহাস থেকে মুছে ফেলার। তদানিন্তন সরকার আইন করে শুধু বন্ধ করেনি এ হত্যার বিচার; পুরস্কৃত করেছে হত্যাকারীদের। সেই সাথে স্বাধীনতা  যুদ্ধাপরাধী ও মানবতা বিরোধীদের বসিয়েছে মন্ত্রিত্বের আসনে।

তদানিন্তন পূর্ব পাকিস্তানে ধর্মনিরপেক্ষতার রাজনীতির যে যাত্রা শুরু হয় ১৯৫৫ এ দলের নাম আওয়ামী মুসলিম লীগ থেকে আওয়ামী লীগে পরিবর্তনের মাঝে, তা পূর্ণাঙ্গতা লাভ করে ১৯৭০ এর সাধারণ নির্বাচনে। এ নির্বাচন ছিল বাঙালি জাতীয়তা ও ধর্মনিরপেক্ষতার ভিত্তিতে বাঙালি জাতির রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক আত্মনিয়ত্রণের উপর একটি 'রেফারেন্ডাম'। নির্বাচনে পার্লামেন্টে ১৬২ আসনের মধ্যে ১৬০ টি আসন লাভ করে এবং শতকরা ৭৩ শতাংশের উপরে ভোট পেয়ে  আওয়ামী লীগ প্রমাণ করে এর যথার্ততা। অত্যন্ত দুর্ভাগ্যের বিষয়, ১৯৭৫ এর পট পরিবর্তনের পর ধর্মনিরপেক্ষতার পরিবর্তে ধর্মভিত্তিক রাজনীতির দরজা খুলে দেওয়া হয় সংবিধানের পরিবর্তনের মাঝে।

দীর্ঘ আন্দোলন আর জনগণের উৎসর্গে অর্জিত স্বাধীনতার মূল্যবোধ বা জাতীয় দিকনির্দেশনের মীমাংসিত উপাদানগুলির আকস্মিক পরিবর্তনের জন্য কে বা কারা দায়ী? এর উত্তর আজকের বিরোধীদল বিএনপি।

এককথায়, বিএনপি তার  রাজনৈতিক বৈশিষ্ট্য, যা কিনা উপনিবেশিক মানসিকতা আর পরাধীনতার মূল্যবোধে রচিত, তা দাঁড় করেছে স্বাধীনতার দিকনির্দেশনার বিপরীতে। তাইতো 'জয় বাংলা'র বিপরীতে দাঁড় করেছে 'বাংলাদেশ জিন্দাবাদ'; বাঙালি জাতীয়তাবাদের বিপরীতে বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ; ধর্মনিরপেক্ষতার পরিবর্তে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি; আর নিয়েছে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের পরিবর্তে পুরস্কৃত ও পুনর্বাসিত করার নীতি।

এমতবস্থায় জাতির কাছে প্রশ্ন – যারা মুক্তিযুদ্ধের ধ্বনিতে, স্বাধীনতার প্রতীকে বিশ্বাস করে না, যারা স্বাধীনতা যুদ্ধে আত্মহুতি দেওয়া যোদ্ধাদের সংখ্যাকে প্রকাশ্যে প্রশ্নবিদ্ধ করে, যারা যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে বিশ্বাস করে না, বরং তাদের পুরস্কৃত করে রাজনৈতিকভাবে পুনর্বাসিত করে, যারা মুখে গণতন্ত্রের কথা বলে  অথচ ধর্মনিরপেক্ষতার স্থলে ধর্মভিত্তিক রাজনীতিতে বিশ্বাসী (বলা বাহুল্য, গণতন্ত্র আর ধর্মভিত্তিক রাজনীতি এক সঙ্গে অচল। যাদের 'গণতন্ত্র' বিএনপি প্রতিনিয়ত উচ্চারণ করে, তারা, মানে উন্নত গণতান্ত্রিক দেশ, ধর্মভিত্তিক রাজনীতি বর্জন করেছে দীর্ঘ দিন পূর্বে) তাদের কী বাংলাদেশে রাজনীতি করার নৈতিক অধিকার থাকতে পারে? তারা কী 'বিকল্প  সরকার' হিসেবে গণ্য হওয়ার উপযোগী? বিশ্বের অন্য কোনও দেশে বিরোধী দলের রাজনৈতিক মূল্যবোধ সে দেশের স্বাধীনতার মূল্যবোধের বিপরীতে অবস্থান করে কিনা তা আমার জানা নেই। দুর্ভাগ্যবশত বাংলাদেশের জন্য এটা বাস্তবতা। এসব প্রমাণ করে বিএনপির ডিভাইসিভ (বিভেদ সৃষ্টিকর) রাজনৈতিক মূল্যবোধের দিকটি ।

বঙ্গবন্ধুর হত্যার সাথে বিএনপি'র স্রষ্টা জিয়াউর রহমান প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত এবং তা বহু তথ্যে প্রমাণিত। ২০০৪ এর শেখ হাসিনার হত্যাচেষ্টার সাথে বিএনপির বর্তমান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সন তারেক রহমানসহ বিএনপির বেশ কয়েকজন প্রাক্তন মন্ত্রীও জড়িত। আজ তা আদালতে প্রমাণিত এবং সংশ্লিষ্টরা দণ্ডিত। এখানেই শেষ নয়। কানাডার কোর্টে বিএনপি সন্ত্রাসী দল হিসেবে আখ্যায়িত হয়েছে। তাছাড়া গত তিন দশকে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন পরিস্থিতিতে বিএনপি-জামায়াত বিভিন্নভাবে নাশকতামূলক যেমন বোমাবাজি, অস্ত্রপাচারের সাথে জড়িত। এসব প্রমাণ করে বিএনপির ডেস্ট্রাক্টিভ (ধ্বংসাত্মক) এবং ডিস্‌রাপ্টিভ (সংহতিনাশক) রাজনৈতিক মূল্যবোধ।

বিএনপির ডিভাইসিভ রাজনৈতিক মূল্যবোধের ফলে দেখি বুদ্ধিজীবী-শিক্ষক তথা সুশীল সমাজে বিভাজন। দেখি বিভাজন আমলাতন্ত্রে, বিচার বিভাগে। আর এ দলের ডেস্ট্রাক্টিভ এবং ডিস্‌রাপ্টিভ মূল্যবোধের ফলে দেখি ধ্বংসাত্মক রাজনীতি। বিরোধী দল হিসেবে বিএনপি যত বেশি শক্তিশালী হবে, তাদের ডিভাইসিভ ও ডেস্ট্রাক্টিভ রাজনীতি ততবেশি বেপরোয়া হয়ে উঠবে। সে কারণেই বিএনপির রাজনৈতিক মূল্যবোধের এই দুটি বিষয়ই বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন এবং সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক পরিবেশ সৃষ্টি ও চর্চায় বড় অন্তরায়।

এমতাবস্থায় সুষ্ঠু রাজনীতি প্রণয়নে বিএনপির সামনে একমাত্র পথ – একাত্তরের মূলধারায় বিশ্বাসী হয়ে ওঠা। অন্যথায়, দেশের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও কারিগরিতে আধুনিকীকরণ এবং অর্থনীতিতে সমৃদ্ধির স্বার্থে বিএনপি-জামায়াতকে রাজনৈতিকভাবে পার্লামেন্টের ভিতরে এবং বাইরে একটি দুর্বল বিরোধী দলে পরিণত করার বিকল্প নেই।