মাশরাফির নির্বাচন: একটি ভিন্ন মূল্যায়ন

বিজন সরকার
Published : 11 Dec 2011, 04:40 AM
Updated : 18 Nov 2018, 02:00 PM

দেশের ক্রিকেটে মাশরাফি বিন মর্তুজার অবদান অনেক। তিনি যেভাবে বাংলাদেশের ক্রিকেটকে বিশ্বের কাছে নিয়ে গেছেন সেটি অতুলনীয়। বিশেষ করে তার অনুপ্রেরণাদায়ক নেতৃত্বের কারণে খেলার মাঠে অত্যন্ত জটিল পরিবেশে টাইগারেরা খুব বেশি উজ্জীবিত হতে দেখা যায়। অনেক জয়ের পিছনে মাশরাফি বিন মর্তুজার অনুপ্রেরণা মুখ্য ভূমিকা পালন করে।

বাংলাদেশের একমাত্র অভিন্ন মতের ক্ষেত্রটি হচ্ছে ক্রিকেট। দেশের রাজনীতি যতই কণ্টকময় হউক, ক্রিকেটের ক্ষেত্রে সবাই এক ও সঙ্গবদ্ধ। সেই ক্রিকেটকে বছরের পর বছর বিশ্ব দরবারে নেতৃত্ব দেওয়ার বিরল সৌভাগ্য মাশরাফি পেয়েছেন। এটি যে একজন ব্যক্তির জীবনে কত বড় ভাগ্যের বিষয় তা কোনও প্যারামিটারেই আলোচনা করে শেষ করা যাবে না। তিনি তার অসাধারণ নেতৃত্বের গুণাবলী দ্বারা ক্রিকেটের মাধ্যমে দেশের সাধারণ জনগণের কাছে খুবই জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব। খোলামেলাভাবে বললে বলা যায়, মাশরাফি সফলতার শীর্ষে থাকা একজন মানুষ। তার জীবনে কোনও অপূর্ণতা থাকার কথা নয়।

মাশরাফি এবারের সাধারণ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে আগ্রহী হয়েছেন। তিনি নিজ গ্রামের বাড়ির আসন নড়াইল-২ থেকে আওয়ামী লীগের হয়ে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দোয়াও নিয়েছেন তিনি। বাস্তবতার নিরিখে এটি অনুমেয় যে মাশরাফি মনোনয়ন পেতে যাচ্ছেন। তার জাতীয় সংসদের নির্বাচিত সদস্য হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।  এমনকি যদি আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে, তিনি ক্রীড়া অঙ্গনে বড় কোনও দায়িত্ব পেয়ে যেতে পারেন।

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ প্রতিটি সাধারণ নির্বাচনেই ক্লিন ইমেজের কিছু মেধাবী যুবককে দল থেকে নির্বাচন করার সুযোগ দেয়। এটি দলটির একটি সময়োপযোগী চিন্তা। এতে করে দলটির ইমেজ ও গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি পায় এবং দৃঢ় হয়। এতে যুবক সমাজের প্রতি দলটির রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয় প্রকাশ পায়।

দেশের সমকালীন রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে আওয়ামী লীগ যুবক প্রতিনিধি নির্বাচনের ক্ষেত্রে বেশ সতর্কতাও অনুসরণ করে। অন্যান্য দলগুলির সাথে তুলনামূলক বিচারে প্রতিটি নির্বাচনেই আওয়ামী লীগ আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্বের কিছু তরুণকে দল থেকে মনোনয়ন দেয়।

একটি তুলনামূলক চিত্রের উদাহরণ দেই। এইবারের নির্বাচনে ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বদের মধ্যে যারা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন তাদের একটি তুলনামূলক পোস্টার ফেসবুকের নিউজ-ফিডে ঘুরছে। এতে লেখা আছে আওয়ামী লীগ থেকে মাশরাফি বিন মর্তুজা, বিএনপি থেকে নায়িকা ময়ূরী ও জাতীয় পার্টি থেকে হিরো আলম মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন, আপনারা কাকে ভোট করবেন?

মাশরাফি বিন মর্তুজা আওয়ামী লীগের মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করার পরপরই সব ক্ষেত্রেই মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।

মাশরাফিকে নিয়ে আওয়ামীলীগের সমর্থক-শ্রেণি খুবই খুশি। এমনকি মাশরাফি বিন মর্তুজাকে আওয়ামী লীগের অফিসে যেভাবে স্বাগত জানানো হয়েছে, সেটি স্বতন্ত্রভাবে চোখে পড়ার মত। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সমর্থকেরা এটিকে একধরনের বিজয় হিসাবেই দেখছেন।

অন্যদিকে, আওয়ামীলীগ বিরোধী জোটের সমর্থকেরা মাশরাফি বিন মর্তুজার এই সিদ্ধান্তকে 'ভুল' হিসাবে আখ্যায়িত করছেন। তারা বলছেন, তিনি এখনও জাতীয় ক্রিকেট (ওয়ানডে) স্কোয়াডের দলনেতা। ফলে তিনি দলীয় কোনও অবস্থান নিতে পারেন না। আর যদি নিতেই হয় তাকে আগে দলনেতার পদ থেকে সরে যেতে হবে।

আরেকটি অংশ বলছেন, কেউ নির্বাচন করবে কি করবে না এটি তার একান্তই ব্যক্তিগত বিষয়- গণতান্ত্রিক অধিকার। সেই হিসাবে তিনি নির্বাচন করতেই পারেন। তবে মাশরাফি বিন মুর্তজা আর দশ পাঁচজন পাবলিক ফিগারের মতো নয়। দলমতের উর্ধ্বে তিনি সবার কাছে মাশরাফি। তাকে যদি নির্বাচন করতে হয়, সেক্ষেত্রে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবেই নির্বাচন করলে ভাল হতো।

আমাদের উপমহাদেশের ক্রীড়া ব্যক্তিত্বের, বিশেষ করে ক্রিকেট অঙ্গনের তারকাদের রাজনীতিতে প্রবেশ করা ও সংসদে প্রতিনিধিত্ব করার উদাহরণ রয়েছে। এই তালিকায় যাদের নাম উদাহরণ হিসাবে সামনে আসছে তারা হলেন- শ্রীলঙ্কার সনাৎ জয়সুরিয়া ও অর্জুনা রানাতুঙ্গা, ভারতের মনসুর আলী খান পাতৌদি, নবজ্যোত সিং সিধু, বিনোদ কাম্বলি, মোহাম্মদ আজহারউদ্দিন ও পাকিস্তানের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান।

তবে এদের মধ্যে একমাত্র পাকিস্তানের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান ছাড়া আর কেউ সেই অর্থে তেমন সফলতা পাননি। এমনকি তাদের অনেকেই রাজনীতিতে প্রবেশ করা পর্যন্তই আলোচনায় ছিলেন। এখন আর সেই মাত্রায় আলোচনায় নেই।

আপনি ভারতের রাজনীতিতে নবজ্যোত সিং সিধু, বিনোদ কাম্বলি কিংবা মোহাম্মদ আজহারউদ্দিনের অবস্থান কোথায় একটু খোঁজ খবর নিন। ভারতের গণতান্ত্রিক পরিবেশে অন্য পেশা থেকে হঠাৎ করে রাজনীতি এসে খুব বেশি সফল হওয়ার নজির নেই। আমি মনে করি, যেখানে রাজনীতিটি মৌলিক অর্থেই রাজনীতিবিদের হাতে থাকে সেখানে অন্য পেশা থেকে এসে রাজনীতিতে সফল হওয়া বেশ কঠিন। বলা যায় প্রায় অসম্ভব। এমনকি ভারতে (পশ্চিমবঙ্গ ছাড়া) আমাদের দেশের মতো হঠাৎ করে নেতা হওয়ার রাস্তাটি নেই বলেই চলে।

তবে এই ক্ষেত্রে শ্রীলংকার অবস্থানটি ভিন্ন। দেশটির দুইজন ক্রিকেট লিজেন্ড রাজনীতিতে যুক্ত হয়েছেন। তারা রাজনীতিতে কিছুটা সফল বলেই মনে করা হয়। অর্জুনা রানাতুঙ্গা ও সনাৎ জয়সুরিয়া দুই জনই দেশটির উপমন্ত্রী হয়েছিলেন।

এক্ষেত্রে পাকিস্তান কিছুটা এগিয়ে। ইমরান খান দীর্ঘদিন রাজনীতি চালিয়ে গিয়ে তিনি দেশের প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। ইমরান খানের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার রাস্তাটি বিনির্মাণ করে দিয়েছেন দেশটির সেনাবাহিনী। একটি ভিন্ন পেশা থেকে এসে ইমরান খানের মত বিতর্কিত চরিত্রের মানুষটির পক্ষে দেশের নির্বাহী প্রধান হওয়া পাকিস্তানের মতো রাষ্ট্রেই সম্ভব। এটি উপমহাদেশের অন্য কোথাও সম্ভব নয়।

ফলে ক্রিকেট অঙ্গন থেকে এসে রাজনীতিতে ভালো করার নজিরটি কেবল শ্রীলংকা ছাড়া আমাদের এই অঞ্চলে নেই। সনাৎ জয়সুরিয়াও ২০১৫ সালের শ্রীলংকার জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি।

অনেকেই বলছেন যে মাশরাফি রাজনীতি আসলে কিছুটা হলেও রাজনীতি গুণগত পরিবর্তন হবে। এটি একেবারেই ভুল ধারণা। একজন মাশরাফির অন্তর্ভূক্তি আমাদের রাজনীতির উপর তেমন কোনও প্রভাব ফেলবে না। রাজনীতির যে নিজস্ব কাঠামো রয়েছে সেটি হঠাৎ করে পরিবর্তন সম্ভব নয়। আমাদের রাজনীতিতে যে সকল বিষাক্ত উপাদানগুলি রয়েছে, বিশেষ করে দেশ-বিরোধী ও জঙ্গি ডিপো জামায়েত শিবিরের মত অপশক্তি, সেইগুলির ধ্বংস ছাড়া আমাদের রাজনীতির মৌলিক পরিবর্তনের চিন্তা আকাশ কুসুম কল্পনা।

মাশরাফি বিন মুর্তজা যদি দলীয় পোশাক গায়ে না লাগিয়ে নিরাপদ দূরত্ব থেকে সমাজে পরিবর্তন আনয়নকারী রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের পক্ষে কাজ করতেন সেটি বেশি ফলদায়ক হত। আওয়ামী লীগের মনোনয়নপত্র সংগ্রহকারী মাশরাফি বিন মুর্তজার চেয়ে দলীয় পোশাকবিহীন মাশরাফ বিন মর্তুজার কথা সমাজের মানুষেরা বেশি শুনতো ও মানতো। দলীয় পরিচয় বহনকারী মাশরাফি বিন মর্তুজার চেয়ে দলীয় পরিচয়হীন মাশরাফির বেশি শক্তিশালী, প্রভাবশালী ও গ্রহণযোগ্য। সেই মাশরাফি বিন মর্তুজাকে দিয়েই আওয়ামী লীগ নিজের রাজনৈতিক আদর্শিক কর্মকাণ্ড বাস্তবায়ন করতে পারত।

মাশরাফি বিন মুর্তজাদের মত প্রভাবশালী ব্যক্তিরা দলীয় কর্মকাণ্ডে সরাসরি অংশগ্রহণ করার ফলাফল কী হয় তা ভারতে অনেক দেখতে পাওয়া যায়। জীবনমুখী কণ্ঠশিল্পী ভূপেন হাজারিকার কথা ভাবুন। বিজেপিতে নাম লেখানোর পরপরই ভূপেন হাজারিকা আর সর্বজনীন থাকেনি।

আরেকটি তুলনামূলক চিত্র ভাবুন। মোহাম্মদ আজহারউদ্দিন ও সৌরভ গাঙ্গুলি দুজনেই ভারতের ক্রিকেট স্কোয়াডের দল নেতা ছিলেন। মোহাম্মদ আজহারউদ্দীন সরাসরি রাজনীতিতে গেলেন; সৌরভ গাঙ্গুলি রাজনীতিতে যাননি। অথচ সার্বিক বিচার্যেই সৌরভ গাঙ্গুলি মোহাম্মদ আজহারউদ্দিনের চেয়ে বহুগুণে গ্রহণযোগ্য ও অনুকরণীয় ব্যক্তিত্ব। রাজনৈতিক পরিচয়হীন শচীন তেন্ডুলকার কিংবা বিরাট কোহলি ভারতের যে কোনও দলীয় এমপি কিংবা মন্ত্রীর চেয়ে সামাজিকভাবে খুব বেশি প্রভাবশালী।

একটি বিষয় খুবই সত্য যে আমরা একটি অদ্ভুত কালচারে বড় হচ্ছি। ক্লাসের ভাল ছাত্রগুলি রাজনীতি বিমুখ হয়। ছোটবেলা থেকেই রাজনীতি সম্পর্কে পরিবারে, সমাজে ও রাষ্ট্রে ঋণাত্নক কথা শুনতে শুনতে আমরা বেড়ে উঠছি। এখন সেটি আরও ভয়ানক আকার ধারণ করেছে। আমরা ক্রিকেট কিংবা নাটক সিনেমা নিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টার কথা বলে কাটাতে পারি। কিন্তু দেশের রাজনীতি, উন্নয়ন কিংবা আর্থ সামাজিক বিষয় নিয়ে আমাদের আগ্রহ নেই।

গত এক দশকে বাংলাদেশে অভূতপূর্ব উন্নয়ন ঘটেছে। আমরা কেবল দুটি সূচক দিয়েই সেটি বুঝতে পারি। একটি হল রপ্তানি এবং আরেকটি হল বিদ্যুৎ উৎপাদন।  দেশের রপ্তানি কয়েকগুণ বেড়ে গেছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতাও রকেট গতিতে বেড়েছে। অথচ দেশের শিক্ষিত সমাজ সেগুলি নিয়ে আলোচনা করতে আগ্রহী নয়। তারা রাজনীতি বিমুখ। এমতাবস্থায় রাজনীতিতে অযোগ্য ও অর্ধ-শিক্ষিত লোকের সংখ্যা অনেক বেড়েছে।

একটি উদাহরণ দেই। ঘটনাটি আওয়ামী লীগে ঘটেনি। ঘটেছে আওয়ামী লীগের আদর্শ সমর্থিত সবচেয়ে প্রভাবশালী বুদ্ধিবৃত্তিক সংগঠন 'বঙ্গবন্ধু পরিষদে'। এই সংগঠনটির কেন্দ্রীয় আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক মানব পাচার ও অর্থ পাচারের দায়ে সিঙ্গাপুরে জেল খেটেছেন দুইবছর। পড়াশোনাও স্কুল পর্যন্ত। কেবল অর্থ দিয়েই তিনি এই পরিষদের আন্তর্জাতিক সম্পাদক হয়ে গেছেন।

ফলে এমন একটি পরিবেশে আমাদের খণ্ডিত একটি জনগোষ্ঠী বিচার বিশ্লেষণ ছাড়াই মাশরাফি বিন মর্তুজার রাজনীতিতে আসার বিষয়টিকে গুণগত পরিবর্তন হিসাবে দেখতে পাচ্ছে।

এই অবস্থানটাতে দ্বিমত পোষণ করছি। মাঠের ফলাফল পরিবর্তনকারী ক্যারিসম্যাটিক দলনেতা ইচ্ছে করলেই রাজনীতিতে পরিবর্তন করতে পারবেন না। কারণ মাঠের বিষয়টি কয়েক ঘণ্টার। পরিবারটিও এগার সদস্যের। প্রতিপক্ষও দৃশ্যমান।

কিন্তু রাজনীতির মাধ্যমে দেশের উন্নয়নের ফলাফল পরিবর্তন কয়েক ঘণ্টার বিষয় নয়, পরিবারটি ১৭ কোটি মানুষের। এখানে অনেক অদৃশ্যমান শক্তি থাকে। সমালোচনা থাকে প্রতিটি মুহূর্তে। সময় এখানে একটি তাৎপর্যপূর্ণ বিষয়। আমরা গত এক দশকে উন্নয়নকে দৃশ্যমান করতে পেরেছি মাত্র। কিন্তু এত উন্নয়নের পড়েও দেশের বিবেকবান মানুষদের একটি বড় অংশ ঘুম থেকে উঠে দিনটি শুরু করে সরকারবিরোধী একতরফা সমালোচনা দিয়ে।

মাশরাফির রয়েছে অগণিত ভক্ত। তাকে যারা ভালবাসেন, পছন্দ করেন কিংবা অনুসরণ করেন তারা কেউই জানতেন না যে তিনি রাজনীতিতে যুক্ত হতে পারেন। তারা কোনও শর্ত ছাড়াই মাশরাফি বিন মর্তুজাকে শ্রদ্ধা করেছেন, হয়ত এখনো করছেন। কিন্তু দলীয় মনোনয়নপত্র সংগ্রহের পর তাদের সেই শর্তহীন ভালবাসাতে চিড় ধরেছে সেটি প্রতিক্রিয়া থেকেই বোঝা যায়।

মাশরাফি কোনও শোবিজ সেলেব্রিটি নন। দর্শকেরা সেলিব্রেটিদের ভালোবাসে; অর্থ খরচ করে তাদের পছন্দের সেলেব্রিটিদের কর্ম দেখে থাকেন। আর সেলেব্রেটিদের অনেকেই দর্শকের সেই ভালোবাসাকে পুঁজি করে রাজনীতিতে ক্যারিয়ার গঠন করে থাকেন। দর্শকেরা তাকে গ্রহণ করে অভিনেতা কিংবা অভিনেত্রী হিসাবে; সেলেব্রেটিরা দর্শকের সেই ভালোবাসাকে নিজের অন্য পেশায় বিনিয়োগ করে থাকেন। সেটি একধরনের অসাধুতা।

এই অনুধাবন থেকে উপমহাদেশের জীবন্ত কিংবদন্তি অভিনেতা অমিতাভ বচ্চন রাজনীতি ছেড়ে নিজের মূল পেশায় ফিরে গিয়েছিলেন। তবে মাশরাফির ক্ষেত্রে দর্শকের ভালোবাসার দায়বদ্ধতা নেই; রয়েছে তাদের ভালোবাসার প্রতি নিরপেক্ষ দায়িত্ববোধ।

রাজনীতিটি রাজনীতিবিদের হাতেই থাকা উচিত। অন্য পেশা থেকে রাজনীতিতে গিয়ে দলীয় রাজনীতির চর্চাটা ভালভাবে করা যায় না; সম্ভবও নয়। পেশাগত অভ্যস্ততার বিষয়টি এখানে মুখ্য।

অধিকন্তু, যারা ছাত্রজীবন থেকেই জীবনের শেষভাগ পর্যন্ত রাজনীতি করেন, জীবনের সোনালি সময়গুলি রাজনীতির কারণে ব্যয় করে থাকেন, রাজনীতি কারণে জেলে যান, তারা যদি হঠাৎ করেই দেখেন যে অন্য পেশায় সফলতার শীর্ষে থাকা কোনও ব্যক্তি বিশেষ নিজের জন্য সম্ভাব্য জায়গাটি দখল করে নিচ্ছেন, সেটি সেই রাজনীতিবিদ জন্য কতটুকু কষ্টের তা সহজেই অনুমেয়।

মাশরাফির আসন নড়াইল-২ এর জন্য মনোনয়নপত্র আওয়ামী লীগের আরও ১২ জন নেতা মনোনয়নপত্র নিয়েছেন বলে গণমাধ্যমে দেখলাম।

আওয়ামী লীগের সভানেত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা সম্ভাব্য বঞ্চিত নেতাদের কষ্টটি বোঝেন না, তা কিন্তু নয়। আর সে কারণেই হয়ত আমাদের বিশ্বখ্যাত অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানকে নির্বাচনের বিষয়ে তিনি নিরুৎসাহিত করেছেন। কারণ তিনি সম্ভাব্য ট্রেন্ডটির তাৎপর্য ভাল করেই অনুধাবন করতে পেরেছেন।

আমার লেখাটির উদ্দেশ্যটি পরিষ্কার। যারা দলীয় পরিচয় সরাসরি বহন না করেও  একটি নির্দিষ্ট দলের আদর্শ বাস্তবায়নের জন্য খুব প্রভাবশালী ভূমিকা রাখতে সক্ষম, তাদের উচিত সরাসরি রাজনীতিতে না আসা; পরোক্ষভাবেই ভূমিকা পালন করা।