ঐক্যফ্রন্টের থলেতে কালোবিড়াল!

সাব্বির খানসাব্বির খান
Published : 8 Nov 2018, 03:55 PM
Updated : 8 Nov 2018, 03:55 PM

ষড়যন্ত্রের ইতিহাস দিয়েই রচিত হয়েছে স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাস। স্বাধীনতাত্তোর খুব কম দিনই পাওয়া যাবে, যেদিন স্বাধীনতাবিরোধী ও তাদের দোসররা এদেশের মাটি ও মানুষের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করেনি।

অন্ধকারের চক্রান্তকারীদের কখনওই বিচারের মুখোমুখি হতে হয়নি বলে রাষ্ট্রবিরোধী কার্যকলাপ বাংলাদেশে এক ধরনের সংস্কৃতিতে পরিণত হয়েছে, যা বাঁধাহীনভাবে বিস্তার লাভ করেছে প্রজন্মের শেকড়ে!

শ্রদ্ধেয় কলামিস্ট গাফফার চৌধুরী একবার লিখেছিলেন, 'মানুষ যেমন দু'পায়ে হাঁটে, গণতন্ত্রও তেমনি দু'পায়ে হাঁটে। এই দু'পায়ের একটি সরকারী দল, অপরটি বিরোধী দল'।

একটা দেশের গণতান্ত্রিক ধারার রাজনৈতিক অবকাঠামো তো এমনই হওয়া উচিত। কিন্তু দু'পায়ী মানুষের একটি পা যদি সারাক্ষণ অন্য পা-কে ল্যাং মারতে থাকে, তখন মানুষটি কিভাবে এগোবে, সে উত্তর তিনি দেননি! ব্রিটেনের লেবার পার্টির প্রয়াত নেতা অ্যান্থনি ওয়েজউড বেল একবার বলেছিলেন, 'তেল এবং জল যেমন একসাথে মেশে না, তেমনি গণতন্ত্রের সাথে চক্রান্তও পাশাপাশি চলতে পারেনা'। বেশ সোজাসাপ্টা কথা নিঃসন্দেহে!

কিন্তু বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে 'চক্রান্ত' যখন জৈবিক একটা উপাদানে পরিণত হয়, তখন কিভাবে তা অগ্রাহ্য করে গণতন্ত্রকে এগিয়ে নেয়া যায়, সে ব্যাপারে অ্যান্থনি ওয়েজউডও কিছু বলেননি। বিষয়টি এমন যে, একটা সমস্যা চিহ্নিতকরণ হয়েছে ঠিকই কিন্তু তা সমাধানের অ্যাকাডেমিক অথবা আক্ষরিক কোনও উপায় কেউ সুনির্দিষ্টভাবে বাৎলে দেননি। স্বাভাবিক কারণেই চক্রান্ত বা ধ্বংস মোকাবেলায় দেশের শাসকরা যখন কোনও পন্থা অবলম্বন করেন, মোটাদাগে তা ভুল বলেই বিবেচিত হয় এবং সম্ভবত সে কারণেই শেখ হাসিনার সরকারও সে আখ্যা থেকে রেহাই পায় না!

সাম্প্রতিক বছরগুলোর জাতীয় নির্বাচনের মোড়ক উন্মোচন হয়েছে মূলত 'নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের' আলোচনা ও বিতর্কের মাধ্যমে। ২০১৮ সালের নির্বাচনের প্রাক্কালেও তার ব্যত্যয় ঘটেনি! আপাত দৃষ্টিতে সরকারবিরোধী হিসেবে আত্মপ্রকাশ পাওয়া ঐক্যফ্রন্টের সাথে সরকারের সংলাপ হওয়ায় সে বিতর্কে কিছুটা কোমল ভাব থাকার পরেও শুধু বিরোধিতার অজুহাতে ঐক্যফ্রন্ট সরকারবিরোধী কথাবার্তায় নিজেদের ব্যস্ত রেখেছেন। তবে আশা এতটুকুই যে, যে কোনও প্রক্রিয়ায়ই হোক না কেন, ঐক্যফ্রন্ট ও তার প্রধান শরিকদল বিএনপি তাঁদের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য হলেও আগামী জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিতে বাধ্য হবে। সে অংশগ্রহণের প্রান্তিক রূপরেখা কেমন হবে, তা এখনই বলা মুস্কিল যদিও! গত নির্বাচনগুলোতে বিএনপির প্রত্যক্ষ জামায়াতবান্ধব যে মনোভাব ছিল, বর্তমানে মানসিকভাবে না হলেও বাহ্যিকভাবে এবং কৌশলগত কারণে তারা জামায়াত থেকে কিছুটা দূরত্ব বজায় রাখছেন, যা রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের দৃষ্টিতে ইতিবাচক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে যুদ্ধাপরাধী দল জামায়াতে ইসলামীর অস্তিত্ব সামাজিক এবং রাজনৈতিকভাবে মারাত্মক হুমকির সম্মুখীন। ইতিমধ্যে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের দায়ে দলটির একাধিক জেষ্ঠ্য নেতার ফাঁসির রায় কার্যকর হয়েছে। ড. কামালের ঐক্যফ্রন্টে যোগ দেয়ার কারণে সম্ভবত বিএনপি তাদের প্রধান মিত্র জামায়াতে ইসলামীর সাথে দূরত্ব বজায় রাখার বাহ্যিক নীতি গ্রহণ করছে। ইতিমধ্যে অস্তিত্ব রক্ষার্থে জামায়াতের মাঠ পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের অনেকে সরকারী দলে যোগ দেয়া ছাড়াও হেফাজতে ইসলাম ও অন্যান্য ইসলামী ভাবধারার সংগঠনে যোগ দিয়েছে। সাময়িকভাবে হলেও এসব দল ও সংগঠনের ভিতরে থেকে জামায়াতে ইসলামী তাদের মতধারার জঙ্গী-ও সন্ত্রাসী রাজনৈতিক কার্যক্রম চালিয়ে যেতে সক্ষম হচ্ছে, যা নির্বাচনের সময় আরো বেশি প্রকট হয়ে দেখা দিতে পারে।

বাংলাদেশ একটি মুসলিম প্রধান দেশ, যার প্রায় ৮৫-৯০ শতাংশ নাগরিকই মুসলিম। এই দেশে প্রায় এক কোটির অধিক বেকার আলেমগণ তাদের প্রচলিত ধারায় রাষ্ট্রের উৎপাদনশীল সেক্টরগুলোতে নিজেদের নিয়োজিত না রেখে শুধু ধর্মীয় চেতনা বিস্তারে নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন। যে কারণে গত দুই যুগেরও অধিককাল ধরে এবং অধিকতর মুসলমানিত্বের কারণে বাংলাদেশ একটি ধর্মীয় মৌলবাদী সমাজব্যবস্থার দিকে এগিয়ে গিয়েছে, যা একটা জাতিকে আধুনিক সভ্য দুনিয়া থেকে পশ্চাদপসারণের জন্য যথেষ্ঠ ভূমিকা রেখেছে।

সেই সাথে দেশের সংখ্যালঘিষ্ঠের প্রতি প্রদর্শন হয়েছে রাষ্ট্রীয় বর্ণবাদিতা। পঁচাত্তরের পর থেকে অদ্যাবধি প্রায় চার কোটি হিন্দু দেশত্যাগে বাধ্য হয়েছেন উদ্ভুত ধর্মীয় মৌলবাদের আগ্রাসী আচরণের কারণে। বর্তমান সরকারের আধুনিক ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার যে প্রত্যয়, তাকেও পদে পদে বাঁধাগ্রস্ত করছে মৌলবাদের বিষবাস্প। এই অপধারাকে রোধ করতে ২০১৭ সালের শুরুর দিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আলেম সমাজের জন্য একটি অর্থনৈতিক জোন গঠনের ঘোষণা দিয়েছিলেন, যা বাংলাদেশের আলেম সমাজের বড় একটা অংশ ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখলেও একটি অংশ ভাল চোখে দেখেননি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তখন বলেছিলেন, 'আলেম-ওলামাদের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ততা বাড়ানোর জন্য তাঁদেরই তত্ত্বাবধায়নে পরিচালিত হবে এমন একটি অর্থনৈতিক জোন, যা দেশের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধিকে আরো উর্ধ্বমুখি করবে'। অর্থাৎ দেশের উৎপাদনশীল খাতে আলেম-ওলামাদের সংযুক্ত করার সুস্পষ্ট নীতিমালা তৈরির কথা তিনি বলেছিলেন। আলেম সমাজের ব্যক্তিগত ও পারিবারিক জীবনে দীর্ঘদিনের লালিত যে অর্থনৈতিক দরিদ্রতা, সেখান থেকে তাদের মুক্ত করে আনতে সরকার অতিসম্প্রতি দাওরায়ে হাদিসকে মাস্টার্সের সমমানের স্বীকৃতি দিয়েছে, যাতে তারা দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে অবদান রেখে দেশকে আরো সমৃদ্ধশালী করতে সক্ষম হয়।

হেফাজতে ইসলাম নিজেদের একটা অরাজনৈতিক সংগঠন হিসেবে দাবি করলেও তাদের কথাবার্তা নিঃসন্দেহে যে কোনও রাজনৈতিক দলের মতই রাজনৈতিক! ২০১৩ সালের ৫ মে তারা এই সরকারের বিরুদ্ধে ঢাকা অবরোধের ডাক দিয়ে ঢাকার শাপলাচত্ত্বরে অবস্থান নিয়েছিল। তখন তাদের এই আন্দোলনকে সমর্থন জানিয়েছিল বিএনপি এবং আর্থিক সহযোগিতা দিয়েছিল জামায়াতে ইসলামী।

সরকারের পদত্যাগের জন্য ৪৮ ঘণ্টার যে আল্টিমেটম তারা সেদিন দিয়েছিল, পেছন থেকে তার কলকাঠি নেড়েছিল জামায়াত-বিএনপি। ঐতিহাসিকভাবে কওমীদের দুশমন মওদুদীবাদী জামায়াত ইসলামও তখন হেফাজতে ইসলামের সাথে একাট্টা হয়েছিল। অথচ ২০১৮ সালের ৪ নভেম্বর, মাত্র পাঁচ বছরের ব্যবধানে সেই হেফাজতে ইসলামই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এক বিশাল সমাবেশে সংবর্ধনা দিয়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছে 'দাওরায়ে হাদিসকে' মাস্টার্সের সমমানের স্বীকৃতি দেয়ার জন্য।

হেফাজতে ইসলামের আমির আল্লামা আহমদ শফীর পাশের চেয়ারে বসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তখন আত্মতৃপ্তিতে ভাসছিলেন কিনা জানি না, তবে তারপরের দিনই হেফাজতে ইসলামীর ২০১৩ সালের সেই 'সরকার-হটানো' দলটি আহমদ শফীকে বেঈমান আখ্যা দিয়ে এবং 'শফীর' হেফাজতের সাথে দ্বিমত পোষণ করে তাদের সরকারবিরোধী অনড় অবস্থানের কথা জানিয়ে দিয়েছিল।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেয়া সংবর্ধনায় আসেননি হেফাজতে ইসলামের অত্যন্ত ক্ষমতাধর মহাসচিব জুনাইদ বাবুনগরী। হেফাজতে ইসলামের অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও ক্ষমতার দ্বন্দ্বে ইতিমধ্যে সংগঠনটি থেকে পদত্যাগ করেছেন সংগঠনটির সিনিয়র নায়েবে আমির মহিববুল্লাহ বাবুনগরী, নায়েবে আমির ও ঢাকা মহানগর সভাপতি আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী, নায়েবে আমির ও চট্টগ্রাম মহানগর সভাপতি আল্লামা হাফেজ তাজুল ইসলাম, নায়েবে আমির তফাজ্জুল হক হবিগঞ্জী, আল্লামা সুলতান জওক নদভী, আল্লামা আব্দুর রব ইউসুফী, আল্লামা আব্দুল মালেক হালিম, মুফতি ইজহারুল ইসলাম, যুগ্ম-মহাসচিব মাওলানা জুনায়েদ আল-হাবীব, মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী, মাওলানা ফজলুল করিম কাসেমী ও সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল হক ইসলামাবাদী।

তারা কেউই শুকরানা মাহফিলে অংশগ্রহণ করেননি। এতগুলো নেতার একসাথে এবং একই রকম সিদ্ধান্ত গ্রহণে অন্তত একটা ব্যাপার পরিষ্কার হয় যে, হেফাজতে ইসলাম দ্বিবিভক্ত হয়ে হেফাজতে ইসলাম (শফি) ও হেফাজতে ইসলাম (বাবুনগরী) হিসেবে বর্তমানে পরিচালিত হচ্ছে।

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী একটি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সন্ত্রাসী সংগঠনের বাংলাদেশি শাখা। জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ ছাড়াও মিশর ও উত্তর আফ্রিকার মুসলিম ব্রাদারহুড এবং আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের তালেবান ও আলকায়দার সাথে জঙ্গিবাদের আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্কের সঙ্গী হয়েছে দীর্ঘ অনেক বছর ধরে।

জামায়াতে ইসলামী ও মুসলিম ব্রাদারহুডের এক ও অভিন্ন দর্শন হচ্ছে, "ধর্মের নামে ক্ষমতায় যাওয়া বা থাকার জন্য যে কোনও ধরনের হত্যা, নির্যাতন ও সন্ত্রাস ইসলামসম্মত"। মিসরের মুসলিম ব্রাদারহুড আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত এমন একটি সন্ত্রাসী-জঙ্গী সংগঠন, যার বলয় মিসর পেরিয়ে প্রায় সারাবিশ্বেই বিস্তৃত। নামে ভিন্নতা থাকলেও আদর্শগত মিলের কারণে বিশ্বের তাবৎ জঙ্গী-মৌলবাদী দলগুলোর সাথেই বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর দ্বিপাক্ষিক সুসম্পর্কের কথা আজ আর কারো অজানা নয়।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আইএস-এর সাথেও জামায়াতের যোগসাজসের আলামত পাওয়া গিয়েছে। ২০১৩ সালের ৫ মে ঢাকার শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলাম নামের ভূঁইফোড় যে মাদ্রাসাকেন্দ্রিক সংগঠনটি শাপলাচত্বরে লাখো মুসল্লিদের জড়ো করেছিল সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য, তাদের মূল হোতা ছিলেন মহাসচিব জুনাইদ বাবুনগরী, যার সাথে প্রত্যক্ষ এবং নীতিগত যোগাযোগ হয়েছিল মওদুদীবাদীদের জামায়াতে ইসলামের সাথে। ২০১৩ সালে হেফাজতে ইসলামের সেই সভার পেছনে প্রধান ইন্দনদাতা ও অর্থ-জোগানদাতা যে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ছিল, পরবর্তীতে বিভিন্ন তদন্ত এবং দেশি-বিদেশি রিপোর্টে আর গোপন থাকেনি।

এছাড়াও যখনই হেফাজতের প্রধান আহমদ শফী অসুস্থ হয়েছেন বা চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে বা হাসপাতালে গিয়েছেন, মহাসচিব জুনাইদ বাবুনগরী তার প্রতিটা সুযোগই কাজে লাগিয়েছেন এবং 'জামায়াতী সুরে ও শব্দে' সরকারকে বিভিন্নভাবে হুমকি দিয়েছেন ক্ষমতা থেকে হটানোর জন্য। দেশের বৃহত্তম কওমী মাদ্রাসাকেন্দ্রিক হেফাজতে ইসলামের অভ্যন্তরীণ কোন্দল এবং ক্ষমতার ভাগাভাগি প্রশ্নে দ্বিধাবিভক্তের কথা শোনা যাচ্ছিলো বেশকিছু দিন ধরেই, যা এই প্রথম জনসমক্ষে প্রকাশ পেল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেয়া সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে। সেই সাথে ড. কামালের ঐক্যফ্রন্টের প্রধান শরিক বিএনপির হাত ধরে এবং জামায়াতের প্রত্যক্ষ্য সহযোগীতায় আগামী জাতীয় নির্বাচনে হেফাজতের 'বাবুনগরী' অংশটি যে সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েমের চেষ্টা করবে, তা চলমান 'ঐক্যফ্রন্টের' বিভিন্ন নেতার বক্তব্যে অত্যন্ত স্পষ্ট।

বাংলাদেশের বিরুদ্ধে স্বাধীনতাবিরোধী ও তার দোসরদের চক্রান্ত নতুন কিছু নয়। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে বাংলাদেশি 'আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্নদের' দ্বারা তৈরি হয়েছে একধরনের রাজনৈতিক 'ঐক্যফ্রন্ট'। তারা বাংলাদেশে অপরিচিত কেউ নয়। বাংলাদেশ সরকার দীর্ঘদিন ধরে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে অত্যন্ত সফলতার সাথে লড়াই করে আসছে, যা আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও অত্যন্ত সমাদৃত হয়েছে।

হেফাজতে ইসলামের ২০১৩ সালের ৫ মে তারিখের কার্যক্রম জঙ্গীবাদের সন্ত্রাস ছাড়া ভিন্ন কিছু ছিল না, যার প্রত্যক্ষ নেতৃত্বে আছেন হেফাজতের মহাসচিব জুনায়েদ বাবুনগরী এবং নেপথ্যে আছে সন্ত্রাসী জামায়াতে ইসলামী। হেফাজত একটা অরাজনৈতিক সংগঠন হয়েও বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক সরকারের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে যে ভাষায় কথা বলে আসছে এবং তাদের বাগাড়ম্বরপূর্ণ হুমকি-ধামকিগুলো এতদিন ধরে শুনছি, তা একমাত্র তুলনা করা চলে আন্তর্জাতিক জঙ্গিবাদের সাথেই।

সরকারের সাথে হেফাজতের একাংশের ভাল এবং অন্যাংশের বৈরী সম্পর্ক জনমনে একধরনের দ্বিধার সৃষ্টি করতে পারে, যা সাধারণের মনে ভীতির সঞ্চার করবে বলে আমি মনে করি। একই সংগঠনের একাংশের সাথে ভাল সম্পর্ক রেখে অন্য অংশকে দমন করাটা বাস্তবিক অর্থে অত্যন্ত দুরূহ কাজ। সেক্ষেত্রে জামায়াত-বিএনপি সমর্থিত জুনাইদ বাবুনগরীর নেতৃত্বাধীন হেফাজতে ইসলামের ব্যাপারে জঙ্গিবাদ দমনে সরকারের 'জিরো-টলারেন্স' নীতিমালার প্রয়োগবিধিকে প্রাধান্য দিতে হবে।

নির্বাচনকে নির্বিঘ্ন এবং শান্তিপূর্ণ রাখতে ঘোড়ার খোলসে লুকানো খচ্চর 'ঐক্যফ্রন্ট'কে রাখতে হবে সন্দেহের সর্বাগ্রে। আমার বিশ্বাস, সরকারের এই নীতিমালায় জনগণের স্বতস্ফূর্ত সমর্থন ও সহযোগিতা থাকবে!