যুদ্ধাপরাধী ও সন্ত্রাসীকে বাঁচাতে রাজপথে ড. কামাল

স্বদেশ রায়
Published : 29 Oct 2018, 11:52 AM
Updated : 29 Oct 2018, 11:52 AM

যুদ্ধাপরাধী বিচারের পক্ষে কোনও কথা বলেননি
২০০৯ সালে জাতীয় সংসদ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করার সিদ্ধান্ত নেয়। সে সময়ে বিএনপির সংসদ সদস্যরা সংসদ বয়কট করেন। তারপরেও সারা দেশ এ সিদ্ধান্ত সাদরে গ্রহণ করে। দেশের প্রগতিশীল সকল বুদ্ধিজীবী, ছাত্র সমাজ ও সংগঠন এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানায়। ওই সময়ের পত্র-পত্রিকা খুঁজে দেখলে সবাই দেখতে পাবেন ড. কামাল হোসেন এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে কোনও বিবৃতি বা বক্তব্য দেননি। এমনকি গোটা দেশ, গোটা তরুণ সমাজ যে সময়ে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের পক্ষে সে সময়ে ড. কামাল হোসেন এই বিচারের পক্ষে কোনও অবস্থান নেননি।

তিনি যে যুদ্ধাপরাধী বিচারের বিপক্ষে কোনও কথা বলেছেন তা নয়। তবে তিনি যেভাবে নিজেকে সব সময় মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক হিসেবে দাবি করেন, এক সপ্তাহ আগেও যিনি কথায় কথায় 'বঙ্গবন্ধু', 'বঙ্গবন্ধু' বলেছেন, অথচ যুদ্ধপরাধীদের বিচারের পক্ষে তার কোনও অবস্থান কেউ দেখতে পাননি। অথচ বঙ্গবন্ধু আমলের আইনমন্ত্রী হিসেবে তিনি খুব সহজে জাতির কাছে ব্যাখ্যা করতে পারতেন ( যা বিভিন্ন সময়ে টেলিভিশনে, পত্র-পত্রিকায় ব্যরিস্টার আমির উল ইসলাম করেছেন) বঙ্গবন্ধু কীভাবে আইন প্রণয়ন করে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। বলতে পারতেন, জিয়াউর রহমান ৩০ হাজারের বেশি যুদ্ধাপরাধীকে জেল থেকে কীভাবে মুক্তি দিয়েছিলেন! কীভাবে শহীদুল্লাহ কায়সারের হত্যাকারীর সাজা মাফ করে জিয়াউর রহমান জেল থেকে ছেড়ে দিয়েছিলেন। এ দেশের মানুষ কেউ বলতে পারবেন না যে ড. কামাল ২০০৯ থেকে আজ অবধি যুদ্ধাপরাধী'র বিচারের পক্ষে বা জামায়াতে ইসলামীর বিপক্ষে কোনও কথা বলেছেন।

শাহবাগে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ও ফাঁসির দাবিতে গণজাগরণ মঞ্চ হয়েছিল। গোটা দেশ এক হয়েছিল ওই গণজাগরণ মঞ্চে । সারা দেশে যেমন এই গণজাগরণ মঞ্চ হয়েছিল, তেমনি সারা দেশ থেকে প্রগতিশীল মানুষ ছুটে এসেছিলেন এই মঞ্চে। সরকারের জোটে নেই এমন প্রগতিশীল বামদলগুলোর নেতাদের দেখেছি সেই সময়ে সারা দিন শাহবাগের রোড ডিভাইডারের ওপর বসে থাকতে। বাংলাদেশের প্রগতিশীল ও স্বাধীনতা সংগ্রামের যারা নেতা ছিলেন, ওই সব নেতারা তাই তারা বর্তমান সরকারের জোটে হোক আর বাম জোটে হোক সকলেই বক্তব্য রেখেছেন শাহবাগ গণজাগরণ মঞ্চে ।

যারা বাংলাদেশকে ভালোবাসেন, দেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে গর্ববোধ করেন, এমন মানুষেরা- তারা যে পেশার হোন না কেন, সকলে সেদিন একাত্মতা প্রকাশ করেছিলেন গণজাগরণ মঞ্চের সঙ্গে। গ্রাম থেকে মায়েরা সেদিন পিঠে তৈরি করে সন্তানের মাধ্যমে পাঠিয়ে দিয়েছিলন গণজাগরণ মঞ্চে । বাংলাদেশের স্বাধীনতার পরে স্বাধীনতার চেতনার সপক্ষে তারুণ্যের এত বড় জাগরণ আর ঘটেনি। এই গণজাগরণ মঞ্চে কিন্তু কোনওদিন আসেননি ড. কামাল হোসেন। এমনকি এই গণজাগরণ মঞ্চের পক্ষেও কোনও বিবৃতি বা বক্তব্য তিনি দেননি। অথচ সেই শাহবাগে ২০১৮তে যখনই স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াতে ইসলামের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র শিবিরের ছেলেরা শরীরে 'আমি রাজাকার''আমি রাজাকারের সন্তান', লিখে মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের কোটা বাতিলের আন্দোলনে দাঁড়াল ওম্নি সেই 'আমি রাজকারের সন্তানকে সমর্থন' করলেন ড. কামাল। জাফর ইকবাল যখনই এই রাজাকারের সন্তানদের বিপক্ষে লিখলেন, তিনি ওম্নি প্রেসক্লাবে একটি মিটিংয়ে বললেন, যারা কোটা আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে কথা বলবে, এদেরকে রাজাকার বলবে- তিনি তাদের গালে চড় মারবেন।

এখানেই শেষ নয়, কোটা আন্দোলনের নেতৃত্বে থাকা শিবিরের ছেলেরা ওই আন্দোলনের সুযোগ নিয়ে যখন বিভিন্ন ধরনের অরাজকতা সৃষ্টির চেষ্টা করে সে সময়ে সরকার তাদেরকে গ্রেপ্তার করলে তিনি তাদের পক্ষে দাঁড়ালেন। যারা নারী তাদের জন্য গিয়ে দাঁড়ালেন। অন্যদিকে তিনি মুখে বার বার বঙ্গবন্ধু বললেও বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের সময় যখন একের পর এক বিচারপতি বিব্রত বোধ করেন, তিনি তা নিয়ে কোনও কথা বলেননি। এমনকি ব্যক্তিগত আলোচনায় তিনি সবসময়ই এমন একটা ভাব করেন যে, তিনি তাজউদ্দিন আহমদ অন্তপ্রাণ। অথচ ২০০১ যখন তাজউদ্দিন আহমদসহ জাতীয় চার নেতা হত্যার বিচার নিয়ে তৎকালীন জামায়াত- বিএনপি সরকার প্রহসন শুরু করে ওই সময়ে কামাল হোসেন কোনও কথা বলেননি। একজন বড় আইনজীবী হিসেবে তিনি তো স্বপ্রণোদিত হিসেবে ওই মামলায় জাতীয় চার নেতা হত্যার বিচারের পক্ষে দাঁড়াতে পারতেন। সে কাজ তিনি করেননি। এখন তিনি রাজাকারের সন্তানদের পক্ষে দাঁড়াচ্ছেন অথচ গণজাগরণ মঞ্চের সংগঠক তরুণ রাজীব হায়দারকে হত্যা করা হলে, তিনি রাজীবের মামলার পক্ষে দাঁড়াননি। বাস্তবে ড.কামাল হোসেন মুখে আইনের শাসন, সংবধিানের কথা বললেও তিনি কখনই এ দেশে আইনের শাসন হত্যাকারী ১৯৭১ ও ১৯৭৫ এর রাজাকাদের বিপক্ষে দাঁড়াননি।

ড. কামাল সারা জীবনই সন্ত্রাসীদের পক্ষে
বাস্তবে গণতান্ত্রিক রাজনীতিক হিসেবে নিজেকে প্রচার করার যাবতীয় সুযোগ পেয়েছেন ড. কামাল । কিন্তু তার সারা জীবনের রাজনীতির দিকে তাকালে দেখা যায় সারা জীবনই তিনি সন্ত্রাসী, হত্যাকারীদের পৃষ্ঠপোষকতা করেছেন। তাদেরকে রক্ষা করেছেন।
জামায়াত- বিএনপির নেতারা লাদেন স্টাইলে ভিডিও বার্তার মাধ্যমে এদেশে পেট্রোল বোমা মেরে মানুষ হত্যা করেছে। খালেদা জিয়া মাসের পর মাস অফিসে বসে যেভাবে সারা দেশে পেট্রোল বোমার মাধ্যমে মানুষ পুড়িয়েছেন তা পৃথিবীর ইতিহাসে জঘন্যতম সন্ত্রাস। খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে যেভাবে পেট্রোল বোমা মেরে মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছিল এমন সন্ত্রাসের উদাহরণ পৃথিবীতে কম আছে।

আগুনে পোড়া মানুষ ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ইউনিটসহ সারা দেশের হাসপাতালে যেভাবে যন্ত্রণা নিয়ে মারা গেছেন এর সঙ্গে একমাত্র তুলনা চলে হিটলারের গ্যাস চেম্বারে ঢুকিয়ে মানুষ হত্যার। এ ছাড়া খালেদা ও জামায়াতের নেতৃত্বে ২০১২, ১৩ ও ১৫তে সারা দেশে যেভাবে এই নরহত্যার পাশাপাশি সরকারী সম্পত্তি, হিন্দু মন্দির ভাঙ্গা হয় তার তুলনা চলে একমাত্র ১৯৭১ সালের ধ্বংস যজ্ঞের সঙ্গে।

কেবল ২০১২ সালেই জামায়াত ও বিএনপি সারা দেশে ৯৬০টি মন্দিরে হামলা করে। আর শুধু চাঁপাই নবাবগঞ্জ ও বগুড়াতে এক হাজার কোটি টাকার বেশি সরকারী সম্পত্তি আগুনে পুড়িয়ে ধ্বংস করে। এছাড়া দেশের গোয়েন্দা বিভাগের খাতায় এ মুহূর্তে যতগুলো জঙ্গী সংগঠনের নাম পাওয়া যায় সবগুলোরই পৃষ্ঠপোষক বিএনপি ও জামায়াত।

এই বিএনপি ও জামায়াতকে রক্ষায় এখন নেমেছেন ড. কামাল হোসেন। তাদের সঙ্গে ঐক্য করে তিনি দেশে তার কথিত গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করবেন। যারা পেট্রোল বোমা মেরে শত শত মানুষ হত্যা করলো, যারা সারা দেশে জঙ্গি লালন করে, তাদের সঙ্গে ঐক্য গড়ে গণতন্ত্র! এটা কী ড. কামাল হোসেন যেমন মুুক্তিযুদ্ধ করেছিলেন তেমনি গণতন্ত্রের সংগ্রাম নয়? বঙ্গবন্ধু তার পার্সোনাল স্টাফ হিসেবে ড. কামালকে বিশ্বাসের স্থানে নিলেও তিনি ১৯৭১ এ বঙ্গবন্ধুর ডাকে মুক্তিযুদ্ধে যাননি।

বরং নিজেকে নিরাপদ মনে করেছিলেন লাখো লাখো মানুষ হত্যাকারী পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর কাছে। এখানে অবশ্য খালেদা জিয়ার সঙ্গে ড. কামালের একটা মিল আছে। বঙ্গবন্ধু ২৫ মার্চ তাজউদ্দিন আহমদ, ব্যারিস্টার আমিরুল ইসলাম ও ড. কামালকে মুক্তিযুদ্ধে যাবার কিছু নির্দেশ দিয়ে দ্রুত তার বাড়ি ত্যাগ করতে বললে তাজউদ্দিন আহমদ ও ব্যারিস্টার আমিরুল ইসলাম মুক্তিযুদ্ধে গেলেও ড. কামাল মুক্তিযুদ্ধে যাননি। খালেদা জিয়াকে মুজিবনগরে নিয়ে যাবার জন্যে বার বার জিয়াউর রহমান লোক পাঠালেও তিনি যাননি। তিনি গিয়েছিলেন পাকিস্তানি জেনারেল জানজুয়ার নিরাপদ আশ্রয়ে। সেটাকেই তিনি যুদ্ধক্ষেত্রে জিয়ার পাশে থাকার চেয়ে বেশি নিরাপদ জায়গা মনে করেছিলেন।

ব্যরিস্টার আমিরুল ইসলামের স্মৃতিকথায় আছে, তিনি তাজউদ্দিন আহমদ ও ড. কামাল এক সঙ্গে একই গাড়িতে বঙ্গবন্ধুর বাড়ি থেকে রওনা দেবার পরে, রায়ের বাজার এসে কোনও কিছু না বলে ড্রাইভারের পাশে বসা ড. কামাল ড্রাইভারকে গাড়ি থামাতে বলে নেমে যান। ব্যারিস্টার আমিরুল ইসলাম তার স্মৃতি কথায় এও লিখেছেন, ড. কামাল হোসেনের এই নেমে যাওয়া তার ভালো লাগেনি। এর পরে পাকিস্তানি জেনারেলদের বই থেকে জানা যায়, এপ্রিল মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে পাকিস্তানি জেনারেলকে ফোন করে ড. কামাল তাদেরকে সপরিবারে নিয়ে যাবার জন্যে বলেন। তারা তাকে পশ্চিম পাকিস্তানে নিয়ে যায়। পশ্চিম পাকিস্তানে নয় মাস ড.কামাল কোথায় ছিলেন, কী করেন- সে রহস্য আজো উম্মোচিত হয়নি।

বঙ্গবন্ধু অনেককে ক্ষমা করেছেন। তাদেরকে বড় বড় পদে বসিয়েছেন। ড. কামাল হোসেনও সেই ক্ষমা পাওয়াদের একজন। আর বঙ্গবন্ধু যে তাকে ক্ষমা করেছিলেন তার প্রমাণ দ্বিতীয় বিপ্লবের ডাক দিয়ে যখন সরকারের পদ্ধতি বদল করেন ওই সময়ে ড. কামালকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে ঘোষণা করেন বঙ্গবন্ধু। কিন্তু ততদিনে ড. কামাল হয়তো অন্য কোনও গন্ধ পেয়ে গেছেন। যে কারণে তিনি মন্ত্রী হিসেবে শপথ না নিয়ে দিনের পর দিন অক্সফোর্ডে কাটাতে থাকেন। এ সময়ে বঙ্গবন্ধু মো. হানিফকে একদিন রাগত স্বরে বলেন, কামালকে ফোন করে জানিয়ে দাও, সে যদি দুই দিনের ভেতর দেশে না ফেরে তাহলে এবার আর আমি তাকে ক্ষমা করবো না। বঙ্গবন্ধুর এই ' এবার আর আমি তাকে ক্ষমা করবো না' এ কথা থেকে বোঝা যায় বঙ্গবন্ধু আগে একবার তাকে ক্ষমা করেছেন। আর সে ক্ষমা যে ১৯৭১ এ নয়মাসে পাকিস্তানে বসে ড. কামাল যা করেছেন সেই অপকর্মের জন্যে তাতে কোনও সন্দেহ থাকে না। বঙ্গবন্ধু যে শুধু মো. হানিফকে ( সাবেক মেয়র, ঢাকা) একথা বলেননি, তার অন্য সহকারীদেরও বলেছিলেন তার প্রমাণ মেলে বঙ্গবন্ধুর প্রেস সচিব তোয়াব খানের কথায়। তোয়াব ভাইও বিভিন্ন সময়ে বঙ্গবন্ধু ও কামাল হোসেন প্রসঙ্গ এলে এ কথা বলেন। এবং বঙ্গবন্ধু কতটা রাগত স্বরে বলেছিলেন তাও তোয়াব ভাইয়ের কথা থেকে বোঝা যায়।

যাহোক, ড. কামাল যে ১৯৭৫ সালের জানুয়ারি মাসেই ১৯৭৫ এর ১৫ অগাস্টের গন্ধ পেয়েছিলেন তা বোঝা যায়, শেখ হাসিনার স্মৃতিচারণে। ১৯৭৫ এর ১৫ অগাস্টে সংবাদ পাবার পর পরই শেখ হাসিনা ড. কামালকে বলেছিলেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে তিনি যেন বহির্বিশ্বের কাছে আবেদন জানান, ৭৫ এর খুনি সরকারকে স্বীকৃতি না দেবার জন্যে। ড. কামাল সেদিন শেখ হাসিনার এই অনুরোধ রাখেননি। কেন রাখেননি তার প্রমাণ এই ২০১৮ সালে এসে আরো বেশি পরিষ্কার হয়ে গেল। ড. কামালের মঞ্চে এখন মইনুল হোসেন। যিনি, ১৯৭৫ এর খুনি মোশতাকের পার্টিতে ছিলেন। আরেকজনও তার মঞ্চে যিনি ১৯৭৫ এর ১৫ অগাস্ট বঙ্গবন্ধু নিহত হবার সময় মিষ্টি বিতরণ করেছিলেন। যিনি তেল গ্যাস আন্দোলনের নেতা ইঞ্জিনিয়ার শহীদুল্লাহ। তার এই মিষ্টি বিতরণের ঘটনা জেনেছি, তাজউদ্দিন আহমদ কন্যা সিমিন হোসেন রিমি এমপির নিকট থেকে। তিনি এ ঘটনার আদ্যোপান্ত জানেন। এছাড়া তার সঙ্গে জামায়াত, বিএনপি ও ইউনিভারসিটিতে লাশ ফেলার কারিগর মান্না তো আছেই।

তাই আজ ১৯৭১ এর পাকিস্তানপন্থিরা ও ১৯৭৫ এর বঙ্গবন্ধু হত্যার পক্ষের ব্যক্তিরা সকলে একই মঞ্চে এসেছেন। আর এটাই স্বাভাবিক। কারণ, শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে এমন এক জায়গায় নিয়ে এসেছেন যে, এখন ৭১ ও ৭৫ এর খুনিদের মুখোশ খুলে দাঁড়িয়ে শেষ চেষ্টা করতে হচ্ছে তাদের অস্তিত্ব রক্ষার জন্যে।

ড. কামাল শুধু ৭১ এর পাকিস্তানি হানাদারদের, ৭৫ এর বঙ্গবন্ধু খুনিদের এবং আজ জামায়াত ও বিএনপির মত পেট্রোল সন্ত্রাসীদের ও পুলিশ জবাইকারীদের পক্ষে এটাই শেষ নয়। তিনি যখন শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগে ছিলেন তখনও ছিলেন সন্ত্রাসীদের পক্ষে। ৯০ এর দশকে ছাত্রলীগের প্রতিশ্রুতিশীল নেতা ছিল বাগেরহাটের মনিরুজ্জামান বাদল। সৎ, তাগী ও পরিশ্রমী ছাত্রনেতা বলতে যা বোঝায় বাদল ছিলেন তাই। এই বাদলকে ৯১ সালে টিএসসিতে শেখ হাসিনার মিটিং চলাকালে বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে গুলি করে হত্যা করা হয়। বাদল হত্যার মূল উদ্দেশ্য ছিল ছাত্রলীগে প্রকৃত রাজনৈতিক কর্মীদের বদলে সন্ত্রাসীদের আধিপত্য বাড়ানো। তাছাড়া তৎকালীন ক্ষমতায় থাকা বিএনপি সরকারের মদদ ছিল ওই সব হত্যাকারীদের পেছনে। সেদিন আওয়ামী লীগের দলীয় তদন্তে তৎকালীন যুবলীগ নেতা মোস্তফা মহসিন মন্টু চিহ্নিত হন, বাদল হত্যার মূল হোতা হিসেবে। শেখ হাসিনা সঙ্গে সঙ্গে সিদ্ধান্ত নেন, বাদল হত্যাকারীকে তিনি তার দলে রাখবেন না। আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্র এতই গণতান্ত্রিক যে এখানে এককভাবে কেউ কাউকে দল থেকে বহিষ্কার করতে পারেন না। দলের সর্বোচ্চ বডি অর্থাৎ ওয়ার্কিং কমিটির মিটিং ডাকতে হয়। সেদিন শেখ হাসিনার বিরোধী দলীয় নেতার বাসভবনে অর্থাৎ ২৯ মিন্টোরোডে এই ওয়ার্কিং কমিটির মিটিং ডাকা হয়। নিয়মানুযায়ী ওয়ার্কিং কমিটির মিটিংয়ে বাইরের কেউ থাকতে পারেন না।

তবে সেদিন ২৯ মিন্টো রোডের বাগানে এই মিটিং হওয়ায়, তৎকালীন ইত্তেফাকের ডাকসাইটে রিপোর্টার, বর্তমান প্রেসক্লাবের সভাপতি শফিকুর রহমান ভাই ও আমি সাংবাদিক হয়েও দলের অনেকের সঙ্গে ভাল সম্পর্কের কারণে পিছন দিকে দাঁড়িয়ে থাকার সুযোগ পাই। (সাংবাদিকদের তথ্য জানার জন্যে এমন অন্যায় অনেক সময় করতে হয়) তাই আমরা সেদিন নিজ চোখে দেখি ও নিজ কানে শুনি, কীভাবে বাদল হত্যাকারীর পক্ষে দাঁড়িয়েছিলেন তৎকালীন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়ামের মেম্বার ড. কামাল হোসেন। ড. কামালের সে বক্তব্য খণ্ডন করে মতিয়া চৌধুরী সন্ত্রাসের বিপক্ষে এবং শেখ হাসিনার অবস্থানের পক্ষে জোরালো বক্তব্য দেন। মিসেস চৌধুরীর বক্তব্য'র উত্তর দিতে ব্যর্থ হয়ে- ড. কামাল শুধু উত্তেজিত হননি, ইংরেজি স্লাংও ব্যবহার করেন। ( ড. কামাল কি পরিমাণে স্লাং বলতে অভ্যস্ত তার উদাহরণ সম্প্রতি তিনি সুপ্রিম কোর্টে অ্যাটর্নি জেনারেলকে গালি দিয়ে প্রমাণ করেছেন)। তার স্লাং ব্যবহার শুনে অতিমাত্রায় ভদ্রলোক প্রয়াত আব্দুল জলিল, তৎকালীন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক ( পরবর্তীতে সাধারণ সম্পাদ) যে বক্তব্য রাখেন তা ভদ্রতার একটি ইতিহাস। তিনি কামাল হোসেনকে ইংরেজি স্লাং বলতে নিষেধ করেন। তাকে স্মরণ করিয়ে দেন, তিনি আওয়ামী লীগের মতো দলের ওয়ার্কিং কমিটিতে বক্তব্য রাখছেন। সেদিন ড. কামাল হোসেন ছাড়া বাদবাকী সকলের সম্মিলিত সিদ্ধান্তে বাদল হত্যাকারী হিসেবে অভিযুক্ত মোস্তফা মহসিন মন্টুকে আওয়ামী লীগে থেকে বহিষ্কার করা হয়। সেই মোস্তফা মহসিন মন্টু এখনো ড. কামালের দলের মহাসচিব।

রাজাকার ও সন্ত্রাসীদের মৃত্যুর মুখ থেকে বাঁচাতে ড. কামাল
ড. কামাল হোসেনের অতীত ও বর্তমান বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় সব সময়ই তিনি রাজাকার ও সন্ত্রাসীদের পক্ষে। আর আজ যখন রাজকার ও সন্ত্রাসীরা অর্থাৎ জামায়াত ও বিএনপি চরম সংকটে। দেশ গণতন্ত্র ও মুক্তিযুদ্ধের ধারায় ফিরে আসছে । বাংলাদেশকে মুক্তিযুদ্ধ ও গণতন্ত্রের ধারায় ফিরিয়ে আনতে হলে এ দেশে অবশ্যই বিএনপি ও জামায়াতকে নিশ্চিহ্ন করার প্রয়োজন আছে। কারণ এই দুটি শক্তি যতদিন রাজনীতিতে থাকবে ততদিন সন্ত্রাস ও রাজাকাররা থাকবে। কারণ, বাংলাদেশের জন্যে সব থেকে বড় দুর্ভাগ্য এখানে অনেক রাজাকারের সন্তান রাজাকার হচ্ছে। অথচ ইউরোপে যুদ্ধাপরাধীর সন্তান যুদ্ধাপরাধী হয়নি। এর বড় কারণ হচ্ছে বাংলাদেশে ১৯৭৫ এর ১৫ অগাস্টের প্রতিবিপ্লব। এই প্রতিবিপ্লবের মাধ্যমে মূলত রাজাকার আলবদররাই ক্ষমতায় ফেরে। আর তারা দেশে রাজকারী ও আলবদরী মতবাদ এমনভাবে লালন করতে থাকে যে তাদের পরবর্তী রাজাকার পরিবারের সবগুলো প্রজম্ম রাজকারী ভাবধারায় গড়ে ওঠে। অথচ আমরা লক্ষ্য করলে দেখতে পাই ইউরোপ ও আমেরিকায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের যুদ্ধাপরাধীদের আজও বিচার চলছে। তাদের সপক্ষে কোনও কথা বলার সুযোগ সেখানে নেই। তাই সেখানে যুদ্ধাপরাধীর ছেলে-মেয়েরা যুদ্ধাপরাধী হয়নি।

তারা আধুনিক ও উদারনৈতিক হয়েছে। এ কারণে বাংলাদেশেও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষের শাসনের দীর্ঘ ধারাবাহিকতা প্রয়োজন। যাতে ইউরোপ বা আমেরিকার মত এখানেও যুদ্ধাপরাধীরা কোনওদিন তুলতে না পারে। শেখ হাসিনার দশ বছরের শাসনে রাজকার, যুদ্ধাপরাধীসহ সকল সন্ত্রাসীদের কোমর ভেঙ্গে গেছে। আগামী নির্বাচনে তাদের পরাজয় হলে তারা আরও নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। এটাই এখন এ দেশের বাস্তবতা। বর্তমানের এই বাস্তবতায় রাজকার ও সন্ত্রাসীদের এই মৃত্যুমুখ থেকে বাঁচানোর জন্যেই মূলত অশীতিপর বৃদ্ধ হলেও রাজাকার ও সন্ত্রাসীদের কাঁধে ভর দিয়ে রাস্তায় নেমেছেন ড. কামাল। উদ্দেশ্য একটাই বাংলাদেশ যেন স্থিতিশীল না হয়- দেশ স্বাধীন হবার পর থেকে পাকিস্তান এটাই চাচ্ছে। আর তারা তাদের এজেন্টদের মাধ্যমে সব সময়ই একাজ করাচ্ছে । কামাল হোসেনেরও বর্তমান দায়িত্ব দেশকে অস্থিতিশীল করা, যাতে গণতন্ত্র ও দেশ বিপাকে পড়ে। ষড়যন্ত্রের রাজনীতি আবার ফিরে আসার পথ পায়।

বি:দ্র: এই লেখায় আমার অন্য একটি প্রকাশিত লেখার কিছু অংশ যোগ করা হয়েছে